👉 ( প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি লেখো )
প্রশ্ন: বার্লিন সম্মেলনের ( 1885) পটভূমি ও গুরুত্ব লেখো। অথবা, 1885 খ্রিস্টাব্দের বার্লিন সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
🢖🢖উত্তর:
🢖🢖ভূমিকা : 1885 খ্রিস্টাব্দের বার্লিন সম্মেলন আফ্রিকার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে দ্রুততার সঙ্গে রক্তপাত না ঘটিয়ে আফ্রিকার বিভাজন সম্ভব হয়। সমগ্র আফ্রিকার ওপর ইউরোপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
❐ পটভূমি/কারণ : 1885 খ্রিস্টাব্দে বার্লিন সম্মেলনের পটভূমি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে,
(i) দ্বিতীয় লিওপোল্ড-এর ভূমিকা: অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের সম্পর্কে প্রথম আগ্রহ দেখান বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড। তাঁর উদ্যোগে স্ট্যানলি, লিভিংস্টোন, জ্যারোটাপার্ক প্রমুখ অভিযাত্রীরা আফ্রিকা অভিযানে গিয়ে বহু অজানা তথ্য সংগ্রহ করে। 1876 খ্রিস্টাব্দে অভিযাত্রী স্ট্যানলি কঙ্গো অববাহিকা আবিষ্কার করলে ইউরোপীয়দের আগ্রহ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।
(ii) ব্রাসেলস সম্মেলন: রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড তাঁর রাজধানী ব্রাসেলস শহরে 1876 খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় দেশগুলির এক সম্মেলন আহ্বান করেন। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল—
(a) কঙ্গো সম্পর্কে ভৌগোলিক তথ্য সংগ্রহ করা।
(b) আফ্রিকা মহাদেশে ব্যাবসাবাণিজ্য-এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা। এই সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক আফ্রিকা সংঘ' নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
(iii) কঙ্গো ফ্রি স্টেট গঠন: আন্তর্জাতিক আফ্রিকা সমিতি ও অভিযাত্রী স্ট্যানলিকে সামনে রেখে নাইজার উপত্যকায় খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাগুলির ওপর বেলজিয়ামের আধিপত্য স্থাপিত হয়। স্ট্যানলি বিভিন্ন উপজাতি নেতাদের সঙ্গে চুক্তি করে 1879-1884 খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই বেলজিয়াম রাজ্যের আধিপত্য স্থাপন করে। 1884-1885 খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলে তিনি ‘কঙ্গো ফ্রি স্টেট' প্রতিষ্ঠা করেন যা বেলজিয়ামের আয়তনের দশ গুণ ছিল।
(iv) ইংল্যান্ড ও পোর্তুগালের উদ্যোগ: আফ্রিকা মহাদেশে বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থাপন ইংল্যান্ড ও পোর্তুগালকে ঈর্ষান্বিত করে তোলে। তারা আফ্রিকাতে উপনিবেশ স্থাপন ও বেলজিয়ামকে প্রতিহত করার কথা ভাবে।
(v) বিসমার্ক ও জুল কেরির উদ্যোগ: বিসমার্ক ও জুল কেরি ক্রান্তীয় মধ্য- J-আফ্রিকার শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে বার্লিন শহরে সম্মেলন ( 1885) আহ্বান করেন।
❐ গুরুত্ব: বার্লিন সম্মেলনের গুরুত্ব বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
(i) এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি বিনা সংঘর্ষে নিজেদের মধ্যে আফ্রিকাকে ভাগ করে নেওয়ার পাকা ব্যবস্থা করে নেয়। এইজন্য ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন বলেছেন—“The Treaty was, in short, a compact among the powers to pursue the further partition of Africa as amicably as possible."
(ii) এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি আফ্রিকার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মাত্র 25 বছরেই অতিদ্রুতগতিতে আফ্রিকার বিভাজন সম্পন্ন করে।
(iii) এই সম্মেলন পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসার জন্য প্রত্যক্ষ যুদ্ধের পরিবর্তে আলাপ-আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শান্তিপূর্ণ ভাবে যে-কোনো সমস্যা সমাধানের পথ প্রশস্ত করে।
(iv) এই সম্মেলন সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আফ্রিকা বণ্টনের ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ সাফল্যও লাভ করে এবং একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
❐ মূল্যায়ন: এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে রক্তপাত না ঘটিয়ে বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্রের মধ্যে দ্রুত আফ্রিকার বিভাজন সম্পন্ন হয়। শুরু হয় ঔপনিবেশিকতার নতুন যুগ। তা ছাড়া এই সম্মেলনে ক্রীতদাস প্রথাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে মানবসমাজের একটি ঘৃণ্য প্রথা অবসানের চেষ্টা করা হয়।
No comments:
Post a Comment