Class 6th History Questions And Answers Chapter -6 || ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর ষষ্ঠ অধ্যায় ষষ্ঠ শ্রেণী সহায়িকা - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 12 September 2022

Class 6th History Questions And Answers Chapter -6 || ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর ষষ্ঠ অধ্যায় ষষ্ঠ শ্রেণী সহায়িকা

 

ইতিহাস 
প্রশ্ন উত্তর 



সপ্তম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো


একটি বাক্যে উত্তর দাও:

 1. অশোকস্তম্ভে পিঠোপিঠি কয়টি সিংহ আছে?

 উত্তর: অশোকস্তম্ভে পিঠোপিঠি চারটি সিংহ আছে।


 2. প্রাচীন ভারতে কারা 'রাজাধিরাজ' উপাধি নিতেন?

 উত্তর: প্রাচীন ভারতে সম্রাটরা ‘রাজাধিরাজ' উপাধি নিতেন।


 3. কোন্ পণ্ডিত নন্দরাজাদের রোষের মুখে পড়েন ?

 উত্তর: চাণক্য নামে এক পণ্ডিত নন্দরাজাদের রোষের মুখে পড়েন।


 4. অশোকের বাবার নাম কী ?

 উত্তর: অশোকের বাবার নাম বিন্দুসার।


5. কোন্ যুদ্ধের ফলে অশোকে নের পরিবর্তন ঘটে? 

উত্তর: কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলে অশোকের মনের পরিবর্তন  ঘটে।


 6. অশোক কোন্ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন? 

উত্তর: অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।


 7. মহাস্থানগড় কোথায় অবস্থিত? 

 উত্তর: মহাস্থানগড় বর্তমান বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় অবস্থিত।


 ৪. অগ্নিমিত্র কোন্ বংশের শাসক ছিলেন?

 উত্তর: অগ্নিমিত্র সুঙ্গ বংশের শাসক ছিলেন |


 9. দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবির নাম কী?

 উত্তর: দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবির নাম রবিকীর্তি।


 10. মেগাস্থিনিস কার রাজত্বকালে ভারতে আসেন ? 

উত্তর: মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে ভারতে আসেন।


 11. সাতবাহন শাসনব্যবস্থায় কে প্রধান ছিলেন ?

 উত্তর: সাতবাহন শাসনব্যবস্থায় প্রধান ছিলেন রাজা। 


12. বাকটিক রাজারা কী উপাধি নিতেন ?

 উত্তর: বাকাটক রাজারা ‘মহারাজ' উপাধি নিতেন।


 13. পুষ্যভূতি বংশের রাজাদের রাজধানী কোথায় ছিল ?

উত্তর: পুষ্যভূতি বংশের রাজাদের রাজধানী ছিল থানেশ্বরে।


 14. 'শিলাদিত্য' কার উপাধি ছিল?

 উত্তর: হর্ষবর্ধনের উপাধি ছিল 'শিলাদিত্য'।


 15. হর্ষবর্ধন কোথায় মহাদান করেছিলেন ?

 উত্তর : হর্ষবর্ধন প্রয়াগে মহাদান করেছিলেন।


 16. সুয়ান জাং কার আমলে ভারতে আসেন ?

উত্তর: সুয়ান জাং হর্ষবর্ধনের আমলে ভারতে আসেন।


 17. কার মৃত্যুর পর পুষ্যভূতি শাসনের অবসান ঘটে?

 উত্তর: হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর পুষ্যভূতি শাসনের অবসান ঘটে।


 সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

 দু/তিনটি বাক্যে উত্তর দাও:


 1. সাম্রাজ্য কী?

 উত্তর: সাম্রাজ্য বলতে এক বিশাল এলাকাকে বোঝায়, যে এলাকা কোনো একজন শাসকের অধীনে থাকে। এখানে বহু মানুষ বাস করে।


2. আমাদের দেে - তীয় প্রতীক কেমন দেখতে? 

উত্তর: আমাদের জাতীয় প্রতীক হল অশোকস্তম্ভ। স্তম্ভটির মাথায় পিঠোপিঠি চারটি সিংহ আছে । এটি ওলটানো পদ্মের মতো দেখতে একটি বেদির ওপর রাখা, তার ওপর দেখা যায় অশোকচক্র। এই চক্রের বাঁদিকে ষাঁড় ও ডানদিকে ঘোড়ার মূর্তি রয়েছে। 


3. 'সম্রাট' কে?

 উত্তর: সাম্রাজ্যের শাসনকর্তাকে বলা হয় সম্রাট। সম্রাটের

 অধীনে থাকে বিশাল সংখ্যক প্রজারা, তাই তিনি এই বিশাল এলাকার শাসকরূপে পরিচিত হন। তাঁর শাসন এলাকায় তিনিই শেষ কথা।


4. ভারতীয় উপমহাদেশে কীভাবে প্রথম সাম্রাজ্য তৈরি হয় ?

 উত্তর: ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথমে জনপদগুলির কয়েকটি বড়ো রাজ্য হিসেবে মহাজনপদে পরিণত হয়। এর মধ্যে সবথেকে শক্তিশালী মহাজনপদ মগধকে ঘিরে গড়ে ওঠে সাম্রাজ্য। এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্রাজ্য তৈরি হয় ।


 5. আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের ফল কী হয়েছিল?

 উত্তর: ম্যাসিডনীয় গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাঞ্চলে ছোটো ছোটো শক্তিগুলির ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে সহজেই মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে 


6. সিন্ধু উপত্যকার দখলদারি নিয়ে যুদ্ধের ফল কী হয়?

 উত্তর: সিন্ধু উপত্যকার দখলদারিকে কেন্দ্র করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সঙ্গে গ্রিকদের যুদ্ধ শুরু হয়। সেই অঞ্চলের শাসক ও আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলিউকাস নিকেটরের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শেষপর্যন্ত এক সন্ধি হয়। ফলে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়।


 7. মৌর্য সাম্রাজ্যে কোন্‌গুলি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল ?

উত্তর:  মৌর্য সাম্রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল মগধ। অশোক নিজেকে মগধরাজ বলে ঘোষণা করেছিলেন। মৌর্যরা উত্তর ভারতে বেশ কয়েকটি রাজ্য জয় করেছিল, যেগুলি পরিণত হয়েছিল প্রধান শাসন এলাকায় । সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত ও দাক্ষিণাত্যের এলাকাগুলি ছিল প্রান্তীয় এলাকা। তবে মৌর্যরা মগধ ও প্রধান শাসন এলাকাতেই তাদের শক্তিকে সুসংহত করেছিল। 


৪. মৌর্য সেনাবাহিনীর পরিচয় দাও ।

 উত্তর: বিশাল সম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য মৌর্যদের সেনাবাহিনীর দরকার ছিল। তবে মৌর্য সেনাবাহিনীতে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন সম্রাট নিজে। এই সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিল ঘোড়া, রথ, হাতি, নৌকা এবং পদাতিকদের নিয়ে |


 9. কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক কী করেছিলেন ? 

উত্তর: কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতার ফলে অশোকের মনের পরিবর্তন ঘটে। এরপর থেকেই তিনি প্রজাদের ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। এই যুদ্ধের পর অশোক অন্য কোনো যুদ্ধ করেননি, বরং বৌদ্ধধর্মের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন।


 10. কুষাণ সম্রাট বিম কদফিসেসের প্রধান কৃতিত্ব কী ছিল ?

 উত্তর: কুষাণ সম্রাট বিম কদফিসেস সিন্ধুর অববাহিকা অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিরাট শক্তিশালী শাসক হিসেবে তিনি বেশ জমকালো উপাধি ধারণ করেছিলেন এবং ভারতীয় উপমহাদেশে তিনিই প্রথম সোনার মুদ্রা চালু করেছিলেন।


 11. গৌতমীপুত্র সাতকণি কীভাবে সাতবাহনদের ক্ষমতা ফিরিয়ে এনেছিলেন ?

 উত্তর: সাতবাহনদের হারানো ক্ষমতার পুনরুদ্ধার করেছিলেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি। প্রায় সমগ্র দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। শক ক্ষত্রপদের হারিয়ে গুজরাটের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশ এবং মালবে তিনি অধিকার কায়েম করেন। তাঁর নাসিক এবং কার্লে লেখ থেকে তাঁর রাজ্যবিস্তারের কথা জানা যায় |


 12. সাতবাহন শাসনে রাজার ভূমিকা কেমন ছিল ? 

উত্তর: সাতবাহনদের রাজতান্ত্রিক শাসনে রাজার প্রধান ভূমিকা ছিল। রাজা একইসঙ্গে প্রধান শাসক, প্রধান সেনাপতি, প্রধান বিচারক এবং আইনপ্রণেতার কাজও করতেন। দেশকে সুরক্ষা দানের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।


13. প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকালের গুরুত্ব কী ছিল ? 

উত্তর: গুপ্ত সম্রাট প্রথম কুমারগুপ্ত তাঁর আমলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের আয়তন ও ক্ষমতা আগের মতোই অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। তিনি তাঁর সাম্রাজ্যে নানা ধরনের মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। তাঁর আমলেই বিখ্যাত নালন্দা মহাবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়।


 14. গুপ্ত ও বাকাটক আমলে শাসনব্যবস্থা কেমন ছিল?

 উত্তর: গুপ্ত ও বাকাটক আমলে সমগ্র শাসনব্যবস্থা বেশ কয়েকটি স্তরে বিভক্ত ছিল। জেলা ও গ্রামস্তরের শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে নানা জনপ্রতিনিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। আবার গুপ্তদের শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে যুবরাজ ও রানিদেরও বিশেষ ভূমিকা ছিল। তবে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শেষদিকে এই শাসনব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল।


 15. প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে হর্ষবর্ধন কীভাবে গুপ্ত শাসনকাঠামো অনুকরণ করেছিলেন ?

 উত্তর: প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে হর্ষবর্ধন নানাভাবে গুপ্ত শাসনব্যবস্থারই অনুকরণ করেছিলেন। তাঁকে প্রাদেশিক শাসনের ক্ষেত্রে সাহায্য করত মন্ত্রীদের নিয়ে গড়ে ওঠা একটি পরিষদ। আবার দূরবর্তী প্রদেশগুলি শাসন করত সামন্তরাজা বা রাজার কোনো প্রতিনিধি। এসময় প্রতিটি প্রদেশ বা ভুক্তি কতকগুলি বিষয় বা জেলায় বিভক্ত ছিল আর প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থায় সবার নীচে ছিল গ্রামের শাসনব্যবস্থা।


 সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

 চার পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও : মান 3


 1. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাম্রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। 

উত্তর: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ছিলেন মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট। তিনি নানা উপায়ে মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান । নন্দরাজাদের বিরুদ্ধে অভিযান: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য চাণক্য বা কৌটিল্যের সহায়তায় শেষ নন্দরাজা ধননন্দকে পরাজিত করে মগধে মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। নন্দদের সময় উত্তর ভারতে মগধের যে ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়িয়েছিল, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সেই ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তোলেন। সেলিউকাস নিকেটরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: সিন্ধু উপত্যকার দখলদারি নিয়ে গ্রিক শক্তির সঙ্গে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সংঘাত বাধে। তবে পরে ওই অঞ্চলের শাসক আলেকজান্ডারের সেনপতি সেলিউকাস নিকেটরের সঙ্গে এক কধুত্বপূর্ণ চুক্তির মাধ্যমে সব বিবাদ মিটে যায়। এর ফলে তার সাম্রাজ্যের আরও বিস্তৃতি ঘটে। 


2. কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের বিষয়বস্তু কী ছিল ?

 উত্তর: প্রাচীন ভারতের শাসন পরিচালনার বিষয়ে লেখা অন্যতম একটি বই হল কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র |

 বই-এর নাম অনুযায়ী, বইটিতে শুধুমাত্র টাকাকড়ির বিষয়ে লেখা নেই, কোনো রাজ্যের শাসনব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত তার সামগ্রিক আলোচনা রয়েছে। অর্থশাস্ত্রের মতে, রাষ্ট্রীয় শাসনকাজে প্রধান হলেন রাজা, এখানে তাঁর কথাই শেষ কথা। এ ছাড়া বইটিতে রাজকাজের সমস্ত বিষয়ের খুঁটিনাটি আলোচনা এবং একজন শাসকের কী কী করা উচিত তা বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে |


 3. মৌর্য আমলের কর ব্যবস্থা কেমন ছিল ?

 উত্তর: মৌর্য আমলে একটি বিশাল সাম্রাজ্যের খরচ চালানোর জন্য কর ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল। এই সময় নানাভাবে সম্রাটরা প্রজাদের কাছ থেকে কর আদায় করতেন ।

 রাজস্ব/করের উৎস: কৃষি থেকেই মৌর্য আমলে বেশিরভাগ কর আদায় করা হত। কৃষকদের উৎপন্ন ফসলের ১/৬ ভাগ রাজস্ব দিতে হত।বলি ও ভাগ: মৌর্য আমলে দু-ধরনের ভূমিরাজস্বের প্রচলন ছিল, তা হল বলি ও ভাগ। অন্যান্য কর: বলি ও ভাগ ছাড়া কারিগর, বণিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায় করা হত। কর ছাড়ের সুযোগ: অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে কর ছাড় দেওয়া হত, যেমন—সম্রাট অশোক বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনী গ্রামে প্রজাদের 'বলি' কর থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।


 4. অশোকের ‘ধৰ্ম্ম' সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।

 উত্তর: অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর প্রজাদের মধ্যে ‘ধম্ম’ নীতি প্রচার করেন | অশোকের ধম্ম ও বৌদ্ধধর্মে বেশকিছু মিল থাকলেও এটি কোনো বিশেষ ধর্ম ছিল না। ধম্মের মূলকথা: অশোকের ধম্মে কতকগুলি সামাজিক আচরণের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর মূলে ছিল অহিংসা, প্রাণীহত্যা কধ, দয়া, দান, সত্যকথা বলা, গুরুজনদের মেনে চলা প্রভৃতি। এর মাধ্যমে অশোক প্রজাদের সন্তানতুল্য মনে করতেন। উদ্দেশ্য: অশোকের ধম্মের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মানুষের পারিবারিক ও সমাজজীবনের উন্নতি সাধন |


 5. কুষাণ সাম্রাজ্যে লক্ষ করার মতো বিষয় কী ছিল ?

উত্তর: কুষাণ সাম্রাজ্যে লক্ষ করার মতো বিষয়গুলি ছিল— দেবকুল প্রতিষ্ঠা: কুষাণ সম্রাটরা তাদের সাম্রাজ্যে বসবাসকারী নানা ধরনের মানুষদের একজোট করার জন্য নিজেদের দেবতার মতো প্রচার করেন। এর জন্য তারা দেবকুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি মন্দিরের মতোই একটি পুজোর জায়গা যেখানে কুষাণ সম্রাটদের মূর্তিও রাখা হত।দুজন শাসক: কুষাণ সাম্রাজ্যের অন্যতম লক্ষণীয় বিষয় হল দুজনে মিলে রাজ্যপাট চালানো। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, বাবা ও ছেলে একসঙ্গে শাসনকাজ চালাতেন।

 সাম্রাজ্যের বিভাজন: শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যকে ভাগ করা হত কতকগুলো প্রদেশে। সেই প্রদেশের শাসককে বলা হত ক্ষত্ৰপ ।


 6. সাতবাহনদের শাসনব্যবস্থা কেমন ছিল?

 উত্তর: সাতবাহনদের শাসনব্যবস্থা ছিল নিম্নরূপ— রাজা: সাতবাহনদের শাসনব্যবস্থা এবং সেনাবাহিনীর ধান ছিলেন রাজা ।

 সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক বিভাজন: সাতবাহনরা প্রশাসনিক সুবিধের জন্য সাম্রাজ্যকে কতকগুলি ছোটো প্রদেশে ভাগ করেছিলেন।

প্রাদেশিক শাসক: সাতবাহন শাসনে প্রদেশগুলি শাসন করতেন অমাত্য নামক কর্মচারী।

 কর ব্যবস্থা: সাতবাহন শাসনে ভাগ ও বলি নামে দু-রকম কর নেওয়া হত। এ ছাড়া উৎপন্ন ফসলের ১/৬ অংশ কর হিসেবে নেওয়া হত। কারিগর ও বণিকদের থেকেও কর আদায় করা হত। বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য, যেমন, নুনের ওপরও কর আরোপ করা হত।


 7. এলাহাবাদ প্রশস্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।

উত্তর: এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে সমুদ্রগুপ্ত সম্পর্কে জানা যায়।

 প্রাপ্তিস্থান: উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ দুর্গের মধ্যে এই প্রশস্তিটি পাওয়া গেছে।

লিপি, ভাষা, প্রশস্তিকার: এই প্রশস্তিটি ব্রাহ্মীলিপিতে সংস্কৃত ভাষায় খোদাই করা আছে। এটি রচনা করেছিলেন র গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেন |

 বিষয়বস্তু: এলাহাবাদ প্রশস্তিতে সমুদ্রগুপ্তের গুণগান করা হয়েছে। এ থেকে তাঁর আর্যাবর্ত ও দাক্ষিণাত্য বিজয় এবং অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে সম্পর্ক, ব্যক্তিগত গুণাবলি প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় ।


 ৪. গুপ্তদের পর উত্তর ভারতের অবস্থা কেমন ছিল ? 

উত্তর: খ্রিস্ট্রীয় ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে গুপ্ত শাসন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। একসময় এই সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।

 অবসানের পর পরিস্থিতি: গুপ্ত শাসনের অবসানের পর এই বিশাল সাম্রাজ্যের নানা জায়গায় গড়ে ওঠে ছোটো ছোটো রাজ্য | এক-একটা অঞ্চলকে নিয়ে গড়ে ওঠা এইসব রাজ্যগুলিকে বলা হত আঞ্চলিক রাজ্য।

 - আঞ্চলিক রাজ্য: গুপ্ত পরবর্তীকালের আঞ্চলিক রাজ্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল থানেশ্বরের পুষ্যভূতিদের রাজ্য, মালবের পরবর্তী গুপ্ত রাজ্য, কনৌজ রাজ্য প্রভৃতি ।


 দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

 আট/দশটি বাক্যে উত্তর দাও:


 1. টীকা লেখো: অশোকস্তম্ভ

উত্তর: ভূমিকা: মৌর্যসম্রাট অশোকের রাজকীয় গরিমার প্রতীক হল তাঁর স্তম্ভটি, যা ইতিহাসে অশোকস্তম্ভ নামে সুপরিচিত।

 [a] প্রাপ্তিস্থান: এই স্তম্ভটি পাওয়া গেছে উত্তরপ্রদেশের সারনাথে। বর্তমানে এটি সারনাথ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

[b] বর্ণনা: স্তম্ভটির মাথায় পিঠোপিঠি নির্মিত চারটি সিংহ পাওয়া গেছে। স্তম্ভটি ওলটানো পদ্মের মতো দেখতে একটি বেদির ওপর রাখা। তার ওপর দেখা যায় অশোকচক্র। এই চক্রের বাঁদিকে ষাঁড় ও ডানদিকে ঘোড়ার মূর্তি দেখা যায় |

[c] জাতীয় প্রতীকরূপে গ্রহণ: অশোকস্তম্ভটি ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় প্রতীকরূপে গ্রহণ করা হয়েছে।


 2. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কথা সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তর: ভূমিকা: মৌর্য বংশের আগে মগধের সিংহাসনে ছিলেন নন্দবংশীয় রাজারা। চাণক্য নামে জনৈক পণ্ডিত নন্দ রাজাদের রোষের মুখে পড়েন । তাই তিনি নন্দরাজাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন |

[a] নন্দরাজাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: চাণক্যের সাহায্যে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নন্দরাজাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে শেষ নন্দরাজা ধননন্দ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কাছে পরাজিত হন। এরপর মগধে মৌর্যদের শাসন শুরু হয় ।

[b] সাম্রাজ্য বিস্তার: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মগধ সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছিলেন। সিন্ধু উপত্যকার দখল নিয়ে গ্রিকদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলিউকাস নিকেটরের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বিবাদ মিটে যায় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তির মাধ্যমে। এর ফলে তার সাম্রাজ্যের আরও বিস্তার ঘটে।

[c] প্রথম মৌর্য সম্রাট: ভারতীয় উপমহাদেশে মৌর্য সাম্রাজ্যই ছিল প্রথম সাম্রাজ্য এবং চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন সেই সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট। 


3. মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা' গ্রন্থ থেকে পাটলিপুত্র নগর সম্পর্কে কী জানা যায় ?

 উত্তর: ভূমিকা: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে গ্রিক শাসক সেলিউকাসের রাষ্ট্রদূতরূপে মেগাস্থিনিস পাটলিপুত্রে আসেন। এই সময় ভারত সম্পর্কে তিনি তাঁর বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন ‘ইন্ডিকা' নামক গ্রন্থে। যদিও মূল গ্রন্থটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, তবে গ্রন্থটির নানা অংশ পাওয়া গেছে পরবর্তী গ্রিক ও রোমান লেখকদের বিবরণে। এগুলি থেকে ভারতীয় ইতিহাসের নানা তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল পাটলিপুত্র নগর সম্পর্কিত তথ্য।

[a] পাটলিপুত্রের নগর পরিচালক: মেগাস্থিনিসের রচনা থেকে জানা যায় পাটলিপুত্র নগরের শাসনব্যবস্থার দেখভাল করতেন নগর পরিচালকদের ছয়টি দল। প্রতিটি দলে ছিল পাঁচজন করে লোক।

 [b] নগর পরিচালকদের কাজ: নগর পরিচালকদের ছ টি দলই—[i] নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি দেখাশোনা করত। তারা মন্দির, বাজার ও বন্দরগুলির যত্ন নিত। [ii] তারা জিনিসপত্রের দাম ঠিক করে দিত। এ ছাড়া নগর পরিচালনার কাজে সাহায্য করত সেনাবাহিনী।

 [c] গুরুত্ব: গ্রিক হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশের ভাষা ও সমাজ পুরোপুরি বুঝতে পারেননি মেগাস্থিনিস | সেকারণে তাঁর লেখায় অনেক ভুল আছে। তবুও মৌর্য আমলের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


 4. শক-সাতবাহন লড়াই সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তর: ভূমিকা: মৌর্য-পরবর্তীকালে দাক্ষিণাত্য ও দক্ষিণ ভারতে সাতবাহন শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অন্যদিকে দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিমাংশে ও গুজরাট অঞ্চলে ছিল শকদের শাসন | সাতবাহনদের আমলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল শক-সাতবাহনদের লড়াই।

 [a] উদ্দেশ্য: শক-সাতবাহন লড়াইয়ের প্রধান কারণ ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। উভয় শক্তিই বিশেষ কতকগুলি এলাকায় দখল কায়েম করতে চেয়েছিল। এমনই এলাকা ছিল পূর্ব ও পশ্চিম মালব । পূর্ব মালবের কোসা এলাকায় ছিল হিরের খনি এবং পশ্চিম মালবের ওপর দিয়ে চলত সমুদ্রবাণিজ্য। এ ছাড়া দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম উপকূলের ওপর দিয়ে রোম-ভারত বাণিজ্য চলত।

 [b] শক-সাতবাহন লড়াই: সাতবাহন রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণির সঙ্গে শক ক্ষত্রপ নহপানের যুদ্ধ হয়েছিল । এ ছাড়া অন্য একটি শক-ক্ষত্রপ গোষ্ঠীর সঙ্গেও সাতবাহনদের লড়াই বেধেছিল। রুদ্রদামন ছিলেন সেই গোষ্ঠীর প্রধান শাসক ।

 [c] ফলাফল: এই লড়াইয়ের ফলে ধীরে ধীরে দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন শাসনের অবসান ঘটে এবং পরিবর্তে গঠিত হয় কতকগুলি ছোটো ছোটো রাজ্য।


 5. কুষাণ সম্রাটরা যে নিজেদের দেবতার সমান মনে করতেন তা কীভাবে বোঝা যায় ? 

উত্তর: ভূমিকা: কুষাণ সম্রাটরা প্রজাদের কাছে তাঁদের রাজকীয় ক্ষমতা বোঝানোর জন্য নিজেদেরকে দেবতাদের সমান বলে তুলে ধরতেন এবং এর জন্য তারা নানা উদ্যোগ নিতেন। কুষাণ সম্রাটরা যে নিজেদের দেবতার সমান বলে দাবি করতেন তা বোঝা যায় নিম্নরূপে [a] চিনের প্রভাব: কুষাণরা আসলে চিন থেকে এসেছিলেন। প্রাচীন চিনের সম্রাটরা নিজেদের ‘দেবতার পুত্র' রূপে অভিহিত করতেন। এই চিনা সম্রাটদের অনুকরণে কুষাণ সম্রাটরা নিজেদের ‘দেবপুত্র’ অর্থাৎ দেবতার পুত্ররূপে অভিহিত করতেন।

 [b] অন্যান্য উপাধি: কুষাণ সম্রাট বিম কদফিসেস ‘দমঅর্ত' বা ‘বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কর্তা' উপাধি নিয়েছিলেন। এ ছাড়া কনিষ্কের উপাধি ছিল ‘মহারাজা রাজাধিরাজ দেবপুত্র শাহী’ |

[c] জ্যোতির্বলয়: কুষাণ মুদ্রায় খোদাই করা রাজার মূর্তিতে দেখা যায় যে সম্রাটের মাথার পিছনে একরকমের জ্যোতির্বলয় রয়েছে। এই ধরনের জ্যোতির্বলয় দেখা যায় দেবতাদের মূর্তির মাথার পিছনে ।

[d] দেবকুল প্রতিষ্ঠা: কুষাণ সম্রাটরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘দেবকুল' প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলি ছিল একধরনের মন্দির, যেখানে কুষাণ সম্রাটের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হত । মথুরায় এমনই একটি দেবকুল ছিল।


 6. সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। 

উত্তর: ভূমিকা: গুপ্তবংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত আনুমানিক ৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে গুপ্ত সিংহাসনে বসেন। এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারের নানা তথ্য পাওয়া যায় ।

 [a] সমুদ্রগুপ্তের উত্তর ভারত জয়: সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারত বা আর্যাবর্তের নয়জন রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। এইসব রাজ্যগুলি তিনি সরাসরি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

 [b] সমুদ্রগুপ্তের দাক্ষিণাত্য বিজয়: সমুদ্রগুপ্ত দক্ষিণ ভারতের বারোজন রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি তাদের রাজত্ব ফিরিয়ে দেন। এইভাবে তিনি সুদূর দক্ষিণে তামিলনাড়ুর উত্তর-পূর্ব অংশ পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।

[c] অরণ্য রাজ্যগুলির ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা: সমুদ্রগুপ্ত অরণ্য বা আটবিক রাজ্যগুলিতেও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এর ফলে পূর্বে রাঢ় থেকে পশ্চিমে গঙ্গা উপত্যকার ওপরের অংশ পর্যন্ত গুপ্তশাসন ছড়িয়ে পড়ে।

 এইভাবে প্রায় সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে সমুদ্রগুপ্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছিলেন।


 

No comments:

Post a Comment