প্রবন্ধকার পরিচিতিঃ
ভূমিকা : “ জগতের এত বিষয়ে এত জ্ঞান খুব বেশি মানুষের আমি দেখিনি । ” — পণ্ডিত , সাহিত্যিক , বিদগ্ধ ব্যক্তি নিখিল সরকার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন কবি - সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন । কলকাতার সংস্কৃতি , প্রাচীন জীবনধারা সম্পর্কে দীর্ঘদিন গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন নিখিল সরকার । বাংলা সাহিত্য জগতে ‘ীপাদ ’ ছদ্মনামেই তিনি অধিক পরিচিত ।
জন্ম ও শৈশব : ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর গ্রামে নিখিল সরকারের জন্ম হয় । শৈশবজীবন থেকেই সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল ।
শিক্ষাজীবন : ময়মনসিংহতেই নিখিল সরকারের শিক্ষাজীবনের সূচনা । পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক হন ।
কর্মজীবন : তরুণ বয়সে সাংবাদিকতা দিয়ে নিখিল সরকারের কর্মজীবনের সূচনা হয় । তিনি প্রথমে যুগান্তর পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন , তারপর আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করেন । ‘ পুস্তক পর্যালোচনা এবং প্রতি সোমবার ‘ কলকাতার কড়চা ’ — এই দুটি বিষয় তাঁর কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য কীর্তি ।
সাহিত্যজীবন : সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার সময়ই নিখিল সরকারের সাহিত্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটে । আদি কলকাতার সমাজ , সংস্কৃতি , পরিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে তিনি দীর্ঘ লেখালেখি ও গবেষণা করেন । প্রবন্ধ আকারে তাঁর লেখাগুলি বিভিন্ন ইংরেজি পত্রিকাতেও প্রকাশিত হতে থাকে । লেখালেখির প্রতি গভীর আগ্রহ এবং সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে শ্রীপান্থ বহু কবি - সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে আসেন । তিনি বাংলায় প্রথম ধাতব হরফে ছাপা হ্যালহেডের আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজগ্রন্থটির সম্পাদিত সংস্করণের দীর্ঘ ভূমিকা লিখেছেন । তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল— আজব নগরী ( প্রথম গ্রন্থ ) , শ্রীপাম্বের কলকাতা , যখন ছাপাখানা এলো , মোহন্ত এলোকেশী সম্বাদ , কেয়াবাৎ মেয়ে , মেটিয়াবুরুজের নবাব , দেবদাসী , ঠগী , হারেম , বটতলা ৷
পুরস্কার : নিখিল সরকার ১৯৭৮ - এ আনন্দ পুরস্কার পান ।
জীবনাবসান : ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ৭৩ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যানসারে এই পণ্ডিত মানুষটির জীবনাবসান ঘটে ।
উৎসঃ
‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' প্রবন্ধটি কালি আছে কাগজ নেই , কলম আছে মন নেই রচনা থেকে গৃহীত ।
বিষয়সংক্ষেপঃ
‘ কালি - কলম - মন , লেখে তিন জন - প্রবাদটি প্রচলিত হলেও কলম ক্রমশ হারিয়ে গিয়েছে । লেখক লেখালেখির অফিসে কাজ করেন । লেখক ছাড়া সেখানে সবাই কম্পিউটার ব্যবহার করেন । এমনকি কখনও ভালোবেসে তারা লেখকের লেখাটাও কম্পিউটারে লিখে দেন । কলম লেখকের নিত্যসঙ্গী । কখনও সেই কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলেই বিপদ ৷ অফিসে কারও সঙ্গে কলম থাকে না । আবার কলম পেলেও তার মুখ ভোতা , ফলে লিখে তিনি শান্তি পান না । লেখালেখির অফিস হওয়া সত্ত্বেও কারও কাছে কলম থাকে না । তবুও কালগুণে তারা সবাই মুনশি ।
লেখক গ্রামের ছেলে । শৈশবে বাঁশের কলম তৈরি করে তার লেখাপড়ার শুরু । বড়োদের পরামর্শে কলমের মুখটা চিরে নিতেন , কারণ তাহলে কালি ধীর প্রবাহে পড়ত । কাগজের মতো করে কলাপাতা কেটে তাতেই তিনি লিখতেন । বাড়ির কাজ মাস্টারমশাইকে দেখানোর পর বাড়ি ফেরার পথে তা পুকুরে ফেলে দিতেন , কারণ সেই যুগে এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে , বাড়ির বাইরে ফেললে গোরুতে খেলে অমঙ্গল বা পাপ হয় ।
শৈশবে লেখকও তার সহপাঠীরা মা , পিসি , দিদিদের সাহায্যে বাড়িতেই কলমের মতো কালিও তৈরি করতেন । অতি সহজ পদ্ধতিতে বাড়িতে যে কাঠের উনুনে রান্না হত , সেই কড়াইয়ের তলার কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে , পাথরের বাটিতে গুলে লেখকও তাঁর সহপাঠীরা কালি তৈরি করতেন । কখনও হরীতকী , আতপ চাল ভাজা পুড়িয়ে বেটে মিশিয়ে নিতেন । তারপর একটা খুন্তির গোড়ার দিক আগুনে পুড়িয়ে লাল টকটকে করে সেই জলে ছ্যাকা দিতেন । জল কম থাকায় তা টগবগ করে ফুটত । সবশেষে ন্যাকড়া দিয়ে ছেঁকে দোয়াতে ভরে কালি প্রস্তুত করতেন । তবে প্রাচীনদের মত ছিল ভালো কালি তৈরির জন্য প্রয়োজন তিল , ত্রিফলা , শিমুল গাছের ছাল , ছাগলের দুধ ও লোহা । এভাবেই বাঁশের কলম , মাটির দোয়াত , ঘরে তৈরি কালি , কলাপাতা দিয়েই লেখক ও তার সহপাঠীদের প্রথম লেখালেখির কাজ শুরু হয়েছিল । সেই কলম হাতছাড়া হওয়ার উপক্রমে লেখক ব্যথিত হয়েছেন ।
লেখক ভেবেছেন , তিনি যদি জিশু খ্রিস্টের আগে জন্মাতেন বা মিশরে জন্মাতেন বা যদি সুমেরিয়ান , ফিনিসিয়ান হতেন , তাহলে নীল নদের তীর থেকে নলখাগড়া ভেঙে নিয়ে কলম বানাতেন । ফিনিসীয় হলে বনপ্রান্ত থেকে হাড় সংগ্রহ করে কলম বানাতেন । রোমের সম্রাট জুলিয়াস সিজার হলে ব্রোঞ্জের শলাকা বা স্টাইলাস হাতে তুলে নিতেন । চিনারা শুধু তুলিতে লিখেছেন , বাকি সকলেই বাঁশের , নলখাগড়ার , পাখির পালকের বা ব্রোঞ্জের শলাকা কলম হিসেবে ব্যবহার করেছেন ।
যুগের পরিবর্তনে নানান রকমের কলম এসেছে । বাঁশের কলম আর খুঁজেই দেখা যায় না । খাগের কলম শুধু সরস্বতী পুজোর সময় ব্যবহৃত হয় । এমনকি পালকের কলম দেখতে গেলেও তৈলচিত্রেই শুধু তা দেখা যায় । যেমন , উইলিয়ম জোন্স বা মুনশি কেরি সাহেবের ছবিতে দেখা যায় । পালকের কলম বানানোর জন্য সাহেবরা পেনসিল শার্পনারের মতো একটা যন্ত্রও বানিয়েছিলেন ।
পালকের কলম , দোয়াতকলম সবই এখন উধাও । অনেক অফিসে ডটপেনই দোয়াতকলম হিসেবে সাজানো থাকে । একসময় ফেরিওয়ালারাও কলম বিক্রি করত । ছোটোবেলায় লেখক দেখেছেন , এক দারোগাবাবু পায়ের মোজায় কলম খুঁজে রাখতেন । আধুনিক ছেলেরা বুকপকেটের বদলে কাধের ছোটো পকেটে কলম সাজিয়ে রাখে । শিক্ষিত মানুষ ছাড়াও কলম যে - কোনো মানুষেরই সঙ্গী হয়ে ওঠে । সর্বভোগ্য ও সর্বজনীন হওয়ার ফলে পকেটমারদের কাছেও কলম গুরুত্ব হারায় ।
লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান নামক ব্যবসায়ী ফাউন্টেন পেন আবিষ্কার করে পেনের জগতে বিপ্লব আনেন । লেখক কলেজ স্ট্রিটের এক দোকানে ফাউন্টেন পেন কিনতে গিয়ে পার্কার , শেফার্ড , ওয়াটারম্যান , সোয়ান , পাইলট প্রভৃতি হরেক পেনের হরেকরকম দাম ও কারুকার্য দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান । সেখান থেকে সস্তায় একটা জাপানি পাইলট পেন কিনে আনেন । দোকানদার অনেক কসরত করে পেনটার নিব কতটা শক্ত তা দেখান । ফাউন্টেন পেন সংগ্রহও একসময় নেশার মতো ছিল ।
সাহিত্যিক শৈলজানন্দ , শরৎচন্দ্র প্রমুখের ফাউন্টেন পেন সংগ্রহের নেশা ছিল । লেখক ছিলেন কালিকলমের ভক্ত । হাই স্কুলে ভরতির পর তিনি বাঁশের কলম ব্যবহার বন্ধ করে দেন । কালি বানানোও তখন বন্ধ হয়ে যায় । সেই সময় বাজারে কাজল , সুলেখা প্রভৃতি কালি কিনতে পাওয়া যেত । এরপর ফাউন্টেন পেন তার রকমারি বাহারি চেহারা নিয়ে ক্রমশ দোয়াত এবং কলমকে হটিয়ে দেয় । ধীরে ধীরে করি কলম , খাগের কলম , দোয়াতকলম , কালির আধার , ব্লটিং পেপার সব কিছু হারিয়ে যায় ৷
একবার সুভো ঠাকুরের দোয়াতের সংগ্রহ দেখে লেখক অবাক হয়েছিলেন । কাচের , কাট - গ্লাসের পোর্সেলিনের , শ্বেতপাথরের , জেডের , পিতলের , এমনকি সোনারও দোয়াত হত । সেইসমস্ত দোয়াত দিয়েই অমর সাহিত্যিকরা তাঁদের সাহিত্য রচনা করেছিলেন । কলমের সেইসব সোনালি দিন ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে । ফাউন্টেন পেনের জায়গা নেয় বল পেন । ফাউন্টেন পেন এবং বল পেন নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় আসে । বল পেনের জোরের জায়গা হল তার কালির স্থায়িত্ব । আবার ফাউন্টেন পেনের অহংকার তার নিবের বৈচিত্র্য । যন্ত্রযুগ ধনী , দরিদ্র , শ্রুতিলেখক সবারই কলমের চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত ।
এরপর একসময় বাজারে আসে কম্পিউটার । কম্পিউটারের কারণে কলমের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠেছে । একসময় বিশ্বের দরবারে লিপিকুশলীদের সম্মান ছিল , বই লেখার মূল্য কম হলেও তা অমূল্য ছিল । লেখক বা লিপিকররা তাদের বই নিয়ে গর্ব করতেন । কলমকে বলা হত তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর ।
ইতিহাসে পালকের কলমধারীদের সত্যিই কখনো কখনো তলোয়ার হাতে লড়াই করতে হয়েছে । তাই অনেক পরিবর্তনের মাঝেও কাউকে কলম আঁকড়ে থাকতে দেখলে লেখকের ভালো লেগেছে । তার সময়কালের অন্নদাশঙ্কর রায় বা সুভাষ মুখোপাধ্যায় টাইপরাইটারে লিখলেও বাকিরা কলমেই লিখেছেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা সত্যজিৎ রায় কলমের সাহায্যেই তাঁদের শিল্পবোধকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন । এঁদের দুজনেরই কলমের লেখা শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল ।
লেখক স্বীকার করেছেন , তিনি কলমের ভক্ত হলেও আধুনিক বল পেনের কাছে তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন । তবে কলম যে সাহিত্যিক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল , সেই করুণ কাহিনিও লেখক জানাতে ভোলেননি ।
নামকরণঃ
সাহিত্যের নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । রচয়িতার অভিপ্রায় রচনাটির নামের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় । নামকরণ সাধারণত চরিত্রধর্মী , বিষয়ভিত্তিক বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে । আমাদের পাঠ্য ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' প্রবন্ধটির নামকরণ কতদূর সার্থক , তা আলোচনাযোগ্য ।
কালি - কলম - মন , লেখে তিন জন অর্থাৎ , প্রাচীন কাল থেকেই মনের সঙ্গে কালি এবং কলমের সম্পর্ক । সময় এগিয়ে চলেছে নদীর স্রোতের মতো । বহমানতার যুগে মানুষ ক্রমশ যন্ত্রকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে । এর ফলেই মানুষ মনের সঙ্গে যুক্ত থাকা ছোটো ছোটো সামগ্রী হারাতে বসেছে । লেখক তার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই বলেছেন যে , তার অফিসে সবাই কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী । একমাত্র তিনিই কলম ব্যবহার ছাড়তে পারেননি । এর ফলে “ একদিন যদি কোনও কারণে কলম নিয়ে যেতে ভুলে যাই তবেই বিপদ । –কলম ! কারও সঙ্গে কলম নেই । ” এই বিলাপ থেকেই স্পষ্ট যে কলম হারিয়ে যেতে বসেছে । শৈশবে লেখকরা যেভাবে বাঁশের কলম তৈরি করে ব্যবহার করেছেন এবং কড়াইয়ের নীচের কালি লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে জলে গুলে যেভাবে কালি তৈরি করেছেন তা এখন স্মৃতির বিষয় । ফাউন্টেন পেন আসার পর কলম হয়ে ওঠে সস্তা এবং সবার প্রিয় । ক্রমশ ফাউন্টেন পেনের আধিপত্যকে হটিয়ে দিয়ে বাজার দখল করে বল - পেন । ইতিহাসের পাতায় চলে যায় বাঁশের পেন , খাগের পেন , পালকের পেন প্রভৃতি । হাতে তৈরি কালি , সুলেখা কালি , কালি শুকানোর ব্লটিং পেপার সব উধাও হয়ে যেতে থাকে । আক্ষেপের সুরে তাই লেখক বলেছেন , “ আশ্চর্য , সবই আজ অবলুপ্তির পথে । কম্পিউটার তাদের জাদুঘরে পাঠাবে বলে যেন প্রতিজ্ঞা করেছে । ” তাঁর আক্ষেপ বিষাদে পরিণত হয়েছে , কারণ তিনিও জানেন যে আধুনিকতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে । তবুও শৈশবের সেই কালিকলম হারিয়ে যাওয়াকে তিনি মানতে পারেননি । তাই বিষয়ের সঙ্গে নামটি সাযুজ্যপূর্ণ এবং বিষয়ধর্মী নামকরণ হিসেবে রচনাংশটির নামটি তাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ সংগতি লাভ করেছে । ও সার্থক হয়েছে ।
◽বহু বিকল্পিয় প্রশ্ন [ MCQ] ও উত্তরঃ
প্রতিটি প্রশ্নের মান -১
১. ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' রচনাটি যে গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে , সেটি হল —
ক. যখন ছাপাখানা এলো
খ. কালি আছে কাগজ নেই , কলম আছে মন নেই
গ. আজব নগরী
ঘ. বটতলা
২. শ্রীপান্থের আসল নাম-
ক. অন্নদাশঙ্কর রায়
খ. নিখিলনাথ রায়
গ.নিখিল সরকার
ঘ. সুবোধ ঘোষ
৩. নিখিল সরকার ওরফে ' শ্রীপান্থ'র জন্ম হয়—
ক. ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
খ. ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ।
গ.১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
ঘ. ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে
৪. নিখিল সরকার রচিত একটি গ্রন্থ হল —
ক. মেটিয়াবুরুজের নবাব ও
খ. কঙ্কাবতী
গ.আমার বাঙালি
ঘ. রামায়ণ
৫. কথায় আছে , কালি কলম মন , লেখে... জন
ক এক
খ.দুই
গ. তিন
ঘ. চার
৬ “ কালি কলম মন , লেখে তিন জন । ” — এটি হল জন ।
ক. ধাঁধা
খ. প্রবাদ
গ. রূপকথা
ঘ. উপকথা
৭. লেখক যেখানে কাজ করেন , সেটা হল —
ক. ছাপাখানা
খ. পুথি লেখার কারখানা
গ.লেখালেখির অফিস
ঘ. গল্প লেখার আসর
৮. লেখক যেখানে কাজ করেন সেখানে সবাই —
ক. লেখক
খ. পুলিশ
গ. আড্ডাবাজ
ঘ. চাকর
৯. লেখক তাঁর অফিসে কোন্ জিনিসের কথা বলেছেন যা শুধু তাঁরই আছে ?
ক. একটি অভিধান
খ. একটি কম্পিউটার
গ.কলম
ঘ. বই
১০. লেখকের হাতে কলম এবং বাকিদের সামনে কী ?
ক. টাইপরাইটার
খ. কম্পিউটার
গ. প্রচুর বই
ঘ. দোয়াত ও পেন
১১. “ আমি যা লিখি ওঁরা ভালোবেসে আমার লেখাকেও এভাবে ছাপার জন্য তৈরি করে দেন । ” –‘ওরা ’ বলতে লেখকের –
ক. বন্ধুরা
খ. শিক্ষক - শিক্ষিকারা
গ. সহপাঠীরা
ঘ. সহকর্মীরা
১২. লেখক একদিন কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলেই বিপদ কেন ?
ক. কারও কলমে কালি নেই
খ. কারও সঙ্গে কলম নেই
গ. সবার সঙ্গে কথা বন্ধ
ঘ. কলম চাওয়া নিষেধ
১৩. “ তবে তাতে লিখে আমার সুখ নেই ” – কেন ?
ক. গলা শুকনো ভোতামুখের কলম
খ. অনেক দামি পেন
গ. পেন দিয়ে কালি ঝরে না
ঘ. ভালো মনে কেউ দেয় না
১৪. লেখকের কাছে তাঁর অফিস তাঁর –
ক. জন্মস্থান
খ. কারখানা
গ. মৃত্যুস্থান
ঘ. রান্নাঘর .
১৫. বাংলায় প্রচলিত কথা “ কালি নেই , কলম নেই বলে আমি
ক. কবি
খ. লেখক
গ. মুনশি
ঘ. কলমবিদ
১৬. “ কালগুণে বুঝিবা আজ আমরাও তা - ই । ” আমরাও কী ?
ক. লেখক
খ. মুনশিপ
গ. কবি
ঘ. পণ্ডিত
১৭. হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনায় লেখকের বয়স কত বলে ধারণা করা হয়েছে ?
ক. ৪০-৫০ বছর
খ. ৫০ ৬০-বছর
গ. ৬০-৭০ বছর
ঘ. ৭০-৮০ বছর
১৮. , লেখক ছেলেবেলায় কলম তৈরি করতেন —
ক. কাশফুলের খড় দিয়ে
খ. রোগা বাঁশের কঞি কেটে
গ. পেয়ারা ডাল কেটে
ঘ. শ্যাওড়া ডাল কেটে
১৯ ... কলম তৈরির সময় বড়োরা শিখিয়েছিলেন —
ক. কলমের মুখটা চিরে দিতে হবে হতে হবে
থ. কলমের মাথাটা ভোঁতা হতে হবে
গ. কলমের মাথার দুটো অংশ থাকবে
ঘ. কলমের মুখ চেরা চলবে না
২০. লেখার পাতা বলতে শৈশবে লেখকদের কী ছিল ?
ক.কলাপাতা
খ. লাউ পাতা
গ. তাল পাতা
ঘ. শাল পাতা
২১. “ আমরা তাতে হোম - টাস্ক করতাম । " — ' তাতে ' বলতে— ঘ লাউ পাতায়
ক. বড়ো খাতায়
খ. ব্ল্যাকবোর্ডে
গ. কলাপাতায়
ঘ. লাউ পাতায়
২২.কলাপাতায় হোমটাস্ক করে লেখক কোথায় নিয়ে যেতেন ?
ক. অফিসে
খ. স্কুলে
গ. গুরুমশায়ের কাছে
ঘ. বাবার কাছে
২৩. হোমটাস্ক করা কলাপাতাগুলি মাস্টারমশাইকে দেখানোর পর লেখকরা কী করতেন ?
ক.বাড়িতে রেখে দিতেন
খ. বাবা মাকে দেখাতেন
গ. স্কুলে রেখে আসতেন
ঘ. পুকুরে ফেলে দিতেন
২৪. বাইরে না ফেলে লেখক হোমটাস্কের কলাপাতাগুলি পুকুরেই ফেলতেন , কারণ বাইরে ফেললে —
ক. গোৱু খেলে অমঙ্গল হবে
খ. রাস্তার লোকে পা দিলে পাপ হবে
গ. বাইরের লোকে দেখে ফেলবে
ঘ. সরস্বতী খুশি হবেন
উত্তরঃ ১.খ ২.গ ৩.গ ৪.ক ৫.গ ৬.খ ৭.গ ৮.ক ৯.গ ১০.খ ১১.ঘ ১২.খ ১৩.ক ১৪.খ ১৫.গ ১৬.খ ১৭.খ ১৮.খ ১৯.ক ২০.ক ২১.গ ২২.খ ২৩.ঘ ২৪.ক
◽অতি সংক্ষিপ্ত [SAQ] উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রতিটি প্রশ্নের মান -১
১. শ্রীপান্থ কোন্ সাহিত্যিকের ছদ্মনাম ?
উঃ শ্রীপান্থ হল নিখিল সরকারের ছদ্মনাম ।
২. পাঠ্য ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনাটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত ?
উঃ পাঠ্য ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনাটি নিখিল সরকার রচিত কালি আছে কাগজ নেই , কলম আছে মন নেই গ্রন্থের অন্তর্গত ।
৩. কালি আছে কাগজ নেই , কলম আছে মন নেই গ্রন্থটি ছাড়া নিখিল সরকার রচিত অপর দুটি গ্রন্থের নাম লেখো ।
উঃ কালি আছে কাগজ নেই , কলম আছে মন নেই গ্রন্থটি ছাড়া নিখিল সরকার রচিত অপর দুটি গ্রন্থ হল যখন ছাপাখানা এলো , মেটিয়াবুরুজের নবাব ।
৪. “ লেখে তিন জন । ” — এই ‘ তিন জন ’ বলতে কাদের বোঝানো । হয়েছে ?
উঃ শ্রীপান্থ রচিত ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতাংশে তিন জন বলতে কালি , কলম এবং মনকে বোঝানো হয়েছে ।
৫. লেখক যেখানে কাজ করেন সেটা কীসের অফিস এবং সবাই সেখানে কী ?
উঃ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' রচনায় লেখক শ্রীপান্থ যেখানে কাজ করেন সেটা লেখালেখির অফিস এবং সেখানে সবাই লেখক ।
৬.লেখকের অফিসে লেখক ছাড়া সকলের সামনে কী থাকে ?
উঃ লেখকের অফিসে লেখক ছাড়া সকলের সামনে চৌকো আয়নার মতো একটা কাচের স্ক্রিন বা পরদা অর্থাৎ কম্পিউটার থাকে ।
৭. “ লেখকরা অনবরত তা দিয়ে লিখে চলেছেন ” – ‘ তা ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উঃ শ্রীপান্থ রচিত ' হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনায় আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে ‘ তা ’ বলতে ছাপা হরফ - সহ কম্পিউটারের কি - বোর্ডকে বোঝানো হয়েছে ।
৮. লেখক একদিন অফিসে কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলে ‘ তবেই বিপদ ’ কেন বলেছেন ?
উঃ এক্ষেত্রে বিপদ হল লেখক ছাড়া তাঁর অফিসে কেউ লেখার কাজে কলম ব্যবহার করেন না । এমনকি কারও কাছে কলম পাওয়া গেলেও সেই ভোতা মুখের কলমে লিখে লেখক সুখ পান না ।
৯. দায়সারা ভাবে কোনও মতে সেদিনকার মতো কাজ সারতে হয় । ” -‘দায়সারা ’ কথাটি ব্যবহার করেছেন কেন ?
উঃ অফিসে লেখকই একমাত্র কলম ব্যবহার করতেন । তাই কোনোদিন অফিসে কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলে কারও ভোতা মুখের কলমেই অগত্যা কাজ চালাতে হত তাকে ।
১০. “ বাংলায় একটা কথা চালু ছিল । ” — কোন্ কথা চালু ছিল ?
উঃ বাংলায় চালু কথাটি ছিল— “ কালি নেই , কলম নেই , বলে আমি মুনশি ।
১১. “ কালগুণে বুঝিবা আজ আমরাও তা - ই । ” — ‘ আমরাও তা - ই ’ বলতে লেখক কী বলেছেন ?
উঃ বাংলার এক প্রচলিত প্রবাদ ছিল ‘ কালি নেই , কলম নেই , বলে আমি মুনশি ’ । কম্পিউটারের বহুল ব্যবহারের ফলে লেখক বলেছেন কালি ও কলম ছাড়া এখন সবাই মুনশি বা লেখক হয়ে উঠেছে ।
১২ , “ বড়োরা শিখিয়ে দিয়েছিলেন ” –বড়োরা কী শিখিয়েছিলেন ?
উঃ ছোটোবেলায় কলম তৈরি করার সময় বড়োরা শিখিয়েছিলেন বাঁশের করি ছুঁচোলো মুখটা চিরে দিতে , তবেই কালি একসঙ্গে না গড়িয়ে ধীরে ধীরে পড়বে ।
১৩. লেখকদের শৈশবে লেখার পাত কেমন ছিল ?
উঃ শৈশবে লেখকদের লেখার পাত বলতে ছিল কলাপাতা । এটিকে কাগজের মতো ব্যবহার করে তাতে লেখক ও তার সহপাঠীরা হোমটাস্ক করতেন ।
১৪. কলাপাতায় হোমটাস্ক করার পর সেগুলি নিয়ে শৈশবে লেখকরা কী করতেন ?
উঃ লেখকরা কলাপাতায় হোমটাস্ক করে সেগুলি বান্ডিল বেঁধে স্কুলে নিয়ে গিয়ে মাস্টারমশাইকে দেখাতেন । মাস্টারমশাই সেগুলো দেখার পর আড়াআড়িভাবে ছিঁড়ে ফেরত দিলে তারা সেটা পুকুরে ফেলে দিতেন ৷ ।
১৫. “ গোরুকে অক্ষর খাওয়ানোও নাকি পাপ । ” — তাই লেখকরা শৈশবে কী করতেন ?
উঃ শৈশবে লেখকরা মাস্টারমশাইয়ের ফেরত দেওয়া ছেঁড়াখোঁড়া কলাপাতার টুকরোগুলি পুকুরে ফেলে দিতেন । কারণ সেযুগে মনে করা হত ওগুলো গোরু খেলে অমঙ্গল হবে ।
১৬. কালি তৈরির উৎকৃষ্ট পদ্ধতি সম্পর্কে প্রচলিত প্রবাদটি লেখো ।
উঃ কালি তৈরির বিষয়ে প্রচলিত প্রবাদটি হল— “ তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা / ছাপ দুগ্ধে করি মেলা / লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি / ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি । ”
১৭. বড়োদের সাহায্য নিয়ে শৈশবে লেখকরা কীভাবে নিজেরাই কালি তৈরি করতেন ?
অথবা , “ আমাদের ছিল সহজ কালি তৈরি পদ্ধতি । ” — সহজ পদ্ধতিটি কী ছিল ?
উঃ কাঠের উনুনে ব্যবহার করা কড়াইয়ের নীচে জমে থাকা কালি লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে , একটা পাথরের বাটিতে জলে গুলে নিয়ে শৈশবে লেখকরা নিজেরাই কালি তৈরি করতেন ।
১৮. “ বলতে গেলে তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি । ” — কী কী নিয়ে প্রথম লেখালেখি ছিল ?
উঃ বাঁশের কলম , মাটির দোয়াত , ঘরে তৈরি কালি এবং লেখার জন্য কলাপাতা — এগুলি নিয়েই শৈশবে লেখকের প্রথম লেখালেখি ছিল ।
১৯. খাগের কলমের ব্যবহার এখন কোন সময়ে দেখা যায় ?
উঃ খাগের কলমের ব্যবহার এখন সরস্বতী পুজোর সময় দেখা যায় । ।
২০. পালকের কলমের ইংরেজি নাম কী ?
উঃপালকের কলমের ইংরেজি নাম হল কুইল ।
২১. বাঙালি সাংবাদিকদের ইংরেজি দেখে কে , কী বলতেন ?
উঃ বাঙালি সাংবাদিকদের ইংরেজি দেখে লর্ড কার্জন ‘ বাবু কুইল ড্রাইভারস ’ বলতেন ।
২২. পালকের কলম বর্তমানে দেখার জন্য কীসের ওপর নির্ভর করতে হয় ?
অথবা , ' কুইল ’ এখন কোথায় দেখতে পাওয়া যায় ?
উঃ পালকের কলম বা ‘ কুইল ’ বর্তমানে দেখার জন্য পুরোনো দিনের তৈলচিত্র বা ফোটোগ্রাফের ওপর নির্ভর করতে হয় ।
২৩. এমন দুটি চিত্রের উল্লেখ করো যাতে পালকের কলম দেখা যায় ।
উঃ উইলিয়াম জোন্সের ও স - মুনশি কেরি সাহেবের চিত্র দুটিতে পালকের কলম দেখা যায় ।
২৪. পালক কেটে কলম তৈরি করার জন্য সাহেবরা কী করেছিলেন ?
উঃ পালক কেটে কলম তৈরি করার জন্য সাহেবরা পেনসিল শার্পনারের মতো এক ধরনের যন্ত্র তৈরি করেছিলেন । কলম বানানোর জন্য তাতে ব্লেড ছিল ।
২৫. “ কিন্তু সে সব ফাঁকি মাত্র । ” –এই উত্তির তাৎপর্য কী ?
উঃ পালক কলম এবং দোয়াত কলমের পরিবর্তে অফিসে ছদ্মবেশী বল পেন সাজানো থাকে , যাকে লেখক বলেছেন ‘ ফাকি মাত্র ’ ।
২৬. “ কিছুকাল আগে একজন বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন ... ” কী লিখেছিলেন ?
উঃ কিছুকাল আগে একজন বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন যে , কলকাতার চৌরঙ্গিতে তিন জন ফেরিওয়ালার মধ্যে এক জন কলমবিক্রেতা ।
২৭. “ দার্শনিক তাঁকেই বলে ” — দার্শনিক কাকে বলা হয় ?
উঃ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' রচনায় লেখকের মতে যিনি কানে কলম গুঁজে দুনিয়া খোঁজেন তাকেই দার্শনিক বলা হয় ।
২৮. “ কেউ কেউ অবশ্য চুলেও কলম ধারণ করেন । ” — এই প্রসঙ্গে শ্রীপান্থ কী উদাহরণ দিয়েছেন ?
উঃ আলোচ্য প্রসঙ্গে শ্রীপান্থ উদাহরণ দিয়েছেন , ভিড় ট্রাম বা বাস থেকে নামার সময় দেখা যায় , কোনো কোনো মহিলা যাত্রীর খোঁপায় কলম গোঁজা রয়েছে ।
২৯. “ কলম এখন সর্বজনীন । ” – তাৎপর্য কী ?
উঃ সস্তা এবং সর্বভোগ্য হওয়ার ফলে ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’রচনায় কলম সম্পর্কে লেখক এমন মন্তব্য করেছেন ।
৩০., “ কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য । ” — অস্পৃশ্য কেন ?
উঃ কলম অতি সস্তা এবং সর্বভোগ্য হওয়ার ফলে পকেটমারও এখন কলম চুরি করে না । তাই বলা হয়েছে তাদের কাছে কলম অস্পৃশ্য ৷
৩১. “ কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য । ” — কাদের কাছে ?
উঃ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' রচনায় লেখক বলেছেন , কলম সস্তা হয়ে যাওয়ার ফলে হাত সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত পকেটমারদের কাছে কলম অস্পৃশ্য হয়ে যায় ।
৩২.. কলমের দুনিয়ায় সত্যিকারের বিপ্লব কীভাবে ঘটেছে ?
উঃ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনায় লেখক বলেছেন কলমের দুনিয়ায় সত্যিকারের বিপ্লব ঘটেছে ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কারের ফলে ।
৩৩.. “ নামটা রবীন্দ্রনাথের দেওয়াও হতে পারে । ” — কোন্ নামের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ ফাউন্টেন পেনের যে বাংলা নাম ঝরনা কলম একদা প্রচলিত ছিল , এখানে সেই নামের কথা বলা হয়েছে ।
৩৪. প্রথমে ফাউন্টেন পেনের নাম কী ছিল ?
উঃ শ্রীপান্থ রচিত ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনায় জানা যায় প্রথমে ফাউন্টেন পেনের নাম ছিল রিজার্ভার পেন ।
৩৫. “ আমি ছিলাম কালি কলমের ভক্ত । ” –এখানে কী বলতে চেয়েছেন লেখক ?
উঃ লেখক পুরোনো দিনের দোয়াত - ভরা কালি আর নিবের ভক্ত ছিলেন । আলোচ্য অংশে লেখক সেই কথাটিই বলতে চেয়েছেন ।
৩৬. ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ প্রবন্ধে দোয়াতে এবং বোতলে তৈরি করে রাখা কালির কী কী নাম পেয়েছ ?
উঃ ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' প্রবন্ধে দোয়াতে এবং বোতলে তৈরি করে রাখা কালির কাজল কালি , সুলেখা ইত্যাদি নাম পেয়েছি ।
৩৭. বিদেশে উন্নত ধরনের নিব টেকসই করার জন্য কী দিয়ে বানানো হত ?
উঃ বিদেশে উন্নত ধরনের নিব টেকসই করার জন্য গোরুর শিং অথবা কচ্ছপের খোল কেটে বানানো হত ৷
৩৮. “ ক্রমে হঠিয়ে দেওয়া হলো দোয়াত আর কলমকে । ” — কীভাবে হঠিয়ে দেওয়া হল ?
উঃ ফাউন্টেন পেনের সস্তা , দামি , উন্নত নানা ধরনের সম্ভার বাজারে আসার ফলে দোয়াত এবং কলম ক্রমশ বাজার থেকে হটে গেল ।
৩৯. একসময় লেখা শুকোনো হত কী দিয়ে ?
উঃ শ্রীপান্থ রচিত ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' রচনা থেকে জানা যায় , প্রথমে বালি এবং পরে ব্লটিং পেপারে একসময় লেখা শুকোনো হত ।
৪০. “ না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত । ” —কী প্রসঙ্গে লেখক এরূপ - বলেছেন ?
উঃ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’রচনায় দোয়াতের বৈচিত্র্য প্রসঙ্গে লেখক এ কথা বলেছেন ৷
৪১. গ্রামে কেউ দু - একটা পাস করতে পারলে বুড়োবুড়িরা কী বলে আশীর্বাদ করতেন ?
উঃ গ্রামে কেউ দু - একটা পাস করতে পারলে বুড়োবুড়িরা তাকে ‘ সোনার দোয়াতকলম হোক ’ বলে আশীর্বাদ করতেন ।
৪২. “ সোনার দোয়াত কলম যে সত্যিই হতো ” তা লেখক কীভাবে জেনেছিলেন ?
উঃ ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' রচনা থেকে জানা যায় , সোনার দোয়াতকলম যে সত্যিই হত তা লেখক জেনেছিলেন সুভো ঠাকুরের দোয়াতের সংগ্রহ দেখে ৷
৪৩. সুভো ঠাকুরের দোয়াতের সংগ্রহ দেখে অবাক হয়ে মনে মনে লেখক কী ভেবেছিলেন ?
উঃ লেখক অবাক হয়ে মনে মনে ভেবেছিলেন , এই ধরনের দোয়াতের কালি ও কলম দিয়েই শেকসপিয়র , দান্তে , মিল্টন , কালিদাস , কাশীরাম , রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ সাহিত্যিক তাঁদের অমর রচনা লিখে গিয়েছেন ৷
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী [L.A.Q]প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রতিটি প্রশ্নের মান -৫
১. “ কথায় বলে কালি কলম মন , লেখে তিন জন । ” উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো ।
উত্তর: উৎস : শ্রীপান্থ রচিত ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' প্রবন্ধে স্বয়ং লেখক অতিপ্রচলিত উদ্ধৃত প্রবাদটি উল্লেখ করেছেন ।
প্রসঙ্গ : হারিয়ে যাওয়া কালি কলম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়েই লেখকের এরূপ মনে হয়েছে । আলোচ্য প্রবন্ধে এই মন্তব্যটির একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে ।
তাৎপর্য: মানুষের মনের ভাব ও ভাবনা কলমের সাহায্যে কালির রেখায় সাদা কাগজের ওপর জীবন্তরূপ লাভ করে । সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ তার মনের কথাকে ভবিষ্যতের মানুষের জন্য রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লেখার সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে । এই পথ ধরেই কালি আর কলম এসেছে আমাদের সভ্য জগতে । কলম মানুষের আবেগকে প্রকাশ করে । তাকে হাতে নিয়ে মানুষ মনের নানা ভাবনাকে প্রকাশ্য করে তোলে । কলম হল তুলি , কালি হল রং আর মন হল শিল্পী । এই তিনের মিলনে মনের গোপনে জন্ম নেওয়া ভাবনা মূর্ত হয়ে ওঠে । এমনিভাবেই লেখা হয়েছে অজস্র গ্রন্থ । অর্থাৎ সাহিত্যের যে সর্বজনীন হয়ে ওঠা , তা কালি , কলম আর মন — এই তিনের মিলনের দ্বারা সম্ভব । কলমের সাহায্যে লেখার মাহাত্ম্যকে তুলে ধরতেই লেখকের এই মন্তব্যটির অবতারণা ।
২.“ সবাই এখানে লেখক । কিন্তু আমি ছাড়া করও হাতে কলম নেই । ” — ‘ এখানে ’ বলতে কোথাকার কথা বলা হয়েছে ? লেখক হওয়া সত্ত্বেও কারও হাতে কলম নেই কেন ? ১ + ৪
উত্তর: উদ্দিষ্ট স্থান : শ্রীপান্থের লেখা ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনার উল্লিখিত অংশে ‘ এখানে ’ বলতে যে সংবাদপত্রের অফিসে লেখক কাজ করতেন সেখানকার কথা বলা হয়েছে । • কলম না থাকার কারণ : সংবাদপত্রে অফিস আসলে ‘ লেখালেখির ’ অফিস । সবাই সেখানে লেখার কাজই করে থাকেন । কিন্তু ‘ কালি কলম মন , লেখে তিন জন ' — এ কথা বলা হলেও নিজের কর্মক্ষেত্রে কলমের উপস্থিতি লেখক দেখতে পাচ্ছিলেন না । একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউই কলমের ব্যবহার করতেন না । কম্পিউটারই ছিল সকলের অবলম্বন । সকলের সামনে ছিল চৌকো আয়নার মতো একটা কাচের পর্দা , তার নীচে একটা কি - বোর্ড । এই বোর্ডের প্রত্যেকটি বোতামে ছাপা আছে একটি হরফ । আর লেখকের সহকর্মীরা অনবরত তার সাহায্যে লিখে চলেছেন । মাঝে মাঝে লেখা থামিয়ে সেই পর্দার দিকে তাকাচ্ছেন । যা লেখা হয়ে গিয়েছে তা সেই পর্দায় দেখা যাচ্ছে । এ এক নতুন লেখালেখির পদ্ধতি । কলম সেখানে প্রয়োজনহীন । কম্পিউটারের এই ব্যবহার এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে , কোনোদিন কলম না নিয়ে গেলে একটা কলম জোগাড় করাই সমস্যার হয়ে যেত । নতুন যুগের এই লেখার পদ্ধতিকে সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সে সকলে গ্রহণ করে নেওয়াতেই কলম অপ্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে পড়েছিল ।
৩. “ আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই । --- লেখকরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন তা প্রবন্ধ অনুসরণে লেখো ।
উত্তর: নিখিল সরকার ওরফে ' শ্রীপান্থ ' রচিত ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ প্রবন্ধে উদ্ধৃতাংশটি ব্যবহৃত হয়েছে । প্রচলিত ছড়া : আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক তার ছেলেবেলায় কালি তৈরি নিয়ে প্রচলিত ছড়ার কথা বলেছেন । ছড়াটি হল— “ তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা / ছাগ দুগ্ধে করি মেলা / লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি / ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি । ” উপকরণ : ছড়াটিতে তিল , ত্রিফলা , শিমুল গাছের ছাল , ছাগলের দুধ ইত্যাদি উপকরণের কথা আছে । এতগুলি উপকরণ জোগাড় করে কালি তৈরি করা খুব সহজ কাজ ছিল না । তাই লেখক অন্য সহজ পথ ধরেন।বিকল্প পদ্ধতি : লেখকের বাড়িতে কাঠের আগুনে রান্না হত । তাতে কড়াইয়ের তলায় প্রচুর কালি জমত । লাউ পাতা দিয়ে তা ঘষে তুলে , পাথরের বাটিতে জলে গুলে রাখা হত । যারা কালি তৈরিতে ওস্তাদ তারা এই কালো জলে হরীতকী ঘষত । কখনো কখনো আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে এবং তা বেটে সেই জলে মেশানো হত । এইসব ভালো করে মিশিয়ে একটা খুন্তির গোড়ার দিক পুড়িয়ে লাল করে সেই জলে স্পর্শ করালে তা টগবগ করে ফুটত । তারপর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরে নিলেই তৈরি হয়ে যেত কালি ।
৪. “ বলতে গেলে তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি । ” — শৈশবের কোন বর্ণনা লেখক দিয়েছেন ?
উত্তর: কথামুখ : ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' রচনায় লেখক তাঁর শৈশবজীবনের লেখালেখির সূচনার এক চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন । গ্রামজীবনের সঙ্গে যাঁদের শৈশব যুক্ত , লেখকের সমবয়সি সেইসব মানুষ তাঁর এই বর্ণনার সঙ্গে একমত এবং একাত্ম হতে পারবেন এই আশা প্রকাশ করে লেখক তার বর্ণনাটি করেছেন । লেখার কলম শৈশবে লেখক সরু বাঁশের কঞি কেটে কলম তৈরি করতেন । বড়োদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি কলমের মাথাটা একটু চিরে দিতেন , ফলে কালি আস্তে আস্তে গড়িয়ে পড়ত । লেখার পাতা লেখা হত কলাপাতায় । কাগজের আকৃতিতে কলাপাতা কেটে তাতে হোমটাস্ক করে মাস্টারমশাইকে দেখিয়ে তা পুকুরে ফেলে দেওয়া হত।কালি তৈরির পদ্ধতি : কলম তৈরির পাশাপাশি কালিও লেখকরা নিজেরাই তৈরি করতেন । এক্ষেত্রেও তাঁরা বড়োদের সাহায্য নিতেন । কোনোরকম আয়োজন ছাড়াই এক সহজ পদ্ধতিতে তাঁরা কালি তৈরি করতেন । কাঠের উনুনে কড়াই বসিয়ে তার তলায় জমে যাওয়া কালি তাঁরা লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে জলে গুলে নিতেন । কখনো কখনো তার সঙ্গে হরীতকীও মেশাতেন । আবার কখনও আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তা বেটে ওই জলের সঙ্গে মেশানো হত । তারপর ওই জলে একটা খুস্তির গোড়ার দিক পুড়িয়ে লাল টকটকে করে ছ্যাকা দেওয়া হত । সবশেষে ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে কালি ভরা হত । এইভাবেই লেখকের শৈশবজীবনে ‘ লেখালেখি’র সূচনা হয় ।
৫.“ ভাবি , আচ্ছা , আমি যদি জিশু খ্রিস্টের আগে জন্মাতাম ! ” — কোন্ প্রসঙ্গে লেখকের এই ভাবনা ? জিশু খ্রিস্টের আগে জন্মালে তিনি কী করতেন ? 2 + 3
উত্তর: প্রসঙ্গ : লেখক শ্রীপান্থ ছেলেবেলায় বাঁশের কলম , মাটির দোয়াত , ঘরে তৈরি কালি আর কলাপাতা নিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন ৷ ফেলে আসা দিনের কথা মনে করতে গিয়ে তিনি আলোচ্য প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছেন । কম্পিউটারের ব্যবহার অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলমের ব্যবহার কমতে থাকে । কলমের এই দুরবস্থায় লেখকের মন ব্যথিত হয়েছে । শৈশবের লেখালেখির দিনগুলোর কথা তাঁর মনে পড়েছে । সেই সঙ্গে ইতিহাসের পথ ধরে তিনি পরিক্রমা করেছেন ৷ এই প্রসঙ্গেই তাঁর মনে উল্লিখিত ভাবনাটি এসেছে ।
লেখকের ইতিহাস ভাবনা : প্রাচীন মিশরের প্রসঙ্গ : লেখক ভেবেছেন , তাঁর যদি প্রাচীন মিশরে জন্ম হত , তাহলে তিনি নীল নদের তীর থেকে নলখাগড়া ভেঙে নিয়ে এসে সেটিকে ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে লিখতেন।
প্রাচীন সুমেরীয় বা ফিনিসীয়দের প্রসঙ্গ : আবার বাঙালি না হয়ে তিনি যদি হতেন প্রাচীন সুমেরীয় বা ফিনিসীয় তাহলে তাঁকে অন্যভাবে কলম বানাতে হত । ফিনিসীয় হলে হয়তো বন থেকে একটা হাড় কুড়িয়ে এনে তা - ই দিয়েই একটা কলম বানিয়ে নিতেন ।
প্রাচীন রোমের প্রসঙ্গ : লেখক ভেবেছেন , রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হলে তিনি জুলিয়াস সিজারের মতো ব্রোঞ্জের শলাকা বা স্টাইলাস ব্যবহার করতেন । সিজার যে কলমটি দিয়ে কাসকাকে আঘাত করেছিলেন , সেটি আসলে ছিল ব্রোঞ্জের ধারালো শলাকা ।
প্রাচীন চিনের প্রসঙ্গ : চিনাদের কলম অবশ্য তুলি । এইভাবে লেখক কলম আবিষ্কারের প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফিরে যেতে চেয়েছেন ।
৬. “ পালকের কলম তো দূরস্থান , দোয়াতকলমই বা আজ কোথায় ! ” — পালকের কলম সম্পর্কে লেখক কী জানিয়েছেন ? দোয়াতকলম প্রসঙ্গে লেখক কী বলেছেন ?
উত্তর: পালকের কলম সম্পর্কে লেখকের বক্তব্য : আজকাল কলম এবং দোয়াতের ব্যবহার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক শ্ৰীপান্থ আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন । পালকের কলমকে ইংরেজিতে বলা হয় কুইল । বাঁশের কলম , খাগের কলম চলে যাওয়ার পর একসময় পালকের কলমের আধিপত্য ছিল । পাখির পালক দিয়ে তৈরি হত এই কলম । লেখক আক্ষেপ করেছেন , “ পালকের কলম দেখতে হলে পুরানো দিনের তৈলচিত্র কিংবা ফটোগ্রাফ ছাড়া গতি নেই । ” ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধেও পালকের কলমের প্রচলন ছিল । উইলিয়াম জোন্স বা স - মুনশি কেরি সাহেবের ছবিতে দেখা যায় পালকের কলম । মিশনারিরা এবং ইংরেজ সাহেবরা পালক কেটে কলম তৈরির জন্য পেনসিল শার্পনারের মতো এক প্রকারের যন্ত্রও বানিয়েছিলেন ।
দোয়াতকলম প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য : লেখক দোয়াত কলমের নানা বৈচিত্র্যের উল্লেখ করেছেন । কাচের , কাট - গ্লাসের ,পোর্সেলিনের , শ্বেতপাথরের , জেডের , পিতলের , এমনকি গোরুর শিং বা সোনার দোয়াতও আগে পাওয়া যেত । লেখক নিজে সুভো ঠাকুরের দোয়াতের সংগ্রহ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন । এমনকি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বয়স্করা আশীর্বাদ দিতেন— “ তোমার সোনার দোয়াতকলম হোক । ” সেই দোয়াতকলম আজ উধাও । কোনো কোনো অফিসে গিয়ে লেখক ছদ্মবেশী দোয়াত এবং কলম টেবিলে সাজানো দেখেছেন , আসলে এই পেন হল বল - পেন ৷
৭. ‘ ফাউন্টেন পেন ' বাংলায় কী নামে পরিচিত ? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে ? ফাউন্টেন পেনের জন্ম ইতিহাস লেখো ৷ ১ + ১ + ৩
উত্তর ফাউন্টেন পেনের বাংলা নাম : ফাউন্টেন পেনের বাংলা নাম ঝরনা কলম ।
বাংলা নামকরণ : শ্রীপান্থ রচিত ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনায় নামটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়াবলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
জন্ম - ইতিহাস : পণ্ডিতদের মতে , কলমের দুনিয়ায় সত্যিকারের বিপ্লব ঘটিয়েছে ফাউন্টেন পেন । কিন্তু এর জন্ম - ইতিহাসটি বেশ চমকপ্রদ ৷
আবিষ্কারক : এর আবিষ্কারক লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান । তিনি এই নতুন ধরনের কলম তৈরি করে অফুরন্ত কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন ।
চুক্তিপত্র সই : সেকালের আরও অনেক ব্যবসায়ীর মতো তিনিও দোয়াতকলম নিয়ে কাজে বের হতেন । একবার তিনি গিয়েছেন আর একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করতে । দলিল কিছুটা লেখা হয়েছে এমন সময় দোয়াত হঠাৎ উপুড় হয়ে কাগজে পড়ে গেল । ফলে বাধ্য হয়ে তিনি ছুটলেন কালির সন্ধানে । ফিরে এসে শোনেন , ইতিমধ্যে অন্য একজন তত্পর ব্যবসায়ী সইসাবুদ শেষ করে চুক্তিপত্র পাকা করে গেছেন ।
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া: এই ঘটনায় বিমর্ষ ওয়াটারম্যান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন , এর একটা বিহিত করতেই হবে । অর্থাৎ এমন একটা পদ্ধতির খোঁজ করতে হবে যেখানে কলমের সঙ্গে কালির দোয়াত নিয়ে ঘুরতে হবে না । তারপরই আবিষ্কার করলেন ফাউন্টেন পেন ।
নবযুগের প্রতিষ্ঠা : দোয়াতের যুগের অবসান ঘটিয়ে কালক্রমে এই ফাউন্টেন পেন লেখালেখির নবযুগের প্রতিষ্ঠা ঘটাল ।
৮. “ কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য । ” — কলম কাদের কাছে অস্পৃশ্য ? কলম সম্পর্কে লেখক কেন এরকম বলেছেন ? ২ + ৩
উত্তর: কলম যাদের কাছে অস্পৃশ্য : ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনায় সময়ের অগ্রগতিতে কলমের পরিণতি দেখে লেখক নিখিল সরকার এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যটি করেছেন । আধুনিকতার পথে কলমও ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে মানুষের হাত থেকে । সময়ের ধারায় বাঁশের পেন , পালকের পেন ক্রমশ হারিয়ে গিয়ে সেই জায়গায় এল ফাউন্টেন পেন । তারপর সস্তার বল - পেন বাজার দখল করে নেয় । এর ফলে পকেটমারও কলম চুরি করে না— “ কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য ” ।
এরকম মন্তব্যের কারণ : একসময়ে মানুষের লেখার একমাত্র অবলম্বন ছিল বাঁশের কলম । শৈশবে লেখকরা এরূপ কলম নিজেরাই বানাতেন । সময়ের অগ্রগতিতে বাঁশের কলম উধাও হয়ে এল পালকের কলম । তারপর ফাউন্টেন পেন এবং বলপেন বাজার দখল করল । ধীরে ধীরে ফেরিওয়ালারাও কলম বিক্রিকে পেশা করল । লেখক অতি আধুনিক ছেলেদের বুকপকেটের পরিবর্তে কাধের ছোটো পকেটে কলম সাজিয়ে রাখতে দেখেছেন । এমনকি ভিড় ট্রামে বাসে মহিলাদের মাথার খোঁপাতেও কলম গোঁজা রয়েছে — এমনও দেখা গিয়েছে । লেখকের ভাষায়— “ বিস্ফোরণ । কলম বিস্ফোরণ । ” সস্তার কলম বাজারে আসার পরে কলম সুলভ ও সর্বভোগ্য হয়ে উঠল । এভাবেই কলম একসময় তার কদর হারিয়ে ফেলল । ফলে যে পকেটমার একসময় কলম হাতসাফাই করত তার কাছেও কলম অস্পৃশ্য হয়ে গেল ।
৯. “ পণ্ডিতরা বলেন কলমের দুনিয়ায় যা সত্যিকারের বিপ্লব ঘটায় তা ফাউন্টেন পেন । ” — ফাউন্টেন পেন কলমের দুনিয়ায় কীভাবে বিপ্লব ঘটিয়েছিল তা লেখো ।
উত্তর: কথামুখ : ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' প্রবন্ধে শ্রীপান্থ লেখার দুনিয়ায় ফাউন্টেন পেনের কার্যকারিতা বোঝাতে গিয়ে মন্তব্যটি করেছেন ।
চুক্তিপত্র সই : লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ব্যক্তিগতজীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে চেয়েছিলেন দোয়াতে কলম ডুবিয়ে । লেখালেখির একটা বিকল্প খুঁজে নিতে । ফাউন্টেন পেন আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে দোয়াত - কালি সঙ্গে নিয়ে ঘোরার দিনের অবসান ঘটে । এরপর দামি থেকে সস্তা — ফাউন্টেন পেনের অজস্র সংস্করণ বের হয় ।
বিশেষত্ব : ফাউন্টেন পেনের বিশেষত্বই হল তা ব্যবহারকারীকে ক্রমশ নেশাগ্রস্ত করে তোলে । লেখক শৈলজানন্দের ছিল এরকম ফাউন্টেন পেন সংগ্রহের নেশা । আবার তা তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে শরৎচন্দ্রের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ।
লুপ্তপ্রায়: প্রথম দিকে ফাউন্টেন পেন সাধারণের নাগালের বাইরে ছিল । রকমারি চেহারার সস্তা এবং দামি ফাউন্টেন পেন বাজারে আসার পরে দোয়াতকলম ক্রমশ বাজার থেকে হটে যায় । সেগুলি হয়ে ওঠে ঘর সাজানোর উপকরণ । বাঁশের বা কঞির কিংবা খাগের কলম , কালির আধার , ব্লটিং পেপার — এসব জিনিসই ক্রমে অদৃশ্য হয়ে যায় ।
সহজসাধ্য : সব পড়ুয়ার পকেটেই দেখা যায় ফাউন্টেন পেন । এভাবে একদিকে লেখা সহজসাধ্য হয়ে ওঠে , অন্যদিকে লেখার উপকরণের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়াও সম্ভব হয় । এভাবেই কলমের দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়েছিল ফাউন্টেন পেন ৷
১০. ওয়াটারম্যান কীভাবে কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন ?
উত্তর: কথামুখ : লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ছিলেন একজন ব্যবসায়ী । অন্যান্য ব্যবসায়ীর মতো তিনিও দোয়াতকলম নিয়ে কাজে বের হতেন ।
চুক্তিপত্র সই : একবার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করতে গিয়ে দোয়াত থেকে কালি ফেলে দিলেন সেই দলিলে । ফলে বাধ্য হয়ে তিনি শূন্য দোয়াতে কালি ভরতে ছুটলেন । কিন্তু ফিরে এসে শোনেন , ইতিমধ্যে আর - একজন ব্যবসায়ী এসে সেই চুক্তিপত্রে সই করে চুক্তি পাকা করে ফেলেছেন ।
বিকল্প পদ্ধতির খৌজ : হতাশ ও বিমর্ষ ওয়াটারম্যান তখনই ঠিক করলেন , তিনি এমন একটা পদ্ধতির খোঁজ করবেন যেখানে কলমের সঙ্গে কালির দোয়াত নিয়ে ঘুরতে হবে না । এইভাবেই জন্ম নিল ফাউন্টেন পেন ।
রিজার্ভার পেন : ফাউন্টেন পেনের আগের নাম রিজার্ভার পেন । ওয়াটারম্যান তাকেই উন্নত করে । তৈরি করেছিলেন ফাউন্টেন পেন । কলম হিসেবে ফাউন্টেন পেনের বিরাট প্রসার ঘটে । হরেক রকম নিব ও কোম্পানি একটি বিজ্ঞাপনে । লেখক দেখেছিলেন তাঁদের তহবিলে নাকি রয়েছে সাতশোরকম নিব । দোকানে গিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির নাম লেখক শুনেছিলেন — পার্কার , শেফার্ড , সোয়ান ইত্যাদি । লেখক উল্লেখ করেছেন , তিনি যখন কলেজে পড়তেন , তখন তার সব বন্ধুর পকেটেই ছিল ফাউন্টেন পেন ।
শেষকথা : সুতরাং , ওয়াটারম্যান তার আবিষ্কারের পর সত্যিই যেন কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন ।
১১. " বিমর্ষ ওয়াটারম্যান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন আর নয় , এর একটা বিহিত তাকে করতেই হবে । " ওয়ার্টারম্যান কে ? তিনি বিমর্ষ কেন ? তার প্রতিজ্ঞার ফল কী হয়েছিল ?
উত্তর: ওয়ভিীরম্যানের পরিচয় লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ছিলেন ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কারক ।
বিমর্ষতার কারণ : ওয়াটারম্যান সেকালের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতোই দোয়াতকলম নিয়ে কাজে বের হতেন । একবার তিনি গিয়েছিলেন অন্য একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটা চুক্তিপত্র সই করতে । যখন দলিল কিছুটা লেখা হয়েছে ঠিক সেই সময়ে হঠাৎই দোয়াত কাগজে উপুড় হয়ে পড়ে যায় , ফলে তাঁকে বাধ্য হয়েই কালির সন্ধানে যেতে হয় । কালি সংগ্রহ করে ফিরে এসে দেখেন যে , অন্য একজন তৎপর ব্যবসায়ী সইসাবুদ করে চুক্তিপত্র পাকা করে চলে গেছেন । এই ঘটনাতেই ওয়াটারম্যান বিমর্ষ হয়ে যান ৷ "
প্রতিজ্ঞার ফল : বিমর্ষ ওয়াটারম্যানের প্রতিজ্ঞা জন্ম দিয়েছিল ফাউন্টেন পেনের । কলমের দুনিয়ায় এই পেন বিপ্লব ঘটিয়েছিল । বাঁশের কঞির কলম , খাগের কলম , পালকের কলম ইত্যাদির যুগের অবসান হল । পাশাপাশি দোয়াতে কলম ডুবিয়ে লেখার দিনও শেষ হল । ধীরে ধীরে সস্তা এবং দামি নানারকম ফাউন্টেন পেনে বাজার দখল করে নিল । সকলের কাছে এই কলম গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠল । দোয়াতকলমের যুগের অবসানে আমাদের লেখালেখি আধুনিক যুগে প্রবেশ করল । এই পরিবর্তনের মূলে ছিল ওয়াটারম্যানের প্রতিজ্ঞা ।
১২. “ দোয়াত যে কত রকমের হতে পারে , না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত । ” — কত রকমের দোয়াতের কথা বলেছেন বক্তা ? এই প্রসঙ্গে তিনি আর কী তথ্য দিয়েছেন পাঠ্যরচনা অবলম্বনে লেখো ।
উত্তর: দোয়াতের রকমভেদ : শ্রীপান্থ তাঁর ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ' রচনায় দোয়াতের নানারকম বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করেছেন । যেমন — কাচের , কাঠ - গ্লাসের , পোর্সেলিনের , শ্বেতপাথরের , জেডের , পিতলের , ব্রোঞ্জের , ভেড়ার শিং - এর এমনকি সোনারও ।
প্রসঙ্গক্রমে লেখকের দেওয়া তথ্য : সুভো ঠাকুরের প্রসঙ্গ : লেখক শ্রীপান্থ উল্লেখ করেছেন যে , সোনার দোয়াতকলম যে সত্যিই হতে পারে তা তিনি জেনেছিলেন সুভো ঠাকুরের বিখ্যাত দোয়াত সংগ্রহ দেখতে গিয়ে । আবার তিনি এ কথাও জেনেছেন যে , গ্রামে কেউ দু - একটা পাস করলে বুড়োবুড়িরা আশীর্বাদ করে বলতেন , “ বেঁচে থাকো বাছা , তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক । ” ইতিহাসের প্রসঙ্গ : এ ছাড়াও শ্রীপান্থ কোনো কোনো দোয়াতের সঙ্গে সাহিত্য এবং ইতিহাসের নানা চরিত্রের যোগের কথাও মনে করেছেন ।
অবিস্মরণীয় সাহিত্যসৃষ্টি : অবাক হয়ে লেখক ভেবেছেন যে শেকসপিয়র , দান্তে , মিল্টন , কালিদাস , ভবভূতি , কাশীরাম দাস , কৃত্তিবাস থেকে রবীন্দ্রনাথ , বঙ্কিমচন্দ্র , শরৎচন্দ্র সকলেই এইসব দোয়াতের কালি দিয়ে তাঁদের অবিস্মরণীয় রচনাগুলি লিখে গিয়েছেন । দোয়াতের যুগের অবসান : কিন্তু ফাউন্টেন পেন আসার সঙ্গে সঙ্গে এইসব দোয়াতের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে । এখন সেগুলি নিতান্তই ঘর সাজানোর উপকরণ । প্রথমে বাঁশের বা কঞির কলম । পরে নিবের কলম — লেখকের লেখালেখির ক্ষেত্রে দোয়াতের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । কিন্তু ‘ কালি কলমের ভক্ত ’ লেখক ফাউন্টেন পেনের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়াতের যুগের অবসানকে প্রত্যক্ষ করেছেন ।
১৩.“ আশ্চর্য , সবই আজ অবলুপ্তির পথে । ” — কোন্ জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে ? এই অবলুপ্তির কারণ কী ? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী ?
উত্তর: অবলুপ্তির পথে যা : ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ’ রচনায় লেখক শ্রীপান্থর মতে কলম আজ অবলুপ্তির পথে । অবলুপ্তির কারণ : কম্পিউটারের আধিপত্য এবং তার প্রতি মানুষের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা কলমের এই অবলুপ্তির কারণ ।
লেখকের অভিমত : শৈশব থেকেই লেখকের শিক্ষাজীবনের সঙ্গী ছিল বাঁশের কলম , খাগের কলম , পালকের কলম ইত্যাদি । পরে বাজারে আসে ফাউন্টেন পেন । কলমের বাজারে এই পেন একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে । এরপর ফাউন্টেন পেনকেও ম্লান করে বাজারে এসে যায় বল - পেন । কলম হয়ে ওঠে সস্তা এবং সর্বভোগ্য । সর্বজনীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কলম তার নিজস্ব কদর হারাতে থাকে । একদিন যে দোয়াতকলম দিয়ে লিখে দেশবিদেশের সাহিত্যিকরা অমর সৃষ্টি রেখে গিয়েছেন , সেই দোয়াতকলম ইতিহাসের পাতায় চলে যায় । বিজ্ঞানের বিস্ময়কর সৃষ্টি হিসেবে কলমের জায়গা দখল করে নেয় কম্পিউটার । সাংবাদিক হিসেবে লেখার কাজেই ব্যস্ত লেখকের এক অদ্ভুত কলমপ্রীতি ছিল । বাঁশের কলম , খাগের কলম ছেড়ে বল - পেনের কাছে আত্মসমর্পণ করেও লেখক বিপন্ন বোধ করেছেন । “ যদি হাতের লেখা মুছে যায় চিরকালের জন্য ” —এই কথা ভেবে তিনি বিচলিত হয়ে উঠেছেন । কম্পিউটারের প্রভাবে সর্বপ্রকার কলমের অবলুপ্তির আশঙ্কাতে লেখক একইসঙ্গে আতঙ্কিত ও আশ্চর্য হয়েছেন ।
Your next time is better ha
ReplyDelete