প্রশ্ন উত্তর নিখিল - বঙ্গ - কবিতা সংঘ নলিনী দাশ || সারসংক্ষেপ, নামকরণ, সহায়িকা - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 23 June 2022

প্রশ্ন উত্তর নিখিল - বঙ্গ - কবিতা সংঘ নলিনী দাশ || সারসংক্ষেপ, নামকরণ, সহায়িকা

 

নিখিল - বঙ্গ - কবিতা সংঘ
নলিনী দাশ 



লেখক - পরিচিতিঃ 

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখিকা নলিনী দাশ । ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয় , তিনি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের সম্পর্কে ভগিনী । পিতা অরুণ কুমার চক্রবর্তী ও মাতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কন্যা পুণ্যলতা চক্রবর্তী । তাঁর বিবাহ হয় প্রখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাসের ভাই অশোকানন্দ দাসের সঙ্গে । তাঁর রচনা শিশু মহলে খুবই জনপ্রিয় । তিনি শুধুমাত্র ছোটোদের জন্য কলম ধরেননি , বড়োদের জন্য সমানভাবে অনেক রচনা লিখেছেন । পাঠক মহলে তিনি একজন প্রিয় লেখিকা । তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ' মধ্যরাতের ঘোড়সওয়ার ’ , ‘ গোয়েন্দা গন্ডালু ' প্রভৃতি । তিনি দীর্ঘদিন ' সন্দেশ ' পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন । ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন । 


সারসংক্ষেপঃ

স্কুলে সকলের দমবন্ধকর অবস্থা , দিদিমণিদের প্রবল প্রতাপ , তাদের শাসনে সমস্ত স্কুল থরহরি কম্পমান । তাই ছাত্রীরা মিলে ঠিক করল কিছু একটা করা দরকার । তারা সবাই মিলে ঠিক করল সাহিত্য সভা গড়ে তোলার । কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না । সবচেয়ে বড়ো সমস্যা ছিল সমস্ত ছাত্রীদের একজোট করা । তাদের সাহিত্য সভার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল যা কথা আলোচনা হবে তা সমস্তটাই পদ্যে হবে । এইভাবে তারা নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলল একটা দল । সবাই খুব দস্যু প্রকৃতির বলে তারা নিজেদের দলের নাম রেখে ছিল গণ্ডালু । দেখা গেল বন্ধুরা সবাই বেশ মেতে গেল , সবাই পদ্য লিখতে শুরু করল — গণ্ডালু দলের চার সদস্য মালু , কালু , বুলু , টুলু তাদের উৎসাহ ছিল সবচেয়ে বেশি । কিন্তু সভা তৈরি করতে হলে আরও লোক চাই কিন্তু সবার সময় কোথায় ? যাইহোক কালুকে সভাপতি , বুলুকে তার সহকারী , আর টুলুকে কোশাধ্যক্ষ করে , মালু হলো সংঘ সম্পাদিকা । সব মেয়েরা স্কুলে আসে আর চলে যায় । কিছু ছাত্রী হস্টেলে থাকে , ছাত্রীরা কিছু কিছু চাঁদা দিয়ে সভা সংঘটিত করল । তার নাম দিল ‘ নিখিল - বঙ্গ - কবিতা - সংঘ ' । 

ছাত্রীদের কারোর পড়া , কারোর গান নাচ সবারই সময় কম । তাই স্থির হলো প্রথম অধিবেশন বসবে রাত বারোটায় , স্থান হস্টেলের খাবার ঘর । কিন্তু কথাটি গোপন রইল না , কীভাবে যেন শিক্ষিকাদের কানে পৌঁছে গেল । কিন্তু উদ্যোগ যেহেতু ছিল সৎ তাই শিক্ষিকারাও সহযোগিতা করলেন কিন্তু শেষ মুহূর্ত । পর্যন্ত তারা ছাত্রীদের কাছে সবকিছু গোপন রাখলেন । নির্দিষ্ট দিনে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে সবাই খাবার ঘরে হাজির হয় । তারা অবাক হয়ে দেখে যে খাবার ঘরটি উজ্জ্বল আলোয় ভরা । টেবিলে ফুলকাটা চাদর পাতা এবং কাচের বাসনে রাখা নানারকমের খাবার । সবাই বিস্মিত হয়ে দেখে ঘরে মণিকা দি , অণিমা দি , হিরণ দি এবং মিস বিশ্বাস । কবিতার মধ্যে দিয়ে সভা আরম্ভ হলো । তা দেখে দিদিমণিরা খুব খুশি হলেন । অণিমাদি টিচারদের পক্ষ থেকে কবিতা সংঘকে অভিনন্দন জানালেন । প্রত্যেক মেয়েদের নামে দুই লাইন কবিতা দিয়ে সম্পাদিকার রিপোর্ট শেষ হয় । সাহিত্য সংঘ জমে ওঠে । সপ্তাহে অধিবেশন বসে , হাতে লেখা পত্রিকা বের হয় । সংঘে ক্লাসের সবাই যোগ দেয় এবং সবার সাহিত্যচর্চায় আশ্চর্য উন্নতি হয় ।


 নামকরণঃ

সাহিত্যে নামকরণ নানাভাবে হয় । কখনও কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম অনুসারে , কখনও বিষয়বস্তু অনুসারে , কখনও ব্যঞ্ঝনা অনুসারে । লেখিকা এই গল্পে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কতগুণ থাকতে পারে তার বর্ণনা তুলে ধরেছেন । আবাসিক মেয়েরা নিজেদের মধ্যে গোপনে গড়ে তুলেছিল একটি সাহিত্য সভা । তারা তাদের বক্তব্য বলত কবিতার ভাষায় । দেখতে দেখতে অনেকেই এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে । গোপনে তারা সভার নাম ঠিক করল ' নিখিল - বঙ্গ - কবিতা - সংঘ । রাত বারোটার সময় খাবার ঘরে প্রথম অধিবেশনের আয়োজন করল । কিন্তু শিক্ষিকাদের দৃষ্টি এড়াতে পারল না । শিক্ষিকারাও ছাত্রীদের এই সুন্দর কাজে সহযোগিতা করলেন , উৎসাহ দিলেন , ফলে তাদের সমিতির কাজ সুন্দরভাবে এগিয়ে গেল । অনেক মেয়েরাই এগিয়ে এল । সমস্ত গল্পটাই এই সভাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে — তাই গল্পের নামকরণ যথাযথ হয়েছে ।


ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর পড়তে ক্লিক করো

👉 ( প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারণা )


অতি - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ।          

১. বড়ো মিস বিশ্বাসের ক্লাসের বিষয়বস্তু কোনটি ?

 উঃ । বড়ো মিস বিশ্বাসের ক্লাসের বিষয়বস্তু সংস্কৃত ব্যাকরণ । 


২. সবাই ছুটির ঘণ্টার প্রতীক্ষায় ছিল কেন ? 

উঃ । আকাশ অন্ধকার করে মেঘ ঘনিয়ে এসেছে । তাই সবাই ছুটির প্রতীক্ষা করছে । 


৩. কার কবি খ্যাতি কোথায় ছড়িয়ে পড়েছিল ? 

উঃ । মালুর কবিখ্যাতি সারা স্কুলে ছড়িয়ে পড়েছিল । 


৪. ঊনবিংশতি - রত্ন - কথা বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? 

উঃ । লেখিকাদের ক্লাসে উনিশটি মেয়ে ছিল মালু সকলের নাম দিয়ে লম্বা একটি পদ্য লিখেছিল তার নাম ঊনবিংশতি রত্ন - কথা । 


৫. গণ্ডালু দলের সদস্য কারা ?

 উঃ মালু , কালু , বুলু এবং টুলু ছিল গন্ডালু দলের সদস্য । 


৬. সাহিত্যসভার বৈশিষ্ট্য কী ছিল ? 

উঃ সাহিত্য সভার বৈশিষ্ট্য ছিল সভার যা কিছু কাজকর্ম হবে তার ভাষা হবে পদ্যের । 


৭. টুলু বোস কীসের দায়িত্বে ছিল ? 

উঃ । টুলু বোস কোশাধ্যক্ষার বা ট্রেজারির দায়িত্বে ছিল । 


৮. সাহিত্যসভার জন্য কতটা সময় দরকার ছিল ? 

উঃ অন্তত দুই ঘণ্টা সময় দরকার ছিল । 


৯. কোন্ কোন্ শিক্ষিকা সভায় যোগ দিয়েছিলেন ? 

উঃ মণিকাদি , অণিমাদি , হিরণদি , এমনকি মিস বিশ্বাস পর্যন্ত সভায় যোগ দিয়েছিলেন । 

১০. কোন্ ঘরে সভা বসেছিল ? 

উঃ  হস্টেলের খাবার ঘরে সভা বসেছিল । 


১১. নিখিল বঙ্গ কবিতা সংঘের অধিবেশন কটার সময় হবে ঠিক হয়েছিল ? 

উঃ রাত বারোটায় হবে ঠিক হয়েছিল । 


১২. কী দিয়ে সম্পাদিকার রিপোর্ট শেষ হলো ? 

উঃ  প্রত্যেকটি মেয়ের নামে দু'লাইন কবিতা সহ সম্পাদিকার রিপোর্ট দিয়ে কবিতা শেষ হলো ।


 ১৩. অণিমাদি বারবার কী বলেছিলেন ? 

উঃ অণিমাদি লেখাগুলির প্রশংসা করে বারবার বলেছিলেন তারা যেন লেখার অভ্যাস না ছাড়ে ।


১৪ : মণিকাদি কী মন্তব্য করেছিলেন ।

 উঃ মণিকাদি সবসময়ে পরীক্ষা বিরোধী কবিতা লিখতে বারণ করেছিলেন । 


১৫. মাঝরাতে কী শুনে লেখিকার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল ? 

উঃ মাঝরাতে কালুর সাংকেতিক শিস শুনে লেখিকার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল । 


 সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ

১. কালু কীভাবে সভার আয়োজন করেছিল ? 

উঃ কালুর সবকাজ ছিল নিখুঁত । দুই ক্লাসের মধ্যে ছোটো ছোটো এক একটা চিরকুট পাঠিয়ে সে কাজ সারতে লাগল । মালুকে সে জিজ্ঞাসা করত সম্পাদিকার রিপোর্ট তৈরি আছে কিনা । কিছু আনবার ভার সে হাসিকে দিয়েছিল । পেয়ারা , বিস্কুট আর চিনেবাদাম কেনবার পয়সা বুলু , হাসি আর কাজলকে দেবার কথাও সে টুলুকে মনে করিয়ে দিয়েছিল । 


২. ‘ সে দিনের হতভম্ব ভাব ভুলব না ।'— কীভাবে তারা হতভম্ব হয়ে গেল ?

 উঃ গন্ডালু দলের সদস্যরা গোপনে মাঝরাতে সাহিত্য সভার আয়োজন করেছিল । নিজেদের পয়সায় তারা পেয়ারা , বিস্কুট , চিনেবাদাম এনেছিল । কিন্তু সভাকক্ষে ঢুকে তারা দেখে ঘরখানা আলোয় সাজানো । বড়ো টেবিলে ফুলকাটা চাদর পাতা , ফুলদানি , আইসিং দেওয়া মস্ত বড়ো কেক । নানারকম মিষ্টি , সন্দেশ , আপেল , মর্তমান কলা , চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজানো । সমস্ত শিক্ষিকারা দামি শাড়ি পরে উপস্থিত — এই সব দেখে তারা হতভম্ব হয়ে গেল । 


৩. গন্ডালু দলের কে কী পদের দায়িত্ব নিয়েছিল ? 

উঃ  নিখিল বঙ্গ কবিতা সংঘের মধ্যে গন্ডালু দলের চার বন্ধু মালু , কালু , বুলু ও টুলুর উৎসাহ ছিল সবচেয়ে বেশি । কালু হলো সভাপতি , বুলু তার সহকারী , টুলু কোশাধ্যক্ষ এবং মালু নিজে হয়েছিল সংঘ সম্পাদিকা । 


৪. ' কিন্তু কার সাধ্য যে আমাদের দমিয়ে দেয় ' — কোন প্রসঙ্গে এই কথাগুলো বলা হয়েছে ? 

উঃ  উক্তিটি গল্পের লেখিকা টুলুর । গন্ডালুদের কদিন ধরেই সবকিছু নীরস মনে হচ্ছিল । কিন্তু সাহিত্য সভার ব্যবস্থা হতেই মন্ত্রবলে যেন সকলের মনমেজাজ ভালো হয়ে গেল । একটা সাংঘাতিক গোপন উত্তেজনা , পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেই চোখ টেপা আর চাপা হাসি । ক্লাসের পড়ায় অবশ্য সবাই কেবল ভুল করতে লাগল এবং বকুনিও খেল । কিন্তু তাদের দমিয়ে রাখার সাধ্য কারও ছিল না । এই প্রসঙ্গেই কথাগুলো বলা হয়েছে । ৫. গোপন সভায় শিক্ষিকারা খাবার জন্য কী কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ? উঃ । গোপন সভায় খাবার জন্য এলাহি আয়োজন করা হয়েছিল । আইসিং দেওয়া কেক , নানারকম সন্দেশ , আরো অন্যান্য মিষ্টি , আপেল , বড়ো বর্তমান কলা ইত্যাদি খাবার রাখা ছিল ।


 ৬. ‘ হ্যাঁ , তারাই তো ' — এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাঁরা কী করছিলেন ? 

উঃ  এখানে তাঁরা বলতে মণিকাদি , অণিমাদি , হিরণদি ও মিস বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে । রাত বারোটায় নিখিল বঙ্গ কবিতা সংঘের প্রথম সভা হবে খাওয়ার ঘরে , এটা ঠিক করেছিল গালুরা । সেই অনুযায়ী তারা খাওয়ার ঘরে ঢুকে ভালো করে চোখ রগড়ে দেখলো মণিকাদি , অণিমাদি , হিরণদি এমন কি মিস বিশ্বাস পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত রয়েছেন । তাঁরা দামি সিল্কের জামাকাপড় পরে এসেছেন । যেন কোনো নেমন্তন্ন বাড়ি বা বড়ো উৎসবে এসেছেন । তাঁরা মুচকি মুচকি হাসছিলেন এবং ছাত্রীদের স্তম্ভিত অবস্থাটা উপভোগ করছিলেন । 


৭. ‘ সভার কাজ চলতে লাগল ' — সভায় কী কী হলো এবং কীভাবে সভা শেষ হলো ?

 উঃ  সভার কাজ প্রথমে ভয়ে ভয়ে শুরু করলেও দিদিদের উৎসাহ ও সাহস পেয়ে একে একে সব কটি মেয়ে কবিতা পড়ে ফেলল । কবিতা পড়তে পড়তে কখন যে তারা অতগুলো ভালো ভালো খাবার খেয়ে শেষ করে ফেলল তা বুঝতেই পারল না । প্রত্যেকটি মেয়ের নামে দু লাইন কবিতা সহ সম্পাদিকার রিপোর্ট দিয়ে সভা শেষ হলো । সভানেত্রীর অনুমতি নিয়ে অণিমাদি টিচারদের পক্ষ থেকে কবিতা সংঘকে অভিনন্দন জানালেন । মণিকাদি আজকের সভা এখানেই শেষ হোক বলে সবাইকে লক্ষ্মী মেয়ের মতো শুয়ে পড়তে বললেন । এভাবেই সভা শেষ হলো । 


৮. ' টিচারদের ঘরে অবশ্য ডাক পড়ল ' — টিচারদের ঘরে কী হলো ? 

উঃ টিচারদের ঘরে মেয়েদের শাস্তি পাওয়া দূরে থাক , বকুনিও খেতে হলো না । মাঝরাতে সভার নামও উচ্চারিত হলো না । কেবল আলোচনা হলো সাহিত্য সভার উপযুক্ত সময় কীভাবে পাওয়া যেতে পারে । ঠিক হলো যে পরের সপ্তাহে সোম থেকে বৃহস্পতিবার সকাল - সন্ধ্যা পড়ার ঘন্টা পনেরো মিনিট করে বাড়িয়ে দেওয়া হবে । এর পরিবর্তে শুক্রবার সন্ধেবেলা পড়ার ঘন্টা থাকবে না । সেই সময় মেয়েদের সাহিত্যসভা , গানের আসর বা অভিনয় জাতীয় কিছু করা হবে ।


 ৯. সাহিত্য সভার শেষপর্যন্ত কী দশা হয়েছিল ? 

উঃ সাহিত্য সভা ভেঙে যায়নি বরং আরও জমজমাট হয়েছিল । সপ্তাহে সপ্তাহে অধিবেশন হতো । হাতে লেখা পত্রিকা বের হয়েছিল । ক্লাসের সব মেয়েরা যোগ দিয়েছিল । সকলের লেখার আশ্চর্য উন্নতি হয়েছিল । বিশেষ করে গন্ডালু দলের ।





No comments:

Post a Comment