ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর পঞ্চম অধ্যায় ষষ্ঠ শ্রেণী সহায়িকা || Class 6th History Questions And Answers Chapter-45( A-Z ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 12 September 2022

ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর পঞ্চম অধ্যায় ষষ্ঠ শ্রেণী সহায়িকা || Class 6th History Questions And Answers Chapter-45( A-Z )

 

ইতিহাস 
প্রশ্ন উত্তর



ষষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো


একটি বাক্যে উত্তর দাও: প্রতিটি প্রশ্নের মান -১

 1. শাসকদের নামে কোন্ এলাকা পরিচিত হত ?

 উত্তর: শাসকদের নামে জনপদগুলি পরিচিত হত ।


 2. শেষপর্যন্ত কোন্ মহাজনপদটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে? 

উত্তর: শেষপর্যন্ত মগধ মহাজনপদটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।


 3. মগধ মহাজনপদে কোন্ কোন্ রাজবংশ রাজত্ব করেছিল ?

 উত্তর: মগধ মহাজনপদে হর্যঙ্ক, শিশুনাগ, নন্দ ও পরে মৌর্য রাজবংশ রাজত্ব করেছিল।


 4. কার আমলে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয় ? 

উত্তর: মৌর্য সম্রাট অশোকের আমলে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়।


5. 'ত্রিপিটক' কোন ভাষায় রচিত ?

 উত্তর: 'রিপিটক' পালি ভাষায় রচিত। 


6. মহাযান কাদের বলা হয় ?

 উত্তর: বৌদ্ধধর্মে যাঁরা মূর্তিপুজো করতেন তাঁদের মহাযান বলা হয়।


 7. তপস্যা করার পর মহাবীর কী নামে পরিচিত হন? 

উত্তর: তপস্যা করার পর মহাবীর কেবলিন নামে পরিচিত হন।


 ৪. জৈন ধর্মসম্প্রদায় দুটি কী কী? 

উত্তর: দুটি জৈন সম্প্রদায় হল শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর।


 9. দুটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় কী কী? 

উত্তর: দুটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় হল হীনযান ও মহাযান |


 10. জৈনধর্মের মূল উপদেশগুলি কয়টি ভাগে বিভক্ত ?

 উত্তর: জৈনধর্মের মূল উপদেশগুলি ১২টি ভাগে বিভক্ত । 


11. তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতিতে কে সভাপতিত্ব করেন ?

 উত্তর: তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতিতে মোগলিপুত্ত তিস্য সভাপতিত্ব করেন।


 12. জৈনরা কীসের ওপর জোর দিতেন ? 

উত্তর: জৈনরা সৎ বিশ্বাস, সৎ জ্ঞান ও সৎ আচরণের ওপর জোর দিতেন।


 13. গৌতম বুদ্ধ কোথায় মারা যান?

 উত্তর: গৌতম বুদ্ধ কুশিনগরে মারা যান।



 সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
 দু/তিনটি বাক্যে উত্তর দাও, প্রতিটি প্রশ্নের মান -২


 1. 'জনপদ' শব্দটি কীভাবে এসেছিল ? 

উত্তর: জনপদ শব্দটি 'জন' এবং 'পদ' শব্দ দুটির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। জন শব্দের অর্থ সাধারণ মানুষ বা জনগণ আর পদ শব্দের অর্থ পা। তাই জনগণ যেখানে পদ বা পা রাখেন তাই জনপদ। আরও সহজভাবে বলতে গেলে সাধারণ মানুষ যেখানে বসবাস করত তাকে বলা হত জনপদ।


 2. কীভাবে মহাজনপদের উত্থান ঘটে? 

উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ এক-একটি জনপদের ক্ষমতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কেননা এইসব জনপদের শাসকরা যুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের শাসন এলাকার সীমানা এ বাড়াতে থাকেন। এর ফলে ছোটো ছোটো জনপদগুলির কয়েকটি মহাজনপদে পরিণত হয়।


3. মহাজনপদগুলির চরিত্র কী ছিল?

 উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে গড়ে ওঠা মহাজনপদগুলি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে ব্যস্ত থাকত। তারা একে অন্যের রাজ্য জয় করে নিজেদের রাজ্যের সীমানা বাড়াতে চাইত। এ ছাড়া মহাজনপদগুলির অধিকাংশেই ছিল রাজার শাসন এবং কয়েকটির ছিল অরাজতান্ত্রিক শাসন । 


4. বেশিরভাগ মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য কী ছিল ?

 উত্তর: বেশিরভাগ মহাজনপদেই ছিল রাজার শাসন, তাই এগুলিকে বলা হয় রাজতান্ত্রিক রাজ্য। এই শাসনব্যবস্থায় সবার ওপরে ছিলেন রাজা।


 5. গণরাজ্য কী?

 উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশের মহাজনপদগুলির মধ্যে কয়েকটি ছিল অরাজতান্ত্রিক। এগুলিতে কোনো রাজার শাসন ছিল না, তাই এই রাজ্যগুলিকে বলা হয় গণরাজ্য | মল্ল ও বজ্জি বা বৃজি হল দুটি গুরুত্বপূর্ণ গণরাজ্য। 


6. গণরাজ্যগুলিতে কারা অরাজতান্ত্রিক শাসন বজায় রেখেছিল? 

উত্তর: গণরাজ্যগুলিতে এক-একটি উপজাতি বাস করত। তারাই নিজেদের রাজ্যে অরাজতান্ত্রিক শাসন বজায় রেখেছিল ।


 7. বজ্জি রাজ্যের অবস্থা কেমন ছিল?

 উত্তর: বজ্জি বা বৃজি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ গণরাজ্য। এই রাজ্যটি ছিল স্বাধীন এবং অত্যন্ত শক্তিশালী । এখানে শাসন চালাত কয়েকটি গোষ্ঠী। এই মহাজনপদটি মগধের কাছেই অবস্থিত ছিল।


 ৪. গৌতম বুদ্ধের সময় বজ্জিদের অবস্থা কেমন ছিল?

 উত্তর: গৌতম বুদ্ধের সময় বজ্জিরা ছিল ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীন। সেসময় বজ্জিদের রাজধানী ছিল বৈশালী। বৈশালীর আশেপাশের এলাকায় যেসব বজ্জি থাকত তাদের বলা হত লিচ্ছবি। মনে হয়, বজ্জিদের লিখিত আইনকানুন ছিল। কেন না গৌতম বুদ্ধ বজ্জিদের একজোট থাকার জন্য কয়েকটি নিয়ম পালনের কথা বলেছিলেন।


 9. কোন্ ধর্ম কীভাবে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরোধিতা করেছিল?

 উত্তর: জৈন ও বৌদ্ধধর্ম মানুষকে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বদলে সহজ-সরল ধর্মের খোঁজ দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের যজ্ঞ ও আচার অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেছিল এই ধর্মগুলি। এইসব ধর্মে মানুষের সহজ-সরল জীবনযাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। 


10. তীর্থংকর কাদের বলা হয় ?

 উত্তর: ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত নব্যধর্মগুলির মধ্যে জৈনধর্ম ছিল অন্যতম। এই ধর্মের প্রচারকদের বলা হত তীর্থংকর। জৈনধর্ম অনুযায়ী মোট চবিবশজন তীর্থংকর ছিলেন । তাদের মধ্যে শেষ দুজন তীর্থংকর ছিলেন পার্শ্বনাথ ও মহাবীর।


 11. জৈনধর্ম কোন্ কোন্ এলাকায় প্রসার লাভ করে?

 উত্তর: প্রথমদিকে জৈনধর্ম মগধ, বিদেহ, কোশল ও অঙ্গরাজ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মৌর্য শাসনকালে জৈনধর্মের প্রভাব আরও বাড়তে থাকে | মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নিজে জৈনধর্ম গ্রহণ করেন। পরে ওড়িশা থেকে মথুরা পর্যন্ত এই ধর্ম প্রসার লাভ করে।


 12. দ্বাদশ অঙ্গ কী ?

 উত্তর: জৈনধর্মের মূল উপদেশগুলিকে বারোটি ভাগে সাজানো হয়েছিল। এই প্রতিটি ভাগকে বলা হত অঙ্গ | যেহেতু এগুলি সংখ্যায় বারোটি, সেই কারণে সামগ্রিকভাবে এগুলি দ্বাদশ অঙ্গ নামে পরিচিত ।


 13. গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত ধর্মের নাম 'বৌদ্ধধর্ম’ হয় কেন ?

 উত্তর: বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের ছেলেবেলার নাম ছিল সিদ্ধার্থ। উনত্রিশ বছর বয়সে তিনি সংসার ছেড়ে তপস্যা করতে চলে যান এবং প্রায় ছয় বছর তপস্যা করার পর সিদ্ধার্থ বোধি বা জ্ঞান লাভ করেন। এরপর থেকেই তাঁর নাম হয় বুদ্ধ, তাই গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম পরিচিত হয় বৌদ্ধধর্ম নামে।


 14. চতুরার্যসত্য কী?

 উত্তর: বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের দুঃখের কারণ কী, কীভাবে সেই দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়—এই প্রশ্নগুলির উত্তরে চারটি উপদেশ দেন। প্রতিটি উপদেশকে বলা হয় আর্যসত্য। তাই এই চারটি উপদেশ একসঙ্গে চতুরার্যসত্য নামে অভিহিত হয় | 


15. বৌদ্ধ ধর্মসংগীতিগুলির গুরুত্ব কী ছিল?

 উত্তর: ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বৌদ্ধ ধর্মসংগীতিগুলির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এইসব সংগীতিতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সমবেত হতেন এবং বৌদ্ধধর্মের নানা বিষয়ে আলোচনা করতেন। এই সংগীতিগুলিতে বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত নানা বিবাদেরও মীমাংসা করা হত ।


16. তৃতীয় বৌদ্ধ ধর্মসংগীতির গুরুত্ব কী ছিল?

 উত্তর: মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে তৃতীয় বৌদ্ধ ধর্মসংগীতি অনুষ্ঠিত হয়েছিল পাটলিপুত্রে। এতে সভাপতিত্ব করেন মোগলিপুত্ত তিস্য। এই ধর্মসংগীতিতে বৌদ্ধসংঘের নিয়মাবলি কঠোরভাবে মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয় এবং সংঘের মধ্যে বিভেদ দূর করার চেষ্টা করা হয়।


 17. মজঝিম পতিপদা বা মধ্যপন্থা কী ?

 উত্তর: বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের মতে কেবল কঠোর তপস্যাই নির্বাণলাভের উপায় নয়। আবার চরম ভোগবিলাসের মধ্যে দিয়েও নির্বাণ বা মুক্তির খোঁজ পাওয়া যায় না। তিনি মুক্তির জন্য এই দুইয়ের মাঝামাঝি একটি পথের সন্ধান দেন। এটাই মধ্যপন্থা বা মজঝিম পতিপদা নামে পরিচিত ।


 18. হীনযান কাদের বলা হয়?

 উত্তর: কুষাণ আমল থেকে বৌদ্ধধর্মে মূর্তিপুজোর চল শুরু হয়। কিন্তু পুরোনো মতের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই মূর্তিপুজোর ঘোর বিরোধী ছিলেন। এঁরাই বৌদ্ধধর্মে হীনযান নামে পরিচিত হন।


 19. জাতকের গল্পগুলির কী বৈশিষ্ট্য ছিল ? 

উত্তর: বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ 'তিপিটক' বা 'ত্রিপিটক'-এ জাতক নামে বেশ কয়েকটি গল্প আছে। এগুলি বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনি বলে বৌদ্ধরা মনে করেন। এই গল্পগুলি লেখা হয়েছে পালি ভাষায় এবং গল্পের চরিত্রে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও উঠে এসেছে। এগুলি থেকে সমকালীন সমাজের নানা তথ্য জানা যায়।


 সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
 চার/পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও, প্রতিটি প্রশ্নের মান -৩


 1. কীভাবে জনপদগুলি গড়ে ওঠে? 

উত্তর: 'জন' বা জনগণ যেখানে 'পদ' বা পা রাখেন সেটাই জনপদ। আরও সহজভাবে বলতে গেলে সাধারণ মানুষ বা জনগণ যেখানে বাস করত তাকে বলা হত জনপদ। প্রাচীন ভারতে গ্রামের থেকে বড়ো অঞ্চলকে কেন্দ্র করে জনপদ গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে এইরকম অনেকগুলি জনপদের কথা জানা যায়।


 2. ষোড়শ মহাজনপদ থেকে কীভাবে মগধ সাম্রাজ্যের সূচনা ঘটে?

 উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে ষোলোটি মহাজনপদ বিশেষ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। একে অন্যের রাজ্য জয় করে নিজেদের রাজ্য-সীমানা বাড়ানোর জন্য এই ষোলোটি মহাজনপদের মধ্যে সবসময় ঝগড়া-লড়াই চলত। এই লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত চারটি মহাজনপদ অর্থাৎ কোশল, অবন্তী, মগধ ও বস বিশেষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এরপর বাকি তিনটি মহাজনপদকে হারিয়ে মগধ হয়ে ওঠে সবচেয়ে শক্তিশালী। পরবর্তীকালে মগধকে কেন্দ্র করেই ভারতে প্রথম সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। 


3. মহাজনপদগুলির শাসনব্যবস্থা কেমন ছিল ?

 উত্তর: মহাজনপদগুলির শাসনব্যবস্থা ছিল নিম্নরূপ— রাজতান্ত্রিক শাসন: বেশিরভাগ মহাজনপদেই রাজতান্ত্রিক শাসন চালু ছিল। এইসব মহাজনপদকে বলা হত রাজতান্ত্রিক রাজ্য। অরাজতান্ত্রিক শাসন: কয়েকটি মহাজনপদ ছিল অরাজতান্ত্রিক, যেগুলি গণরাজ্য নামে পরিচিত ছিল। এগুলিতে গোষ্ঠীর শাসন চলত । বিরোধ: রাজতান্ত্রিক মহাজনপদগুলির এরফলে শেষপর্যন্ত সঙ্গে গণরাজ্যগুলির বিরোধ ছিল। গণরাজ্যগুলির অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হয়।


4. গণরাজ্যগুলির পক্ষে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল কেন?

 উত্তর: রাজতান্ত্রিক মহাজনপদগুলির সঙ্গে লড়াই করার ফলে গণরাজ্যগুলি ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্য সংগ্রহ করার জন্য তাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। সেই অর্থ তারা জোগাড় করত প্রজাদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে। যদিও গণরাজ্যে এই কর আদায় করা সহজ ছিল না। তা ছাড়া তাদের মধ্যে শুরু হয় গোষ্ঠীবিবাদ। এইসব কারণের জন্যই গণরাজ্যগুলির পক্ষে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। 


5. লোহার অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের ফলে ক্ষত্রিয়দের মধ্যে কী পরিবর্তন আসে?

 উত্তর: লোহার তৈরি অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এরপর তারাও সমাজে ব্রাহ্মণদের সমান মর্যাদা দাবি করতে থাকে এবং ব্রাহ্মণবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। ফলে নব্যধর্ম উত্থানের পথ সহজ হয়। এই পটভূমিতে সহজেই জৈন ও বৌদ্ধধর্মের উত্থান ঘটে। 


6. ‘চতুর্যাম' কী?

 উত্তর: জৈনধর্মে চারটি মূলনীতি মেনে চলতে হত। যেমন— [a] প্রাণী হত্যা না করা, [b] মিথ্যা কথা না বলা, [c] অন্যের জিনিস ছিনিয়ে না নেওয়া এবং [d] নিজের জন্য কোনো সম্পত্তি না করা। পার্শ্বনাথ এই চারটি নীতি মেনে চলার কথা বলেছিলেন। এগুলিই চতুর্যাম নামে পরিচিত।


7. তিপিটক বা ত্রিপিটক কী?

 উত্তর: বৌদ্ধধর্মের প্রধান গ্রন্থ হল তিপিটক বা ত্রিপিটক | পিটক কথার অর্থ ঝুড়ি। সুত্তপিটক, বিনয়পিটক ও অভিধম্মপিটক—এই তিনটি ভাগ নিয়েই ত্রিপিটক। সুত্তপিটক হল বুদ্ধ ও তাঁর প্রধান শিষ্যদের উপদেশের সংকলন, বিনয়পিটকে পাওয়া যায় বৌদ্ধসংঘের ও বৌদ্ধসন্ন্যাসীদের আচার-আচরণের নিয়মাবলি এবং অভিধৰ্ম্ম পিটকে আছে বুদ্ধের মূল উপদেশাবলি | প্রসঙ্গত এগুলি সবই পালি ভাষায় লেখা।


 8. ধর্মচক্র প্রবর্তন কী? 

উত্তর: গৌতম বুদ্ধ বোধি বা জ্ঞান লাভ করে গয়া থেকে বারাণসীর কাছে সারনাথে যান । সেখানে তিনি তাঁর পাঁচজন সঙ্গীর মধ্যে যে উপদেশ প্রচার করেন তা-ই ইতিহাসে ধর্মচক্র প্রবর্তন নামে পরিচিত। তাঁদের কাছে তিনি মানুষের জীবনে দুঃখের কারণগুলি বর্ণনা করেন। এই পাঁচজনই তাঁর প্রথম পাঁচ শিষ্য হয়েছিলেন।


 9. মহাবীর ও বুদ্ধ উভয়ই ধর্মপ্রচারের জন্য নগরে যেতেন কেন ?

 উত্তর: নগরগুলিতে একসঙ্গে নানারকম মানুষ পাওয়া যেত। সে তুলনায় গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ছিল কৃষক। আবার ব্রাহ্মণ্য ধর্মে নগরে যাওয়া বা থাকাকে পাপ বলে ধরা হত, আর মহাবীর ও বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম ছিল ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরোধী। এইসব কারণের জন্যই মহাবীর ও বুদ্ধ উভয়ই তাঁদের ধর্মপ্রচারের জন্য নগরকে নিয়েছিলেন। বেছে


 দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
 আট/দশটি বাক্যে উত্তর দাও, প্রতিটি প্রশ্নের মান -৫


1. ষোড়শ মহাজনপদগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।

 উত্তর: ভূমিকা: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ উপমহাদেশে যে ষোলোটি মহাজনপদের অস্তিত্ব দেখা যায়, সেগুলিকে একসাথে বলা হয় ষোড়শ মহাজনপদ। জৈন ও বৌদ্ধ সাহিত্যে এই মহাজনপদগুলির আলোচনা পাওয়া যায়।

 [a] উপাদান: মূলত বৌদ্ধগ্রন্থ 'অঙ্গুত্তরনিকায়' এবং জৈনগ্রন্থ “ভগবতী সূত্ত' থেকে ষোড়শ মহাজনপদগুলির কথা জানা যায় ।

 [b] ষোড়শ মহাজনপদ: ষোলোটি মহাজনপদ হল— কাশী, কোশল, অঙ্গ, মগধ, বৃজি বা বজ্জি, মল্ল বা মালব, চেদি, বস, কুরু, পাঞ্চাল, মৎস্য, শূরসেন, অবন্তী, গান্ধার, কম্বোজ এবং অস্মক। মহাজনপদগুলির মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকত। একে অন্যের রাজ্য জয় করে তারা তাদের রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করতে চাইত।

 [c] উপসংহার: পরবর্তীকালে ষোলোটি মহাজনপদের মধ্যে কোশল, অবন্তী, মগধ ও বস—এই চারটি মহাজনপদ বিশেষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অবশেষে মগধকে কেন্দ্র করে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম সাম্রাজ্য তৈরি হয়।


 2. নব্যধর্ম আন্দোলনের কারণগুলি কী ছিল ?

 উত্তর: ভূমিকা: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে নব্যধর্ম আন্দোলন সংগঠিত হয়। এই আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার নানা কারণও ছিল। নব্যধর্ম আন্দোলনের বিভিন্ন কারণ হল

 [a] লোহা ব্যবহারের ফলে নানা জীবিকার উদ্ভব: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগে ভারতীয় উপমহাদেশে কৃষিই ছিল প্রধান জীবিকা। লোহা ব্যবহার, বিশেষ করে লোহার লাঙলের ফলা ব্যবহারের ফলে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এসময় বিভিন্ন নগর গড়ে ওঠার ফলে সমাজে ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণির সৃষ্টি হয়।

 [b] কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি: বৈদিক ধর্মের প্রভাবে যজ্ঞ, পশুবলি ও যুদ্ধের ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চাষের কাজে গবাদিপশুর প্রয়োজন হত, তাই যজ্ঞে পশুবলি দেওয়ার বিষয়টি কৃষকরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। তা ছাড়া বিভিন্ন জনপদ ও উপজাতির মধ্যে লড়াই ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষতি করেছিল।

 [c] জাতিভেদ প্রথার প্রভাব: জাতিভেদ প্রথার কঠোরতার ফলে সমাজের বৃহত্তর অংশের সাধারণ মানুষ বৈদিক ধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিল।

 [d] বাণিজ্যে বাধা: বৈদিক সমাজে ব্রাহ্মণরা বাণিজ্যের জন্য সমুদ্রযাত্রাকে পাপ বলে মনে করত এবং বাণিজ্যে পয়সার লেনদেন ও সুদ খাটানোর বিষয়টিও ব্রাহ্মণ্য ধর্মে নিন্দার বিষয় ছিল।

 [e] ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতাবৃদ্ধি; এসময় লোহার অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের ফলে ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, তারা সমাজে ব্রাহ্মণদের সমান ক্ষমতা পাওয়ার দাবি করতে থাকে।


3. জৈনধর্মের প্রভাবগুলি কী ছিল ?

 উত্তর: ভূমিকা: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে যেসব নতুন ধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল বর্ধমান। মহাবীর প্রবর্তিত জৈনধর্ম । এই ধর্মের প্রভাব ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।

 জৈনধর্মের প্রভাবগুলি হল—

 [a] হৃদয়স্পর্শী: জৈনধর্মের মূল কথাগুলি সহজ-সরল ও সাবলীল হওয়ায় তা সাধারণ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে।

 [b] বর্ণপ্রথার বিরোধিতা: জৈন ধর্মাবলম্বীরা বর্ণপ্রথার বিরোধিতা করে সমাজে জাতপাতের ব্যবধান কমাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

 [c] কলুষতা মুক্তি: জৈনধর্মে কলুষতা মুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। প্রচার করা হয় যে, সৎকর্মের মাধ্যমে মানুষের মুক্তিলাভ সম্ভব।

 [d] সাংস্কৃতিক বিকাশ: স্থাপত্যের ক্ষেত্রে জৈন স্থাপত্য নিদর্শনগুলি বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। এ ছাড়া জৈন সন্ন্যাসীদের টীকা ভাষ্য, ধর্মীয় সাহিত্যচর্চা প্রভৃতির মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে।


 4. ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবগুলি সংক্ষেপে লেখো ।

  ভূমিকা: নব্যধর্ম আন্দোলনের ক্ষেত্রে এবং ভারতের সমাজ, ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব অপরিসীম।

 বৌদ্ধধর্মের প্রভাবগুলি হল—

 [a] বৌদ্ধধর্মের সারল্য: বৌদ্ধধর্মীয় সাহিত্যগুলি পালি ভাষায় সহজ ও সরলভাবে জনসাধারণের উপযোগী করে লেখা। এ ছাড়া বৌদ্ধধর্মে সহজ জীবনযাপনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

 [b] জাতিভেদ প্রথার অবসান: বৌদ্ধধর্মে জাতিভেদ প্রথার অসারতাকে তুলে ধরে সামাজিক শ্রেণিবৈষম্য দূর করার কথা বলা হয়। সেদিক থেকে বিচার করলে বৌদ্ধধর্ম ছিল সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শক।

 [c] সংঘবদ্ধ মঠজীবনের সূচনা: বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের মাধ্যমেই ভারতের ধর্মীয় ইতিহাসে সংঘবদ্ধ মঠ জীবনের সূচনা হয়।

 [d] সাংস্কৃতিক বিকাশ: বৌদ্ধধর্মের প্রভাবেই পালিভাষা সমৃদ্ধি লাভ করে । ভাস্কর্যের সুন্দর সুন্দর নিদর্শনস্বরূপ বিভিন্ন বৌদ্ধমূর্তি আজও গৌরবের দাবি রাখে। এ ছাড়া বৌদ্ধ স্তূপ, চৈত্য, মঠ প্রভৃতি স্থাপত্য নিদর্শনগুলি এবং অজন্তার চিত্রকলা পৃথিবীর শিল্পের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।


 5. বৌদ্ধ সংগীতিগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তর: ভূমিকা: সংগীতি বলতে বোঝায় সম্মেলন। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে ধর্মসংগীতিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 [a] প্রথম বৌদ্ধ সংগীতি: হর্যঙ্ক বংশের রাজা অজাতশত্রুর রাজত্বকালে রাজগৃহে প্রথম বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়, যার সভাপতিত্ব করেন মহাকাশ্যপ। এতে সূত্ত ও বিনয়পিটক সংকলন করা হয়।

 [b] দ্বিতীয় বৌদ্ধ সংগীতি: শৈশুনাগ বংশের রাজা কালাশোক বা কাকবর্ণের রাজত্বকালে বৈশালীতে দ্বিতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন যশ। দ্বিতীয় বৌদ্ধ সংগীতিতে বৌদ্ধরা থেরবাদী ও মহাসাংঘিক রূপে বিভক্ত হয়ে যান

 [c] তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি: মৌর্য সম্রাট অশোকের আমলে পাটলিপুত্রে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়, যার সভাপতিত্ব করেন মোগলিপুত্ত তিস্য । এতে বৌদ্ধ সংঘের ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করা হয়।

 [d] চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি: কুষাণ সম্রাট কনিষ্কের রাজত্বকালে কাশ্মীরে চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়, যার সভাপতিত্ব করেন বসুমিত্র। এই সংগীতিতে বৌদ্ধরা হীনযান ও মহাযান সম্প্রদায় রূপে বিভক্ত হয়ে যান ।

1 comment: