অষ্টম অধ্যায় "মাটিদুষণ" প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
⬛ অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. জলদূষণ কাকে বলে ?
উঃ। নানা অবাঞ্ছিত রাসায়নিক বা জৈব পদার্থ ও জীবাণু জলে মিশলে তা মানুষ ও প্রাণীর ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে এবং এর ফলস্বরূপ জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীসহ জীবজগতের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা যায়। একে জলদূষণ বলে।
2. পৃথিবীর কোন্ বিখ্যাত নদীগুলি অতিমাত্রায় দূষিত হয়ে পড়েছে?
উঃ। হোয়াংহো, টেমস, মিসিসিপি প্রভৃতি পৃথিবীর বিখ্যাত নদীগুলি অতিমাত্রায় দূষিত হয়ে পড়েছে।
3. জাপানে মিনামাটা উপসাগরে কী দূষণ ঘটেছিল?
উঃ। জাপানে মিনামাটা উপসাগরে পারদ দূষণ ঘটেছিল।
4. ভারতবর্ষে গঙ্গা ছাড়া আর কোন্ কোন্ নদীর জল দূষিত হয়ে পড়েছে?
উঃ। ভারতবর্ষে কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী ও যমুনা নদীর জল দূষিত হয়ে পড়েছে।
5. সারে থাকা নাইট্রেট-এর কারণে কী কী ঘটতে পারে?
উঃ। সারে থাকা নাইট্রেট-এর কারণে ক্যানসার হতে পারে। এমনকি শিশুদের মাথায় রক্ত চলাচলে অসুবিধা ঘটায়।
6. পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে কীসের চাষ করা হয়?
উঃ। পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে মাছের চাষ করা হয়।
7. ক্যাডমিয়াম দূষণে কী অসুখ হয়?
উঃ। ক্যাডমিয়াম দূষণের ফলে ইতাই-ইতাই রোগ হয়।
৪. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর সারা বিশ্বের কত শিশু কীভাবে মারা যায় ?
উঃ। প্রতি বছর সারা বিশ্বের প্রায় ৩০ লক্ষ শিশু ডাইরিয়া ও অন্যান্য জলবাহিত সংক্রামক অসুখে মারা যায়।
9. পৃথিবীর কতভাগ জল ও কতভাগ স্থল ?
উঃ। পৃথিবীর তিনভাগ জল ও একভাগ স্থল।
10. পৃথিবীতে কতভাগ স্বাদু জল রয়েছে?
উঃ। পৃথিবীতে 1 ভাগ জল স্বাদু জল রয়েছে যা হল নদীর জল ও ভূগর্ভের জল।
11. সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ কী?
উঃ। স্বাদু জল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ।
12. পৃথিবীর অন্যতম সমস্যা কী?
উঃ। পৃথিবীর অন্যতম সমস্যা পানীয় জল বা বিশুদ্ধ স্বাদু জলের অভাব।
13. পৃথিবীর কোথায় কোথায় চরম জলসংকট দেখা গেছে?
উঃ। আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দঃ আমেরিকার কিছু অঞ্চলে চরম জলসংকট দেখা গেছে। যায়।
14. জলে কোন্ রাসায়নিক পদার্থ দিলে জল বিশুদ্ধ করা যায়?
উঃ। জলে ক্লোরিন মেশালে জল বিশুদ্ধ করা যায়।
15. অ্যাকোরিয়ামের জলে ফিনাইল বা কেরোসিন তেল ফেলে দিলে কী হবে?
উঃ। অ্যাকোরিয়ামের জলে ফিনাইল বা কেরোসিন তেল ফেলে দিলে দূষণের কালে মাছগুলো সব মরে যাবে।
16. জলের বেশিরভাগ জীবাণু কোন্ পদ্ধতিতে নষ্ট হয়ে যায়?
উঃ। 100° সে. উয়তায় 10 মিনিট ফোটালেই জলের বেশিরভাগ জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়।
16.পানীয় জল কোথা থেকে পাও ?
উঃ। নদী, পুকুর, নলকূপ ও টাইম কল থেকে।
17. পানীয় জলে কখনও ঘোলাটে ভাব, নোংরা, দুর্গন্ধ দেখেছ?
উঃ। কোনো কোনো সময় টাইম কলের জলে ঘোলাটে ভাব দেখেছি।
18.পানীয় জল কি কোনো উপায়ে বিশুদ্ধ করে তবে ব্যবহার করো?
উঃ। হ্যাঁ, জল ফুটিয়ে নিয়ে ব্যবহার করি।
19. গত তিনমাসে তোমার বাড়িতে পাড়ায় বা তোমার ক্লাসে কি কেউ পেটের অসুখ ডাইরিয়ায় ভুগেছে?
উঃ। বাড়িতে আমার ভাই এবং ক্লাসে দু-চারজন বন্ধু ডাইরিয়ায় ভুগেছে।
20.বাড়ির আবর্জনা, জঞ্জাল, কোথায় ফেলা হয় ?
উঃ। পাড়ায় জঞ্জাল ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায় বা জমাদারের গাড়িতে।
21.বাড়ির শৌচাগারের জল কোথায় মেশে?
উঃ। রাস্তার নর্দমায় মেশে।
22. বাড়িতে প্রতিমাসে কতটা সাবান, শ্যাম্পু বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয়?
উঃ। বাড়িতে প্রতিমাসে চারটি সাবান, এক শিশি শ্যাম্পু ও দুই কিলো ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয়।
23. বাড়ির আশপাশের পুকুরে, জলাশয়ে কাপড়কাচা, গোরু-মোষ স্নান করানো হয়?
উঃ। না, হয় না।
24. আশেপাশে চাষের জমি থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখো সারা বছরে কোন প্রকার রাসায়নিক সার কতটা ব্যবহার করা হয়?
উঃ। চাষের জমি যদিও অনেকটা দূরে আছে, তবুও কিছু কিছু রাসায়নিক সার সেখানে ব্যবহার করা হয়।
25. বাড়ি বা স্কুলের আশেপাশে কোনো কারখানা থাকলে, জেনে দেখো কারখানার বর্জ্য জল কি শোধন করার ব্যবস্থা আছে?
উঃ। হ্যাঁ, কারখানা আছে। সব কারখানায় বর্জ্য জল শোধনের ব্যবস্থা নেই। দু-একটিতে আছে।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :তিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. কীভাবে জল দূষিত হয় ?
উঃ। জলে বিভিন্ন অবাঞ্ছিত রাসায়নিক বা জৈব পদার্থ, জীবাণু মিশে গিয়ে জল মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেলে এবং জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের বসবাস করার অযোগ্য হয়ে গেলে জল দূষিত হয়।
2. পৃথিবীর মোট জলের 100 ভাগের মধ্যে কোন্ কোন্ জল কত ভাগ রয়েছে?
উঃ। পৃথিবীর মোট জলের 100 ভাগের মধ্যে 97 ভাগ হল সমুদ্রের নোনা জল। বাকি 3 ভাগ স্বাদু জল। এই তিন ভাগ স্বাদু জলের 2 ভাগ হিমবাহের বরফ এবং বাকি 1 ভাগ স্বাদুজল হল নদী, জলাশয়, হ্রদ এবং ভূ-গর্ভের জল।
3. গঙ্গা নদী দূষণের কারণগুলি কী কী ?
উঃ। আমাদের দেশ ভারতবর্ষে গঙ্গা নদীকে আমরা মাতৃজ্ঞানে পূজা করি। কিন্তু গত কয়েক দশকে গঙ্গা নদীর দুই তীরে বহু কলকারখানা, শহর, নগর, জনবসতি গড়ে ওঠার ফলে প্রচুর বিষাক্ত আবর্জনা এই নদীর জলে মিশে জলকে দূষিত করেছে। তাই এখন এই নদীর জল খেলে অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
4. ভারতবর্ষের কোন কোন রাজ্য জলসংকটপূর্ণ?
উঃ। ভারতবর্ষের জলসংকটপূর্ণ রাজ্যগুলি হল – উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, গুজরাট ও মহারাষ্ট্র।
5. ইতাই ইতাই রোগ কী?
উঃ। জলে ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এবং তা মানুষের দেহে প্রবেশ করলে ক্যাডমিয়ামের সংক্রমণ হয়। এর ফলে মানুষের হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায় ও হাড়মজ্জায় সমস্যা ঘটে। এই রোগটিকে ইতাই-ইতাই বলে।
6. ব্ল্যাকফুট ব্যাধি কী ?
উঃ। আর্সেনিকের প্রভাবে দূষিত হওয়া জল আমাদের শরীরে প্রবেশ করার ফলে হাতের চেটো ও পায়ের তলায় কালো কালো ক্ষতের সৃষ্টি হয়, একে ব্ল্যাকফুট ব্যাধি বলে।
7. আর্সেনিক দূষণ কীভাবে হয় ?
উঃ। মাটির নীচের স্তর থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিরিক্ত জল, ক্লোরিন তুলে নেওয়ার ফলে মাটির নীচের ফাঁকা জায়গায় আর্সেনিকের যৌগ বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিষাক্ত ধাতব যৌগ তৈরি করে। এই বিষাক্ত যৌগ জলে মিশে নলকূপের জলের মাধ্যমে পানীয় জলে মিশে যায় ও আর্সেনিক দূষণ ঘটায়। আর্সেনিক দূষণের ফলে হাতে পায়ে পচা কালো ঘা বা ক্ষত হয় একে ব্ল্যাকফুট ব্যাধি বলে।
এছাড়াও আর্সেনিক দূষণ থেকে চর্মরোগ, রক্তাল্পতা, যকৃত, ফুসফুস ও ত্বকের ক্যানসার হতে পারে।
8. কোন্ কোন্ জরুরি বিষয় মেনে চললে জলবাহিত সংক্রমণ প্রায় আটকানো যায় ?
উঃ। তিনটি জরুরি বিষয় মেনে চললেই জলবাহিত সংক্রমণ আটকানো যায়। (i) বিশুদ্ধ জল পান করা। (ii) সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। পরিষ্কার পাত্রে জল রাখা প্রভৃতি সাধারণ কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। (iii) শৌচাগারের ব্যবহার করা এবং নোংরা আবর্জনা সঠিক জায়গায় ফেলা।
⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5
1. জলদূষণের সম্ভাব্য কারণগুলি কী কী ?
উঃ। জলদূষণের কারণগুলি হল—
(i) শিল্প-কারখানা থেকে দূষণ : বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত পলিথিন-প্লাস্টিক, অপরিশোধিত খনিজ তেল, বিভিন্ন রকম রাসায়নিক পদার্থ, নানা ধরনের ধাতু যথা অ্যামোনিয়া, ক্লোরিন, ফেনল, সায়ানিক, তামা, জিঙ্ক, পারদ, সিসা ক্রোমিয়াম প্রভৃতি নালা-নর্দমা দিয়ে নদী বা সমুদ্রের জলে মিশে জলকে দূষিত করে।
(ii) গৃহস্থালি থেকে দূষণ : দৈনন্দিন রান্নায় ব্যবহৃত তরিতরকারির খোসা, শৌচাগারের মল-মূত্র, সাবান, ডিটারজেন্ট, ফিনাইল ইত্যাদি নালা-নর্দমা দিয়ে পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে পড়ে জলকে দূষিত করে। এছাড়া বিভিন্ন খাটালে পশুশালা, বড়ো বাজার, হাসপাতাল প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন বর্জ্য জলদূষণ ঘটায়।
(iii) কৃষিক্ষেত্র থেকে জলদূষণ : চাষের জমিতে দেওয়া রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক বৃষ্টির জলে ধুয়ে জলাশয়ে পড়ে জলকে দূষিত করে।
(iv) তাপীয় দূষণ : তাপবিদ্যুৎ বা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত উয় দূষিত বর্জ্য জল জলাশয় বা নদীতে মিশে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে জল দূষণ ঘটায়।
(v) তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে দূষণ : পারমাণবিক চুল্লি বা পরীক্ষাগার থেকে অথবা পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর তা থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় পদার্থ জলে মিশে জলকে দূষিত করে।
(vi) খনিজ তেল থেকে দূষণ : তেলবাহী জাহাজ থেকে দুর্ঘটনার ফলে অথবা সমুদ্রে অবস্থিত তেলের খনি থেকে তেল তোলার সময় তেল জলে পড়ে জলদূষণ হয়।
(vii) বায়ুদূষণের ফলে : কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়ার মাধ্যমে বাতাসে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি জমা হয়। বায়ুমণ্ডল থেকে বৃষ্টির জলের সাথে সালফার ডাই-অক্সাইড নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড বিক্রিয়া করে এবং বিভিন্ন জলাশয়ের জলকে আম্লিক করে দেয়।
(viii) আর্সেনিক দূষণ : মাটির নীচের আর্সেনিক নলকূপের জলের সঙ্গে মিশে গিয়ে বিষাক্ত হয়ে জলদূষণ ঘটায়। একইভাবে জলে ফ্লুওরিন ক্লোরিন অতিরিক্ত পরিমাণে থাকলেও জল দূষিত হয়।
2. জলদূষণ প্রতিরোধ করার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
উঃ। জলদূষণ আটকানোর পাশাপাশি জ্বলের অতিরিক্ত ব্যবহার কমানো এবং বেশি পরিমাণে পুনর্ব্যবহার করলে তবেই তীব্র জলসংকট মেটানো যেতে পারে। (i) নদী, জলাশয় ও সমুদ্রের জলে সরাসরি নোংরা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। (ii) কলকারখানার নোংরা জল পরিশুদ্ধ করে নদীনালায় ফেলা উচিত। (iii) প্লাস্টিক, মৃতদেহ, কঠিন বর্জ্য জলাশয়ে ফেলা উচিত নয়। (iv) চাষের জমিতে অতিরিক্ত সার, কীটনাশক দেওয়া বন্ধ করতে হবে। পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। (v) শহর ও কলকারখানার দূষিত জল শোধন করে ব্যবহার করা উচিত। (vi) জলের অপব্যবহার ও অপচয় বন্ধ করা উচিত। (vii) জলাশয়ে গোরু-মহিষ স্নান করানো, কাপড়-জামা কাচা বন্ধ করতে হবে। (viii) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য গরম জল ঠান্ডা করে তবেই নদী বা সমুদ্রে ফেলতে হবে। (ix) বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল ও রাসায়নিকের মাধ্যমে সমুদ্রে ভাসমান তেলের দূষণ দূর করতে হবে। (x) জাহাজ থেকে যাতে তেল নির্গত হয়ে সমুদ্রে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত। (xi) মল-মূত্র, হাসপাতালের দূষিত জীবাণুযুক্ত আবর্জনা জলে ফেলা উচিত নয়।
3. জলদূষণ রোধ করার উপায়গুলি আলোচনা করো।
উঃ জলদূষণ প্রতিরোধ করার উপায়গুলি হল : (i) জলের কল বন্ধ করে বিশুদ্ধ জলের অপচয় রুখতে হবে। (ii) পরিবেশের ক্ষতি করে না এমন ক্ষারহীন সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। কোনো পুকুর বা জলাশয়ে ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় কাচা বন্ধ করতে হবে। (iii) পুকুর নদী, নালা বা অন্যান্য জলাশয়ে নোংরা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। বাড়ির আবর্জনা এমন স্থানে ফেলতে হবে যার আশপাশে যেন বিশুদ্ধ জলের উৎস না থাকে। (iv) পুকুর পাড়ে, কুয়োর চারপাশে, নলকূপের নিকাশি নালার ধারে শাকসবজি, ফল-ফুলের গাছ লাগাতে হবে। এতে যেমন দূষিত জল অনেকটা পরিশুদ্ধ হবে পাশাপাশি মাটির ক্ষয় কমে যাবে। (v) কৃষিজমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা বন্ধ করতে হবে পাশাপাশি সেই কীটনাশক মিশ্রিত জল যাতে কোনো জলাশয়ে না মেশে সে দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। (vi) শিল্পকেন্দ্র বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দূষিত বা উত্তপ্ত জল সরাসরি যাতে সমুদ্র বা নদীতে না মেশে তা দেখতে হবে। (vii) পানীয় জলে জিওলিন জাতীয় তরল ব্যবহার করলে বা ফটকিরি মেশালে বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত জল পাওয়া সম্ভব।
4. কোন্ কোন্ সহজ উপায়ে জল বিশুদ্ধ করা যায়?
উঃ (i) 100° সে. উয়তায় 10 মিনিট ধরে জলকে ফোটালে জলের বেশিরভাগ জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। (ii) নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্লোরিন জলে দিলে জীবাণুমুক্ত জল পাওয়া যায়। (iii) ঘোলা জলকে পরিশুদ্ধ করতে জলটা ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে। কয়েক ঘণ্টা পর দেখা যাবে বেশিরভাগ কাদা ও বালুকণা থিতিয়ে পড়েছে। (iv) কাঠকয়লা, সূক্ষ্ম বালি, নুড়ি-পাথর-এর মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে জল বিশুদ্ধ করা যায়। (v) কড়াইশুঁটি, অড়হর ডাল, মুসুর ডাল ইত্যাদি গাছ জলের নোংরাগুলোকে নীচে থিতিয়ে পড়তে সাহায্য করে। (vi) একটি খুব সহজ ও কার্যকরী উপায় হল সূর্যের আলোর মাধ্যমে জল বিশুদ্ধ করা। পাতলা প্লাস্টিকের স্বচ্ছ বোতলে জল ভরে রোদে ছয়-সাত ঘণ্টা রেখে দিলে প্রায় ফোটানো জলের মতো বিশুদ্ধ জল পাওয়া যায়।
5. পশ্চিমবঙ্গে জলদূষণের প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
উঃ। (i) পশ্চিমবঙ্গ জলদূষণ কয়েকটি প্রভাব লক্ষ করা যায় এগুলি হল-পশ্চিমবঙ্গের কমবেশি অনেক জেলা যেমন মালদা, নদিয়া, হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় মাটির নীচের জলে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। ফলে আর্সেনিক দূষণ ঘটছে। যার ফলে হাত ও পায়ের চেটোয় কালো কালো ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। একে ‘ব্ল্যাকফুট ব্যাধি’ বলে। এ ছাড়াও রক্তাল্পতা, চর্মরোগ, ফুসফুস ও ত্বকের ক্যানসার হচ্ছে। (ii) ফ্লুরাইড দূষণের ফলে দাঁত ও হাড়ের গঠন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফ্লুরোসিস রোগ হচ্ছে। এ ছাড়া পারদ দূষণে মিনামাটা ও ক্যাডমিয়াম দূষণে ইতাই-ইতাই হয়ে থাকে। (iii) হলদিয়া পেট্রো-রসায়ন শিল্প গড়ে ওঠায় হলদি নদীর মোহানায় জলদূষণের জন্য ইলিশ মাছের আনাগোনা কমে গেছে। পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে মাছের ভেড়িগুলোতে মাছ চাষ কমে গেছে কারণ কীটনাশক প্রয়োগের ফলে বহু মাছ মারা যাচ্ছে। (iv) জলদূষণের ফলে জলের ভাণ্ডার কমে যাচ্ছে। দূষিত জলপান করার ফলে পেটের অসুখ, ডাইরিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
No comments:
Post a Comment