সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর নবম অধ্যায় সহায়িকা || Class 7th History Questions And Answers Chapter -9 - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 28 August 2022

সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর নবম অধ্যায় সহায়িকা || Class 7th History Questions And Answers Chapter -9

 

ইতিহাস 
প্রশ্ন উত্তর




ভূমিকা: পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলিতে আমরা ভারতের আদি মধ্যযুগের ও মধ্যকালীন ইতিহাস আলোচনায় মনোনিবেশ করলেও এই অধ্যায় আমরা বর্তমান ভারত বা আজকের ভারত - এর কথা আলোচনা করব । যেখানে বিশেষ করে বর্তমান ভারতের সরকার , গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনমূলক পরিস্থিতির আলোচনা করা হবে । তবে এক্ষেত্রে পুরানো দিনের অনেক ধারণা আমাদের চারপাশে আছে , কিন্তু তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সময় বদলের সাথে সাথে তার কিছু পরিবর্তন হয়েছে মাত্র । ‘ সরকার ' শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে । মধ্যযুগে এই শব্দটির মানে শাসনকর্তা বা শাসন ব্যবস্থা বোঝাত । কিন্তু বর্তমানে এর দ্বারা Government- কে বোঝায় । সরকারের অন্যতম একটি ব্যবস্থা হল গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা , যেখানে জনগণ নিজে শাসক নির্বাচন করে থাকেন । সরকার পরিচালনায় প্রত্যেক দেশের কিছু নিয়মকানুন আছে । এই নিয়মকানুনকেই সংবিধান বলে । ভারতের সংবিধানের রূপকার ছিলেন বি . আর . আম্বেদকর । সংবিধান অনুসারে সরকারের কাজ হল — জনগণের যাতে ভালো হয় তার ব্যবস্থা করা , কর সংগ্রহ করা , দেশের স্বাধীনতা বজায় , দেশের শান্তি - শৃঙ্খলা বজায় রাখা । সরকারের কাজকর্ম চালানোর জন্য আইন বিভাগ , শাসন বিভাগ থাকে । সরকার পরিচালনার জন্য ভারতের জনগণই শাসক নির্বাচন করেন । তবে ভারতের জনগণ শুধুমাত্র শাসক নির্বাচন করেন না , নিজেরাও শাসনে অংশ নেন । সরাসরি শাসনে অংশ নেওয়াকেই বলে স্বায়ত্তশাসন অর্থাৎ জনগণ যেখানে নিজেই নিজের অধীন তাকে স্বায়ত্তশাসন বলে । পশ্চিমবঙ্গে স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে দুটি ভাগ আছে শহরের ক্ষেত্রে পৌরসভা , আর গ্রামের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত । এই দুটি ক্ষেত্রেই মূল লক্ষ্য হল সমস্ত ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়ন সাধন ।


দু - এক কথায় উত্তর দাও : 

১। ‘ সরকার ’ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে ? 

উত্তর । ফারসি শব্দ থেকে এসেছে । 


২। রাজতন্ত্র কাকে বলে ? 

উত্তর । রাজা , সুলতান , বাদশাহ দ্বারা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থাকেই রাজতন্ত্র বলা হয় । 


৩। ভারতীয় সংবিধানের প্রধান রূপকার কে ছিলেন ? 

উত্তর । ড . বি . আর . আম্বেদকর । 


৪। বি . আর . আম্বেদকর কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ ও পরলোক গমন করেন ? 

উত্তর । ১৮৯১ খ্রি . তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৬ খ্রি . পরলোক গমন করেন । 


৫। বিচার বিভাগের কাজ কী ? 

উত্তর । সংবিধানের নিয়মানুসারে দেশ শাসন হচ্ছে কিনা , জনগণের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কিনা , আর কেউ নিয়ম ভাঙলে তার প্রতি ব্যবস্থা নেওয়াই হল বিচার বিভাগের কাজ । 


৬। পৌরসভার প্রধানকে কী বলা হয় ?

 উত্তর । পৌরপ্রধান বলা হয় । 


৭। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে কী বলা হয় ? 

উত্তর । পঞ্চায়েত প্রধান বলা হয় । 


৮। অনেকগুলি ব্লক নিয়ে কী গড়ে ওঠে ? 

উত্তর । একটি জেলা গড়ে ওঠে । 


৯। ব্লকের স্বায়ত্তশাসনের ভার কার ওপর ন্যস্ত থাকে ? 

উত্তর । পঞ্চায়েত সমিতির ওপর । 


১০। জেলার স্বায়ত্বশাসনের ভার কার ওপর ন্যস্ত থাকে ? 

উত্তর । জেলা পরিষদের ওপর ।


৩। সংক্ষেপে ( ৩০-৫০টি শব্দের মধ্যে ) উত্তর দাও ( পূর্ণমান -৩ ) : 

( ক ) বর্তমান ভারতে শাসন ব্যবস্থার কী কী বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় ? 

উত্তর । ভারত গণতান্ত্রিক দেশ । জনগণ এখানে শাসন পরিচালনার জন্য নিজেরাই ভোটদানের মধ্যে দিয়ে সরকার বেছে নেন । ভারতের শাসনক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী । ভারতের শাসনব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হবে এক্ষেত্রে একটি লিখিত সংবিধান আছে । সংবিধান মেনেই প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন । ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশ অর্থাৎ এখানকার শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দু - ধরনের সরকারই আছে । ভারতে একটাই কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব সরকার আছে , যাকে রাজ্য সরকার বলে । সরকারের কাজকর্ম চালানোর জন্য ভারতে তিনটি বিভাগ আছে — আইন বিভাগ , শাসন বিভাগ , বিচার বিভাগ । 


( খ ) যুক্তরাষ্ট্র ও সংবিধান কাকে বলে ?

 উত্তর । যে শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দুরকম সরকারের ক্ষমতাই স্বীকার করা হয় , তাকে বলে যুক্তরাষ্ট্র । ভারতীয় সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় ; কেননা এর শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দু - ধরনের সরকারই আছে । প্রতিটি দেশ কীভাবে চালিত হবে তার জন্য বেশ কিছু নিয়মকানুন আছে । এই নিয়মকানুন গুলিই হল সংবিধান । ' বিধান ' শব্দটির মানেই নিয়ম । প্রতিটি দেশেরই লিখিত সংবিধান আছে । ভারতীয় সংবিধান পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সংবিধান । 


( গ ) সরকারের কাজ কী কী ? 

উত্তর । সরকার শব্দটি ফারসি থেকে এসেছে । মধ্যযুগে ভারতে এই শব্দটির দ্বারা শাসনকার্য বা শাসনব্যবস্থা দুই বোঝাত । ‘ সরকার ’ ধারণাটা তার কাজের মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়ে ওঠে । সাধারণভাবে বলতে গেলে সরকারের কাজ হল দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা । প্রতিটি দেশেই সরকারের কাজ দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দেশের সকল ক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা করা । জনগণের উন্নতির স্বার্থে সরকার নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করে , কর সংগ্রহ করে ও দেশের স্বাধীনতা বজায় রাখার মতো জরুরি কাজ করে থাকেন ।


 ( ঘ ) স্বায়ত্তশাসন বলতে তুমি কী বোঝো ? 

উত্তর । স্বশাসিত শাসন ব্যবস্থাকেই স্বায়ত্তশাসন বলে । স্বায়ত্ত কথাটি অর্থ হল নিজের অধীন ( ' স্ব ' মানে নিজের , ' আয়ত্ত ' মানে অধীন ) । অর্থাৎ জনগণ যেখানে নিজেই নিজের অধীন , সেই শাসনব্যবস্থাকেই বলে ' স্বায়ত্তশাসন ' । ভারতের জনগণ শুধু এই শাসকই নির্বাচন করেন না , নিজেরাও শাসনে অংশ নেন । এই সরাসরি শাসনে অংশ নেওয়াকে ' স্বায়ত্তশাসন ' বলে । ( ঙ ) নির্বাচনকে সাধারণভাবে কী বলে ? ভারতে কত বছর অন্তর সরকার নির্বাচন হয় ? সরকার নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কী সম্পর্ক ? উত্তর । নির্বাচনকে সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে ‘ ভোটদান ' । ভারতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার নির্বাচন হয়ে থাকে । ভারতীয় সংবিধানের নিয়মাবলি অনুযায়ী দেশের সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণের অধিকারকেই স্বীকার করা হয়েছে । ভারতীয় জনগণ প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ভোটদানের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার বেছে নেন । শাসক বা সরকার নির্বাচনে জনগণের এই অধিকারকেই গণতন্ত্র বলা হয়ে থাকে । ভারতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার দুটিই জনগণ নির্বাচন করে থাকেন । তাই ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ । সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে লোকজন বা জনগণ নিজেরাই দেশের তন্ত্র বা ব্যবস্থা ঠিক করেন বলেই এটা ' গণতন্ত্র । 


৪। বিশদে ( ১০০-১২০টি শব্দের মধ্যে ) উত্তর দাও ( পূর্ণমান -৫ ) :

 ( ক ) ভারতকে কেন গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় বলা হয় ? দেশ পরিচালনায় সংবিধানের ভূমিকা কী বলে তুমি মনে করো ? 

উত্তর । নিজেরা নিজেদের মধ্যে থেকে শাসক বেছে নেওয়ার পদ্ধতিকেই বলা হয় ' গণতন্ত্র ' । তন্ত্র মানে ব্যবস্থা । লোকজন বা জনগণ নিজেরাই দেশের তন্ত্র বা ব্যবস্থা ঠিক করেন বলেই একে বলা হয় ‘ গণতন্ত্র ' । অর্থাৎ যে দেশে জনগণরাই শাসক নির্বাচন করেন সেই দেশকেই বলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । ভারতও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । কেননা ভারতের জনগণ বাচন বা ভোটদানের মাধ্যমে নিজেরাই শাসক বেছে নেন ।। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বলতে বোঝায় , যে শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দু'রকম সরকারের ক্ষমতাই স্বীকার করা হয় । ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশ । কেননা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য এই দু - ধরনের সরকারই এই শাসনব্যবস্থায় বর্তমান ।

→ প্রতিটি দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে তার নিয়মকানুনগুলিকেই বলে ‘ সংবিধান ' । ‘ বিধান ' কথার অর্থই নিয়ম । এই বিধান অস্বীকার করা জনগণের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভবপর নয় । সংবিধানের মাধ্যমে প্রতিটি দেশই আইন বিভাগ , শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ - এর করণীয় নির্দেশাবলি স্থির করে । একমাত্র সংবিধানের মাধ্যমেই শাসকের উচ্চাকাঙ্ক্ষা , অরাজকতাকে ধরে রাখা সম্ভব । কোনো সংবিধানে উল্লেখ থাকে শাসক যদি অরাজক হন , ক্ষমতালোভী হন তবে জনগণ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন এবং এর জন্য তাকে শাস্তিও দেওয়া হবে । তেমনি সংবিধানের মাধ্যমেই জনগণের অবশ্য পালনীয় কর্মসূচিগুলিকে নির্দিষ্ট করা যায় । তাই দেশের শান্তি - শৃঙ্খলা ও উন্নতি সবই সংবিধানের ওপরই নির্ভরশীল । 


( খ ) সরকারের কয়টি ভাগ ? ঐ ভাগগুলি কোনটি কী কাজ করে ? বিচার বিভাগকে কেন আলাদা করে রাখা হয় ? 

উত্তর । কাজকর্ম পরিচালনার দিক থেকে সরকারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । এগুলি আইন বিভাগ , শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ । এ ছাড়া আরও দুটি সরকার হল কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার । উপরের ওই তিনটি বিভাগের নির্দিষ্ট কিছু কাজকর্ম আছে । আইন বিভাগ — আমাদের দেশ পরিচালনার জন্য বেশ কিছু আইন তৈরি করা হয় , যে আইনের দ্বারা সমগ্র শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে । শাসন বিভাগ — আইন বিভাগের তৈরি আইন অনুসারে যারা দেশ পরিচালনা করবেন তাঁরাই শাসকশ্রেণির দায়িত্বে থাকবেন । এই বিভাগই দেশের শান্তি - শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকে । বিচার বিভাগ – সংবিধান অনুসারে দেশ শাসন হচ্ছে কিনা , জনগণের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কিনা , কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কিনা — এসবের প্রতি নজর রাখবে । আর কেউ সংবিধানের নিয়ম ভাঙলে আইনের নিয়মাবলি অমান্য করলে , শান্তি - শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটালে , তার ব্যবস্থা নেওয়াই বিচার বিভাগের কাজ । প্রতিটি দেশেই বিচার বিভাগকে বাকি দুটি আইন ও শাসন বিভাগ থেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করা হয় । এর প্রকৃত কারণ হল — কোনোভাবেই যাতে সুবিচারের পথ বন্ধ না হয় , তার জন্যই এই ব্যবস্থা । এককথায় একে বলে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি । ‘ স্বতন্ত্রীকরণ ’ মানে আলাদা করা । গণতন্ত্র যাতে বলবৎ থাকে , তার জন্যই এই নীতি নেওয়া হয় । 


( গ ) পৌরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কী কী কাজ করে ? 

উত্তর । পশ্চিমবঙ্গের স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার দুটি অঙ্গ হল— পৌরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েত । এই দুটিই শাসন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কাজ করে থাকে । প্রতিটি ছোটো ছোটো শহর বা নগরেই পৌরসভা আছে । ‘ পৌর ’ কথাটি এসেছে ‘ পুর ’ থেকে । সংস্কৃতে পুর মানে নগর । প্রতিটি পৌরসভায় একজন পৌরপ্রধান থাকেন । শহর বা নগরের জনসেবা , জনস্বাস্থ্য , উন্নয়ন ও প্রশাসন এগুলি পরিচালনা করাই হল পৌরসভার প্রধান কাজ । শিক্ষার প্রসারে বিদ্যালয় ও নানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে ও তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো ও পেরিপ্রধানের কাজ । এ ছাড়া হাসপাতাল নির্মাণ - এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য উন্নয়নে পৌরসভাগুলি উদ্যোগ নেয় । শহর বা নগরের পৌরসভার মতোই গ্রামে আছে গ্রাম পঞ্চায়েত । গ্রামের বাসিন্দারা ভোট দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের নির্বাচন করেন । তাদের মধ্যে থেকে একজন হন পঞ্চায়েত প্রধান । প্রধানত নির্মাণ , গ্রামের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা , সাধারণ মানুষের হাঁটা চলা ও যাতায়াতের জন্য সুন্দর ও পরিকল্পিত পথ - ঘাট নির্মাণ করাই হল গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ । এ ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিসাধনে প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয় নির্মাণ ও তা সুষ্টভাবে পরিচালন ব্যবস্থা , জনস্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরি গ্রাম পঞ্চায়েত করে থাকে । এ ছাড়া গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে বনসৃজন কর্মসূচি পরিচালনা করাই গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ । 


( ঘ ) পশ্চিমবঙ্গে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার বিষয়ে একটি টীকা লেখো । 

উত্তর । স্বায়ত্তশাসন বলতে বোঝায় স্ব - শাসিত শাসন ব্যবস্থা । ' স্ব ’ মানে নিজের আর ‘ আয়ত্ত ’ মানে অধীন । অর্থাৎ জনগণ যেখানে নিজেই পরিচালিত হয় নিজের দ্বারা । কেননা পশ্চিমবঙ্গের জনগণ শুধু শাসক নির্বাচন করেন না , নিজেরাও শাসনে ছাত্রবাবু অংশ নেন । পশ্চিমবঙ্গে এই স্বায়ত্তশাসন দু - ভাবে দেখা যায় শহর বা নগর এর ক্ষেত্রে পৌরসভা , আর গ্রামের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত । পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ছোটো ছোটো শহর ও নগরে পৌরসভা আছে । ওই শহর বা নগরের আঠারো বছর বা তার বেশি বয়সের বাসিন্দারা ভোট দিয়ে পৌরসভার সদস্যদের বেছে নেন । এদের পৌরপ্রতিনিধি বলে , যাদের মধ্যে একজন পৌরপ্রধান হন । নগর বা শহরের জনসেবা , জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও প্রশাসনগুলির পরিচালনা করাই হল পৌরসভার প্রতিনিধিদের কাজ । পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ স্বায়ত্ত্বশাসনে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের নির্বাচন করে গ্রামের বাসিন্দারা । এদের মধ্যে থেকেই একজন হন পঞ্চায়েত প্রধান । জনসেবা ও জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে পানীয় জলের সরবরাহ , গ্রামের পরিচ্ছন্নতা পথ - ঘাট নির্মাণ ইত্যাদি ছিল পঞ্চায়েত কর্মীদের কাজ । অনেকগুলি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় একটা ব্লক । সেই ব্লকে একইভাবে থাকে একটা পঞ্চায়েত সমিতি । আবার কয়েকটি ব্লক নিয়ে গঠিত হয় ' জেলা পরিষদ ’ । গ্রামের মতো ব্লক ও জেলার স্বায়ত্তশাসনের ভার থাকে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ওপর । পৌরসভা হোক বা পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সবক্ষেত্রেই পাঁচ বছর অন্তর জনগণ ভোট দানের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন । আবার এই দুই ক্ষেত্রেই নানাভাবে জনগণ নিজেরাও শাসনব্যবস্থা ও নানা কর্মসূচিতে অংশ নেন । 


( ঙ ) প্রাচীনকালে ভারতে ও অন্য কোথাও গণতন্ত্রের কথা জানা যায় কী ? সেই গণতন্ত্র কেমন ছিল বলে তুমি মনে করো ? 

 উত্তর । প্রাচীনকালে ভারতে অর্থাৎ অষ্টম শতকে পাল শাসনের প্রারম্ভে গণতন্ত্রের কথা জানা যায় । অন্যদিকে আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিস দেশের এথেন্সে গণতন্ত্র প্রচলিত ছিল । বর্তমান ভারতে যে ধরনের গণতন্ত্র দেখতে পাওয়া যায় তা কোনো নতুন ব্যাপার নয় । আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিস দেশেও এই ব্যবস্থা ছিল বলে জানা যায় । গ্রিস দেশে এথেন্সের লোকেরা তাদের মধ্যে থেকে শাসক বেছে নিত । তবে তখনকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বর্তমান কালের গণতন্ত্রের থেকে কিছুটা আলাদা ছিল । শোনা যায় যে , লোকেরা ভাঙা কলশির টুকরোর ওপর পছন্দমতো চিহ্ন আরেকটা আস্ত কলশির মধ্যে ফেলে দিত । যার পক্ষে কলশির টুকরো বেশি জমা পড়ত , সেই হত শাসক । অন্যদিকে বাংলায় শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বহু ক্ষুদ্র রাজ্যের সৃষ্টি হয় ও এখানে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে । ক্রমে দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যার থেকে পরিত্রাণ নেই । জনসাধারণ অর্থাৎ প্রজামণ্ডলী গোপালকে বাংলার শাসক নির্বাচিত করেছিল । এ থেকে বোঝা যায় যে ভারতে তখনই গণতান্ত্রিক শাসন গুরুত্ব পেত যখন রাজতন্ত্রের পক্ষে শাসন ব্যবস্থা বা দেশ পরিচালনা সম্ভব হত না ।

2 comments: