নব সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিনের ব্যাখ্যা বা হবসন লেনিন তত্ত্ব | Hobson and Lenin's Explanation of Neo-imperialism in Bangla - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 3 April 2023

নব সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিনের ব্যাখ্যা বা হবসন লেনিন তত্ত্ব | Hobson and Lenin's Explanation of Neo-imperialism in Bangla

 

নব সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিনের ব্যাখ্যা বা হবসন লেনিন তত্ত্ব।


ভূমিকাঃ


উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বিশেষত 1870 খ্রিস্টাব্দের পর ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি ইউরোপের বাইরে মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন কাঁচামাল সমৃদ্ধ ও সম্ভাব্য বাজার যুক্ত দেশগুলিতে উপনিবেশ দখলের জন্য যে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এবং আধিপত্য স্থাপন করে , তা নব সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত । 1870-1914 খ্রিস্টাব্দ এই সময়কালকে সাম্রাজ্যবাদের যুগ বলা হয় । বিখ্যাত ঐতিহাসিক জে এ হবসন ও সোভিয়েত রাশিয়ার রূপকার লেনিন 1870-1914 খ্রিস্টাব্দের এই সময়পর্বে সাম্রাজ্যবাদের আকস্মিক আবির্ভাবকে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেন।

   

জে এ হবসন

                                           


জে এ হবসন - এর ব্যাখ্যাঃ


বিখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জে এ হবসন তাঁর ‘ Imperialism - A Study ' গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন । তাঁর মতে সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক , ধর্মীয় ও আদর্শগত কারণ হয়তো ছিল , তবে আসল কারণ হল অর্থনৈতিক । এই কারণগুলি হল


( i ) পুঁজির বিনিয়োগঃ
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় পুঁজি পতিদের হাতে প্রচুর পরিমাণে মূলধন জমা হয় । পুঁজিপতিরা এই মূলধন উপনিবেশে বিনিয়োগ করে আরও মুনাফা অর্জনের জন্য নিজের নিজের দেশের সরকারকে উপনিবেশ দখল করতে বাধ্য করে ।


( ii ) কঁাঁচামাল সংগ্রহঃ
পুঁজিবাদী দেশগুলি উপনিবেশ থেকে সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য এশিয়া ও আফ্রিকার অনধিকৃত ও অনাবিষ্কৃত কাঁচামাল সমৃদ্ধ দেশগুলিতে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য এক উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে ।


( iii ) একচেটিয়া বাজার দখল করাঃ
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে শিল্পবিপ্লব হওয়ার পর পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি তাদের শিল্পজাত পণ্যের বাজার হারায় । তাদের শিল্পগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দরকার হয় নতুন বাজার দখলের ।


( iv ) শোষণঃ
নতুন উপনিবেশ স্থাপিত হলে পুঁজিপতিরা সেই দেশে শোষণের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে । ফলে সেই




 ভি আই লেনিন

                                         


লেনিনের ব্যাখ্যাঃ


বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা লেনিন তাঁর ' Imperialism ; The Highest Stage of Capitalism ' ( ( 1919 ) গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাকে আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন । তাঁর মতে পুঁজিবাদী শ্রেণির স্বার্থেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে বিদেশনীতি পরিচালিত হয় । অধিক পরিমাণে মুনাফা লাভের আশায় শিল্প মালিকরা দেশের মানুষের প্রয়োজনের বেশি পণ্য উৎপাদন করে । এই বাড়তি মাল বিক্রি এবং সস্তা দামে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র উপনিবেশ দখলের চেষ্টা করে । তিনি বলেন যে পুঁজিবাদীরা বাজার দখল করা অপেক্ষা গরিব দেশে পুঁজি রপ্তানির ওপরই আস্থা দেখায় । লেনিন আরও বলেন যে , পুঁজিবাদ থেকে সাম্রাজ্যবাদ এবং সাম্রাজ্য দখলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকেই যুদ্ধের জন্ম হয় । '


ডেভিড টমসনের সমালোচনাঃ


ডেভিড টমসন লেনিনের উপরোক্ত যুক্তিগুলির বিরোধিতা করে বলেছেন—
( i ) ইউরোপের বেশির ভাগ মূলধনের বিনিয়োগ করা হয়েছিল রাশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকাতে ; অনুন্নত উপনিবেশগুলিতে নয় ৷
( ii ) ডেনমার্ক ও সুইডেনের কোনো উপনিবেশ ছিল না । কিন্তু এই দুই দেশের শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান ছিল উন্নত । আবার ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের উপনিবেশ থাকলেও এই দুই দেশের শ্রমিক শ্রেণির জীবনযাত্রার মান অনুন্নত ছিল ।
( iii ) বিশাল মূলধনি পুঁজি গড়ে ওঠবার অনেক আগেই সাম্রাজ্যবাদ - এর উদ্ভব হয় । তাই এই তত্ত্ব দিয়ে সাম্রাজ্যবাদকে ব্যাখ্যা করা যায় না । দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবসম্পদকে তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে ।


হবসনের প্রতিকারঃ


হবসনের মতে বাড়তি মূলধনের চাপই হল নব সাম্রাজ্যবাদের প্রসারের মূল কারণ । তিনি এই ব্যবস্থার প্রতিকারের জন্য কতকগুলি প্রস্তাব দিয়েছেন ।
( i ) অভ্যন্তরীণ সংস্কারের দ্বারা সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থায় কিছুটা সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।
( ii ) বাড়তি মূলধন শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন করলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে । তারা কারখানার উদ্বৃত্ত পণ্য কিনে নিতে পারবে । এর ফলে উদ্বৃত্ত পণ্যের বিক্রয়ের জন্য বাজার দখলের দরকার হবে না ।
( iii ) ডেভিড টমসন বলেছেন এটি সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের একমাত্র কারণ না হলেও অন্যতম কারণ ছিল ।


মূল্যায়নঃ


লেনিন বা হবসনের এই তত্ত্বটি ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য হয়েছিল । ইংল্যান্ডই ছিল সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের মালিক । ইংল্যান্ডের সাম্রাজ্যের পরিমাণ ছিল সমগ্র ইউরোপীয় দেশগুলির সাম্রাজ্যের সমান । তবে এই তত্ত্বটি সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের একমাত্র কারণ ছিল না । রাজনৈতিক , সামরিক ও ধর্মীয় কারণগুলিও অনেকাংশে দায়ী ছিল ।

No comments:

Post a Comment