Class 7 History Chapter -5 Important Questions And Answers | ক্লাস সেভেন ইতিহাস পঞ্চমঅধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় মুঘল সাম্রাজ্য গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর - Psycho Principal

Fresh Topics

Wednesday, 1 February 2023

Class 7 History Chapter -5 Important Questions And Answers | ক্লাস সেভেন ইতিহাস পঞ্চমঅধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় মুঘল সাম্রাজ্য গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

 


পঞ্চম অধ্যায় মুঘল সাম্রাজ্য 
প্রশ্ন উত্তর 





সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস সেভেন ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | Class 7 History Chapter -5 Important Questions And Answers | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ  অধ্যায় মুঘল সাম্রাজ্য গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর | #Class7 History Questions And Answers #Class 7th History Chapter-5 Questions And Answers


⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1

১। তৈমুর লঙ কত খ্রিস্টাব্দে উত্তর ভারত আক্রমণ করেন? 

উঃ। ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে।


২। কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে জামের যুদ্ধ হয়? 

উঃ। ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে সফাবি ও উজবেগদের মধ্যে।


৩। কবুলিয়ত কী? 

উঃ। কৃষকরা রাজস্ব দেওয়ার কথা কবুল করে যে দলিল রাষ্ট্রকে দিত তাকে কবুলিয়ত বলে।


 ৪। গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোডের আগের নাম কী ছিল? 

উঃ। সড়ক-ই-আজম


৫। অমর সিংহ কে ছিলেন? 

উঃ। রানা প্রতাপের পুত্র।


৬। কত খ্রিস্টাব্দে রাঠোর যুদ্ধ হয়েছিল? 

উঃ। ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে।


৭। ভারতবর্ষের প্রথম মুঘল বাদশাহ কে ছিলেন? 

উঃ। জহিরউদ্দিন মহম্মদ বাবর।


৮। মুঘলরা সুলতান' শব্দটি কোন্ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন? 

উঃ। মুঘলরা 'সুলতান' শব্দটি যুবরাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন।


৯। কত খ্রিস্টাব্দে পানিপতের প্রথম যুদ্ধ ঘটে? 

উঃ। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে।


১০। খানুয়ার যুদ্ধ ও ঘর্ঘরার যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল?

উঃ। খানুয়ার যুদ্ধ হয় ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে এবং ঘর্ঘরার যুদ্ধ হয় ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে।


১১। সামরিক অভিজাত কাদের বলা হত?

উঃ। যাঁরা বংশগতভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন তাদের সামরিক অভিজাত বলা হতো।


১২। হুমায়ুন ও শের খানের মধ্যে কবে কোন্ কোন্ যুদ্ধ হয়েছিল? 

উঃ। হুমায়ূন ও শের খানের মধ্যে ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে চৌসার যুদ্ধ ও ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে বিলগ্রামের যুদ্ধ হয়েছিল।


১৩। পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ কবে ও কাদের মধ্যে হয়েছিল? 

উঃ। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে আকবর ও আফগান নেতা হিমুর মধ্যে পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়েছিল।


১৪। কত খ্রিস্টাব্দে এবং কাদের মধ্যে হলদিঘাটের যুদ্ধ হয়?

উঃ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাণা প্রতাপ ও আকবরের মধ্যে হলদিঘাটের যুদ্ধ হয়। 


১৫। হুমায়ুনের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক কে ছিলেন? 

উঃ। বৈরাম খাঁ। 


১৬। আকবরের আমলে দুজন বিখ্যাত ঐতিহাসিকের নাম লেখো। 

উঃ । আবুল ফজল ও আব্দুল কাদির বদাউনি। 


১৭। আকবর কোন্ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যবস্থার প্রচলন করেন? 

উঃ। মনসবদারি ব্যবস্থা।


১৮। 'জাবতি' কী?

উঃ । আকবরের আমলে জমি জরিপের ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণের পদ্ধতিকে জাবতি বলা হয়।


১৯। ‘মারওয়াড়' শব্দটি কোথা থেকে এসেছে? 

উঃ । মারওয়াড় শব্দটি এসেছে 'মরুওয়ার' অর্থাৎ মরু অঞ্চল শব্দ থেকে।


২০। কত খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়? 

উঃ। ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে। 


২১। মালিক অম্বর কে ছিলেন? 

উঃ। মালিক অম্বর ছিলেন আহমেদনগরের প্রধানমন্ত্রী।


২২। মধ্য এশিয়ায় মুঘলদের প্রাচীন বাসভূমি কোনটি? 

উঃ। সমরকন্দ।


২৩। মুঘলরা কতদিন ভারতবর্ষ শাসন করেছিল? 

উঃ। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতক থেকে ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মুঘলরা ভারতবর্ষ শাসন করেছিল।


২৪। বাংলা কার সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যে ভালোভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে?

উঃ। সম্রাট জাহাঙ্গিরের সময়েই বাংলা ভালোভাবে মুঘল সাম্রাজ্যে যুক্ত হয়ে পড়ে।


২৫। শাহজাহানের শাসনের শুরুতেই কে কোথায় বিদ্রোহ করেন ?

উঃ। শাহজাহানের শাসনের শুরুতেই দাক্ষিণাত্যে খান জাহান লোদী বিদ্রোহ করেন। 


২৬। আকবরের প্রশাসনিক আদর্শ কীরূপ ছিল ?

উঃ। আকবরের প্রশাসনিক আদর্শ তৈমুরীয়, পারসিক এবং ভারতীয় রাজতন্ত্রের সংমিশ্রণ বলা চলে। 


২৭। আমির কাদের বলা হতো। 

উঃ। উচ্চপদস্থ মনসবদারদের আমির বলা হতো।


২৮। কানুনগো কাদের বলা হত?

উঃ। মুঘল আমলে একশ্রেণির কর্মচারী এলাকায় উৎপাদন দ্রব্যমূল্য বিষয়ে সরকারকে তথ্য দিত এদের কানুনগো বলা হত।


২৯। টোডরমল কে ছিলেন? 

উঃ। টোডরমল ছিলেন আকবরের রাজস্বমন্ত্রী।


⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3

১। মুঘল কারা? তাঁদের সম্বন্ধে কী জানা যায় ?

উঃ। মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান ও অন্যদিকে তুর্কি নেতা তৈমুরলঙ-এর বংশধরদের মুঘল বলা হয়। মুঘলরা নিজেদের তৈমুরীয় বলে ভারত এবং গর্ববোধ করত। চেঙ্গিস খানের প্রতি মুঘলদের শ্রদ্ধা ছিল না। বাবর ও তাঁর বংশধরগণ ভারতের ইতিহাসে মুঘল নামে পরিচিত। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতক থেকে ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মুঘলরা ভারতবর্ষ শাসন করেছিল।


২। আকবর কীভাবে সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করেন?

উঃ। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র তেরো বছর বয়সে আকবর শাসনভার পান। আকবরকে সাহায্য করেন তাঁর অভিভাবক বৈরাম খান। সেই সময় শের শাহের আত্মীয় আদিল শাহ দিল্লিতে আফগান শাসন ফিরিয়ে আনতে চেয়ে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হিমুকে দিয়ে দিল্লি দখল নিয়ে নেন। বৈরাম খানের সাহায্যে আকবর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধে আফগানদের পরাজিত করেন। এরপর আকবর একে একে মধ্য ভারত ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের কয়েকটি রাজ্য, চিতোর, গুজরাট, বাংলা ইত্যাদি অঞ্চল জয় করে সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করেন।


৩। 'বারো ভূঁইয়া' কাদের বলা হয়?

উঃ। আকবরের পুত্র জাহাঙ্গিরের সময় বাংলার স্থানীয় জমিদার ও আফগানরা বারবার মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। এই বিদ্রোহিরা একসঙ্গে 'বারো ভূঁইয়া' নামে পরিচিত ছিলেন। এদের মধ্যে প্রতাপাদিত্য, চাঁদ রায়, কেদার রায়, ঈশা খান ছিলেন উল্লেখযোগ্য। জাহাঙ্গীর শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী বারো ভূঁইয়াদের নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিলেন।


৪। মুঘলরা বাংলাকে কোন্ আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। এর ফলে কী হয়?

উঃ। মুঘলরা চট্টগ্রাম বন্দর দখল করে বাংলাকে পোর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেন। তার ফলে সামুদ্রিক বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত হয়।


৫। 'দহশালা' ব্যবস্থা কী?

উঃ। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে আকবর দহশালা ব্যবস্থা চালু করেন। আকবর বুঝেছিলেন রাজধানীর শস্যের মূল্যের সঙ্গে অন্য জায়গার শস্যের মূল্য মিলছে না। রাজধানীর শস্যমূল্য ছিল বেশি, সেই হিসাবে চললে কৃষকদের আরো বেশি রাজস্ব দিতে হবে। তাই আকবর প্রত্যেক বছরের এবং প্রতিটি এলাকার আলাদা হিসাব চালু করেন। আগের দশ বছরের তথ্যের ভিত্তিতে চালু এই ব্যবস্থাকে বলে দহশালা বন্দোবস্ত। এই রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করতে আকবরকে সাহায্য করেন তাঁর রাজস্ব মন্ত্রী টোডরমল। তাই এই ব্যবস্থার নাম হয় টোডরমলের বন্দোবস্ত।


6.ওয়াতন কথাটির অর্থ কী ছিল?

উঃ। ‘ওয়াতন' কথাটির অর্থ হলো নিজের ভিটে বা এলাকা বা স্বদেশ। যেমন রাজা ভারমল, ভগবদ্ভদাস ও মানসিংহের বংশের ওয়াতন ছিল আধুনিক জয়পুর শহরের কাছে অম্বর বা আমের এলাকা।


7.মারওয়াড় কথাটি কোথা থেকে এসেছে?

উঃ। রাজস্থানের ভাষায় 'ওয়াড়' শব্দের অর্থ হল একটি বিশেষ অঞ্চল। মারওয়াড় শব্দটি এসেছে মরুওয়ার’অর্থাৎ মরু অঞ্চল কথাটি থেকে।


8. মুঘল আমলে কী কী টাকাকড়ি বা মুদ্রার কথা জানা যায় ?

উঃ। মুঘল আমলের সোনার মুদ্রা মোহর বা 'আশরফি' নামে পরিচিত ছিল। এযুগে প্রধান মুদ্রা ছিল রুপো দিয়ে তৈরি ‘রূপায়া’ যা দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য হত, প্রজারা কর দিত। এছাড়া ছিল তামা দিয়ে তৈরি মুদ্রা 'দাম'।


9. হুন্ডি কী?

উঃ। তুর্কি শাসকদের আমলে কাগজের ব্যবহার শুরু হলে সরাফরা এক ধরনের কাগজ চালু করে, একে হুন্ডি বলা হত। বণিকরা কোনো এক জায়গায় সরাফকে টাকা জমা দিয়ে হুন্ডি কাগজ কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় তা ভাঙিয়ে নিত। এর ফলে বণিকদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা নিয়ে যাওয়ার খুব সুবিধা হয়েছিল।

 

10. আব্দুল কাদির বদাউনি কে ছিলেন?

উঃ। মুঘল যুগের একজন ঐতিহাসিক ছিলেন আব্দুল কাদির বদাউনি। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। তিনি মুস্তাখাব-উৎ-তওয়ারিখ নামে একটি বই লেখেন। এই গ্রন্থে মুঘল আমলের নানা প্রশংসা ছাড়া সে যুগের সমস্যার কথাও জানা যায়। তিনিও ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে মুঘল দরবারে এসেছিলেন। ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।


11. আবুল ফজল কে ছিলেন?

উঃ। আবুল ফজল আল্লামি ছিলেন আকবরের আমলের এক বিখ্যাত ঐতিহাসিক। ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর লেখা আকবরনামা গ্রন্থে। তিনি আকবরের প্রশংসাই করেছেন। ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুঘল দরবারে আসেন। পরবর্তীকালে আবুল ফজল আকবরের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে আবুল ফজল মারা যান।



⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5

১। মনসবদারি ব্যবস্থা সম্বন্ধে যা জান লেখো।

উঃ। আকবরের শাসনব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ছিল মনসবদারি ব্যবস্থা। তাঁর শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনিক পদগুলিকে মনসব বলা হতো আর সেই পদাধিকারীদের বলা হতো মনসবদার। এদের কাজ ছিল বাদশাহের জন্য সৈন্য প্রস্তুত রাখা, সৈন্যদের দেখাশোনা করা এবং যুদ্ধের সময় সৈন্য যোগান দেওয়া। পদ অনুসারে মনসবদারদের বিভিন্ন স্তর ছিল। সবচেয়ে উপরের স্তরে থাকতেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। উচ্চপদস্থ মনসবদারদের বলা হতো আমীর। মনসবদারদের নিয়োগ করতেন বাদশাহ স্বয়ং এবং তাঁদের পদোন্নতিও তাঁর উপরই নির্ভর করত। মনসবদারি ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক ছিল না।


২। হলদিঘাটের যুদ্ধ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

উঃ। রাজপুত রাজাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল চিতোর দুর্গ। ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে আকবরের চিতোর জয়ের আগে রানা উদয়সিংহ চিতোর ছেড়ে চলে যান। উদয়সিংহের পুত্র রানা প্রতাপ মুঘলদের অধীনতা স্বীকার না করায় ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে আকবর ও রাণা প্রতাপের মধ্যে হলদিঘাটের যুদ্ধ হয় এবং রানা প্রতাপ পরাজিত হন। এই যুদ্ধের সময় আকবর রাজা মানসিংহকে ৫০০০ হাজার সৈন্য সমেত রানা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠান। রানা প্রতাপ চিতোর পর্যন্ত গোটা এলাকার ফসল নষ্ট করে দেন যাতে মুঘল সৈন্য খাবার না পায়। রানা যুদ্ধে ৩০০০ সৈন্য নিয়ে রাজধানী কুম্ভলগড় থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছোলেও যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।


৩। শাহজাহানের শাসনকালের বিবরণ দাও ।

উঃ। ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গিরের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শাহজাহান মুঘল সম্রাট হন। তাঁর শাসনকালের শুরুতেই দাক্ষিণাত্যে খান জাহান লোদী বিদ্রোহ করেন। তবে মুঘলদের কাছে তিনি পরাজিত হন। শাহজাহান বুন্দেলখণ্ডে বিদ্রোহ দমন করেন এবং আহমেদনগরে অভিযান পাঠান। শাহজাহান উজবেকদের থেকে বলখ জয় করার পরিকল্পনা করেন কিন্তু তা সফল হয়নি। তাঁর আমলেই মুঘলরা কান্দাহারের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে শাহজাহান আকবরের রাজপুত নীতিকেই অনুসরণ করেছিলেন। তাঁর আমলে রাজপুত সর্দাররা দূর মধ্য এশিয়াতেও লড়াই করতে গিয়েছিল। এই আমলেও রাজপুতদের উচ্চপদ দেওয়া হতো। শাহজাহানের জীবনের শেষদিকে তাঁর পুত্রদের মধ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই বেঁধে গিয়েছিল।


4. খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তিকেন্দ্রগুলির গুরুত্ব কী ছিল? 

উঃ। আকবরের শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন কেন্দ্রের বারবার বদল ঘটেছে। এক্ষেত্রে কোনো ভৌগোলিক এলাকা নয় মুঘল শাসক কোথায় কেন অবস্থান করেছেন সেটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মুঘল আমলে আগ্রা, ফতেপুর সিকরি, এলাহাবাদ ও লাহোর প্রত্যেকটি শহর ছিল অতি সুরক্ষিত ও প্রায় দুর্ভেদ্য দুর্গনগরী। সেখ সেলিম চিশতির স্মৃতিধন্য সিকরিতে আকবর নতুন রাজধানী ফতেহপুর তৈরি করেন। জলের অভাবে তিনি সেখান থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে লাহোর চলে যান। লাহোর থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নজরে রাখা অনেক সুবিধাজনক ছিল। ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি পুনরায় আগ্রা থেকে শাসন পরিচালনা করেন। এলাহাবাদ দুর্গ থেকে গঙ্গা যমুনা দোয়াব অঞ্চলে নজরদারি করা যেত। আকবরের আমলে বুন্দেলখণ্ডের প্রধান দুর্গনগরী গোয়ালিয়র, রাজপুতানার চিতোর ও রণথম্ভোর এবং দাক্ষিণাত্যের অসিরগড় দুর্গ মুঘলরা দখল করলেও উত্তর ভারতের দুর্গগুলিই ছিল মুঘলদের প্রধান শক্তিকেন্দ্র। 


5. দিল্লির লালকেল্লার বিবরণ দাও।

উঃ। দিল্লিতে অবস্থিত লালকেল্লার আয়তন আগ্রা দুর্গের দ্বিগুণ, এর পূর্বদিকে যমুনা নদী ও পশ্চিমে ছিল পরিখা, দুর্গের চারটি বড়ো দরজা ও দুটি ছোটো দরজা ছিল। এর মধ্যে একভাগে ছিল রাজপরিবারের বাসস্থান ও অন্যদিকে ছিল বিভিন্ন দপ্তর। সেই সময় এটি বানাতে খরচ হয়েছিল ৯১ লক্ষ টাকা। দুর্গ ও শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া জলবাহী নালাগুলিকে বলা হত নেহর-ই-বিহিশত বা স্বর্গের খাল। এগুলিকে ইসলামি রীতিতে সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির প্রতীক ভাবা হত।


6. শাহজাহানাবাদ শহরটি শাহজাহান কেন তৈরি করেন?

উঃ। যমুনা নদীর পাড় ভেঙে আগ্রা শহরটি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল। শহরের পথঘাট ও হয়ে উঠেছিল ঘিঞ্জি। মুঘল বাদশাহের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য আগ্রার প্রাসাদদুর্গ আর যথেষ্ট বড়ো ছিল না। তাই ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহানাবাদ শহরটি তৈরি হয়েছিল। এতে ভারতের রাজনীতিতে দিল্লি শহরের গুরুত্বকেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল। ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান আগ্রা থেকে শাহজাহানাবাদে চলে আসেন।


7. চাঁদনি চক নামটি তৈরি হয়েছিল কেন ?

উঃ। শাহজাহানের কন্যা জাহান আরা লালকেল্লা থেকে জাহানআরা বেগমের চক পর্যন্ত বিস্তৃত বাজারের উত্তর দিকে একটি সরাইখানা ও বাগান এবং দক্ষিণে একটি স্নানাগার তৈরি করে দিয়েছিলেন। জনশ্রুতি আছে চাঁদনি রাতে জলে চাঁদের আলো পড়ে চিক চিক করত বলে ওই জায়গার নাম হয়েছে চাঁদনি চক। এও শোনা যায় যে ওই বাজারে সোনা-রূপোর টাকার ঝিলিকের জন্য চাঁদনি চক নামটি হয়েছে।


8. সম্রাট আকবরের আমলের পোর্তুগিজ যাজকের বিবরণে যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কে কী জানা গেছে? 

উঃ। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলের একজন পোর্তুগিজ যাজক ফান্দার আন্তেনিও মনসেরাট মুঘলদের যুদ্ধযাত্রার একটি বিবরণে লিখেছেন যে বিশাল মুঘল বাহিনীর ভরণপোষনের জন্য সেনাবাহিনীর যাত্রাপথের দুধারে সম্রাটের প্রতিনিধিরা রসদ জোগাড় করতে ছড়িয়ে পড়ত। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ে চলমান বাহিনীর সঙ্গে এসে জিনিসপত্র বিক্রি করে যেতে উৎসাহ দেওয়া হত। এইভাবে মধ্যযুগের ভারতে যুদ্ধযাত্রাকে কেন্দ্র করেও খাদ্যদ্রব্যের বাণিজ্য চলত।


9. মুঘল রণকৌশল কীরূপ ছিল তার বিবরণ দাও।

উঃ। পানিপত ও খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের রণকৌশল একদিকে কামান ও বন্দুকধারী সৈন্য এবং অন্যদিকে দ্রুতগামী ঘোড়সওয়ার তিরন্দাজ বাহিনী এই দুইয়ের যৌথ আক্রমণের উপর নির্ভরশীল ছিল। রাজপুতদের সাথে এই যুদ্ধে বাবর মুঘল যোদ্ধাদের বলেন এই যুদ্ধ তাদের ধর্মের লড়াই। আসলে এইভাবে বাবর তাঁর সৈন্যদের জোটবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। এদিকে উত্তর ভারতের কয়েকজন মুসলমান শাসক রাজপুতদের সাথে যোগ দেন। কাজেই এটা কোনোমতেই ধর্মীয় যুদ্ধ ছিল না। আফগান শাসকদের সাথে বাবরের এই যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে জিতলেও বাবর পাকাপাকিভাবে বিহারে অধিকার কায়েম করতে পারেননি।


10. মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উঃ। এই সময়ে যারা মুঘল বিরোধী ছিল তারা সবসময় একজোট ছিল না। যেমন রাজপুত-আফগানের মধ্যে মৈত্রী ছিল না। কিন্তু আফগান নেতা শের খানের কাছে পরাজিত হয়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। হুমায়ুনের এই পালিয়ে বেড়ানোর মধ্যেই ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে আকবরের জন্ম হয়। শের শাহের পুত্র ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয় সেই সুযোগে হুমায়ুন দেশে ফেরেন। কিন্তু খুব বেশিদিন হুমায়ুন শাসন করতে পারেননি। দিল্লির পুরোনো কেল্লার পাঠাগারের সিঁড়ি থেকে পড়ে তিনি মারা যান।


11. মুঘলদের মেওয়াড় অভিযানের বিবরণ দাও।

উঃ। রাজপুত রাজাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল চিতোর দূর্গ। ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে আকবর চিতোর জয় করেন। অন্যান্য রাজপুতদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হলেও উদয় সিংহের পুত্র রানা প্রতাপ সিংহ কিন্তু মুঘলদের কাছে অধীনতা স্বীকার করেননি। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদিঘাটের যুদ্ধে আকবর রানাকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে আকবর রাজপুত রাজা মানসিংহকে ৫০০০ সৈন্য সমেত রানা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠান, রানা প্রতাপ চিতোর পর্যন্ত গোটা এলাকার ফসল নষ্ট করে দিয়েছিলেন যাতে মুঘল সৈন্য খাবার না পায়। তিনি ৩০০০ সৈন্য সহ কুম্ভলগড় থেকে যুদ্ধে পৌঁছান। রানার পক্ষে কয়েকজন আফগান সর্দারও ছিল। রানা প্রতাপ কিন্তু মুঘলদের বিরুদ্ধে বারবার যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন।


12.আকবরের নবরত্ন সভা ও রাজা বীরবল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। 

উঃ। আকবরের দরবারে বহু বিশিষ্ট মানুষদের মধ্যে ন-জনকে একত্রে বলা হত নবরত্ন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন রাজা বীরবল। আকবরের সময় তিনি ওয়াজির-এ-আজম বা প্রধানমন্ত্রী হন। বীরবল ছিলেন খুবই বুদ্ধিমান। তাঁর জন্ম হয় মধ্যপ্রদেশের একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মহেশ দাস। তাঁর বুদ্ধির জোরেই তিনি আকবরের সভায় স্থান পান। আকবর তাঁর নাম দেন বীরবল। তাঁকে রাজা উপাধিও দেওয়া হয়।


13. বলখ এবং বদখশান জায়গা দুটিতে মুঘলরা কেন ক্ষমতা কায়েম করতে চেয়েছিল?

উঃ। মধ্য এশিয়ার বলখ এবং বদখশান ছিল বুখরার উজবেক শাসক নজর মহম্মদের অধীনে। তাঁর পুত্র আবদুল আজিজ বিদ্রোহ করে পিতাকে পরাজিত করলে নজর মহম্মদ মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সাহায্য চান। পরে পিতা-পুত্রের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হলেও মুঘলরা বলখ আক্রমণ করে। কারণ মধ্য এশিয়ার সমরকন্দ ছিল মুঘলদের প্রাচীন বাসভূমি। তাই মুঘলরা বারবার এই সব অঞ্চলগুলিতে ক্ষমতা কায়েম করার চেষ্টা করেছিল।


14. 'দাক্ষিণাত্য' ক্ষত বলতে কী বোঝানো হয় ?

উঃ। সপ্তদশ শতকে ঔরঙ্গজেবের সময় মারাঠাদের শক্তি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ঔরঙ্গজেব ভেবেছিলেন যে দক্ষিণী রাজ্যগুলিকে জয় করতে পারলে অনেক বেশি রাজস্ব সেখান থেকে আদায় করা যাবে এবং মারাঠাদেরও দমন করা সহজ হবে। কিন্তু তিনি যা ভেবেছিলেন তা হয়নি। বহু বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুঘলদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয় এবং মারাঠা নেতা শিবাজীকেও স্বাধীন রাজা বলে মেনে নিতে হয়। দাক্ষিণাত্য যুদ্ধে মুঘলদের এই ক্ষত আর সারে নি। পঁচিশ বছর ধরে যুদ্ধ করে শেষে দাক্ষিণাত্যেই ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেব মারা যান। 


15.জায়গিরদারি ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উঃ। মনসবদাররা নগদ ও রাজস্ব বরাত দিয়ে বেতন পেতেন। এই রাজস্বের বরাতকে বলা হতো জায়গির। যিনি জায়গির পেতেন তাকে বলা হতো জায়গিরদার। এই ব্যবস্থাকে বলা হতো জায়গিরদারি ব্যবস্থা। জায়গির মানে জমি নয়, চাষজমি, বন্দর, বাজার এসব থেকে রাজস্ব আদায়ের বরাত জায়গির পেতেন। যে রাজস্ব জায়গিরদাররা আদায় করতেন তার এক অংশ দিয়ে তারা নিজেদের ভরণপোষণ এবং ঘোড়সওদারদের দেখাশোনা করত। এই ব্যবস্থাও বংশানুক্রমিক ছিল না। জায়গিরদারদের বদলিও করা হতো।


For many business ideas, visit this site

👉( https://www.psychoprincipal.com/)


2 comments: