আশাপূর্ণা দেবী
জন্ম এবং শৈশব : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার এক রক্ষণশীল পরিবারে আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম হয় । তাঁর আদি বাড়ি ছিল হুগলির বেগমপুরে । কোনো স্কুলকলেজে আশাপূর্ণা দেবীর পড়ার সুযোগ হয়নি । মাত্র পনেরো বছর বয়সে কালিদাস গুপ্তের সঙ্গে আশাপূর্ণা দেবীর বিয়ে হয় । দীর্ঘজীবনে একজন গৃহবধূ ও মায়ের ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তিনি বহু অনবদ্য সাহিত্যও সৃষ্টি করেছেন ।
কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন : তেরো বছর বয়সে তাঁর প্রথম লেখা শিশুসাথী পত্রিকায় ছাপা হয় । তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছোট ঠাকুরদার কাশীযাত্রা ( ১৯৩৮ ) । তাঁর প্রথম উপন্যাস প্রেম ও প্রয়োজন ( ১৯৪৪ ) । তাঁর লেখায় মধ্যবিত্ত পুরুষ ও নারী চরিত্র নানা মহিমায় প্রকাশ পেয়েছে । আশাপূর্ণা দেবী আধুনিক মেয়েদের কথা বলেছেন । কিন্তু আধুনিকতার বিলাসীদের প্রশ্রয় দেননি । তাঁর লেখা একদিকে যেমন বাঙালি নারীদের উজ্জীবিত করেছে , অন্যদিকে তেমনই পুরুষদের মানসিকতার দিকটিও তুলে ধরেছে । তিনি বিরামহীনভাবে সত্তর বছরেরও বেশি বয়স পর্যন্ত লিখে গিয়েছেন । সহজ কথাটা সহজে বলার মতো কঠিন কাজটাই আশাপূর্ণা দেবী আজীবন ধরে করে গেছেন । লেখা দেওয়ার ব্যাপারে কাউকে তিনি কখনও বিমুখ করতে পারতেন না । তাঁর এই বিশেষ স্বভাবটির জন্য কাগজের লোকেরা সবসময়ই তাঁর শরণাপন্ন হতেন । তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ১৭৬ টি উপন্যাস , ৩০ টি ছোটোগল্প সংকলন , ৪৭ টি ছোটোদের বই , ২৫ টি অন্যান্য সংকলন । বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় তাঁর ৬৩ টি গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে । তাঁর রচিত ট্রিলজি প্রথম প্রতিশ্রুতি , সুবর্ণলতা , বকুলকথায় তিনি নারীসমাজের আশা - আকাঙ্ক্ষা ও দুঃখবেদনার কথা বলেছেন ।
পুরস্কার : প্রথম প্রতিশ্রুতি গ্রন্থের জন্য ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ‘ জ্ঞানপীঠ ’ পুরস্কার লাভ করেন । এ ছাড়াও সাহিত্যকৃতির জন্য তিনি পেয়েছেন ‘ রবীন্দ্র পুরস্কার ’ , ‘ সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ’ , বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট ডিগ্রি ও সরকারি
মৃত্যু : ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই তাঁর দেহাবসান হয় ।
উৎস
আশাপূর্ণা দেবী রচিত কুমকুম গল্পসংকলন থেকে ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পটি গৃহীত হয়েছে ।
বিষয়সংক্ষেপ
আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে আমরা তপন নামের একজন ছোটো ছেলের কথা পাই , যার কাছে লেখকমাত্রেই ধরাছোঁয়ার বাইরের কোনো মানুষ । তাঁরা যে আর পাঁচজন মানুষের মতোই সাধারণভাবে জীবন যাপন করেন , সেটা তপনের ধারণাতেই ছিল না । কিন্তু তপনের এই ধারণা ভেঙে যায় যখন সে শোনে তার সদ্যবিবাহিতা ছোটোমাসির স্বামী , অর্থাৎ তার নতুন মেসোমশাই একজন ‘ সত্যিকার লেখক ’ । সে এই দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় যে , লেখক হওয়া সত্ত্বেও তিনি তপনের বাবা , ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতো সিগারেট খান , দাড়ি কামান , ঘুমোন কিংবা স্নান করেন । ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামাবাড়িতে এসেছে তপন । তার অধ্যাপক ছোটোমেসোমশাইয়েরও কলেজ ছুটি থাকায় তিনিও শ্বশুরবাড়িতে রয়ে গিয়েছিলেন কিছুদিন । এই সময়ই তপন তার প্রথম গল্পটি লিখে ফেলে । তপনের গল্প লেখার কথা জানতে পেরে তার ছোটোমাসি গল্পখানি একরকম জোর করেই তুলে দেয় ছোটোমেসোর হাতে । তিনি গল্পটির প্রশংসা করেন এবং সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তা ছাপানোর প্রতিশ্রুতি দেন । এরপর বাড়ির লোকজনের ঠাট্টা ও ইয়ার্কির মধ্যেই তপন তার লেখা গল্পটি ছাপার অক্ষরে দেখতে পাওয়ার আশায় দিন গুনতে থাকে । এরমধ্যে তপন আরও দু - তিনটি নতুন গল্প লিখে ফেলে । এদিকে দিন চলে যায় , তপনের লেখা গল্পটি প্রকাশিত হয় না । এ বিষয়ে সে যখন হাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছে তখনই একদিন তার বাড়িতে ছোটোমাসি ও মেসোর আগমন হয় সন্ধ্যাতারা পত্রিকা হাতে নিয়ে । সেখানে সে নিজের চোখে দেখে , লেখকসূচিতে তার নাম প্রকাশিত হয়েছে — ‘ প্রথম দিন ’ ( গল্প ) , শ্রীতপন কুমার রায় । মেসোমশাই অবশ্য জানিয়ে দেন যে কঁাচা হাতের লেখা হওয়ার জন্য তপনের লেখাটিতে তাঁকে কিছু সংশোধন করতে হয়েছে । একসময় দেখা যায় , তপনের কৃতিত্বের পুরোটাই যেন চাপা পড়ে গেছে তার মেসোর কৃতিত্বের আড়ালে । তপনের দুঃখ পাওয়ার অবশ্য এখানেই শেষ নয় । গল্পটি পড়তে গিয়ে সে দেখে ‘ কারেকশানের নামে তার লেখক মেসো গল্পটি আগাগোড়াই পালটে ফেলেছেন । গল্পের প্রতিটি বাক্যই তপনের কাছে ঠেকেছে নতুনের মতো । সে কিছুতেই গোটা গল্পটির সঙ্গে নিজেকে লেখক হিসেবে মেলাতে পারে না । গভীর দুঃখ ও হতাশায় তপন সংকল্প করে , এরপর যদি কখনও পত্রিকায় লেখা ছাপতে দিতে হয় , তাহলে সে নিজেই গিয়ে সেটা দেবে । কখনোই সে আর অন্যের কৃতিত্বের ভাগীদার হবে না । আর এভাবেই সাহিত্যিক বা লেখক এবং সাহিত্যসৃষ্টি সম্পর্কে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় ।
নামকরণ
যে - কোনো সাহিত্যকর্মের নামকরণ করা হয় বিষয়বস্তু , চরিত্র বা ভাব অনুযায়ী , আবার কখনও তা হয় ব্যঞ্জনাধর্মী । যে - কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পের নামকরণটি মূলত ব্যঞ্জনাধর্মী । ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ কথাটির অর্থ হল অন্তর্দৃষ্টি বা জ্ঞানরূপ দৃষ্টি । এই গল্পের একেবারে শেষ পর্যায়ে দেখা যায় তপন চরিত্রটির প্রকৃত জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন হয়েছে । এই গল্পে প্রাথমিকভাবে তপনের জ্ঞানচক্ষুর উন্মোচন ঘটেছে যখন প্রথমবার সে তার লেখক ছোটোমেসোকে দেখেছে । লেখকরা যে অন্য জগতের বাসিন্দা নন , বাস্তবের চেনা মানুষদের মতোই তাঁদের জীবনযাপন — এই সত্য উপলব্ধি করেছে তপন । তপনের লেখা প্রথম
গল্পটি নতুন মেসোমশাই অর্থাৎ ছোটোমেসো কিছু সংশোধন করে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন । কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজের লেখাটি সকলের সামনে পড়তে গিয়ে তপন মনে খুব আঘাত পায় । কারণ সে বুঝতে পারে , মেসোমশাই সংশোধনের নামে পুরো লেখাটাই বদলে দিয়েছেন । সেটাকে আর নিজের বলে চিনতেই পারে না তপন । লজ্জায় , অপমানে , দুঃখে সে যেন মাটিতে মিশে যায় । নিজের গল্প পড়তে বসে , অন্যের লেখা লাইন পড়তে গিয়ে তপনের ভিতরে গ্লানিবোধ জেগে ওঠে । সে সংকল্প করে , লেখা যদি ছাপতেই হয় তাহলে পত্রিকা দফতরে নিজে গিয়ে তা দিয়ে আসবে । নিজের সেই লেখাটি না ছাপলেও দুঃখ থাকবে না তার । সেখানে তপনেরই নিজস্বতা থাকবে , অন্য কেউ সেই কৃতিত্বের ভাগীদার হবে না । এভাবেই আত্মমর্যাদা ও নিজের লেখার প্রতি অধিকারবোধ তপনের জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ ঘটিয়েছে । তাই বলা যায় , গল্পের ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ নামকরণটি যথাযথ হয়েছে ।
S.A.Q Type...........................Mark-1
১. কখন তপনের চোেখ মার্বেল হয়ে গেল ?
উত্তরঃ তপন যখন শুনল তার নতুন মেসোমশাই একজন লেখক তখনই তার চোখ মার্বেল হয়ে গেল । •
২. “ ... বিয়ে হয়ে গেল দেদার ঘটাপটা করে । ” — কার ঘটাপটা করে বিয়ে হয়েছিল ?
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের ছোটোমাসির ঘটাপটা করে বিয়ে হয়েছিল । ।
৩. “ এবিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের ” —কোন্ বিষয়ে তপনের সন্দেহ ছিল ?
উত্তরঃ একজন লেখকও যে সাধারণ মানুষের মতো হতে পারে , তাদের আচরণও যে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই হয়ে থাকে , সেই বিষয়ে তৃপনের সন্দেহ ছিল ৷ ।
৪. কাকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল ?
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে ছোটোমেসোমশাইকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল ।
৫. “ অনেক বই ছাপা হয়েছে ” –কার অনেক বই ছাপা হয়েছে ?
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের লেখক ছোটোমেসোর অনেক বই ছাপা হয়েছে ।
৬. “ তবে তপনেরই বা লেখক হতে বাধা কী ? ” — তপনের লেখক হতে বাধা ছিল কেন ?
উত্তরঃ তপন মনে করত লেখকরা তার মতো সাধারণ মানুষ নন , তাঁরা হয়তো অন্য গ্রহের জীব । তাই তার নিজের লেখক হতে বাধা ছিল ।
৭. তপনের লেখক হতে বাধা নেই কেন ?
উত্তরঃ নতুন মেসোকে দেখে তপন বুঝতে পারল তিনি আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ মানুষ , আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নন । তাই তার নিজেরও লেখক হতে কোনো বাধা নেই ।
৮. তপনের নতুন মেসো কোন্ পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ?
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত ' জ্ঞানচক্ষু ' গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের নতুন মেসো পেশায় অধ্যাপক ছিলেন ।
৯. তপনের লেখা গল্প দেখে তার ছোটোমেসো কী বলেছিলেন ?
উত্তরঃ তপনের লেখা গল্প দেখে তার ছোটোমেসো বলেছিলেন যে , গল্পটা ভালোই হয়েছে । শুধু একটু সংশোধন করে দেওয়া দরকার । তাহলেই তার লেখা ছাপতে দেওয়া যাবে । •
১০. কী কারণে মেসোমশাই তপনের লেখা ভালো বলেছিলেন ?
উত্তরঃ ছোটোমেসোমশাইয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে , তাই শ্বশুরবাড়ির একটি বাচ্চাছেলেকে খুশি করতেই মূলত তপনের মেসোমশাই লেখা ভালো হয়েছে বলেছিলেন ।
১১. “ মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা ” —কোন্ কাজকে ‘ মেসোর উপযুক্ত কাজ ’ বলে ছোটোমাসি মনে করেন ?
উত্তরঃ তপন একটা গল্প লিখেছিল । তার লেখক মেসোমশাই যদি সেই গল্পটিকে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন , তবেই সেটা মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে বলে ছোটোমাসি মনে করে ।
১২. “ নতুন মেসোই বুঝবে । ” — নতুন মেসো কী বুঝবে ?
উত্তরঃ জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে নতুন মেসো তপনের লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝবে । ।
১৩. “ লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝলে নতুন মেসোই বুঝবে । ” — লেখার প্রকৃত মূল্য কেবল নতুন মেসোই বুঝবেন কেন ?
উত্তরঃ তপনের নতুন মেসো একজন নামকরা লেখক । তাই লেখক মানুষ হিসেবে তিনিই তপনের লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝবেন ।
১৪. “ তপন প্রথমটা ভাবে ঠাট্টা ” —কোন্ কথাটা তপন ঠাট্টা ভেবেছিল ?
উত্তরঃ একটু সংশোধন করে দিলে তপনের লেখা গল্পটি ছাপানো চলে— ছোটোমেসোর এই কথাটাকেই তপন প্রথমে ঠাট্টা ভেবেছিল ।
১৫. সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় লেখা ছাপা প্রসঙ্গে তপনের মেসোমশাই কী বলেছিলেন ?
উত্তরঃ সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তপনের মেসোমশাইয়ের পরিচিত । তাই তপনের লেখা দেখে মেসোমশাই বলেছিলেন , তিনি যদি সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদককে লেখা ছাপানোর কথা বলেন তাহলে সম্পাদকমশাই না বলতে পারবেন না ।
১৬. “ তপন আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায় । ” — তপনের এই অবস্থার কারণ কী ?
উত্তরঃ নতুন মেসো তপনের লেখাটা ‘ কারেকশান’বা সংশোধন করে ছাপিয়ে দিতে চাইলে তপন আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায় ৷
১৭. “ আর সেই সুযোগেই দেখতে পাচ্ছে তপন— ” তপন কী দেখতে পাচ্ছিল ?
উত্তরঃ তপনের নিজের ছোটোমেসো একজন লেখক হওয়ায় সে দেখতে পাচ্ছিল , লেখক মানে আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নন , তিনিও তপনদের মতোই সাধারণ মানুষ ।
১৮. “ ছোটোমাসি সেই দিকে ধাবিত হয় । ” — ছোটোমাসি কোন্ দিকে ধাবিত হয় ?
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে নতুন মেসোমশাই যেখানে দিবানিদ্রা দিচ্ছিলেন সেদিকে ছোটোমাসি ধাবিত হয় ।
১৯ , “ বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা ” —চায়ের টেবিলে কোন্ কথা ওঠে ?
উত্তরঃ তপনের গল্প লেখা আর মেসোমশাইয়ের তা ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথাই চায়ের টেবিলে ওঠে । ।
২০. “ তপন অবশ্য মাসির এই হইচইতে মনে মনে পুলকিত হয় । ” তপনের এই পুলকের কারণ কী ?
উত্তরঃ তপনের মাসি তপনের লেখা নিয়ে মেসোমশাইয়ের কাছে গিয়ে হইচই করলে সে এই ভেবে পুলকিত হয় যে তার লেখার মূল্য একমাত্র লেখক মেসোমশাইয়ের পক্ষেই বোঝা সম্ভব । ↑
২১. “ এইসব মালমশলা নিয়ে বসে । ” — কীসের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা গল্প লিখতে গিয়ে রাজারানির গল্প , খুনজখম , অ্যাকসিডেন্ট , না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া ইত্যাদি যেসব বিষয়ে লেখে , সেসবের কথা বলা হয়েছে ।
২২. “ তপন কৃতার্থ হয়ে বসে বসে দিন গোনে । ” — তপন কেন কৃতার্থ হয়েছিল ?
উত্তরঃ ছোটোমেসো সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তপনের গল্পটি নিয়ে গিয়েছিলেন বলে তপন কৃতার্থ হয়েছিল ।
২৩. “ সেটা জানতে তো বাকি নেই । ” — কী জানতে বাকি নেই ?
উত্তরঃ গল্প জিনিসটা কী তা জানতে তপনের বাকি নেই ।
২৪.. “ হঠাৎ ভয়ানক একটা উত্তেজনা অনুভব করে তপন । ” তপন কেন উত্তেজনা অনুভব করেছিল ?
উত্তরঃ একটি সত্যিকারের গল্প লিখে ফেলেছিল বলে তপন উত্তেজনা অনুভব করেছিল ।
২৫. গল্প লেখার পর তপনের কী মনে হয়েছিল ?
উত্তরঃ একটা গোটা গল্প সে লিখে ফেলেছে — এটা ভেবেই তপনের সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল , তার মাথার চুল পর্যন্ত খাড়া হয়ে উঠল । সে ভাবল এখন তাকেও লেখক বলা যায় ৷
২৬. তপন তার গল্প লেখার কথা প্রথম কাকে বলেছিল ?
উত্তরঃ তপন তার গল্প লেখার কথা প্রথম তার ছোটোমাসিকে বলেছিল ।
২৭. তপনের লেখা গল্প পড়ে ছোটোমাসি কী বলেছিল ?
উত্তরঃ তপনের লেখা গল্প পড়ে ছোটোমাসি ‘ বেশ লিখেছিস তো ’ বলে বাহবা জানিয়ে প্রশংসা করলেও লেখাটি কোনো জায়গা থেকে টুকলিফাই করা কি না তা জানতে চেয়েছিল ।
২৮. “ আর তোমরা বিশ্বাস করবে কিনা জানি না ……… . ” — কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ একজায়গায় বসে তপনের একটা গোটা গল্প লিখে ফেলার প্রসঙ্গে আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে ।
২৯. “ যেন নেশায় পেয়েছে । ” — কীসের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ভূত অংশটিতে তপনের গল্প লেখার অক্লান্ত চেষ্টার কথা বলা হয়েছে ।
৩০. “ .. এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা । ” — কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ ছোটোমাসি আর মেসোমশাইয়ের ↑ বাড়িতে আসার কথা বলা হয়েছে ।
৩১.“ বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের । ” — কেন তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে ?
উত্তরঃ তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ছোটোমাসি আর মেসোমশাইয়ের কাছে সন্ধ্যাতারা পত্রিকাটি দেখে তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে , কারণ তাতেই তার গল্প প্রকাশের কথা ছিল ।
৩২. “ পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে ? ” — কোন্ ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তপনদের ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত তপনের গল্প হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে , এই ঘটনাকেই অলৌকিক বলা হয়েছে ।
৩৩. “ তা ঘটেছে , সত্যিই ঘটেছে । ” — কী ঘটেছে ?
উত্তরঃ তপনের নিজের লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে — এই ঘটনাই ঘটেছে ।
৩৪. তপনের লেখা গল্পটির নাম কী ?
উত্তরঃ তপনের লেখা গল্পটির নাম ‘ প্রথম দিন ’ ।
৩৫. “ সূচিপত্রেও নাম রয়েছে । ” — সেখানে কী লেখা ছিল ?
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর ' জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সূচিপত্রে লেখা ছিল — ‘ প্রথম দিন ’ ( গল্প ) শ্রীতপন কুমার রায় ।
৩৬. “ সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায় ” —এই শোরগোলের কারণ কী ছিল ?
উত্তরঃ সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল কারণ সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের গল্প ছাপা হয়েছিল ।
৩৭. “ ক্রমশ ও কথাটাও ছড়িয়ে পড়ে । ” — কোন্ কথাটা ?
উত্তরঃ তপনের গল্প কঁাচা লেখা হওয়ায় তাতে একটু - আধটু কারেকশান করতে হয়েছে — তপনের মেসোমশাইয়ের এই কথাটা সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে ।
৩৮. , “ আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম । ” — কোন্ চেষ্টার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ তপনের মেজোকাকু বলেছিলেন যে তপনের মেসোমশাইয়ের মতো কেউ থাকলে তাঁরাও গল্প লেখার চেষ্টা করতেন ।
৩৯. “ তপন আর পড়তে পারে না । ” — কেন তপন আর পড়তে পারে না ?
উত্তরঃ নিজের প্রকাশিত গল্প পড়তে গিয়ে তপন যখন দেখে মেসোমশাই তার পুরোটাই কারেকশান করে দিয়েছেন , তখনই সে আর পড়তে পারে না ।
৪০. “ শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন— ” তপনের সংকল্প কী ছিল ?
উত্তরঃ তপন সংকল্প করেছিল যে , যদি কখনও লেখা ছাপাতে হয় , তাহলে তপন নিজে গিয়ে তা পত্রিকায় দেবে ।
৪১. “ আর কখনো শুনতে না হয়— ” কাকে কী শুনতে না হয় ?
উত্তরঃ তপনকে যেন আর কখনও শুনতে না হয় যে , অন্য কেউ তপনের লেখা গল্প ছাপিয়ে দিয়েছে ।
৪২. “ যদি কখনো লেখা ছাপতে দেয় তো , তপন নিজে গিয়ে দেবে । ” — তপনের এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী ?
উত্তরঃ সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তার নামে প্রকাশিত গল্পটির সঙ্গে তপন নিজের মূল লেখাটির কোনো মিল পায়নি বলেই তার এমন সিদ্ধান্ত ৷
৪৩. , “ গল্প ছাপা হলে যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হবার কথা সে আহ্লান্দ খুঁজে পায় না । ” —উদ্দিষ্ট ব্যক্তির আহ্লাদিত হতে না পারার কারণ কী ?
উত্তরঃ তপনের প্রথম গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হলে তার মেসোমশাইয়ের কৃতিত্বের কথাই বড়ো হয়ে ওঠে । তাই তপন আহ্লাদিত হতে পারে না ।
S.A.Q Type...............Marks-3
১ “ কথাটা শুনে তপনের চোেখ মার্বেল হয়ে গেল ” —কোন্ কথা শুনে কেন তপনের চোেখ মার্বেল হয়ে গেল ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট বক্তব্য : ছোটোমেসোমশাই একজন লেখক — এ কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল ।
তপনের চোেখ মার্বেল হয়ে যাওয়ার কারণ : তপনের ধারণা ছিল লেখকরা বোধ হয় অন্য জগতের মানুষ । তাই একজন লেখককে সামনে থেকে দেখা তার কাছে এক স্বপ্নপূরণের মতো ছিল । সেকারণেই ছোটোমেসো বই লেখেন আর সেই বই ছাপা হয় শুনে তপনের চোখ মার্বেলের মতো হয়ে গিয়েছিল । একজন সত্যিকার লেখক ' - কে যে এভাবে সামনে থেকে দেখা সম্ভব সেটাই তপনের কাছে অবিশ্বাস্য ছিল ।
২ “ নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের " তপন কোথায় নতুন মেসোকে দেখেছিল ? কীভাবে তপনের নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ নতুন মেসোর সঙ্গে সাক্ষাৎ : ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামার বাড়িতে গিয়ে তপন নতুন মেসোকে দেখেছিল । • তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যাওয়া তপনের ভাবনায় লেখকরা ছিল এক অন্য জগতের মানুষ । কিন্তু লেখক ছোটোমেসোমশাইকে দেখে তার ধারণা সম্পূর্ণ পালটে যায় । তপন দেখল , নিছক সাধারণ মানুষের মতোই তার সমস্ত আচার - আচরণ । তার বাবা , ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতোই তিনিও সিগারেট খান , দাড়ি কামান , বেশি খাবার দিলে বারণ করেন , তর্কে মেতে ওঠেন , দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করে সিনেমা দেখতে কিংবা বেড়াতে চলে যান । এসব দেখেই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল ।
৩ “ আর সেই সুযোগেই দেখতে পাচ্ছে তপন । ” — কোন্ সুযোগে তপন কী দেখতে পাচ্ছে ? 1 + 2
উত্তরঃ তপনের সামনে সুযোগ ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামার বাড়িতে তপনের আসা এবং গরমের ছুটি থাকায় থেকে যাওয়াকেই সুযোগ বলা হয়েছে । । তপনের দেখার অভিজ্ঞতা : গরমের ছুটি থাকায় বিয়ের পর পরই ছোটোমেসোমশাইও নতুন শ্বশুরবাড়িতে কয়েকদিন কাটাচ্ছিলেন । তিনি একজন লেখক । এর আগে কোনো লেখককে সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি তপনের । লেখকরা যে আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নয় , নিতান্তই সাধারণ মানুষ , তা এভাবেই প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয় তপনের ।
৪ “ তপন অবশ্য মাসির এই হইচইতে মনে মনে পুলকিত হয় । ” — মাসি কেন হইচই করছিলেন এবং তাতে তপনের পুলকিত হওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ মাসির হুইচই করার কারণ : তপনের লেখা গল্পটা হাতে পেয়ে ছোটোমাসি তপনকে উৎসাহিত করার জন্য হইচই শুরু করে দিয়েছিল । » তপনের পুলকিত হওয়ার কারণ : তপনের ছোটোমাসি গল্পটা কিছুটা পড়ে তপনের নতুন মেসোর হাতে দেয় । নতুন মেসো একইসঙ্গে কলেজের অধ্যাপক এবং লেখক । প্রথমে আপত্তি করলেও লেখক ছোটোমেসো অবশ্যই তার গল্পটার ভালোমন্দ বিচার করতে পারবেন— এই ভাবনাতেই তপন রোমাঞে পুলকিত হয়ে ওঠে ।
৫ “ রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই ” — এখানে ‘ জহুরি ' বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে ? কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো । ১ + ২
উত্তরঃ ‘ জহুরি’র পরিচয় : ' জ্ঞানচক্ষু ' গল্পের অন্তর্গত আলোচ্য অংশটিতে ‘ জহুরি ’ বলতে তপনের লেখক ছোটোমেসোর কথা বলা হয়েছে । • তাৎপর্য বিশ্লেষণ : তপন জীবনে প্রথমবার গল্প লিখে তার ছোটোমাসিকে দেখায় । ছোটোমাসি লেখাটি হাতে পাওয়ামাত্র তাঁর স্বামীকে দেখাতে নিয়ে যায় । তপনের ছোটোমেসো লেখক ছিলেন । জহুরি যেমন কোন্টা আসল রত্ন আর কোন্টা নকল তা বলতে পারেন , তেমনই একজন লেখকই বলতে পারেন কোন্ লেখাটা ভালো আর কোন্ লেখাটা খারাপ । তাই তপন ভেবেছিল এই লেখার আসল মূল্য শুধু তার মেসোমশাই - ই বুঝবেন ।
৬ “ মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা । ” — কোন্টি , কেন মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে বলে বক্তা মনে করেছে ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট কাজ তপনের লেখা গল্প পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করে দিলে সেটা ছোটোমেসোর উপযুক্ত কাজ হবে ।
মেসোর উপযুক্ত কাজ মনে হওয়ার কারণ : তপন একটা গল্প লিখেছিল । ছোটোমাসি সেই গল্পটি ছাপাবার উদ্দেশ্যে তপনের ছোটোমেসোর হাতে দেয় । মেসো গল্পটি পড়েন এবং বলেন যে , একটু কারেকশান করে দিয়ে সেটি ছাপতে দেওয়া চলে । তপনের উদ্যোগকে উৎসাহ দিতে ছোটোমাসি তার স্বামীকে গল্পটি ছাপিয়ে দিতে অনুরোধ করে । সে মনে করে সেটাই হবে তার স্বামী অর্থাৎ তপনের ছোটোমেসোর উপযুক্ত কাজ ৷
৭. “ ..সবাই তপনের গল্প শুনে হাসে । ” — কখন ? সবাই তপনের গল্প শুনে হাসলেও , তপনের ছোটোমেসো তাকে কী বলেছিলেন ? ১ + ২
উত্তরঃ হাসির মুহূর্ত : বিকেলে চায়ের টেবিলে সকলে তপনের গল্প শুনে হেসেছিল ।
ছোটোমেসোর বক্তব্য : ছোটোমেসো প্রশংসা করে বলেছিলেন যে , তপনের বয়সি সমস্ত ছেলে রাজারানির গল্প কিংবা খুন জখম , অ্যাকসিডেন্ট নিয়ে গল্প লেখে । কিন্তু তপন এত অল্পবয়সেই চেনা গণ্ডির বাইরে বেরিয়েছে । রাজারানির গল্প , খুন - জখম - অ্যাকসিডেন্টের গল্প , না খেতে পেয়ে মরে যাওয়ার গল্প বাদ দিয়ে সে নিজের স্কুলে ভরতি হওয়ার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা এবং নিজের অনুভূতির বিষয়ে গল্প লিখেছে , যা প্রশংসার যোগ্য ৷
৮. “ তপন বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায় । ” — কখন তপনকে এভাবে দেখা যায় এবং তপনের বিহ্বলতার কারণ কী ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট সময় : যখন তপনের গল্পটি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা চলছিল এবং ছোটোমেসো তার লেখার প্রশংসা করছিলেন তখনই তপন বিহ্বল হয়ে গিয়েছিল । তপনের বিহবলতার কারণ : আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে যে গল্পটি সে লিখেছিল , সেটি ছিল তার সৃষ্টিশীলতার প্রথম প্রকাশ । সেটি পত্রিকায় ছাপা হবে — এই আশা তপনকে পুলকিত করেছিল ৷ তা ছাড়া তার নতুন মেসো তপনের লেখাটার এবং বিষয় নির্বাচনের প্রশংসা করেছিলেন । ‘ ওর হবে ।’— একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের মুখে নিজের এই প্রশংসা শুনে তপন আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল ৷
৯.“ গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের ” –তপনের গায়ে কখন এবং কেন কাঁটা দিয়ে উঠল ? ১ + ২
উত্তরঃ শিহরনের মুহূর্ত : জীবনের প্রথম গল্পটি লিখে ফেলার পর তপন নিজে যখন সেটা পড়েছিল তখনই তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল ।
শিহরনের কারণ : একদিন দুপুরে যখন চারিদিক নিস্তব্ধ , সে একটা খাতা আর কলম নিয়ে মামাবাড়ির তিনতলার সিঁড়িতে বসে সারাদুপুর ধরে একটা আস্ত গল্প লিখে ফেলে । গল্প লেখার পর সে নিজেই গোটা গল্পটা লিখেছে ভেবে অবাক হয়ে যায় । গল্প শেষ করার পর আনন্দে , উত্তেজনায় তপনের সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে ।
১০ “ তপনকে এখন ‘ লেখক ’ বলা চলে ” — এ কথা মনে হওয়ার কারণ কী ? তপনের গল্পের নাম কী ছিল ? ২ + ১
উত্তরঃ মনে হওয়ার কারণ : তপন ছোটোবেলা থেকে অনেক বই পড়ে গল্পে আগ্রহী হয়ে ওঠে । একদিন দুপুরে তপন তার বিদ্যালয়ে ভরতির প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা গোটা গল্প লিখে ফেলে । একটা গোটা গল্প নিজে লিখে ফেলেছে , এ কথা ভেবে সে অবাক হয়ে যায় । তাই তখন তপনের মনে এই বিশ্বাস জন্মায় যে , তাকেও এখন লেখক বলা যেতে পারে ।
• তপনের লেখা গল্পের নাম : তপনের লেখা গল্পের নাম ছিল ‘ প্রথম দিন ’ ।
১১.“ হঠাৎ ভয়ানক একটা উত্তেজনা অনুভব করে তপন । ” তপনের উত্তেজনার কারণ বর্ণনা করো । উত্তেজিত হয়ে তপন কী করেছিল ? ২ + ১
উত্তরঃ উত্তেজনার কারণ : এক নির্জন দুপুরে মামার বাড়ির তিনতলার সিঁড়িতে বসে তপন হোমটাস্কের খাতায় একটি গল্প লিখে ফেলে । একাসনে বসে লেখা গল্পটি পড়ে সে নিজেই অবাক হয় । নিজের সামর্থ্যের প্রতি তার বিশ্বাস জন্মায় । সে সত্যিই একজন লেখক হতে চলেছে — এই ভাবনাই তাকে উত্তেজিত করে ।
তপনের প্রতিক্রিয়া : উত্তেজিত তপন দ্রুত নীচে নেমে আসে এবং তার ‘ চিরকালের বন্ধু ’ ছোটোমাসিকে গল্প লেখার খবরটা দেয় ।
১২. “ আঃ ছোটোমাসি , ভালো হবে না বলছি । ” — কার উক্তি ? এরূপ বলার কারণ কী ? ১ + ২
উত্তরঃ বক্তা : প্রশ্নোধৃত বাক্যটি তপনের উক্তি ।
বলার কারণ : তপন এক নিস্তব্ধ দুপুরে তার জীবনের প্রথম গল্পটি লিখে ফেলার পরে তার ‘ চিরকালের বন্ধু ’ ছোটোমাসিকে সেই খবর দিতে যায় । বছর আটেকের বড়ো ছোটোমাসি তার গল্পটা সবটা না পড়েই একটু চোখ বুলিয়ে লেখাটির প্রশংসা করে এবং জানতে চায় যে সেটি কোনো জায়গা থেকে তপন নকল করেছে কি না । এ কথার জবাব দিতে গিয়েই কিছুটা অভিমানের সুরে তপন প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি করে ।
১৩. “ এদিকে বাড়িতে তপনের নাম হয়ে গেছে ... ” —– বাড়িতে তপনের কী কী নাম কেন প্রচলিত হয়েছিল ? ১ + ২
উত্তরঃ তপনের বিভিন্ন নাম : তপনের বাড়িতে নাম হয়েছিল ‘ কবি ’ , ‘ সাহিত্যিক ’ , ‘ কথাশিল্পী ’ ।
তপনের বিভিন্ন নাম প্রচলিত হওয়ার কারণ : তপন তার লেখক ছোটোমেসোমশাইয়ের থেকে বাহবা লাভের পর গল্প লেখার ব্যাপারে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠে । মেসোমশাই পত্রিকায় প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার গল্পটি নিয়ে গিয়েছিলেন । তারজন্যও তপনের কাতর অপেক্ষা চলতে থাকে । এদিকে তার লেখা গল্পটি বাড়িতে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে । বাড়ির সদস্যরা খানিক মশকরা ও ঠাট্টা মিশিয়েই তপনের নামের সঙ্গে ‘ কবি ’ , ‘ সাহিত্যিক ’ , ‘ কথাশিল্পী ’ অভিধাগুলি জুড়ে দেন ।
১৪. “ বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের । ” — কখন , কেন তপনের এই অবস্থা হয়েছিল ? ১ + ২
উত্তরঃ সময়কাল : মেসোর হাতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকা দেখে তপনের এরূপ অবস্থা হয়েছিল ।
তপনের এই অবস্থা হওয়ার কারণ : তপনের লেখা গল্পটি তার নতুন মেসো সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেবেন বলে নিয়ে গিয়েছিলেন । দীর্ঘদিন তপন সেই অপেক্ষায় বসেছিল । তারপর একসময় সে ভুলেই গিয়েছিল গল্পটির কথা । এরপর হঠাৎই তার ছোটোমাসি আর মেসো তাদের বাড়ি বেড়াতে এলেন । তপন মেসোর হাতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকা দেখতে পেল । তার গল্প ছাপা হয়েছে — এই প্রত্যাশাতেই তার বুকের রক্ত যেন ছলকে উঠল ।
১৫“ পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে ? ” — অলৌকিক ঘটনাটি কী ? তাকে অলৌকিক বলার কারণ ব্যাখ্যা করো ।
উত্তরঃ অলৌকিক ঘটনার পরিচয় : অলৌকিক ঘটনাটি ছিল সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের লেখা প্রথম গল্পটির প্রকাশ ।
অলৌকিক বলার কারণ : ‘ অলৌকিক ' কথাটির অর্থ যা বাস্তবে সম্ভব নয় । দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তপন যেদিন দেখল যে , সত্যিই ছোটোমেসোর প্রতিশ্রুতিমতো তার গল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে , সেটা তার কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয় । কারণ ছাপার অক্ষরে তার লেখা গল্প হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে এ ঘটনাকে তপনের এতটাই অসম্ভব বলে মনে হয় যে , সে সেটিকে ‘ অলৌকিক ’ বলে মনে করে ।
১৬. "শোরগোল পরে গেলো"- শোরগোল শব্দের অর্থ কী? শোরগোল পড়ার কারণ কী ছিল?
উত্তরঃ ‘ শোরগোল ’ শব্দের অর্থ : ‘ শোরগোল ’ কথাটির অর্থ হইচই ।
শোরগোল পড়ে যাওয়া নিজের লেখা প্রথম গল্পটি ছোটোমেসোর প্রতিশ্রুতিমতো পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ে তপন । এই সময়েই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে ছোটোমাসি এবং মেসোর আগমন ঘটে তাদের বাড়িতে । ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা , সূচিপত্রে নিজের নাম দেখে তপন যখন শিহরিত , তখনই বাড়িতেও শোরগোল পড়ে যায় । তপনের লেখা গল্পটি সকলের মধ্যেই আলোড়ন তোলে ।
১৭.“ আজ আর অন্য কথা নেই ” —কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে ? সেদিন অন্য কোনো কথা নেই কেন ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট দিন সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে যেদিন তপনের ছোটোমাসি এবং ছোটোমেসো তপনের বাড়িতে আসেন এখানে সেই দিনের কথা বলা হয়েছে । • অন্য কোনো কথা না থাকার কারণ : সন্ধ্যাতারা পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছিল তপনের লেখা প্রথম গল্প ‘ প্রথম দিন ’ । এ ঘটনায় বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায় । মেসোর কারেকশানের কথা ছড়িয়ে পড়ে । তপনের বাবা , তার মেজোকাকু - সহ গোটা বাড়ি তপনের গল্প আর তা প্রকাশে মেসোর ভূমিকা নিয়েই শুধু আলোচনা করে । তাই সেদিন সেখানে অন্য কোনো কথা ছিল না ।
১৮." তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায় এইসব কথার মধ্যে । ” ' এইসব কথা ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ এইসব কথার অর্থ : সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের গল্প প্রকাশের পরে মেসো সুকৌশলে প্রকাশ করে দেন তার ‘ কারেকশান’ এর কথা । সে কথাটাই এরপর ছড়িয়ে পড়ে সারা বাড়িতে । তপনের বাবা যাবতীয় কৃতিত্ব মেসোমশাইকেই দেন । তার মেজোকাকু বলেন যে , ওরকম মেসো থাকলে তারাও গল্প লেখার চেষ্টা করতেন । এমনকি তিনি না থাকলে তপনের গল্প সম্পাদক যে ছুঁয়েও দেখতেন না , সে কথাও বলা হয় । ‘ এইসব কথা ’ তপনকে প্রভাবিত করে ।
তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ : তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ এইসব কথা তার সব আনন্দকে অদৃশ্য করে দেয় ।
১৯. ... সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না । ” — কার কথা বলা হয়েছে ? সেই আহ্লাদ না হওয়ার কারণ কী ছিল ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট জন : প্রশ্নোধৃত অংশে তপনের কথা বলা হয়েছে ।
আহ্লাদ না - হওয়ার কারণ : তপনের ছোটোমেসোর সহায়তায় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তার গল্প প্রকাশিত হলে চারিদিকে সবাই মেসোর মহত্ত্বের কথাই বলতে থাকে । মেসো না থাকলে কোনোদিনই সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদক তপনের লেখা ছুঁয়েও দেখত না -- এরকম কথাও অনেকে বলে । এইসব কথার মাঝখানে আসল যে লেখক , সে - ই যেন কোথাও হারিয়ে যায় । তপনের যেন কোনো কৃতিত্বই নেই । এইসব দেখে লেখা ছেপে আসার পর যে আহ্লাদ হওয়া উচিত ছিল তা হয় না তপনের ।
২০. “ এতক্ষণে বইটা নিজের হাতে পায় তপন । ” — কোন্ বইটার কথা বলা হয়েছে ? সেটি হাতে পেয়ে তপন কী দেখতে পেয়েছিল ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট বই : সন্ধ্যাতারা নামক পত্রিকায় তপনের গল্প ছাপা হয়েছিল । বই বলতে এখানে ওই পত্রিকাকেই বোঝানো হয়েছে ।
তপনের অভিজ্ঞতা : তীব্র উত্তেজনা আর কৌতূহল নিয়ে তপন পত্রিকাটির পাতা ওলটায় । কিন্তু পরক্ষণেই নিজের গল্প পড়তে গিয়ে সে চমকে ওঠে । গল্পের প্রতিটি লাইন তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন মনে হয় । তার লেখার সঙ্গে ছাপার অক্ষরের কোনো মিল নেই । নিজের লেখা গল্পের মধ্যে সে আর নিজেকেই খুঁজে পায় না ।
২১. “ তপন লজ্জা ভেঙে পড়তে যায় । ” তপন তার লজ্জা কাটিয়ে কী পড়তে যায় এবং পড়তে গিয়ে সে কী দেখে ?
উত্তরঃ তপন তার লজ্জা কাটিয়ে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত নিজের গল্পটি পড়তে থাকে । বিদ্যালয়ে ভরতি হওয়ার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি নিয়ে তপন গল্পটি লিখেছিল । গল্পের নাম দিয়েছিল ‘ প্রথম দিন ’ । এরপর তপনের মেসোমশাই গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন । পত্রিকাটি হাতে পেয়ে তপনের মা তাকে লেখাটি পড়ে শোনাতে বলেন ।
পড়তে গিয়ে সে দেখে তার লেখাটা আগাগোড়াই ছোটোমেসো সংশোধন করেছেন । তার প্রত্যেকটা লাইন তপনের অপরিচিত , সেখানে সে নিজেকেই খুঁজে পায় না ।
২২.“ সবাই শুনতে চাইছে তবু পড়ছিস না ? ” — কী শুনতে চাওয়ার কথা বলা হয়েছে ? তা না পড়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ শুনতে চাওয়া বিষয় : উদ্ধৃত অংশটিতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হওয়া তপনের গল্পটি শুনতে চাওয়ার কথা বলা হয়েছে । না পড়তে পারার কারণ : তপনের মা তপনকে সন্ধ্যাতারা - য় প্রকাশিত গল্পটা পড়ে শোনাতে বলেন । কিন্তু গল্পটি কিছুটা পড়ে তপন অবাক হয়ে যায় । গল্পটা এমনভাবে কারেকশান করা হয়েছে যে , তপন তার মধ্যে নিজের লেখা খুঁজে পাচ্ছিল না । সম্পূর্ণ নতুন একটা গল্প বলেই তার মনে হয়েছে সেটাকে । গভীর হতাশা আর দুঃখ তপনকে যেন নির্বাক করে দিয়েছিল । তাই সে গল্পটা আর পড়তে চায়নি ।
২৩. “ তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন ” ।— ‘ আজ ’ বলতে কোন্ দিনকে বোঝানো হয়েছে ? তপনের এরকম মনে হওয়ার কী কারণ ছিল ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট দিন সন্ধ্যাতারা পত্রিকাটি যেদিন তপনের বাড়িতে আসে এবং মায়ের কথায় সে সেখানে তার প্রকাশিত গল্পটি পড়তে যায় , সেদিনের কথাই এখানে বলা হয়েছে ।
তপনের মনে হওয়ার কারণ : গল্প পড়তে গিয়ে তপন দেখে সংশোধনের নামে ছোটোমেসো সেই লেখার আগাগোড়াই বদলে দিয়েছেন । তার নিজের লেখার সঙ্গে ছেপে আসা লেখার কোনো মিল নেই ৷ লজ্জায় , অপমানে তপন ভেঙে পড়ে । তার চোখে জল চলে আসে । যে দিনটি সবচেয়ে আনন্দের দিন হতে পারত , সেটিকেই তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন বলে মনে হয় ।
২৪. “ শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন ” — কোন্ দুঃখের মুহূর্তের কথা বলা হয়েছে ? তপন গভীরভাবে কী সংকল্প করেছিল ?
উত্তরঃ দুঃখের মুহূর্ত : নিজের লেখা হিসেবে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপন যখন অন্যের লেখা পড়েছিল সেটাই ছিল তার চরম দুঃখের মুহূর্ত ।
তপনের গভীর সংকল্প : নিজের লেখা পড়তে গিয়ে তপন দেখে , মেসোমশাই আগাগোড়াই লেখাটা সংশোধন করে নিজের পাকা হাতে গল্পটি লিখে দিয়েছেন । অপমানে , লজ্জায় তপন প্রতিজ্ঞা করে যদি আর কোনোদিন লেখা ছাপানোর হয় , সে নিজে গিয়ে তা ছাপতে দেবে । না ছাপলেও ক্ষতি নেই , অন্তত নিজের নামে অন্য কারও লেখা তাকে পড়তে হবে না ।
L.A.Q Type.....................Marks-5
১. “ কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের । ” — কী কারণে এ কথা বলা হয়েছে ? সত্যিই তার জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল কি না আলোচনা করো । 3 + 2
উত্তরঃ কথাটি বলার কারণ : আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে মামার বাড়িতে গিয়ে তপন তার নতুন মেসোমশাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয় । তিনি একজন লেখক । লেখকরা কতটা সাধারণ মানুষদের মতো , তা নিয়ে বেজায় সন্দেহ ছিল তপনের । কিন্তু ছোটোমেসোকে দেখার পরে তার ভুল ভাঙে । তিনি ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতোই দাড়ি কামান , সিগারেট খান , থালা থেকে খাবার তুলতে বলেন , স্নানের সময়ে স্নান করেন , ঘুমানোর সময়ে ঘুমান , খবরের কাগজের সংবাদ নিয়ে তর্কে মাতেন এবং দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করে সিনেমা দেখতে চলে যান । তিনি বেড়াতেও বেরোন সেজেগুজে । অর্থাৎ আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো পার্থক্যই নেই । এই সত্য উপলব্ধি করেই তপন মনে করেছিল যে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছে ।
জ্ঞানচক্ষু উন্মেষের যথার্থতা বিচার : তপনের সত্যিকারের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় গল্পের শেষে । তার লেখা গল্পটি ছোটোমাসি জোর করেই ছাপানোর জন্য মেসোকে দিয়েছিল । কিন্তু সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যায় , লেখাটি সম্পূর্ণ পালটে গেছে । তার প্রত্যেকটি লাইন তপনের অপরিচিত । গভীর দুঃখ ও মনোকষ্টে তপন সংকল্প করে , এরপরে যদি লেখা ছাপাতে দিতে হয় তাহলে তা সে নিজের হাতেই দেবে । এভাবেই তার জ্ঞানচক্ষুর যথার্থ প্রকাশ ঘটে ।
২ “ লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝলে নতুন মেসোই বুঝবে ” — এ কথা কার , কখন , কেন মনে হয়েছিল তা আলোচনা করো । ১ + ২ + ২
উত্তরঃ বক্তা : আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে এ কথা তপনের মনে হয়েছিল । । প্রসঙ্গ : তপন এক দুপুরবেলায় বসে একটা গোটা গল্প লিখে ফেলে । আস্ত একটা গল্প লিখে ফেলার পর প্রথমে সে নিজেই ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারে না । কিন্তু সে - ই গোটা গল্পটা লিখেছে ভেবে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে । গল্পটার কথা সে প্রথমে জানায় ছোটোমাসিকে , কারণ ছোটোমাসি ছিল তার ‘ চিরকালের বন্ধু ’ । ছোটোমাসি তার লেখাটা নিয়ে সেটা ছোটোমেসোকে দেখায় । তপন এতে কিছুটা লজ্জিত হলেও মনে মনে খুশি হয় । আসলে এটাই চেয়েছিল সে । এইসময়েই তপনের মনে প্রশ্নে উল্লিখিত ভাবের প্রকাশ ঘটে ।
এ কথা মনে হওয়ার কারণ : তপন ভেবেছিল , লেখার প্রকৃত মূল্য একমাত্র তার ছোটোমেসোমশাই - ই বুঝবেন । কেন - না তপনের এই নতুন মেসোমশাই ছিলেন একজন লেখক । তিনি অনেক বই লিখেছেন আর সেইসব বই ছেপেও বেরিয়েছে । তাই লেখার মূল্য অন্য সকলের থেকে তিনি বেশি বুঝবেন বলেই তপনের ধারণা ছিল । একজন লেখকই আর একজন লেখকের লেখার মূল্য বুঝতে পারেন । ‘ রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই । ' সাহিত্যবোধহীন একজন মানুষের পক্ষে তার লেখার যথার্থ মূল্য বোঝা সম্ভব নয় বলে তপন মনে করে । তাই ছোটোমেসোর হাতে তার লেখাটি যাওয়ায় সে পুলকিত হয় ।
3. “ লেখার পর যখন পড়ল , গায়ে কঁাটা দিয়ে উঠল তপনের । ” কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে ? সেই লেখা পড়ে তপনের গায়ে কঁাটা দিয়ে ওঠার কারণ কী ? ২ + ৩
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট লেখা : তপন গরমের ছুটিতে মামার বাড়িতে এসে এক নির্জন দুপুরে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে গিয়ে একাসনে বসে একটি গল্প লিখে ফেলে । এখানে ওই গল্পটির কথাই বলা হয়েছে ।
• তপনের শিহরনের কারণ : নতুন মেসোকে দেখে তপনের গল্প লেখার উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিল । আগে তার ধারণা ছিল , লেখকরা তাদের মতো সাধারণ মানুষ নন , অন্য কোনো অলৌকিক জগতের মানুষ । কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে তার সেই ধারণা বদলে যায় । “ “ লেখক ’ মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয় , তপনদের মতোই মানুষ ” —এই ভাবনা থেকেই তার লেখক হতে চাওয়ায় কোনো বাধা থাকে না । উৎসাহভরে হোমটাস্কের খাতা নিয়ে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে যায় । তারপর একাসনে বসে লিখে ফেলে গোটা একটি গল্প । তপন নিজের সৃষ্টিতে আনন্দিত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে । সেটি আগাগোড়া পড়ার পর তার শরীরে একটা শিহরন খেলে যায় । তপন ভাবতেই পারেনি এত সুন্দর একটা গল্প সে নিজেই লিখতে পারবে । নিজস্ব ভাব ও ভাবনার এই প্রকাশ দেখে তার গায়ে তখন কাঁটা দিয়ে ওঠে ।
4." সত্যিই তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি এল আজ ? ” —কোন্ দিনটির কথা এখানে বলা হয়েছে ? দিনটি সম্পর্কে এই উচ্ছ্বাসের কারণ লেখো ।
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট দিন : আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ' গল্পের তপন তার নতুন মেসোর মাধ্যমে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় একটি গল্প পাঠিয়েছিল । গল্পটি ছাপার অক্ষরে দেখার আশায় তপন দিন গুনতে থাকে । তারপর একদিন ছোটোমাসি আর মেসো তাদের বাড়ি বেড়াতে আসেন । মেসোর হাতে সন্ধ্যাতারা দেখে চমকে ওঠে তপন । এখানে মেসোর আসার এই বিশেষ দিনটির কথাই বলা হয়েছে ।
উচ্ছ্বাসের কারণ : লেখক ছোটোমেসোমশাই তপনের গল্পটিকে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন । কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও আর কোনো খবর না পেয়ে সে একপ্রকার নিশ্চিত হয়েছিল যে , গল্পটি আর ছাপা হবে না । তাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা হাতে নিয়ে ছোটোমাসি আর মেসোকে আসতে দেখে তার বুকের রক্ত ছলকে ওঠে । স্বপ্নপুরণের আশা আর নিরাশার মাঝে দুলতে থাকে তার মন । জীবনের প্রথম লেখা , সর্বোপরি কঁাচা হাতের লেখা সত্যিই ছাপা হয়েছে কি না , তা নিয়ে তার মনে সংশয় দেখা দেয় । যদি সত্যিই ছাপা হয় তাহলে দিনটি তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন হবে — এতে কোনো সন্দেহ নেই । অনেকদিনের ইচ্ছা হয়তো এবার পুরণ হতে চলেছে — এই ভেবেই কিছু সংশয় থাকলেও তপনের মন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে ।
5. “ তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায় এইসব কথার মধ্যে । ” কোন্ সব কথার মধ্যে ? তপন কেন হারিয়ে যায় ? 3 + 2
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট বক্তব্য : ‘ জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের লেখা গল্প প্রকাশের পরে বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায় । মেসো অবশ্য সুকৌশলে তার দ্বারা ' কারেকশান ' - এর কথা জানিয়ে দেন । ক্রমশ তপনের লেখা অপেক্ষা মেসোর কারেকশানের কথাই সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে । তপনের বাবাও লেখাটি প্রকাশের কৃতিত্ব মেসোকেই দেন । মেজোকাকু বুঝিয়ে দেন , মেসো না থাকলে তপনের লেখা প্রকাশিত হত না । এভাবে সেদিন সারা বাড়িতে তপনের নতুন মেসোর মহত্ত্বের কথাই আলোচিত হয় । তপন এইসব কথার মধ্যেই যেন হারিয়ে যায় ।
• তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ এসব কথায় তপনের লেখকপ্রতিভার কোনো স্বীকৃতি না থাকায় তপন এইসব কথার মধ্যে হারিয়ে যায় । এমনও কথা তপন শুনেছিল যে মেসোমশাই যদি নিজে গিয়ে না লেখাটি দিতেন তাহলে সন্ধ্যাতারার সম্পাদক তপনের গল্প ‘ কড়ে আঙুল ’ দিয়ে ছুঁয়েও দেখত না । এইসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম গল্প প্রকাশে যে প্রবল আনন্দ হওয়ার কথা ছিল , তপন তা খুঁজে পায় না ।
6.“ গল্প ছাপা হলে যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হবার কথা , সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না । ” — কার , কোন্ গল্প , কোথায় ছাপা হয়েছিল ? গল্প ছাপা হলেও সে আহ্লাদ খুঁজে পায়নি কেন ? ২ + ৩
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট ব্যক্তি - গল্প - স্থান : আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপন একটি গল্প লিখেছিল । সেই গল্পটি তপনের নতুন মেসোর সহায়তায় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ।
আহ্লাদ খুঁজে না - পাওয়ার কারণ : তপন বয়সে কিশোর । তার নবীন আবেগের প্রকাশ ঘটে তার লেখা প্রথম দিন ’ নামক জীবনের প্রথম গল্পটিতে । গল্পটি সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল । মেসোর হাতে পত্রিকাটি দেখে বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তার । পত্রিকার সূচিপত্রে গল্পের ও নিজের নাম দেখেই তপনের মন নতুন আশায় জেগে ওঠে । বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায় । তপনের মেসোমশাই অবশ্য মৃদু হেসে জানিয়ে দেন যে , ' নেহাত কাঁচা ’ লেখা হওয়ায় লেখাটি তাঁকে সংশোধন করতে হয়েছে । এরপরেই তপনের বাবা - সহ বাড়ির প্রায় সকলে ছোটোমেসোকেই কৃতিত্ব দিতে থাকেন । তপনের মেজোকাকু মন্তব্য করেন— “ তা ওরকম একটি লেখক মেসো থাকা মন্দ নয় । আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম । ” বাড়ির কর্তাস্থানীয় ব্যক্তিদের এইসব কথার মধ্যে একটা ঔদাসীন্য ও উপেক্ষা লুকোনো ছিল । এই কারণেই নিজের লেখা ছাপা হওয়ায় যেরকম আহ্লাদ হওয়ার কথা তপন তা খুঁজে পায়নি ।
7. “ এর প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা , তপনের অপরিচিত । ” — ‘ এর ’ বলতে কীসের কথা বলা হয়েছে ? বিষয়টি পরিস্ফুট করো ।
উত্তরঃ ‘ এর ’ কথার অর্থ : আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পের উল্লিখিত অংশে ‘ এর ’ বলতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত তপনের গল্পটির কথা বলা হয়েছে ।
বিষয়টির বিশ্লেষণ : তপনের ছোটোমেসোমশাইয়ের উদ্যোগে তপনের লেখা তার জীবনের প্রথম গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় । যদিও গল্পটি প্রকাশের পরেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ‘ নেহাত কাঁচা ’ লেখা হওয়ায় গল্পটিতে তাঁকে কিছু কারেকশান করতে হয়েছে । সে - কথা সারা বাড়িতে প্রচারিতও হয়ে গিয়েছিল । এরপরে তপনের মা তপনকে তার নিজের মুখে ' গল্পটি পড়ে শোনাতে বলেন । তপন তার প্রাথমিক লজ্জা কাটিয়ে গল্পটি পড়তে যায় । কিন্তু পড়তে গিয়ে অবাক হয়ে যায় তপন । কারেকশানের নামে মেসোমশাই গল্পটিকে আগাগোড়া সংশোধন করে দিয়েছেন।— “ নতুন করে লিখেছেন , নিজের পাকা হাতে কলমে ! ” তাই গল্পের প্রত্যেকটি লাইনকে তার আনকোরা এবং অপরিচিত মনে হয় । সেই গল্পের মধ্যে সে কোথাও নেই । এক প্রচণ্ড কষ্টের অনুভূতি হয় তপনের । সে বোবার মতো বসে থাকে । এই ঘটনায় লেখকসত্তার অপমানকেই সে উপলব্ধি করে । বিষয়টি মেনে নেওয়া তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে ওঠে ।
8. “ এর মধ্যে তপন কোথা ? ” — “ এর মধ্যে বলতে কীসের মধ্যে ? এর মধ্যে তপন নেই বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তরঃ ‘ এর মধ্যে ’ কথার অর্থ : আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পের উল্লিখিত অংশে ‘ এর মধ্যে ’ বলতে তপনের লেখা প্রথম গল্প ‘ প্রথম দিন ’ - এর কথা বলা হয়েছে । ( । তপন নেই — বলার অর্থ তপনের ছোটোমেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের লেখা জীবনের প্রথম গল্পটি প্রকাশের ব্যবস্থা করে দেন । কিন্তু গল্প প্রকাশের পরে তিনি জানিয়ে দেন যে নেহাত কাঁচা ’ হওয়ায় লেখাটিতে কিছু কারেকশান করতে হয়েছে । কথাটি চারদিকে প্রচারিত হয়ে যায় এবং তপনের লেখার গুণকে ছাপিয়ে ওঠে মেসোর মহত্ত্বের কথা । পরে তপন যখন তার মায়ের কথায় গল্পটি নিজে পাঠ করতে শুরু করে তখন সে অবাক হয়ে যায় । সংশোধন করতে গিয়ে ছোটোমেসো প্রায় গোটা গল্পটাই পালটে দিয়েছেন । সে তার লেখা গল্পের সঙ্গে এই গল্পের কোনো মিলই খুঁজে পায় না । “ এর প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা ....। " সংশোধন করতে গিয়ে গোটা গল্পটাকেই নিজের পাকা হাতের কলমে নতুন করে লিখে দিয়েছেন ছোটো মেসোমশাই । তপন গল্পটি আর পড়তে পারে না । নিজের ভাবনা কিংবা লেখকসত্তাকে গল্পের মধ্যে একেবারেই খুঁজে পায় না তখন ।
9. " তপন আর পড়তে পারে না । বোবার মতো বসে থাকে । ” তপনের এরকম অবস্থার কারণ বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে তপনের লেখা গল্প তার ছোটোমেসোমশায়ের উদ্যোগে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । তিনি গল্পটিকে প্রকাশযোগ্য করে তোলার জন্য যে সংশোধন করেছেন সেকথা সুকৌশলে প্রচার করে দেন । তপনের লেখার থেকে মেসোমশায়ের সংশোধনের কথাটাই বেশি আলোচিত হতে থাকে । আর এর মধ্য থেকে গল্প ছাপার আনন্দটা তপন যেন আর খুঁজে পায় না । কিন্তু এর থেকেও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা তার হয় , যখন তার মা তপনকে নিজের মুখে গল্পটা পড়তে বলেন । লজ্জা ভেঙে তপন যখন গল্পটা পড়তে যায় দেখে তার প্রত্যেকটি লাইন “ নতুন আনকোরা , তপনের অপরিচিত । ” সে গল্পের মধ্যে তপনের নিজের লেখা কোথাও নেই । সংশোধনের নামে ছোটোমেসো তপনের গল্পটিকে নতুন করে লিখেছেন , “ তাঁর নিজের পাকা হাতের কলমে । ” নিজের গল্পের এই পরিণতিই তপনকে বাকরুদ্ধ করে দেয় । সে আর পড়তে পারে না , বোবার মতো স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে ।
10." তপন বইটা ফেলে রেখে চলে যায় , তপন বইটা ফেলে রেখে চলে যায় কেন ? এরপর সে কী করেছিল ?
উত্তরঃ তপনের চলে যাওয়ার কারণ : আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে ছোটোমেসোমশাইয়ের উদ্যোগে তপনের গল্প প্রকাশিত হয় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় । তবে মেসো সবাইকে জানিয়ে দেন যে লেখাটি ‘ নেহাত কাঁচা ’ হওয়ায় তাঁকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হয়েছে । ক্রমে তপনের প্রতিভাকে ছাপিয়ে ছোটোমেসোর মহত্ত্বের কথাই প্রচারিত হয়ে যায় । এরপরে তপন যখন মায়ের নির্দেশে গল্পটি নিজে পাঠ করতে যায় , দেখে গল্পের প্রত্যেকটি লাইন তপনের অপরিচিত । সে হতবাক হয়ে যায় , তার পড়া থেমে যায় । মেসোমশাই সংশোধনের নামে গোটা গল্পটাই যে নতুনভাবে লিখে দিয়েছেন । আর সেই গল্পের ভিতর থেকে তপনের লেখা একেবারে হারিয়ে গিয়েছে । মার ধমকে সে আবার পড়তে শুরু করে , কিন্তু গল্পটি মাথায় ঢোকে না তার । অনেক প্রশংসা হয় , লেখক মেসোর ভূমিকার কথাও বলে অনেকে । কিন্তু তপন তখন এসব শুনতে পায় না । হতাশায় বঁইটা ফেলে রেখে সে উঠে চলে যায় ।
পরবর্তী ঘটনা বইটা ফেলে রেখে তপন ছাদে চলে যায় , শার্টের তলা দিয়ে চোখ মোছে । সে সংকল্প করে যে এরপর যদি কখনও লেখা ছাপতে হয় , তা সে নিজেই গিয়ে দিয়ে আসবে । নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন সে আর কোনোভাবেই পড়বে না ।
11.“ তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন । ” — তপনের এই মনে হওয়ার কারণ গল্পের কাহিনি অবলম্বনে আলোচনা করো ।
অথবা , ' আজ ' বলতে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে ? তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট দিন : আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে যেদিন তপনের ছোটোমাসি আর মেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তাদের বাড়িতে এসেছিলেন এবং যেখানে তার প্রথম গল্প ছাপা হয়েছিল — সেদিনের কথা বলা হয়েছিল ।
তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ : আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে তার নতুন মেসোমশাইকে দেখে লেখকদের সম্পর্কে তপনের কাল্পনিক ধারণা সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল । সে অবাক হয়েছিল এই দেখে যে , লেখকরাও একেবারেই সাধারণ মানুষ । তখন তপনের মনেও লেখক হওয়ার সাধ জেগে ওঠে এবং সে লিখে ফেলে তার জীবনের প্রথম গল্পটি । মৌলিক বিষয়ভাবনা কৌশলে ছোটোমাসির হাত ঘুরে সে গল্প পৌঁছেও যায় মেসোমশাইয়ের কাছে । কিছু কারেকশানের কথা বললেও তপনের বিষয়ভাবনার মৌলিকতার কথা বলে সেটিকে ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মেসোমশাই । অপেক্ষারত তপন শুরু হয় তপনের দিন গোনা । একসময় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেই লেখা — ‘ প্রথম দিন ’ । কিন্তু যা হতে পারত তপনের জীবনের ‘ সবচেয়ে সুখের দিন ’ , তা - ই হয়ে যায় তার ‘ সবচেয়ে দুঃখের দিন ’ ।
অলৌকিক ঘটনা : ছাপার অক্ষরে নিজের যে লেখা প্রকাশকে তার ‘ অলৌকিক ' ঘটনা বলে মনে হয়েছিল , তাই তাকে প্রায় বাক্যহীন করে দেয় । চারপাশে তপনের গল্পের প্রশংসার থেকেও মেসোর মহত্ত্বই সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে ।
স্বপ্নভঙ্গ : তপনের অপমান তীব্র হয় লেখাটি পড়তে গিয়ে । সে দেখে , রচনার একটি লাইনও তার চেনা নয় — মেসোমশাই গল্পটিকে আগাগোড়াই কারেকশান করে দিয়েছেন । লেখক তপন হারিয়ে গিয়েছে সেই গল্প থেকে । চোখ জলে ভিজে যায় তপনের ।
12.“ শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন , ” — তপনের দুঃখের কারণ কী ? সে কী ধরনের সংকল্প গ্রহণ করেছিল ?
উত্তরঃ তপনের দুঃখের কারণ , আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পে তপন ভাবত লেখকরা বোধ হয় অন্য জগতের বাসিন্দা । ইতিমধ্যে তার ছোটোমাসির বিয়ে হয় একজন লেখকের সঙ্গে । তপন দেখতে পায় ,মেসোও তার বাবা - কাকুর মতোই একজন স্বাভাবিক মানুষ । তখন থেকেই লেখক হওয়ার জেদ তার মাথায় চেপে বসে । সে লিখেও ফেলে একটি গল্প ৷ লেখক মেসো সেই গল্পটি সন্ধ্যাতারা নামক একটি পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন । ছাপানো লেখা হাতে পেয়ে তপন হতভম্ব হয়ে যায় । সে দেখতে পায় , পুরো লেখাটাই তার নতুন মেসো সংশোধন করে দিয়েছেন । তপন এই লেখার মধ্যে নিজেকেই আর খুঁজে পায় না । এতে তপন অপমানিত বোধ করে । নিজের সৃষ্টির এই আগাগোড়া পরিবর্তনই তপনের দুঃখের কারণ ।
গৃহীত সংকল্প : নিজের গল্পের এই আমূল পরিবর্তন দেখে লজ্জিত ও দুঃখিত তপন এক দৃঢ় সংকল্প করে । সে বুঝতে পারে , নিজের লেখা কাঁচা হলেও অন্যের দ্বারা সংশোধন করানো উচিত নয় । তাই তপন প্রতিজ্ঞা করে , এবার থেকে সে নিজে গিয়ে পত্রিকা সম্পাদকের হাতে লেখা দিয়ে আসবে । নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন যেন তাকে আর কখনোই পড়তে না হয় ।
13.“ তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই , তার থেকে অপমানের ! ” দুঃখ আর অপমানের কারণ কী ? এই দুঃখ আর অপমান দূর করতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী সংকল্প গ্রহণ করেছিল ? ৩ + ২
অথবা , দুঃখ আর অপমানের কারণ কী ? এই দুঃখ আর অপমান থেকে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী শিক্ষা লাভ করেছিল ? ৩ + ২
উত্তরঃ দুঃখ আর অপমানের কারণ : আশাপূর্ণা দেবীর ‘ জ্ঞানচক্ষু ’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের ধারণা ছিল লেখকরা কোনো সাধারণ মানুষ নন , আকাশ থেকে পড়া অতিমানবিক কোনো প্রতিভা । তপনের এই ধারণা দূর হয় তার নতুন মেসোকে দেখে । লেখক হওয়ার প্রবল ইচ্ছা তার মনেও জেগে ওঠে । মামার বাড়িতে বসেই তপন লিখে ফেলে একটা গল্প । মেসো প্রতিশ্রুতি দেন সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তিনি সেটা ছাপিয়ে দেবেন । কিন্তু ছাপানো গল্পটা পড়ে তপন হতবাক হয়ে যায় । গল্পের প্রতিটি লাইন নতুন , আনকোরা । ছোটোমেসো সংশোধনের নামে গল্পটি নতুন করে লিখে দিয়েছেন । তার মধ্যে তপন নিজেকে একেবারেই খুঁজে পায় না । তার মনে হয় লেখাটা তার নয় । নিজের লেখার আমূল পরিবর্তন দেখে তপন দুঃখ পায় ও অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে ।
বৃহীত সংকল্প , দুঃখ আর অপমান থেকে তপন নতুন এক অভিজ্ঞতা লাভ করে । তপন সংকল্প করে , ভবিষ্যতে সে যদি কখনও লেখা ছাপতে দেয় , তাহলে সে নিজেই পত্রিকা সম্পাদকের কাছে দিয়ে আসবে । তাতে ছাপা হোক বা না হোক তার দুঃখ নেই । কেউ তো আর বলতে পারবে না , “ অমুক তপনের লেখা ছাপিয়ে দিয়েছে । ” আত্মমর্যাদাসম্পন্ন তপন আরও বুঝেছিল , অপরের সাহায্য নিয়ে কখনোই লেখক হওয়া যায় না ।
No comments:
Post a Comment