পঞ্চম অধ্যায় "বিংশ শতকের ইউরোপ" প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
পার্ট -২
⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. ত্রিশক্তি মৈত্রী বা 'ট্রিপল আঁতাত'-এর প্রধান সদস্য কারা ছিল?
উঃ ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ‘ট্রিপল আঁতাত'-এর প্রধান সদস্য ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া ।
2. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অক্ষ শক্তি ভুক্ত প্রধান দেশগুলির নাম লেখো।
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অক্ষ শক্তি ভুক্ত প্রধান দেশগুলি ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বালগেরিয়া প্রভৃতি।
3. কোন্ দুটি দেশ মরক্কো সংকটে জড়িয়ে পড়েছিল ?
উঃ মরক্কো সংকটে জড়িয়ে পড়েছিল ফ্রান্স ও জার্মানি।
4. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পূর্ব রণাঙ্গনের কোন যুদ্ধে জার্মানির কাছে রাশিয়া পরাজিত হয় ?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পূর্ব রণাঙ্গনের টোটেনবার্গের যুদ্ধে জার্মানির কাছে রাশিয়া পরাজিত হয় ।
5. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মিত্রশক্তিভুক্ত প্রধান দেশগুলির নাম লেখো।
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মিত্রশক্তিভুক্ত প্রধান দেশগুলির নাম ছিল ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, চিন, জাপান প্রভৃতি ।
6. কোন্ কোন্ রাষ্ট্র নিয়ে 'ত্রিশক্তি চুক্তি' জোট গঠিত হয়?
উঃ জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইটালিকে নিয়ে ত্ৰিশক্তি চুক্তি (১৮৮২ খ্রি.) জোট গঠিত হয়।
7. আগাদির সংকটে প্রধান কোন্ দুটি দেশ জড়িয়ে পড়েছিল ?
উঃ আগাদির সংকটে জড়িয়ে পড়েছিল ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড।
৪. প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানির সম্রাট কে ছিলেন?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সম্রাট ছিলেন কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম।
9. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পশ্চিম রণাঙ্গনের কোন্ কোন্ যুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হয় ?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পশ্চিম রণাঙ্গনের মার্নে ও সোমের যুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হয়।
10. ইটালি কত সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান পক্ষ ত্যাগ করে ?
উঃ ইটালি ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান পক্ষ ত্যাগ করে।
11. কোন্ সন্ধির মাধ্যমে জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিরোধের অবসান হয় ?
উঃ ব্রেস্ট-লিটস্কের সন্ধির (১৯১৮ খ্রি.) মাধ্যমে জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিরোধের অবসান হয়।
12. কবে কাদের মধ্যে ব্রেস্ট-লিটঙ্কের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?
উঃ ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে ব্রেস্ট-লিটস্কের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
13. কত খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল ?
উঃ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা বা ‘মহামন্দা’ দেখা দিয়েছিল।
14. 'হুভার মরাটোরিয়াম' কোন্ দিন থেকে কার্যকরী হয় ?
উঃ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই থেকে পরবর্তী ১ বছরের জন্য ‘হুভার মরাটোরিয়াম’ কার্যকরী হয়।
15. মহামন্দার অবসান ঘটানোর জন্য কোন্ সম্মেলন আয়োজিত হয় ?
উঃ মহামন্দার অবসান ঘটানোর জন্য লন্ডনে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলন বা ওয়ার্ল্ড ইকনমিক কনফারেন্স (১৯৩৩ খ্রি.) আয়োজিত হয়েছিল।
16. ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির ওপর কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ চাপানো হয় ?
উঃ ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির ওপর ৬৬০ কোটি পাউন্ড আর্থিক ক্ষতিপূরণ চাপানো হয় ৷
17. প্যারিসের শাস্তি সম্মেলনের সভাপতি কে ছিলেন?
উঃ প্যারিসের শান্তি সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন।
18. কোথায়, কাদের মধ্যে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ?
উঃ ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে মিত্রশক্তি ও জার্মানির মধ্যে ভার্সাই চুক্তি (১৯১৯ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
19. ভার্সাই সন্ধিতে কোন্ দেশকে একতরফাভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ?
উঃ ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানিকে একতরফাভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
20. ‘কালো বৃহস্পতিবার' বলতে কোন্ দিনটিকে বোঝায় ?
উঃ ‘কালো বৃহস্পতিবার’ বলতে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর দিনটিকে বোঝায়।
21. মার্কিন ইতিহাসে 'কালো মঙ্গলবার' কোন্ দিন ?
উঃ মার্কিন ইতিহাসে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯ অক্টোবর ‘কালো মঙ্গলবার' হিসেবে চিহ্নিত।
22. মার্কিন শেয়ার বাজার কোথায় অবস্থিত ?
উঃ মার্কিন শেয়ার বাজার নিউ ইয়র্কে অবস্থিত।
23. চোদ্দো দফা নীতির উদ্ভাবক কে?
উঃ চোদ্দো দফা নীতির উদ্ভাবক হলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1.প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি ফলাফল লেখো।
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল হল— [1] এই যুদ্ধে কয়েক লক্ষ সৈন্য ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। [2] ২ কোটিরও বেশি সৈন্য ও সাধারণ মানুষ আহত হয়। [3] যুদ্ধের প্রভাবে রুশ রোমানভ সাম্রাজ্য, জার্মান সাম্রাজ্য, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য ও অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। [4] অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও তুরস্ক স্বাধীনতা লাভ করে।
2. প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে প্রধান নেতৃত্বে কারা ছিলেন?
উঃ প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ৩২ টি দেশ অংশগ্রহণ করলেও মূলত চারটি বৃহৎ শক্তির রাষ্ট্রপ্রধান এই সম্মেলনের নীতি-নির্ধারণ ও কার্য পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এঁরা হলেন—[1] মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন, [2] ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ, [3] ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জর্জ ক্লেমাঁশ এবং [4] ইটালির প্রধানমন্ত্রী ভিট্টোরিও অলান্ডো।
3. 'চোদ্দো দফা নীতি' কী ?
উঃ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে যে সুনির্দিষ্ট চোদ্দোটি শর্ত ঘোষণা করেন তা ‘চোদ্দো দফা নীতি” নামে পরিচিত।
4. ভার্সাই সন্ধির (১৯১৯ খ্রি.) মূল নীতিগুলি কী ছিল ?
উঃ ভার্সাই সন্ধির মূল নীতিগুলি ছিল—[1] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য সার্বিকভাবে জার্মানিকে দায়ী করা, [2] ভবিষ্যতে জার্মানি যাতে বিশ্বশান্তি ভঙ্গ করতে না পারে সে বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া, [3] ইউরোপে শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, [4] বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রভৃতি।
5. ভার্সাই সন্ধির তিনটি ভৌগোলিক শর্ত উল্লেখ করো।
উঃ ভার্সাই সন্ধির প্রধান তিনটি ভৌগোলিক শর্ত ছিল—[1] জার্মানির কাছ থেকে ফ্রান্সকে আলসাস ও লোরেইন ফিরিয়ে দিতে হবে। [2] সমুদ্রের সঙ্গে সংযোগের উদ্দেশ্যে পোল্যান্ডকে জার্মানির ভেতর দিয়ে ‘পোলিশ করিডর' নামে একটি রাস্তা করে দিতে হবে। [3] জার্মানির কয়লাসমৃদ্ধ সার অঞ্চল আগামী ১৫ বছরের জন্য ফ্রান্সকে দিতে হবে।
6. ভার্সাই সন্ধির তিনটি সামরিক শর্ত উল্লেখ করো।
উঃ ভার্সাই সন্ধির প্রধান তিনটি সামরিক শর্ত ছিল — [1] জার্মানির স্থল, জল ও বিমানবাহিনী ভেঙে দেওয়া হবে। [2] জার্মানির সৈন্যসংখ্যা লক্ষে নামিয়ে আনা হবে। [3] জার্মানির যুদ্ধজাহাজগুলি ইংল্যান্ডকে দেওয়া হবে।
7 ভার্সাই সন্ধির তিনটি অর্থনৈতিক শর্ত উল্লেখ করো।
উঃ ভার্সাই সন্ধির প্রধান তিনটি অর্থনৈতিক শর্ত ছিল— [1] জার্মানিকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৬০ কোটি পাউন্ড দিতে হবে। [2] জার্মানির কয়লাসমৃদ্ধ সার অঞ্চল আগামী ১৫ বছরের জন্য ফ্রান্সকে পাবে। [3] জার্মানির বাজারে মিত্রশক্তির পণ্য বিক্রি করার অধিকার দিতে হবে।
৪.ভার্সাই সন্ধির দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উঃ ভার্সাই সন্ধির দুটি উল্লেখযোগ্য শর্ত হল— [1] ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির ওপর ৬৬০ কোটি পাউন্ড আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়, [2] জার্মানির সামরিক শক্তি অত্যন্ত দুর্বল করা হয়।
9. ভার্সাই সন্ধিকে কেন জবরদস্তিমূলক সন্ধি বলা হয় ?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন বিজয়ী মিত্রপক্ষ এবং পরাজিত জার্মানির মধ্যে ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। প্রধানত দুটি কারণে এই সন্ধিকে জবরদস্তিমূলক সন্ধি বলা হয়। যথা—এই সন্ধি পরাজিত জার্মানির পক্ষে ছিল অত্যন্ত কঠোর ও অপমানজনক। জার্মান প্রতিনিধিদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে এবং তাদেরকে ভয় দেখিয়ে এই সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।
10. ভার্সাই সন্ধির সপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
উঃ ভার্সাই সন্ধির সপক্ষে দুটি যুক্তি হল— [1] বিজয়ী পক্ষ পরাজিত পক্ষের ওপর একতরফা সন্ধি চাপিয়ে দেয়—এটাই ইতিহাসের নিয়ম। ভার্সাই সন্ধিতেও তাই করা হয়েছে। [2] যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে জার্মানির বিরুদ্ধে যে ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছিল সেই পরিস্থিতিতে এমন একতরফা সন্ধি আরোপ করাই স্বাভাবিক।
11. অর্থনৈতিক মহামন্দা বলতে কী বোঝ ?
উঃ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয় এবং তা শীঘ্রই ইউরোপ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই সংকট ‘অর্থনৈতিক মহামন্দা’ বা ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা' নামে পরিচিত। এই মন্দা ১৯২৯-৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রবলভাবে বিদ্যমান ছিল।
12. ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা আমেরিকায় কী প্রভাব ফেলেছিল ?
উঃ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দার ফলে আমেরিকায় — [1] শিল্পোৎপাদন ব্যাপক হ্রাস পায় এবং বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। [2] প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। [3] শেয়ার বাজারে ধস নামে। [4] বহু মানুষ ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে।
13. ‘চোদ্দো দফা' নীতি কে, কবে ও কী উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন?
উঃ [1] মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ৮ জানুয়ারি চোদ্দো দফা নীতি ঘোষণা করেন।[2] উড্রো উইলসন কর্তৃক চোদ্দো দফা নীতি ঘোষণার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বে স্থায়ী শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
14. কালো বৃহস্পতিবার’ এবং ‘কালো মঙ্গলবার' কী ?
উঃ [1] মার্কিন শেয়ারবাজারে বিপর্যয়ের খবর শুনে বহু মার্কিন নাগরিক কম দামে এবং দ্রুত তাদের শেয়ারগুলি বিক্রি করতে থাকলে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবারই ৩০ মিলিয়ন শেয়ার বিক্রি হয়ে যায়। তাই মার্কিন ইতিহাসে দিনটি ‘কালো বৃহস্পতিবার' নামে পরিচিত। [2] ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন শেয়ার বাজারে বিপর্যয় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার। এজন্য মার্কিন ইতিহাসে দিনটি 'কালো মঙ্গলবার' নামে পরিচিত।
15. হুভার স্থগিতকরণ” (হুভার মরাটোরিয়াম) কী ?
উঃ আমেরিকা তথা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের (১৯২৯-৩৩ খ্রি.) পরিপ্রেক্ষিতে সংকট থেকে বিশ্বকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হারবার্ট ক্লার্ক হুভার (১৯২৯-৩৩ খ্রি.) ঘোষণা করেন যে, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পারস্পরিক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও মার্কিন ঋণশোধ স্থগিত থাকবে। এই ঘোষণা ‘হুভার স্থগিতকরণ’বা ‘হুভার মরাটোরিয়াম' নামে পরিচিত।
16. প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেন 'সর্বাত্মক যুদ্ধ' বলা হয় ?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮ খ্রি.) দুটি পক্ষের মধ্যে হয়েছিল। এক পক্ষে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, রোমেনিয়া, চিন, জাপান ও পোর্তুগাল এবং অন্য পক্ষে ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইটালি, তুরস্ক ও বালগেরিয়া। এত ব্যাপক, ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী যুদ্ধ এর আগে কখনও সংঘটিত হয়নি এবং বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল তাই এই যুদ্ধকে 'সর্বাত্মক যুদ্ধ' বলা হয় ।
17. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে কয়েকটি অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদের উদাহরণ দাও।
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদের কয়েকটি উদাহরণ হল—[1] জার্মানির অধীনে থাকা ফরাসি ভূখণ্ড আলসাস ও লোরেইন- এর ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা, [2] অস্ট্রিয়ার দখলে থাকা ইতালীয় ভাষাভাষী ট্রেনটিনো ও ট্রিয়েস্ট-এর ইটালির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রভৃতি।
18. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে বসনিয়া ও হারজেগোভিনার সমস্যা সম্পর্কে কী জান ?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে স্লাভ জাতি-অধ্যুষিত বসনিয়া ও হারজেগোভিনা নামক স্থান দুটি অস্ট্রিয়া দখল করে নেয়। কিন্তু এই স্থান দুটির জনগণ সার্বিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে সার্বিয়া গোপনে উৎসাহ দেয়।
19.“মরক্কো সংকট' কী?
উঃ ইঙ্গ-ফরাসি চুক্তির (১৯০৪ খ্রি.) দ্বারা আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ ও মুসলিম জাতি অধ্যুষিত মরক্কোয় ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। জার্মান কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম এই আধিপত্যের প্রতিবাদ করে নিজেকে মরক্কোর মুসলিমদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং সেখানকার তাঞ্জিয়ান বন্দরে হাজির হন। ফলে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এটি মরক্কো সংকট' নামে পরিচিত।
20. বর্তমানকালে ইতিহাসের আলোচনায় সমাজের কোন্ স্তরের মানুষ স্থান পায় ?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে—[1] একদিকে ছিল 'ত্রিশক্তি মৈত্রী ভুক্ত ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, রাশিয়া-সহ ২৩টি রাষ্ট্র। এরা ‘মিত্রপক্ষ' নামে পরিচিত। পরে ইটালি (আগে ‘ত্রিশক্তি চুক্তিভুক্ত ছিল), রোমেনিয়া, জাপান, চিন, পোর্তুগাল এই পক্ষে যোগ দেয়। [2] অন্যদিকে ছিল 'ত্রিশক্তি চুক্তি ভুক্ত জার্মানি, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ। এরা ‘অক্ষশক্তি' বা ‘কেন্দ্ৰীয় শক্তি' নামে পরিচিত।
21. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান রণাঙ্গনগুলি কী ছিল ?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান রণাঙ্গন ছিল দুটি। যথা— [[1] পশ্চিম রণাঙ্গন : এখানে জার্মানির পশ্চিম সীমান্তে জার্মানির সঙ্গে ফ্রান্স-বেলজিয়ামের যুদ্ধ হয়। [2] পূর্ব রণাঙ্গন : এখানে রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধ হয়।
22. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে কোন্ কোন্ শক্তিজোট গড়ে ওঠে?
উঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে দুটি সশস্ত্র শক্তিজোট গড়ে ওঠে। যথা—[1] জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইটালিকে নিয়ে গঠিত ‘ত্রিশক্তি চুক্তি’ বা ‘ট্রিপ্ল এলায়েন্স’ এবং [2] ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়াকে নিয়ে গঠিত ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ বা ‘ট্রিপ্ল আঁতাত'।
23. “সশস্ত্র শান্তির যুগ’ কোন্ সময়কালকে ও কেন বলা হয় ?
উঃ [1] ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘সশস্ত্র শান্তির যুগ' বলা হয়। [2] এই সময়কালকে সশস্ত্র শান্তির যুগ বলার কারণ হল—এই সময়ের মধ্যে ইউরোপে বড়ো কোনো যুদ্ধ হয়নি ঠিকই, কিন্তু আপাত শান্তির আড়ালে ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অস্ত্র নির্মাণ, পারস্পরিক সন্দেহ প্রভৃতি বিষয়গুলির জন্য বিভিন্ন দেশ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল এবং যে-কোনো সময় যুদ্ধ শুরু হতে পারত। এজন্য এই যুগকে ‘সশস্ত্র শান্তির যুগ' বলা হয় ।
24. ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড' কী ?
উঃ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রান্সিস ফার্দিনান্দ ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো ভ্রমণে যান। সেখানে তাঁরা স্লাভ সন্ত্রাসবাদী দল 'ব্ল্যাক হ্যান্ড'-এর সদস্য ন্যাভরিলো প্রিন্সেপ-এর হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে নিহত হন। এই ঘটনা ইতিহাসে ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড' নামে পরিচিত।
No comments:
Post a Comment