Political Science Chapter-1 Questions and Answers Class 12th WBCHSE - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 13 January 2022

Political Science Chapter-1 Questions and Answers Class 12th WBCHSE



Political Science
Chapter-1


 

1. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন তত্ত্বগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি গতিশীল বিষয় । আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যেভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচ্য বিষয়সূচিরও পরিবর্তন ঘটছে । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক ধারার যথেষ্ট অবদান রয়েছে । এই ধারাগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে । যথা –
i. আদর্শবাদ : দুটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে উড্রো উইলসনের চিন্তাভাবনাকে কেন্দ্র করে যে - ধারাটি গড়ে ওঠে তা আদর্শবাদ নামে পরিচিত । আইনগত ও নৈতিক নীতি গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয় । এই তাত্ত্বিকদের লক্ষ্য ছিল একটি শান্তিপূর্ণ নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা । আলফ্রেড জিমার্ন , ফিলিপ নোয়েল বার্কার , জেমস টি শর্টওয়েল , নর্মান অ্যাঞ্জেল প্রমুখ হলেন আদর্শবাদী ধারার প্রধান প্রবক্তা ।
ii. বাস্তববাদ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আদর্শবাদী তত্ত্বের অবাস্তবতা প্রমাণিত হয় । বাস্তববাদী তত্ত্বের মুখ্য প্রবক্তারা হলেন হ্যানস মরগেনথাউ , কেনেথ টমসন , রেমঁ আরো প্রমুখ । বাস্তববাদ মনে করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করেই চালিত হয় । বাস্তববাদের প্রধান প্রবক্তা মরগেনথাউ এই তত্ত্বের ছ - টি মৌলিক নীতির কথা ঘোষণা করেছেন । যথা—
( a ) রাজনীতি বৈষয়িক বিধির দ্বারা চালিত হয় ।
( b ) জাতীয় স্বার্থের ধারণা ছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করা সম্ভব নয় ।
( c ) জাতীয় স্বার্থের ধারণা পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন হয় ।
( d ) রাষ্ট্রীয় নীতিকে বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে ।
( e ) কোনো জাতির আশা - আকাঙ্খাকে সার্বজনীন বলে গণ্য করা যায় না ।
( f  )  রাজনৈতিক বাস্তবকে ক্ষমতাকেন্দ্রিক স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারবিবেচনা করে দেখতে হবে ।
iii.  বহুত্ববাদ : বহুত্ববাদী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক রাজনীতির বিরোধিতার মাধ্যমে । বহুত্ববাদীরা মনে করেন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার কর্মকর্তা কেবল রাষ্ট্রই নয় , সেই সঙ্গে নানা ধরনের অরাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা রয়েছে , রবার্ট কিয়োহেন , জোসেফ নাই প্রমুখরা বহুত্ববাদী গোষ্ঠীর মুখ্য প্রবক্তা
iv.  আচরণবাদ : বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বিচারবিশ্লেষণের জন্য আচরণবাদী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে । এই তত্ত্বের মুখ্য প্রবক্তারা হলেন কার্ল ডয়েস , ডেভিড ইস্টন , জন বার্টন , মর্টন ক্যাপলান , রিচার্ড স্নাইডার প্রমুখ আচরণবাদীরা মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলবিষয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি , আচরণগত সংবেদনশীলতা , পরিবর্তনের দাবি , সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করে ।
v. কাঠামোবাদ : মার্কসবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা বাস্তববাদীদের মতো বিশ্বরাজনীতিতে রাষ্ট্রকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করেন । শ্রেণিগুলি হল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রকৃত কর্মকর্তা । কাঠামোবাদের মুখ্য প্রবক্কারা হলেন এস বুকাউ আঁদ্রে গুণদর ফ্রাঙ্ক , ইমান্যুয়েল ওয়ালারস্টাইন , সামির আমিন প্রমুখরা । ফ্রাঙ্কের ‘ অনুন্নয়নের উন্নয়ন ' এবং ওয়ালারস্টাইনের ‘ বিশ্বব্যবস্থা তত্ত্ব ’ প্রভৃতি নয়া মার্কসীয় তত্ত্ব হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ।
vi. নয়া উদারনীতিবাদ : অর্থনৈতিক ও মতাদর্শগত ক্ষেত্রে কমবেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলতে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে । এই সময় আঞ্চলিক সংহতি দেখা যায় পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে । এমতাবস্থায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্ব রচনার প্রয়োজনীয়তা উদারনীতিবাদীরা স্বীকার করেন । যা পরবর্তীকালে নয়া উদারনীতিবাদ নামে পরিচিত হয় । এই তত্ত্বের মুখ্য প্রবক্তারা হলেন পিটার হাস , রবার্ট কেওহান , জোসেফ নাই প্রমুখ ।
v. নয়া বাস্তববাদ : নয়া উদারনীতিবাদের আবির্ভাবের ফলে বাস্তববাদী তত্ত্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় । এই সময় বিশ্ব রাজনীতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ওপর রাষ্ট্রগুলি অধিক গুরুত্ব আরোপ করে । এ ছাড়া অরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতিকে যথেষ্ট পরিমাণে প্রভাবিত করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে । এই সময়ে কেনেথ ওয়ালজ্ 1990 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তার প্রবন্ধে ( Realist thought and Neorealist theory ) নয়া বাস্তববাদী তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটান ।
মূল্যায়ন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি শাস্ত্র হিসেবে গড়ে ওঠার পিছনে উপরিউক্ত তত্ত্বগুলির এবং সেগুলির মধ্যে পারস্পরিক মতবিরোধের অবদানকে কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না ।

2.  আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিধি বর্ণনা করো । শক্তি বা ক্ষমতার শ্রেণিবিভাজন করো । 5 + 3

উত্তরঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে ধারাবাহিক চর্চা ও আলোচনার ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি তৈরি হয়েছে । কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচ্যসূচি দ্রুত পরিবর্তনশীল বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কুইনসি রাইট , মর্টন ক্যাপালান , চার্লস মেকল্যান্ড , কেনেথ টম্পসন প্রমুখ লেখকেরা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার তত্ত্বগত আলোচনার পরিধি সম্পর্কে সূত্রপাত করেন । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন তত্ত্ববাদীরা নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেছেন , সেগুলি হল—
i.  আদর্শবাদীদের বক্তব্য : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে আদর্শবাদীরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কতকগুলি আইনগত ও নৈতিক নীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন । একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলাই ছিল তাদের লক্ষ্য । আদর্শবাদী ধারার মূল প্রবক্তরা হলেন আলফ্রেড জিমার্ন , নর্মান অ্যাঞ্জেল , লোয়েস ডিকিনসন প্রমুখ ।
ii.  বাস্তববাদীদের বক্তব্য : বাস্তববাদী প্রবক্তারা হলেন হ্যান্স মরগেনথাউ , কেনেথ টম্পসন প্রমুখ । বাস্তববাদীদের মতে ক্ষমতা , সাম্রাজ্যবাদ , কূটনীতি , রাজনৈতিক মতাদর্শ , শক্তিসাম্য , আন্তর্জাতিক নৈতিকতা , বিশ্বজনমত , আন্তর্জাতিক আইন , রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা , আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রভৃতি - এর আলোচ্য বিষয়বস্তু ।
iii. বহুত্ববাদীদের বক্তব্য : বহুত্ববাদীদের মতে , রাষ্ট্রের সাথে নানা ধরনের অরাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচ্যসূচির বিষয়বস্তু । এই তত্ত্বের মুখ্য প্রবক্তারা হলেন রবার্ট কিয়োহেন , জোসেফ নাই ।
iv.  আচরণবাদীদের বক্তব্য : অর্থনীতি , মনস্তত্ত্ব , সমাজবিদ্যা , নৃবিদ্যা প্রভৃতির অনুসৃত পদ্ধতি ও গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে আচরণবাদীরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করার পক্ষপাতী । এই মতবাদের প্রবক্তারা হলেন কার্ল ডয়েশ্চ , ডেভিড ইস্টন , মর্টন ক্যাপলান প্রমুখ ।
v.  কাঠামোবাদীদের বক্তব্য : মার্কসবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিধিকে বিশ্লেষণ করেছেন । তাঁদের মতে শ্রেণিগুলি হল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রকৃত কর্মকর্তা । এই মতবাদের প্রবক্কারা হলেন এস ব্রুকাউ , ইমান্যুয়েল ওয়ালারস্টাইন প্রমুখ । উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট যে , আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনা ক্ষেত্রের পরিধি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আজ পর্যন্ত মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিধি যে ক্রমবর্ধমান সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই । কুইনসি রাইট আটটি বিষয়কে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভূক্ত করেছেন , সেগুলি হল—
ক. আন্তর্জাতিক আইন ।
খ. কূটনৈতিক ইতিহাস।
গ. আন্তর্জাতিক রাজনীতি ।
ঘ. সমরবিদ্যা ।
ঙ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ।
চ. আন্তর্জাতিক সংগঠন ।
ছ. ঔপনিবেশিক সরকার ।
জ. পররাষ্ট্রনীতির পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ।
vi. ভিনসেন্ট বেকার সাতটি বিষয়কে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত করেছেন , সেগুলি হল—
ক.  আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রকৃতি ও প্রধান শক্তিসমূহ ।
খ.  আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক , সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংগঠনসমূহ ।
গ. জাতীয় শক্তির উপাদানসমূহ ।
ঘ.  জাতীয় স্বার্থ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয় হাতিয়ারসমূহ ।
ঙ. জাতীয় শক্তির সীমাবদ্ধতা ও নিয়ন্ত্রণ ।
চ . বৃহৎ শক্তি ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলির পররাষ্ট্রনীতি ।
ছ . সাম্প্রতিককালের আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক উপাদানসমূহ ।

মূল্যায়ন
আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের পর্যালোচনা দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটলেও আন্তর্জাতিক সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার আলোচনা ক্ষেত্রের পরিধি ক্রমশই সম্প্রসারিত হয়েছে । নিত্য নতুন বিষয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে , যা এই শাস্ত্রকে গতিশীলতা প্রদান করেছে ।

3. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কাকে বলে ? আন্তর্জাতিক রাজনীতি কাকে বলে ? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো । 2 + 2 + 4
i. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : রাজনীতি শাস্ত্রের চর্চার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম । আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলতে স্বাধীন সীমানার বাইরে প্রকৃত সম্পর্ক বা ওই সম্পর্ক নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে যে - জ্ঞান ভাণ্ডার গড়ে উঠেছে তাকে বোঝায় বলে মন্তব্য করেছেন ই এইচ কার । তবে অনেকে একে সংকীর্ণতার দোষে দুষ্ট বলে মনে করেন । কুইনসি রাইট তাঁর “ The Study of International Relations ' ( 1955 ) গ্রন্থে বলেছেন অনিশ্চিত সার্বভৌমিকতার অধিকারী সংগঠনগুলিকে নিয়ে যে - শাস্ত্র আলোচনা করে তাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলে । অধ্যাপক হার্টম্যান বলেছেন এটি হল এমন একটি বিষয় যা বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে । তবে অধ্যাপক হফম্যান তাঁর সম্পাদিত ' Contemporary Theory in International Relations ' ( 1964 ) গ্রন্থে এর কার্যকারী সংজ্ঞা দিয়েছেন । তাঁর মতে বিশ্ব যেসব মূল এককে বিভক্ত তাদের বহিবিষয়ক নীতি ও শক্তিকে প্রভাবিত করে যেসব বিষয় ও কার্যাবলি , এটি সেই সবকিছু নিয়ে আলোচনা করে ।
ii.  আন্তর্জাতিক রাজনীতি : হ্যান্স মরগেনথাউ ' Politics Among Nations ' গ্রন্থে আন্তর্জাতিক রাজনীতি অভিধাটি ব্যবহার করেছেন । আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল এমন একটি বিষয় , যা রাজনৈতিক মতানৈক্য , প্রতিযোগিতা , প্রতিদ্বন্দ্বিতা , দাবি ও রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের আকাথা থেকে উদ্ভূত ফলাফলের পর্যালোচনা করে । গ্রেনস কার্ক জাতীয় রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণকারী শক্তিসমূহের আলোচনাকে ‘ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ' বলে চিহ্নিত করেছেন । কে জি হলস্টি আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনা ক্ষেত্রের পরিধি বিভিন্ন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছেন ।
iii.  আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য : অনেক সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমার্থক বলে মনে করা হলেও পামার - পারকিনস্ , হলস্টি প্রমুখ উভয়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করেছেন । এগুলি হল—
ক.  আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনা ক্ষেত্রের পরিধি অপেক্ষা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনা ক্ষেত্রের পরিধি অনেক বেশি ব্যাপক । হলস্টি এদের মধ্যে পরিধিগত পার্থক্য দেখাতে গিয়ে বলেছেন , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিদেশনীতি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া , আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নীতিবোধ , আন্তর্জাতিক পর্যটন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে । কিন্তু সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতি ও কর্মসূচির বাস্তবায়নের সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিচার বিশ্লেষণ সম্পর্কযুক্ত ।
খ. C F Olger এদের মধ্যে পরিধিগত পার্থক্য উল্লেখ করেছেন । আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক , আইন , অর্থনীতি , যোগাযোগ ব্যবস্থা , সংগঠন , যুদ্ধ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে । কিন্তু বিভিন্ন রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিবেচ্য বিষয় ।
গ. বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেও উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে । আন্তর্জাতিক রাজনীতি প্রধানত বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ ও সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনা করে । কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলতে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা , শত্রুতা ও মিত্রতা প্রভৃতিকে বোঝায় ।
সুতরাং বলা যায় , আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়বস্তু ব্যাপক হলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়বস্তু সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ । তবে এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অংশ বলে বিবেচিত হলেও এই অংশটিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সর্বপ্রধান বা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে চিহ্নত করা যায় ।

4.  শক্তি কাকে বলে ? শক্তির উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো ।2 + 6
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি একটি অন্যতম বিতর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ ধারণা । নিরাপত্তা , শাস্তি , ন্যায়নীতি , সম্মান , গৌরব এবং অন্যান্য যেসকল মূল্যবোধ রাষ্ট্র সংরক্ষিত ও প্রসারিত করে তা সার্থক করে তোলার জন্য শক্তির প্রয়োজন ৷ মরগেনথাউ তাঁর ‘ Politics Among Nations ' গ্রন্থে বলেছেন শক্তি হল অন্যের মন ও কাজের ওপর প্রয়োগযোগ্য ক্ষমতা । অরগানস্কি - র মতে শক্তি কোনো বস্তু নয় , সম্পর্কবিশেষ । এ হল কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী অপরকে প্রভাবিত করার দক্ষতা । অধ্যাপক ফ্রাঙ্কেল বলেছেন ক্ষমতা হল প্রত্যাশিত ফললাভের সামর্থ্য ।
i.  শক্তির উপাদান : মরগেনথাউ , ই এইচ কার , অরগানস্কি , জোসেফ ফ্রাঙ্কেল প্রমুখ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ক্ষমতার উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উল্লেখ করেছেন—
ক. Geography বা ভূগোল জাতীয় শক্তির উপাদান হিসেবে ভূগোলের গুরুত্ব অপরিসীম । একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সেই দেশের ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে প্রভাবিত করে । এই উপাদানের মধ্যে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে , সেগুলি হল— আয়তন , জলবায়ু , ভূপ্রকৃতি ও অবস্থান ।
খ.   Population বা জনসমষ্টি : কোনো দেশের জাতীয় শক্তির উপাদান হিসেবে মানবসম্পদের অপরিসীম গুরুত্ব আছে । জনসংখ্যার পরিমাণগত ও গুণগত দিক বিচার করা প্রয়োজন । জনসংখ্যা বেশি হলেই দেশ শক্তিশালী হয় না , তাহলে ভারত শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হত । জনসমষ্টির গড় বয়স , নারী - পুরুষ , জন্মহার মৃত্যুহার , স্বাস্থ্য , শিক্ষাগতমান , কর্মদক্ষতা , প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শিতা প্রভৃতি একটি জাতির জনসম্পদের প্রকৃতি ও দক্ষতার বিচারে সাহায্য করে ।
গ.  Raw Materials বা প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রাকৃতিক সম্প যে - জাতির প্রাধান্য সেই জাতিই শক্তিশালী । কাঁচামালসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে প্রকৃতির আশীর্বাদ হিসেবে ধরা হয় । এর মধ্যে কাঁচামাল , খনিজ সম্পদ , খাদ্যশস্য , ও অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্য , জ্বালানি ধাতু ও খাদ্যসহ কৃষিপণ্য আছে ।
ঘ.  Government বা সরকার : জাতীয় শক্তির রূপ সরকারের উৎকর্ষ বা যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে । সরকারই জাতির ভাবাদর্শ , নৈতিকতা ও নেতৃত্ব গড়ে তোলে । তাই জাতীয় শক্তিকে কাম্য পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য।
ঙ . Good Government- বা সরকার: জাতীয় শক্তির রূপ সরকারের উৎকর্ষ বা যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে । সরকারই জাতির ভাবাদর্শ, নৈতিকতা ও নেতৃত্ব গড়ে তোলা । তাই জাতীয় শক্তির কাম্য পর্যায়ে উন্নতি করার জন্য Good Government- এর ভূমিকা বিরোধ - বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা প্রয়োজন।
চ . Diplomacy বা কূটনীতি : শক্তির মস্তিষ্ক বলা হয় কূটনীতিকে । মরগেনথাউ - এর মতে “ আধুনিক যুগে কূটনীতি হল জাতীয় ক্ষমতার উপাদানসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ । ” কূটনীতির উৎকর্ষের ওপরে জাতীয় শক্তির অগ্রগতি অনেকখানি নির্ভরশীল ।
ছ . Ideology , Morality , Nation Character and Leadership বা ভাবাদর্শ , নীতিবোধ , জাতীয় চরিত্র ও নেতৃত্ব বিশ্বাস , চিন্তাধারা ও জীবনদর্শনকে মিলিতভাবে সূত্রায়িত করাকে ভাবাদর্শ বলে । এই ভাবাদর্শ ও নৈতিকতা আদর্শগতভাবে জাতীয় চরিত্রকে গড়ে তোলে । আবার কোনো জাতির মানসিক ও নৈতিক গুণাবলি নেতৃত্বের প্রকৃতি নির্ধারণ করে ।
জ . Military Strength বা সামরিক শক্তি : কোনো রাষ্ট্রের সামরিক ক্ষমতা জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি করে । সামরিক বাহিনী যদি শক্তিশালী হয় তাহলে সে সহজেই বিদেশি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে এবং সামরিক শক্তি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্রে বলীয়ান হওয়ার জন্য বর্তমানে বৃহৎশক্তিতে পরিণত হয়েছে ।
ঝ . Economic Development বা অর্থনৈতিক উন্নতি কোনো রাষ্ট্র যদি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নত হয় তাহলে তার জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি পাবে । 1
ঞ Patriotism বা দেশপ্রেম রাষ্ট্রের প্রতি ভালোবাসা বা জাতীয়তাবোধ জাতীয় শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক । দেশবাসীর দেশপ্রেম যত গভীর হবে , রাষ্ট্র তত শক্তিশালী হবে ।
মুল্যায়ন
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে , শক্তির উপাদানগুলি প্রত্যেকটি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত । তাই কোনো একটি উপাদানের ওপর জাতীয় শক্তি সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল নয় । জাতীয় শক্তিবৃদ্ধিতে অনেকগুলি উপাদান একসঙ্গে কাজ করে ।

No comments:

Post a Comment