বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উওর | বহুরূপী গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর | বহুরূপী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর |WBBSE Class 10th Bengali Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Wednesday, 16 February 2022

বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উওর | বহুরূপী গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর | বহুরূপী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর |WBBSE Class 10th Bengali Suggestion

 

বহুরূপী সুবোধ ঘোষ
প্রশ্ন উত্তর 



দশম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন 2023, ইতিহাস বিষয়ের কিছু গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর যা প্রায় ফাইনাল পরীক্ষায় এসে থাকে, নিচের লিংকে

👉( ইতিহাস সাজেশন 2023 )



👉( দশম শ্রেণীর বাংলা আই আরো বেঁধে বেঁধে থাকি   প্রশ্ন উত্তর )


কবি পরিচিতি :

সুবোধ ঘোষ সাহিত্য জগতে তাঁর অনুপ্রবেশ ঘটেছিল বেশ কিছুটা দেরিতে । তিনি তার মেধাশক্তি , চিন্তাচেতনা এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা বাংলা সাহিত্যকে বিভিন্ন কালজয়ী রচনার মধ্য দিয়ে ভরিয়ে তুলেছেন ।

জন্ম ও শৈশৱর : বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ১৪ সেপ্টেম্বর বিহারের হাজারিবাগে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে ।
শিক্ষাজীবন : সুবোধ ঘোষ হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন । বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরিতে তিনি পড়াশোনা করতেন । প্রত্নতত্ত্ব , পুরাতত্ত্ব , এমনকি সামরিকবিদ্যায় তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল ।
কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন: সুবোধ ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয় বিহারের আদিবাসী অঞ্চলে বাসের কনডাক্টর হিসেবে । এরপর সার্কাসের ক্লাউন , মুম্বাই পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কাজ , চায়ের ব্যাবসা , বেকারির ব্যাবসা , মালগুদামের স্টোরকিপার প্রভৃতি কাজে তিনি তার জীবনের বেশ কিছুটা সময় ব্যয় করেন । বহু পথ ঘুরে তিরিশের দশকের শেষে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা - র রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী হিসেবে যোগ দেন । তাঁর লেখালেখির সময়কাল ১৯৪০ থেকে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট দাঙ্গাবিধ্বস্ত নোয়াখালিতে গান্ধিজির সহচর হিসেবে তিনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন । দাঙ্গা এবং দাঙ্গা - পরবর্তী সময়ের সাম্প্রদায়িকতা , হিংস্রতা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল । সুবোধ ঘোষের প্রথম গল্প ‘ অযান্ত্রিক ’ । তার আর একটি বিখ্যাত গল্প ‘ থির বিজুরি ’ । শুধু গল্পকার হিসেবে নয় , ঔপন্যাসিক হিসেবেও তিনি প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন । তাঁর লেখা একটি অন্যতম উপন্যাস হল তিলাঞ্জলি ( ১৯৪৪ ) । কংগ্রেস সাহিত্যসংঘের মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর এই উপন্যাসে । বিচিত্র জীবিকার সঙ্গে যুক্ত ছিল তার কর্মজীবন । আনন্দবাজার পত্রিকা র সহকারী হিসেবে তিনি যোগ দেন । ক্রমে সেখানকার সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর এবং তারপর অন্যতম সম্পাদকীয় লেখক হয়ে ওঠেন তিনি । তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা হল — ' ভারত প্রেমকথা ’ ( মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত ) , ' গঙ্গোত্রী ' ( ১৯৪৭ ) , ' ত্রিযামা ’ ( ১৯৫০ ) , ‘ ভালবাসার গল্প ’ , ‘ শতকিয়া ’ ( ১৯৫৮ ) প্রভৃতি । এ ছাড়াও তাঁর কয়েকটি গল্পসংকলন হল — ‘ ফসিল ’ , ‘ পরশুরামের কুঠার ’ , ‘ জতুগৃহ ’ ।
পুরষ্কার : সুবোধ ঘোষ তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য আনন্দ পুরস্কার এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক পান ।
জীবনাবসান : ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ১০ মার্চ এই বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মারা যান ।


উৎসঃ

সুবোধ ঘোষের গল্পসমগ্র , তৃতীয় খণ্ড থেকে ' বহুরূপী ' গল্পটি নেওয়া হয়েছে।


বিষয় সংক্ষেপঃ

' বহুরূপী ' গল্পটি মূলত এক বহুরূপীর জীবন নিয়ে লেখা । গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা শহরের সবচেয়ে ছোটো গলির মধ্যেই বাস করেন । সেখানে আড্ডাও বসে নিয়মিত । রোজকার চাকরি করতে যাওয়া হরিদার কোনোদিনই পোষাত না । তিনি ছিলেন বহুরূপী । তিনি মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন রূপ ধারণ করতেন — কখনও পাগল সাজতেন , কখনও বাউল , কোনোদিন কাপালিক , কখনও বোঁচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা , কখনও - বা পুলিশ । তাঁর এইসব রূপ দেখে অনেকেই কিছু পয়সা দিত । এটা তাঁর একরকম রোজগার ছিল । পুলিশ সেজে তিনি ঘুষও নিয়েছেন । তাঁর এইসব বহুরূপীর বেশ দেখে লোকজন বিরক্ত হত , আবার কেউ কেউ খুব আনন্দিত হত , কেউ - বা বিস্মিত হত । বহুরূপী সেজে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন । জাগদীশবাবুর বাড়ীতে হিমালয়ের গুহানিবাসী এক সন্ন্যাসীর আগমন এবং অভ্যর্থনার কথা শুনে মোটা রকমের উপার্জনের আশায় তিনি সন্ন্যাসী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । সৌম্য , শান্ত , জ্ঞানী মানুষ জগদীশবাবু । সাদা উত্তরীয় , ছোটো বহরের থান পরে এক বিরাগী মানুষের বেশ ধরে বহুরূপী হরিদা হাজির হয়েছিলেন জগদীশবাবুর বাড়িতে । তাঁর সাজপোশাক , উদাত্ত , শান্ত , উজ্জ্বল দৃষ্টি দেখে কেউ বুঝতেও পারেনি তিনি আসলে হরিদা । যখনই যে রূপ হরিদা ধারণ করতেন , তখনই তিনি সেই রূপ বা সেই চরিত্রটির সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যেতেন যে , তাঁকে বহুরুপী বলে কেউ বুঝতেও পারত না । তিনি সত্যিই যেন মূল চরিত্রটিই হয়ে উঠতেন । এক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি । হরিদা সত্যিই যেন বিরাগী হয়ে উঠেছিলেন । তখন তিনি ধন , যৌবন , সংসার — সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন । তাই জগদীশবাবু তাঁকে তীর্থভ্রমণের জন্য টাকা দিতে চাইলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন । আসলে এইভাবে বহুরূপী পেশাটাকেই তিনি যোগ্য সম্মান দিয়েছিলেন । কারণ এই পেশা ছিল তাঁর ভালোবাসা ।


নামকরণঃ

যে - কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । আর এই নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক , ভাবকেন্দ্রিক বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে । যে - কোনো সাহিত্যের অন্তর্নিহিত ভাবও এই নামকরণের মাধ্যমেই ফুটিয়ে তোলা হয় । শহরের সবচেয়ে সরু গলিটার ভিতরের ছোট্ট ঘরটাই হরিদার জীবনের একমাত্র আশ্রয় ৷ কোনো ছকে বাঁধা কাজ করতে তাঁর ভালো লাগে না । তবে তাঁর জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য হল এই যে , তিনি মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজেন । এতে সামান্য কিছু রোজগারও হয় বটে।বহুরূপী সেজে তিনি কখনও বাসস্ট্যান্ডে , কখনও বাজারে , কখনও আবার অন্য উপায় তাঁর সাজ দেখিয়ে পয়সা রোজগার করেন । বহুরূপী সাজাটাই তাঁর পেশা ।
এই পেশাগত বিচারে গল্পের নামকরণ যথাযথ । কিন্তু সুবোধ ঘোষ গল্প কাহিনিতে একটু বাঁক ফেরালেন জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদাকে এনে । হরিদা চেয়েছিলেন কৃপণ , ধনী জগদীশবাবুর কাছ  থেকে বেশি করে টাকা আদায় করবেন । সেইমতো তিনি বিরাগীর বেশে সেজেওছিলেন ভালো । জগদীশবাবু হরিদাকে বিরাগীর বেশে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান । জগদীশবাবু বুঝতেই পারেন না যে , তার বাড়িতে বিরাগী বেশে আসা লোকটা আসলে একজন বহুরুপী । উপরন্ত তিনি বিরাগী হরিদাকে একশো এক টাকার একটি থলি দিতে গেলে হরিদা তা প্রত্যাখ্যান করেন।তিনি জানান , বিরাগীর কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই । ত্যাগই তাঁর জীবনের ধর্ম । অর্থাৎ বহুরূপী সাজলেও হরিদা অনুকরণীয় চরিত্রের ঢং নষ্ট করেননি । এখানেই হরিদার বহুরূপী পেশা পাঠকদের কাছে গৌরবের হয়ে উঠেছে । তাই বলা যায় গল্পের নামকরণ কিছুটা বিষয়কেন্দ্রিক হলেও ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে উঠেছে । সেদিক থেকে গল্পের নামকরণ ‘ বহুরূপী ’ সার্থক হয়েছে ।


S.A.Q...............Mark-1
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রতিটি প্রশ্নের মান-১-২

১. লেখক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদার কাছে কোন্ ঘটনা শোনাতে এসেছিলেন ?
উঃসুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে খুব উঁচুদরের এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন এবং তিনি সাত দিন ধরে তাঁর বাড়িতে ছিলেন । এই খবরটাই লেখক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদাকে শোনাতে এসেছিলেন ।

২. “ হরিদার কাছে আমরাই গল্প করে বললাম । ” — কীসের গল্প ?
উঃ বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন । হরিদার কাছে সেই সন্ন্যাসীর গল্পই করা হয়েছিল ।

৩. “ সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস ” —দুর্লভ জিনিসটি কী ?
উঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ’ গল্পের আলোচ্য অংশে দুর্লভ জিনিসটি হল জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ।

৪. হরিদা সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাঁকে কী বলা হয়েছিল ?
উঃ ‘ বহুরূপী ’ গল্পে হরিদা সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাঁকে বলা হয়েছিল , সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো দুর্লভ জিনিস । একমাত্র জগদীশবাবু ছাড়া কেউই তাই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পাননি ।

৫. কীভাবে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পেয়েছিলেন ?
উঃ জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর জন্য একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে খড়মজোড়া সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরতেই সন্ন্যাসী বাধ্য হয়ে নিজের পা এগিয়ে দেন । সেই সুযোগে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়ে নেন ।

৬. সন্ন্যাসী চলে যাওয়ার আগে জগদীশবাবু কী করেছিলেন ?
উঃ সন্ন্যাসী চলে যাওয়ার আগে জগদীশবাবু কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তাঁকে দিয়েছিলেন আর সন্ন্যাসীর ঝোলায় জোর করে একশো টাকার একটা নোট ফেলে দিয়েছিলেন ।

৭. “ সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন ” –সন্ন্যাসী কী দেখে হাসলেন ?
উঃ ‘ বহুরূপী ’ গল্পে সন্ন্যাসীকে বিদায় দেবার সময় জগদীশবাবু একশো টাকার একটা নোট তাঁর ঝোলায় জোর করে ফেলে দিলেন — তা দেখে সন্ন্যাসী হাসলেন ।

৮. হরিদার ঘরটা কীরকম ছিল এবং সেখানে কী হত ?
উঃ শহরের সবচেয়ে সরু এক গলির মধ্যে হরিদার ছোটো একটা ঘর ছিল । সেখানে সকাল - সন্ধ্যা লেখকদের আড্ডা বসত । চা , চিনি , দুধ তাঁরাই আনতেন । হরিদা শুধু আগুনের আঁচে জল ফুটিয়ে দিতেন ।

৯. কোন্ ধরনের কাজ হরিদার পছন্দ ছিল না ?
উঃ বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত ' বহুরূপী ’ গল্পে হরিদার কোনো অফিসের কাজ বা দোকানে বিক্রি করার কাজ পছন্দ ছিল না ।

১০. হরিদা কীভাবে প্রতিদিনের অন্নসংস্থান করেন ?
উঃ হরিদা বহুরূপী সেজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান । বহুরূপীর সাজ দেখে কেউ কেউ এক - আনা , দু - আনা বকশিশ দেয় । সেই রোজগারেই হরিদার দিন চলে ।

১১. হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কী ছিল ?
উঃ হরিদা ছিলেন পেশায় বহুরূপী । তিনি কখনও পাগল সাজতেন , কখনও বাউল , কোনোদিন কাপালিক , কখনও - বা বোঁচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা সাজতেন । এটাই ছিল তাঁর জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য ।

১২. “ দুটো একটা পয়সা ফেলেও দিচ্ছে ” —কারা , কীজন্য পয়সা ফেলে দিচ্ছে ?
উঃ গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পে হরিদা একদিন দুপুরবেলায় চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে পাগল সাজলে বাসের যাত্রীরা দুটো - একটা পয়সা ছুড়ে দিচ্ছিল ।

১৩. “ এই বার সরে পড়ো ” – কে , কাকে সরে পড়তে বলেছিল ?
উঃ বাস ড্রাইভার কাশীনাথ জানত হরিদা বহুরূপী সাজে । আর তাই একদিন হরিদা পাগল সাজলে বাস ড্রাইভার হরিদাকে চিনতে পেরে তাঁকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেছিল ।

১৪. পাগলকে বহুরূপী বুঝতে পেরে লোকজন কী করে ?
উঃ পাগল আসলে বহুরূপী তা বুঝতে পেরে বাসের যাত্রীরা কেউ হাসে , কেউ বিরক্ত হয় , আবার কেউ এই ভেবে অবাক হয় যে লোকটা এমন সেজেছে যে তাকে চেনাই যাচ্ছে না ।

১৫. “ কিন্তু দোকানদার হেসে ফেলে — হরির কাণ্ড ” —হরির কাণ্ডটি কী ?
উঃ সুবোধ ঘোষের ' বহুরূপী ' গল্পে আলোচ্য অংশে হরিদার যে কাণ্ডের কথা বলা হয়েছে তা হল শহরের পথে বাইজি সেজে ঘুঙুরের আওয়াজ তুলে নাচতে নাচতে যাওয়া ।

১৬. , বাইজির ছদ্মবেশে হরিদা কত টাকা উপার্জন করেছিল ?
উঃ বিশিষ্ট গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ' গল্পে রূপসি বাইজির ছদ্মবেশে হরিদা আট টাকা দশ আনা উপার্জন করেছিলেন ।

  ১৭. কোন্ বহুরুপীবেশে হরিদার রোজগার বেশি হয়েছিলেন ?
উঃ বহুরূপী ’ গল্পে রূপসি বাইজি সেজে হরিদার রোজগার বেশি হয়েছিল । বাইজি সেজে দোকানে দোকানে ফুলসাজি এগিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি । দোকানদাররা সেই সাজিতে এক সিকি করে দেওয়ায় হরিদা সেদিন মোট আট টাকা দশ আনা পেয়েছিল ।

১৮. পুলিশ সেজে হরিদা কী করেছিলেন ?
উঃ প্রখ্যাত গল্পকার সুবোধ ঘোষের লেখা ' বহুরূপী ' গল্পে হরিদা একবার পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিলেন আর সেখান থেকে স্কুলের চারটে ছেলেকে ধরেছিলেন ।

১৯. কোন্ সময় এবং কী বেশে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন ?
উঃ ‘ বহুরূপী ’ গল্পে হরিদা সন্ধ্যার সময় আদুড় গায়ে একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় আর ছোটো থান পরে বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন ।

২০. “ চমকে উঠলেন জগদীশবাবু । ” — জগদীশবাবুর চমকে ওঠার কারণ কী ?
উঃ গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পে আদুড় গা , তার উপরে সাদা  উত্তরীয় ; পরনে ছোটো বহরের সাদা থান পরা বিরাগীবেশী হরিদাকে দেখে জগদীশবাবু চমকে গিয়েছিলেন ।

২১. “ জগদীশবাবুর দুই বিস্মিত চোখ অপলক হয়ে গেল ” — কী দেখে জগদীশবাবুর এমন অবস্থা হয়েছিল ?
উঃ জগদীশবাবু সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখেছিলেন আদুড় গায়ে সাদা উত্তরীয় পরা এক বিরাগী সামনে দাঁড়িয়ে আছেন , তখন তিনি অপলক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে চেয়ে রইলেন ।

২২. “ আমার অপরাধ হয়েছে ” বক্তার অপরাধ কী ছিল ?
উঃ বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পের আলোচ্য অংশে বিরাগী সাজে হরিদাকে দেখে জগদীশবাবু ওপর থেকে নীচে নেমে আসেননি ৷ এটাই ছিল তাঁর অপরাধ ।

২৩. হরিদার বিরাগী মূর্তি সম্পর্কে লেখক কী মন্তব্য করেছেন ?
উঃ বিরাগীকে দেখে লেখক মন্তব্য করেছেন সীমার ওপার থেকে তিনি যেন হেঁটে এসেছেন । তাঁর শীর্ণ শরীর যেন অশরীরী সত্তা । উদাত্ত , শান্ত ও উজ্জ্বল দৃষ্টি তাঁর চোখ থেকে ঝরে পড়ছে ।

২৪. “ হতেই পারে না । ” — কী হতে পারে না বলে বক্তার ধারণা ?
উঃ হরিদা বিরাগী সাজলে কথক ও তাঁর বন্ধুরা তাঁকে চিনতেই পারেননি । তাঁদের মধ্যে ভবতোষ ভেবেছিল এই বিরাগী কখনোই হরিদা হতে পারেন না ।

২৫. “ তিনি আপনার চেয়ে কিছু কম নয় । ” – “ তিনি ’ বলতে বক্তা কাকে বুঝিয়েছেন ?
উঃ প্রখ্যাত গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পের আলোচ্য অংশে ‘ তিনি ’ বলতে বক্তা পরম করুণাময় ঈশ্বরকেই বুঝিয়েছেন ।

২৬. বিরাগী মতে ‘ পরম সুখ ’ আসলে কী ?
উঃ বিশিষ্ট গল্পকার সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ' গল্পে বিরাগীর মতে ‘ পরম সুখ ’ হল সমস্ত সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া ।

২৭. বিরাগীর কাছে জগদীশবাবুর প্রাণের অনুরোধটি কী ছিল এবং তা শুনে বিরাগী কী বলেছিলেন ?
উঃ জগদীশবাবু বিরাগীকে তার বাড়িতে কিছুদিন থাকতে অনুরোধ করেছিলেন । এই কথা বিরাগী বলেছিলেন ধরিত্রীই তাঁর আসল থাকার জায়গা । দালান বাড়িতে তিনি থাকতে পারবেন না ।

২৮. বিরাগী চলে যাওয়ার আগে জগদীশবাবু কী করেছিলেন ?
উঃ বিরাগী চলে যাওয়ার আগে জগদীশবাবু নোটের তাড়া ভরতি একটি থলে প্রণামিস্বরূপ বিরাগীর পায়ের কাছে রাখেন । এই টাকা তিনি বিরাগীকে তীর্থভ্রমণ উপলক্ষ্যে দিতে চেয়েছিলেন ।

২৯. “ ভ্রমণ করে দেখবার তো কোনো দরকার হয় না । ” — কেন ভ্রমণ করে দেখবার দরকার হয় না ?
উঃ গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পে বিরাগী হরিদার মতে , তার বুকের ভিতরেই রয়েছে সব তীর্থ , তাই ভ্রমণ করে দেখবার প্রয়োজন হয় না ।

৩০. হরিদার ঘরে গিয়ে গল্পের কথক কী দেখেছিলেন ?
উঃ হরিদার ঘরে গিয়ে কথক দেখেন , উনানের গনগনে আগুনে হাঁড়িতে চাল ফুটছে আর হরিদা একটা বিড়ি ধরিয়ে নিয়ে চুপ করে বসে আছেন ।

৩১. “ এটা কী কাণ্ড করলেন ” — কে , কী কাণ্ড করেছিলেন ?
উঃ হরিদা বিরাগী সেজেছিলেন । জগদীশবাবু তাঁকে তীর্থভ্রমণের টাকা দিতে গেলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন । এই কাণ্ডের কথাই এখানে বলা হয়েছে ।

৩২ . “ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় । ” — কীসে ঢং নষ্ট হয়ে যেতে পারতো ?
উঃ গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে টাকা স্পর্শ করলে হরিদার ঢং নষ্ট হয়ে যেতে পারতো ।

৩৩. “ অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না । ” — হরিদার কোন্ ভুলের কথা এখানে বলা হয়েছে ?
উঃ  হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর কাছ থেকে অনেকগুলো টাকা পেয়েও গ্রহণ করেননি । এখানে তার টাকা না নেওয়াকেই ভুল বলা হয়েছে ।

৩৪. হরিদা কী কারণে আবার জগদীশবাবুর বাড়ি যেতে চেয়েছিল ?
উঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপি ’ গল্পে হরিদা বহুরূপী সেজে নিজের পাওনা বকশিশটুকু নেওয়ার জন্য জগদীশবাবুর বাড়ি আবার যেতে চেয়েছিলেন ।

৩৫. “ কী অদ্ভুদ কথা বললেন হরিদা ! ” — হরিদার অদ্ভুদ কথাটি কী ছিল ?
উঃ হরিদার অদ্ভুদ কথাটি ছিল একজন বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে টাকা স্পর্শ করা যায় না , তাতে তাঁর বহুরূপীর ঢং নষ্ট হয়ে যায় ৷

৩৬. হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে কত বকশিশ পেতে পারতেন ?
উঃ হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে খুব বেশি হলে আট আনা কিংবা দশ আনা বকশিশ পেতে পারতেন ।

৩৭. কেন হরিদা বকশিশ হিসেবে আট আনা বা দশ আনাকেই তাঁর প্রাপ্য মনে করেছিলেন ?
উঃ ‘ বহুরূপি ’ গল্পে বহুরূপীর জীবনে আট আনা বা দশ আনার বেশি আশা করা উচিত নয় বলেই সেটুকুকেই হরিদা তাঁর প্রাপ্য মনে করেছিলেন ।


ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ

প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩
১. “ ... এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন । ” — জগদীশবাবুর বাড়িতে যে সন্ন্যাসী এসেছিলেন তাঁর বর্ণনা দও ।
উত্তরঃ গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে সাত দিন ধরে এক সন্ন্যাসী ছিলেন । খুবই উঁচুদরের এই সন্ন্যাসী হিমালয়ের গুহাতে থাকতেন । তিনি সারাবছরে শুধু একটি হরীতকী খেতেন ৷ এ ছাড়া তিনি আর কিছুই খেতেন না । অনেকেই মনে করত , সন্ন্যাসীর বয়স ছিল হাজার বছরেরও বেশি । তাঁর পায়ের ধুলো ছিল অত্যন্ত দুর্লভ জিনিস ; সবাই সন্ন্যাসীর এই পায়ের ধুলো পেত না । একমাত্র জগদীশবাবুই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পেয়েছিলেন ।

২. “ সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস । ” — দুর্লভ জিনিসটা কী ? কে , কীভাবে তা লাভ করেছিল ? ১ + ২
উত্তরঃ  দুর্লভ জিনিস : সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ’ গল্পের আলোচ্য অংশে দুর্লভ জিনিসটি হল সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো । • দুর্লভ বন্ডু লাভ : জগদীশবাবুর বাড়িতে একবার এক সন্ন্যাসী এসে সাত দিন ছিলেন । সেই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ছিল অত্যন্ত দুর্লভ । জগদীশবাবু যে - কোনো মূল্যে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিতে চেয়েছিলেন । তাই জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেছিলেন । তখন বাধ্য হয়ে সন্ন্যাসী তাঁর পা এগিয়ে দিয়েছিলেন আর সেই ফাঁকে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন ।

৩.“ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা । ” — হরিদা কে ছিলেন ? কোন্ গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল ? 1 + 2
উত্তরঃ হরিদার পরিচয় : ‘ বহুরূপী ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা ছিলেন পেশায় বহুরূপী । > হরিদার গম্ভীর হয়ে যাওয়া : লেখক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদাকে জানিয়েছিলেন যে , জগদীশবাবুর বাড়িতে এক সন্ন্যাসী সাত দিন ধরে ছিলেন । তিনি সারাবছরে একটি হরীতকী খান । তাঁর বয়স হাজার বছরেরও বেশি । সন্ন্যাসী কাউকেই তাঁর পায়ের ধুলো দেন না । জগদীশবাবু কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তাঁর পায়ের কাছে ধরতেই সন্ন্যাসী সেই খড়ম পড়তে গেলে জগদীশবাবু তাঁর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন । সন্ন্যাসীর এই গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন ।

৪. “ খুবই গরিব মানুষ হরিদা ” – হরিদার দারিদ্র্যের পরিচয় - দাও ।
উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ’ গল্পে শহরের সবচেয়ে সরু একটা গলির ভিতরে হরিদার ঘর । সময় ধরে কোনো অফিসে বা দোকানে কাজ করা তাঁর পছন্দ নয় । তাই তাঁর সংসার রোজগারহীন । তাঁর উনুনে অনেক সময় শুধু জলই ফোটে , ভাত ফোটে না । এই অভাব তিনি সহ্য করতে পারেন , কিন্তু একঘেয়ে কাজ করতে তাঁর ভয়ানক আপত্তি । বহুরূপী সেজে যেটুকু রোজগার হয় তাতেই কোনোদিন একবেলা - আধবেলা খেয়ে হরিদার দিন চলে যায় ৷

৫.“ ... একটা চাকরির কাজ করে যাওয়া হরিদার পক্ষে সম্ভব নয় । ” — কেন হরিদা কোনোদিন চাকরি করেননি ?
উত্তরঃ  ইচ্ছে করলেই হরিদা যে - কোনো অফিসের কাজ অথবা কোনো দোকানের বিক্রিওয়ালার কাজ পেয়ে যেতেন । কিন্তু ঘড়ির কাঁটায় সময় ধরে নিয়ম করে রোজই এক চাকরি করতে যাওয়া হরিদার পক্ষে সম্ভব ছিল না । কোনোদিন তার হাঁড়িতে ভাত চড়ত , কোনোদিন চড়ত না । এই অভাবটা সহ্য করতেও হরিদা রাজি ছিলেন , কিন্তু একঘেয়ে কাজ করতে তাঁর ভীষণ আপত্তি ছিল । তাই হরিদা কোনোদিন চাকরি করেননি । 

৬. “ হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে । ” — হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কী ছিল ?
উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ' বহুরূপী ' গল্পে হরিদার অভাবী জীবনে একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল । হরিদা মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে রোজগার করতেন । বিচিত্র সব ছদ্মবেশে তিনি রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন । যারা চিনতে পারত তারা এক - আনা কিংবা দু - আনা বকশিশ দিত । আর যারা চিনতে পারত না তাদের মধ্যে কেউ কিছুই দিত না অথবা কেউ বিরক্ত হয়ে দু - একটা পয়সা বাড়িয়ে দিত । নানারকম বেশে রাস্তায় বেরোনোটাই ছিল হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য । 

৭. “ ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল । ” — কোথায় আতঙ্কের হল্লাটি বেজে উঠেছিল ? নিজের ভাষায় তার বর্ণনা দাও । ১ + ২
উত্তরঃ যেখানে হল্লা বেজে উঠেছিল : একদিন দুপুরবেলা চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে আতঙ্কের হল্লাটি বেজে উঠেছিল ।
আতঙ্কের ঘটনার বর্ণনা চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে একদিন এক পাগলকে দেখা গিয়েছিল । কটকটে লাল চোখের সেই পাগলের মুখ থেকে লালা ঝরছিল । তার কোমড়ে ছিল একটা ছেঁড়া কম্বল আর গলায় ছিল টিনের কৌটোর একটা মালা । সেই পাগলটা একটা থান ইট নিয়ে বাসে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল । তাকে দেখে যাত্রীরা চেঁচিয়ে উঠছিল । কেউ কেউ দু - এক পয়সা তার সামনে ফেলে দিচ্ছিল । এভাবেই বাসস্ট্যান্ডে আতঙ্কের হল্লা শুরু হয়েছিল । বাস ড্রাইভার কাশীনাথ অবশ্য বুঝতে পেরেছিল লোকটা আসলে বহুরূপী হরিদা ।

৮. “ কিন্তু দোকানদার হেসে ফেলে — হরির কাণ্ড কোন  কাণ্ডের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ বহুরূপী হরিদা বিভিন্ন বেশ ধারণ করতেন । একদিন সন্ধেবেলায় যখন আলো সবেমাত্র জ্বলে উঠেছে ঠিক সেইসময় হঠাৎই সবাই ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পায় । সবাই দেখে এক রূপসি বাইজি নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছে । এক - একটা দোকানের সামনে গিয়ে তিনি দাঁড়ান আর মুচকি হেসে চোখ টিপে একটা ফুলসাজি এগিয়ে দেন । দোকানিরাও হেসে ফেলে একটা সিকি সেই ফুলসাজিতে দিয়ে দেয় । হরিদা - ই বাইজি সেজে এই কাণ্ড ঘটান আর বাইজিটি যে আসলে এক বহুরূপী , সেটা জানতে পেরে দর্শকদের মোহভঙ্গ হয় ।

৯. দয়ালবাবুর লিচু বাগানে কী ঘটনা ঘটেছিল ?
উত্তরঃ দয়ালবাবুর লিচু বাগানে স্কুলের চারটি ছেলে এসেছিল লিচু নেওয়ার আশায় । সেখানে হরিদা পুলিশ সেজে দাঁড়িয়েছিলেন আর সেই চার জন ছেলেকে তিনি ধরেছিলেন । সব ছেলে তাঁকে সত্যিকারের পুলিশ বলেই মনে করেছিল এবং ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল । তারপর সেই ছেলেদের স্কুলের মাস্টারমশাই সেখানে এসে ছেলেদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নকল পুলিশের কাছে ক্ষমা চান এবং তাকে আট আনা ঘুষও দেন । সেই আট আনা ঘুষ পাওয়ার পর নকল পুলিশ হরিদা সেই চার জন ছেলেকে ছেড়েছিলেন ।

১০. হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন ? তিনি কীভাবে মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন ? ১ + ২
উত্তরঃ স্থান : হরিদা পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিলেন । • মাস্টারমশাইকে বোকা বানানো : দয়ালবাবুর লিচু বাগানে হরিদা পুলিশ সেজে স্কুলের চারটি ছেলেকে ধরেছিলেন । ছেলেরা তাঁকে সত্যিকারের পুলিশ বলেই মনে করেছিল এবং ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল । তারপর সেই ছেলেগুলির স্কুলের মাস্টারমশাই সেখানে এসে নকল পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে , তাকে আট আনা ঘুষ দিয়েছিলেন । ঘুষ পাওয়ার পর তবেই নকল পুলিশ হরিদা সেই চার জন ছেলেকে ছেড়েছিলেন । হরিদা এভাবেই মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন ।

১১. “ ঠিকই , আমাদের সন্দেহ মিথ্যে নয় । ” — কারা , কী সন্দেহ করেছিল ? সেই সন্দেহ যে ঠিক , তা কীভাবে বোঝা গেল ? 5 + 3
উত্তরঃ সন্দেহকারী ও সন্দেহ : গল্পের কথক ও তাঁর বন্ধুরা ভেবেছিলেন হরিদা সন্ন্যাসীর কথা শুনে গম্ভীর হয়ে গেছেন । হয়তো মনে মনে কোনো মতলব ফাঁদছেন ।
সন্দেহের যথার্থতা : হরিদা একদিন কথক ও তাঁর বন্ধুদের বলেন যে , তিনি তাঁদের একটা জবর খেলা দেখাবেন । আর তিনি ওই খেলা দেখাবে জগদীশবাবুর বাড়িতে । জগদীশবাবু ধনী লোক । সন্ন্যাসীর গল্প শুদে হরিদা তাই সন্ন্যাসীর চরিত্রটিকেই বেছে নিয়েছেন । হরিদার কথা শুনেই কথক ও তাঁর বন্ধুদের সন্দেহ ঠিক বলে প্রমাণিত হল ।

১২. “ আমি বলছি তোমরা সেখানে থেকো । ” — এখানে বক্তা কাদের থাকতে বলেছেন ? তাদের থাকতে বলার কারণ কী ?
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট জন : উল্লিখিত অংশে হরিদা গল্পকথক এবং তাঁর বন্ধুদের থাকতে বলেছেন । • থাকতে বলার কারণ : কথকেরা হরিদাকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা হিমালয়ের গুহানিবাসী সন্ন্যাসীর কথা শুনিয়েছিলেন । সেই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ছিল দুর্লভ । কিন্তু জগদীশবাবু কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তা সন্ন্যাসীকে পরতে দিয়ে সুকৌশলে তার পায়ের ধুলো নেন । এ গল্প শুনেই হরিদা গম্ভীর হয়ে যান এবং বলেন যে , তিনি একটা ‘ জবর খেলা দেখাবেন । এই খেলা দেখতেই হরিদা কথকদের আমন্ত্রণ জানান ।

১৩. “ বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা ” – সন্ধ্যার যে সৌন্দর্যের বর্ণনা এখানে আছে তা লেখো ।
উত্তরঃ ' বহুরূপী ' গল্পে উল্লিখিত সন্ধেবেলায় দেখা যায় অনেকদিন পর চাঁদের আলো শহরের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে । স্নিগ্ধ , উজ্জ্বল আলোর সৌন্দর্যে ভরে গেছে চারিদিক । ঠান্ডা ফুরফুরে বাতাস বইছে । গাছের পাতাও হাওয়ায় দুলছে আর তারা যেন ঝিরঝির শব্দ দিয়ে কিছু বলতে চাইছে । চারিদিক শান্ত , স্নিগ্ধ । জগদীশবাবুর বাড়ির বারান্দাতে মস্ত বড়ো একটা আলো জ্বলছে । আর সেই আলোর কাছে একটা চেয়ারের ওপর জগদীশবাবু বসে আছেন ।

১৪.“ ও চেহারা কি সত্যিই কোনো বহুরূপীর হতে পারে । ” — কার কথা বলা হয়েছে ? সেই চেহারার বর্ণনা দাও । ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : উল্লিখিত অংশে বিরাগীর বেশ ধারণকারী হরিদার কথা বলা হয়েছে । চেহারার বর্ণনা : বিরাগীর খালি গায়ে ছিল ধবধবে সাদা উত্তরীয় ,
পরনে ছিল একটি ছোটো থান , মাথায় শুকনো সাদা চুল , হাতে ছিল একটা ঝোলা আর পা ছিল ধুলোমাখা । তাঁর ঝোলায় ছিল একটা গীতা । দেখে মনে হচ্ছিল যেন জগতের সীমার ওপার থেকে তিনি হেঁটে হেঁটেই চলে এসেছেন । শীর্ণ শরীরটাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী চেহারা আর তাঁর চোখ থেকে একটা অদ্ভুত উদাত্ত , শান্ত ও উজ্জ্বল দৃষ্টি যেন ঝরে পড়ছিল ।

১৫. “ আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো ? ” কাকে এ কথা বলা হয়েছে ? এ কথা বলার কারণ কী ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বিরাগীবেশী হরিদা জগদীশবাবুকে এ কথা বলেছেন।
এ কথা  বলার কারণ:  বিরাগীর বেশে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে এলে জগদীশবাবু তাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান । সাধুসঙ্গে আগ্রহী জগদীশবাবু তাঁকে উঠে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানান । তিনি তখন বারান্দায় একটা চেয়ারে বসেছিলেন । বারান্দা থেকে জগদীশবাবুর নেমে না আসাটা বিরাগীর ক্ষোভের কারণ হয় । তিনি রুষ্টভাবে বলেন যে এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে জগদীশবাবু নিজেকে ভগবানের থেকেও বড়ো বলে মনে করছেন ।

১৬. “ আমি এই সৃষ্টির মধ্যে এককণা ধূলি । ” — প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা লেখো ।
উত্তরঃ প্রসঙ্গ : জগদীশবাবু বিরাগীরূপী হরিদাকে ‘ মহারাজ ’ বলে সম্বোধন করেন । তাঁর কথার উত্তর দিতেই বিরাগী হরিদা এ কথা বলেছেন ।
ব্যাখ্যা : বিরাগী হরিদার মতে , আসল মহারাজ হলেন ঈশ্বর । মানুষ কখনও মহারাজ হতে পারে না । পৃথিবীর সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর । মানুষ সেই সৃষ্টির একটি অংশ মাত্র । সামান্য ধূলিকণার সঙ্গে মানুষকে তুলনা করে বিরাগী হরিদা তাঁর সংসারবৈরাগ্যের পরিচয় দিয়েছেন । আসলে এটি ছিল হরিদার সন্ন্যাসীসুলভ দার্শনিক উক্তি ।

১৭. “ ওসব হলো সুন্দর সুন্দর এক - একটি বনা । ” — ‘ ওসব ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? সেগুলোকে ‘ বঞ্ছনা ’ বলা হয়েছে কেন ? 5 + 2
উত্তরঃ ‘ ওসব ’ বলতে বোঝানো হয়েছে : ‘ ওসব ’ বলতে ধন , জন ও যৌবনকেই বোঝানো হয়েছে ।
• ‘ বঞ্চনা ' বলার কারণ : হরিদা বিরাগী সেজেছেন । বিরাগীরা হলেন সংসারত্যাগী মানুষ , পৃথিবীর সব মোহ থেকে তাঁরা মুক্ত । তাঁরা সিদ্ধপুরুষ । তাঁদের কাছে এই জগতের সুখ - সমৃদ্ধির কোনো মূল্য নেই । ধন , জন , যৌবন — এগুলিই মানুষের মনকে চঞ্চল করে । আর এসব পাওয়ার নেশায় মানুষ অসহিয়ু হয়ে ওঠে । প্রাপ্তির পরও তাদের লোভের শেষ থাকে না । আরও পাবার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয় । তাই ওগুলোকে  বিরাগী হরিদা ‘ বঞ্চনা ’ বলেছেন ।

১৮ .“ হরিদার উনানের আগুন তখন বেশ গনগনে হয়ে জ্বলছে । ” — হরিদা কে ? উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখক পরোক্ষে কী বোঝাতে চেয়েছেন ? ১ + ২
উত্তরঃ হরিদার পরিচয় : হরিদা ছিলেন একজন অভাবী মানুষ । তাঁর পেশা ছিল বহুরূপী ।
পরোক্ষে লেখকের বক্তব্য : হরিদার ছোট্ট ঘরে উনানে যে আগুন জ্বলে তাতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে , ভাত ফোটে না । বহুরূপী সেজে সামান্য রোজগারে প্রতিদিন তাঁর খাবারের সংস্থান হয় না । আবার তাঁর সততা এই অবস্থা থেকে তাঁকে বেরোতে দেয় না । জগদীশবাবুর বাড়িতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শুধু সন্ন্যাসীর ‘ ঢং ’ নষ্ট হবে বলে তিনি প্রণামির টাকা গ্রহণ করেননি । খিদের আগুন তাই উনানের আগুনের প্রতীকে জ্বলতেই থাকে হরিদার ঘরে ।

১৯. “ আমাদের দেখতে পেয়েই লজ্জিতভাবে হাসলেন ” —কে , কাদের দেখতে পেয়ে হেসেছিলেন ? লজ্জিতভাবে হাসির কারণ কী ? ১ + ২
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট জন : গল্পের কথক এবং তাঁর বন্ধুদের দেখে হরিদা  হেসেছিলেন ।
• লজ্জিতভাবে হাসার কারণ : হরিদা জগদীশবাবুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করবেন বলে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন । কথক ও তার বন্ধুদের কাছে সে - কথা হরিদা আগেই জানিয়েছিলেন । হরিদার বিরাগীমূর্তি দেখে জগদীশবাবু মোহিত হয়ে যান । তিনি হরিদাকে একশো এক টাকা ভরে একটি থলিও দেন । কিন্তু হরিদা সেই টাকার থলি ছুঁয়েও দেখেন না । পূর্বপ্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় তিনি লজ্জিত হয়েছিলেন ।

২০. ‘ বহুরূপী ’ গল্পে কীভাবে বোঝা গেল যে বিরাগী আসলে হরিদাই ?
উত্তরঃ লেখক তাঁর বন্ধুদের নিয়ে হরিদার বাড়ি এসে দেখলেন ঘরের উনুনে হাঁড়িতে চাল ফুটছে আর হরিদা বিড়ি ধরিয়ে চুপ করে বসে আছেন ৷ সবাই অবাক হয়ে গেলেন । কেউ - ই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বিরাগী আর হরিদা দুজনে আসলে একই লোক । কারণ হরিদার বিরাগী সাজের সঙ্গে তাঁরা আসল হরিদার কোনো মিল খুঁজে পাননি । কিন্তু বিরাগীর ব্যবহৃত সাদা উত্তরীয় , সেই ঝোলা এবং সেই গীতা হরিদার ঘরের মাদুরের ওপর রাখা আছে দেখে তাঁরা বুঝতে পারলেন বিরাগী আসলে হরিদাই ।

২১. “ খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব তুচ্ছ করে সরে পড়লেন ? ” — বক্তা কে ? এই প্রশ্নের উত্তরে হরিদা কী বলেছিলেন ? ১ + ২
উত্তরঃ বক্তার পরিচয় : উল্লিখিত অংশের বক্তা অনাদি । । হরিদার বক্তব্য : হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি গেলেও তীর্থভ্রমণ উপলক্ষ্যে জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকা কিন্তু তিনি গ্রহণ করেননি । কথক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদার এই টাকা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন টাকাটা নিলে তাঁর ঢং নষ্ট হয়ে যেত । যেহেতু তিনি বিরাগী সেজেছিলেন তাই বিরাগীর ধর্ম পালন করেছেন । বিরাগী সন্ন্যাসীরা কোনোদিন টাকা স্পর্শ করেন না , তাই অভাব থাকা সত্ত্বেও হরিদা সেই টাকা নিতে চাননি ।

২২. টাকা - ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল ? ” — কে বলেছিলেন ? কেন তিনি এমন কথা বলেছিলেন ? ১ + ২
উত্তরঃ  উদ্দিষ্ট জন : বহুরূপী হরিদা উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছিলেন ৷ > এমন কথা বলার কারণ : উপার্জনের আশায় জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা সন্ন্যাসী সেজে গিয়েছিলেন । কিন্তু হরিদা শেষপর্যন্ত বিরাগী চরিত্রের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে প্রণামির একশো এক টাকাও তিনি গ্রহণ করেননি । এই ঘটনা হরিদার প্রতিদিনের সঙ্গী কথক ও তাঁর বন্ধুদের বিস্মিত করে । তাতেই হরিদা বলেন যে টাকা নিলে সন্ন্যাসীর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যাবে বলেই তিনি তা গ্রহণ করেননি ।

বলেন যে টাকা নিলে সন্ন্যাসীর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যাবে বলেই তিনি তা গ্রহণ করেননি ।

২৩. “ একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল ? ” — হতদরিদ্র হরিদার এই আচরণের নেপথ্যে কোন্ সত্য লুকিয়ে আছে ?
উত্তরঃ হরিদা পাগল , বাইজি , বাউল ইত্যাদি সেজে পয়সা নিয়েছেন । কিন্তু বিরাগী সেজে পয়সা নিতে পারেননি । বিরাগী হলেন সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী । জগতের সব মোহ থেকে তাঁরা মুক্ত । হরিদা যখন বিরাগী সেজেছিলেন , তখন তিনি ওই চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়েছিলেন । একবারও ভাবেননি , তিনি বহুরূপী । আবার এটাও তিনি ভেবেছিলেন , বিরাগী সেজে পয়সা নিলে সন্ন্যাসীর আদর্শের অপমান করা হবে । বিরাগী চরিত্রের মহিমা তাতে ক্ষুণ্ণ হবে । তাই হতদরিদ্র হরিদা জগদীশবাবুর যাবতীয় প্রলোভন ত্যাগ করতে পেরেছিলেন ।

২৪. “ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় । ” — ‘ ঢং ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? কীসে ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যায় ?১ + ২
উত্তরঃ ‘ ডং ’ অর্থ : ‘ ঢং ’ বলতে এখানে অভিনয়কে বোঝানো হয়েছে । ` ‘ ডং ’ নষ্টের কারণ : হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বিরাগীর বেশ ধরে অর্থ উপার্জনের জন্য । কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি সেই সন্ন্যাসীর চরিত্রে নিজেকে মিশিয়ে দেন । ফলে চাহিদা ও লোভহীন জীবনদর্শনের কথাই তিনি শুধু বলেন না , প্রণামির টাকা উদাসীনভাবে ফেলে রেখে তিনি আচরণেও তার প্রমাণ রাখেন । হরিদা বলেন যে , বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করলে তাঁর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যাবে ।

২৫. “ অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না । ” — হরিদা কী ভুল করেছিলেন ? কেন সেই ভুল অদৃষ্ট ক্ষমা করবে না | বলা হয়েছে ? 
উত্তরঃ হরিদার ভুল : হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর কাছ থেকে একশো এক টাকা পেয়েও গ্রহণ করেননি । এটাকেই ‘ ভুল ’ বলা হয়েছে ।
অদৃষ্টের ক্ষমা না করা : হরিদা ছিলেন খুব গরিব । তাঁর পেশা বহুরুপী সাজা । বহুরূপী সেজে তার উপার্জন ছিল অতি সামান্য । কিন্তু বিরাগী সেজে হরিদা একশো এক টাকা পেয়েছিলেন । এতগুলো টাকা হয়তো তাঁকে অদৃষ্টই দিতে চেয়েছিল । তা না নিয়ে হরিদা অদৃষ্টের বিরাগভাজন হয়েছেন । এই কারণেই বলা হয়েছে অদৃষ্ট তাঁর এই ভুল ক্ষমা করবে না ।


বিশ্লেষণধর্মীয় ও রচনাধর্মীয় প্রশ্ন ও উত্তরঃ
প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫

১.“ বাঃ , এ তো বেশ মজার ব্যাপার । ” — মজার ব্যাপারটি কী ? তা বক্তার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছিল ? ২ + ৩
উত্তরঃ মজার ব্যাপার : সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ' গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে থাকার জন্য এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন । খুব উঁচুদরের এই সন্ন্যাসী হিমালয়ের গুহাতে থাকতেন । সারাবছর একটা হরীতকী ছাড়া তিনি নাকি আর কিছুই খেতেন না । অনেকের মতে , তাঁর বয়স ছিল হাজার বছরেরও বেশি ৷ জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকে তিনি পায়ের ধুলো নিতে দেননি । জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে দিয়েছিলেন । সন্ন্যাসীকে বিদায় দেওয়ার সময় জগদীশবাবু একশো টাকার একটা নোট জোর করে সন্ন্যাসীর ঝোলার মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন । এটাই ছিল মজার গল্প ৷
বক্তের উপরে প্রভাব সন্ন্যাসীর গল্প শুনে হরিদা প্রথমে গম্ভীর হয়ে যান । তিনি অনেকক্ষণ চুপ করে থাকেন । গরিব হরিদা নির্দিষ্ট কোনো পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন না । তাই মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে তিনি পয়সা রোজগার করতেন । কিন্তু তাতে তাঁর দিন চলত না । জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসীর কথা শুনে হরিদা চিন্তা করেন সাধুভক্ত জগদীশবাবু সন্ন্যাসীকে উদারহস্তে অনেক কিছু দান করেছেন । তাই তিনিও যদি কোনো সাধুসন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে জগদীশবাবুর বাড়ি যান , তবে নিশ্চয় তাঁর দাক্ষিণ্য থেকে বঞ্চিত হবেন না । এই অভিপ্রায়ে হরিদা একদিন সত্যি সত্যি বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন ৷

২. “ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা ” — গল্পটি কী ছিল ? হরিদার গম্ভীর হয়ে যওয়ার কারণ কী ছিল ? ৩ + ২
উত্তরঃ গল্পের বর্ণনা : সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ’ গল্পে অবস্থাপন্ন জগদীশবাবুর বাড়িতে এসে এক সন্ন্যাসী সাত দিন ধরে ছিলেন । তিনি হিমালয়ের গুহায় থাকতেন । অনেকে মনে করেন তাঁর বয়স হাজার বছরেরও বেশি । তিনি সারাবছরে একটি হরীতকী ছাড়া আর কিছুই খেতেন না । জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকে তিনি পায়ের ধুলো দেননি । জগদীশবাবুও তা পেয়েছিলেন কৌশল করে । একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেন আর সন্ন্যাসী বাধ্য হয়ে তাতে পা গলাতে গেলে সেই সুযোগে জগদীশবাবু সন্ন্যসীর পায়ের ধুলো নিয়ে নেন । জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর ঝোলার ভিতরে একশো টাকার একটি নোেট জোর করে ফেলে দেন । সন্ন্যাসী হেসে সেখান থেকে চলে যান । এই গল্পই হরিদাকে শোনানো হয়েছিল ।
• হরিদার গম্ভীর হওয়ার কারণ : সন্ন্যাসী এবং জগদীশবাবুর এই গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে যান । কথক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদার এই গাম্ভীর্যের কারণ বুঝতে পারেন না । এই সময়েই হরিদা তাঁদের জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখাতে যাওয়ার কথা বলেন । জগদীশবাবুর কাছ থেকে সারা বছরের প্রয়োজনীয় অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য । জগদীশবাবুর ধর্মের প্রতি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই হরিদা নিজের উদ্দেশ্য সফল করতে চেয়েছিলেন ।

৩. “ হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে । ” হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্যের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ বৈচিত্র্যময় জীবন : সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ' গল্পে হরিদা ছিলেন অত্যন্ত গরিব মানুষ । কিন্তু ধরাবাঁধা ছকে জীবন কাটানো হরিদার পছন্দ ছিল না । তাই অভাবের মধ্যেই তিনি জীবনের বৈচিত্র্য খুঁজতেন । বহুরূপীর বৈচিত্র্যময় পেশাকে সঙ্গী করেই তিনি অন্নসংস্থানের চেষ্টা চালাতেন ।
নানান ছদ্মবেশ : হঠাৎ হঠাৎ বিচিত্র ছদ্মবেশে পথে বের হতেন হরিদা । কখনও বাসস্ট্যান্ডের কাছে উন্মাদের বেশে তাঁকে দেখা যেত , আবার কখনও শহরের রাজপথ ধরে বাইজির বেশে ঘুঙুর বাজিয়ে চলে যেতেন । শহরে নতুন আসা মানুষ যারা হরিদাকে চিনত না , তারা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত আর পরিচিতরা তার কাণ্ড দেখে হেসে ফেলত । কখনও বোঁচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা , কখনও হ্যাট , কোট , প্যান্টালুন পরা ফিরিঙ্গি সাহেব — এরকম অজস্র রূপেই হরিদাকে দেখতে পাওয়া যেত । এমনকি পুলিশ সেজে স্কুলের মাস্টারমশাইকেও তিনি বোকা বানিয়েছিলেন ।
পেশার প্রতিষ্ঠা : তাঁর বিচিত্র সব সাজ আর চরিত্রের সঙ্গে মানানসই আচরণে মানুষ কখনও হাসত , কখনও তারিফ করত , কখনও বা বিরক্ত হত । আর হরিদার যা সামান্য বকশিশ জুটত তাতেই তিনি “ তার ভাতের হাঁড়ির দাবি মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন ” । কিন্তু এই দারিদ্র্যের মধ্যেও হরিদা যেন মুক্ত প্রাণের আনন্দ খুঁজে নিতেন ।

৪. “ এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা । " - যে চমৎকার ঘটনাগুলি হরিদা ঘটিয়েছিলেন তার উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ কথামুখ : সুবোধ ঘোষের ' বহুরুপী ' গল্পে হরিদা বহুরূপীর শহরের জীবনে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ঘটনা ঘটাতেন । যেমন—
পাগলের ছদ্মবেশ : একদিন হরিদা উন্মাদ পাগল সেজে বাসস্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন । তার মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল । তার চোখ দুটি ছিল কটকটে লাল । কোমরে তার ছেঁড়া কম্বল জড়ানো , গলায় টিনের কৌটোর মালা ঝুলছে । বাসযাত্রীদের দিকে সে মাঝে মাঝে তেড়ে যাচ্ছিল থান ইট নিয়ে ।
পুলিশের ছদ্মবেশ : এইরকমই একদিন পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে হরিদা দাঁড়িয়েছিলেন । সেখান থেকে চার জন স্কুলছাত্রকে তিনি ধরেন । তারপর স্কুলমাস্টার এসে নকল পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং আট আনা ঘুষ দিয়ে স্কুলমাস্টার তাঁর ছাত্রদের ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ।
বাইজির ছদ্মবেশ : আর একদিন সন্ধ্যায় দোকানের লোকজনের ব্যস্ততা আর মুখরতা যখন জমে উঠেছে তখন হঠাৎ করেই সকলে ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পায় । তারা দেখে এক রূপসি বাইজি প্রায় নাচতে নাচতে রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে । শহরে যারা নতুন এসেছিল তারা বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে থাকে । রূপসি বাইজি মুচকি হেসে , চোখ টিপে তার ফুলসাজি দোকানদারদের দিকে এগিয়ে দেয় আর দোকানদাররাও হাসিমুখে তাতে এক সিকি ফেলে দেয় । কেবল দোকানদার তাকে চিনতে পারে যে এই বাইজি আসলে বহুরূপী হরিদা ।
উপসংহার : বহুরূপী সেজে হরিদা এই চমৎকার ঘটনাগুলি ঘটিয়েছিলেন ।

৫. “ আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব । ” — কে , কাদের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন ? তিনি কোন্ জবর খেলা দেখিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : ‘ বহুরূপী ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা কথক ও তাঁর বন্ধুদের উদ্দেশে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন ।
জবর খেলার পরিচয় : বহুরূপী সেজে টাকা রোজগার করাই ছিল হরিদার নেশা এবং পেশা । তাই ধর্মভীরু জগদীশবাবুকে বোকা বানিয়ে নিজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে হরিদা সাদা থান পরে , সাদা উত্তরীয় গায়ে দিয়ে হাজির হন জগদীশবাবুর বাড়িতে । জগদীশবাবু হরিদার নিখুঁত ছদ্মবেশের কারণে তাঁকে চিনতে না পেরে বিনয় ও ভক্তিতে গদগদ হয়ে যান । নিজেকে ‘ সৃষ্টির মধ্যে এককণা ধূলি ’ বলে উল্লেখ করে জগদীশবাবুকে নীচে নেমে আসতে বাধ্য করেন তিনি । কণ্ঠস্বরে গাম্ভীর্য , মুখমণ্ডলে প্রশান্তির ছবি ফুটিয়ে তুলে হরিদা নিজের সাজকে পূর্ণাঙ্গতা দান করেন । বিরাগীবেশী হরিদা জানান যে তাঁর কোনো রাগ নেই , তিনি বিষয়ীর ঘরে থাকতে চান না । তীর্থযাত্রার জন্য জগদীশবাবু হরিদাকে একশো এক টাকার থলি দিতে চাইলে তিনি তা ছুঁয়েও দেখেন না এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন । হরিদার এরকম ছদ্মবেশ ধারণ করে জগদীশবাবুকে ধোঁকা দেওয়াকেই ‘ জবর খেলা ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।

৬. “ এবার মারি তো হাতি , লুঠি তো ভাণ্ডার ” — কে , কোন্ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছেন ? তাঁর এই উদ্দেশ্য কী শেষ অবধি সফল হয়েছিল — গল্প অবলম্বনে আলোচনা করো ।  ২ + ৩
উত্তরঃ বক্তা ও প্রসঙ্গ : সুবোধ ঘোষের ' বহুরূপী ’ গল্পে মন্তব্যটি করেছেন বহুরূপী হরিদা । কথকদের কাছ থেকে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা হিমালয়ের সাধুর কথা জানতে পারেন । জগদীশবাবু তাঁর পায়ের অতি দুর্লভ ধুলো পাওয়ার জন্য কীভাবে তাঁর খাতির - যত্ন করেছেন — তাও শোনেন । এইসব শুনতে শুনতেই হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে এক ‘ জবর খেলা ’ দেখানোর পরিকল্পনা করেন । উদ্দেশ্য ‘ মোটা মতন কিছু ’ আদায় করে নেওয়া । তাই কাঙালের মতো হাত পেতে বকশিশ নেওয়ার বদলে হরিদা চান জগদীশবাবুর ধর্মবিশ্বাস আর দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সারাবছরের রোজগার একদিনে করে নিতে । এই প্রসঙ্গেই তিনি মন্তব্যটি করেছেন ।
উদ্দেশ্যের সফলতা : এক ফুরফুরে সন্ধ্যায় বিরাগীর বেশে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হন । আদুড় গা , ধবধবে সাদা উত্তরীয় , সাদা থান পরা হরিদার আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক কথাবার্তায় জগদীশবাবু মুগ্ধ হয়ে যান । তিনি বিরাগীকে তীর্থভ্রমণের জন্য একশো এক টাকা প্রণামি দিতে চান । কিন্তু হরিদাকে এখানে পাওয়া যায় সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর ভূমিকায় ৷ সব কিছু প্রত্যাখ্যান করে তিনি চলে যান । পরে কথকদের তিনি বলেন যে বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করলে তার বহুরূপীর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যেত । নিজের পেশার প্রতি সততা থেকেই হরিদা অর্থ উপার্জনের অসাধু ইচ্ছাকে ত্যাগ করেন ।

৭. “ তোমরা যদি দেখতে চাও , তবে আজ ঠিক সন্ধ্যাতে জগদীশবাবুর বাড়িতে থেকো । ” — বক্তা কে ? সেই সন্ধ্যায় কোন্ দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ? সেই ঘটনার মধ্য দিয়ে বক্তার কোন্ পরিচয় পাও ? ১ + ২ + ২
উত্তরঃ  বক্তা : ‘ বহুরূপী ' গল্পে উদ্দিষ্ট মন্তব্যটি করেছিলেন বহুরূপী  হরিদা ।
সন্ধ্যার দৃশ্য : সেই সন্ধ্যায় বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন হরিদা । তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল জগতের সীমার ওপার থেকে যেন হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন । জগদীশবাবু নীচে নেমে তাঁকে অভ্যর্থনা না করায় তিনি একে তাঁর সম্পত্তির অহংকার বলে উল্লেখ করেন । ‘ পরম সুখ ’ বলতে তিনি বোঝান “ সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া ” । জগদীশবাবু তাঁকে কয়েকদিন থাকতে বললে তিনি জানিয়ে দেন যে , খোলা আকাশ আর ধরিত্রীর মাটি থাকতে বিষয়ীর দালান বাড়িতে তিনি থাকবেন না । জগদীশবাবু প্রণামি হিসেবে একশো এক টাকা দিতে গেলে বিরাগী হরিদা তা নেন না , বরং বলে যান— “ আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ”
উল্লিখিত ঘটনায় বক্তার পরিচয় হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন সারাবছরের রোজগার করে আনার জন্য । কিন্তু চরিত্রটার সঙ্গে তিনি এতটাই একাত্ম হয়ে যান যে তাঁর আর উপার্জনের লক্ষ্য থাকে না । বহুরুপীর বেশে নিজের সৃষ্টিতে তিনি মগ্ন হয়ে যান । তাই খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব কিছুকে তুচ্ছ করে হরিদা চলে যান । নইলে তাঁর ‘ ঢং নষ্ট ’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ।

৮. “ চমকে উঠলেন জগদীশবাবু ” – জগদীশবাবুর পরিচয় দাও । তাঁর চমকে ওঠার কারণ বর্ণনা করো । ৩ + ২
উত্তরঃ জগদীশবাবুর পরিচয় সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ’ গল্পে জগদীশবাবু এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র । তিনি অবস্থাপন্ন ও জ্ঞানী মানুষ । শান্ত ও সৌম্যকান্তি : সাদা মাথা ও সাদা দাড়িতে তাঁকে যথেষ্টই সৌম্য এবং শান্ত দেখায় । সাধু সন্ন্যাসীতেও তাঁর প্রবল ভক্তি ।
আশীর্বাদ লাভের চেষ্টা : তবে অর্থের সাহায্যে সহজে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের চেষ্টাও তিনি করেছেন । হিমালয়ের গুহায় বাস করা সন্ন্যাসীর কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে যেভাবে তিনি তাঁর ‘ দুর্লভ ’ পায়ের ধুলো সংগ্রহ করেছেন সেখানে তাঁর সহজ ভক্তি ছিল না ।
বিরাগীর সেবা : বিরাগীবেশী হরিদাকে দেখেও বিচলিত হয়েছেন জগদীশবাবু । তাঁকে বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেছেন , তাঁর সেবা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ।
ভক্তিভাবনা ও সচ্ছল জীবনযাত্রা : শেষপর্যন্ত কোনো কিছুতেই সফল না হয়ে তিনি তাঁর তীর্থ পরিক্রমার জন্য একশো এক টাকা প্রণামি হিসেবে দিতে চেয়েছেন । জগদীশবাবুর ভক্তিভাবনার সঙ্গে তাঁর সচ্ছল জীবনযাত্রার বিষয়টি এভাবেই বারেবারে যুক্ত হয়ে গেছে । তবুও তাঁর বিনয় , সাধুসঙ্গলাভের ইচ্ছা , শান্তির সন্ধান ইত্যাদি বিষয়গুলি চরিত্রটিকে আলাদা করে তুলেছে । । জগদীশবাবুর চমকে ওঠার কারণ : এক মনোরম সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বাড়ির বারান্দায় একটা চেয়ারের উপরে বসেছিলেন । সেই সময়ে সেখানে বিরাগীবেশী হরিদার আগমন ঘটে । ধবধবে সাদা উত্তরীয় গায়ে , ছোটো বহরের সাদা থান পরা হরিদাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন । তাঁকে দেখেই জগদীশবাবু চমকে যান ।

৯. জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদার বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল তা বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ বিরাগীর পোশাক : জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী হরিদার খালি গায়ে ছিল সাদা উত্তরীয় আর পরনে ছিল সাদা ছোটো থান । তার পা ছিল ধুলোমাখা আর সঙ্গে ছিল একটা ঝোলা । সেই ঝোলার মধ্যে একটি গীতা রাখা ছিল । বিরাগী হরিদাকে দেখে জগদীশবাবু চমকে ওঠেন ।
বিরাগীর বক্তব্য : জগদীশবাবুকে বিরাগী বলেন যে তিনি নিজের সম্পত্তি আর অর্থের অহংকারে নিজেকে ভগবানের থেকেও বড়ো বলে মনে করেন । জগদীশবাবু বিরাগীকে রাগ করতে বারণ করায় বিরাগী জবাব দেন যে তিনি বিরাগী , রাগ নামে তাঁর কোনো রিপুই নেই । বিরাগীকে জগদীশবাবু তাঁর বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করেন । কিন্তু বিরাগী তাঁকে বলেন ধরিত্রীর মাটিতেই তাঁর স্থান , তাই তিনি এই দালান বাড়িতে থাকবেন না ।
খাবার গ্রহণ না করা : খাওয়ার কথা বলা হলে তিনি কোনো কিছু স্পর্শ না করে শুধু এক গ্লাস ঠান্ডা জল খান ।
মোহমুক্তির বাণী : বিরাগী জগদীশবাবুকে মোহমুক্ত হওয়ার কথা বলে জানান ধন , যৌবন সব কিছুই বঞনাস্বরূপ । যাকে পেলে সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া যাবে তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার উপদেশ দিয়ে বিরাগী চলে যান ।
নির্লোভ মানসিকতা : তীর্থভ্রমণের জন্য জগদীশবাবু বিরাগীকে একশো এক টাকা দিতে চাইলে বিরাগী সেই টাকা নেননি । সন্ন্যাসীর মতে , তিনি যেমন ধুলো মাড়িয়ে যেতে পারেন তেমনই অনায়াসে সোনা , টাকা এইসব মাড়িয়েও চলে যেতে পারেন । এই বলে সন্ন্যাসী সেখান থেকে চলে যান ৷

১০. “ পরমসুখ কাকে বলে জানেন ? সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া ! ” — হরিদার জীবনে এ সত্য কীভাবে সার্থক হয়েছে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ বক্তা ও প্রসঙ্গ : ‘ বহুরূপী ’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীবেশী হরিদা জগদীশবাবুকে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছিলেন । আপাতভাবে বহুরূপী হরিদা নিজের ছদ্মবেশ নিখুঁত ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য কথাটি বলেছিলেন । কিন্তু নিজের আচরণ দিয়ে এই বক্তব্যকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । জগদীশবাবুর বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণের জন্য তাঁর অনুরোধ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । বন্ধন মুক্তি খোলা আকাশ আর মাটি ছেড়ে ‘ বিষয়ীর দালান বাড়ি ’ - তে থাকতে তিনি নিজের আপত্তি জানিয়েছিলেন । বলেছিলেন— “ ধন জন যৌবন কিছুই নয় জগদীশবাবু । ওসব হলো সুন্দর এক একটি বর্ণনা । ” ঈশ্বরকে পাওয়াই জীবনের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত । বিরাগীবেশে হরিদার এই মন্তব্য যে কথার কথা ছিল না তা বোঝা যায় যখন জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামির একশো এক টাকা তিনি ফেলে রেখে যান । নির্লোভ মানসিকতা : যাওয়ার সময়ে বলে যান— “ আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি ,তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ” অথচ হরিদা বড়োরকম উপার্জনের জন্যই জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন ।
পেশার প্রতি নিষ্ঠা : নিজের এই আচরণের ব্যাখ্যায় হরিদা পরে জানিয়েছিলেন যে , টাকা স্পর্শ করলে তাঁর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যাবে । অর্থাৎ এভাবে বিরাগী চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন হরিদা ।

১১. “ আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ” — ছদ্মবেশ ধারণ করেও হরিদা কীভাবে এই কথার সত্যতা প্রমাণ করেছেন লেখো ।
উত্তরঃ নাটকীয় বৈচিত্র্যে ভরা জীবন : বড়ো চমকপ্রদ এবং নাটকীয় বৈচিত্র্যে ভরা হরিদার জীবন । বাঁধাধরা আর পাঁচটা পেশায় তিনি নিযুক্ত হতে চাননি । কারণ একঘেয়ে কাজ করতে তাঁর ভয়ানক আপত্তি ছিল ।
আর্থিক অসচ্ছলতা : বহুরূপী সেজে তিনি যা উপার্জন করতেন তাতে ঠিকমতো তাঁর দিন চলত না ।
সন্ন্যাসীর কথা : এই সময় তিনি শোনেন জগদীশবাবুর বাড়িতে এক সন্ন্যাসীর আসার কথা । ধনী জগদীশবাবু সেই সন্ন্যাসীকে অর্থ - সহ নানা কিছু দান করেছিলেন ।
বিরাগীর ছদ্মবেশ : সন্ন্যাসীর গল্প হরিদাকে উজ্জীবিত করে । তিনি সিদ্ধান্ত নেন বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে বেশ কিছু আদায় করবেন , যা দিয়ে তাঁর সারাবছর চলে যাবে ।
নির্লোভ : হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি উপস্থিত হন । জগদীশবাবু তাঁকে দেখে অভিভূত এবং ভক্তিতে গদগদ হয়ে প্রথমে তাঁর বাড়িতে থাকার কথা বলেন । তারপর টাকার থলি এনে হরিদার পায়ের কাছে রাখেন । কিন্তু হরিদা প্রকৃত বিরাগীর মতো সব কিছু প্রত্যাখ্যান করেন । তাঁর লোভ ত্যাগে পরিণত হয় ।
পেশাদারিত্বের পরাজয় : বিরাগীর চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম বহুরূপী হরিদা ঘোষণা করেন যে , তাঁর কাছে ধুলোর মতো সোনাও তুচ্ছ । চরিত্রের সঙ্গে একাত্মতা তাঁর চরিত্রকে মহনীয় করে তোলে , যার কাছে পেশাদারিত্বও পরাজিত হয় ।

১২. “ সেদিকে ভুলেও একবার তাকালেন না বিরাগী । ” — বিরাগী কোন্ দিকে তাকালেন না ? তাঁর না তাকানোর কারণ বিশ্লেষণ করো ৷
উত্তরঃ উপেক্ষার উপলক্ষ্য : কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ’ ছোটোগল্পে বিরাগী হরিদা তাঁর পায়ের কাছে রাখা জগদীশবাবুর একশো টাকা ভরতি থলির দিকে তাকাননি ।
না তাকানোর কারণ : হতদরিদ্র হরিদা বহুরূপী সেজে অধিক উপার্জনের জন্য জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী সেজে গিয়েছিল ।
তাৎপর্যবাহী : অথচ জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামি হিসেবে একশো এক টাকার একটা থলি পেয়েও তিনি সেদিকে তাকাননি । গল্পের এই ঘটনা গভীর তাৎপর্য বহন করে ।
বহুরূপী পেশা : হরিদা বহুরূপী । এটাই তাঁর পেশা । পুলিশ , পাগল , বাইজি প্রভৃতি সেজে তিনি পয়সা রোজগার করেছেন । উক্ত পেশাগুলির সঙ্গে পয়সা নেওয়ার ব্যাপারটা খুব একটা অসংগতিপূর্ণ নয় ।
বিরাগীর ছদ্মবেশ : কিন্তু বিরাগী তো এক লোভহীন জীবানাদর্শকে মেনে চলেন । সংসারত্যাগী বিরাগীর কাছে টাকা - পয়সা , ধনদৌলত অতি তুচ্ছ বিষয় । তা গ্রহণ করলে বিরাগীর আদর্শ বা ঢং নষ্ট হয় ।
চরিত্রের গাম্ভীর্য : আসলে বহুরূপী হরিদা বাদবাকি যেসব চরিত্রের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন সেসমস্ত ক্ষেত্রেও তিনি সেরূপ আচরণ করেছিলেন । সেখানে চরিত্রগুলির গুরুত্ব বা গাম্ভীর্য কিংবা তাৎপর্য — কোনো কিছুই বিরাগীর চরিত্রের সমান নয় । বিরাগী হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন যে , ‘ পরম সুখ ’ হল “ সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া । ” এই বোধ থেকেই হরিদা টাকার থলির দিকে তাকাননি ।

১৩. “ কী অদ্ভুত কথা বললেন হরিদা ! ” — কোন্ প্রসঙ্গে হরিদা ‘ অদ্ভুত কথা ’ বলেছিলেন ? কথাটি অদ্ভুত কেন ? ২ + ৩
উত্তরঃ প্রসঙ্গ : বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে পাওয়া হরিদা প্রণামির টাকা অবহেলায় প্রত্যাখ্যান করে চলে আসেন । এই ঘটনা তাঁর বাড়িতে চায়ের আড্ডায় উপস্থিত কথক এবং তাঁর বন্ধুদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয় । তখন হরিদা তাঁদের বলেন যে একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় । কারণ , তাতে তাঁর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যাবে । এ কথাকেই কথকদের ‘ অদ্ভুত কথা ’ বলে মনে হয় । ↑ কথাটি ‘ অদ্ভুত ’ মনে হওয়ার কারণ : কথাটিকে ‘ অদ্ভুত ’ বলে মনে হওয়ার কারণ , প্রথমত হরিদা ছিলেন একজন পেশাদার বহুরূপী । তাঁর পক্ষে সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে সন্ন্যাসীর মতো নির্লোভ হয়ে যাওয়াটা ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর । দ্বিতীয়ত , বহুরূপী হরিদার ছিল অভাবের জীবন । জগদীশবাবুর বাড়ি যাওয়ার আগেই হরিদা বলেছিলেন— “ এবার মারি তো হাতি , লুঠি তো ভাণ্ডার । ” তাঁর সারাবছরের প্রয়োজনীয় অর্থ জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসী সেজে হাতিয়ে নেওয়াই ছিল হরিদার লক্ষ্য । অথচ অনেক টাকা প্রণামি পেয়েও তিনি উদাসীনতার সঙ্গে তা ফেলে রেখে চলে আসেন ৷ যে মানুষটার দু - বেলা ভাত জোটে না সেই যখন সন্ন্যাসীর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলেন তা ‘ অদ্ভুত’বলেই মনে হয় । কারণ এর ফলে সারাজীবন হরিদাকে মাঝে মাঝেই ভাতের হাঁড়িতে জল ফুটিয়েই জীবন কাটাতে হবে ।

১৪. “ খাঁটি মানুষ তো নয় , এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে ? ” — বক্তা কে ? খাঁটি মানুষ নয় বলার তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ বক্তার পরিচয় : সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ’ গল্পের উল্লিখিত অংশটির বক্তা হলেন হরিদা ।
• তাৎপর্য : পেশায় বহুরূপী হরিদাই বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে অনেক উপার্জনের আশা করেছিলেন । তাঁর বেশভূষা , কথাবার্তা চমকে দিয়েছিল জগদীশবাবুকে । তিনি হরিদার ছদ্মবেশ বুঝতে পারেননি । ফলে প্রণামি হিসেবে অনেক টাকাই তিনি হরিদাকে দিতে চেয়েছিলেন । কিন্তু হরিদা তখন সন্ন্যাসীর চরিত্রেই নিজেকে একাত্ম করে ফেলেছিলেন । ফলে উদাসীনভাবে সেই অর্থ ফেলে আসেন । কথক ও তাঁর সঙ্গীরা হরিদার এই আচরণকে সমর্থন করতে পারেননি । তখন হরিদা জানান অর্থ নিলে তাঁর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যেত । একইসঙ্গে জানান যে , বকশিশের জন্য তিনি অবশ্য জগদীশবাবুর কাছে যাবেন । বহুরূপী হিসেবে মাত্র আট - দশ আনাকেই তিনি নিজের প্রাপ্য বলে মনে করেন । ‘ খাটি মানুষ ’ অর্থাৎ যে নিজের জীবনাচরণ ও জীবনদর্শনকে সৎভাবে অনুসরণ করে তার হয়তো অনেক পাওনা হতে পারে , কিন্তু হরিদা নিজেকে বহুরূপী ভাবেন । নকল করাই তাঁর পেশা । পেশার আড়ালে তাঁর ভিতরের মানুষটা যে সমাজের কাছে হারিয়ে গিয়েছে — সেই বিষণ্ণতাই প্রকাশ পেয়েছে বহুরূপী হরিদার উচ্চারণে । ‘ খাঁটি মানুষ নয় ’ – এটাই একজন আদ্যন্ত খাঁটি মানুষের বিলাপ হয়ে থাকে ।

১৫. “ হরিদার জীবনের ভাতের হাঁড়ি মাঝে মাঝে শুধু জল ফুটিয়েই সারা হবে ” –এ কথার মধ্য দিয়ে লেখক যে ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তুলেছেন তা লেখো । ২ + ৩
উত্তরঃ বিরাগীর সাজে : ' বহুরূপী ' গল্পে হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন অর্থ উপার্জনের আশায় । তাঁর বেশভূষা , কথা বলা জগদীশবাবুকে তো বটেই কথকদেরও চমৎকৃত করে দিয়েছিল । জগদীশবাবু এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে , তিনি বিরাগীকে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানান বিরাগীর বিদায়ের সময়ে তীর্থভ্রমণের জন্য প্রণামি হিসেবে একশো এক টাকাও জগদীশবাবু দিতে চান । লোভহীন বিরাগী : বিরাগীবেশী হরিদা অনায়াসে সেই টাকা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান । তিনি যাওয়ার সময় বলে যান— “ আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ” — তাঁর এই আচরণ কথকদের বিস্মিত করে । তার কারণ , বিপুল টাকা অগ্রাহ্য করার মধ্যে দারিদ্র্যকে মেনে নেওয়ার ইঙ্গিতই ছিল ।
চরিত্রের সঙ্গে একাত্মতা : সন্ন্যাসীর চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ফলে সেই চরিত্রের ‘ ঢং নষ্ট হবে ’ বলে হরিদা টাকা নেননি । আর এই ঘটনা নিশ্চিত করে দেয় যে অভাব কখনও হরিদাকে ছেড়ে যাবে না । ভাতের হাঁড়িতে মাঝেমধ্যে শুধু জলই ফুটবে , তাতে চালের জোগান থাকবে না । কথকের মনে হয় অদৃষ্ট হরিদার এই ভুল কোনোদিন ক্ষমা করবে না ।

১৬. “ অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না । ” — হরিদা কী ভুল করেছিলেন ? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী ?
উত্তরঃ হরিদার ভুল : ' বহুরূপী ' গল্পে হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন অর্থ উপার্জনের জন্য । হরিদার বেশভূষা , কথাবার্তায় জগদীশবাবু এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি ‘ বিরাগী’কে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানান । এমনকি বিদায়ের সময়ে একশো টাকা প্রণামীও দিতে চান । কিন্তু উদাসীনভাবে হরিদা সে টাকা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান । যাওয়ার সময়ে বলে যান— “ আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ” সন্ন্যাসী চরিত্রের সঙ্গে তিনি এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে , চরিত্রের ‘ ঢং নষ্ট হবে ’ বলে হরিদা টাকা নেননি । বিস্মিত গল্পকথক এটাকেই হরিদার ‘ ভুল ’ বলেছেন ।
পরিণতি : অভাবী হরিদার ভাগ্য হরিদাকে সঙ্গ দিতে চেয়েছিল । কিন্তু ব্যক্তিগত সততা ও আদর্শবোধের কারণে হরিদা ভাগ্যের সহায়তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন । যা নিশ্চিত করে দিয়েছে যে অভাব কখনও হরিদাকে ছেড়ে যাবে না । তার ভাতের হাঁড়িতে মাঝে মধ্যে শুধু জলই ফুটবে , তাতে চালের জোগান থাকবে না । কথকের মনে হয়েছে অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুলকে ক্ষমা করবে না ।










1 comment: