ষষ্ঠ অধ্যায় "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর" প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
👉 ( ষষ্ঠ অধ্যায় পার্ট -২ প্রশ্ন উত্তর )
পার্ট -১
⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. মুসোলিনি কবে, কীভাবে ফিউম বন্দর ইটালির অন্তর্ভুক্ত করেন ?
উঃ ইটালির শাসক মুসোলিনি নেটিউনো চুক্তির (১৯২৫ খ্রি.) দ্বারা ফিউম বন্দরটি ইউগোস্লাভিয়ার থেকে নিয়ে ইটালির অন্তর্ভুক্ত করেন।
2. নেটিউনো চুক্তি কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ?
উঃ নেটিউনো চুক্তি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ইটালি ও ইউগোস্লাভিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
3. টিরানার চুক্তি কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ?
উঃ টিরানার চুক্তি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ইটালি ও আলবেনিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
4. কবে, কাদের মধ্যে হোর-লাভাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ?
উঃ ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষ ও ইটালির মধ্যে হোর- লাভাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
5. কে, কোন্ কোন্ স্থান নিয়ে ইতালীয় পূর্ব আফ্রিকা' নামে রাষ্ট্রটি গঠন করেন ?
উঃ ইটালির শাসক মুসোলিনি ইরিত্রিয়া, সোমালিল্যান্ড ও অ্যাবিসিনিয়া নিয়ে ‘ইতালীয় পূর্ব আফ্রিকা' নামে রাষ্ট্রটি গঠন করেন।
6. কবে, কাদের মধ্যে 'কমিন্টার্ন-বিরোধী' (অ্যান্টি কমিন্টার্ন) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ?
উঃ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে (২৫ নভেম্বর) জার্মানি ও জাপানের মধ্যে ‘কমিন্টার্ন-বিরোধী' চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইটালি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে এই চুক্তিতে যোগ দেয়।
7. ‘কমিন্টার্ন-বিরোধী' চুক্তির উদ্দেশ্য কী ছিল?
উঃ ‘কমিন্টার্ন-বিরোধী’ চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রসার প্রতিরোধ করা।
৪. মিত্রশক্তির অন্তর্ভুক্ত প্রধান দেশগুলির নাম লেখো।
উঃ মিত্রশক্তির অন্তর্ভুক্ত প্রধান দেশগুলি ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও সোভিয়েত রাশিয়া।
9. ফুয়েরার কথার অর্থ কী ?
উঃ ফুয়েরার কথার অর্থ হল 'প্রধান নেতা' বা দলনেতা’।
10. কে নিজেকে ‘ফুয়েরার' বলে প্রচার করেন?
উঃ জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলার নিজেকে ‘ফুয়েরার’ বলে প্রচার করেন।
11. রোমেল কে ছিলেন?
উঃ হিটলারের বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন রোমেল। হিটলার তাঁকে ইটালির সাহায্যার্থে উত্তর আফ্রিকা অভিযানে পাঠান।
12. মাইন ক্যাম্ফ গ্রন্থটি কার লেখা ?
উঃ ‘মাইন ক্যাম্ফ’ (‘Mein Kampf') গ্রন্থটি অ্যাডলফ হিটলারের লেখা। এই গ্রন্থটি 'নাৎসি দলের বাইবেল' নামে পরিচিত।
13. মাইন ক্যাম্ফ গ্রন্থটি কবে প্রকাশিত হয় ?
উঃ হিটলারের লেখা মাইন ক্যাম্ফ গ্রন্থটি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
14. ইটালির শাসক মুসোলিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কোন্ কোন স্থান দখল করেন ?
উঃ ইটালির শাসক মুসোলিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অ্যাবিসিনিয়া ও আলবেনিয়া দখল করেন।
15. হিটলারের কয়েকজন অনুচরের নাম লেখো।
উঃ হিটলারের প্রধান কয়েকজন অনুচর ছিলেন গোয়েবল্স, হিমলার, গোয়েরিং, রোমেল প্রমুখ।
16. জার্মানির শাসক হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কোন্ কোন্ স্থান দখল করেন ?
উঃ জার্মানির শাসক হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে রাইন ভূখণ্ড (১৯৩৬ খ্রি.), অস্ট্রিয়া (১৯৩৮ খ্রি.), চেকোস্লোভাকিয়া (১৯৩৯ খ্রি.) প্রভৃতি স্থান দখল করেন।
17. কোন্ সন্ধিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল ?
উঃ ‘ভার্সাই সন্ধি'র (২৮ জুন, ১৯১৯ খ্রি.) মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল।
18. কনরাড হেলনিল কে ছিলেন?
উঃ কনরাড হেনলিন ছিলেন চেকোস্লোভাকিয়ার সুদে অঞ্চলের জার্মান জাতিগোষ্ঠীর নেতা যিনি সুদে অঞ্চলের স্বশাসনের দাবিতে চেক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
19. 'মিউনিখ চুক্তি' কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ?
উঃ ‘মিউনিখ চুক্তি' (২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ) ব্রিটেনের চেম্বারলেন, ফ্রান্সের দলাদিয়ের, জার্মানির হিটলার ও ইটালির মুসোলিনির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
20. ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মিউনিখ চুক্তির তাৎপর্য কী ?
উঃ মিউনিখ চুক্তির প্রধান তাৎপর্য ছিল চেকোস্লোভাকিয়ার সুদে অঞ্চল জার্মানিকে প্রদান করে হিটলারের আগ্রাসনকে প্রশমিত করার চেষ্টা।
21. কবে, কারা রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ?
উঃ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপ রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
22. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে শুরু হয় ?
উঃ জার্মানি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করলে, ৩ সেপ্টেম্বর ইঙ্গ-ফ্রান্স জোট জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এদিন থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
23. 'লিবেনস্রাউম' কী ?
উঃ জাপান তার উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার বাসস্থানের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেন তা ‘লিবেনস্রাউম' নামে পরিচিত।
24. প্যারিসের শাস্তি সম্মেলনে কোন্ কোন্ স্থান লাভে বঞ্চিত হয়ে ইটালি ক্ষুব্ধ ছিল?
উঃ প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে টিউনিসিয়া, কর্সিকা, স্যাভয়, নিস প্রভৃতি স্থান লাভে বঞ্চিত হয়ে ইটালি ক্ষুব্ধ ছিল।
25. রোম চুক্তি/লাভাল-মুসোলিনি চুক্তি করে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ?
উঃ রোম চুক্তি/লাভাল-মুসোলিনি চুক্তি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও ইটালির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
26. কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কে ইটালিকে 'আক্রমণকারী' বলে ঘোষণা করে ?
উঃ ইটালি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণের (১৯৩৫ খ্রি.) ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ ইটালিকে 'আক্রমণকারী' বলে ঘোষণা করে।
27. কবে, কাদের মধ্যে 'রোম-বার্লিন-টোকিও' অচুক্তি (অক্ষশক্তি) স্বাক্ষরিত হয়?
উঃ ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে (৬ নভেম্বর) ইটালি, জার্মানি ও জাপানের মধ্যে ‘রোম-বার্লিন-টোকিও' অক্ষচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
28. হিটলার কবে পোল্যান্ড আক্রমণ করেন ? অথবা, পোল্যান্ড কবে জার্মানি দ্বারা আক্রান্ত হয় ?
উঃ হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করেন।
29. অক্ষশক্তি বলতে কোন্ দেশগুলিকে বোঝায় ?
উঃ অক্ষশক্তি বলতে জার্মানি, ইটালি ও জাপানের শক্তিজোটকে বোঝায়।
30. 'মাজিনো লাইন' কী ?
উঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে সুইটজারল্যান্ড থেকে বেলজিয়াম পর্যন্ত ফ্রান্স যে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে, তা মাজিনো 'লাইন' নামে পরিচিত।
31. চেম্বারলেন-এর পর গ্রেট ব্রিটেনে কে প্রধানমন্ত্রী হন ?
উঃ চেম্বারলেন-এর পর গ্রেট ব্রিটেনে উইনস্টন চার্চিল প্রধানমন্ত্রী হন।
32. হিটলারের কোন্ দেশ আক্রমণের প্রস্তুতিকে 'অপারেশন বারবারোসা' বলা হয় ?
উঃ জার্মান চ্যান্সেলার হিটলারের রাশিয়া আক্রমণের প্রস্তুতিকে ‘অপারেশন বারবারোসা' বলা হয়।
33. কবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ?
উঃ ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর জাপানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রধান একনায়ক- তান্ত্রিক শাসকদের নাম উল্লেখ করো।
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপে ক্ষমতা দখলকারী একনায়ক শাসকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইটালির মুসোলিনি, জার্মানির হিটলার, স্পেনের জেনারেল ফ্রাঙ্কো প্রমুখ ।
2. নাৎসি বাইবেল কাকে বলা হয় ও এটি কার রচনা ?
উঃ নাৎসি দলের বাইবেল বলা হয় ‘মেইন ক্যাম্ফ' ('Mein Kampf') গ্রন্থটিকে। মেইন ক্যাম্ফ (১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থটি হিটলারের রচনা।
3. মুসোলিনির বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল ?
উঃ ইটালির ফ্যাসিস্ট শাসক মুসোলিনির বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি ছিল—[1] আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধবিগ্রহ ও জঙ্গিবাদী নীতি গ্রহণ করে ফ্যাসিস্ট শাসনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা, [2] যুদ্ধবিগ্রহ চালু রেখে বেকার যুবকদের বিভিন্ন সামরিক কাজে নিযুক্তির দ্বারা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, [3] আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইটালির মর্যাদা বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।
4. প্যারিসের শান্তি চুক্তিতে (১৯১৯ খ্রি.) ইটালিকে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয় বলে ইটালি অভিযোগ করে ?
উঃ লন্ডনের গোপন চুক্তি (১৯১৫ খ্রি.) অনুসারে ইটালির রোড্স দ্বীপ ও ডডিক্যানিজ দ্বীপপুঞ্জ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে (১৯১৯ খ্রি.) ইটালিকে এই স্থানগুলি দেওয়া হয়নি।
5. কফু দ্বীপের ঘটনাটি কী?
উঃ গ্রিস ও আলবেনিয়ার মধ্যে সীমানা নির্ধারণের কাজে নিযুক্ত কয়েকজন ইতালীয় প্রতিনিধি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে নিহত হয়। এই ঘটনার জন্য ইটালির শাসক মুসোলিনি গ্রিসকে দায়ী করে গ্রিসের কফু দ্বীপটি দখল করে নেয়। অবশেষে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইটালিকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে গ্রিস কর্ফু দ্বীপটি ফিরে পায়।
6.কবে, কাদের মধ্যে লুসানের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়? এই সন্ধির দ্বারা ইটালি কোন্ কোন্ স্থান লাভ করে ?
উঃ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ইটালি ও গ্রিসের মধ্যে লুসানের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
➣ লুসানের সন্ধির দ্বারা ইটালি গ্রিসের কাছ থেকে রোস দ্বীপ এবং ডডিক্যানিজ দ্বীপপুঞ্জ লাভ করে।
7.ইটালি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ কী পদক্ষেপ নেয় ?
উঃ ইটালি অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ করলে জাতিসংঘ [1] ইটালিকে ‘আক্রমণকারী' বলে ঘোষণা করে। [2] ইটালির সঙ্গে সর্বপ্রকার আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে নির্দেশ দেয়।
8. ওয়াল ওয়াল গ্রামের খণ্ডযুদ্ধ সম্পর্কে কী জান?
উঃ অ্যাবিসিনিয়া-সোমালিল্যান্ড সীমান্তের ওয়াল ওয়াল গ্রামে ইতালীয় ও অ্যাবিসিনীয় সেনাদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধে (৫ ডিসেম্বর, ১৯৩৪ খ্রি.) কিছু ইতালীয় সেনা নিহত হয়। এই ঘটনায় ইটালির শাসক মুসোলিনি অ্যাবিসিনিয়ার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে এবং কিছুদিন পর অ্যাবিসিনিয়ায় আক্রমণ শুরু (৩ অক্টোবর, ১৯৩৫ খ্রি.) করে।
9. ইটালি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া দখলের ঘটনার তাৎপর্য কী ছিল?
উঃ ইটালি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া দখলের ঘটনার তাৎপর্যগুলি ছিল— [1] এই ঘটনায় জাতিসংঘের দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসে পড়ে। [2] জাতিসংঘের মর্যাদা নষ্ট হয়। [3] ইটালির আগ্রাসনের সাফল্যে জার্মানির হিটলারও আগ্রাসনে উৎসাহ পান। [4] ইটালি ও জার্মানির ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
10. ‘রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি'র (১৯৩৯ খ্রি.) শর্ত কী ছিল ?
উঃ রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তিতে বলা হয় যে—[1] জার্মানি ও রাশিয়া আগামী ১০ বছর পরস্পরকে আক্রমণ করবে না। [2] তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে নেবে। [3] উক্ত দুই পক্ষ কোনো তৃতীয় শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে তারা কেউ তৃতীয় শক্তিকে সাহায্য করবে না। [4] এই চুক্তির গোপন শর্তে বলা হয় যে, পোল্যান্ড দখল করে তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে।
11. জেনেভা নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে জার্মানির দাবিগুলি কী ছিল ?
উঃ জেনেভা নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে (১৯৩৩ খ্রি.) জার্মানির দাবি ছিল— [1] ভার্সাই সন্ধির দ্বারা যতটা জার্মানির সামরিক শক্তি হ্রাস করা হয়েছে, অন্যান্য রাষ্ট্রের সামরিক শক্তিও ততটা হ্রাস করতে হবে। অথবা, [2] জার্মানিকে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ দিতে হবে।
12. জার্মানি কীভাবে সার অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেন?
উঃ ভার্সাই সন্ধির (১১১৯ খ্রি.) দ্বারা জার্মানির শিল্পসমৃদ্ধ সার অঞ্চল ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্ত করে বলা হয় যে, এটি জার্মানি না ফ্রান্সের দখলে যাবে তা ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে গণভোটের দ্বারা স্থির হবে। হিটলার জার্মানির ক্ষমতা দখল করে সার অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ শুরু করেন এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে গণভোটে এখানকার মানুষ জার্মানির সঙ্গে সংযুক্তির পক্ষে মত দেয়।
13. মুসোলিনি ও হিটলারের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি ও জোট গঠনের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করো।
উঃ মুসোলিনি ও হিটলারের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি ও জোট গঠনের কয়েকটি। কারণ ছিল— [1] ইটালি ও জার্মানি উভয়েই ভার্সাই সন্ধির (১৯১৯ খ্রি.) ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। [2] ফ্রান্স ছিল ইটালি ও জার্মানি উভয়ের শত্রু। [3] উভয় রাষ্ট্রই ছিল উগ্র সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক।
14. ‘রোম-বার্লিন-টোকিও' অক্ষচুক্তি কী?
উঃ জার্মানি ও জাপান ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষর করে জোট গড়ে তোলে। ইটালি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর ইটালি এই জোটে যোগ দেয়। এভাবে ইটালি, জার্মানি ও জাপানের মধ্যে যে চুক্তি গড়ে ওঠে তা ‘রোম-বার্লিন-টোকিও' অক্ষচুক্তি নামে পরিচিত।
15. ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির ‘তোষণনীতি' বলতে কী বোঝ ?
উঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইটালির মুসোলিনি এবং জার্মানির হিটলার আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করে বিভিন্ন দেশ আক্রমণ করলেও ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি তা প্রতিরোধের কোনো সক্রিয় উদ্যোগ না নিয়ে ইটালি ও জার্মানির প্রতি উদাসীন নীতি গ্রহণ করে। এটি তোষণনীতি নামে পরিচিত।
16. ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির তোষণনীতির কয়েকটি উদাহরণ দাও।
উঃ ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির তোষণনীতির কয়েকটি উদাহরণ হল- [1] ইটালির অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ, [2] স্পেনের গৃহযুদ্ধে হিটলার এবং মুসোলিনি কর্তৃক বিদ্রোহী নেতা ফ্রাঙ্কোকে সহযোগিতা, [3] জার্মানি কর্তৃক অস্ট্রিয়া দখল (১৯৩৮ খ্রি.) প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির উদাসীন ও নিষ্ক্রিয় থাকা।
17. তোষণনীতির দুটি কারণ লেখো।
উঃ তোষণনীতির দুটি কারণ হল — [1] সাম্যবাদ ভীতি: ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স, উভয়ের কাছেই ফ্যাসিবাদ ও সাম্যবাদ সমান বিপজ্জনক ছিল। এই কারণে তোষণনীতির সাহায্যে তারা সাম্যবাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী জার্মান ও ইটালিকে ব্যবহার করেছিল। [2] অন্যায় প্রতিকার: ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মনে করেছিল যে, তারা ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানি ও ইটালির প্রতি অন্যায় করেছে। এই কারণেই তোষণনীতির প্রয়োগে তারা জার্মানি ও ইটালিকে কিছু সুযোগসুবিধা দিতে চেয়েছিল।
18. কবে, কাদের মধ্যে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়? মিউনিখ চুক্তিতে (১৯৩৮ খ্রি.) কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ?
উঃ ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে (২৯ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ের, জার্মান শাসক হিটলার এবং ইটালির শাসক মুসোলিনির মধ্যে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
➣ মিউনিখ চুক্তিতে সিদ্ধান্ত হয় যে–[1] চেকোস্লোভাকিয়ার অধীনস্থ সুদেন জার্মানিকে হস্তান্তর করা হবে। [2] অবশিষ্ট চেকোস্লোভাকিয়ার স্বাধীনতা হিটলার মেনে নেবেন।
19.'আনস' কী ?
উঃ জার্মান শাসক হিটলারের নাৎসি বাহিনী অস্ট্রিয়া আক্রমণ (১৯৩৮ খ্রি.) করে সেখানকার পার্লামেন্ট ভেঙে দেন এবং লোক-দেখানো গণভোটের দ্বারা অস্ট্রিয়াকে জার্মানির সঙ্গে যুক্ত করেন। অস্ট্রিয়ার বিষয়ে হিটলারের এই নীতি 'আনমুস' নামে পরিচিত।
20. হিটলার কেন চেকোস্লোভাকিয়া দখলে আগ্রহী ছিলেন?
উঃ চেকোস্লোভাকিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বের জন্য হিটলার সেদেশ দখলে আগ্রহী ছিলেন, যেমন- [1] চেকোস্লোভাকিয়া দখল করতে পারলে জার্মানি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। [2] চেকোস্লোভাকিয়ার সুদে অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ছিল জাতিতে জার্মান। [3] জার্মানি চেকোস্লোভাকিয়ার খনিজ সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
21. নিউরেমবার্গ বক্তৃতা কী ?
উঃ জার্মান চ্যান্সেলর হিটলার ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর নুরেমবার্গে এক বক্তৃতায় চেকোস্লোভাকিয়ার সুদে অঞ্চলে বসবাসকারী জার্মানদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি করেন এবং সেখানকার জার্মানদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। হিটলারের এই ভাষণ নিউরেমবার্গ বক্তৃতা নামে পরিচিত।
22. ইটালির সঙ্গে ইউগোস্লাভিয়ার বিরোধের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করো।
উঃ ইটালির সঙ্গে ইউগোস্লাভিয়ার বিরোধের প্রধান কারণগুলি ছিল— [1] ইউগোস্লাভিয়ার ফিউম বন্দর ইটালি কেড়ে নেয়। [2] আলবেনিয়ায় ইটালির আধিপত্য বৃদ্ধি ইউগোস্লাভিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। [3] ইউগোস্লাভিয়ার সঙ্গে বালগেরিয়ার সংযুক্তিতে ইটালি বাধার সৃষ্টি করে। [4] ইউগোস্লাভিয়ার রাজা আলেকজান্ডার নিহত ( ১৯৩৪ খ্রি.) হওয়ার ঘটনায় ইটালি জড়িত বলে সন্দেহ করা হয় প্রভৃতি।
23. ইটালির সঙ্গে ফ্রান্সের বিরোধের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করো।
উঃ ইটালির সঙ্গে ফ্রান্সের বিরোধের প্রধান কারণগুলি ছিল— [1] প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে (১৯১৯ খ্রি.) ফ্রান্সের আপত্তির ফলে বেশ কিছু স্থান লাভে ইটালি বর্ণিত হয়। [2] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বহু ফ্যাসি-বিরোধী ইতালীয়কে ফ্রান্সে আশ্রয় দেওয়া হয়। [3] ফ্রান্স ইটালির বিরুদ্ধে ইউগোস্লাভিয়াকে সহায়তা করে। [4] ফ্রান্সের তাঞ্জিয়ার স্থানটি ইটালি দাবি করে প্রভৃতি।
24. কী কারণে ইটালি অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ (১৯৩৫ খ্রি.) করে ?
উঃ ইটালি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণের প্রধান কারণগুলি ছিল—
[1] অ্যাবিসিনিয়ায় ইটালির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বসতির ব্যবস্থা করা, [2] অ্যাবিসিনিয়া থেকে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করা, (3) ইটালির অধীনস্থ সোমালিল্যান্ড ও ইরিত্রিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অ্যাবিসিনিয়া অবস্থিত হওয়ায় এই স্থানটি দখল করে পূর্ব আফ্রিকা রাজ্য গড়ে তোলা প্রভৃতি।
25. "জার্মানি কেন রাশিয়ার সঙ্গে 'রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি' (১৯৩৯ খ্রি.) স্বাক্ষরে আগ্রহী হয় ?
উঃ রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানি অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী ছিল, কারণ—[1] জার্মানি একই সঙ্গে পূর্ব সীমান্তে রাশিয়া এবং পশ্চিম সীমান্তে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াতে চায়নি। [2] জার্মান শাসক হিটলার পূর্বদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির মিত্রতা ভঙ্গ করে পশ্চিমে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিকে পরাস্ত করার পরিকল্পনা করেন। [3] রাশিয়ার বিভিন্ন কাঁচামালও জার্মানির বিশেষ প্রয়োজন ছিল।
26. হিটলারের বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্যগুলি কী ছিল ?
উঃ হিটলারের বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্যগুলি ছিল—[1] যুদ্ধবাদী নীতির মাধ্যমে জার্মানির ভৌগোলিক সম্প্রসারণ ঘটানো, [2] জার্মানিকে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, [3] সাম্যবাদ (কমিউনিজম) ধ্বংস করা প্রভৃতি।
27. জার্মানি কেন জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে ?
উঃ ভার্সাই সন্ধির (১৯১৯ খ্রি.) মাধ্যমে জার্মানির সামরিক শক্তি হ্রাস করা হয়। জেনেভার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে (১৯৩৩ খ্রি.) জার্মানি দাবি করে যে, জার্মানিকে অন্যান্য রাষ্ট্রের সমান সামরিক শক্তি রাখার সুযোগ দিতে হবে। জার্মানির দাবি অগ্রাহ্য হলে জার্মানি জেনেভা সম্মেলন এবং একই সঙ্গে জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ (১৯৩৩ খ্রি.) করে।
28.“রোম-বার্লিন-টোকিও' চুক্তি কবে, কেন স্বাক্ষরিত হয়েছিল ?
উঃ [1] 'রোম-বার্লিন-টোকিও চুক্তি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। [2] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়াকে নিয়ে মিত্র জোট গড়ে উঠলে তার পালটা হিসেবে প্রতিপক্ষ ইটালি, জার্মানি ও জাপান ‘রোম-বার্লিন-টোকিও' অক্ষচুক্তি স্বাক্ষর করে।
29. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের ওপর আক্রমণ হানার কতদিন পর, কবে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল?
উঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের ওপর আক্রমণ হানার দুই দিন পর, ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।
30. 'রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি' কী ?
উঃ জার্মানির হিটলার ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির বিরুদ্ধে নিজের শক্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার সঙ্গে দশ বছরের জন্য এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এটি রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি নামে পরিচিত।
সুন্দর।
ReplyDelete