প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর || বিষয়বস্তু নামকরণ সহায়িকা - Psycho Principal

Fresh Topics

Wednesday, 22 June 2022

প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর || বিষয়বস্তু নামকরণ সহায়িকা


প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর




কবি - পরিচিতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিদের মানসপটে একটা চিত্র ভেসে ওঠে । বাঙালি মাত্রই সেই চিত্রটির সঙ্গে পরিচিত । বিশ্ববরেণ্য এই কবির জন্ম হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে । পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদা দেবীর কনিষ্ঠ সন্তান রবীন্দ্রনাথ । শিশুকাল থেকেই তাঁর প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায় । তিনি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় নিয়মিতভাবে লিখতেন । বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভার বিকাশ দেখা যায় । সাহিত্যের এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানে তিনি নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যাননি । তবে কবিরূপেই তাঁর পরিচিতি সর্বাধিক । তাছাড়া প্রবন্ধ , নাটক , উপন্যাস , ছোটোগল্প এবং গান ও চিত্রাঅঙ্কনে তিনি অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন । তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে প্রভাত সঙ্গীত , সন্ধ্যাসঙ্গীত , ক্ষণিকা , চিত্রা , কথা ও কাহিনি ; শিশু , শিশু ভোলানাথ ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । ডাকঘর , চিরকুমার সভা , প্রভৃতি নাটক , গোরা , চোখের বালি , যোগাযোগ , চার অধ্যায় , নৌকাডুবি , প্রভৃতি উপন্যাস এবং মধ্যবর্তিনী , গুপ্তধন , মুসলমানীর গল্প , প্রভৃতি ছোটো - গল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । তাঁর প্রবন্ধের মধ্যে শিক্ষা , শান্তিনিকেতন , চরিত্র পূজা সর্বাপেক্ষা উল্লেখের দাবি রাখে । এছাড়া তিনি প্রায় দু'হাজারের ওপর গান রচনা করেছেন যা রবীন্দ্রসংগীত নামে জনপ্রিয় । তাঁর ভ্রমণ কাহিনিগুলিও অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক । এ বিষয়ে জাপানযাত্রীর ডায়রি , য়ুরোপপ্রবাসীর পত্র , রাশিয়ার চিঠি প্রভৃতির নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় । এছাড়াও তিনি সারাজীবনে অজস্র ছবি এঁকেছেন । তাঁর সাহিত্য প্রতিভার নিদর্শন স্বরূপ ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে Song Offerings- এর জন্য তিনি এশিয়ার মধ্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । তাঁর অসাধারণ প্রতিভার জন্য ইংরেজ সরকার তাঁকে ‘ নাইট ’ উপাধি দেন । কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ওই উপাধি ত্যাগ করেন । তাঁর রচিত ' জনগণমন অধিনায়ক এবং ‘ সোনার বাংলা ’ যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত । তিনি সারা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে গিয়েছেন এবং সর্বত্র পেয়েছেন অনন্য সম্মান । ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জীবনাবসান হয় । 


 সারমর্ম : 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘ প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে ' শীর্ষক গানটির মূল বক্তব্য বিষয়টি হলো — বিশ্বচেতনা । সেই পরম মঙ্গলময় ঈশ্বরের করুণা কবি তাঁর জীবনে উপলব্ধি করতে পেরেছেন । তাই সেই প্রাণস্বরূপ করুণা কবি আকুল ভাবে সমস্ত তৃত্স্না মিটিয়ে পেতে চান । এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুতেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান । তা অনুভব করেই কবি এই ভুবনে আরো নিবিড়ভাবে স্থান পেতে ঈশ্বরের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন । পৃথিবীর আরো আলো কবি নিজের চোখে ছুইয়ে নিতে চান । এই সুন্দর ভুবনের সুর , তাল , ছন্দে নিজেকে ভরিয়ে তুলতে চান । বিশ্বের ব্যথা বেদনা যদি কবিকে ব্যথিত করে সেই ব্যথাকে তুচ্ছ করার যে চেতনাশক্তি তাই তিনি প্রার্থনা করেছেন । বন্ধ দ্বার খুলে বাধা দূর করে কবি নিজেকে উদ্ধার করার শক্তি চেয়েছেন । বিশ্বের প্রতিটি বস্তুর প্রতি প্রেম ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে সেই পরমশক্তির কাছে কবি অমৃতধারার প্রার্থনা করেছেন । বিশ্বমানবতার পূজারী রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই গানে বিশ্বপ্রেম ও প্রকৃতির শক্তির জয়গান করেছেন এক প্রকৃতির কবিরূপে । 


নামকরণ : '

 প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে ’ একটি গান । এই গানটিকে সংকলকরা এই নামকরণ করেছেন । রবীন্দ্রনাথ গানটি রচনা করেন ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে , সমুদ্রবক্ষে । এটি গীতবিতান এর ১০৯ সংখ্যক গান । গানটির স্বরলিপি লিখেছেন ইন্দিরা দেবী ও দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর । গানটি প্রথমে প্রকাশিত হয় ' তত্ত্ববোধিনী ' পত্রিকায় । গানটি পূজা পর্যায়ের অন্তর্গত একটি সুপরিচিত রবীন্দ্রসংগীত । সংকলকগণ গানটির প্রথম পঙক্তিটিকেই গানটির শীর্ষক করেছেন । সাধারণত গানের কোনো নামকরণ হয় না । কিন্তু পাঠ্য সংকলকগণ গানটির একটি শীর্ষক বা নামকরণের জন্য গানটির প্রথম পঙক্তিটিকে বেছে নিয়েছেন । সংগীত কোনো নামকরণের অপেক্ষা করে না । সংগীত আপন খেয়ালে , আপন মনের ভাবে , আপন ভাবনায় চলে । তার আছে তান , তাল , লয় , শব্দ । আলাদাভাবে সংগীতের নামকরণ করলে তার আলাদা কোনো অলংকার হয় না । কিন্তু পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এই গানটির নামকরণের প্রয়োজন হয়েছে । তোমরা গানটির সুর জেনে নিয়ে শিক্ষক / শিক্ষিকার নির্দেশমতো গাইতে চেষ্টা করো ।



অতি - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 


১. কবি কী চেয়েছেন ? 

উঃ । কবি আরও প্রাণ ও শক্তি চেয়েছেন । 


২. কবি কোথায় স্থান চেয়েছেন ? 

উঃ । কবি বিশ্বভুবনে ঈশ্বরের আপন জগতে স্থান চেয়েছেন । 


৩. কবি তাঁর ' আমিকে ' কোথায় ডুবিয়ে দিতে চেয়েছেন ? 

উঃ । কবি ঈশ্বরের সুধা ধাবায় তাঁর ‘ আমি’কে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছেন । 


৪ আরো বেদনার মাঝে কবির কী প্রার্থনা ? 

উঃ । কবির প্রার্থনা এই বেদনার মাঝে সহ্য করার জন্য এক অপার চেতনাশক্তি ।


৫. আরো প্রেমে কবি কী চেয়েছেন ? 

উ: আরো প্রেমে অর্থাৎ বিশ্বজগতের প্রতি ভালোবাসায় কবির আমিত্ব অর্থাৎ আত্ম অহংকার যেন বিনষ্ট হয় । সকলের প্রতি ভালোবাসায় কবি যেন মগ্ন হয়ে যান । 


৬. কবি কীসের থেকে ' ত্রাণ ' চেয়েছেন ? 

উঃ । কবি সকল প্রকার বাধা - বন্ধন থেকে ত্রাণ চেয়েছেন । 


৭. কবি কোথায় আরো আলো ঢালতে বলেছেন ? 

উঃ  কবি তাঁর নয়নে আরো আলো ঢালতে বলেছেন । 


৮. ‘ মোর আমি ' — কথার অর্থ কী ? 

উঃ  ‘ মোর আমি ' — কথার অর্থ হলো আমার আমিত্ব অর্থাৎ কবির অহংবোধ । 


৯. ' তুমি আরো আরো দাও তান ’ — তুমি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? ‘ তান ’ কীভাবে আসবে ? 

উঃ  ' তুমি ’ বলতে কবি এখানে পরমেশ্বরকে বুঝিয়েছেন । পরমেশ্বর বিশ্বপিতা যখন বাঁশিতে সুর ভরে দেবেন , তখন সেই সুর থেকেই তান ফিরে আসবে । 


১০. ‘ মোর আমি ডুবে যাক নেমে ' — ' আমি ডুবে যাক ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

 উঃ' আমি ' বলতে কবি তাঁর আমিত্ব বা অহংবোধকে বুঝিয়েছেন । ‘ আমি ডুবে যাক ' বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন তাঁর হৃদয় থেকে সব অজ্ঞানতার অহংকার দূর হয়ে যাক । 


১১. ' দাও মোরে আরো চেতনা ' — উদ্ধৃতিটিতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ? 

উঃ আলোচ্য উদ্ধৃটিতে কবি বিশ্বপিতার কাছে প্রার্থনা করেছেন চেতনা , যে চেতনা বা জ্ঞান দ্বারা কবির আপন হৃদয় , মন ও প্রাণ বিকশিত হতে পারে । সে চেতনার আলোকে কবির মনের সব বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে এটাই কবির কামনা । 


১২. ' আরো বেদনা ' — কবির এই প্রার্থনার কারণ কী ?

 উঃ আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে কবি বিশ্বপিতার কাছে বেদনা বা ব্যথা চেয়েছেন । কারণ মানুষ আনন্দে জীবন কাটাতে চায় । কবির মতে জীবনে দুঃখ না থাকলে আনন্দের স্বরূপ উপলব্ধি করা যায় না । তাই কবি পরমপিতার কাছে বেদনা চেয়েছেন । এই বেদনাই তার চেতনাকে বিকশিত করবে বলে কবি মনে করেন ।

No comments:

Post a Comment