নবম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো
👉 ( নবম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর )
একটি বাক্যে উত্তর দাও:
1. বৈদিক শিক্ষায় গুরুকে কী নামে ডাকা হত ?
উত্তর: বৈদিক শিক্ষায় গুরুকে আচার্য নামে ডাকা হত ।
2. নারী উপাধ্যায়কে কী নামে ডাকা হত ?
উত্তর: নারী উপাধ্যায়কে ‘উপাধ্যায়া' নামে ডাকা হত |
3. ‘সূর্যসিদ্ধান্ত' কার লেখা ?
উত্তর: ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ বরাহমিহিরের লেখা ।
4. ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা' নামক গ্রন্থটি কে লিখেছিলেন ?
উত্তর: বরাহমিহির ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ নামক গ্রন্থটি লিখেছিলেন।
5. ‘মুদ্রারাক্ষস' নাটকের বিষয়বস্তু কী ছিল?
উত্তর: ‘মুদ্রারাক্ষস’ নাটকের বিষয়বস্তু ছিল নন্দরাজা ধননন্দকে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের ক্ষমতালাভ।
6. সারনাথ স্তূপটি কোন্ আমলে নির্মিত হয়?
উত্তর: সারনাথ স্তূপটি নির্মিত হয় মৌর্য আমলে ।
7. মথুরা ভাস্কর্যে কোন্ পাথরের ব্যবহার বেশি দেখাযায় ?
উত্তর: মথুরা ভাস্কর্যে লাল চুনাপাথরের ব্যবহার বেশি দেখা যায়।
৪. মহাবলীপুরমের রথমন্দির কোন্ আমলে নির্মিত হয় ?
উত্তর: মহাবলীপুরমের রথমন্দির পল্লব আমলে নির্মিত হয় |
9. কীসের ভিত্তিতে তক্ষশিলা মহাবিহারে ছাত্রদের ভরতি নেওয়া হত ?
উত্তর: ধর্ম বা বর্ণ নয়, বরং যোগ্যতা যাচাই করে তক্ষশিলা মহাবিহারে ছাত্রদের ভরতি নেওয়া হত ।
10. ধর্মশাস্ত্রগুলি লেখার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উত্তর: ব্রাহ্মণরাই যে শ্রেষ্ঠ সেকথা নানাভাবে মনে করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ধর্মশাস্ত্রগুলি লেখা শুরু হয় |
11. পশ্চিমবঙ্গে আবিষ্কৃত সবথেকে বড়ো বৌদ্ধ প্রত্নস্থল কোটি ?
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত সবথেকে বড়ো বৌদ্ধ প্রত্নস্থল হল মোগলমারি বৌদ্ধবিহার।
12. জৈনরা কোন্ দুটি ভাষায় সাহিত্য লিখতেন ?
উত্তর: জৈনরা অর্ধ-মাগধী এবং প্রাকৃত এই দুই ভাষায় সাহিত্য লিখতেন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
দুতিনটি বাক্যে উত্তর দাও :
1. বৈদিক শিক্ষাকে গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থা বলা হত কেন ?
উত্তর: বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রকে গুরুগৃহে গিয়ে পড়াশোনা করতে হত। এক্ষেত্রে বৈদিক শিক্ষা ছিল ব্যক্তিগত, অর্থাৎ গুরু-শিষ্য সম্পর্ককেন্দ্রিক। তাই এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হত গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থা।
2. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বৌদ্ধ বিহারগুলির কী ভূমিকা ছিল ?
উত্তর: বৌদ্ধ বিহারগুলিকে কেন্দ্র করে এক নতুন ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি চালু হয়েছিল। ছাত্রদের এইসব বিহারে থেকে পড়াশোনা করতে হত। এখানে কৃষি, চিকিৎসা, রাজ্যশাসন প্রভৃতি বিষয়ে পড়াশোনা ছাড়াও তাদের তির ও তরবারি চালানো, কুস্তি ও নানা ধরনের খেলাধুলো শেখানো হত ।
3. বৌদ্ধ বিহারগুলিতে ধর্মীয় বিষয় ছাড়া কোন্ কোন্ বিষয় পড়তে হত?
উত্তর: বৌদ্ধ বিহারগুলিতে ধর্মীয় বিষয় ছাড়া তির ও তরবারি চালানো, কুস্তি ও নানা ধরনের খেলাধুলো শিখতে হত। এ ছাড়া শ্রমণ ও ভিক্ষুদের সুতোকাটা ও কাপড়বোনা শিখতে হত।
4. গুপ্ত আমলের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ বিষয়েরওপর জোর দেওয়া হত ?
উত্তর: গুপ্ত আমলের শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈদিক সাহিত্য, লিপি ও নানা ভাষাশিক্ষা ছিল পাঠ্যবিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ । এ ছাড়া ছাত্রদের কাব্য, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, নাটক, আইন, রাজনীতি ও যুদ্ধবিদ্যাও শিখতে হত। এসময় পেশাভিত্তিক শিক্ষার ওপরও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হত।
5. আচার্য কাকে বলে ?
উত্তর: বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত গুরুকে বলা হত ‘আচার্য’। তাঁর বাড়িতে থেকেই ছাত্ররা পড়াশোনা করত, ছাত্রদের খাওয়াপরার দায়ভারও তিনিই বহন করতেন। তিনি বিনা বেতনে ছাত্রদের পড়াতেন, বিনিময়ে ছাত্ররা আচার্যকে নানা কাজে সহায়তা করত।
6. উপাধ্যায় কাদের বলা হত?
উত্তর: বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় যারা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষাদানের দায়িত্বে থাকতেন, তাদের বলা হত উপাধ্যায় | এঁরা ছাত্রদের পড়ানোর বিনিময়ে বেতন নিতেন। বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় উপাধ্যায়দের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি |
7. বিদ্যারম্ভ কী ?
উত্তর: গুপ্তোত্তরকালে একটি শিশুর পাঁচ বছর বয়সে হাতেখড়ির মতো একটি অনুষ্ঠান হত। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই তার অক্ষর পরিচয় শুরু হত। এটি ইতিহাসে বিদ্যারম্ভ (বিদ্যা + আরম্ভ) নামে পরিচিত।
৪. তক্ষশিলা মহাবিহারে পরীক্ষার পদ্ধতি কেমন ছিল?
উত্তর: তক্ষশিলা মহাবিহারে পরীক্ষার পদ্ধতি বেশ সহজ ছিল। তবে মনে হয় লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। সম্ভবত মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে এখানে শিক্ষার্থীর জ্ঞান যাচাই করা হত।
9. প্রাকৃত ভাষা বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই ভাষা নানাভাবে উচ্চারিত হতে শুরু হয়। সেই ভাষাগুলোকে প্রাকৃত বলা হত। প্রকৃত বা আসল থেকে প্রাকৃত কথাটা এসেছে।
10. পালি ভাষা কী ?
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ ঋগবেদের ভাষা ছন্দস্ থেকে ভেঙে তৈরি হল পালি ভাষা | সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা হয়ে ওঠে এই পালি ভাষা। বৌদ্ধ সাহিত্যগুলিও পালি ভাষায় রচিত হয় |
11. খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে ব্যাবসাবাণিজ্য বাড়ার ফলাফল কী হয়েছিল ?
উত্তর: ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে ব্যাবসাবাণিজ্য বাড়তে থাকার ফলে সমাজে বৈশ্যদের মর্যাদা বেড়ে যায়। অন্যদিকে নতুন নগরগুলিতে জাতি ও বর্ণের কড়াকড়ি কমতে থাকে। তাই পুরোনো ও প্রচলিত জাতি ও বর্ণব্যবস্থা ব্যাখ্যা করে সংস্কৃত ভাষায় ধর্মশাস্ত্র লেখা শুরু হয়। ব্রাহ্মণরাই যে শ্রেষ্ঠ, তা এই ধর্মশাস্ত্রগুলিতে নানাভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হত।
12. খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও গ্রহনক্ষত্র ব্যাপারে লেখালেখি কেন শুরু হয় ?
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাবসাবাণিজ্য বাড়ার ফলে নানা অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। বিশেষ করে নদী ও সমুদ্র পেরোনোর সময় গ্রহনক্ষত্রের গতিবিধি সম্পর্কে জানা আবশ্যিক হয়ে ওঠে। তাই এসময় গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও গ্রহনক্ষত্রের ব্যাপারে লেখালেখি শুরু হয়।
13. প্রাচীন ভারতে ব্যাকরণের উৎপত্তি হয় কেন ?
উত্তর: প্রাচীন ভারতে বিশেষ করে বৈদিক সমাজে সকলে ঋগবেদের ভাষায় কথা বলত | কিন্তু ধীরে ধীরে এই ভাষায় আঞ্চলিক প্রভাব পড়ার ফলে নানা আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব হয়। তখন এইসব ভাষা এবং তার ব্যবহারকে নিয়মে বাঁধার দরকার হয় । তার জন্যই ব্যাকরণের উৎপত্তি হয়।
14. মহাভারতকে পঞ্চমবেদ বলা হয়েছে কেন ?
উত্তর: ভারতের দুই অমর মহাকাব্যের অন্যতম হল মহাভারত। প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের ধারণা ছিল যে, মহাভারতের চর্চা করলে বেদপাঠের মতোই সুফল পাওয়া যাবে। তাই মহাভারতকে বলা হয়েছে পঞ্চমবেদ ।
15. তামিল সাহিত্যকে সঙ্গম সাহিত্য বলে কেন ?
উত্তর: খ্রিস্টীয় ৩০০ অব্দের পরবর্তীকালে দক্ষিণ ভারতে তামিল ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু হয়। জানা যায় যে, মাদুরাই নগরীতে তিনটি সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল, যা সঙ্গম নামে পরিচিত। এই সঙ্গমগুলিতে তামিল সাহিত্য ঐক্যবদ্ধ রূপ পায় বলে তা সঙ্গম সাহিত্য নামে পরিচিত ।
16. গুহাবাস কী?
উত্তর: মৌর্য সম্রাট অশোক ও তাঁর পরবর্তী মৌর্য সম্রাটরা আজীবিকদের জন্য পাহাড় কেটে কৃত্রিম গুহা বানাতেন | এগুলি গুহাবাস নামে পরিচিত। এইসব গুহায় সন্ন্যাসীরা বসবাস করতেন।
17. সাংখ্যায়ন বা সংখ্যায়ন কী?
উত্তর: ভারতীয় উপমহাদেশে গণিতচর্চার ব্যাপক প্রচলন ছিল এবং জৈন ও বৌদ্ধ পণ্ডিতরাও গণিতচর্চা করতেন । বৌদ্ধদের গণিতবিজ্ঞান বিষয়টি তৈরি হয়েছিল পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি নিয়ে। জৈনরা এই গণিতবিদ্যাকে বলতেন সংখ্যায়ন বা সাংখ্যায়ন ।
18. কম্বনের রামায়ণের বিশেষত্ব কী ছিল ?
উত্তর: তামিল কবি কম্বন ‘রামায়ণ’ অনুবাদ করেছিলেন। তিনি এই রামায়ণে বহু নতুন গল্প যোগ করেছিলেন। এই গল্পে রামের চরিত্র থেকে রাবণের চরিত্র বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
19. তোরণ কী?
উত্তর: মৌর্য আমল থেকে স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসের ক্ষেত্রে স্তূপগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই স্তূপগুলি ছিল অর্ধগোলাকার মাটির ঢিবির মতো। এর চারদিকে থাকত চারটি বড়ো দরজা । এগুলিই তোরণ নামে পরিচিত ।
20. শারীরবিদ্যা ও শল্যচিকিৎসার চর্চা ধীরে ধীরে কমে গেল কেন?
উত্তর: শুশ্রুত সংহিতায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল শবব্যবচ্ছেদ বা মড়াকাটা, অথচ ধর্মশাস্ত্রের মতে শব বা মৃতদেহ ছোঁয়াই নিষিদ্ধ। তাই মড়াকাটা নিষিদ্ধের কারণে শারীরবিদ্যা বা শল্যচিকিৎসার চর্চা ধীরে ধীরে কমে গেল ।
21. বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বরাহমিহির গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: প্রাচীন ভারতের একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন বরাহমিহির। তাঁর লেখা ‘সূর্যসিদ্ধান্ত ও ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা' বই দুটিতে বরাহমিহির বহু পুরোনো ধারণার বদল ঘটিয়েছিলেন । তিনি তাঁর লেখায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তার আগাম লক্ষণ কী কী, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আবার ভূমিকম্পের আগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক লক্ষণবিষয়ক আলোচনাও বরাহমিহিরের লেখায় পাওয়া যায়।
22. গান্ধার শিল্পরীতি কী?
উত্তর: শক কুষাণ আমলের এক বিখ্যাত শিল্পরীতি ছিল গান্ধার শিল্পরীতি। বুদ্ধের জীবন ও বৌদ্ধধর্মের নানা বিষয় ছিল এই শিল্পের মূলকথা। এই ভাস্কর্যশিল্পে গ্রিক ও রোমান প্রভাব দেখা যায়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
চার পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও :
1. গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ?
উত্তর: বৈদিক যুগের শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রদের গুরুগৃহে থেকে পড়াশোনা করতে হত। তাই এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হয় গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থা । বৈশিষ্ট্য: এই শিক্ষা দেওয়া হত মুখে মুখে। গুরু মুখে মুখে যা আওড়াতেন, তা শুনে শুনে ছাত্রদের মনে রাখতে হত। আশ্রমকেন্দ্রিক বা গুরুগৃহকেন্দ্রিক এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল গুরু-শিষ্য সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল। -
2. খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ভারতীয় উপমহাদেশে কোন্ কোন্ বিষয় পড়ানো হত ?
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক নাগাদ ভারতীয় উপমহাদেশে নানা বিষয় পড়ানো হত। পাঠ্যবিষয়গুলির মধ্যে বেদ, ছন্দ, কাব্য, ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিষ, গণিত, রামায়ণ প্রভৃতি বিষয় পড়তে হত। এগুলি মূলত ব্রাহ্মণরাই পড়তেন। এ ছাড়া ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধ ও শিকার, মুদ্রা ও নথিপত্র পরীক্ষা বিষয়ে এবং বৈশ্য ও শূদ্রদের ব্যাবসাবাণিজ্য, কৃষি ও পশুপালন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হত।
3. জাতিভিত্তিক পড়াশোনা বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগে ও পরবর্তীকালে শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে উঠেছিল জাতিভিত্তিক | জাতিভিত্তিক পড়াশোনা: জাতিভিত্তিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের প্রায় সকল বিষয়েই চর্চা করতে হত। ক্ষত্রিয়রা যেহেতু শাসনকার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই তাঁদের আলাদাভাবে যুদ্ধ, শিকার, মুদ্রা ও নথিপত্র পরীক্ষা প্রভৃতি শিখতে হত। বৈশ্য ও শূদ্রদের ব্যাবসাবাণিজ্য, কৃষি ও পশুপালন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হত ।
4. নালন্দা মহাবিহারের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: প্রাচীন ভারতের একটি অন্যতম শিক্ষাকেন্দ্র ছিল নালন্দা মহাবিহার । নালন্দার শিক্ষাব্যবস্থা: গুপ্ত রাজাদের আমলে প্রতিষ্ঠিত নালন্দা মহাবিহারে যে-কোনো ধর্ম ও বর্ণের ছাত্ররা পড়ার সুযোগ পেত। তবে তাদের কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে এখানে ভরতি হতে হত এবং এখানে থাকা, খাওয়া ও পড়ার কোনো খরচ লাগত না। লেখাপড়ার শেষে ছাত্রদের পরীক্ষা দিতে হত। নালন্দায় চিন, তিব্বত, কোরিয়া, সুমাত্রা ও জাভা থেকে ছাত্ররা পড়তে আসত এবং এখানে বহু বিখ্যাত পণ্ডিত পড়াতেন |
5. উপাধ্যায়ের কাজ কী ছিল ?
উত্তর: বৈদিক শিক্ষার সঙ্গে যে দুজন গুরু যুক্ত ছিলেন তাঁদের অন্যতম হলেন উপাধ্যায় । উপাধ্যায়দের কাজ: উপাধ্যায়রা নির্দিষ্ট এক-একটি বিষয় পড়াতেন এবং পড়ানোর জন্য তাঁরা বেতন নিতেন। বৌদ্ধ শিক্ষায় উপাধ্যায়দের গুরুত্ব ছিল বেশি। তাঁরা বৌদ্ধ বিহারগুলিতে থেকেই পড়াতেন।
6. বৈদিক যুগে কারিগরি শিক্ষার স্বরূপ কেমন ছিল ?
উত্তর: বৈদিক সাহিত্য থেকে সে আমলের কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।বৈদিক যুগে কারিগরি শিক্ষা: বৈদিক যুগে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুর ভূমিকা ছিল প্রধান। অভিভাবকদের অনুমতি নেওয়ার পর ছাত্ররা কারিগর গুরুর কাছে যেত এবং তাঁর বাড়িতেই তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা হত । ছাত্ররা গুরুর কর্মশালাতেই কাজ শিখত। কাজ শেখার পর অনেকেই গুরুর কর্মশালাতেই কাজ করত আবার কেউ কেউ গুরুর অনুমতি নিয়ে নিজের আলাদা কর্মশালা তৈরি করত। এভাবেই তারা পেশাদার কারিগর হয়ে উঠত।
7. চিকিৎসাশাস্ত্রকে উপবেদ বলা হত কেন ?
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে খ্রিস্টীয় ৩০০ অব্দের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে চিকিৎসা সম্পর্কে নানা গ্রন্থ রচিত হয় | ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ সাহিত্যেও এসময়ের নানা রকম ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের কথা পাওয়া যায়। এসময়ের দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘চরক সংহিতা' ও ‘শুশ্রুত সংহিতা”। তাই এই সময়কার সমাজে চিকিৎসা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে চিকিৎসাশাস্ত্রকে উপবেদ বলা হত ।
৪. ভারতীয় উপমহাদেশের সাহিত্যচর্চার বিবরণ দাও ।
উত্তর: ভারতীয় উপমহাদেশে সাহিত্যচর্চার নানা ধারা দেখা গিয়েছিল। [a] নানা ভাষার উদ্ভব : ঋগবেদের ভাষা ছন্দস্ বা ছান্দস্ থেকে নানা নতুন ভাষা তৈরি হতে থাকে।
[b] আঞ্চলিক সাহিত্য: ভারতীয় উপমহাদেশের নানা অঞ্চলে প্রাকৃত, পালি ও সংস্কৃত ভাষায় নানা ধরনের সাহিত্য রচিত হয়েছিল।
[c] স্মৃতিশাস্ত্র : এসময় স্মৃতিশাস্ত্র নামে একধরনের সাহিত্য রচনা শুরু হয়, যেগুলিতে সম্পত্তির ওপর মানুষের অধিকার এবং মানবজীবনের নানা কথা রয়েছে।
[d] ধর্মশাস্ত্র: পুরোনো জাতি ও ধর্মব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করে সংস্কৃত ভাষায় ধর্মশাস্ত্র লেখার কাজও শুরু হয় এসময় ।
9. রামায়ণ ও মহাভারতকে ভারতের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য বলা হয় কেন ?
উত্তর: ভারতের দুই অমর মহাকাব্য হল ‘রামায়ণ' ও ‘মহাভারত’। এগুলিকে ভারতের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যরূপে অভিহিত করা হয়, কেননা মহাকাব্য দুটির সাহিত্যমূল্য অপরিসীম | মহাকাব্য দুটিকে ভারতের শ্রেষ্ট সাহিত্য বলার কারণ— [a] সমাজ, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক তথ্য: রামায়ণ ও মহাভারতে প্রাচীন ভারতের সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির সম্যক পরিচয় পাওয়া যায় ।
[b] অন্যান্য তথ্য: পারিবারিক বিরোধ, আবেগ, ভবিষ্যতের নানা পরিকল্পনার কথা, এই মহাকাব্য দুটিতে কাহিনির মাধ্যমে পরিবেশন করা হয়েছে ।
10. গুপ্তযুগের ঐতিহাসিক নাট্য-সাহিত্যের পরিচয় দাও।
উত্তর: গুপ্তযুগে সাহিত্যচর্চার মান ছিল অত্যন্ত উন্নত। এই যুগে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি নাটক, অভিধান ও বিজ্ঞানবিষয়ক নানা লেখার কথা জানা যায় |
[a] ঐতিহাসিক নাট্য-সাহিত্য: গুপ্তযুগে রচিত হয় বিশাখদত্তের বিখ্যাত নাটক মুদ্রারাক্ষস, যার বিষয়বস্তু হল নন্দরাজ ধননন্দকে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন লাভ। এই সময়ই বিশাখদত্তের লেখা অপর একটি বিখ্যাত নাটক দেবীচন্দ্রগুপ্তম, যার বিষয়বস্তু গুপ্তবংশের রাজা রামগুপ্ত ও চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে শকরাজার যুদ্ধ।
[ b] গুরুত্ব: ঐতিহাসিক নাট্য-সাহিত্য গুপ্তযুগের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে নানাভাবে সাহায্য করে।
11. প্রাচীন ভারতে পরিবেশ-চিন্তা কেমন ছিল ?
উত্তর: প্রাচীন ভারতে পরিবেশ-চিন্তা অত্যন্ত উন্নত ছিল।
[a] বিষয়বস্তু: প্রাচীন ভারতে পরিবেশ-চিন্তার মূল বিষয় ছিল বন ও বনের পরিবেশ, পশুপাখি এবং গাছপালা |
[b] বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ : প্রাচীন ভারতে বনাঞ্চলের ক্ষতি করলে কড়া শাস্তির বিধান দেওয়া হত । তা ছাড়া বনজঙ্গল ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত।
[c] বৃক্ষচ্ছেদন রোধ: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে কৃষিকাজের পাশাপাশি নগরের উন্নতি ঘটলে জঙ্গল বা অরণ্য কাটা শুরু হয় । তাই বিভিন্ন সময়ে গাছ বাঁচানোর নানা উপায় হিসেবে বৃক্ষপূজার প্রচলন হয় এবং বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করা হয় |
12. অজন্তা গুহাচিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তর : গুপ্ত আমলের তথা ভারতীয় চিত্রকলার অনুপম নিদর্শন হল অজন্তা গুহার দেয়ালে আঁকা চিত্রকলা | অজন্তা গুহাচিত্রের বৈশিষ্ট্যাবলি:
[a] অজন্তা চিত্রকলায় বিভিন্ন গাছগাছড়া, পাথর ও মাটি দিয়ে তৈরি রং অর্থাৎ প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা হয়েছিল।
[b] এই গুহাচিত্রের বিষয়বস্তু ছিল বুদ্ধ ও বুদ্ধের পূর্বজীবনের নানা দৃশ্য, জাতকের কাহিনি, সেকালের সমাজের নানা কথা।
[c] অজন্তা চিত্রকলা ভারতীয় তথা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিত্রকলার মধ্যে অন্যতম ।
13. পল্লব আমলের ভাস্কর্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তর: দক্ষিণ ভারতে ভাস্কর্যশিল্পে স্থানীয় ক্ষেত্রে যে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার চরম পরিণতি দেখা যায় পল্লব ভাস্কর্যে।
[a] পল্লব ভাস্কর্যের নিদর্শন: পল্লব ভাস্কর্যের অনুপম নিদর্শন পাওয়া যায় কৈলাসনাথ মন্দিরের রামায়ণের প্যানেলে, দশাবতার মন্দিরের ভাস্কর্যে এবং মহিষমর্দিনী মণ্ডপে। এ ছাড়া মহাবলীপুরমের রথমন্দির এবং গুহামন্দির থেকেও পল্লব আমলের ভাস্কর্যশিল্পের নানা কথা জানা যায় ।
[ b] বৈশিষ্ট্য: পল্লব আমলে পাহাড়কে কেন্দ্র করে ....... ভাস্কর্যশিল্প সৃষ্টি করা হয়েছিল। এইসব ভাস্কর্যে কেবল ধর্মীয় বিষয় নয়, মানুষ, জীবজন্তু, দেবতা, সন্ন্যাসী, প্রাকৃতিক দৃশ্য সবই স্থান পেয়েছে।
14. চৈত্য কী?
উত্তর: প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন হল চৈত্য। সরাসরি পাহাড় কেটে গুহাবাসরূপে এইসব চৈত্য বানানো হত। এগুলি ছিল আয়তাকার এবং এর শেষপ্রান্তে উপাসনার জন্য রাখা হত স্তূপ। নাসিক, পিতলখোরা, কার্লে প্রভৃতি স্থানে এইসব চৈত্য বানানো হয়েছিল ।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
আট দশটি বাক্যে উত্তর দাও :
1. প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়গুলি আলোচনা করো।
উত্তর: প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়গুলি হল নিম্নরূপ—
[a] বৈদিক শিক্ষার বিষয়: বৈদিক শিক্ষা ছিল মূলত গুরু শিষ্যকেন্দ্রিক এবং এসময় জাতিভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ছিল। এই শিক্ষায় বেদের পাশাপাশি ছন্দ, কাব্য, ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিষ, গণিত, রসায়ন প্রভৃতি বিষয় পড়ানো হত ।
[b] খ্রি.পূ. ষষ্ঠ শতকের শিক্ষার বিষয়: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বিহারকেন্দ্রিক বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় কৃষি, চিকিৎসা, রাজ্যশাসন প্রভৃতি বিষয় পড়ানো হত। এ ছাড়া এগুলিতে যেমন তির ও তরবারি চালানো, কুস্তি সহ নানা ধরনের খেলাধুলো শেখানো হত, তেমনই শ্রমণ ও ভিক্ষুদের শিখতে হত সুতোকাটা, কাপড়বোনা প্রভৃতি কাজ ।
[c] খ্রি.পূ. চতুর্থ শতকের শিক্ষার বিষয়: খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে ব্রাহ্মণদের বেদ, ছন্দ, কাব্য, ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিষ, গণিত, রসায়ন প্রভৃতি পড়ানো হত। এসময় ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধ ও শিকার এবং নথিপত্র পরীক্ষা, বৈশ্য ও শূদ্রদের ব্যাবসা, কৃষি ও পশুপালন বিষয়ে এবং কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে পড়তে হত।
[d] গুপ্তযুগের শিক্ষার বিষয়: গুপ্তযুগের পাঠ্যবিষয়ের মধ্যে লিপি, ভাষা ও বৈদিক সাহিত্য ছিল প্রধান। তবে ছাত্রদের কাব্য, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, নাটক, আইন, রাজনীতি ও যুদ্ধবিদ্যাও পড়তে হত।"
[e] গুপ্তোত্তরকালর শিক্ষার বিষয়: গুপ্তোত্তরকালেও গুপ্তযুগের মতো শিক্ষার বিষয় প্রচলিত ছিল। এ ছাড়া এই সময় পাঁচ বছর বয়সে 'বিদ্যারম্ভ' নামক হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে একটি পাঠ্যবই ও গণিত পড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষাদান শুরু হত।
2. তক্ষশিলা মহাবিহার সম্পর্কে কী জানো তা সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: ভূমিকা: প্রাচীন ভারতে তক্ষশিলা ছিল গান্ধার মহাজনপদের রাজধানী। আর এখানেই অবস্থিত ছিল সেকালের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তক্ষশিলা মহাবিহার ।
[a] শিক্ষার গতিপ্রকৃতি: দেশের নানা এলাকা থেকে ছাত্ররা উচ্চশিক্ষার জন্য তক্ষশিলায় আসত। ষোলো থেকে কুড়ি বছরের ছাত্ররা সেখানে ভরতি হতে পারত এবং মোটামুটি আট বছর ধরে লেখাপড়া চলত। ভরতির ক্ষেত্রে ছাত্রদের যোগ্যতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হত।
[b] পাঠ্যবিষয়: তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিষয় পড়ানো হত সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চতুর্বেদ, ইতিহাস, পুরাণ, দর্শন, চিকিৎসাবিদ্যা, হিসাবশাস্ত্র, যুদ্ধবিদ্যা প্রভৃতি ।
[c] পৃষ্ঠপোষকতা: তক্ষশিলা মহাবিহার চালানোর জন্য রাজা ও ব্যবসায়ীরা টাকাপয়সা এবং জমি দান করতেন।
[d] পরীক্ষাব্যবস্থা: তক্ষশিলায় মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান যাচাই করা হত।
[e] বিখ্যাত শিক্ষার্থী: এই মহাবিহারের কয়েকজন বিখ্যাত শিক্ষার্থী ছিলেন পাণিনি, জীবক, চাণক্য প্রমুখ ।
4. প্রাচীন ভারতীয় লিপি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ৷
উত্তর: ভূমিকা: মানুষের মনের ভাব প্রকাশের বাহন তার ভাষা । আর এই ভাষাকে লিখিত রূপ দেওয়ার জন্য লিপি বা বর্ণের কিংবা বর্ণমালার সাহায্য নিতে হয়। তাই প্রাচীনকাল থেকে ভারতে সাহিত্যের ক্ষেত্রে লিপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
প্রাচীন ভারতীয় লিপি: ভারতীয় উপমহাদেশে মূলত দু ধরনের লিপির প্রচলন ছিল। এগুলি হল ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী। ব্রাহ্মী লেখা হত বাঁদিক থেকে ডানদিকে, আর খরোষ্ঠী লেখা হত ডানদিক থেকে বাঁদিকে। আর্যাবর্ত বা উত্তর ভারতে এই ব্রাহ্মী লিপি থেকেই দেবনাগরী লিপির উদ্ভব হয় | সংস্কৃত সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে এই লিপির ব্যবহার দেখা যায় | ধর্মীয় কাজেও ব্রাহ্মণ-পুরোহিতরা এই লিপি ব্যবহার করতেন। ভারতীয় উপমহাদেশে মৌর্য সম্রাট অশোকের লেখমালা ব্রাহ্মী, খরোষ্ঠী, গ্রিক ও আরামীয় লিপিতে রচিত। তবে ধীরে ধীরে এইসব লিপির ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন দেখা যায় |
5. প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তর: ভূমিকা: প্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত গ্রন্থ রচিত হতে থাকে।
[a] ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধদের ভূমিকা: ব্রাক্ষ্মণ ও বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা তাঁদের নানা লেখায় ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের উল্লেখ করেছেন | চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক দুটি গুরুত্বপূর্ণ বই হল ‘চরক সংহিতা” ও ‘শুশ্রুত সংহিতা” | চিকিৎসার গুরুত্বের কারণেই প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাশাস্ত্রকে বলা হত ‘উপবেদ' |
[b] গুপ্তযুগের চিকিৎসাশাস্ত্র: গুপ্ত আমলেও চিকিৎসা বিষয়ক বই লেখা হত । এইসব বইয়ের অন্যতম লেখক ছিলেন বাগভট।
[c] পশুচিকিৎসা: গুপ্ত ও গুপ্তোত্তরকালে পশুচিকিৎসা সম্পর্কিত বইও লেখা হতে থাকে।
[d] চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চায় সমস্যা: সমাজে জাতিভেদ প্রথার কঠোরতার ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চায় নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। প্রচলিত বর্ণাশ্রম প্রথার সঙ্গে চিকিৎসাবিদ্যার বিরোধিতা তৈরি হয় ।
6. প্রাচীন ভারতে খনি ও ধাতুবিজ্ঞান চর্চার অবস্থা কেমন ছিল ?
উত্তর: ভূমিকা: প্রাচীন ভারতে খনি ও ধাতুবিজ্ঞান চর্চা যথেষ্ট উন্নত ছিল। কেননা এই সময়কালের নানা ধাতব অস্ত্রশস্ত্র, মুদ্রা, গয়না ও মূর্তি এর প্রমাণ ।
[a] ধাতুবিজ্ঞান চর্চার উদাহরণ: প্রাচীন ভারতে ধাতুবিজ্ঞান চর্চা যথেষ্ট উন্নত ছিল । তার সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ গুপ্তরাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে নির্মিত মেহেরৌলি লৌহস্তম্ভ, যাতে আজও মরচে পড়েনি ।
[b] ধাতুবিজ্ঞান সম্পর্কিত লেখাপত্রের অভাব: তবে ধাতুবিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাচীন ভারতে তেমন কোনো লেখাপত্র পাওয়া যায়নি |
[c] রসায়নের প্রভাব: যেহেতু ধাতু গলানোর কাজ রসায়নশাস্ত্রের জ্ঞান ছাড়া সম্ভব নয়, সেকারণেও রসায়নশাস্ত্র চর্চার ওপর এসময় গুরুত্ব দেওয়া হত |
[d] ঔষধ, সুগন্ধি দ্রব্য, খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে প্রভাব: বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতেও রসায়ন বিজ্ঞানের ব্যবহার হত। এ ছাড়া সুগন্ধি দ্রব্য ও খাদ্য তৈরিতেও রসায়ন বিজ্ঞানের ব্যবহার ছিল।
Beautiful
ReplyDeleteNah I didn't get one question common in my 100 num question which my tutor took I was screwed (strict)
ReplyDelete