উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, মার্কেন্টাইলিজম কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। অথবা, মার্কেন্টাইল অর্থনীতি কাকে বলে? এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। | Class 12th History Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 15 October 2023

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, মার্কেন্টাইলিজম কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। অথবা, মার্কেন্টাইল অর্থনীতি কাকে বলে? এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। | Class 12th History Suggestion

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস


👉 ( মার্কেন্টাইলবাদের সুফল ও কুফলগুলি আলোচনা করো।)


প্রশ্ন: মার্কেন্টাইলিজম কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। অথবা, মার্কেন্টাইল অর্থনীতি কাকে বলে? এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 3+5


🢖🢖উত্তর:

🢖🢖মার্কেন্টাইল মতবাদের সংজ্ঞা: 1600 থেকে 1800 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপে এক সংরক্ষিত বাণিজ্যিক মনোবৃত্তির প্রসার ঘটে যা মার্কেন্টাইলিজম (Mercantilism) র নামে পরিচিত। মার্কেন্টাইলিজমের প্রধান উদ্দেশ্য হল  ইউরোপীয় ক্ষেত্রে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা। এককভাবে এই মতবাদের সংজ্ঞা নির্দেশ করা যায় না। সংক্ষেপে, রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক দিক থেকে ই আরও সমৃদ্ধিশালী করতে এক গুচ্ছ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মসূচিকেই মার্কেন্টাইলিজম বলা হয়। তবে এই একগুচ্ছ নীতির প্রত্যেকটি একই সময়ে কোনো ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।


 প্রবর্তক : সতেরো শতকে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জাঁ ব্যাপ্তিস্ত কোলবের্ত এই নীতি ফ্রান্সে প্রবর্তন করেন। প্রথম এলিজাবেথের আমলে টমাস মান ইংল্যান্ডে এই ব্যবস্থার প্রয়োগ করেন।


❐ মূলতত্ত্ব: ধনতন্ত্র বা Capitalism-এর চেয়ে প্রাচীন মার্কেন্টাইলিজমের মূল কথা হল—সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা থেকেই ধনের উৎপত্তি এবং এই ধরনের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সম্রাট বা রাষ্ট্রকেই বিত্তশালী করার জন্য ব্যবহার করা উচিত। সাম্রাজ্যের প্রসার ও নিরাপত্তার জন্য স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড বিশাল সৈন্যবাহিনী গঠন করে। এই সৈন্যবাহিনীর ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর স্বর্ণমুদ্রার। যে রাষ্ট্রের কোশাগারে যত বেশি স্বর্ণমুদ্রা বা সোনা থাকবে সেই রাষ্ট্র তত বেশি সম্পদশালী হবে। এইজন্য কোলবের্ত ফ্রান্সে সোনা রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি হ্রাস করে রপ্তানি বৃদ্ধি করেন। ফলে রাজকোশে লভ্যাংশ বৃদ্ধি পায়। প্রথমে সোনাকে মানদণ্ড ধার্য করা হলেও পরবর্তী কালে রুপা, তামা, মশলা, তেল সব কিছুকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।


 মার্কেন্টাইল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য: মার্কেন্টাইল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি হল –


i.  বুলিয়ানকেন্দ্রিক অর্থনীতি: মার্কেন্টাইল অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বুলিয়ানিজম। সোনা বা রুপার তালকে বুলিয়ান বলা হয়। মার্কেন্টাইল মতবাদে রাষ্ট্রের সোনার ভাণ্ডারকেই একমাত্র ধনের মানদণ্ড বলে বিবেচনা করা হয়। এই তত্ত্ব অনুসারে বলা হয় সোনার রপ্তানি অপেক্ষা আমদানি বৃদ্ধি করতে হবে। আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত স্বর্ণমুদ্রা বা বুলিয়ান এবং মুদ্রার সংগৃহীত রাজস্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সোনা-রুপার মর্যাদা বৃদ্ধি করে।


ii. বাণিজ্যের ভারসাম্য: বাণিজ্যের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অপর প্রধান বৈশিষ্ট্য। মার্কেন্টাইল মতবাদে পণ্য আমদানির পরিবর্তে রপ্তানি বেশি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ফলে বাণিজ্যের সূচকটি রাষ্ট্রের অনুকূলে থাকে। যে রাষ্ট্র আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি করত সেই রাষ্ট্রটির ভাণ্ডারে সোনা বৎসরান্তে বেশি জমা থাকত। পরবর্তীকালে রপ্তানি কর এবং বিমা বা পরিবহণের জন্য খরচও রপ্তানি মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই স্বর্ণমুদ্রা বা বুলিয়ান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


iii. সম্রাটের স্বার্থের প্রাধান্য: সম্রাট রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। তাই দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও তাঁরই সুখ-সুবিধার্থে পরিচালিত হওয়া উচিত বলে মনে করা হত। এর ফলে মার্কেন্টাইল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধান পরিচালক হয়ে ওঠেন রাজা বা সম্রাট। তাই তিনি এই নীতির মুনাফা ভোগ করে থাকেন। এর ফলে রাষ্ট্র শক্তিশালী হয়।


iv. শিল্প ও বাণিজ্যে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ : প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই উদ্দেশ্য থাকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করা। তাই যে-কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপন বা বাণিজ্যের প্রসারে উদ্যোগী হলে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে রাষ্ট্র এগিয়ে আসে। ফলে রাষ্ট্র একটি নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।


v. কৃষি বাণিজ্যকরণ: মার্কেন্টাইলবাদ কৃষিক্ষেত্রে বাণিজ্যকরণকে সমর্থন করে। খাদ্যশস্য আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিশেষ কর মকুব করা হয়। রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনের চাইতে বিশেষত বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন কৃষকদের উৎসাহিত করে।


vi. শিল্প সংরক্ষণ : মার্কেন্টাইল মতবাদে ইউরোপে শিল্পের উন্নতির জন্য বিদেশি শিল্পজাত পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়। আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর আমদানি কর হ্রাস করা হয়। এর ফলে ইউরোপীয় শিল্পের উন্নতি ঘটে। বিদেশের উন্নত পণ্যের প্রতিযোগিতার হাত থেকে ইউরোপীয় শিল্প রক্ষা পায়।


vii. উপনিবেশ স্থাপন : শিল্পগুলি সারাবছর চালু রাখার জন্য কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্র ও উৎপাদিত পণ্যের বাজার দখল করার জন্য প্রয়োজন হয় উপনিবেশ স্থাপন করার। এর ফলে উপনিবেশ দখলের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ঔপনিবেশিক শোষণের মাধ্যমেই ইউরোপীয় দেশগুলি সমৃদ্ধ হয়।


viii. নৌবহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি : বৈদেশিক বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ ও উপনিবেশগুলি রক্ষার জন্য সমুদ্রের ওপর আধিপত্য বিস্তার আবশ্যিক হয়ে ওঠে। এর ফলে সামরিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নৌবহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি রাষ্ট্র বিশেষত স্পেন, পোর্তুগাল, ব্রিটেন বিশাল নৌবাহিনী গড়ে তোলে।


ix. ধনী-দরিদ্র ব্যবধান: মার্কেন্টাইল মতবাদে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ব্যক্তি মালিকানাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে সমাজ ধনী-দরিদ্র ব্যবধানকেও স্বীকার করে নেয়। 


❐ মূল্যায়ন: মার্কেন্টাইল মতবাদ ছিল রাষ্ট্রের সরকার ও বণিক শ্রেণির সমঝোতার ফসল। জাতীয় রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও প্রসারের জন্য সেনাবাহিনী গঠনে রাজস্ব ও শুল্ক প্রদান করে বণিক শ্রেণি। তার বিনিময়ে বণিকগণ উপনিবেশে একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার সরকারের কাছ থেকে লাভ করে। আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক স্থাপন বা নিষেধাজ্ঞা জারি করে বণিকরা স্বার্থ সুরক্ষিত করে। অপরদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়।

No comments:

Post a Comment