ভগিনী নিবেদিতা"জীবনী"/ Sister Nivedita/Vogini Nivedita In Bangla - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 12 September 2021

ভগিনী নিবেদিতা"জীবনী"/ Sister Nivedita/Vogini Nivedita In Bangla


ভগিনী নিবেদিতা


 

সােনালী চুলেই থাকে নদীর ইশারা
সে নারীর যার নীল চোখ খোঁজে পুবের আকাশ
........................................................
ভগ্নীর প্রীতির মতাে নিবেদিতা প্রভা
দ্যাখে ওই সহৃদয় দেশ , তার তৃণ - ফুল ঘাস
                                   — “ ভগিনী নিবেদিতা ’ , সঞ্জয় ভট্টাচার্য

মহামানবের সাগরতীর এই ভারতবর্ষ যুগে যুগে অজস্ৰ মহাপুরুষের আগমনে সমৃদ্ধ হয়েছে । “ দেবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে ” —এই আদর্শকে পাথেয় । করে এখানে বহু বিদেশি পণ্ডিত ও মনীষীদের আবির্ভাব ঘটেছে । এই দেশকে তারা আপন করে নিয়েছেন । অ্যানি বেসান্ত থেকে মাদার টেরেসার আগমনের সেই ইতিহাস খুব সংক্ষিপ্ত নয় , আর ভগিনী নিবেদিতা সেই তালিকায় এক উজ্জ্বল উপস্থিতি ।
জন্ম ও বেড়ে ওঠাঃ ১৮৬৭ র ২৮ অক্টোবর , উত্তর আয়ান্ডের টাইরনে নিবেদিতার জন্ম । পিতা স্যামুয়েল রিচমন্ড নােবেল ছিলেন ধর্মযাজক । মায়ের নাম মেরি ইসাবেল নােবেল । পূর্ব নাম ছিল মিস মার্গারেট এলিজাবেথ নােবেল । মাত্র ১৩ বছর বয়সে মার্গারেটের মনে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন জাগে । স্কুলজীবনেই মিলটন , শেকসপিয়র , আয়াল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ছিল তার নিত্যসঙ্গী । কুড়ি বছর বয়সে নিজেকে দরিদ্র মানুষের সেবার উপযােগী করে তুলবেন বলে শিক্ষিকার চাকরি ছেড়ে এক অনাথাশ্রমে যােগ দেন । রেক্সহ্যামের খনি অঞ্চলে শিক্ষকতা করতে এসে একুশ বছর বয়সে চার্চের সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহ করেন । এই সময়ে মার্গারেটকে সমাজসমস্যা এবং রাজনীতি নিয়ে প্রবন্ধ লিখতে দেখা যায় । এমার্সন , রাসকিন — তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল । তারপরেই পেস্তালৎসি এবং ফ্রয়েবেলের আদর্শে তিনি প্রগতিশীল শিক্ষাভাবনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন । তাকে ঘিরেই লন্ডনে তরুণ সাহিত্যিকদের একটা গােষ্ঠী তৈরি হয় । নিবেদিত এই সময়ই বুয়র যুদ্ধ নিয়ে প্রবন্ধ লিখছেন উইম্বলডন নিউজ - এ । তাঁর রাজনীতির ভাবনা প্রকাশ পাচ্ছে ডেইলি নিউজ - এ । আবার বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা লিখছেন রিসার্চ নামক পত্রিকায় । এই সময়ই তিনি হয়ে উঠেছেন ক্রি আয়াল্যান্ডের সক্রিয় কর্মী । সময় কাটিয়েছেন বিখ্যাত সব রাজনৈতিক চিন্তাবিদের সঙ্গে । ম্যাকলিনের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন সিসেম ক্লাব ; যেখানে নিয়মিত এসেছেন বার্নার্ড শ , হাক্সলির মতাে বিদগ্ধ মানুষেরা । তার বিস্ময়কর কর্ম উন্মাদনার মধ্যে কোনােরকম বিস্ময় থাকে না যখন এক ভারতীয় সন্ন্যাসীর আহ্বান পৌঁছে যায় মার্গারেটকে লেখা চিঠিতে— “ তুমি ঠিক সেই  নারী যাকে এদেশের আজ প্রয়ােজন । ”
বিবেকানন্দ ও নিবেদিতাঃ ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরের এক বিকেলে লন্ডন ওয়েস্ট এন্ড - এর এক অভিজাত বাড়িতে মার্গারেটের সঙ্গে বিবেকানন্দের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল । সেখানে বিবেকানন্দের বেদান্তের ব্যাখ্যা আলােড়ন তুলেছিল মার্গারেটের মনে । এরপরে বিবেকানন্দের অনুগামী হয়ে লন্ডনের প্রতিটি বক্তৃতায় তিনি হাজির হন এবং প্রশ্নের মধ্য দিয়ে নিজের যাবতীয় সংশয়কে তিনি দূর করে নেন । ১৮৯৮ - এর ২৮ জানুয়ারি মার্গারেট ভারতে আসেন এবং ২৫ মার্চ বিবেকানন্দ তাকে ব্রম্মচর্য ব্রতে দীক্ষা দেন । মার্গারেট রূপান্তরিত হন ভগিনী নিবেদিতায় । ভারতের কল্যাণেই জগতের কল্যাণ ” —স্বামীজীর এই আদর্শই হয়ে ওঠে তার জীবনাদর্শ ।
নিবেদিতা ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামঃ ব্রিটিশ বিরােধিতায় নিবেদিতা ছিলেন দ্বিধাহীন । ‘ ভারতবর্ষ স্বাধ্যায় - এ মগ্ন ছিল । একদল দস্যু এসে তার জমি জারাত ধ্বংস করল ... তাদের তাড়িয়ে দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করতে হবে স্বস্থানে । ” এই ইংরেজ বিরােধিতাই নিবেদিতাকে নিয়ে এসেছিল অরবিন্দের সান্নিধ্যে , তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল গুপ্ত বিপ্লবীদের সাহায্য করার জন্য কিংবা , কার্জনের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ করতে । বিপিনচন্দ্র পাল তার সম্পর্কে বলেছেন— She was a great hater of British Raj and great lover of Indians . এমনকি বিপ্লবীদের প্রতি তার ভালােবাসা এতটাই ছিল যে বরােদার মহারাজাকে তিনি অনুশীলন সমিতির মতাে বিপ্লবী সংগঠনকে অর্থ সাহায্য করার জন্য অনুরােধ করেন ।
লােকমাতা নিবেদিতাঃ রবীন্দ্রনাথ নিবেদিতাকে বলেছিলেন ‘ লােকমাতা ' । ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্লেগ মহামারির চেহারা নিলে স্বামী সদানন্দকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সেবাকার্যে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন । বাগবাজারে তার বাড়ি ১৫ নং বােসপাড়া লেন হয়ে । ওঠে মানবতার ভিত্তিভূমি । সন্তোষিণী , পুরাঙ্গনা থেকে বিখ্যাত গােপালের মা সকলেই তার কাছে অনায়াস আশ্রয় পেয়েছে ।
নারীশিক্ষা ও নিবেদিতাঃ নিবেদিতা নিশ্চিতভাবে বুঝেছিলেন যে মেয়েদের শিক্ষা না হলে সমাজ এগােবে না । তাই অজস্র প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের বাসস্থানে তিনি মেয়েদের জন্য স্কুল তৈরি করেছিলেন । একদিকে প্রাচীন ভারতীয় আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা , অন্যদিকে আধুনিক চিন্তাভাবনাকে গ্রহণ এই দুই - এ মিলে তাঁর শিক্ষা আদর্শ গড়ে উঠেছিল । রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদেরকে যেভাবে তিনি শিক্ষিত করে তুলতে উদ্যোগ নেন তা ছিল এক সামাজিক লড়াই । গিরিবালা ঘােষ থেকে প্রফুঞ্জ । দেবী — সেই লড়াইয়ের সাফল্যের এক - একটা নাম । মিশনারিদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ভারতীয় মেয়েদের হয়ে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ।
জীবনাবসানঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর নিবেদিতার মৃত্যু হয় । কিন্তু তাঁর কাজ এবং আদর্শের মধ্য দিয়ে তিনি এক মৃত্যুহীন প্রাণ । আজকের প্রজন্মের কাছেও নিবেদিতা প্রেরণার উৎস । ধর্ম নিয়ে বিক্ষুদ্ধ এবং সংঘাতময় ভারতে নিবেদিতাই হতে পারেন অন্ধকারে আলাের দিশা ।

No comments:

Post a Comment