১৮৯৩ - এর শিকাগাে ধর্মসভায় গেরুয়া পােশাক পরিহিত যে বাঙালি সন্ন্যাসীর বজ্রনির্ঘোষে গােটা বিশ্ব চমকিত হয়ে গিয়েছিল , যাঁর উদাত্ত কণ্ঠে ভারতকে নতুনভাবে চিনতে পেরেছিল পৃথিবীর মানুষ , তিনি স্বামী বিবেকানন্দ । (সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন উত্তর পড়তে ক্লিক করুন)
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার সিমলাপাড়ায় বিবেকানন্দের জন্ম হয়েছিল । তার পিতা ছিলেন বিশ্বনাথ দত্ত , পেশায় আইনজীবি এবং মা ছিলেন ভুবনেশ্বরী দেবী । বিবেকানন্দের পােশাকি নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত , ডাকনাম বিলে । মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় এবং স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় পাস করেন । রামকৃয়ের সান্নিধ্য বিবেকানন্দের মানসজগতে বিপুল পরিবর্তন নিয়ে আসে । মানবসেবাই তাঁর জীবনের ব্রত হয়ে ওঠে । ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে রামকৃয়ের মৃত্যুর পরে বরানগরে তিনি রামকৃয় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন । অজস্র প্রতিকূলতাকে জয় করে ১৮৯৩ - এ শিকাগাের বিশ্বধর্ম সভায় তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং হিন্দুধর্মের ও ভারতের ঐতিহ্যকে গোটা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেন । দেশে ফিরেই তিনি গড়ে তােলেন রামকৃয় মিশন ’ , বিপন্ন আর্ত মানুষদের সেবায় যে সংস্থা আজও নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে ।
ধর্মচেতনার সঙ্গে ইতিহাস আর সমাজবােধকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন বিবেকানন্দ । উচ্চবর্ণশাসিত সমাজের অসংগতি তার চোখে ধরা পড়েছিল । তিনি চেয়েছিলেন শূদ্র শক্তির জাগরণ । স্বপ্ন দেখেছিলেন কৃষকের লাঙলের ফলা থেকে , শ্রমিকের হাতুড়ি থেকে নতুন ভারত বেরিয়ে আসবে । নীচ জাতি , চির অবমানিত মানুষদের আত্মার আত্মীয় করে তােলার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি । মানবাত্মার মূর্ত প্রতীক ছিলেন বিবেকানন্দ । “ বহুরূপে সম্মুখে তােমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর ” —এই কথার মধ্যে দিয়েই ধর্মকে মন্দির - মসজিদ থেকে মানুষের মধ্যে নিয়ে এসেছেন বিবেকানন্দ । তার কাছে মানবসেবাই ছিল ঈশ্বরসেবা । বিবেকানন্দ দেশগঠনে যুবশক্তির জাগরণকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন । চেয়েছিলেন আত্মশক্তিতে দীপ্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তরুণদলকে । তাই গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বিবেকানন্দ । নিজের মত ও পথের কথা বিবেকানন্দ লিখে গেছেন তার পরিব্রাজক , প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য , ভাববার কথা , বর্তমান ভারত ইত্যাদি গ্রন্থে । গদ্য রচনারীতির অসামান্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে এইসব গ্রন্থে । বাংলা সাহিত্যকে তাই সমৃদ্ধ করেছে এইসব রচনা ।
১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই বিবেকানন্দ প্রয়াত হন । কিন্তু রামকৃয় মঠ ও মিশনের মাধ্যমে তার ভাবধারা আজও সমানভাবে সক্রিয় । বিবেকানন্দের জীবন ও বাণী , তার উদার ধর্মভাবনা এবং মানবতার আদর্শ বাঙালি জাতির জীবনে চিরস্থায়ী বাতিঘর হয়ে থেকে গেছে ।
No comments:
Post a Comment