জীবনী সম্ভু মিত্র/ Biography/Life Story Of Sombhu mitra In Bangla - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 7 September 2021

জীবনী সম্ভু মিত্র/ Biography/Life Story Of Sombhu mitra In Bangla

 

শম্ভু মিত্র



জুম্ম ও পারিবারিক পরিচয়ঃ বাংলা তথা ভারতীয় নাট্যজগতের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্রের জন্ম হয় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ আগস্ট। তার পিতার নাম শরৎকুমার মিত্র এবং মাতা শতদলবাসিনী দেবী । শম্ভু মিত্রের পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলি জেলায় । কিন্তু কলকাতার ভবানীপুরে মাতামহ ডা , আদিনাথ বসুর বাড়িতেই তাঁর জন্ম হয় । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত মঞ্চাভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রর সঙ্গে তার বিবাহ হয়।

ছাত্রজীবনঃ শম্ভু মিত্রর প্রথম জীবনের পড়াশােনা শুরু হয় চক্রবেড়িয়া মিল ইংলিশ স্কুলে । এরপরে তিনি বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে ভরতি হন । বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভরতি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কলেজের পাঠ শেষ করেননি।

নাট্যজীবনঃ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ রংমহল থিয়েটার ’ - এ যােগদানের মাধ্যমে শম্ভু মিত্রের বাণিজ্যিক নাট্যমঞ্চে পদার্পণ । এখানেই মহর্ষি মনােরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার । রঙমহল বন্ধ হয়ে গেলে প্রথমে তিনি যােগ দেন ‘ মিনার্ভা’য় । সেখানে অল্পদিন থেকে তারপর তিনি যােগ দেন ‘ নাট্যনিকেতন ’ - এ । নাট্যনিকেতনে কালিন্দী নাটকে অভিনয়ের সূত্রে সেযুগের খ্যাতনামা নাট্যব্যক্তিত্ব শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে শম্ভু মিত্রের আলাপ হয় । পরবর্তীকালে শিশিরকুমার ভাদুড়ী প্রযােজিত আলমগীর নাটকে অভিনয় করলেও সম্পূর্ণ নতুন এক নাট্যঘরানা তৈরিতে উদ্যোগী হন । শম্ভু মিত্র । এরপর নাট্যনিকেতনও বন্ধ হয়ে গেলে তিনি “ শ্রীরঙ্গম ’ - এ যােগ দেন । কিন্তু পেশাদার মঞ্চের সঙ্গে শম্ভু মিত্র একাত্ম হতে পারছিলেন না । এই পর্বেই ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে বিনয় ঘােষ এবং বিজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে শম্ভু মিত্রের যােগাযােগ হয় ; এই সূত্রেই ফ্যাসিবিরােধী লেখক শিল্পী সংঘ হয়ে তিনি যােগ দেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘ ’ - এ । ১৯৪৪ - এ নবান্ন নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা নাটকের যে নবযুগের সূচনা হয় , তাতে অভিনেতা ও সহপরিচালক হিসেবে শম্ভু মিত্রের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তবে শুধু রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের পরিবর্তে স্বাধীন এবং মুক্ত চিন্তাসমৃদ্ধ নাটকে অভিনয়ের লক্ষ্যে শম্ভু মিত্র গণনাট্য সংঘ ত্যাগ করেন । ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে মনােরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শম্ভু মিত্র গড়ে তােলেন তার নিজের নাট্যদল ‘ বহুরূপী । ১৯৫০ - এ অভিনীত হয় ছেড়া তার এবং উলুখাগড়া । ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বহুরূপী’র প্রযােজনায় সফোক্লিস , হেনরিক ইবসেন , তুলসী লাহিড়ি প্রমুখ বিশিষ্ট নাট্যকারের রচনা শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয় । তিনি বাংলা রঙ্গমঞ্চে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন । রক্তকরবী , চার অধ্যায় , বিসর্জন , রাজা ইত্যাদি একের পর এক রবীন্দ্রনাটকের অসামান্য উপস্থাপনা বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইলফলক । অভিনেতা ও পরিচালক শম্ভু মিত্রের মতােই নাট্যকার শম্ভু মিত্রও বাংলা নাটকে স্মরণীয় । উলুখাগড়া , দশচক্র , রাজা
অয়দিপাউস , চাঁদ বণিকের পালা ইত্যাদি অসামান্য নাটকের রচনাকার তিনি । এ ছাড়া নাটক বিষয়ক বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন শম্ভু মিত্র । অভিনয় নাটক - মঞ , প্রসঙ্গঃ নাট্য , সন্মার্গ সপর্যা ইত্যাদি তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য । ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে একটি আর্ট কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনি বঙ্গীয় নাট্যমঞ্চ সমিতি গঠন করেন ; যদিও পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়নি । এ ছাড়াও কন্যা শাঁওলি মিত্রের নাট্যসংস্থা ‘ পঞ্চম বৈদিক ’ - এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি । জীবনের শেষ পর্যায়েও এই সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন ।

আবৃত্তিঃ একজন স্বনামধন্য আবৃত্তিকার হিসেবে শম্ভু মিত্রের পরিচিতি ছিল সর্বব্যাপী । তার কণ্ঠে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ‘ মধুবংশীর গলি ’ আজও অমর । ‘ রবীন্দ্রনাথের কবিতাপাঠ ’ , ‘ দিনান্তের প্রণাম ’ — এই দুটি তার অতিপ্রসিদ্ধ বাংলা কবিতা আবৃত্তির রেকর্ড ।

চলচ্চিত্রঃ শম্ভু মিত্র কেবল নাটকই নয় , চলচ্চিত্রেও অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন । মাণিক , শুভবিবাহ ’ , ‘ পথিক ’ , ‘ অভিযাত্রী , ‘ ধাত্রীদেবতা ’ , ‘ আবর্ত ’ , ‘ মরণের পারে ’ ইত্যাদি তার অভিনীত কিছু বিখ্যাত চলচ্চিত্র । খাজা আহমেদ আব্বাসের পরিচালনায় ‘ ধতি কে লাল ’ হিন্দি ছবিটির সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি ।

সম্মান ও স্বীকৃতিঃ নাট্যজগতে তার অসামান্য অবদানের জন্য শম্ভু মিত্র স্বীকৃতিও পেয়েছেন অনেক । ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি পান ‘ ম্যাগসেসে পুরস্কার ’ । ওই বছরই ভারত সরকার তাঁকে ‘ পদ্মভূষণ ’ উপাধিতে ভূষিত করে । ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী তাকে ‘ দেশিকোত্তম ’ উপাধি দেয় । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ‘ ডিলিট ’ উপাধিতে ভূষিত করে ।
জীবনাবসানঃ ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে কলকাতায় নিজের বাসভবনে শম্ভু মিত্র প্রয়াত হন ।


No comments:

Post a Comment