উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, তাইপিং বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টীকা লেখ | তাইপিং বিদ্রোহের কারণ, ফলাফল/গুরুত্ব | Class 12th History Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 29 October 2023

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, তাইপিং বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টীকা লেখ | তাইপিং বিদ্রোহের কারণ, ফলাফল/গুরুত্ব | Class 12th History Suggestion

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস



👉( চিনে বক্সার বিদ্রোহের কারণগুলি ও ফলাফল লেখো । )


প্রশ্ন: তাইপিং বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টীকা লেখ ৷ অথবা, তাইপিং বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।


🢖🢖উত্তর:

🢖🢖ভূমিকা :  ‘তাইপিং’ কথাটির অর্থ হল ‘মহান শান্তি’। 1851 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ চিনের কোয়াংটুং প্রদেশে হুং-শিউ-চুয়ানের নেতৃত্বে দুর্নীতিগ্রস্ত মাঞ্জু রাজবংশকে উচ্ছেদ করে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করার যে আন্দোলন শুরু হয় তা তাইপিং বিদ্রোহ নামে পরিচিত।


❐  কারণ: তাইপিং বিদ্রোহের কতকগুলি উল্লেখযোগ্য কারণ হল—


(i) অর্থনৈতিক সংকট : নানকিং-এর চুক্তির পর চিনের অর্থনৈতিক সংকট চরমে ওঠে। আফিং আমদানির ফলে দেশ থেকে প্রচুর রুপো বিদেশে চলে যায়। এর ফলে চিনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রুপোর দাম বৃদ্ধি পায়। তামার ব্যবহার সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশি ছিল। কিন্তু তামার মূল্যহ্রাসের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ফলে জনগণের মনে। ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।


(ii) কর বৃদ্ধি: রুপোর মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষকদের ওপর করের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে কৃষকদের জীবনে দুর্দশা বৃদ্ধি পায়। কৃষকদের দুর্দশা বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।


(ii) দুর্নীতিগ্রস্ত মাঞ্জু শাসন: মাঞ্জু শাসকদের দুর্নীতি ও অক্ষমতা তাইপিং বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করেছিল। তখন অর্থের বিনিময়ে সরকারি পদ বিক্রি হত। সরকারি কাজে রাজকর্মচারীদের অবহেলা করা হত। বিদেশি আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষেত্রে মাঞ্জু শাসকদের ব্যর্থতার ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়।


(iv) বেকারত্ব: নানকিং চুক্তির পর চিনে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। ক্যান্টন বাণিজ্য বিদেশিদের হস্তগত হবার ফলে হাজার হাজার নৌকার মাঝি, কুলি কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে। এইসব কর্মচ্যুত মানুষ তাইপিং বিদ্রোহে যোগ দেয়।


(v) প্রাকৃতিক দুর্যোগ : 1840-54 খ্রিস্টাব্দে চিনে একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে। যেমন— হোনান প্রদেশে খরা (1847 খ্রিস্টাব্দ), ইয়াংসি উপত্যকাতে দুর্ভিক্ষ (1849 খ্রিস্টাব্দ), হুনান প্রদেশে দুর্ভিক্ষ (1850 খ্রিস্টাব্দ) ইত্যাদি। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। 1852 খ্রিস্টাব্দে ইয়ালু নদী গতিপথ পরিবর্তন করার ফলে শানটুং প্রদেশে ব্যাপক বন্যা হয়। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মাঞ্জু সরকার কোনোরকম সাহায্য করেননি। অথচ সরকারি তহবিল রাজকর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়। ফলে দরিদ্র জনগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।


(vi) ধর্মীয় কারণ: চিনের মানুষ কনফুসীয় ধর্মমতের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। তাইপিং বিদ্রোহের প্রধান নেতা হুং-শিউ-চুয়ান চিনে তাইপিং নামে নতুন ধর্ম প্রচার করেন এবং চিনে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে চিনারা তাঁর নতুন ধর্মমতে আগ্রহী হয়। স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য দলে দলে এই ধর্মে যোগ দেয়।


 বিদ্রোহ সূচনা: 1851 খ্রিস্টাব্দে 11 জানুয়ারি কোয়াংসি প্রদেশে এই বিদ্রোহের সূচনা হয়। হুং-শিউ-চুয়ানের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা নানকিং দখল করে সেখানে একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এই রাজ্যের রাজধানী হয় নানকিং। কৃষক, শ্রমিক, কুলি, রাজকর্মচারী, ব্যবসায়ী প্রভৃতি পেশার মানুষ বিদ্রোহে যোগ দেয়। দীর্ঘ 14 বছর ধরে এই বিদ্রোহ চলে।


❐  বিদ্রোহ দমন: তু-চি সরকার ইংল্যান্ড, ফ্রান্স সহ অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সহায়তা নিয়ে তাইপিং বিদ্রোহীদের নির্মমভাবে হত্যা করে বিদ্রোহ দমন করেন। বিদেশি সেনা নানকিং দখল করার আগেই তাইপিং বিদ্রোহের প্রধান নেতা হু-সিউ-চুয়ান আত্মহত্যা করেন। সেনাবাহিনী চেং-কে তারা প্রাণদণ্ড দেয়। এইভাবে তাইপিং বিদ্রোহের অবসান ঘটে। 


❐  ফলাফল/গুরুত্ব : তাইপিং বিদ্রোহ চিনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।


(i) এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও চিনের মানুষের মনে মাঞ্জু রাজবংশ বিরোধিতার বীজ উপ্ত হয়। ফলে অন্য বিদ্রোহগুলির উদ্ভবের পথ প্রশস্ত হয়।


(ii) বিদ্রোহ দমন করায় মাঞ্জু সরকার বিদেশিদের সাহায্য নেয়। ফলে চিনে বিদেশিদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়।


(iii) তাইপিং বিদ্রোহে কৃষক, শ্রমিক, কারিগর শ্রেণির মানুষ যোগদান করে। ফলে এই বিদ্রোহ ছিল একাধারে মাঞ্জু শাসন বিরোধী ও অন্যদিকে বিদেশি বিরোধী।


(iv) তাইপিং বিদ্রোহের ফলে চিনে একধরনের নতুন রাজনৈতিক ধারণার সৃষ্টি হয়। M. N. Roy বলেছেন, তাইপিং বিদ্রোহ চিনকে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের যুগে নিয়ে গিয়েছিল।


(v) তাইপিং বিদ্রোহ চিনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবি তুলে ধরেছিল। তার ফলে চিনের সাধারণ মানুষ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।


 মূল্যায়ন : একটি ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে তাইপিং বিদ্রোহের সূত্রপাত হলেও এটি ছিল মূলত ‘কৃষক বিদ্রোহ'। চিনের শোষিত, নিপীড়িত কৃষক শ্রেণি ছিল এই আন্দোলনের চালিকা শক্তি। হুং-শিউ-চুয়ান বৌদ্ধ, তাও ও কনফুসীয় ধর্মের পরিবর্তে তাইপিং ধর্মমত প্রচার ও ‘স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার' কথা ঘোষণা করলে চিনা কৃষক শ্রেণি আকৃষ্ট হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। তাইপিং বিদ্রোহের প্রধান নেতা হুং-শিউ-চুয়ানের ভূমিসংস্কার নীতি ও সংস্কার কর্মসূচি যুগে যুগে শোষিত মানুষকে আশার আলো দেখায়। এইজন্য ঐতিহাসিক ভিনাকে  (H. Vinacke) মন্তব্য করেছেন: “ব্যর্থতা সত্ত্বেও চিনের ইতিহাসে এই বিপ্লবের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।” (While বিদ্রোহ সফল হয়নি, এটি তার ছাপ রেখে গেছে বহু বছর ধরে দেশে।)

No comments:

Post a Comment