👉 ( মার্কেন্টাইলিজম কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। )
প্রশ্ন:সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারের কারণগুলি লেখো। 4+4
🢖🢖উত্তর:
🢖🢖ভূমিকা : সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে নানা মত রয়েছে। প্রথমে এর অর্থ ছিল সামরিক আধিপত্য। পরবর্তীকালে এর অর্থ দাঁড়ায় একটি দেশ নিজ স্বার্থে অপর একটি দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণ করে সর্বাত্মক প্রভুত্ব স্থাপন করা।
❐ বিভিন্ন সংজ্ঞা :
i. লেনিনের মত: ভি আই লেনিন তাঁর 'Imperialism, The Highest Stage of Capitalism' গ্রন্থে বলেছেন—“সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের একচেটিয়া পর্যায়।”
ii. হবসনের মত : জন এ হবসন তাঁর “Imperialism-A Study” গ্রন্থে বলেছেন—“প্রাথমিক স্তরে জাতীয়তাবোধ অন্য দেশে উপনিবেশ গড়ে তোলার প্রেরণা যোগায়, যা পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদের রূপ নেয়।”
iii. চার্লস বেয়ার্ড-এর মত: চার্লস বেয়ার্ডের মতে সাম্রাজ্যবাদ হল কোনো একটি রাষ্ট্রকর্তৃক অপর রাষ্ট্রের ভূখণ্ড দখল এবং তার ওপর নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠা।
iv. সুম্যানের মত: সুম্যানের মতে, বল প্রয়োগ ও হিংসার সাহায্যে কোনো দেশের ওপর বৈদেশিক শাসন চাপিয়ে দেওয়াকে সাম্রাজ্যবাদ বলে।
v. সাধারণ সংজ্ঞা : সাধারণভাবে বলা যায় যে, একটি দেশ নিজের দেশ ও জাতির স্বার্থে অন্য একটি দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণ করে ওই দেশের ওপর নিজ দেশের সর্বাত্মক কর্তৃত্ব বা প্রভুত্ব স্থাপন করাকে সাম্রাজ্যবাদ বলে।
🢖🢖 সাম্রাজ্যবাদের প্রসারের কারণ :
জুলিয়াস সিজার, জাস্টিনিয়ান, শার্লামান, আলেকজান্ডার, কুবলাই খাঁ, সমুদ্রগুপ্ত, আলাউদ্দিন খলজির মতো সম্রাটরা সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটান দিগবিজয়ের স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য বা দেশের গৌরব বৃদ্ধি করার জন্য। রেনেসাঁস-এর পরবর্তীকালে ইউরোপীয় দেশগুলিতে সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার প্রসার ঘটে প্রধানত অর্থনৈতিক কারণে। অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও অন্যান্য কারণগুলিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই কারণগুলি হল –
❐ অর্থনৈতিক কারণ : সাম্রাজ্যবাদের বিকাশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল অর্থনৈতিক কারণ।
i. সম্পদ লুণ্ঠন : ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে এশিয়া ও আমেরিকার দেশগুলি আবিষ্কৃত হয়। এই দুই মহাদেশ ছিল অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী। তা ছাড়া দেশগুলিতে প্রচুর পরিমাণে সোনা বা রুপা সঞ্চিত ছিল। ইউরোপে সোনা ও রুপার প্রচণ্ড ঘাটতি ছিল। এই সোনা ও রুপা লুণ্ঠন করার জন্য ইউরোপীয়রা সাম্রাজ্য স্থাপন করে। কলম্বাস দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন যে— তিনি সোনার সন্ধানেই আছেন যা সর্বাপেক্ষা মূল্যবান পণ্যসামগ্রী। পিসারো ইনকা সভ্যতা লুণ্ঠনের সময় বলেন, তিনি সোনা নিতে এসেছেন, জমি চাষ করার জন্য নয়। কলম্বাস ও পিসারোর কথা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে এশিয়া ও নতুন বিশ্বের সম্পদ লুঠ করা ছিল সাম্রাজ্য স্থাপনের প্রধান কারণ।
ii. বাণিজ্যিক কারণ : ইউরোপের বাজারে এশিয়া ও আমেরিকার পণ্যদ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা ছিল। যেমন—তুলা, পশম, পশুর চামড়া, রেশম, চিনি, নীল, মশলাপাতি, আদা, গোলমরিচ, রেশমবস্ত্র, পশমবস্ত্র প্রভৃতি। এই পণ্যগুলির একচেটিয়া বাণিজ্য করার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলি উৎপাদন স্থানগুলি দখল করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। ফলস্বরূপ আমেরিকা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ইউরোপীয় দেশগুলির সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। ভাস্কো-দা-গামা যে পরিমাণ সম্পদ নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছিলেন, তার চতুর্গুণ সম্পদ নিয়ে দেশে ফিরে ছিলেন শুধু বাণিজ্যের সূত্রে এবং এই ঘটনায় সেখানকার রাজা ভাস্কো-র ওপরে খুবই সন্তুষ্ট হন।
iii. রাজনৈতিক কারণ : সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের জন্য অর্থনৈতিক কারণ ছাড়া রাজনৈতিক কারণও ছিল। প্রতিটি ইউরোপীয় দেশই সাম্রাজ্যবৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য সামরিক ঘাঁটি দখল করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। সাম্রাজ্যের বিশালতার ওপর দেশগুলির শক্তি ও মর্যাদা নির্ভর করত বলে সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
iv. সামাজিক কারণ: এই সময় ইউরোপের প্রতিটি দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থান, বাসস্থান-এর সংস্থান করা সহজ ছিল না। ফলে প্রতিটি দেশে খাদ্যাভাব ও বেকারত্ব সমস্যা চরম আকার ধারণ করে। উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার খাদ্য, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের জন্য সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ ও ইটালির আবিসিনিয়া আক্রমণে প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে।
v. ধর্মীয় কারণ: আবিষ্কৃত নতুন দেশগুলিতে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জন্য ধর্মযাজকরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন মিশনারি সংস্থাগুলি দেশের রাজাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে. সাম্রাজ্যস্থাপন করার জন্য। স্কট, ডেভিড লিভিংস্টোন প্রভৃতি মিশনারিদেরও সাম্রাজ্য বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা আছে।
vi. সামরিক কারণ : ইউরোপীয় দেশগুলির সামরিক বাহিনী ছিল আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলির পক্ষে ইউরোপীয়দের প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ওই তিনটি মহাদেশেই ইউরোপীয়রা সাম্রাজ্য স্থাপন করে। শিল্পবিপ্লবের পরে ইউরোপের কারখানাগুলিতে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন হতে থাকে। আর সেই অস্ত্রগুলি বাজারে উদ্বৃত্ত হয়ে গেলে বাজার খোঁজার পালা চলে। যুদ্ধ সৃষ্টি করে সেই অস্ত্রগুলি বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
vii. অন্যান্য কারণ: ইউরোপীয় শক্তিগুলির ক্রীতদাস সংগ্রহের আকাঙ্ক্ষা, শাহজাহানের সময় এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে পোর্তুগিজদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দক্ষ প্রশাসন, সৈনিক সংগ্রহ এবং কিছু অ্যাডভেঞ্চার প্রেমিক মানুষের উদ্যোগ সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারের জন্য দায়ী ছিল।
❐ মূল্যায়ন : সাম্রাজ্যবাদের প্রেরণার উৎস এক নয়, একাধিক। বিভিন্ন দেশের উৎসের কারণের মধ্যেও আবার পার্থক্য আছে। সকল সময় যে জাতীয় পতাকাকে বাণিজ্য অনুসরণ করেছে তা বলা যাবে না বরং অনেক ক্ষেত্রে উদ্ভিদবিজ্ঞানী, জলদস্যু, মিশনারিদের সঙ্গেও পতাকা মিশে গেছে। সমগ্র বিশ্ব জুড়েই ইউরোপীয়রা প্রাধান্য স্থাপন করেছে। এর ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার প্রাচীন ধর্ম ও সমাজের পতন ঘটে এবং দেশগুলিও সমস্ত সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পড়ে।
No comments:
Post a Comment