দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
👉 ( দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পার্ট -৩ )
1. একজন রুশ সাহিত্যিকের নাম বলো।
উঃ একজন রুশ সাহিত্যিক হলেন লিও টলস্টয়।
2. কবে, কাদের নিয়ে ফ্রান্স-বিরোধী দ্বিতীয় শক্তিজোট গড়ে ওঠে?
উঃ ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে (১২ মার্চ) ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, নেপল্স, পোর্তুগাল ও তুরস্ককে নিয়ে ফ্রান্স-বিরোধী দ্বিতীয় শক্তিজোট গড়ে ওঠে।
3. মৈত্রী জোট-এ কোন্ তিন দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল?
উঃ মৈত্রী জোট-এ ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়া—এই তিন দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
4. নেপোলিয়ন স্পেনের কোন্ শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করেন ?
উঃ নেপোলিয়ন স্পেনের বুরবোঁ রাজবংশের শাসক চতুর্থ চার্লস ও যুবরাজ ফার্দিন্যান্দকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
5. নেপোলিয়ন কাকে স্পেনের সিংহাসনে বসান ? অথবা, স্পেনের সিংহাসনে নেপোলিয়ন কাকে বসিয়েছিলেন ? অথবা, নেপোলিয়ন স্পেনের সিংহাসনে কাকে, কবে বসিয়েছিলেন ?
উঃ নেপোলিয়ন ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে স্পেন দখল করে নিজ ভ্রাতা জোসেফকে স্পেনের সিংহাসনে বসান।
6. কোন যুদ্ধে পরাজয় ছিল নেপোলিয়নের পতনের প্রথম ধাপ?
উঃ ঐতিহাসিক ডেভিড টমসনের মতে, স্পেনীয় যুদ্ধে পরাজয় ছিল নেপোলিয়নের পতনের প্রথম ধাপ।
7. 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' গ্রন্থটি কার রচনা?
উঃ ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস' গ্রন্থটি লিও টলস্টয়-এর রচনা।
৪. কোন্ রুশ উপন্যাসে নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযানের সুন্দর বিবরণ রয়েছে?
উঃ লিও টলস্টয় রচিত 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' উপন্যাসে নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযানের সুন্দর বিবরণ আছে।
9. নেপোলিয়ন কবে রাশিয়া আক্রমণ করে ?
উঃ নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করে।
10. কোন্ গ্রন্থে নেপোলিয়নের রুশ অভিযানের বিবরণ পাওয়া যায় ?
উঃ লিও টলস্টয়-এর 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' গ্রন্থে নেপোলিয়নের রুশ অভিযানের বিবরণ পাওয়া যায় ৷
11. ‘পোড়ামাটির নীতি' কী?
উঃ ‘পোড়ামাটির নীতি’ হল যুদ্ধের একপ্রকার রণকৌশল। এতে শত্রুদলের অগ্রগতির সময় নিজ দেশের সম্পদ ধ্বংস করে সেনাদের পিছু হটানো হয় ৷
12. নেপোলিয়নের বাহিনীর বিরুদ্ধে কে 'পোড়ামাটি নীতি' নিয়েছিলেন ?
উঃ নেপোলিয়ন বাহিনীর বিরুদ্ধে রুশ সেনাপ্রধান কুটুসফ(kutusoff) 'পোড়ামাটি নীতি' নিয়েছিলেন।
13. 'পোড়ামাটি নীতি' কোন রাষ্ট্র গ্রহণ করেছিলেন ?
উঃ রাশিয়া ফরাসি অভিযানের বিরুদ্ধে 'পোড়ামাটি নীতি' গ্রহণ করেছিল।
14. রাশিয়া কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে 'পোড়ামাটি নীতি' গ্রহণ করে ?
উঃ রাশিয়া নেপোলিয়নের ফরাসি সেনাবাহিনীর আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে 'পোড়োমাটি নীতি' গ্রহণ করে।
15. বোরোডিনোর যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
উঃ ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে বোরোডিনোর যুদ্ধ হয়েছিল।
16. ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনা নেপোলিয়নকে শঙ্কিত করেছিল ?
উঃ ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া অভিযানের সময় নেপোলিয়নের গ্রান্ড আর্মির ব্যাপক ধ্বংসসাধন তাঁকে শঙ্কিত করেছিল।
17. শতদিবসের রাজত্ব কোন সম্রাটের সময়ের ঘটনা ?
উঃ শতদিবসের রাজত্ব ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের সময়ের ঘটনা।
18. 'একশত দিবসের রাজত্ব' কোন সময়কালকে বোঝায় ?
উঃ নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপের নির্বাসন থেকে ফিরে এসে (১ মার্চ, ১৮১৫ খ্রি.) ফ্রান্সে তিনি আবার মোটামুটি ১০০ দিন রাজত্ব করার সুযোগ পান। 'একশত দিবসের রাজত্ব' বলতে ১ মার্চ থেকে ১০০ দিন সময়কালকে বোঝায়।
19. প্রথমে কারা, কার বিরুদ্ধে উপদ্বীপের যুদ্ধ শুরু করে ?
উঃ প্রথমে স্পেন ও পোর্তুগাল, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে উপদ্বীপের যুদ্ধ শুরু করে।
20. লাইপজিগের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
উঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও চতুর্থ শক্তিজোটের বিভিন্ন দেশের মধ্যে লাইপজিগের যুদ্ধ হয়েছিল।
21. কবে, কোন্ যুদ্ধে নেপোলিয়নের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে ?
উঃ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে (১৮ জুন) ওয়াটারলু-এর যুদ্ধে নেপোলিয়নের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।
22. কোন্ যুদ্ধকে 'জাতিসমূহের যুদ্ধ' বলা হয় ? অথবা, কোন্ যুদ্ধ 'জাতিসমূহের যুদ্ধ' নামে পরিচিত ?
উঃ লাইপজিগের যুদ্ধকে (১৮১৩ খ্রি.) ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ' অভিহিত করা হয়।
23. নেপোলিয়ন স্পেন জয়ের পর স্পেনের সিংহাসনে কাকে বসিয়েছিলেন ?।
উঃ নেপোলিয়ন স্পেন জয়ের পর তাঁর নিজের ভাই জোসেফকে স্পেনের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।
24. উপদ্বীপের কোন যুদ্ধে ফরাসি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে ?
উঃ উপদ্বীপের ভিত্তোরিয়ার যুদ্ধে (১৮১৩ খ্রি.) ফরাসি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।
25. কবে, কাদের মধ্যে ড্রেসডেনের যুদ্ধ হয়েছিল ?
উঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ড্রেসডেনের যুদ্ধ হয়েছিল।
26. শতদিবসের রাজত্ব'-এর সময়কাল উল্লেখ করো।
উঃ 'শতদিবসের রাজত্ব'-এর সময়কাল হল ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ থেকে ২৯ জুন।
27. কবে, কাদের উদ্যোগে ফ্রান্স-বিরোধী তৃতীয় শক্তিজোট গড়ে ওঠে ?
উঃ ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও সুইডেনের উদ্যোগে ফ্রান্স-বিরোধী তৃতীয় শক্তিজোট গড়ে ওঠে।
28. চতুর্থ শক্তিজোটের কয়েকজন সেনাপতির নাম লেখো।
উঃ উইটগেনস্টাইন, ইয়র্ক, বুলো, ব্লকার প্রমুখ ছিলেন চতুর্থ শক্তিজোটের কয়েকজন সেনাপতি।
29. কোন্ রুশ সেনাপতির হাতে নেপোলিয়নের পতন হয় ?
উঃ রুশ সেনাপতি কুতুজভের হাতে নেপোলিয়নের পতন হয়।
30. কোন সন্ধির মাধ্যমে নেপোলিয়নকে এলবা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয় ?
উঃ ফঁতেনব্লু সন্ধির মাধ্যমে নেপোলিয়নকে এলবা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
31. 'ওয়াটারলুর যুদ্ধ' কত খ্রিস্টাব্দে হয়?
উঃ ওয়াটারলুর যুদ্ধ হয় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে।
32. নেপোলিয়নের জীবনের শেষ যুদ্ধ কোনটি?
উঃ নেপোলিয়নের জীবনের শেষ যুদ্ধ হল ওয়াটারলু-র যুদ্ধ (১৮১৫ খ্রি.)।
33. কোন ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটারলুর যুদ্ধে নেপোলিয়নকে পরাজিত করেন?
উঃ ইংরেজ সেনাপতি আর্থার ওয়েলেসলি বা ডিউক অব ওয়েলিংটন ওয়াটারলুর যুদ্ধে নেপোলিয়নকে পরাজিত করেন।
34. নেপোলিয়ন কবে, কোন সন্ধির দ্বারা সিংহাসন ত্যাগ করে এলবা দ্বীপে নির্বাসনে যান ?
উঃ নেপোলিয়ন ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে ফঁতেনব্লু-এর সন্ধির দ্বারা সিংহাসন ত্যাগ করে এলবা দ্বীপে নির্বাসনে যান।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. ফ্রান্স-বিরোধী দ্বিতীয় শক্তিজোট সম্পর্কে কী জান?
উঃ নেপোলিয়নের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও বিভিন্ন সামরিক অভিযানের সফলতা ইউরোপীয় দেশগুলিকে আতঙ্কিত করে। এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পোর্তুগাল, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় শক্তিজোট গড়ে তোলে। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে এই জোট ভেঙে যায়।
2. ফ্রান্স-বিরোধী তৃতীয় শক্তিজোট সম্পর্কে কী জান?
উঃ নেপোলিয়নের ধারাবাহিক সামরিক সাফল্য ও দ্রুত ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আতঙ্কিত হয়। ফলে ইংল্যান্ড, সুইডেন ও রাশিয়া প্রভৃতি দেশ তাঁর বিরুদ্ধে ১৮০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় শক্তিজোট গড়ে তোলে।
3. ফ্রান্স-বিরোধী চতুর্থ শক্তিজোট সম্পর্কে কী জান?
উঃ আগ্রাসী নেপোলিয়নের ক্ষমতা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে রুশ জার প্রথম আলেকজান্ডারের উদ্যোগে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, রাশিয়া ও সুইডেন প্রভৃতি দেশ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে চতুর্থ তথা শেষ শক্তিজোট গড়ে তোলে।
4. নেপোলিয়ন কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণ সম্পর্কে কী জান?
উঃ রাশিয়া মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে (২৪ জুন) ৬ লক্ষ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে রাশিয়া অভিযান করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি রাশিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হন এবং তাঁর বিখ্যাত সেনাদল 'গ্রাদ আর্মি' বিধ্বস্ত হয়।
5. 'পোড়ামাটি নীতি' কী?
উঃ ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করলে রাশিয়া সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে। ফরাসি বাহিনী রাশিয়ায় যাতে সমস্যায় পড়ে সে উদ্দেশ্যে পিছু হটার সময় রুশ বাহিনী নিজেদের রাস্তাঘাট ও সেতু ধ্বংস করে, খাদ্যশস্য, শস্যক্ষেত্র, শহর, জনপদ প্রভৃতি আগুনে পুড়িয়ে, পানীয় জলে বিষ মিশিয়ে দিয়ে যায়। রুশ বাহিনীর এই পদক্ষেপ ‘পোড়ামাটি নীতি' নামে পরিচিত।
6. নেপোলিয়নের অভিযান ব্যর্থ করতে রাশিয়ার কোন গেরিলা বাহিনী নামানো হয় ? এই সময় কোন জ্বরের প্রাদুর্ভাব হয় ?
উঃ [1] নেপোলিয়নের অভিযান ব্যর্থ করতে রাশিয়ার 'কসাক' নামে গেরিলা বাহিনী নামানো হয়। [2] এই সময় 'টাইফাস' নামে অজানা জ্বরের প্রাদুর্ভাব হয়।
7. রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার দুটি তাৎপর্য উল্লেখ করো।
উঃ রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার দুটি প্রধান তাৎপর্য ছিল— [1] নেপোলিয়ন যে অপরাজেয় নন তা ইউরোপের দেশগুলির কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। [2] রাশিয়া অভিযানে তার ব্যর্থতায় অনুপ্রাণিত হয়ে ফরাসি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন জাতি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে।
8. কসাক গেরিলা বাহিনী কী ?
উঃ কসাক গেরিলা বাহিনী হল রাশিয়ার একপ্রকার বিশেষ সেনাবাহিনী। এরা সাধারণত আড়ালে থেকে যুদ্ধ করে।
9. স্পেনীয় ক্ষত কী ?
উঃ ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন স্পেন দখল করে সেখানকার সিংহাসনে নিজের ভাই জোসেফকে বসিয়ে দিলে স্পেনবাসী নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তীব্র মুক্তিসংগ্রাম শুরু করে। স্পেনের যুদ্ধে নেপোলিয়নের বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটে এবং জোসেফ স্পেন থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন। স্পেনে নেপোলিয়নের এই সামরিক ব্যর্থতা 'স্পেনীয় ক্ষত' নামে পরিচিত।
10. ‘স্পেনীয় ক্ষত' কীভাবে নেপোলিয়নকে ধ্বংস করেছিল ?
উঃ ‘স্পেনীয় ক্ষত' বিভিন্নভাবে নেপোলিয়নকে ধ্বংস করে— [1] নেপোলিয়ন স্পেন দখল করলে প্রবল জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ স্পেনবাসী তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে লিপ্ত হয় (১৮০৮-১৪ খ্রি.)। [2] স্পেন, পোর্তুগাল ও ইংল্যান্ডের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে ফ্রান্সের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। [3] যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে নেপোলিয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।[4] এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক ও সামরিক বিপর্যয় ঘটে। [5] ইউরোপে নেপোলিয়ন-বিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে।
11. আইবেরীয় উপদ্বীপে নেপোলিয়নের অভিযান সম্পর্কে কী জান ?
উঃ আইবেরীয় উপদ্বীপে পোর্তুগাল ছিল ব্রিটিশদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। সমগ্র আইবেরীয় উপদ্বীপ দখলের উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রি (১৮০৬ খ্রি.) জারি করে পোর্তুগালকে নির্দেশ দেন, ইংরেজদের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছেদ করার। কিন্তু পোর্তুগাল তা করতে অস্বীকার করলে ফ্রান্স, স্পেনের সঙ্গে গোপনে 'ফঁতেনব্লু-এর সন্ধি' স্বাক্ষর করে যৌথভাবে ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি মার্শাল জুনো- র নেতৃত্বে পোর্তুগাল অভিযান করে তা দখল করে নেয়। ফলে পোর্তুগালে নেপোলিয়নের ‘মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা' চালু হয়।
12. স্পেনে কীভাবে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়?
উঃ ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন স্পেন দখল করলে স্পেনবাসীরা নিজেদের মধ্যেকার বিবাদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ফরাসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রাম শুরু করে। এভাবেই স্পেনে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়।
13. নেপোলিয়নের বাহিনী স্পেনে প্রথম কোন্ যুদ্ধে পরাস্ত হয় ? এর ফল কী হয়েছিল?
উঃ [1] নেপোলিয়নের বাহিনী স্পেনে বেলেনের যুদ্ধে (১৮০৮ খ্রি.) প্রথম পরাস্ত হয়। [2] স্পেনে বেলেনের যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয়ের প্রধান ফলাফলগুলি ছিল— [I] যুদ্ধজয়ী স্পেনীয়রা নতুন উদ্যমে জেগে উঠে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। (ii) নেপোলিয়নের অপরাজিত ভাবমূর্তি ধ্বংস হয় এবং ইউরোপে নেপোলিয়ন-বিরোধী শক্তিগুলি সক্রিয় হতে শুরু করে।
14. উপদ্বীপের যুদ্ধ বলতে কী বোঝায় ?
উঃ স্পেনের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন দখল করে নিজ ভ্রাতা জোসেফকে স্পেনের সিংহাসনে বসান। ফলে ক্ষুব্ধ স্পেনবাসী নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তীব্র মুক্তিসংগ্রাম শুরু করে। ইংল্যান্ড এবং পোর্তুগাল এই যুদ্ধে স্পেনের পক্ষে যোগ দেয়। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে স্পেন, পোর্তুগাল ও ইংল্যান্ডের এই যুদ্ধ উপদ্বীপীয় যুদ্ধ (১৮০৮-১৮১৪ খ্রি.) নামে পরিচিত। যুদ্ধে ফ্রান্সের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে এবং জোসেফ সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য হন ।
15. উপদ্বীপের যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি যুদ্ধের নাম করো।
উঃ উপদ্বীপের যুদ্ধের (১৮০৮-১৪ খ্রি.) সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল— [1] ভিমেয়েরো-এর যুদ্ধ (১৮০৮ খ্রি.), [2] করুন্নার যুদ্ধ (১৮০৮ খ্রি.), [3] ট্যালাভেরার যুদ্ধ (১৮০৯ খ্রি.), [4] ওয়াগ্রামের যুদ্ধ (১৮০৯ খ্রি.), [5] টোরেস ভেড্রাস-এর যুদ্ধ (১৮০১ খ্রি.), [6]স্যালামাঙ্কার যুদ্ধ (১৮১২ খ্রি.), [7] ভিত্তোরিয়ার যুদ্ধ (১৮১৩ = খ্রি.) প্রভৃতি।
16. নেপোলিয়ন উপদ্বীপের যুদ্ধকে 'স্পেনীয় ক্ষত' বলেছেন কেন ?
উঃ নেপোলিয়ন স্পেন দখল করে স্পেন, পোর্তুগাল ও ইংল্যান্ডের র বিরুদ্ধে উপদ্বীপীয় যুদ্ধে (১৮০৮-১৮১৪ খ্রি.) জড়িয়ে পড়েন। যুদ্ধে তাঁর পরাজয় ঘটে এবং তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। পরাজিত ফ্রান্সের ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক ক্ষতি হলে ফ্রান্সের দুর্বলতা প্রকাশে এসে পড়ে। ফলে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে আবার শক্তিজোট গড়ে ওঠে যার কাছে নেপোলিয়নের পরাজয় ও পতন ঘটে। এজন্য তিনি এই যুদ্ধকে 'স্পেনীয় ক্ষত' বলেছেন।
17. বোরোডিনের যুদ্ধের গুরুত্ব কী ?
উঃ ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের বোরোডিনের যুদ্ধে নেপোলিয়ন জয়লাভ করলেও তাঁর প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য মারা যায় এবং টাইফাস' নামক জ্বরের প্রকোপে তিনি ফ্রান্সে ফিরে যেতে বাধ্য হন। ফলে ইউরোপীয় শক্তিগুলি পুনরায় তাঁর বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয় এবং চতুর্থ শক্তিজোট গঠন করে নেপোলিয়নের পতন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালাবার সিদ্ধান্ত নেয়।
18. ফ্রান্সে নেপোলিয়নের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়েছিল কেন?
উঃ ফ্রান্সে নেপোলিয়নের জনপ্রিয়তা নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ ছিল [1] ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের বণিক ও শিল্পপতিদের বিরোধিতার মুখে পড়েন। [2] ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড পালটা অবরোধ ঘোষণা করলে ফ্রান্সের ক্ষতি হয় এবং ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ নেপোলিয়নের বিপক্ষে চলে যায়। [3] বিভিন্ন বৈদেশিক যুদ্ধে নেপোলিয়ন পরাজিত হতে থাকলে দেশবাসীর কাছে তিনি জনপ্রিয়তা হারান।
19. জাতিসমূহের যুদ্ধ কোন্ যুদ্ধকে এবং কেন বলা হয় ?
উঃ চতুর্থ শক্তিজোটের বিভিন্ন সদস্য-রাষ্ট্র ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির লাইপজিগের যুদ্ধে নেপোলিয়নকে পরাজিত করে। এটি লাইপজিগের বা জাতিসমূহের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ইউরোপের প্রায় ১৩টি রাষ্ট্র লাইপজিগের যুদ্ধে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অংশ নেয়। এজন্য এই যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ' বলা হয় ।
20. লাইপজিগ বা জাতিসমূহের যুদ্ধে কার পরাজয় ঘটে ? এই পরাজয়ের ফল কী হয়েছিল ?
উঃ লাইপজিগ বা জাতিসমূহের যুদ্ধে (১৮১৩ খ্রি.) নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে। এই পরাজয়ের ফলে— [1] ফরাসি সাম্রাজ্য ভেঙে যায়, [2] হল্যান্ড স্বাধীনতা পায় এবং [3] অস্ট্রিয়া তার হারানো রাজ্য ফিরে পায়।
21. ‘শতদিবসের রাজত্ব' কী ?
উঃ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে ফ্রান্সে গোলযোগের পরিস্থিতিতে নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপের নির্বাসন থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে ফিরে আসেন (মার্চ, ১৮১৫ খ্রি.)। সাধারণ মানুষ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানালে রাজা অষ্টাদশ লুই সিংহাসন ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর তিনি ২০ মার্চ থেকে ২৯ জুন (১৮১৫ খ্রি.) পর্যন্ত মোট ১০০ দিন রাজত্ব করেন। এই ঘটনা ‘শতদিবসের রাজত্ব' নামে পরিচিত।
No comments:
Post a Comment