আফ্রিকা কবিতার
প্রশ্ন উত্তর
দশম শ্রেণীর বাংলা সাজেশন | দশম শ্রেণীর বাংলা আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণীর বাংলা আফ্রিকা কবিতার গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | Class 10th Bangla Africa Kabitar Important Questions And Answers | দশম শ্রেণীর বাংলা গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর | #Class 10th Bangla Africa Kabitar Questions And Answers #Class 10th Bangla Questions And Answers
বিষয়-বস্তু:
সৃষ্টির আদিতে প্রকৃতির রহস্যময়তায় ঢাকা আফ্রিকা মহাদেশ বাকি পৃথিবীর কাছে ছিল অজানা, অচেনা এক দেশ। এই রহস্যময় বন্যতাই তাকে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল। তার এই আদিম রূপের কারণে সভ্যসমাজের কাছে সে ছিল উপেক্ষার পাত্র। আর এ কারণেই পশ্চিমি সভ্যতা আফ্রিকাকে সহজেই পদানত করেছিল; ক্রীতদাস জোগানের এক উর্বরক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ।
অরণ্যের গভীরে লুকিয়ে থাকা আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমশ প্রকাশ পেল তথাকথিত সভ্য দুনিয়ার কাছে। সভ্যতার সংজ্ঞা ভুলে সেইসব দেশ অমানবিকভাবে আক্রমণ করল আফ্রিকাকে। রক্ত, ঘাম আর কান্নায় ভিজে গেল আফ্রিকার মাটি। সভ্য দুনিয়ার অসভ্য আগ্রাসন প্রকট হয়ে উঠল আফ্রিকার পটভূমিকায়। ঔপনিবেশিক শোষণ-পীড়ন আর লাঞ্ছনার শিকার আফ্রিকার সেই অপমানই ব্যথা হয়ে বেজেছে কবির বুকে।
তাই তিনি মনে করেন অপমানিত আফ্রিকা ও তার অধিবাসীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নেওয়াটাই সভ্যসমাজের প্রতিটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কর্তব্য। এরই মধ্যে দিয়ে তথাকথিত ‘সভ্য’ শ্বেতাঙ্গ শাসকের ঔপনিবেশিক পাপের প্রায়শ্চিত্ত ঘটবে।
⬛ আফ্রিকা' কবিতার বহুবিকল্পিক প্রশ্ন উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -১
1. আফ্রিকা বিদ্রুপ করছিল—
ক. নতুন সৃষ্টিকে
খ. শঙ্কাকে
গ. ভীষণকে
ঘ. আপনাকে
2. আফ্রিকা বিদ্রুপ করছিল ভীষণকে—
ক. বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়
খ. কালো ঘোমটার নীচে
গ. বিরূপের ছদ্মবেশে
ঘ. তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে
3. কালো ঘোমটার নীচে কী অপরিচিত ছিল ?
ক. উপেক্ষার আবিল দৃষ্টি
খ. মানুষের শুভবুদ্ধি
গ. সভ্যের বর্বর লোভ
4. উপেক্ষার দৃষ্টি কেমন ছিল?
ক. আবিল
খ. তীক্ষ্ণ
গ. বর্বর
ঘ. অন্ধ
5. 'আফ্রিকা' কবিতায় 'ওরা' এল—
ক. লোহার হাতকড়ি নিয়ে
খ. মানুষ-ধরার দল নিয়ে
গ. অরণ্যপথে
ঘ. সমুদ্রপারে
6. এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’—ওরা হল—
ক. ভারতীয়
খ. ইউরোপীয়
গ. আমেরিকান
ঘ. জংলি উপজাতি
7. আফ্রিকা হল একটি—
ক. শহর
খ. মহাদেশ
গ. মহাসাগর
ঘ. উপমহাদেশ
8. স্রষ্টার অসন্তোষ ছিল—
ক. তাঁর সৃষ্টির প্রতি
খ. নিজের প্রতি
গ. আফ্রিকার প্রতি
ঘ. পশ্চিমি দুনিয়ার প্রতি
9. কবি আদিম যুগের যে-বিশেষণ ব্যবহার করেছেন, তা হল-
ক. উদ্ভ্রান্ত
খ. চেতনাতীত
গ. দৃষ্টি-অতীত
ঘ. অপমানিত
10. নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন—
ক. কবি
খ) স্রষ্টা
(গ) ছায়াবৃতা
ঘ) দয়াময় দেবতা
11. ‘আফ্রিকা' কবিতায় কবি 'ছায়াবৃতা' সম্বোধন করেছেন-
ক. আদিম অরণ্যকে
খ. আফ্রিকার কৃয়াঙ্গী ক্রীতদাসীকে
গ. আফ্রিকাকে
ঘ. ঔপনিবেশিক শাসনকে
12. আফ্রিকাকে কবি ছায়াবৃতা বলে সম্বোধন করেছেন, কারণ—
ক. আফ্রিকার লোকেদের গায়ের রং কালো
খ. আফ্রিকা জঙ্গলাকীর্ণ
গ. আফ্রিকায় ছ-মাস রাত্রি থাকে
ঘ. মানচিত্রে আফ্রিকাকে কালো বিন্দুর মতো লাগে
13. আফ্রিকার অন্তঃপুরে আলো ছিল-
ক. কৃপণ
খ. দুর্বোধ
গ. আবিল
ঘ. নগ্ন
14. নিভৃত অবকাশে আফ্রিকা সংগ্রহ করছিল—
ক. দুর্বোধ সংকেত
খ. ভাষাহীন ক্রন্দন
গ. নির্লজ্জ অমানুষতা
ঘ. দুর্গমের রহস্য
15. আফ্রিকা চিনেছিল জল-স্থল-আকাশের—
ক. দুর্বোধ সংকেত
খ. দুর্গমের রহস্য
ঘ. বিদ্রুপ
গ. অসন্তোষ
16. প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু আফ্রিকার মনে যা জাগাচ্ছিল, তা হল—
ক. বিভীষিকা
খ. মন্ত্র
গ. জাদু
ঘ. ক্রন্দন
17. স্রষ্টা নিজের সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন, কারণ—
ক. বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমা
খ. সভ্যের বর্বর লোভ
গ. নিজের প্রতি অসন্তোষ
ঘ. আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাত
18. যে প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সে হল -
ক. দুর্গমের রহস্য
খ. দৃষ্টি-অতীত জাদু
গ. যুগান্তরের কবি
ঘ. রুদ্র সমুদ্রের বাহু
19. ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু' আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে বেঁধেছিল—
ক. জলতরঙ্গের বন্ধনে
খ. নিভৃত অবকাশে
গ. পর্বতকন্দরে
ঘ. বনস্পতির নিবিড় পাহারায়
20. ‘তাণ্ডব' শব্দের অর্থ হল-
ক. অপমান
খ. তছনছ করা
গ. হইচই করা
ঘ. দৃষ্টি-অতীত জাদু
⬛ আফ্রিকা' কবিতার অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -১/২
1. ‘নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত, – নতুন সৃষ্টিটি কী?
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'আফ্রিকা' কবিতায় নতুন সৃষ্টিবলতে এই পৃথিবীর আদিম শৈশবের কথা বলেছেন। কী বেজে
2. ‘কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল ?
উঃকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আফ্রিকা' কবিতা অনুসারে কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা।
3. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'আফ্রিকা' কবিতায় শেষ পুণ্যবাণীটি কী ছিল?
উঃ শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের নির্দয় অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত আফ্রিকার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনাকেই কবি হিংস্র প্রলাপের মাঝে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী বলে মনে করেছেন।
4. আফ্রিকার দুর্দিনে কবি কীভাবে তার পাশে থাকতে চেয়েছেন ?
উঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ঘোর বিরোধী রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শাসন-পীড়নে ক্ষতবিক্ষত আফ্রিকার ওপর নির্মম অত্যাচার ও অপমানের জন্য যুগান্তের প্রতিভূ হয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইতে চান।
5. ‘আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে'— পশ্চিম দিগন্তে কী ঘটে চলেছিল?
উঃ ‘পশ্চিম দিগন্তে অর্থাৎ পাশ্চাত্য দেশগুলিতে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মানুষের মধ্যেকার পাশবিক শক্তি বেরিয়ে এসে অশুভ ধ্বনিতে সভ্যতার অন্তিমকাল ঘোষণা করছিল।
6. ‘বলো ‘ক্ষমা করো”— কীসের জন্য এই ক্ষমাপ্রার্থনা ?
উঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসহ সভ্য দুনিয়া যুগ যুগ ধরে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আফ্রিকার সংস্কৃতি ও জনজাতির ওপর বর্বরোচিত শোষণ চালিয়েছে। তার জন্য মানবসভ্যতার প্রতিনিধি হয়ে যুগান্তের কবির এই ক্ষমাপ্রার্থনা।
7. আফ্রিকা উপেক্ষিত কেন ?
উঃ আফ্রিকার প্রাকৃতিক দুর্গমতা ও রহস্যময়তা পৃথিবীর বাকি অংশ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। আধুনিক সভ্যতার আলো সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই সে উপেক্ষিত।
8. 'সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায় কী ঘটে চলেছিল?
উঃ ‘আফ্রিকা' কবিতা অনুসারে সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়াতে দয়াময় দেবতার নামে সকাল-সন্ধ্যায় মন্দিরে বেজেছিল পুজোর ঘণ্টা। সেসময় মায়ের কোলে শিশুরা খেলছিল আর কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা ।
9. ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে- এর দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উঃ ‘আফ্রিকা' কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকার মানুষদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গ শাসকের বর্বর ও পাশবিক অত্যাচারের ভয়াবহতার কথা বলতে গিয়ে তাদের বন্য নেকড়ের চেয়েও নিষ্ঠুর এবং হিংস্র বলে অভিহিত করেছেন।
10. 'গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে - তাৎপর্য লেখো।
উঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ক্ষমতাবলে আফ্রিকার সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মানবতার অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। তাই 'আফ্রিকা' কবিতায় তাদের গর্বকে আফ্রিকার গভীর অন্ধকার বনভূমির চেয়ে অন্ধ বলা হয়েছে।
11. ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে,- 'ওরা' কারা ?
উঃ ‘আফ্রিকা” কবিতায় “ওরা” বলতে অত্যাচারী ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের বলা হয়েছে, যারা আফ্রিকার মানুষদের বন্দি করে ক্রীতদাসে পরিণত করেছিল।
12 . ঔপনিবেশিকদের আগমনে আফ্রিকার অবস্থা কী হয়েছিল?
উঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অমানবিক অত্যাচারে সাধারণ মানুষের রক্তে ও অশ্রুতে আফ্রিকার বনপথের ধুলো কর্দমাক্ত হয়েছে। শাসকের কাঁটা-মারা জুতোর তলার কাদার পিণ্ড আফ্রিকার ইতিহাসে চিরচিহ্ন এঁকে যায়।
13. ‘সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই'— কোন্ মুহূর্তের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ রবীন্দ্রনাথের 'আফ্রিকা' কবিতার উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে আফ্রিকা যখন শোষিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছিল সেই মুহূর্তের কথা বলা হয়েছে।
⬛আফ্রিকা' কবিতার রচনা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -3
1. প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে সমুদ্র যখন আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল, তারপর আফ্রিকার কী হয়েছিল ব্যাখ্যা করো। ‘অথবা, ‘প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু/মন্ত্ৰ জাগাচ্ছিল,' বলতে কী বোঝানো হয়েছে লেখো।
উঃ আফ্রিকার মানুষের ওপর ঔপনিবেশিক শোষণের যে-ছায়া নেমে এসেছিল, তারই প্রতিবাদ রবীন্দ্রনাথের এই 'আফ্রিকা' কবিতাটি। সভ্যতার আদিলগ্নে সমুদ্র যখন আফ্রিকাকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করে তাকে অরণ্যের অন্ধকারে নির্বাসন দিয়েছিল, তখন থেকেই শুরু হয় তার একক সংগ্রাম।
বিশ্বজগতের চোখের আড়ালে প্রকৃতি তাকে সাজিয়ে নিয়েছিল নিজের মনের মতো করে। বন্যপ্রাণী-সংকুল অরণ্য, রুক্ষ মরুভূমি — সব স্পর্শ তখনও সে পায়নি।
মিলিয়ে আদিম আফ্রিকা ছিল দুর্গম। সভ্যতা তথা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কোনো
2. 'হায় ছায়াবৃতা,- 'ছায়াবৃতা' কে? তাকে ছায়াবৃতা বলার কারণ কী? 1+2 অথবা, ‘অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ' বলার কারণ কী?
উঃ রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'আফ্রিকা' কবিতায় আফ্রিকা মহাদেশকে ‘ছায়াবৃতা' বলে সম্বোধন করেছেন। ‘ছায়াবৃতা' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ছায়া দ্বারা আবৃতা বা ছায়াঢাকা। দুর্গম অরণ্যে-ঘেরা আফ্রিকা মূল ভূখণ্ড থেকে বহুদূরে অবস্থিত। আধুনিক সভ্যতা ও জ্ঞানের আলো থেকে সে বঞ্চিত। দুর্গমতার কারণে উনিশ শতকের আগে পর্যন্ত আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও নিজস্ব সংস্কৃতি বাকি ছায়াবৃতা বলার কারণ
3. বিশ্বের কাছে অজানাই রয়ে গেছে তার রহস্যময় অরণ্যের মতোই। ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,- 'যাদের' বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের নখ নেকড়ের চেয়ে তীক্ষ্ণ বলার কারণ কী?
উঃ রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'আফ্রিকা' কবিতায় 'যাদের' বলতে সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের বুঝিয়েছেন। মুসোলিনির ইথিওপিয়ায় অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কবি তাঁর এই ‘আফ্রিকা' কবিতাটি লিখেছিলেন। কবি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হিংস্রতাকে বোঝাতে ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন। মহাদেশ হিংস্র শ্বাপদপূর্ণ। কিন্তু ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের নির্মম হিংস্রতা সেইসব হিংস্র প্রাণীদের চেয়েও ভয়ংকর এ কথা বোঝাতেই কবি শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন।
4. ‘স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে'— 'স্রষ্টা' কে? তিনি নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন কেন?
উঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা' কবিতা থেকে অংশটি গৃহীত। যিনি সৃষ্টি করেন তিনিই স্রষ্টা। এখানে কবি ঈশ্বরকেই 'স্রষ্টা' বলে অভিহিত করেছেন। → স্রষ্টার ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্টি হয় না যতক্ষণ-না তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিজের মনোমতো হয়। সেই সত্যকে কল্পনা করেই কবি বলতে চেয়েছেন সৃষ্টির আদিম লগ্নে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টিকে বারবার ধ্বংস করে নতুনভাবে গড়ে তুলছিলেন। কিন্তু তা কখনোই তাঁর মনোমতো হচ্ছিল না। এই কারণে তিনি নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন।
5. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে,’– 'তোমাকে' বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কে তাকে কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল? অথবা, ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে— ‘তোমাকে' বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? এই উক্তির মধ্য দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা' কবিতায় ‘তোমাকে' বলতে আফ্রিকা মহাদেশকে বোঝানো হয়েছে। আদিম পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া ভৌগোলিক বিবর্তনকে এখানে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন এক আশ্চর্য ব্যঞ্জনায়। বৈজ্ঞানিকদের মতে টেকটনিক কে, কোথা থেকে ছিনিয়েছিল অন্তরালে তাকে নিক্ষেপ করেছিল।
প্লেটগুলির নড়াচড়ার ফলেই এশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কবি এরই কাব্যিক রুপ দিয়ে বলেছেন, রুদ্র সমুদ্র মূল ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেন বনস্পতির নিবিড় পাহারায় কৃপণ আলোর.
⬛আফ্রিকা' কবিতার রচনা ধর্মী প্রশ্ন উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -4/5
1. ‘হায় ছায়াবৃতা,’– ‘ছায়াবৃতা’ বলার কারণ কী? তার সম্পর্কে কবি কী বলেছেন সংক্ষেপে লেখো।
উঃ ছায়াবৃতা' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ছায়া দ্বারা আবৃতা বা ‘ছায়াবৃতা' বলার কারণ ছায়াঢাকা। দুর্গম অরণ্যে-ঘেরা আফ্রিকা মূল ভূখণ্ড থেকে বহুদূরে অবস্থিত। আধুনিক সভ্যতা ও জ্ঞানের আলো থেকে সে বঞ্চিত। দুর্গমতার কারণে উনিশ শতকের আগে
পর্যন্ত আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও নিজস্ব সংস্কৃতি বাকি বিশ্বের কাছে অজানাই রয়ে গেছে তার রহস্যময় অরণ্যের মতোই। সাম্রাজ্যবাদের ঘোর বিরোধী, মানবতার পূজারি রবীন্দ্রনাথ। তাই মুসোলিনির ইথিওপিয়ায় অনুপ্রবেশকে ধিক্কার জানিয়ে লেখা ‘আফ্রিকা’ কবিতায় মানবতার মর্মবাণী ধ্বনিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কবিতাটি আফ্রিকার সমাজ ও রাজনৈতিক ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। 'আফ্রিকা' কবিতায় মানবতার মর্মবাণী এমনকি সেদেশের আদিম প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে
সৃষ্টির আদিতে আফ্রিকা তৈরি হয়েছিল প্রকৃতির খেয়ালে। আদিম প্রকৃতি নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলেছিল তাকে। বাকি পৃথিবীর কাছে সে ছিল অপরিচিত। পরবর্তীকালে সভ্যসমাজের দৃষ্টি পড়ে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের ওপর। ক্রমে ক্রমে আফ্রিকা হয়ে ওঠে পশ্চিমি সভ্য দেশগুলির জন্য ক্রীতদাস জোগানের ক্ষেত্র। থাকা সম্পদও তাদের নজর এড়ায় না। পৃথিবীর তথাকথিত সভ্য দেশগুলির লোভ আর অমানবিকতায় লুণ্ঠিত হয় আফ্রিকা। তার ধুলো-মাটি কাদা হয় সেখানকার মানুষদের রক্তে আর কান্নায়। লেখা হয় তার অপমানের ইতিহাস। কিন্তু কবি মানবতার পূজারি। তাই সভ্যতার নামে মানবতার এই অপমান তিনি সহ্য করেননি। দিনবদলের সন্ধিক্ষণে তাই পৃথিবীর সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের হয়ে অপমানিত, লাঞ্ছিত আফ্রিকার কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। সভ্যতার এই সংকটের দিনে ঘৃণা বা হিংসা নয়, মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা আর সংবেদনশীলতাকেই আশ্রয় করতে চেয়েছেন তিনি।
2. ‘চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে। —কাকে এ কথা বলা হয়েছে? কীভাবে তার অপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্ন মুদ্রিত হল?
উঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা' কবিতায় উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে অপমানিত আফ্রিকাকে এ কথা বলা হয়েছে।
অপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্নের মুদ্রণ রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘আফ্রিকা' কবিতায় ‘অপমানিত ইতিহাস' বলতে সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের দ্বারা শোষিত আফ্রিকার বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার ইতিহাসকে বুঝিয়েছেন। সৃষ্টির সূচনা থেকেই আফ্রিকা অরণ্যাবৃত। সে তথাকথিত উন্নত সভ্যতার আলো থেকে বহু দূরে নির্বাসিত ছিল। সভ্য ইউরোপীয় সভ্যতার চোখেও আফ্রিকা উপেক্ষিত ছিল দীর্ঘদিন। তথাকথিত 'সভ্য' পাশ্চাত্য সভ্যতা আফ্রিকার নিজস্ব জীবনধারা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদিকে স্বীকার করত না।
কিন্তু ঊনবিংশ শতকে ইউরোপীয়রা আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের সূচনার ফলে ক্রমে এই শতকের শেষে প্রায় পুরো আফ্রিকাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপনিবেশে পরিণত হয়। আফ্রিকার সম্পদের সন্ধান পেতে এই শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক তথা সাম্রাজ্যবাদীর দল শুরু করে মানবিক লাঞ্ছনা। আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ সরল মানুষগুলিকে লোহার হাতকড়ি পরিয়ে ‘মানুষ-ধরা’ এই বর্বরেরা তাদের পরিণত করে ক্রীতদাসে। তাদের বর্বরতা ও লোভ আফ্রিকার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়েও কালো। এইসব অত্যাচারিত মানুষদের রক্ত ও অশ্রুতে কর্দমাক্ত হয় আফ্রিকার বনপথের ধুলো। সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের কাঁটা-মারা জুতোর তলার কাদার পিণ্ড এভাবেই আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্ন দিয়ে গিয়েছে।
3. ‘প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস,/ যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল—– ‘প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ‘গুপ্ত গহ্বর' থেকে পশুদের বেরিয়ে আসা কোন্ ঐতিহাসিক ঘটনার ইঙ্গিত বহন করে?
উঃ ‘আফ্রিকা' কবিতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের প্রত্যক্ষদর্শী রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদকে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন। 'প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস - অর্থ সাম্রাজ্যবাদ দীর্ঘস্থায়ী হলেও তা যে চিরস্থায়ী নয় সে-কথা বোঝাতেই কবি যেন 'আফ্রিকা' কবিতা লিখেছেন। আফ্রিকার জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে সাম্রাজ্যবাদী হামলায় মানবতার অবক্ষয় এবং শেষে ঔপনিবেশিকতার যবনিকা তথা আসন্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘোষণা এই কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে। ‘প্রদোষকাল’ শব্দটির অর্থ সন্ধ্যা অর্থাৎ দিনের শেষ সময়। ‘ঝঞ্ঝাবাতাস’ ও ‘রুদ্ধশ্বাস' শব্দ দুটি সমকালীন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার সূচক। তাই উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটির সাহায্যে কবি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখিয়েছেন, যে-সাম্রাজ্যবাদী শাসন এতদিন অসহায় আফ্রিকার ওপর অত্যাচার চালিয়ে এসেছে এবার তার শেষ সময়। এবার পশ্চিমি সভ্যতা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটের মুখে, বিপন্ন হতে চলেছে তার অস্তিত্ব।
‘গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুদের বেরিয়ে আসা' বলতে কবি আড়াল থেকে শোষণ, অত্যাচার চালানো পাশবিক শক্তির সামনাসামনি আসাকে বোঝাতে চেয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা একসময় অসহায় আফ্রিকার ওপর চালিয়েছে অকথ্য অত্যাচার। হত্যা করেছে মানবিকতাকে। প্রথম যুদ্ধোত্তর ঐতিহাসিক ঘটনার ইঙ্গিত কালে এই অসুখে মানুষ বেসামাল হয়ে পড়ে, তখন থেকেই অনিবার্যভাবে প্রকট হয়ে উঠেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা। গুপ্ত গহ্বর থেকে হিংস্র পশুর বেরিয়ে আসা আসলে সভ্যসমাজের বর্বর রূপের বহিঃপ্রকাশেরই ইঙ্গিতবাহী।
4. ‘দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;/বলো ‘ক্ষমা করো—/হিংস্র প্রলাপের মধ্যে/সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।। —উদ্ধৃত পক্তিগুলির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিসত্তার যে-পরিচয় মেলে, তা আলোচনা করো।
অথবা, 'দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;- কবি কোন্ মানহারা মানবীর দ্বারে দাঁড়াতে বলেছেন তা 'আফ্রিকা' কবিতার বিষয়বস্তু অবলম্বনে আলোচনা করো।
উঃ ‘আফ্রিকা' কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদী সত্তার প্রতীক। সাম্রাজ্যবাদী শাসনের নগ্ন চেহারা কবি নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই তিনি 'আফ্রিকা'—রবীন্দ্রনাথের
কবিসত্ত্বার প্রকাশ ছিলেন ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী। কবির 'মানহারা মানবী' হল 'আফ্রিকা'। সে যেন আমাদের রূপকথার দুয়োরানি। তাকে নিজের অধিকার পেতে হাজারো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। পাশ্চাত্য ঔপনিবেশিক সভ্যতা ‘মানবী’ আফ্রিকার বুকের মধ্য থেকে ছিনিয়ে নেয় সম্পদের ভাণ্ডারকে আর স্থাপন করে উপনিবেশ। এরপর দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে তার সরল সাদাসিধে মানুষগুলিকে; কিন্তু স্বীকৃতি দেয় না তার সভ্যতা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে। তাই আফ্রিকাকে ডুবে থাকতে হয় উপেক্ষার আবিল অন্ধকারে। ‘ক্ষমা করো' উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কবি ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন। কবি-সাহিত্যিকেরা সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠাতা। তাই শোষণ-লাঞ্ছনার স্বীকার আফ্রিকার মর্মবাণী যেন সংবেদনশীল কবিহৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন। ‘আফ্রিকা’কবিতার রচনার সময় গোটা ইউরোপে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা। শুরু হয় ঔপনিবেশিক ও ফ্যাসিস্ট শক্তির স্বার্থের টানাপোড়েন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের পালা। বিশ্বব্যাপী এই হিংস্র প্রলাপের মাঝে কবির দৃষ্টিভঙ্গিতে আফ্রিকা হয়ে ওঠে নিপীড়িত মানবাত্মার প্রতীক। তাই তাঁর মতে আফ্রিকা ও তার নাগরিকদের ওপর যে-অত্যাচার সভ্যসমাজ করেছে, এর একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত ‘ক্ষমা ভিক্ষা’। হিংসার উন্মত্ততার মাঝে, মানবতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাই হবে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।
No comments:
Post a Comment