সবার আমি ছাত্র
সুনির্মল বসু
কবি পরিচিতি: ১৯০২ সালে বিহারের গিরিডিতে সুনির্মল বসু জন্মগ্রহণ করেন। বিশেষ করে ছোটদের জন্যই তিনি কবিতা, ছড়া, নাটক,গল্প ও উপন্যাস রচনা করেন। তার লেখা রূপকথা , ভ্রমণ কাহিনীগুলো খুবই জনপ্রিয়। তার লেখা বই গুলি হলো - ছানাবড়া, ছন্দের টুং টাং, বির শিকারি, বেড়ে মজা, হই চই, কথা শেখা, ইত্যাদি। ১৯৫৬ সালে তিনি "ভুবনেশ্বরী পদক" পেয়েছিলেন। লেখা লেখির সঙ্গে তিনি ভালো ছবিও আঁকতেন। ১৯৫৭ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি কবি সুনির্মল বসু দেহত্যাগ করেন।
সারমর্ম: এই বিরাট পৃথিবী কবির কাছে একটি বিদ্যালয়। তিনি নিজেকে এই পৃথিবী নামক বিদ্যালয়ের চাত্রমনে করেছেন। এখানকার প্রতিটা উপাদানই তাকে কিছু না - কিছু শিখিয়েছে। যেমন - আকাশের থেকে উদার হওয়ার, বায়ুর থেকে কর্মী হওয়ার, পাহাড় থেকে মহত্বের ও খোলা মাঠের কাছে থেকে প্রন খোলা হওয়ার উপদেশ পেয়েছেন। সূর্য তাকে আপন টেনে উজ্জ্বল হতে, চাঁদ মিষ্টি ও মধুর কথা বলতে শিখিয়েছেন। সমুদ্র তার মত অন্তরে রত্নের খনি তৈরি করার, নদী তার মতো নিজের খেয়ালে চলার শিক্ষা দিয়েছে । মাটির কাছে কবি সহিষ্ণুতার শিক্ষা পেয়েছেন । আবার পাথর নিজের কাজে কঠোর হতে শিখিয়েছেন। ঝরনা তার সহজ সরল গানে কবির প্রনেও গান জাগায়, সবুজ বনানী কবিকে সতেজ সরল করে তুলে। বিশ্বজুড়ে এই যে বিরাট পাঠশালা তৈরি হয়েছে এই সকলের কাছেই কবি ছাত্র। দিবা রাত্র কবি এই সব শিখছেন। বিশ্ব প্রকৃতির এই বিরাট খাতার প্রতিটি পাতায়, কবি কৌতূহলী মন নিয়ে সব কিছু শিখে চলেছে।
সবার আমি ছাত্র
আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাই রে;
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর পাই রে।
পাহাড় শিখায় তাহার সমান
হই যেন ভাই মৌন-মহান্,
খোলা মাঠের উপদেশে—
দিল্-খোলা হই তাই রে।
সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে জ্বলতে,
চাঁদ শিখালো হাসতে মেদুর,
মধুর কথা বলতে।
ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর,—
অন্তর হোক রত্ন-আকর;
নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম
আপন বেগে চলতে।
মাটির কাছে সহিষ্ণুতা
পেলাম আমি শিক্ষা,
আপন কাজে কঠোর হতে
পাষাণ দিল দীক্ষা।
ঝরনা তাহার সহজ গানে
গান জাগালো আমার প্রাণে,
শ্যাম বনানী সরসতা
আমায় দিল ভিক্ষা।
বিশ্ব-জোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবের নতুন জিনিস,
শিখছি দিবারাত্র;
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
পাঠ্য যে-সব পাতায় পাতায়,
শিখছি সে-সব কৌতূহলে
সন্দেহ নাই মাত্র॥
১.১ সুনির্মল বসুর লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উ: সুনির্মল বসুর লেখা দুটি বইয়ের নাম হলো, "ছানাবড়" , ' 'হইচই '
১.২তিনি ১৯৫৬ সালে কী পদক পেয়েছিলেন?
উ:তিনি ১৯৫৬ সালে ' ভুবনেশ্বরী পদক ' পেয়েছিলেন।
২. নিচের প্রশ্ন গুলি নিজের ভাষায় উত্তর লেখো
২.১ কার উপদেশে কবি দিল খোলা হয়?
উ: খোলা মাঠের উপদেশে কবি দিল খোলা হয়।
২.২ পাষাণ কবিকে কি শিক্ষা দিয়েছেন?
উ: পাষাণ কবিকে নিজের কাজে কঠোর হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিল।
২.৩ কবি কার কাছ থেকে কি ভিক্ষা পেয়েছিলেন?
উ:কবি শ্যামবনানী অর্থাৎ সবুজ বনজঙ্গলের থেকে সরসতা ভিক্ষা পেয়েছিলেন।
২.৪ কে কবিকে মধুর কথা বলতে শিখিয়েছিল?
উ:চাঁদ কবিকে মধুর কথা বলতে শিখিয়েছিল।
২.৫ নদীর কাছ থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায়?
উ:নদীর কাছ থেকে আপন বেগে চলার শিক্ষা পাওয়া যায়।
সন্ধি করে লেখো:
রত্না+আকর=রত্নাকর। মেঘ+আলোক=মেঘালক।
কমলা+আসন=কমলাসনা।
সমার্থক শব্দ:
চাঁদ - শশী, শশধর, ইন্দু, চন্দ্র।
সূর্য - রবি, ভানু, দিবাকর, অরুণ।
পাহাড়:গিরি, পর্বত, নগ, অচল
বায়ু - বাতাস, সমীর, পবন, অনিল।
নদী - তটিনী, প্রবাহিনি, গাঙ, তরঙ্গিনী।
পৃথিবী - বিশ্ব , ধরা, নিখিল, ভুবন।
সাগর - সমুদ্র, জলধি, দরিয়া, অকূল ।
বাক্য রচনা করা:
উদার, মহান, মন্ত্রণা, শিক্ষা, সহিষ্ণুতা, কৌতুহল, ঝরনা।
উদার - তপন বাবু খুবই উদার মনেরানুষ।
মহান - বিদ্যাসাগর মহাশয় একজন মহান ব্যাক্তি ছিলেন
মন্ত্রণা - রাজ্য পরিচালনার কাজে রাজাকে মন্ত্রীসভা মন্ত্রণা দেয়।
শিক্ষা - প্রকৃত শিক্ষায় মানুষকে বড়ো হতে সাহায্য করা।
সহিষ্ণুতা - সহিষ্ণুতা যেকোনো মানুষেরই মহৎ গুণ
কৌতুহল - নতুন বিষয় জানতে খাদিজার খুব কৌতুহল।
ঝরনা - পাহাড়ি ঝরনা পাহাড়ের সভা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় ।
নিচের বিশেষণ শব্দ গুলির বিশেষ্য রূপ লেখো
কর্মী, মৌন, মধুর, কঠোর, বিরাট
উত্তর:
কর্মী - কর্ম।
মৌন - মৌনতা।
মধুর - মধু।
কঠোর - কঠোরতা।
বিরাট - বিশালতা ।
নিচের বিশেষ্য শব্দ গুলির বিশেষণ রূপ লেখো:
শিক্ষা, মন্ত্র, বায়ু, তেজ
উত্তর:
শিক্ষা - শিক্ষিত।
মন্ত্র - মন্ত্রণা।
বায়ু - বায়বীয়।
তেজ - তেজি।
গদ্যরুপ রূপ লেখো:
১.কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে।
গাদ্যরুপ - কর্মী হওয়ার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাই।
২.সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেই আপন তেজ জ্বলতে।
গদ্যরূপ - সূর্য আমাকে আপন তেজ জ্বলার মন্ত্রণা দেয়।
৩.ইঙ্গিতে তার শেখায় সাগর অন্তর হক রত্ন আকর।
গদ্যরূপ - সাগর তার ইঙ্গিতে শেখায় যে অন্তর রত্ন আকর হয়ে উঠুক।
৪. শ্যামবনানি সরসতা আমায় দিল ভিক্ষা।
গদ্য রূপ - শ্যামবনানি আমায় সরসতা ভিক্ষা দিল।
৫. বিশ্বজোড়া পাঠশালা বলতে কবিতায় কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ বিশাল এই পৃথিবীতে কত জিনিসই না রয়েছে ছবি দেখেছেন এদের প্রত্যেকের থেকেই আমাদের কিছু না কিছু শেখার আছে যেভাবে আমরা পাঠশালায় জ্ঞান লাভ করতে যায় সেভাবেই এই বিশ্ব প্রকৃতি থেকে আমরা জ্ঞান লাভ করতে পারি তাই এই বিশ্ব প্রকৃতি কবির কাছে পাঠশালা অর্থাৎ শিক্ষাঙ্গন সারা বিশ্ব এই পাঠশালা ছড়িয়ে রয়েছে।
৬. প্রকৃতির কার কাছ থেকে আমরা কি রূপ শিক্ষা পেতে পারি লেখ :-
উঃ আকাশ-উদার হবার শিক্ষা পেতে পারি
বাতাস-একজন কর্মী হয়ে ওঠার মন্ত্র আমরা বায়ুর কাছে পেতে পারি
পাহাড়-তার মত মৌন ও মহানগর শিক্ষা পেতে পারি
সূর্য-নিজের শক্তিতে জ্বলে ওঠা শিক্ষা পেতে পারি
খোলা মাঠ-তার মতো দিলখোলা হওয়ার শিক্ষা দেয়
চন্দ্র-মিষ্টি হাসতে এবং মধুর কথা বলার শিক্ষা পেতে পারি ।
৭. প্রকৃতির আরো কিছু উপাদানের কথা তুমি লিখ আর তাদের থেকে কি শিক্ষা তুমি নিতে পারো তা উল্লেখ করো:
উঃ তৃণ বা ঘাস - তিন বা ঘাস এর কাছ থেকে নিজের সম্মান বজায় রেখে ও কিভাবে নম্র ও বিনয়ী থাকা যায় তা শিখতে পারি।
ফুল-ফুল শেখায় নিজের গুন কিভাবে সমানভাবে সকলকে বিতরণ করা যায় ।
৮. এমন একজন মানুষের কথা লিখ যার কাছ থেকে অহরহ তুমি অনেক কিছু শেখো
উঃ আমার নিজের মা আমার দেখা এমন একজন মানুষ যার কাছ থেকে আমি অহরহ অনেক কিছু শিখে থাকি তিনি আমার জীবনে বাঁচার প্রেরণা তিনি জীবনে এগিয়ে চলার ও মাথা উঁচু করে বাঁচ বার জন্য নানা রকম সুপরামর্শ আমায় দিয়ে থাকেন
No comments:
Post a Comment