এ পি জে আবদুল কালাম/ Scientists A P J Abdul Kalam (Life) In Bangla - Psycho Principal

Fresh Topics

Friday, 10 September 2021

এ পি জে আবদুল কালাম/ Scientists A P J Abdul Kalam (Life) In Bangla

এ পি জে
আবদুল কালাম


 

“ যদি তুমি সূর্যের মতাে উজ্জ্বল হতে চাও , তাহলে নিজেকে আগে সুর্যের মতো দগ্ধ করে । "
                                                          আবদুল কালাম 

 গত শতকের প্রথমার্ধে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের এক প্রত্যন্ত গ্রামে । এক মা তাঁর সাত ছেলেমেয়ের জন্য শুধু ভাত রাঁধতেন । কিন্তু ছােটো ছেলেটির জন্য তৈরি করতেন কয়েকটা রুটি , যাতে পড়ার সময় তার খিদে না পায় । নামমাত্র পুঁজি থেকে কিনতেন কেরােসিন তেল , যাতে ছেলেটির রাতের পড়ায় ব্যাঘাত না ঘটে । আর স্বপ্ন দেখতেন যে , তাদের বাড়ির কাছে আছে যে বঙ্গোপসাগর , সেই বিশাল সমুদ্রকেও ছাপিয়ে যাবে তার ছেলেটির নামডাক । সমুদ্রের কোল ঘেঁষে ছােটো একটি গ্রামে লালিত সেই স্বপ্নেরই নাম আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম ।
ছেলেবেলাঃ  কালামের জন্ম হয়েছিল রামেশ্বরমের এক অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে । তার বাবা জয়নুল আবদিন ছিলেন একজন সাধারণ মৎস্যজীবী । হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিয়ে রামেশ্বরম এবং ধনুষকোডির মধ্যে নৌকা পারাপার করেও তিনি অর্থ উপার্জন করতেন । এই অভাবের সংসারে কালামকে স্কুলে পড়ার সময়ে কিছু অর্থ রােজগারের জন্য বাড়ি বাড়ি কাগজ বিক্রি করতে হত ।
উচ্চশিক্ষা্ঃ রমানাথপুরম ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে বিদ্যালয়শিক্ষা শেষ করে কালাম ভরতি হন তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে । ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকে স্নাতক হয়ে তিনি যান চেন্নাইয়ে । সেখানে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনােলজিতে এয়ারােস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশােনা শুরু করেন ।
কর্মজীবনঃ ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আবদুল কালাম ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের তাধীনস্থ অ্যারােনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যােগ দেন । এই সময়ে তিনি ভারতের প্রবাদপ্রতিম মহাকাশবিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাই , অধ্যাপক সতীশ ধাওয়ান প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন । ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র একবারই কালাম গিয়েছিলেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায় । ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আবদুল কালাম যােগ দেন ইসরোতে । প্রথম ভারতীয় মহাকাশ উৎক্ষেপণন এসএলভি - র প্রকল্প আধিকারিক ছিলেন স্বয়ং কালাম । কৈশােরে বিমানচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখা আবদুল কালাম হয়ে উঠেছিলেন ভারতের ‘ মিসাইল ম্যান ' । ভারত সরকার তাঁর নেতৃত্বেই আশির দশকে সংহত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে । অগ্নি , পৃথ্বী ইত্যাদি তাঁরই সফল সৃষ্টি । ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শদাতা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা । ( DRDO ) র সচিব । ভারতকে পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত করেছিল যে ( পােখরান বিস্ফোরণ , তারও মূল কারিগর ছিলেন তিনিই । তার আত্মজীবনী উইংস অফ ফায়ার প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে । তার অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল ইন্ডিয়া টু থাউজেন্ড টুয়েন্টি ( ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ ) ,
' ইগনাইটেড মাইন্ডস ( ২০০২ খ্রিস্টাব্দ ) , মিশন ইন্ডিয়া ( ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ ) , ইনসপায়ারিং থটস ( ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ ) প্রভৃতি ।
রাষ্ট্রপতি কালামঃ ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য আবদুল কালাম ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন । তিনি প্রথা ভেঙে রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা খুলে দিয়েছিলেন সকলের জন্য , বিশেষত বাচ্চাদের জন্য ।
শিক্ষক কালামঃ শুধু বিজ্ঞানী নন , কালাম ছিলেন আদর্শ শিক্ষকও । তাই রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ করে কালাম ফিরে যান অধ্যাপনায় । শিলং , ইন্দোর এবং আমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট , ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র , বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় , আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে তিনি নিয়মিত পড়াতেন । ২০১৫ - এর ২৭ জুলাই শিলংয়ের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মঞ্চে বক্তৃতাকালে হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন আবদুল কালাম ।
পুরস্কার ও সম্মানিঃ ভারত এবং ভারতের বাইরে চল্লিশটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি পান । তিনি তার কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে “ পদ্মভূষণ ’ ( ১৯৮১ ) , ‘ পদ্মবিভূষণ ’ ( ১৯৯০ ) , “ ভারতরত্ন ’ ( ১৯৯৭ ) পান ।
উপসংহারঃ ভারতরত্ন ’ কালাম তার বিজ্ঞানসাধনার দ্বারা দেশকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন আত্মবিশ্বাস ও শক্তির শিখরে । তার জীবন দেশবাসীর কাছে হতে পারে চিরন্তন প্রেরণা । “ ঘুমের মধ্যে যা আমরা দেখি সেটা স্বপ্ন নয় , স্বপ্ন সেটাই যা আমাদের জাগিয়ে রাখে । ” — জাতিকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে গিয়েছেন আবদুল কালাম ।

1 comment: