বেগম রোকেয়া জীবনী/Begum Rokeya's Life Story In Bangla - Psycho Principal

Fresh Topics

Saturday, 18 September 2021

বেগম রোকেয়া জীবনী/Begum Rokeya's Life Story In Bangla

Begum
Rokeya


 

বেকম রােকেয়া ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম ছিল জহীরুদ্দিন আবু আলী হায়দার সাবের , মাতার নাম রাহাতুন্নেসা চৌধুরী । রােকেয়া জন্মসূত্রে বাঙালি ছিলেন না , ছিলেন হিন্দুস্থানি , কারণ , তাঁর মাতৃভাষা ছিল  উর্দু ।
বেগম রােকেয়া যে সময়টায় জন্মগ্রহণ করেন , তখন অবিভক্ত বাংলাদেশের হিন্দু ও মুসলিম সমাজে পর্দাপ্রথা প্রচলিত ছিল । তবে রামমােহন বিদ্যাসাগরের সৌজন্যে হিন্দু ও ব্রাহ্ সমাজের মেয়েরা তখন লেখাপড়া শিখতে শুরু করেছেন , স্থাপিত হয়ে চলেছে বালিকা বিদ্যালয় । অন্যদিকে রােকেয়ার জন্মের অব্যবহিত পরেই পূর্ববাংলার ‘ ঢাকা সুহৃদ সম্মিলনী ’ নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে । এই উদ্যোগের ফলশ্রুতিতেই এই সময় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অন্তঃপুর নারীশিক্ষাপ্রণালীর প্রবর্তন হয় মুসলিম মহিলাদের জন্য ।

রােকেয়ার পিতা ছিলেন অভিজাত সাবের বংশের সন্তান । আরবি ও  ফারসি ভাষায় অত্যন্ত সুপণ্ডিত এই ব্যক্তি ছিলেন অত্যন্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন । তাই রােকেয়ার লেখাপড়া শেখা নিষিদ্ধ ছিল । তবে , ইসলাম ধর্মের ভাষা আরবি এবং খানদানি ভাষা ফারসি এবং মাতৃভাষা উর্দু শেখার ব্যাপারে তার কোনাে বিধিনিষেধ না থাকলেও বাংলা ও ইংরেজি শেখার ব্যাপারে তার আপত্তি ছিল । সাবের পরিবারের মেয়েরা টিয়াপাখির মতাে কোরান শরিফই পড়তে পারত । তাই , গভীর রাতে বড়দা ইব্রাহিম এবং বড়দি করিমুন্নেসার কাছে বাংলা , ইংরেজি এবং জ্ঞান - বিজ্ঞানের পাঠ নিয়েছেন দিনের পর দিন বেগম রােকেয়া ।
ষােলাে বছর বয়সে বেগম রােকেয়ার বিয়ে হয় তার দ্বিগুণবয়সি , এক কন্যাসন্তানের পিতা , বিপত্নীক সাখাওয়াত হােসেনের সঙ্গে । তবে , বিহারের ভাগলপুরের মানুষ সাখাওয়াত ছিলেন বিএ , এমআরএসি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট । ওড়িশার কণিকা স্টেটের তৎকালীন ম্যানেজারও ছিলেন তিনি । বিয়ের পর অবশ্য সাখাওয়াতের প্রথম পক্ষের কন্যা সৎমাকে কোনােদিনই মেনে নিতে পারেননি । পরবর্তীকালে রােকেয়া দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেও তাদের অকালমৃত্যু ঘটে । তবে স্বামী সাখাওয়াত অবশ্য বিদুষী স্ত্রী রােকেয়াকে তার মর্মসহচরী করে নিয়েছিলেন । ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে তাকে পারদর্শী করে তােলেন সাখাওয়াত । স্বামীর উৎসাহেই লেখালেখি শুরু করেন রােকেয়া । তার লেখা উপন্যাস Sultana's Dream ছাপাও হয় । পত্রিকায় । কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে রােকেয়া মাত্র ঊনতিরিশ বছর বয়সে বিধবা হন ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ।
ঊনতিরিশ বছরের সুন্দরী , বিদুষী বিধবা রােকেয়া এবার তার একাকী জীবনটাকে বইয়ে দিলেন মুসলিম নারীসমাজের উন্নতিকল্পে । মুসলিম নারীদের সংঘবদ্ধ করতে , তাদের শিক্ষিত ও সচেতন করতে জীবনপণ করলেন তিনি । তার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যেই লেখনী ধারণ করেন তিনি ।
রােকেয়ার লেখা উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ হল মতিচুর প্রথম খণ্ড ( ১৯০৫ ) [ প্রবন্ধ সংকলন ] , মতিচুর দ্বিতীয় খণ্ড ( ১৯২১ ) প্রবন্ধ সংকলন ] । মতিচুর গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে অবশ্য লেখিকার ইংরেজি উপন্যাস Sultana's Dream- এর বঙ্গানুবাদ সুলতানার স্বপ্ন এবং ডেলিশিয়া হত্যা নামক এক অনুবাদ আখ্যানও প্রকাশিত হয় । নারীমুক্তি ও নারীজাগরণের দোসরহীন উপন্যাস হল সুলতানার স্বপ্ন । এ ছাড়াও পদ্মরাগ উপন্যাস , গল্পগ্রন্থ অবরােধবাসিনী এবং পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত অসংখ্য প্রবন্ধ , কবিতা , গল্প লিখেছেন লেখিকা । রােকেয়া রচনাবলির ভূমিকায় আবদুল কাদির যথার্থই বলেছেন— “ মুখ্যত উদ্দেশ্যমূলক ও শিক্ষাত্মক হলেও শিল্পবিচারেও প্রায়শ রসােত্তীর্ণ ।
” সাহিত্যিক হিসেবে যতটা , তারচেয়েও বেশি সমাজ - সংস্কারক হিসেবে রােকেয়া স্মরণীয় । বিধবা হওয়ার পর কলকাতায় এসে রােকেয়া তার স্বামীর সহায়তা ধন্য টাকা দিয়ে গড়ে তােলেন সাখাওয়াত মেমােরিয়াল গার্লস স্কুল ( ১৯১১ ) এবং ক্রমে ক্রমে স্কুলটিকে প্রথম শ্রেণির বালিকা বিদ্যালয়ে পরিণত করেন । এরপর বঙ্গদেশের মুসলিম নারীদের মধ্যে শিক্ষা , স্বাবলম্বন এবং বিজ্ঞানমনস্কতার আলাে ছড়িয়ে দিতে স্থাপন করেন ‘ আঞ্জুমন ই খাওয়াতীনে ইসলাম ’ বা ‘ নিখিলবঙ্গ মুসলিম মহিলা সমিতি ’ ( ১৯১৬ ) ।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর , মাত্র তিপ্পান্ন বছর বয়সে রােকেয়া আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও বঙ্গদেশের মুসলিম নারীজগতের শিক্ষা বিস্তার এবং সমাজ - সংস্কারের ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন । তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পালটে করেছে বেগম রােকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় । এ ছাড়া তাঁর পৈতৃক ভিটেয় তৈরি হয়েছে বেগম রােকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র ।

উল্লেখযোগ্য লেখা:
                  স্বার্থপরতা
                       
তােমরা যে বল " পরার্থপরতা "
‌     কি অর্থ সে কথাটার ?
পরের লাগিয়া আজ বিসর্জন..
‌      বলিদান আপনার
‌পরার্থপরতা করে কি পরাণ
      দারুণ যাতনাময় ?
" মহান হৃদয় আত্মবিসর্জনে
      সুখী হয় অতিশয় |
" তবে কেন বল " আত্মবিসর্জন "
     বল --- " সুখ আপনার !
সকলে কেবল খোজে “ আত্মসুখ "
       স্বার্থহীন " কে আবার ?
স্বার্থপর হেরি বিশ্ব চরাচর
      কে আছে " পরার্থপর " ?
এত ছল কেন ? সােজা কথা বল ,
      “ সকলেই স্বার্থপর | "

            
                 পরিতৃপ্তি

ধীরে ডুবে যায় রবি কণক বরণ ,
     ধরণী প্রদোষ ছা'য় ঢাকিল বদন |
রাজার প্রাসাদে আজি অভিনব সেজে সাজি
      সমাগত হইয়াছে সভাসদগণ ,
পরিষদ চারি ভিতে বসিয়াছে হৃষ্টচিতে
    কুতূহলে মহারাজে করিয়া বেষ্টন , ---
শারদ পুর্ণিমা রাতে কোটিতারা লয়ে সাথে
   নীলিমায় শােভা পায় শশাঙ্ক যেমন |
মনােজ্ঞ এ দৃশ্য মরি , রাজা আসে শােভা করি
      রতন খচিত রম্য কনক আসন |
আজি নিশি সুপ্রভাত আসিয়াছে সুসংবাদ
     পরাজিত হইয়াছে রাজ , শত্রুগণ
বিজয় গরবে রাজ হরষে কহিল , “ আজ
     সুখের সাগরে মম ডুবিয়াছে মন |
অরি - জয় করিয়াছি , চিন্তা ভয় ত্যজিয়াছি ।
     শােক দুঃখ আদি দূর হয়েছে এখন |

               
             প্রভাতের শশী

সুপ্রভাত ! কেন শশি ! বিষন্ন বদন
কোন সুগভীর ভাবে হয়েছ মগন ?
সারারাত জেগে এবে নিশাশেষ ভাগে
ঘুমে ঢুলু ঢুলু মরি ! নিষ্প্রভ নয়ন ।
মৃদুগতি গেহ পানে চলেছে অবশ প্রাণে , --
যেতেছে , - . চলিতে যেন সরে না চরণ
এমন নিঃস্বার্থ প্রাণে , কি কোথা কাহার প্রাণে
ঢালে সুধা নিশাকালে করি জাগরণ ?
বুঝিলাম এতক্ষণে কলুষিত এ ভুবন
নাই স্বার্থহীন আর তেমার মতন
পরেতে ঢালিয়া প্রাণ ভুলিয়াছ আত্মজ্ঞান ,
কেবলি পরের তরে কাঁদে তব মন
উথলে প্রেমের সিন্ধু , বিন্দু বিন্দু শত বিন্দু
অশ্রুধারে ভিজায়েছ কঠিন ভুবন !!

( ওই প্রেম অশ্রুধার হয়ে মুক্তার হার
                সাজায়েছে তরুলতা করিয়া যতন)

No comments:

Post a Comment