ঔপনিবেশিক শাসনকালে 'অবশিল্পায়নের' বর্ণনা দাও।
প্রশ্ন: জাদুঘর কাকে বলে ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি আলোচনা করো। 3+5
অথবা,
জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা করো। 3+5
উত্তর :
» ভূমিকা : ‘জাদুঘর' শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল 'Museum' (মিউজিয়াম), এই মিউজিয়াম শব্দটি গ্রিক শব্দ Mouseion (মউসিয়ন) থেকে এসেছে। এর অর্থ হল গ্রিক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির। এই মন্দিরগুলিতেই প্রাচীন গ্রিসের পাঠাগার ও বিভিন্ন শিল্পকলার সংগ্রহশালা গড়ে ওঠে। তাই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে—জাদুঘর হল বিভিন্ন শিল্পকলার সংগ্রহশালা।
⬛ জাদুঘরের সংজ্ঞা :
(i) জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের সংজ্ঞা : ভাষাতত্ত্ববিদ জানেন্দ্রমোহন দাসের মতে— যে গৃহে অদ্ভুত পদার্থসমূহের সংগ্রহ আছে এবং যা দেখে মন্ত্র ও মুগ্ধবৎ হতে হয়, সেই গৃহকে জাদুঘর বলা হয়।
(ii) বাংলা আকাদেমির সংজ্ঞা : পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির মতে—যে ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে, তাকে জাদুঘর বলে।
(iii)। Com-এর সংজ্ঞা : Com (International Council of Museum) জাদুঘরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-- জাদুঘর হল এমন একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত সমাজসেবামূলক স্থায়ী প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের জন্য মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলি সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়।
(v) সাধারণ সংজ্ঞা : সাধারণ অর্থে জাদুঘর হল এমন একটি সংগ্রহশালা যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও শিল্পকলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলি সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে।
⬛ জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি : জাদুঘরের প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য ও কার্যগুলি হল—
(i) ঐতিহাসিক নিদর্শন সংগ্রহ : জাদুঘরের প্রধান উদ্দেশ্য ও কাজ হল দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা অতি মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি খুঁজে বের করা এবং সংগ্রহ করা। অতীতের হারিয়ে যাওয়া নিদর্শনগুলি সংগ্রহ করে ইতিহাস রচনার কাজে জাদুঘর বিশেষ সাহায্য করে।
(ii) ঐতিহাসিক নিদর্শনের প্রদর্শন : জাদুঘর অতীতের যে সকল মূল্যবান ও আশ্চর্যজনক বস্তু সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে তা সাধারণ দর্শক, পাঠক, গবেষক সকল শ্রেণির মানুষের প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এজন্য জাদুঘরে সংরক্ষিত বস্তুগুলি ডিসপ্লে কেসে সাজিয়ে রাখে, যার ফলে জনসাধারণ স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে দর্শনের সুযোগ পায় ।
(iv) গবেষণার কাজ : জাদুঘরে যেসব ঐতিহাসিক বস্তু সংরক্ষিত থাকে তার প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করা জাদুঘরের একটি অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ও কাজ। এজন্য জাদুঘর গবেষকদের বৃত্তি অর্থাৎ, স্কলারশিপ দিয়ে তাঁদের গবেষণার কাজে উৎসাহ দান করে।
(v) মডেল তৈরি : জাদুঘরের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মডেল তৈরি করে জনগণকে তা প্রদর্শন করা। জাদুঘরে এমন কতকগুলি মূল্যবান বস্তু আছে যা নিরাপত্তার কারণে সাধারণ দর্শকদের দেখানো সম্ভব নয় বা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বস্তু যা জাদুঘরের সংগ্রহে নেই—এজন্য জাদুঘর মডেল তৈরি করে। যেমন তাজমহলের মতো স্মৃতিসৌধগুলি যেহেতু সরাসরি তুলে এনে কলকাতা বা অন্যান্য জাদুঘরে দেখানো যায় না, সেহেতু সেগুলির মডেল তৈরি করে দেখানো যায়।
(vi) প্রকাশনা করা : জাদুঘরে সংরক্ষিত নানান ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্পর্কে গবেষণালব্ধ নতুন তথ্য এবং সমসাময়িক কালে আবিষ্কৃত বহুল আলোচিত বিষয় বা সাধারণ ঐতিহাসিক পত্রিকা প্রকাশনা করা জাদুঘরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ৷ নতুন কোনো নিদর্শন জাদুঘরের সংগ্রহে সংযুক্ত হলে, তাও সাধারণ দর্শকদের জন্য লিপিবদ্ধ করা উচিত।
(vii) জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা : জাদুঘরের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও উদ্দেশ্য হল সংরক্ষিত নিদর্শনগুলির মাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তোলা। এজন্য জাদুঘর চিত্র প্রদর্শনী, বইমেলা, সেমিনার বা আলোচনা সভা, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় উৎসব প্রভৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
(viii) দর্শকদের আনন্দ দান : জাদুঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সাধারণ দর্শকদের আনন্দ দান করা। গবেষকদের পরিবর্তে সাধারণ মানুষই জাদুঘরে বেশি সংখ্যায় আসে, তাই তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য জাদুঘর নানা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে।
⏹ মূল্যায়ন : কালের গতি সর্বদা সামনের দিকে। তাই অতীতকে আমরা কোনোদিন ফিরে পাব না। কিন্তু জাদুঘর এই অসম্ভব কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করে। কারণ, জাদুঘর অতীতের টুকরো টুকরো বিষয়গুলি এমনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরে যার ফলে অতীতের কিছু ছবি আমাদের মনে ভেসে ওঠে।
Fantastic explain
ReplyDeleteFantastic answer
ReplyDelete