👉 ( সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারের কারণগুলি লেখো। )
প্রশ্ন: সুয়েজ সংকট কী ছিল ? অথবা, সুয়েজ সংকট বলতে কী বোঝো? অথবা, সুয়েজ সংকট কেন দেখা দিয়েছিল।
🢖🢖উত্তর:
🢖🢖ভূমিকা : বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলির অন্যতম ছিল সুয়েজ সংকট। সুয়েজ খাল ছিল বিশ্বের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ। 99 বছরের চুক্তির মেয়াদে সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি এই খাল তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পায়। ওই চুক্তি বাতিল করে মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের 1956 খ্রিস্টাব্দে 26 জুলাই সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করেন। নাসেরের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েল মিশর আক্রমণ করে। ফলে যে সংকট তৈরি হয় তাকে সুয়েজ সংকট বলে।
❐ কারণ: সুয়েজ সংকটের কারণগুলি হল—
(i) আর্থিক কারণ : সুয়েজ ক্যানালের বেশিরভাগ শেয়ার ছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের। সুয়েজ খাল মিশরের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে হলেও আয়ের সামান্য অংশ পেত মিশর। নাসের এই ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না ।
(ii) ব্রিটিশ সেনার উপস্থিতি: সুয়েজ খালের নিরাপত্তার জন্য সুয়েজ অঞ্চলে ব্রিটেনের একদল সৈন্যবাহিনী থাকত। সুয়েজ সংলগ্ন এলাকাতে বিদেশি সৈন্য থাকায় মিশরের কোনো কর্তৃত্ব ছিল না।
(iii) আসওয়ান বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা : নাসের মিশরের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য নীলনদের ওপর আসওয়ান বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেন। এই পরিকল্পনার জন্য ব্যয় ধরা হয় 1400 কোটি ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও বিশ্বব্যাংক প্রথমে এই পরিকল্পনার জন্য ঋণ দিতে রাজি হয়। পরে ঋণ দানের প্রস্তাব মার্কিন মদতে বিশ্বব্যাংক বাতিল করে। ফলে ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নাসের ক্ষুব্ধ হন। ,
(iv) সুয়েজ খালের জাতীয়করণ: 1956 খ্রিস্টাব্দের 26 জুলাই মিশরের রাষ্ট্রপতি সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করে ঘোষণা করেন যে সুয়েজ খালের প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ করবেন ।
(v) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরবরা ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গে পশ্চিমি দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। সুয়েজ খালের ওপর সবচেয়ে বেশি শেয়ারও ছিল ওই দুই দেশের। তাই নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স বিপন্ন হয়ে পড়ে। তারা মিশরের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়।
(vi) লন্ডন সম্মেলন : সুয়েজ সমস্যা সমাধানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1956 খ্রিস্টাব্দের 16 আগস্ট সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে লন্ডনে একটি সম্মেলনের আহ্বান করে। এই সম্মেলনে সুয়েজ ব্যবহারকারী 22টি দেশ যোগ দেয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি সুয়েজ খালের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন ও সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে একটি সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেয়। ব্রিটেন ও ফ্রান্স এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। নাসেরও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, ফলে লন্ডন সম্মেলন ব্যর্থ হয়।
(vii) UNO-তে আলোচনা : 1956 খ্রিস্টাব্দে মিশর সুয়েজ সমস্যাটি জাতিপুঞ্জে উত্থাপন করে। নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি তোলে। মিশর এই প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করে। সোভিয়েত রাশিয়া ভেটো প্রয়োগ করলে ইঙ্গ-ফরাসি প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
(viii) যুদ্ধের সূচনা: ব্রিটেন ও ফ্রান্স মুখে সমাধানের কথা বললেও গোপনে মিশরের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েল মিশরকে আক্রমণ করার জন্য চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি করে। 1956 খ্রিস্টাব্দে 29 অক্টোবর ইজরায়েল মিশর আক্রমণ করে। ব্রিটেন ও ফ্রান্স মিশরের ওপর বোমাবর্ষণ করে।
(ix) যুদ্ধবিরতি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মিশর আক্রমণের বিরোধী ছিল। মার্কিন মনোভাব বুঝতে পারার পর সোভিয়েত রাশিয়া ঘোষণা করে যে মিশরের ওপর ব্রিটেন ও ফ্রান্স বিমানহানা বন্ধ না করলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ওপর রকেট হামলা করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মিশর আক্রমণের নিন্দা করে। বিশ্বজনমতের চাপ, মার্কিন বিরোধিতা সোভিয়েত রাশিয়ার রকেট হানার হুমকিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স পিছু হঠতে বাধ্য হয়। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নির্দেশে ব্রিটেন ও ফ্রান্স মিশর থেকে ডিসেম্বর মাসে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।
❐ মূল্যায়ন : সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা লড়াই আরব জগতে ছড়িয়ে পড়ে। আরব জগতে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের আধিপত্য খর্ব হয়। আরব উপদ্বীপে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নাসেরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। নাসের আরববাসীর কাছে ‘আধুনিক সালাদিন' নামে পরিচিত হন।
No comments:
Post a Comment