Class 7 History Chapter -6 Important Questions And Answers | ক্লাস সেভেন ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় নগর, বণিক ও বাণিজ্য প্রশ্ন উত্তর - Psycho Principal

Fresh Topics

Wednesday, 1 February 2023

Class 7 History Chapter -6 Important Questions And Answers | ক্লাস সেভেন ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় নগর, বণিক ও বাণিজ্য প্রশ্ন উত্তর

 


ষষ্ঠ অধ্যায় - নগর, বণিক ও বাণিজ্য
প্রশ্ন উত্তর





সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস সেভেন ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | Class 7 History Chapter -6 Important Questions And Answers | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ  অধ্যায় নগর, বণিক ও বাণিজ্য গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর | #Class7 History Questions And Answers #Class 7th History Chapter-6 Questions And Answers


⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1

১. নগর ও শহর কথাটি কোথা থেকে এসেছে? 

উঃ। নগর শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে আর শহর শব্দটি ফারসি। 


২. ভৌগোলিক ভাবে দিল্লির অবস্থান কোথায় ?

উঃ। দিল্লির অবস্থান আরাবল্লি শৈলশিরার একটি প্রান্তে ও যমুনা নদীবিধৌত সমতলের সংযোগস্থলে।


৩. কুতুবউদ্দিন আইবকের আমলে কাকে কেন্দ্র করে দিল্লি তৈরি হয়েছিল?

উঃ। রাজপুত শাসকদের শহর কিলা রাই পিথোরাকে কেন্দ্র করে।


৪. 'কিলোঘড়ি প্রাসাদ' কে নির্মাণ করেন? 

উঃ। বলবনের পৌত্র কায়কোবাদ।


৫. তুঘলকাবাদ কে বানিয়েছিলেন? 

উঃ। সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক। 


৬. সুফি সাধকদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত কে ছিলেন? 

উঃ। শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়া।


৭. আকবর কোথায় নতুন রাজধানী তৈরি করেন ?

উঃ। সেলিম চিশতির স্মৃতিধন্য সিকরি গ্রামে আকবর নতুন রাজধানী ফতেহপুর তৈরি করেন।


৮. ফিরোজাবাদ শহর কে গড়েছিলেন? 

উঃ। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক। 


৯. দিল্লি শহরের প্রধান সমস্যা কী ছিল? 

উঃ। জলের অভাবই ছিল দিল্লি শহরের প্রধান সমস্যা।


১০. কোন সময়ে ও করে আগ্রা শহরের বিকাশ শুরু হয় ? 

উঃ। ১৫০৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সিকান্দর লোদির সময় আগ্রা শহরের বিকাশ শুরু হয়।


১১. কে কাকে হারিয়ে আগ্রা ও দিল্লি উভয়ই দখল করেন ? 

উঃ। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর পানিপতের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে হারিয়ে আগ্রা ও দিল্লি উভয়ই দখল করেন।


১১. জাহানপনাহ কে তৈরি করেন? 

উঃ। সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক।


১২. সুলতানি শাসনের সময়কালে দিল্লি সুলতানরা মোট কতবার তাদের শাসনকেন্দ্র বদল করেন? 

উঃ। এগারো বার।


১৩. জাহান আরা কে ছিলেন? 

উঃ। মুঘল সম্রাট শাহাজাহানের কন্যা। 


১৪. শেরশাহের শাসনকালে রাজধানী কোথায় ছিল?

উঃ। যমুনার পশ্চিমদিকে কিলা-ই কুহনা বা পুরোনো কেল্লা ছিল শেরশাহের রাজধানী।


১৫. সুলতানের দিল্লি কত বছর টিকে ছিল? 

উঃ। তিনশো বছর। 


১৬. কর আদায় এবং ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার জন্য দিল্লি সুলতানরা কী কী মুদ্রা তৈরি করেছিলেন?

উঃ। তঙ্কা নামে রূপোর মুদ্রা ও 'জিতল' নামে তামার মুদ্রা তৈরি করেছিলেন। 


১৭. ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কবে ও কোথায় গড়ে ওঠে।

উঃ। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়ে উঠেছিল। 


১৮. চিরাগ-ই-দিল্লি' নামে কে পরিচিত ছিলেন ?

উঃ। দিল্লির প্রখ্যাত সুফি সাধক শেখ নাসিরউদ্দিন 'চিরাগ-ই-দিল্লি' নামে পরিচিত ছিলেন।


 ১৯. ইংরেজ বণিকরা কোথায় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেছিল?

উঃ। ইংরেজ বণিকরা প্রথমে মসুলিপটনম ও পরে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেছিল। 


২০. ভারতীয় জাহাজের তুলনায় ইউরোপীয় জাহাজগুলি কেমন ছিল?

উঃ। ভারতীয় জাহাজের তুলনায় ইউরোপের জাহাজগুলি ছিল আকারে বড়ো এবং সেগুলি গভীর সমুদ্রে নৌযুদ্ধে পারদর্শী ছিল।


২১. শেরশাহ কী কী মুদ্রা চালু করেছিলেন? 

উঃ। শেরশাহ সোনা, রুপো ও তামা এই তিনরকমের ধাতুর মুদ্রা চালু করেন।


২২. মুঘল আমলে কী কী মুদ্রা ছিল ?

উঃ। মুঘল আমলে সোনার মুদ্রা মোহর বা আশরফি নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া এযুগে প্রধান মুদ্রা তৈরি রূপায়া এবং তামা দিয়ে তৈরি মুদ্রা দাম।


২৩. চরকার সুতো কেটে কাপড় বোনা কোন্ যুগে প্রথম শুরু হয়? 

উঃ। সুলতানি যুগে। 


২৪. 'হোন' কী? 

উঃ। এটি দক্ষিণ ভারতে বিজয়নগরে সোনা দিয়ে তৈরি মুদ্রার নাম।


২৫. কোন্ দেশের অধিবাসীদের দিনেমার বলা হয়? 

উঃ। ডেনমার্কের অধিবাসীদের দিনেমার বলা হয়। 


২৬. কোথায় ও কবে ডাচ্ ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি হয় ?

উঃ। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডামে তৈরি হয় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। 


২৭. কবে ও কোথায় ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি হয়েছিল ?

উঃ। ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে তৈরি হয়েছিল ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি।


⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3

১. ভাস্কো-দা-গামা কে ছিলেন?

উঃ। ইনি ছিলেন পোর্তুগিজ রাজার দূত। আফ্রিকার দক্ষিণের উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-দা-গামা ভারতের দক্ষিণে মালাবারের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছোন।


২. আলবুকার্ক কে ছিলেন?

উঃ। আরব সাগরের বাণিজ্যে আরবদের হঠিয়ে নিজেদের আধিপত্য জমাতে পোর্তুগিজ নৌ- সেনাপতি ডিউক অফ আলবুকার্ক ভারতে আসেন। তাঁর হাত ধরেই গোয়ায় পোর্তুগিজদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।


৩. টমাস রো করে ভারতে আসেন?

উঃ। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের শাসনকালে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস-এর দূত টমাস রো ভারতে আসেন। তাঁর চেষ্টায় ভারতে আগ্রা, পাটনা ও বুরহানপুরে ইংরেজদের কুঠি স্থাপিত হয়েছিল।


৪. দেওয়ালির সময় হিন্দু-মুসলমানরা কী করত?

উঃ। দেওয়ালির সময় হিন্দু-মুসলমানরা একসঙ্গে দিল্লির প্রখ্যাত সুফি সাধক শেখ নাসিরউদ্দিন চিরাগ-ই দিল্লির দরগায় আলোর উৎসব পালন করত।


৫. সব ভারতীয় শাসকই কেন ঘোড়া আমদানিতে উৎসাহ দিতেন ?

উঃ। ঘোড়া আমদানিতে সব ভারতীয় শাসক উৎসাহ দিতেন কারণ ভারতে ভালো মানের ঘোড়া জন্মাত না। প্রধানত পারস্য, এডেন ও ইয়েমেন থেকে ভারতে ঘোড়ার আমদানি হত।


৬. 'সরাফ'রা কী কাজ করত ?

উঃ। ভারতে ব্যবসা বাণিজ্যের জগতে সরাফ নামে এক শ্রেণির পেশার মানুষ ছিল। সরাফরা আজকের দিনের ব্যাঙ্কের মতো সেকালে টাকা বিনিময়ের কাজ করত। ধাতুর মুদ্রা কতটা খাঁটি তাও পরীক্ষা করে এরা দেখে নিত। তুর্কি শাসকদের আমলে কাগজের ব্যবহার শুরু হলে সরাফরা 'হুন্ডি' নামে এক ধরনের কাগজ চালু করেছিল। বণিকরা কোনো এক জায়গায় সরাফকে টাকা জমা দিয়ে সেই কাগজ কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় তা ভাঙিয়ে নিত। 


৭. শাহজাহান পোর্তুগিজদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন কেন? এর ফলে কী হয়?

উঃ। দাস ব্যবসা করার অপরাধে মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগিজদের হুগলি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে ওলন্দাজ, ইংরেজ ও ফরাসি বণিকরা অবাধে বাংলায় বাণিজ্য করার সুযোগ পেয়েছিল।


৮. মোঙ্গলদের কারণে কীভাবে দিল্লি শহরের গুরুত্ব বেড়ে যায়? 

উঃ। দিল্লিতে সুলতানি শাসন বেড়ে ওঠার সময়কালে মধ্য এশিয়ায় এক দুর্ধর্ষ জাতি ছিল মোঙ্গলরা। এই মোঙ্গলরা ইরাকের বাগদাদ শহরের অনেক ক্ষতি করেছিল। মুসলমান সভ্যতার একটি বড়ো কেন্দ্র ছিল বাগদাদ। বাগদাদের দুরবস্থার ফলে দিল্লির গুরুত্ব বেড়ে যায়, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে বহু লোক এনে দিল্লিতে বাস করতে শুরু করে। দিল্লি হয়ে ওঠে সুফি সাধকদের অন্যতম পীঠস্থান। এজন্য দিল্লির নাম হয়ে যায় হজরত-ই দিল্লি।


৯. দিল্লি শহরের বসতির বৈশিষ্ট্য কী ছিল ?

উঃ। দিল্লি শহরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর মিশ্র ধরনের বসতি, কোনো ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে এখানে বসতি গড়ে ওঠেনি। একই পেশার কারিগররা জাত-ধর্ম নির্বিশেষে কাজের টানে একসাথে একটি মহল্লায় থাকত। শহরের আশেপাশে গড়ে উঠেছিল কসবা বা শহরতলি। এগুলি ছিল ছোটো শহর। কসবাগুলি শহরের মতো পাচিল ঘেরা হতো না। দিল্লিতে গ্রাম ও শহরতলির সীমানাও নির্দিষ্ট ছিল না।


10. বিশ্বের বড়ো বড়ো সাম্রাজ্যগুলো কীভাবে পরিচিত হয়েছে লেখো।

উঃ। বিশ্বের বড়ো বড়ো সাম্রাজ্যগুলো সাধারণত কোনো একটি রাজবংশের নামে পরিচিত। যেমন ভারতের মৌর্য, গুপ্ত, চোল, মুঘল রাজবংশ। তেমনই চিনের মাঞ্জু, ইরানের সফাবি, ইরানের অটোমান, ইউরোপে ফ্রান্স হ্যাপসবার্গ, রোমানড, মেক্সিকোর আজটেক ও দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা সাম্রাজ্যগুলিও কোনো না কোনো রাজবংশের নামে পরিচিত হয়েছে। 


11. ব্যতিক্রম হিসেব রাজবংশের নাম ছাড়া সাম্রাজ্য গড়ে ওঠার উদাহরণ দাও।

উঃ। রাজবংশের নাম ছাড়া সাম্রাজ্য গড়ে ওঠার উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এথেন্স বা রোম শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সাম্রাজ্য। এছাড়া দিল্লির সুলতানি বা বিজয়নগরের সাম্রাজ্যগুলির কথাও বলা যায়। এইসব ক্ষেত্রে ‘রোম সাম্রাজ্য' বা ‘দিল্লি সুলতানি' নামটিই থেকে গেছে।


12.চাঁদনি চক নামটি তৈরি হয়েছিল কেন ?

উঃ। শাহজাহানের কন্যা জাহান আরা লালকেল্লা থেকে জাহানআরা বেগমের চক পর্যন্ত বিস্তৃত বাজারের উত্তর দিকে একটি সরাইখানা ও বাগান এবং দক্ষিণে একটি স্নানাগার তৈরি করে দিয়েছিলেন। জনশ্রুতি আছে চাঁদনি রাতে জলে চাঁদের আলো পড়ে চিক চিক করত বলে ওই জায়গার নাম হয়েছে চাঁদনি চক। এও শোনা যায় যে ওই বাজারে সোনা-রূপোর টাকার ঝিলিকের জন্য চাঁদনি চক নামটি হয়েছে।


13. মুঘল আমলে কী কী টাকাকড়ি বা মুদ্রার কথা জানা যায় ?

উঃ। মুঘল আমলের সোনার মুদ্রা মোহর বা ‘আশরফি' নামে পরিচিত ছিল। এযুগে প্রধান মুদ্রা ছিল রুপো দিয়ে তৈরি ‘রূপায়া’ যা দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য হত, প্রজারা কর দিত। এছাড়া ছিল তামা দিয়ে তৈরি মুদ্রা 'দাম'। 


14.হুন্ডি কী ?

উঃ। তুর্কি শাসকদের আমলে কাগজের ব্যবহার শুরু হলে সরাফরা এক ধরনের কাগজ চালু করে, একে হুন্ডি বলা হত। বণিকরা কোনো এক জায়গায় সরাফকে টাকা জমা দিয়ে হুন্ডি কাগজ কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় তা ভাঙিয়ে নিত। এর ফলে বণিকদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা নিয়ে যাওয়ার খুব সুবিধা হয়েছিল। 


15. সম্রাট আকবরের আমলের পোর্তুগিজ যাজকের বিবরণে যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কে কী জানা গেছে?

উঃ। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলের একজন পোর্তুগিজ যাজক ফান্দার আন্তেনিও মনসেরাট মুঘলদের যুদ্ধযাত্রার একটি বিবরণে লিখেছেন যে বিশাল মুঘল বাহিনীর ভরণপোষনের জন্য সেনাবাহিনীর যাত্রাপথের দুধারে সম্রাটের প্রতিনিধিরা রসদ জোগাড় করতে ছড়িয়ে পড়ত। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ে চলমান বাহিনীর সঙ্গে এসে জিনিসপত্র বিক্রি করে যেতে উৎসাহ দেওয়া হত। এইভাবে মধ্যযুগের ভারতে যুদ্ধযাত্রাকে কেন্দ্র করেও খাদ্যদ্রব্যের বাণিজ্য চলত।


16.সে সময়ের পথের হদিশ সম্পর্কে কী জানা গেছে?

উঃ। গঙ্গা ও যমুনা নদী ছিল উত্তর ভারতের প্রধান জলপথ। আগ্রা, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, রাজমহল, হুগলি, ঢাকা প্রভৃতি শহরগুলি নদীর মাধ্যমে যুক্ত ছিল। উত্তর-পশ্চিমে লাহোর থেকে শুরু করে দক্ষিণে সিন্ধু নদের মোহনা পর্যন্ত এলাকা জলপথে যুক্ত ছিল। রাজপুতানার আজমের হয়ে সড়কপথ ছিল। অপর পথটি ছিল মধ্য ভারতের বুরহানপুর হয়ে। ভারতের পূর্ব পশ্চিম তটের মধ্যে যোগাযোগ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ ছিল গুজরাটের সুরাট থেকে ঔরঙ্গাবাদ, গোলকোণ্ডা হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীরে মুসলিপটনম পর্যন্ত।


17.ইউরোপের মানুষরা কীভাবে নতুন দেশের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিল? 

উঃ। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে ইউরোপীয়রা সামুদ্রিক অভিযানে বেরিয়ে, ইউরোপের বাইরের দেশগুলোতে গিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য করে ধনসম্পদ আয় করতে চাইছিল। এইভাবে পালতোলা জাহাজে অভিযান করে তারা এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছায়। প্রথম দিকে স্পেন ও পোর্তুগালের অধিবাসীরা এই অভিযানে সক্রিয় ছিল। পরে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশের বণিক ও শাসকরা এতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। উৎসাহী অভিযানকারীরা | ইউরোপের নানা দেশের রাজা বা অভিজাতদের সমর্থনে অভিযান শুরু করত।


18.ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কবে ও কোথায় কোথায় গড়ে ওঠে ?

উঃ। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে গড়ে উঠেছিল ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডামে তৈরি হয় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। প্যারিসে ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি


19. বিদেশি-বণিকরা বাংলার কোথায় কোথায় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেছিল ?

উঃ। বিদেশি-বণিকদের মধ্যে পোর্তুগিজরা বাংলার ব্যান্ডেলে তাদের ঘাঁটি গড়েছিল। চুঁচুড়ায় ডাচেরা, চন্দননগরে ফরাসিরা, শ্রীরামপুরে দিনেমাররা এবং কলকাতায় ইংরেজরা তাদের বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করেছিল।


20 .ওলন্দাজ কাদের বলা হয় ?

উঃ। নেদারল্যান্ড দেশের লোকেদের বলা হয় ডাচ। এরা বাংলা ভাষায় ওলন্দাজ নামে পরিচিত। ওলন্দাজ নামটি এসেছে পোর্তুগিজ শব্দ হলান্দেজ থেকে।


⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5

1. ভারতে বিদেশি বণিকদের আগমন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ লেখো। 

উঃ। ইউরোপ থেকে জলপথে ভারতে আসার জন্য পোর্তুগিজরাই প্রথমে উৎসাহ দেখায়। তাদের প্রধান উৎসাহ ছিল ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মশলা বাণিজ্যকে দখল করা। সে সময় ইউরোপের ভারতের মশলা ও গোলমরিচের চাহিদা ছিল খুব বেশি। তাই তারা ভেবেছিল যে ভারতের মশলা কিনে ইউরোপের বাজারে বিক্রি করলে অনেক লাভ হবে। এরপর পোর্তুগালের রাজার দূত ভাস্কো দা গামা আফ্রিকার দক্ষিণের উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের দক্ষিণে মালাবারের আরব সাগরের তীরে কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছোন। ভাস্কো-দা-গামার পরে পোর্তুগিজ নৌ-সেনাপতি ডিউক অফ আলবুকার্ক ভারতে আসেন। তিনি আরব সাগরের বাণিজ্যে আরবদের সরিয়ে নিজেদের আধিপত্য জমান। তার হাত ধরেই গোয়ায় পোর্তুগিজদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকের ইউরোপে অনেকগুলো বাণিজ্যিক কোম্পানির পত্তন ঘটে। এদের মধ্যে ইংরেজ, ডাচ বা ওলন্দাজ, ফরাসি, দিনেমার প্রমুখ বণিকরা ভারতে বাণিজ্যে করতে আসে মুঘল আমলে। সুরাট ও দাক্ষিণাত্যে মুসুলিপটনম বন্দর এলাকায় প্রথমে ওলন্দাজরা জমিয়ে বসেছিল । কিছুকাল পরে ডাচরাও বাংলাদেশে চলে আসে। ইংরেজ বণিকরা প্রথমে মসুলিপটনম ও পরে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেছিল। ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূত টমাস রো মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের রাজসভায় এসেছিলেন। তাঁর চেষ্টায় আগ্রা, পাটনা ও বুরহানপুরে ইংরেজদের কুঠি স্থাপিত হয়। 


2. অষ্টাদশ শতকের ভারতে বণিকরা কীভাবে বাণিজ্য করত?

উঃ। অষ্টাদশ শতকের ভারতে বিভিন্ন বণিক সম্প্রদায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের পশরা সাজিয়ে বাণিজ্য করেছে। সেকালের সড়কপথ ও জলপথই ছিল যাতায়াতের মাধ্যম। এই পথ ছিল অনেক ক্ষেত্রে দুর্গম এবং পথে নানা বিপদের আশঙ্কাও ছিল। তা সত্ত্বেও বণিকরা ভারবাহী পশুর পিঠে করে কিংবা পালতোলা নৌকা ও জাহাজে করে মালপত্র নিয়ে দেশের একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে বেচাকেনা করত। এদের মধ্যে ভারতীয় ছাড়াও ভারতের বাইরে থেকে আসা অনেক ভিনদেশী বণিকও ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বাণিজ্যপথের ধারে, নদী কিংবা সমুদ্রের পাড়ে গড়ে উঠেছিল নানা হাট, মণ্ডি, গঞ্জ ও ছোটো-বড়ো শহর।


3. মধ্যযুগে সমুদ্রবাণিজ্যে কারা অংশগ্রহণ করত ?

উঃ। মধ্যযুগে সমুদ্র বাণিজ্যে নানা দেশের বণিকরাই অংশগ্রহণ করত, ভারতীয় বণিকদের মধ্যে গুজরাটি, মালাবারি, তামিল, ওড়িয়া, তেলেগু ও বাঙালি বণিকরা ব্যবসায় সুনাম অর্জন করেছিল। এই বণিকরা ধর্মে ছিল হিন্দু, মুসলমান ও জৈন। এরা আরব, পারসিক ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বণিকদের সঙ্গে বাণিজ্য করত। এদের মধ্যে খুবই ধনী বণিকদের বলা হত বণিক সম্রাট। বড়ো বড়ো ভারতীয় বণিকদের নিজস্ব জাহাজ থাকত, বাকি বণিকরা অন্যদের জাহাজে করে জিনিসপত্র পাঠাত। 


4.অনেক কালের ‘দিল্লি'—আলোচনা করো।

উঃ। দিল্লি শহরটি অনেকবার ভাঙা গড়া হয়েছে। মহাভারতে ইন্দ্রপ্রস্থ নামে যে নগরের কথা পাওয়া যায় তাকেই কেউ কেউ দিল্লি নগরের আদি রূপ মনে করেন। মৌর্য শাসকদের জনৈক বংশধরের আমলে খ্রিঃ পূঃ প্রথম শতকে দিল্লির নাম পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় একাদশ শতকের রাজপুত শাসকদের একটি গোষ্ঠী দিল্লি শাসন করত, তাদের হঠিয়ে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে চৌহান রাজপুতরা দিল্লি দখল করে। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে মহম্মদ ঘুরির সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মধ্যযুগের দিল্লির সাতটি নাগরিক চিহ্ন পাওয়া গেছে।


5. নিজামউদ্দিন আউলিয়া ও সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলককে নিয়ে দিল্লি শহরের যে বিখ্যাত গল্পটি রয়েছে তার বিবরণ দাও ।

উঃ। একবার সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে শহরের বাইরে নির্বাসন দিয়েছিলেন। এরপর সুলতান বাংলাদেশে এক যুদ্ধযাত্রায় যান। যাওয়ার সময় তিনি হুকুম দেন যে তিনি ফেরার আগেই যেন নিজামউদ্দিন পাকাপাকিভাবে শহর ছেড়ে চলে যান। নিজামউদ্দিনের শিষ্যরা তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হলে তিনি শিষ্যদের বলেন ‘হনুজ দিল্লি দূর অস্ত’ অর্থাৎ দিল্লি এখনও অনেক দূর। এদিকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে সুলতানকে স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি একটি মঞ্চ ভেঙে চাপা পড়ে গিয়াসউদ্দিন মারা যান। তাঁর আর দিল্লি ফেরা হয় না। এই ঘটনায় দিল্লিতে শেখ নিজামউদ্দিনের জয়জয়কার ঘোষিত হয়।


6. সুলতানি আমলে জলসংরক্ষণ ও জলসরবরাহ সম্পর্কে কী জানা যায় ? 

উঃ। দিল্লি শহরের জল সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল 'হৌজ' বা 'তালাও'। সুশাসনের প্রতীক হিসেবে জনসাধারণের জন্য সুলতান জলাধার খনন ও সংস্কার করতেন। সুলতান ইলতুৎমিশের খনন করা আটকোণা জলাধার 'হৌজ-ই-শামসির বর্ণনা দিয়েছেন ইবন বতুতা। আলাউদ্দিন খলজি আরও বড়ো ‘হৌজ-ই আলাই' নামে চারকোণা জলাধার খনন করেন। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক নতুন বানানো তুঘলকাবাদে একটি জলাশয় তৈরি করেন যেখানে উঁচু বাঁধ দিয়ে জল ধরে রাখা হত। অপরদিকে সুলতানি রাষ্ট্রের বিরোধী স্থানীয় শক্তি শহরের অধিবাসীদের বিপাকে ফেলার জন্য হৌজ-ই-শামসির নালাগুলির উপর বাঁধ দিয়ে দিত। সুলতান ফিরোজ তুঘলক এইসব নালার ওপর তৈরি বাঁধ ভেঙে জলসরবরাহ স্বাভাবিক করেন।


7. খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তিকেন্দ্রগুলির গুরুত্ব কী ছিল?

উঃ। আকবরের শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন কেন্দ্রের বারবার বদল ঘটেছে। এক্ষেত্রে কোনো ভৌগোলিকা এলাকা নয় মুঘল শাসক কোথায় কেন অবস্থান করেছেন সেটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মুঘল আমলে আগ্রা, ফতেপুর সিকরি, এলাহাবাদ ও লাহোর প্রত্যেকটি শহর ছিল অতি সুরক্ষিত ও প্রায় দুর্ভেদ্য দুর্গনগরী। সেখ সেলিম চিশতির স্মৃতিধন্য সিকরিতে আকবর নতুন রাজধানী ফতেহপুর তৈরি করেন। জলের অভাবে তিনি সেখান থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে লাহোর চলে যান। লাহোর থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নজরে রাখা অনেক সুবিধাজনক ছিল। ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি পুনরায় আগ্রা থেকে শাসন পরিচালনা করেন। এলাহাবাদ দুর্গ থেকে গঙ্গা যমুনা দোয়াব অঞ্চলে নজরদারি করা যেত। আকবরের আমলে বুন্দেলখণ্ডের প্রধান দুর্গনগরী গোয়ালিয়র, রাজপুতানার চিতোর ও রণথম্ভোর এবং দাক্ষিণাত্যের অসিরগড় দুর্গ মুঘলরা দখল করলেও উত্তর ভারতের দুর্গগুলিই ছিল মুঘলদের প্রধান শক্তিকেন্দ্র।


8. দিল্লির লালকেল্লার বিবরণ দাও।

উঃ। দিল্লিতে অবস্থিত লালকেল্লার আয়তন আগ্রা দুর্গের দ্বিগুণ, এর পূর্বদিকে যমুনা নদী ও পশ্চিমে ছিল পরিখা, দুর্গের চারটি বড়ো দরজা ও দুটি ছোটো দরজা ছিল। এর মধ্যে একভাগে ছিল রাজপরিবারের বাসস্থান ও অন্যদিকে ছিল বিভিন্ন দপ্তর। সেই সময় এটি বানাতে খরচ হয়েছিল ৯১ লক্ষ টাকা। দুর্গ ও শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া জলবাহী নালাগুলিকে বলা হত নেহর-ই-বিহিশত বা স্বর্গের খাল। এগুলিকে ইসলামি রীতিতে সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির প্রতীক ভাবা হত।


9. শাহজাহানাবাদ শহরটি শাহজাহান কেন তৈরি করেন?

উঃ। যমুনা নদীর পাড় ভেঙে আগ্রা শহরটি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল। শহরের পথঘাট ও হয়ে উঠেছিল ঘিঞ্জি। মুঘল বাদশাহের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য আগ্রার প্রাসাদদুর্গ আর যথেষ্ট বড়ো ছিল না। তাই ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহানাবাদ শহরটি তৈরি হয়েছিল। এতে ভারতের রাজনীতিতে দিল্লি শহরের গুরুত্বকেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল। ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান আগ্রা থেকে শাহজাহানাবাদে চলে আসেন।


10. কেন সুলতানদের সময়কার পুরানো দিল্লির আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়েছিল?

উঃ। চতুর্দশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দিল্লি শহরের চেহারা বদলে যায়। আগেকার মতো আরাবল্লির পাথুরে এলাকায় শহর • তৈরি না-করে সুলতান ফিরোজ তুঘলক যে ফিরোজাবাদ শহর তৈরি করলেন তার মধ্যমণি ছিল ফিরোজ শাহ কোটলা। উঃএই শহর ছিল যমুনা নদীর পাড় বরাবর। এই পরিকল্পনার ফলে শহরে জলের সমস্যা মেটানো গেল। নদীপথে বয়ে আনা জিনিসপত্র শহরের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সহজ হল ও তার জন্যে খরচও কমল। এর ফলে সুলতানদের পুরানো দিল্লি শহর আস্তে আস্তে ক্ষয় পেতে লাগল।


11.কেন, কোথায় শাহজাহানাবাদ শহরটি গড়ে উঠেছিল? 

উঃ। দিল্লিতে সুলতানি আমলে যে শহরগুলো গড়ে উঠেছিল তাদের থেকে খানিকটা দূরে যমুনা নদীর পশ্চিমে একটি এ উঁচু জায়গায় শাহজাহানাবাদ শহরটি বাদশাহ শাহজাহান তৈরি করেছিলেন। যমুনা নদীর পাড় ভেঙে আগ্রা শহরটি ক্রমশ উ ক্ষতিগ্রস্ত ও ঘিঞ্জি হয়ে পড়ছিল। এছাড়া আগ্রার প্রাসাদ দুর্গ মুঘল বাদশাহের জাঁকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট বড়ো কি ছিল না তাই শাহাজাহানাবাদ শহরটি তৈরি করা হল। বাদশাহ শাহজাহান সুলতানদের আমলের দিল্লি শহরের ধ্বংসাবশেষকে রাজধানী হিসাবে বেছে নেননি। তিনি একটি নতুন এলাকায় শহর পত্তন করে সার্বভৌম শাসক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই শহর বানানোর সময় ইসলামি ও হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ‘শাহজাহানাবাদ’ তৈরি হয়েছিল ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে। ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান আগ্রা থেকে সেখানে চলে আসেন।


12. ইউরোপীয় কোম্পানির কুঠিগুলি কেমন ছিল?

উঃ। ইউরোপীয় বণিক কোম্পানিগুলি আস্তে আস্তে ভারতে নানা ঘাঁটি বানাতে শুরু করে। কোম্পানির কুঠিতে । ইউরোপীয় বণিকরা নিজেদের মতো করে বাড়িঘর তৈরি করত। কুঠিগুলো তারা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে দুর্গের মতো সুরক্ষিত করে রাখত। এখানে তাদের বাসগৃহ ও মালের গুদাম থাকত। এইভাবে সপ্তদশ শতকের ভারতে গুজরাত, উত্তর ও দক্ষিণ করমণ্ডল এবং বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল ইউরোপীয় বণিকদের প্রধান অঞ্চল।


13.মুঘল শাসকরা কীভাবে ব্যবসাবাণিজ্যে উৎসাহ দিতেন?

উঃ। মুঘল শাসকরা বাণিজ্য করতে বণিকদের উৎসাহ দিতেন। মালের ওপর শুল্ক ছাড় দিয়ে, কুঠি বানানোর অনুমতি দিয়ে তাঁরা বণিকদের সুবিধা করে দিতেন। মুঘল অভিজাতদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি বাণিজ্য করত। তবে এই প্রয়াস এ ছিল খুবই সীমিত। মুঘল সম্রাটরা, রাজপুত্ররা ও অভিজাতরা নিজেদের প্রয়োজনে ও শখ মেটাতে নিজেদের কারখানায় কারিগরদের দিয়ে নানা ধরনের শৌখিন জিনিস, অস্ত্র, বিলাসদ্রব্য তৈরি করাতো। তবে এগুলো বাণিজ্যের স্বার্থে তৈরি - হত না।


14. খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে দিল্লি কেন একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে উঠেছিল? 

উঃ। ভৌগোলিকভাবে দিল্লির অবস্থান আরাবল্লি শৈলশিরার একটি প্রাপ্ত ও যমুনা নদীবিধৌত সমতলের সংযোগস্থলে। এখানে আরাবল্লির পাথর দিয়ে জমির ঢাল অনুযায়ী সুরক্ষিত দুর্গ নির্মাণ করা সহজ ছিল। আবার যমুনা নদী এখানে প্রধান জলপথ এবং শহরের পূর্ব দিকের প্রাকৃতিক সীমানা। ফলে বহু যুগ ধরেই একদিকে রাজন্যবর্গ, অন্যদিকে বণিকবৃন্দ এই অঞ্চলটির দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। মধ্যযুগে দিল্লি শহরের উৎপত্তি ও বিকাশের দুটি ভাগ ছিল। একটি হল ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকের দিল্লি, অপরটি হল সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের তৈরি শাহজাহানাবাদ। কুতুবউদ্দিন আইবকের আমলে দিল্লি তৈরি হয়েছিল রাজপুত শাসকদের শহর কিলা রাই পিথোরাকে কেন্দ্র করে। এটাই ছিল সুলতানি আমলের প্রথম দিল্লি বা কুতুব দিল্লি। জালালউদ্দিন খলজির আমলে একে ঘিরেই শহর-ই-নও বা নতুন শহর তৈরি হয়। মহম্মদ বিন তুঘলকের আমলে কুতুব দিল্লি সিরি ও তাঁর নিজের তৈরি জাহানপনাহকে একটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে আরও বড়ো শহর হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ শেষ হয়নি। তাই বলা যেতে পারে, এত কিছুর মধ্যে কিন্তু সুলতানি আমলের প্রথম দিল্লি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে উঠেছিল।


15.শাহজাহানাবাদের নাগরিক চরিত্র কেমন ছিল?

উঃ। শাহজাহানাবাদের নাগরিক বসতি ছিল মিশ্র প্রকৃতির। এখানে নানা শ্রেণির মানুষ জনে বসবাস করত নানা ধরনের বাড়িতে। রাজপুত্র ও উচ্চপদস্থ আমিররা সুন্দর বাগানবাড়িতে থাকতেন। ধনী বণিকরা টালি দিয়ে সাজানো ইট ও পাথরের বাড়িতে থাকতেন। সাধারণ ব্যবসায়ীরা থাকত নিজেদের দোকানের ওপরে বা পেছন দিকের ঘরে। সবচেয়ে বড়ো ও সুন্দর বাড়িকে বলা হত 'হাভেলি'। এর থেকে নীচুস্তরের বাড়িকে 'মকান' ও 'কোঠি' বলা হত। সবচেয়ে ছোটো ঘরকে বলা হত ‘কোঠরি’। এ ছাড়া ছিল আলাদা বাংলো বাড়ি। বড়ো বড়ো বাড়ির আশপাশে মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি বহু ছোটো ছোটো কুঁড়েঘর ছিল। এইসব কুঁড়েতে সাধারণ সৈনিক, দাসদাসী, কারিগর প্রমুখ মানুষজন থাকত। 5, কুঁড়েতে আগুন লেগে মাঝেমধ্যে অনেক লোক ও গবাদিপশু মারা যেত বলে জানা যায়। তবে বসতি এলাকার মধ্যে কোনো বিভাজন ছিল না। উচ্চপদস্থ আমির ও গরিব কারিগর একই মহল্লায় পাশাপাশি থাকত। শাহজাহানাবাদের প্রধান রাজপথ ছিল দুটি। রাজপথকে 'বাজার' বলা হত, কারণ তার দু-পাশে সারিবদ্ধ দোকান ছিল। কোনো কোনো উৎসবে সব সম্প্রদায়ের মানুষ এক হয়ে পরব উদযাপন করত। যেমন দেওয়ালির সময় হিন্দু- মুসলমান একইসঙ্গে দিল্লির প্রখ্যাত সুফি সাধক শেখ নাসিরউদ্দিন ‘চিরাগ-ই-দিল্লি'র দরগায় আলোর উৎসব পালন করত। মহরমে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায় যৌথভাবে অংশ নিত।


16. দিল্লির সুলতানদের আমলে ব্যবসাবাণিজ্যের বিস্তার কেন ঘটেছিল?

উঃ। দিল্লির সুলতানদের আমলে ব্যবসাবাণিজ্যের বিস্তার ঘটেছিল। এর কারণ ছিল অনেকগুলো। ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকে দিল্লির সুলতানরা কয়েকটি নতুন শহর তৈরি করেন বা পুরানো শহরগুলোতে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করেন। এইসব শহরে সুলতানরা ও তাঁদের অভিজাতরা, সৈনিকেরা ও সাধারণ মানুষ বসবাস করতে শুরু করলে শহরগুলো জনবহুল হয়ে ওঠে। শহরগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও বাড়িঘর তৈরির কাঁচামালের জোগান দেওয়ার জন্যে আমদানি ও রপ্তানির বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। আবার, সে-যুগে সুলতানরা তাদের সামরিক প্রয়োজনে বিরাট সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখতেন। সুলতান আলাউদ্দিন খলজির আমল থেকে এদের ভরণ-পোষণের জন্য রাষ্ট্র কৃষকদের কাছ থেকে নগদে কর আদায় করত। ওই নগদ টাকা জোগাড় করার জন্য কৃষকরা ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের উৎপন্ন শস্য বিক্রি করে দিতে বাধ্য হত। সেই শস্য নিয়েও বাণিজ্য চলত। তা ছাড়া, সুলতান ও অভিজাতদের বিলাস-ব্যসনের জন্য প্রয়োজনীয় মূল্যবান জিনিসের ব্যবসা সে-যুগের বাণিজ্যের আর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। 


17. মধ্যযুগে ভারতে দেশের ভেতরে বাণিজ্যের ধরনগুলি কেমন ছিল তা লেখো।

উঃ। মধ্যযুগে ভারতে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। দেশের ভেতরে সাধারণত দুই ধরনের বাণিজ্য হত। প্রথমত, গ্রাম ও শহরের বাণিজ্য এবং দ্বিতীয়ত, দুটি শহরের মধ্যেকার বাণিজ্য। জনবহুল শহরগুলোর অধিবাসীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য গ্রাম থেকে শহরে যেসব পণ্য রপ্তানি হত সেগুলো ছিল কমদামি জিনিস, কিন্তু অনেক বেশি পরিমাণে এইসব জিনিস গ্রাম থেকে শহরে আসত। এদের মধ্যে ছিল নানা ধরনের খাদ্যশস্য, খাবার তেল, ঘি, আনাজ, ফল, লবণ ইত্যাদি। শহরের বাজারে এইসব পণ্য বিক্রি হত। আলাউদ্দিন খলজির আমলে দিল্লিতে চারটি বড়ো বাজার ছিল। এইসব বাজারে খাদ্যদ্রব্য, ঘোড়া, কাপড় ইত্যাদি বিক্রি হত। আবার এক শহর থেকে আর-এক শহরে রপ্তানি হত প্রধানত বেশি দামের শৌখিন জিনিসপত্র, যেগুলো ধনী, অভিজাতদের জন্যই কারিগররা তৈরি করত। সুলতানদের রাজধানী দিল্লি শহরে সাম্রাজ্যের নানা এলাকা থেকে দামি মদ, সূক্ষ্ম মসলিন বস্ত্র আমদানি করা হত। তা ছাড়া বাংলাদেশ, করমণ্ডল এবং গুজরাতের সুতি ও রেশমের কাপড়ের চাহিদা ছিল দেশের সর্বত্র। এই যুগে প্রথম চরকায় সুতো কেটে কাপড় বোনা শুরু হয়েছিল। সুলতানি যুগে নানা হস্তশিল্পের বাণিজ্যও হত। এর মধ্যে ছিল চামড়া, কাঠ ও ধাতু দিয়ে তৈরি জিনিস, গালিচা ইত্যাদি। এই যুগেই ভারতে প্রথম কাগজ তৈরি করা শুরু হয়।

2 comments:

  1. ভালো লাগলো ধন্যবাদ

    ReplyDelete
  2. Khub bhalo thank you

    ReplyDelete