Class 7 History Chapter -7 Important Questions And Answers | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস সেভেন ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 2 February 2023

Class 7 History Chapter -7 Important Questions And Answers | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস সেভেন ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা

 

জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি : সুলতানী ও মুঘল যুগ
প্রশ্ন উত্তর



অষ্টম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো



সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস সেভেন ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | Class 7 History Chapter -7 Important Questions And Answers | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম  অধ্যায় জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি : সুলতানী ও মুঘল যুগ গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর | #Class7 History Questions And Answers #Class 7th History Chapter-7 Questions And Answers


⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1

১. কৃষিপণ্যকে ভিত্তি করে কোন্ শিল্প চলত? 

উঃ। কারিগরী শিল্প।


২. মধ্যযুগে সমাজ কীরূপ ছিল? 

উঃ। মধ্যযুগে সমাজ ছিল যৌথ পরিবারভিত্তিক। 


৩. মধ্যযুগে কোন্ খেলা খুব জনপ্রিয় ছিল? 

উঃ। কুস্তি খুব জনপ্রিয় খেলা ছিল।


৪. শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোনটি? এটি কোন্ লিপিতে লেখা ?

উঃ। শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম গুরু গ্রন্থসাহিব। এটি গুরুমুখি লিপিতে লেখা।


৫. মীরাবাঈ রচিত অমূল্য সম্পদ কোন্‌গুলি?

উঃ। মীরাবাঈ রচিত পাঁচশোরও বেশি ভক্তিগীতি, ভারতীয় সংগীত ও সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।


৬. ‘দোহা” কাকে বলে? 

উঃ। হিন্দি ভাষায় দুই পংক্তির কবিতাকে বলে দোহা। 


৭. ভারতে চিশতি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? 

উঃ। মইনউদ্দিন চিশতি।


৮. সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? 

উঃ। বদরউদ্দিন জাকারিয়া ।


৯. বাংলায় ভক্তি আন্দোলনের প্রসার কার চেষ্টায় জোরদার হয়? 

উঃ। শ্রীচৈতন্যদেবের চেষ্টায়। 


১০. ‘চৈতন্য চরিতামৃত' গ্রন্থ কে রচনা করেন? 

উঃ। কৃষ্ণদাস কবিরাজ ।


১১. ইসলামীয় স্থাপত্যশিল্পের মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল? 

উঃ। এই স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল খিলান ও গম্বুজ।


১২. কুতুবমিনার বানানোর কাজ কে শেষ করেন? 

উঃ। সুলতান ইলতুৎমিশ। 


১৩. শের শাহের সমাধি-সৌধটি কোথায় অবস্থিত? 

উঃ। বিহারের সাসারামে অবস্থিত।


১৪. সম্রাট জাহাঙ্গিরের আত্মজীবনীর নাম কী? 

উঃ। তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরি। টেরাকোটার কাজ করা মন্দির কোথায়


১৫. দেখা যায়? 

উঃ । বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে। 


১৬. আদিনা মসজিদ কে তৈরি করেন? 

উঃ। সিকান্দার শাহ পাণ্ডুয়ায় আদিনা মসজিদ তৈরি করেন। 


১৭. গৌড়ের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ কোনটি? 

উঃ। বড়োসোনা মসজিদ।


১৮. বৈজু বাওরা কে ছিলেন? 

উঃ। বৈজু বাওরা ছিলেন সেই যুগের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী।


১৯. ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য কে রচনা করেন? 

উঃ। বড়ু চণ্ডীদাস। 


২০. রামায়ণ ও মহাভারত কারা বাংলায় অনুবাদ করেন ?

উঃ। রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা এবং মহাভারত অনুবাদ করেন কাশীরাম দাস। 


২১. হুমায়ুননামা কে রচনা করেন? 

উঃ। ফারসি ভাষার হুমায়ুননোমা রচনা করেন গুলবদন বেগম।


২২. আবুল ফজল কোন্ কোন্ গ্রন্থ রচনা করেন? 

উঃ । আকবরনামা ও আইন-ই আকবরি। 


২৩. শ্রীকৃষ্ণবিজয় কে রচনা করেন? 

উঃ। মালাধর বসু।


২৪. কার রচিত কোন্ কাব্যে আলাউদ্দিন খলজির চিতোের অভিযানের কথা রয়েছে?

উঃ। সৈয়দ আলাওল রচিত পদ্মাবতী কাব্যে। 


২৫. ভারতে 'চরকা' যন্ত্রটির উল্লেখ কোথায় পাওয়া যায় ?

উঃ। ভারতে 'চরকা' যন্ত্রের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ইমামির ফুতুহ-উস-সালাতিন গ্রন্থে।


২৬. ভারতে কবে ব্লক' ছাপাইয়ের সূচনা হয় ? 

উঃ। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতক থেকে ভারতে ব্লক ছাপাইয়ের সূচনা হয়।


২৭. জৌনপুরী রাগ কে তৈরি করেন?

উঃ। হোসেন শাহ শবকি নিজে সংগীত রাগ তৈরি করেছিলেন, একে হোসেনি বা জৌনপুরী রাগ বলে। 


২৮. সুফ্ কথার অর্থ কী? 

উঃ। পশমের তৈরি এক টুকরো কাপড়।


২৯. অসমে কে ভক্তিবাদের প্রচার করেছিলেন? 

উঃ । শ্রীমন্ত শঙ্করদেব। 


৩০. মির্জা নাথান কে ছিলেন? 

উঃ। সম্রাট জাহাঙ্গিরের সেনাপতি।


৩১. বিজাপুরের গোলগম্বুজ কে নির্মাণ করেন? 

উঃ। মহম্মদ আদিল শাহ।


৩২. হাম্পি কোন রাজ্যের রাজধানী ছিল? 

উঃ। বিজয়নগর। 


৩৩. নৃত্যের জন্য কুমিল পোশাক কে তৈরি করেন? 

উঃ। মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র।


৩৪. রাজতরঙ্গিনী কে রচনা করেন? 

উঃ। কবি কলহন। 


৩৫. বাবরের আত্মজীবনীর নাম কী? 

উঃ। তুজুক-ই-বাবরি।


৩৬. কিতাব-উল-হিন্দ গ্রন্থটি কে রচনা করেন? 

উঃ। অল বিরুনি।


৩৭. কোথায় প্রথম কাগজ আবিষ্কার হয়? 

উঃ । চিনদেশে।


৩৮. ভারতে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা কারা করেন? 

উঃ। ইউরোপীয় মিশনারিরা। 


৩৯. ‘চরখি’ কী? 

উঃ। তুলো বুনবার যন্ত্র।


৪০. ‘শিরিন কলম' কার ছদ্মনাম ছিল? 

উঃ। চিত্রশিল্পী খোয়াজা আবদুস সামাদের ছদ্মনাম ছিল শিরিন কলম। 


৪১। কোন্ সাধকদের হাত ধরে দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদ জনপ্রিয় হয়েছিল? 

উঃ। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের গোড়ায় অলভার এবং নায়নার সাধকদের হাত ধরে দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদ জনপ্রিয় হয়েছিল।



⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3

1.সেকালের সময় কীভাবে মাপা হতো? 

উঃ। সময় বোঝার জন্য সেকালে সমস্ত দিন-রাতকে আটটি প্রহর-এ ভাগ করা হতো। একেকটি প্রহর ছিল আজকের হিসেবে তিনঘণ্টা, আটটি প্রহর আবার ষাটটি ঘড়ি বা ঘটিকাতে বিভক্তি ছিল। এক ঘড়ি সমান ছিল আজকের চব্বিশ মিনিট। প্রতিটি ঘড়ি আবার ষাটটি পল-এ ভাগ করা ছিল। এইভাবে দিনরাত্রি মিলিয়ে হতো তিনহাজার ছশো পল। 


2. কীভাবে সময় বোঝা যেত ও সময় জানান দেওয়া হত?

উঃ। প্রহর ও ঘড়ির যথাযথ সময় বুঝে নেওয়া যেত পাঁজির সাহায্যে। জলঘড়ি দেখে সময় নির্বাচন করা হত। প্রধান শহরগুলিতে ঘণ্টার আওয়াজ করে সময় কত হলো তা জানান দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে এই কাজের জন্য আলাদা একটা দফতর ছিল।


3. মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণেরা কীভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করতেন?

উঃ। মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণেরা সমাজের অন্যান্য শ্রেণিদের সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকারের উপর বিভিন্নভাবে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করতেন। অব্রাহ্মণদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের স্বাধীনতা ও সমানভাবে মন্দিরে যাওয়ার অধিকার ছিল না। অন্য জাতি বা বর্ণের মধ্যে একসঙ্গে খাওয়া বা বিয়ে করাও নিষিদ্ধ ছিল।


4. গুরু নানক সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উঃ। মধ্যযুগের ভক্তি সাধকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গুরু নানক। ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। কোনোরকম ভেদাভেদ না মেনে সব মানুষকে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন। তিনি নিজে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে যাননি, তবে তাঁর দর্শন ও বাণীর ওপর নির্ভর করে পরবর্তীকালে শিখধর্ম গড়ে ওঠে। এই ধর্মের দশজন গুরুর কথা জানা যায় যাদের মধ্যে প্রথম ছিলেন গুরু নানক। ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে গুরু নানকের জীবনাবসান হয়।


5. কবীর সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উঃ। কবীর ছিলেন খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের একজন বিখ্যাত ভক্তিসাধক। বারাণসীতে এক মুসলিম জোলাহা বা তাঁতি পরিবারে পালিত হন কবীর। অনেকে মনে করেন যে কবীর ছিলেন রামানন্দের একজন শিষ্য। তাঁর কাছে সবধর্মই ছিল সমান। তাই কবীরের মতে রাম, হরি, আল্লাহ, সাঁই, সাহেব এসবই ছিল এক ঈশ্বরের বিভিন্ন নাম। কবীরের ভক্তিচিন্তায় ইসলাম একেশ্বরবাদের সঙ্গে বৈব, নাথযোগী এবং তান্ত্রিক বিশ্বাসও মিশে গিয়েছিল। তখনকার সামাজিক জীবনে কবীরের ভাবনার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাঁর গান এবং দোহা শুনলে বোঝা যায় তিনি ধর্মের লোক দেখানো আচারের বিরোধী ছিলেন। ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে কবীরের জীবনাবসান হয় ।


6. পির ও মুরিদ কাদের বলা হত?

উঃ। সুফি ছিল একটি সহজিয়া ধারার ন্যায় সাধনধারা। সুফি সিলসিলা গুলির প্রধান ব্যাক্তি হতেন কোনো একজন গুরুত্বপূর্ণ সাধক। সুফি ধারায় গুরুকে বলা হত পির। তিনি তার শিষ্যদের সঙ্গে 'খানকা'য় বা আশ্রমে থাকতেন। মুরিদ বলা হত শিষ্যকে। সুফি ভাবনায় পির বা গুরু এবং মুরিদ অর্থাৎ শিষ্যের সম্পর্ক ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


7. সুফিদের জনপ্রিয়তা কীরূপ ছিল ?

উঃ। সুফি সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি দিল্লিতে চিশতি মতবাদকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। গোঁড়া উলেমার দল এবং সুহরাবর্দিরা এতে রেগে গিয়ে কাকির বিরুদ্ধে সমা বা সুফি 'কীর্তন' প্রভৃতি অ-ইসলামীয় আচার-আচরণ করার অভিযোগ করেন। এর প্রতিবাদে বখতিয়ার কাকি দিল্লি শহর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষ তাঁর সঙ্গে বহুদূর চলে আসেন। এই দেখে কাকি আবার ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনার ফলে সুফিদের জনপ্রিয়তা কতটা ছিল তা বোঝা যায়।


8. বা-শরা এবং বে-শরা কাদের বলা হত?

উঃ। সুফিরা ছিলেন প্রধানত দুই প্রকারের বা-শরা এবং বে-শরা। যাঁরা ইসলামীয় আইন বা শরা মেনে চলতেন তাঁদের বলা হত বে-শরা। চিশতি এবং সুহরাবর্দিরা ছিলেন বা-শরা। যে সুফিরা ইসলামীয় আইন মেনে চলতেন না তারা ছিল 'বে-শরা'। যাযাবর সুফি সম্প্রদায় কালানদার ছিল বে-শরা।


9. শ্রীচৈতন্যের ছবি কী রকম ছিল?

উঃ। কৃয়দাস কবিরাজের চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থ থেকে জানা যায় ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে চৈতন্যদেবের জন্ম হয় এবং ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। নানা জায়গায় চৈতন্যের ছবি দেখা যায়। কিন্তু তাকে দেখতে কেমন ছিল তার লিখিত প্রমাণও আছে, তবে সেই দেখা অনেক পরের। ফলে চৈতন্যদেবের যে ছবি আজ আমরা দেখতে পাই তাঁকে আসলে তেমন দেখতে ছিল কি না তা জানা যায় না।


10.শ্রীচৈতন্যের আহার সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উঃ। সন্ন্যাস গ্রহণের পর শ্রীচৈতন্য প্রায় উপবাস করে দিন কাটাতেন। তাঁর ভক্তরা নানারকম রান্না করে তাঁকে খাওয়াতে চাইতেন। তাঁর খাদ্য তালিকার এক বিবরণ পাওয়া যায়। শাক, মুগের ডাল, বেশি করে ঘি-মাখা ভাত, পটোল ও অন্যান্য সবজির তরকারি। কচি নিমপাতা ভাজা, বেগুন, মোচার ঘণ্ট, নারকেল, ঘন করে জাল দেওয়া দুধ, পায়েস, চাপাকলা, দই-দুধ দিয়ে চিঁড়ে আরও নানা কিছু। তরকারি রান্নায় বড়ির ব্যবহার থাকলেও আলুর ব্যবহার হত না। তবে চৈতন্যদের এত কিছু খেতেন না। ভক্ত, অনুচর, কীর্তনীয়া এবং ক্ষুধার্ত মানুষদের ডেকে এনে খাওয়াতেন।


11. কীর্তন কী ?

উঃ। কীর্তন এক বিশেষ ধরনের গান। শ্রীচৈতনদেব এই কীর্তন গানকে জনসংযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতেন। বৈষ্ণব ভক্তি আন্দোলনের আগেও কীর্তন গান ছিল। শ্রীচৈতন্য নামকীর্তন ও নগরকীর্তন এই দু-রকমের কীর্তন সংগঠিত করেন। নামকীর্তন ঘরে বসেই গাওয়া হত কিন্তু নগরকীর্তন নগরে শোভাযাত্রা করে ঘুরে ঘুরে গাওয়া হত। কীর্তনে কোনো জাতবিচার ছিল না, নেচে নেচে দুহাত তুলে গান গেয়ে চলাই ছিল কীর্তনের বৈশিষ্ট্য।


12. শ্রীচৈতন্যের জীবনী সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উঃ। শ্রীচৈতন্যের জীবন ও কর্ম নিয়ে এই সময়ে লেখালেখির ধারা শুরু হয়। অনেক বৈয়ব কবি চৈতন্যদেবের জীবনী নিয়ে কাব্য লেখেন। এইগুলিকে চৈতন্যজীবনী কাব্য বলা হয়। চৈতন্যের জীবনী সাহিত্য গুলি থেকে একদিকে সমকালীন সমাজ ও অন্যদিকে ব্যক্তি চৈতন্যের বিষয়ে নানা কথা জানা যায়।


13. সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে কোন্ কোন্ ফল, সবজি ও শস্যের চাষ সবচেয়ে বেশি হত?

 উঃ সুলতানি ও মুঘল যুগে গাঙ্গেয় সমভূমিতে উৎপন্ন ফসলের মধ্যে আমের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। আঙুর, খেজুর, জাম, কলা, কাঁঠাল, নারকেল প্রভৃতি ফলের চাষ হত। শস্যের মধ্যে ধান, গম, যব, ডাল, সরষে প্রভৃতির চাষ হত। সবজির মধ্যে লংকা, আদা, নানা ধরনের মশলা, নানা ধরনের শাক, পটল, বেগুন প্রভৃতির ফলন হত।


14. মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি সাধক-সাধিকা কারা ছিলেন?

উঃ। মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি সাধক-সাধিকা ছিলেন নামদেব, জ্ঞানেশ্বর, তুকারাম, রামানন্দ, কবির, নানক, চৈতন্যদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ। এঁরা প্রত্যেকেই প্রায় খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ থেকে পশ্চাদশ শতকের মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া অলভার ও নায়নার সাধকেরা ছিলেন দক্ষিণের সাধক।


15.নাথ সাহিত্যের বিখ্যাত অংশ কী ছিল?

উঃ। নাথ সাহিত্যের একটি বিখ্যাত অংশ হলো ময়নামতীর কথা ও গোপীচন্দ্রের গান। শুধু বাংলায় নয় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই কথা ও গানটি প্রচলিত। বাংলা থেকেই এটি ছড়িয়ে পড়েছিল বিহার, পাঞ্জাব, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে।



⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5

১। তখনকার নবদ্বীপের সামাজিক অবস্থা ও শ্রীচৈতন্যের ভেদাভেদহীন ভক্তি প্রচারের মধ্যে কি কোনো যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায়? আলোচনা করো।

উঃ। শ্রীচৈতন্যের সময়ে নবদ্বীপে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বিভিন্ন পাড়ায়। বাস করত। তাদের নানা রকম জীবিকা ছিল। নগরের বাসিন্দাদের মধ্যে অব্রাম্মণদের সংখ্যাই বেশি ছিল। গ্রামেও ছিল একই অবস্থা। হোসেনশাহি রাজত্বে শাসনকাজে ব্রাহ্মণদের প্রভাব কমে কায়স্থদের প্রতিপত্তি বেড়েছিল। পাশাপাশি ছিল অন্যান্য ধর্মবিশ্বাস, তান্ত্রিক সাধনা ও লৌকিক দেবদেবীর পূজার চল। নবদ্বীপে ব্রাহ্মণ ভট্টাচার্য'রা ভক্তিবাদ ও বৈস্নবদের বিরোধিতা ও উপহাস করতেন। এইরকম পরিবেশে শ্রীচৈতন্য ও তাঁর অনুগামীরা একটি মাত্র সামাজিক নীতি মেনে চলতেন, তা হল ভক্তি। জাতধর্ম বর্ণ এইসব ভেদাভেদের বিরুদ্ধে বৈয়ব ভক্তির প্রচারে একটা আন্দোলন গড়ে ওঠে। তিনি ঘরে ঘরে নামগান প্রচার করেন। নিজে ব্রাহ্মণ হলেও বিভিন্ন পেশার মানুষ ও তথাকথিত নীচু জাতির মানুষদের সঙ্গে শ্রীচৈতন্য ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখতেন। কোনও প্রচলিত লোকধর্মের বিরোধিতা তিনি করেননি। গোঁড়া ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেন আবার কীর্তন বিরোধী নবদ্বীপের কাজীকেও তিনি তর্কে হারিয়ে দেন। এভাবেই তিনি সামাজিক পরিস্থিতি ও হিন্দু-মুসলমান শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন।


২। দক্ষিণ ভারতের স্থাপত্য সম্বন্ধে যা জানো লেখো।

উঃ। দক্ষিণ ভারতের স্থাপত্যের প্রধান দিক হলো একাধিক দুর্গ ও দুর্গ শহর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গুলবর্গার দুর্গ ও বিদরের দুর্গ ও প্রাসাদ। এখানে ইরানি ধাঁচের দেওয়াল চিত্র, পালিশ করা চুনের দেওয়াল, সোনালি, লাল ও নীল রঙের খোদাই কাজ উল্লেখযোগ্য। আহমেদনগরের চাঁদবিবির প্রাসাদ একটি টিলার উপর আটকোণা ভিত্তির ওপর নির্মিত। ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো গম্বুজ হল মহম্মদ আদিল শাহ নির্মিত বিজাপুরের গোল গম্বুজ। এটি একটি সুন্দর স্থাপত্যকার্য। কুতুবশাহি আমলের হায়দরাবাদের চারমিনার আঞ্চলিক স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন। বিজয়নগরের রাজধানী হাম্পি সমেত অনেক জায়গায় নির্মিত মন্দির ও ইমারতগুলিতে হিন্দু ও ইসলামীয় স্থাপত্য রীতির এক মিশ্রণ দেখা যায়। কারুকার্য ও শৈলীর দিক থেকে এগুলি অতুলনীয়।


। মুঘল আমলের আঞ্চলিক চিত্রকলা সম্পর্কে লেখো।

উঃ। মুঘল আমলে দরবারি চিত্রশিল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ছবি আঁকার রীতি দেখা যায়। রাজস্থান এবং পাহাড়ি অঞ্চল অর্থাৎ জম্মু, কাশ্মীর ও কাংড়া অঞ্চলে নানান ছবি আঁকার রীতিও দেখা যায়। মুঘল রীতি ও আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য এই চিত্ররীতিগুলিতে মিশে গেছে। ছবির বিষয় ও রঙের ব্যবহারের দিক থেকে এদের আলাদা মর্যাদা। এই চরিত্রগুলির মূল বিষয় ছিল পৌরাণিক নানা দৃশ্য ও রাধাকৃয়ের ঘটনাবলী। এর পাশাপাশি প্রতিকৃতি আঁকার চর্চাও ছিল এবং এই প্রতিকৃতিগুলির পটভূমি ছিল বাস্তবঘেঁষা।


। 'মঙ্গলকাব্য' সম্বন্ধে যা জানো লেখো।

উঃ। বাংলা সাহিত্যের একটি পুরানো এবং প্রধান ধারা ছিল মঙ্গলকাব্য। সেই সময়ের সমাজে চণ্ডী, মনসা, ধর্ম প্রভৃতি দেবদেবীর পুজোর চল ছিল। এই পূজার সময় এই দেবদেবীদের মহিমা। গান করা হতো যার ভিতরে থাকত একটা গল্প। এই গল্পগুলোকে ধরে বেশ কিছু সাহিত্য লেখা হয়। তাকেই বলা হয় মঙ্গলকাব্য। যে দেবদেবীর নামে মঙ্গলকাব্য লেখা হতো, তাঁর পুজো করলে ভালো বা মঙ্গল হবে এটাই মঙ্গলকাব্যে বলা হতো। অনেক কবিই সে সময় মঙ্গলকাব্য লিখেছেন। চণ্ডীদেবীকে নিয়ে চণ্ডীমঙ্গল, মনসাদেবীকে নিয়ে মনসামঙ্গল এবং ধর্মঠাকুরকে নিয়ে রচিত হয়েছিল ধর্মমঙ্গল কাব্য। চণ্ডী, মনসা, ধর্ম প্রভৃতি দেবদেবীরা সমাজের নীচুতলার মানুষের পুজো পেতেন। তাই এদের নিয়ে লেখা মঙ্গলকাব্যগুলিতে গরিব ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের একটা চিত্র পাওয়া যায়।


৫। মধ্যযুগের ভারতবর্ষের বিজ্ঞানচর্চার সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উঃ। মধ্যযুগের ভারতবর্ষ বিজ্ঞানচর্চায় যথেষ্ট উন্নতি করেছিল। মধ্যযুগের বিজ্ঞানের উন্নতির বহু তথ্য অল বিরুণি রচিত কিতাব অল-হিন্দ-এ আমরা পাই। ১০৩৫ খ্রিস্টাব্দে এই লেখার মধ্য দিয়ে তিনি তামাম ইসলামি দুনিয়ায় বিজ্ঞান সম্বন্ধে ভারতীয়দের চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেন। মধ্যযুগে সুলতানি আমল থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যাপক উন্নতি ঘটে। ফিরোজ শাহ তুঘলক দিল্লিতে একটি উঁচু মিনারের উপর মানমন্দির নির্মান করেন, তার উপর বসানো হয় একটা সূর্যঘড়ি। এছাড়া খ্রিস্টার ত্রয়োদশ শতক থেকে ভারতের সামুদ্রিক এলাকাগুলিতে চৈনিক চৌম্বক কম্পাসের ব্যবহার শুরু হয়। মুঘল বাদশাহ আকবর ছিলেন বিজ্ঞানের প্রসারে খুব আগ্রহী। তাঁর দরবারে অঙ্ক, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোলের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হতো। সম্রাট জাহাঙ্গির তুজুক ই জাহাঙ্গিরি তে উদ্ভিদবিদ্যা ও জীববিদ্যার বিষয়ে বেশ কিছু কথা লিখেছেন। জয়পুরের রাজা সওয়াই জয়সিংহ জ্যোর্তিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতকে তিনি দিল্লি, জরপুর, উজ্জয়িনী, মথুরা এবং বারাণসীতে মানমন্দির তৈরি করান।

মধ্যযুগের ভারতে সুলতানি শাসনের সঙ্গেই আসে গ্রিক-আরবি ধারার ইউনানি চিকিৎসা শাস্ত্র। এই চিকিৎসা পদ্ধতি ক্রমশ অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি আয়ুর্বেদ চিকিৎসাও ছিল। ফ্রাঁসোয়া বার্ণিয়েরের মতে খ্রিস্টীর সপ্তদশ শতকে কয়েকজন ইউরোপীয় পর্যটকদের হাত ধরে ভারতে ইউরোপীয় চিকিৎসা পদ্ধতি আসে।


6. উত্তর- পূর্ব ভারতের ভক্তি আন্দোলন সম্পর্কে যা জানো লেখো। 

উঃ। উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমে ভক্তি আন্দোলনের একটি ধারা বিকশিত হয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন শ্রীমন্ত শঙ্করদের। এক কায়স্থ ভূঁইয়া পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। তিনি পাদশ-ষোড়শ শতকের মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদী ও শ্রীকৃষ্ণের উপাসক। তাঁর প্রচারিত ভক্তির মূলকথা ছিল 'নামধর্ম", তিনি তাঁর অনুগামীদের শ্রীকৃষ্ণের নাম ও সংকীর্তন করার উপদেশ দেন। শঙ্করদেব ছিলেন দক্ষ সংগঠক। অনেক জায়গায় তিনি বৈয়ব ভক্তদের জমায়েত হওয়ার স্থান বা 'সত্ৰ' গড়ে তুলেছিলেন। এর মধ্যে থাকত নামঘর' ও 'কীর্তনঘর'। তাঁর প্রচারিত ভক্তি কৃষক, ছোটো ব্যবসায়ীদের মতো সমাজের নীচু তলার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিল। পরের শতকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অহোম রাজারা মুঘলদের সঙ্গে লড়াই করে অসমকে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। এই সময়ে শঙ্করদেবের ভক্তির আদর্শ অসমের সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করেছিল। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে মাধবদের এবং দামোদরদেব ছিলেন উল্লেখযোগ্য।


7. প্রশ্নের উত্তর দেখো।

উঃ। বিজাপুরের সুলতান দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহ-র সময়ে সেরা চিত্রশিল্পী ছিলেন ফারুক হোসেন। তিনি প্রথমে মুঘল সম্রাট আকবরের কারখানায় যোগ দেন। ১৫৯০ থেকে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি মুঘল কারখানা থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যান। মনে করা হয় তিনি এই সময়ে ইব্রাহিমের জন্য ছবি আঁকতেন। পরে হোসেন আবার মুঘল কারখানায় ফিরে আসেন। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির তাঁকে নাদির আল-অসর বা জগতের বিস্ময় উপাধি দেন।


8. আমির খসরু সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উঃ। মধ্যযুগে ফরাসি সাহিত্যিক ও দার্শনিকদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন আমির খসরু। ১২৫২ খ্রিস্টাব্দে উত্তর প্রদেশের বদাউনের কাছে পাটিয়ালিতে খসরুর জন্ম হয়। সুলতানি আমলে আমির খসরু হিন্দুস্থানি এবং ইরানি সংগীতের মিলন ঘটান। তিনি অনেক কাব্য ও কবিতা লেখেন। ফরাসি সাহিত্যের নতুন রচনা শৈলি সবক-ই-হিন্দ এর আবিষ্কারক ছিলেন খসরু। খেয়াল, তরানা, কওয়ালি প্রভৃতি সংগীতরীতি আমির খসরুর সৃষ্টি। তিনি অনেক গজল ও গীতিকাব্য লিখেছিলেন। তিনি চিরকাল তাঁর ভারতীয়ত্বের গর্ব করতেন।


9. আকবরের আমলে কোন্ কোন্ সাহিত্যের অনুবাদ করা হয়?

উঃ। আকবরের সময়ে তাঁর নিজের উৎসাহে কয়েকজন লেখক মহাভারতের নানান অংশ ফরাসিতে অনুবাদ করেন। সেটি রজমনামা নামে বিখ্যাত। কবি বদাউনি এই সময় রামায়ণের অনুবাদ করেন। হাজি ইব্রাহিম সিদ্ধি ফরাসি ভাষায় বেদের অনুবাদ করেন। গ্রিক ভাষায় লেখা বেশ কিছু বইও এই সময় ফরাসিতে অনুবাদ করা হয়। রাজা টোডরমল ভাগবৎপুরান ফরাসিতে অনুবাদ করেছিলেন।


10.মহাকাব্যের বাংলা অনুবাদে কীরূপ পরিবর্তন দেখা গেছে?

উঃ। রামায়ণ, মহাভারত বা ভাগবত এসবই ছিল সংস্কৃত ভাষায় লেখা। কিন্তু যখনই কবিরা সেগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন তখনই তার ভিতরে কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে। ঐ অনুবাদগুলিতে ফুটে উঠেছে সেই সময়কার বাংলার ছবি। বাল্মিকীর লেখা রামায়ণের রাম আর কৃত্তিবাসের রামের চরিত্র অনেকটাই আলাদা হয়ে গেছে।


11. চাহারবাগ কাকে বলে ?

উঃ। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে মুঘলরা ভারতে এক নতুন বাগান তৈরি কৌশল নিয়ে আসে। ফারসিতে এর নাম চাহার বাগ।এই বাগানটিকে জল দিয়ে চারটি সমান আয়তনের বর্গে ভাগ করা হত এবং ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে বাগানটিতে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করা হত। একে চাহার বাগ বলে। পারস্য ও মধ্য এশিয়া থেকে এই বাগান তৈরির রীতি মুঘলরা ভারতে নিয়ে আসেন। লাহোরের শালিমার বাগ, কাশ্মীরের নিশাত বাগ, দিল্লিতে হুমায়ুনের সমাধি ও আগ্রার তাজমহলে এই চাহার বাগের নিদর্শন পাওয়া যায়।


12.হাসান নিজামি যুদ্ধ জয় সম্পর্কে কী লিখেছেন ?

উঃ। হাসান নিজামি কুতুবউদ্দিন আইবকের সময়ে একজন ঐতিহাসিক ছিলেন। তাঁর ইতিহাস গ্রন্থটির নাম তাজ-উল-নাসির। তাতে নিজামি লিখেছেন—সব যুদ্ধজয়ের পর বিরোধীদের দুর্গ ও অন্যান্য ঘাঁটিগুলি বিশাল হাতিদের পায়ে পিষে গুঁড়ো করে দেওয়া ছিল চলতি প্রথা। শুধু ভারতবর্ষে নয় পৃথিবীর সব দেশের জয়ীরা, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ খ্রিস্টান সব ধর্মের শাসকরাই এই কাজ করেছেন। এটি আসলে রাজনৈতিক শক্তি দেখানোর একটা প্রচেষ্টা।


13.সিলসিলা কাকে বলে? চিশতি সুফিদের জীবনযাপন কেমন ছিল?

উঃ। সিলসিলা মানে হচ্ছে গোষ্ঠী। চিশতি সুফিদের জীবন ছিল খোলামেলা। তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে থাকতেন 'খানকা বা আশ্রমে। তাঁরা ধর্ম, অর্থ, ক্ষমতার মাপকাঠিতে মানুষকে বিচার করতেন না। চিশতি সুফিরা রাজনীতি ও রাজদরবার থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল যে রাজ্য পরিচালনার কাজে জড়িয়ে পড়লে কোনোভাবেই ঈশ্বর সাধনা সম্ভব নয়। শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়া ছিলেন এই গোষ্ঠী বা সিলসিলার অন্যতম সাধক।


14. দীন-ই-ইলাহি-র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কেমন ছিল?

উঃ। যিনি দীন-ই-ইলাহি গ্রহণ করতেন তিনি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁর জীবন (জান), সম্পত্তি (মাস) ধর্ম (দীন) ও সম্মান (নামুস) বিসর্জন (কুরবান) দেওয়ার শপথ নিতেন। শিষ্য (মুরিদ) যেমন তার সুফি গুরুর (পীর) পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে, তাঁকেও তেমনই বাদশাহের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে হত। এরপর অনুষ্ঠান শেষ হলে বাদশাহ তাঁকে দিতেন একটি নতুন পাগড়ি, সূর্যের একটি পদক ও পাগড়ির সামনে লাগানোর জন্য বাদশাহের নিজের ছোট্ট একটা ছবি।


15.স্থাপত্য হিসাবে আলাই দরওয়াজার বৈশিষ্ট্য কী? 

উঃ। আলাই দরওয়াজা তৈরি হয় সুলতান আলাউদ্দিন খলজির আমলে। এটি ছিল ইন্দো- ইসলামীয় স্থাপত্যশিল্পের একটি অসাধারণ নমুনা। লাল বেলেপাথরের তৈরি এই দরওয়াজা যেন সুলতান আলাউদ্দিনের ক্ষমতার প্রতিফলন ছিল। এর গায়ে আল্লাহর কথা নয়, খোদাই হয়েছিল সুলতানের প্রশংসা। এইরকম কাজের নমুনা সে যুগে বিরল ছিল। এটি কুতুব চত্বরে অবস্থিত ছিল।


16. ক্যালিগ্রাফি ও মিনিয়েচার বলতে কী বোঝায়?

উঃ। মুঘল যুগে সুন্দর হাতের লেখা শিল্পের সেকালে খুব চর্চা হত। একে ইংরেজিতে বলে Calligraphy (ক্যালিগ্রাফি)। বাংলায় একে হস্তলিপি বিদ্যা বা হস্তলিপি শিল্প বলা যেতে পারে। ছাপাখানার রেওয়াজ তখন ছিল না। তাই এই ধরনের হাতে লেখা বইগুলিই ছিল শিল্পের নমুনা। সম্রাট আকবরের সময়ে বই-এর অলংকরণ শিল্পের নানা নমুনা পাওয়া যায়। তুতিনামা, রজমনামা (মহাভারতের ফারসি অনুবাদ) প্রভৃতি বই-এর প্রতিটি পৃষ্ঠা সাজানো হতো সূক্ষ্ম হস্তলিপি ও ছবি দিয়ে। আকার ও আয়তনে ছোটো এই ছবিগুলিকে বলা হয় Miniature (মিনিয়েচার)। মিনিয়েচার কথাটি ইংরেজি। তবে সেটাই বেশি প্রচলিত। বাংলায় তাকে অনুচিত্র বলা যেতে পারে। বইতে সোনার ও অন্যান্য রঙের ব্যবহার হত, লেখার চারপাশে নানারকম অলংকরণ করা হত।


17. শিবায়ন কী? এর থেকে বাংলার কৃষকের জীবনের কী পরিচয় পাওয়া যায় ? 

উঃ। সুলতানি আমলে শিবকে নিয়েও সাহিত্য লেখা হয়েছে। সেই লেখাগুলিকে ‘শিবায়ন' বলে। পুরাণে শিব বিষয়ে যে কাহিনি তার সঙ্গে শিব-দুর্গার ঘর-সংসারের কথা জুড়ে শিবায়ন কাব্যগুলি লেখা হয়েছে। শিবায়নে গরিব শিব-দুর্গা ও তাদের জীবনের কথা লেখা হয়েছে। শিব সেখানে চাষবাস করে রোজগারের চেষ্টা করে। এই লেখাগুলিতে সেই সময়ের বাংলাদেশের গরিব কৃষক পরিবার যেন শিব-দুর্গার পরিবারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।


18. কাগজ কোথায় আবিষ্কার হয়েছিল। মধ্যযুগের ভারতে কাগজের ব্যবহার কেমন ছিল তা লেখো। 

উঃ। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে চিনে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয়। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতে কাগজ তৈরি করার প্রযুক্তি চিন থেকে প্রথম নিয়ে আসে মধ্য এশিয়ার মোঙ্গলরা। অল্প কিছুকালের মধ্যেই ভারতে কাগজের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে লেখাপড়ার কাজ সহজ হয়। চতুর্দশ শতকে কাগজ এতটাই সস্তা হয়েছিল যে ময়রা মিষ্টি দেবার জন্য কাগজ ব্যবহার করতো।


19. মধ্যযুগের ভারতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল তা লেখো।

উঃ। মধ্যযুগের ভারতে দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামেই বাস করতেন। কৃষি পণ্যকে ভিত্তি করে গ্রামে কারিগরী শিল্প চলত। সমাজ ছিল যৌথ পরিবারভিত্তিক। গরিব কৃষক পরিবারে নারী-পুরুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসার ও খামারে পরিশ্রম করতে হত। সাধারণ গরিব জনগণের বসতির জন্য সামান্য কিছু উপকরণ লাগত। একটি পাতকুয়া, ডোবা বা পুকুর থাকলেই বসতি তৈরি করে নিতে পারত গ্রামের মানুষ। ঘর তোলার জন্য কয়েকটি গাছের গুঁড়ি, চাল ছাইবার জন্যে কিছু খড়— এতেই তারা মাথা গোঁজবার ঠাঁই করে নিত।

সরকারি খাজনা ও নানা পাওনা মিটিয়ে ফসলের কিছু অংশ কৃষকের হাতে থাকতো। সেটাই ছিল তার রোজকার ব্যবহারের সম্বল। বছরের কয়েকটা ঋতুতে কৃষক পরিবারগুলি দিনরাত পরিশ্রম করত। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের সময়ের একজন ওলন্দাজ বণিক লিখেছেন যে, গরিবরা মাংসের স্বাদ প্রায় জানতোই না। তাদের রোজকার খাবার ছিল একঘেয়ে খিচুড়ি। তাই দিয়েই সারাদিনে একবার মাত্র তারা শুকনো পেট ভরাতো। পরবার পোশাকও যথেষ্ট ছিল না। একজোড়া খাটিয়া ও রান্নার দু-একখানা বাসনই ছিল তাদের ঘর-গৃহস্থালি। বিছানার চাদর ছিল একটা বা দুটো। তাই তারা পেতে শুতো, দরকারে গায়ে দিত। গরমের দিনে তা যথেষ্ট হলেও দারুণ শীতে তাদের ভীষণই কষ্ট হতো। পালা-পার্বণে আনন্দ-উৎসব ছিল একঘেয়ে জীবনের মধ্যে একটু ব্যতিক্রম। সে যুগের খেলাধূলার মধ্যে কুস্তি ছিল একটি জনপ্রিয় খেলা। লোকগান, নাটক জাদুকরের খেলা, সং প্রভৃতি ছিল সাধারণ মানুষের আনন্দের উপকরণ।


 20.কবীরের ভক্তি ভাবনায় কীভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এক হয়ে গিয়েছিল বলে তোমার মনে হয় ?

উঃ। রামানন্দের শিষ্যদের মধ্যে সম্ভবত একজন ছিলেন কবীর। বারাণসীতে মুসলিম জোলাহা (তাতি) পরিবারে পালিত কবীর ছিলেন চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকের একজন বিখ্যাত ভক্তিসাধক। ইসলামের একেশ্বরবাদের সাথে বৈয়ব, নাথযোগী এবং তান্ত্রিক বিশ্বাসও এসে মিশেছিল কবীরের ভক্তিচিত্তায়। তাঁর কাছে সব ধর্মই ছিল এক, সব ভগবানই সমান। তার মতে রাম, হরি, গোবিন্দ, আল্লাহ্, সাঁই, সাহিব ইত্যাদি ছিল এক ঈশ্বরেরই বিভিন্ন নাম। তাঁর এই দর্শন তখনকার সমাজে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যের বিভেদ ও বিরোধ মেটাতে খুবই সাহায্য করেছিল। কবীর বিশ্বাস করতেন যে মানুষ তার ভক্তি দিয়ে নিজের মনেই ঈশ্বর কে খুঁজে পাবে। তার জন্য মন্দির বা মসজিদে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই মূর্তি পুজো বা গঙ্গাস্নান বা নামাজ পড়া তাঁর কাছে ছিল অর্থহীন। তখনকার সামাজিক জীবনে কবীরের ভাবনার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাঁর রচিত দোহা এবং গান শুনলে বোঝা যাবে তিনি ধর্মের লোক দেখানো আচারের বিরোধী ছিলেন।


21. বাংলায় বৈয়ব আন্দোলনের ফলাফল কী হয়েছিল বিশ্লেষণ করো।

উঃ। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে বাংলায় শ্রীচৈতন্য যে ভক্তি আন্দোলন প্রচার করেন তার ফলে বাংলায় বৈয়ব ভক্তির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। শ্রীচৈতন্য বাংলায় পূর্বের বৈষ্ণব ধর্মের ঐতিহ্য ও ভক্তিবাদের ভাবনাকে একাকার করে দেন। জাত ধর্ম-বর্ণ এই ভেদাভেদের বিরুদ্ধে বৈয়ব ভক্তির একটি আন্দোলন রূপে ছড়িয়ে পড়ে। সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিক থেকে বাংলায় ভক্তি আন্দোলনের প্রভাব কমতে থাকে। চৈতন্যদেব ও তাঁর অনুগামীরা জাতিভেদ না মানলেও সমাজে ভেদাভেদ থেকেই গিয়েছিল।

সবরকম ভেদাভেদ পুরো দূর করতে না-পারলেও, সেগুলোকে তুচ্ছ করা যায়—এ কথা চৈতন্যদেব জোর দিয়েই প্রচার করেন। সেকালের তুলনায় চিন্তা করলে এটাই ছিল একটা বড়ো সাফল্য। তবে চৈতন্য ও তাঁর ভক্তি আন্দোলনের সবচেয়ে গভীর প্রভাব পড়েছিল বাংলার সংস্কৃতিতে। সাধারণ মানুষের বাংলা ভাষাকে সম্মান জানিয়ে সেই ভাষাতেই ভক্তি প্রচার করেন চৈতন্যদেব। শ্রীচৈতন্যের জীবন ও বৈষ্ণব ভক্তিবাদ নিয়ে অনেক সাহিত্য এই সময়ে রচিত হয়। শ্রীচৈতন্যের জীবন এবং কাজ নিয়ে অনেক বৈয়ব কবি কাব্য রচনা করেন। এগুলিকে চৈতন্য জীবনী কাব্য বলা হয়। তার ফলে বাংলা ভাষার বিকাশের পথ তৈরি হয়।


22. বাদশাহ আকবরের দীন-ই-ইলাহি সন্বন্ধে একটি টীকা লেখো।

উঃ। ১৫৮০-এর দশকের মাঝামাঝি আকবর দীন-ই-ইলাহি নামে এক নতুন মতাদর্শ চালু করেন। একসময় ভাবা হত দীন-ই-ইলাহি বোধহয় বাদশাহ আকবরের প্রচলিত এক নতুন ধর্ম। কিন্তু আকবর কখনও ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেননি। ইসলাম ধর্মের নানা ব্যাখ্যার মধ্যে থেকে তিনি সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য মতটি মেনে নিতেন। নানা ধর্মের গুরুদের সাথে আলোচনা করে তিনি বিভিন্ন ধর্ম থেকে নিজের পছন্দ মতো কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বেছে নিতেন। সেই বৈশিষ্ট্যগুলিকে এক করে আকবর দীন-ই-ইলাহি তৈরি করেন। তিনি এর প্রচলন করেছিলেন নিজের সভাসদদের মধ্যে। কিন্তু এখন এই ধারণা অনেকটা পালটে গেছে। এখন মনে করা হয় যে, দীন-ই-ইলাহি আসলে ছিল আকবরের প্রতি চূড়ান্ত অনুগত কয়েকজন অভিজাতদের মধ্যে প্রচারিত এক আদর্শ। আকবর নিজে তাঁদের বেছে নিতেন। বেশ কিছু অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির মধ্যে দিয়ে তাঁরা বাদশাহের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত থাকার শপথ নিতেন। এইভাবে আকবর নিজের চারপাশে গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বস্ত অনুগামীদের একটি দল। এক-একজন সদস্যের ছিল পৃথক পৃথক ধৰ্ম। দীন-ই-ইলাহি কোনো আলাদা ধর্ম ছিল না।


23. মুঘল সম্রাটদের আমলে বাগান তৈরি ও দুর্গ নির্মাণ সম্বন্ধে আলোচনা করো। 

উঃ। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে মুঘলরা ভারতে নতুন এক বাগান তৈরির কৌশল নিয়ে আসেন। পারস্য ও মধ্য এশিয়া থেকে মুঘলরা এই কৌশল নিয়ে আসেন। সম্রাট বাবর, জাহাঙ্গির ও শাহাজাহানের ছিল বাগানের খুব শখ। চারভাগে ভাগ করা একরকম সাজানো বাগান মুঘল আমলে বানানো হত। তাকে 'চাহার বাগ' বলে। জাহাঙ্গিরের সময়ে বাগান বানানোর উদ্যোগ আবার শুরু হয়। আগ্রায়, কাশ্মীরে বানানো বাগানগুলির কথা সম্রাট জাহাঙ্গির লিখেছেন তাঁর আত্মজীবনী জাহাঙ্গিরনামায়।

মুঘল স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ শুরু হয় সম্রাট আকবরের সময় থেকে। দুর্গ- শহর, প্রাসাদ বানানোয় আকবর মনযোগী ছিলেন। এতে একদিকে যেমন সাম্রাজ্য সুরক্ষিত হয়েছিল, আবার একই সাথে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশও ঘটেছিল। আগ্রা দুর্গ এর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ। আজমের গড়, লাহোরগড়, কাশ্মীরের ডাল হ্রদের গড়, এলাহাবাদগড়গুলি আকবরের সময়ে তৈরি করা হয়। শাহজাহান তৈরি করেছিলেন লালকেল্লা।

No comments:

Post a Comment