একুশের কবিতা - আশরাফ সিদ্দিকী |প্রশ্ন উত্তর|। Ekusher kobita - ashraf siddiqui |Questions and Answers| | Class 7 bangla kobita - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 29 March 2022

একুশের কবিতা - আশরাফ সিদ্দিকী |প্রশ্ন উত্তর|। Ekusher kobita - ashraf siddiqui |Questions and Answers| | Class 7 bangla kobita

 




একুশের কবিতা প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো
👉 ( একুশের কবিতা প্রশ্ন উত্তর )



পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল
কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিলো।।
কবেকার পাঠশালায় পড়া মন্ত্রে মতো সেই সুর
সুর নয় স্মৃতির মধুভান্ডা...
সেই আমার দেশ-মাঠ-নদী--
আমার দেশের জারি সারি ভাটিয়ালি মুর্শিদি
আরও কত সুরের সাথে মিশে আছে
আমার মায়ের মুখ
আমার মায়ের গাওয়া কত না গানের কলি !
বিন্নিধানের মাঠের ধরে হঠাৎ কয়েকটি গুলির আওয়াজ...
কয়েকটি পাখির গান শেষ না হতেই তারা ঝরে গেলো
পড়ে গেলো মাটিতে
সেই শোকে কালবৈশাখীর ঝড় উঠলো আকাশে
মাঠ কাঁপলো
ঘাট কাঁপলো
বাট কাঁপলো
হাট কাঁপলো
বন কাঁপলো
মন কাঁপলো
ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়ে লিখে নিলো সব...
তাই তো সহস্ত্র পাখির কলতানে আজ দিগন্ত মুখর
তাই তো আজ দ্যাখো এ মিছিলে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার মা
যিনি বাংলা ভাষায় কথা বলতে বড়ো ভালোবাসেন
কথায় কথায় কথকতা কতো রূপকথা
আর ছড়াবো ছন্দে মিষ্টি সুরের ফুল ছড়ানো
যিনি এখনো এ মিছিলে গুন গুন করে গাইতে পারেন
পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিলো।।
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন নিজ পাঠে।।



কবি পরিচিতিঃ
কবি আশরাফ সিদ্দিকী ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের নাগবাড়ি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা ডা . আবদুস সাততার সিদ্দিকী এবং মাতা সমীরণ নসো । ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলায় এমএ পাস করেন । তিনি ছিলেন বিশিষ্ট কবি , লেখক এবং খ্যাতনামা লোকতত্ত্ববিদ । পাক্ষিক ‘ মুকুল ’ পত্রিকার সম্পাদক ড . আশরাফ সিদ্দিকী ‘ বিষকন্যা ’ , ‘ তালেব মাস্টার ’ , ‘ উত্তর আকাশের তারা ’ , ‘ কাগজের নৌকা ’ ‘ কুঁচবরণ কন্যে ’ ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং তিনি ৭৫ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং ৫০০ - এর বেশি কবিতা লিখেছেন । বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষাকারী ভাষা - আন্দোলন ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে শুরু হলে কবিও এই দীর্ঘ আন্দোলনে গভীরভাবে যুক্ত থাকেন । তাঁর সমগ্র সাহিত্যে , বিশেষত কাব্যে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ।

পাঠপ্রসঙ্গাঃ
উনিশশো বাহান্ন খ্রিস্টাব্দের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদারক্ষার যে সংগ্রাম হয়েছিল , তাতে সেদিন ঢাকার রাজপথে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন আব্দুস সালাম , আব্দুল জব্বার , রফিক - উদ্দিন আহমেদ , আবুল বরকত , সফিউর রহমান । এঁরাই প্রথম ভাষা - শহিদ । এই ঘটনাকে স্মরণ করেই একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা - শহিদ দিবস পালিত হয় । একুশে ফেব্রুয়ারি এখন সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে পালিত হয় । এই কবিতায় কবি যেমন দিনটির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন , তেমনই মাতৃভাষা বাংলার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং দায়বদ্ধতার কথাও বলেছেন । ‘ প্রভাতবর্ণন ’ কবিতার ‘ পাখি সব করে রব ’ পঙ্ক্তিটি উল্লেখ করে এবং মায়ের কথা স্মরণ করে আবহমানের প্রতিও কবি বিশ্বাসও রেখেছেন ।

বিষয় সংক্ষেপঃ
মাতৃভাষার প্রতি অসাধারণ টান ‘ একুশের কবিতা’র মধ্যে অনিবার্যভাবে গাঁথা হয়ে আছে । কবির চেতনায় একুশে ফেব্রুয়ারির শহিদদের কথা উজ্জ্বল । শৈশবে পড়া ‘ পাখি সব করে রব ’ কবিতাটি যেন মন্ত্রের মতো বাজছে স্মৃতির গভীরে । মাতৃভূমি বাংলাদেশ , মাটির গান ভাটিয়ালি , মুর্শিদি , জারি , সারি গান শৈশবে মায়ের গাওয়া নানা গানের কলি , বিন্নিধান — এসবের পাশাপাশি কবির মনে আসছে তাদের কথাও উনিশশো বাহান্ন খ্রিস্টাব্দে খাজা নাজিমুদ্দিন সরকারের পুলিশ গুলি করে মেরেছিল যাদের ।
ইতিহাস লিখে নিয়েছে সেই বেদনাময় ঘটনা , বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষাকে রক্ষার সেই করুণ কাহিনি । কবির বয়ানে ঝরে পড়া কয়েকটি পাখি আসলে ভাষা - শহিদ আর সহস্র পাখি হল আপামর মানুষ , যারা ভাষার জন্য পা মেলায় মিছিলে , যার মধ্যে কবি দেখেন মা - কে । সহস্র সহস্র বাঙালি তাঁদের মাতৃভাষায় কথা বলে । কবির মা , যিনি বাংলা ভাষায় কথা বলেন তিনি কথায় কথায় রূপকথা , কথকতা , বাংলা ছড়ার ছন্দে সুরের ফুল ছড়িয়ে দিয়েছেন , আর মিছিলে গাইছেন — ‘ পাখি সব করে রব ’ ।

নামকরণঃ
সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আর কবিতার নামকরণ বিষয়ে আলোচনা করতে হলে তার বিষয়বস্তুর উপর আলোকপাত করতেই হবে । আলোচ্য কবিতাটি যে পটভূমিতে রচিত হয়েছিল সেই পটভূমির সঙ্গে ইতিহাসের একটা গভীর যোগ রয়েছে । যা ভারত ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে স্বাধীন হয়েছিল । জন্ম হয়েছিল ভারত - পাকিস্তান দুটি স্বাধীন দেশের । পাকিস্তানের একটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান আজ স্বাধীন বাংলাদেশ নামে পরিচিত । এই দুই পাকিস্তান ভাগ হয়েছিল ভাষাগত কারণে । পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পূর্ব পাকিস্তানে জোর করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করলে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষ এর তীব্র বিরোধিতা করে । এর ফলে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের খাজা নিজামুদ্দিন সরকারের। পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রী ও বুদ্ধিজীবীদের একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় । এর ফলে মারা যান আব্দুস সালাম , আবুল বরকত , সফিউর রহমান , রফিক - উদ্দিন আহমেদ ও আব্দুল জব্বার । এই পাঁচ ভাষা - শহিদের মৃত্যুতে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষজন তীব্র আন্দোলনে নেমে পড়ে যা থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয় । ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ' হিসেবে স্বীকৃতি পায় । এই ইতিহাসেরই ছায়াপাত ঘটেছে ‘ একুশের কবিতা’য় । তাই ভাষার প্রতি আবেগে দেশপ্রেমিক কবি তাঁর এই কবিতায় ভাষা মুগ্ধতার প্রচার করতে সচেষ্ট হয়েছেন । এই কবিতার নামকরণ ‘ একুশে ’ শব্দটি যেন মন্ত্রের মতো উচ্চারণে যুক্ত হয়েছে । আর নামকরণটিও সার্থকতা লাভ করেছে ।


1. এই কবিতায় কিছু চন্দ্রবিন্দু-যুক্ত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কাপলাে’ এবং ‘দাঁড়িয়েছেন। প্রসঙ্গত দুটি শব্দই ক্রিয়া। চন্দ্রবিন্দু দিয়ে শুরু এমন পাঁচটি অন্য ক্রিয়া ব্যবহার করে পাঁচটি বাক্য লেখাে। একটি করে দেওয়া হল, হাঁটা।

উত্তরঃ •হাঁটাঅনেকক্ষণ বাসে চড়ে যাওয়ার পর সুনীলদের হাঁটা শুরু হল।

বাঁচাল—আই লিগের শেষ ম্যাচে যুব একাদশের গােলরক্ষক শেষ মুহূর্তে কোনােমতে গােলটা বাঁচাল

কাঁদল—মহান বিজ্ঞানী আবদুল কালামের প্রয়াণে সেদিন সব মানুষই কাঁদল

ঝপাল—শিশুটিকে বাঁচাবার জন্য পাকা সাঁতারুর মতােই অনুপ গভীর জলে ঝাপাল

খোঁচাল—নিষ্ঠুর আনন্দ পাওয়ার জন্য সে একটি নিরীহ কুকুরকে খোঁচাল

2. ‘রব’ শব্দটিকে একবার বিশেষ্য এবং একবার ক্রিয়া হিসেবে দুটি আলাদা বাক্যে ব্যবহার করে দেখাও।

উত্তর:রব’ (বিশেষ্য)—যে-কোনাে জঙ্গলে বেড়াতে গেলেই রাতের বেলায় ঝিল্লির রব শােনা যায়। ‘রব’ (ক্রিয়া)—আমি রব সকলের পিছে।

3. প্রত্যয় নির্ণয় করাে: কথকতা, মুর্শিদি, মুখর, পােহাইল, ভাটিয়ালি।

উত্তরঃ কথকতা—কথক + ‘তা’ প্রত্যয়।  > মুর্শিদি—মুর্শিদ+ ই’ প্রত্যয় । > মুখর—মুখ +‘র’ প্রত্যয়। > পােহাইল—পােহা +ইল’ প্রত্যয় ভাটিয়ালি—ভাটিয়াল+‘ই’ প্রত্যয়

4. “পাখি সব করে রব”—উদ্ধৃতাংশটি কার লেখা কোন্ কবিতার অংশ? কবিতাটি তাঁর লেখা কোন্ বইতে রয়েছে?

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি মদনমােহন তর্কালঙ্কারের ‘প্রভাতবর্ণন’ কবিতার অংশ।

> কবিতাটি মদনমােহন তর্কালঙ্কারের ‘শিশুশিক্ষা বই থেকে গৃহী ত হয়েছে। বইটির তিন খণ্ডের প্রথম ভাগে এই কবিতাটি রয়েছে।

5.  এই পঙক্তিটি পাঠের সুরকে মন্ত্রের মতাে’বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: ‘পাখি সব করে রব’পঙক্তিটি পাঠের সময় মনের মধ্যে মন্ত্রপাঠের মতােই স্বর্গীয় অনুভূতির সৃষ্টি হয়। তাই একে ‘মন্ত্রের মতাে’বলা হয়েছে।

6. এই সুরকে কেন স্মৃতির মধুভাণ্ডার’ বলা হয়েছে? তা কবির মনে কোন্ স্মৃতি জাগিয়ে তােলে ?

উত্তর: এই সুরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কবির শৈশবে পাঠশালায় কবিতাটি পড়ার স্মৃতি, যা সবসময়েই কবির কাছে মধুর এবং অমলিন। তাই একে স্মৃতির মধুভাণ্ডার’ বলা হয়েছে।

> এই শৈশবস্মৃতি কবির মনে বাংলার এক সুন্দর ছবি ফুটিয়ে তােলে। তার মনে পড়ে যায় বাংলার দেশ-মাঠবননদী, অজস্র লােকগানের কথা। এ সবের মধ্য দিয়েই কবির মনে বাংলামায়ের মুখ মধুর এক স্মৃতি হয়ে জেগে ওঠে।

7.  “সেই আমার দেশ-মাঠবননদী”দুই বঙ্গ মিলিয়ে তিনটি অরণ্য ও পাঁচটি নদীর নাম লেখাে।

উত্তরঃ দুই বাংলা মিলিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ও গােরুমারা অরণ্য এবং বাংলাদেশের ভােলা ও মধুমতি। পাঁচটি নদী হল পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা, দামােদর, তিস্তা ও বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা।

8.  টীকা লেখাে : জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিন্নিধান, কথকতা, রূপকথা। [OEQ] 

উত্তর:
> জারি—এটি বাংলার একধরনের মুসলমানি পল্লিসংগীত। ফারসি শব্দ যারী’ থেকে এর উৎপত্তি। জারিগানের অর্থ হল শােকসংগীত। কারবালার প্রান্তরে হজরত মহম্মদের দৌহিত্র হােসেন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের শােচনীয় মৃত্যুকে উপলক্ষ্য করে জারিগান রচিত হয়।

সারি—প্রধানত বাংলাদেশের মাঝি-মাল্লাদের বিশেষ ধরনের গান। অন্যান্য শ্রমজীবীরাও কাজের সময় মূলত কষ্ট কমানাের জন্য এই গান করেন। মােগল বাদশাহদের সময় এই গানের প্রসার ঘটে। সারিগানের মূল গায়ককে বলা হয় বয়াতি। মূলত পূর্ববঙ্গেই এই গানের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়।

ভাটিয়ালি—এটি মাঝি-মাল্লাদের বিশেষ ধরনের গানের সুর। সুর অর্থেই ভাটিয়ালি কথাটি ব্যবহৃত হয়।

মুর্শিদি-মুসলমান সাধু ও মহাপুরুষদের পির বলা হয়। মুর্শিদি এই পিরের গান।

বিন্নিধান—এক ধরনের আউশ ধান। নীচু জলাজমিতে বিশেষত পূর্ববঙ্গে এর চাষ হয়। এই ধানের খই খুব ভালাে হয়। কথকতা রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ ইত্যাদি গ্রন্থের পাঠ ও ব্যাখ্যা করার ধরনকে বলা হয় কথকতা। এই কথকতার কাজটি যিনি করেন, তাঁকে বলা হয়, কথক’বা কথকঠাকুর।

> রূপকথা—ছেলেভুলানাে কাল্পনিক কাহিনিকে বলা হয় রূপকথা’। এই কাহিনিতে রাক্ষস রাক্ষসী, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী প্রভৃতি কাল্পনিক চরিত্র থাকে। আর থাকে রাজকুমারী এবং অবশ্যই রাজকুমার। তবে এরা কেউই বাস্তব চরিত্র নয়, সবাই কাল্পনিক।

9. তােমার জানা দুটি পৃথক লােকসংগীতের ধারার নাম লেখাে।

উত্তর: পাঠ্যাংশে উদ্ধৃত লােকসংগীতের ধারাগুলি ছাড়া পৃথক দুটি ধারার লােকসংগীত হল বাউল গান ও টুসু গান।

১০. ‘ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়ে লিখে নিলাে সব”—সব’ বলতে এখানে কী কী বােঝানাে হয়েছে?

উত্তর: ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়ে একুশের ভাষা-আন্দোলনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় লিখে নিল। মাঠঘাটবাটহাটবন সর্বত্র জেগে-ওঠা মানুষের তীব্র অসন্তোষ এবং প্রতিবাদ, পূর্ব-পাকিস্তানের সেনাদের গুলিতে বিপ্লবী তরুণদের মৃত্যু—ভাষার অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের সেইসব কাহিনি ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়ে একে একে লিখে নিল।

11. “তাই তাে সহস্র পাখির কলতানে আজ দিগন্ত মুখর”—“সহস্র – পাখি’ কাদের বলা হয়েছে?

উত্তর: উর্দুকে পূর্ব-পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদে একসময় বাংলার মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল। তারা বাংলা ভাষার মর্যাদাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। এরপর দেশে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে এল। হাজার হাজার মানুষ আবার আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠল। এই মানুষদেরই কবি ‘সহস্র পাখি’ বলে চিত্রিত করেছেন।



🔲ব্যাখ্যা করোঃ
১. “ কয়েকটি পাখি ... পড়ে গেল মাটিতে ” ।
উত্তরঃ উৎস : উদ্ধৃতাংশটি কবি আশরাফ সিদ্দিকীর ‘ একুশের কবিতা ’ থেকে নেওয়া হয়েছে । প্রসঙ্গ : মাতৃভাষা বাংলার জন্য ভাষা - শহিদদের স্মরণ করে কবি এই উক্তি করেছেন । তাৎপর্য : ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের একুশে ফেব্রুয়ারি খান সেনাদের গুলিতে যে পাঁচজন তাজা তরুণ প্রাণ হারায় , তাদের কবি ‘ পাখি ’ বলেছেন । তারাই ঝরে গেছে অকালে ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিয়ে ।

২. ‘ সেই শোকে কালবৈশাখীর ঝড় উঠলো আকাশে ।
উত্তরঃ উৎস : উদ্ধৃতাংশটি কবি আশরাফ সিদ্দিকীর ‘ একুশের কবিতা ’ থেকে নেওয়া হয়েছে ।
প্রসঙ্গ : মাতৃভাষা বাংলার জন্য যাঁরা শহিদ হয়েছিলেন , তাদের কথা উল্লেখ করতে গিয়েই কবি এ কথা বলেছেন ।
তাৎপর্য : ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে পাঁচজন তাজা তরুণ প্রাণ ঝরে পড়ে ঢাকার রাজপথে । কেঁপে ওঠে মাঠ - ঘাট - বাট - হাট - বন - মন । সমস্ত দেশ জুড়ে ওঠে প্রতিবাদের ঝড় । গণ - আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে । এই গণ - আন্দোলনকেই কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ।

৩. ‘ কথায় কথায় কথকতা কতো রূপকথা ' ।
উত্তরঃ উৎস : উদ্ধৃতাংশটি কবি আশরাফ সিদ্দিকীর ‘ একুশের কবিতা ’ থেকে নেওয়া হয়েছে । প্রসঙ্গ : মা , যিনি বাংলা ভাষায় কথা বলতে ভালোবাসেন তিনি কথায় কথায় কথকতা করেন এবং রূপকথা বলেন ।
তাৎপর্য : আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা । আমাদের মা বাংলা ভাষাতেই আমাদের কথকতা রূপকথা আর ছড়া শোনান । মায়ের ভাষা আমাদের মাতৃভাষা ।

৪.  ' তাই তো আজ দ্যাখো এ মিছিলে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার মা ' ।
উত্তরঃ উৎস : উদ্ধৃতাংশটি কবি আশরাফ সিদ্দিকীর ‘ একুশের কবিতা ’ থেকে নেওয়া হয়েছে । প্রসঙ্গ : মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্য সবার সঙ্গে মা - ও এসে দাঁড়িয়েছেন । কারণ তিনিও বাংলা ভাষায় কথা বলেন ।
তাৎপর্য : মাতৃভাষা মায়ের মুখের ভাষা । মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো দেশের জাগরণ সম্ভব নয় । তাই মিছিলে মা এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁর মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে ।


🔲আট - দশটি বাক্যে উত্তর দাওঃ
১.এই কবিতায় ‘ পাখি ’ শব্দের ব্যবহার কতখানি সার্থক হয়েছে তা কবিতার বিভিন্ন পত্তি উদ্ধৃত করে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ‘ পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল ।'— এই পঙ্ক্তিতে ‘ পাখি ’ শব্দটিকে কবি রূপক হিসেবেই ব্যবহার করেছেন । পাখির প্রথম কলকাকলিতে রাত শেষ হয় । দেশের কিশোর তরুণ জেগে উঠলে শেষ হয় অন্যায়ের রাত । ভাষা - আন্দোলনে এরকমই তরতাজা যুবকরা প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিল । তাই কবি লিখেছেন — ' কয়েকটি পাখির গান শেষ না হতেই তারা ঝরে গেলো , ' কিন্তু ইতিহাস তা লিখে নিয়েছিল । তাই সারা বিশ্ব পরবর্তীকালেও মাতৃভাষা ও তার সম্মান নিয়ে মুখরিত হয়েছে । তাই কবি লিখেছেন ‘- সহস্র পাখির কলতানে আজ দিগন্ত মুখর । '

২. কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো ।
উত্তরঃ বাংলা ভাষার বিশিষ্ট কবি আশরাফ সিদ্দিকীর ‘ একুশের কবিতা ’ - র মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এক অত্যুজ্জ্বল ইতিহাসকথা । অধুনা বাংলাদেশের মাতৃভাষাপ্রেমী ভাষা - আন্দোলনকারীদের প্রিয় ২১ ফেব্রুয়ারির ইতিকথা । আশ্চর্য সংযমে কবি সারা কবিতার কোথাও একটিবারের জন্য ‘ একুশে ' শব্দটি উচ্চারণ করেননি , অথচ সমগ্র কবিতাটির অঙ্গে তিনি শৈল্পিক দক্ষতায় ছড়িয়ে দিয়েছেন । একুশের ভাষা আন্দোলনের প্রলেপ । ' একুশের কবিতা'র মধ্যে ধরা আছে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ইতিহাস , যার মূলে রয়েছে মাতৃভাষার মর্যাদা ও ঐতিহ্যরক্ষার আত্মিক প্রচেষ্টা । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে দ্বিখণ্ডিত ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর পূর্ববঙ্গের অর্থাৎ পূর্ব - পাকিস্তানের বাংলা ভাষার উপর উর্দুকে বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় । আন্দোলনের জোয়ার বয়ে যায় পূর্ববঙ্গে । মিছিলের উপর সেনাদের গুলিবর্ষণে পাঁচ মাতৃভাষাপ্রেমিক তরুণের মৃত্যু হলে উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ববঙ্গের T মানুষ । মাতৃভাষাকেন্দ্রিক এই গণ - আন্দোলনের সূচনা হয় ২১ ফেব্রুয়ারিতেই । এই আন্দোলনে বিজয়ী হন আন্দোলনকারীরা , জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের , জয় হয় বাংলা ভাষার । এই আন্দোলন , এই মরণপণ লড়াই , এই বিজয়ের স্মরণেই ‘ একুশের কবিতা ’ । স্বভাবতই কবিতায় একুশে শব্দটির অস্তিত্ব ধরা না পড়লেও নামকরণে কবি একুশে শব্দটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রয়োগ করতে ভোলেননি । নামকরণটি তাই সার্থক ।

৩ “ শুধু মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার প্রকাশ নয় , এই কবিতায় রয়েছে আবহমানের ও অমরতার প্রতি বিশ্বাস ” —পাঠ্য কবিতাটি অবলম্বনে উপরের উদ্ধৃতিটি আলোচনা করো । 
উত্তরঃ মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মতো । এর মাধ্যমেই মানুষের আত্মপ্রকাশ ও আত্মবিকাশ । তাই কোনো মানুষই মাতৃভাষার অপমান সহ্য করতে পারে না । কবিও মাতৃভাষামুখিন , তাঁরও আত্মপ্রকাশ বা আত্মবিকাশ মাতৃভাষাকে অবলম্বন করেই । তাই ‘ একুশের কবিতা’য় তিনি মাতৃভাষার প্রতি কেবল অসীম শ্রদ্ধাই প্রকাশ করেননি , এই ভাষার প্রতি তাঁর গভীর দায়বদ্ধতা ও এর আবহমানতা বা অমরতার প্রতি তাঁর বিশ্বাসও কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে । কবি মনে করেন ভাষার একটা নিজস্ব ঐতিহ্য আছে । এই কবিতায় সেই ঐতিহ্যেরই স্মারক করে তিনি এনেছেন মাতৃভাষার সুধামাখানো কথকতা - রূপকথার আশ্চর্য উন্মাদনাকে । ভাষার স্পর্শ গায়ে মেখে জীবন্ত হয়ে ওঠা জারি - সারি - ভাটিয়ালি - মুর্শিদি ইত্যাদি লোকগীতির দীর্ঘ প্রবহমানতাকে তিনি প্রাণের মূল্যে যাচিত করেন । বাংলার সুমিষ্ট উৎকৃষ্ট খইয়ের বিন্নিধান তাঁর কাছে মূল্য পায় স্বর্গীয়ভাবে সমৃদ্ধ হয়ে । শিশুকালে পাঠশালায় দুলে দুলে পড়া বাল্য - কবিতাকে তিনি অন্যান্য বঙ্গভাষী মানুষের মতো ভুলতে পারেন না । মিছিলে এসে দাঁড়ানো মায়ের অমোঘ উপস্থিতি ও কবির মনে অমরতার ঐতিহ্যগত প্রকাশ ঘটায় ।

 


No comments:

Post a Comment