উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, 4 মে আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব লেখো । Class 12th History Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Friday, 17 November 2023

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, 4 মে আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব লেখো । Class 12th History Suggestion

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস 



👉 মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের পটভূমি ও শর্তাবলির বিবরণ দাও। 


প্রশ্ন4 মে আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব লেখো।  অথবা, 4 মে আন্দোলনের কারণ ও প্রভাব আলোচনা কর। 4+4


🢖🢖উত্তর:

🢖🢖ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর চিনের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শোষণ ও আধিপত্যের অবসান এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে অরাজকতা দূর করে শান্তি স্থাপনের জন্য চিনের ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় 1919 খ্রিস্টাব্দের 4 মে তারিখে যে আন্দোলনের সূচনা করে, তা ‘4 মে আন্দোলন' (May 4th Movement) নামে পরিচিত।


🢖🢖কারণ: 4 মে আন্দোলনের কারণগুলি হল—

 ❐ ইউয়েন-সি-কাই এর স্বৈরশাসন: চিনা রাষ্ট্রপতি ইউয়েন-সি-কাই চিনে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চিনের সমস্ত সাংবিধানিক রীতিনীতি বাতিল করেন এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির কাছে অপমানজনক শর্তে ঋণ নেওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করেন। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি তিনি কেড়ে নেন। তার বিরোধিতা করলে তিনি তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেন। তিনি কুয়েমিন-তাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।


❐ ড. সানের দ্বিতীয় বিপ্লবের আহ্বান : ড. সান-ইয়াৎ-সেন গৃহযুদ্ধ এড়াবার জন্য 1911 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পর ইউয়েন-সি-কাইকে রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। কিন্তু ইউয়েন-সি-কাই এর শোষণ, অত্যাচার চিনের মানুষের দুর্দশা বৃদ্ধি করে। এই পরিস্থিতিতে ড. সান 1913 খ্রিস্টাব্দে ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের' জন্য ডাক দেন। কিন্তু ইউয়েন-সি-কাই কঠোর দমননীতির মাধ্যমে কুয়েমিন- তাংদের বিদ্রোহ দমন করেন। ফলে সমগ্র চিনে হতাশার সৃষ্টি হয়।


❐ একুশ দফা দাবি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান 1915 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি চিনের ওপর ‘একুশ দফা দাবি চাপিয়ে দিয়ে চিনকে জাপানি উপনিবেশে পরিণত করার চেষ্টা করে। চিনের স্বাধীন নাগরিকদের পক্ষে এই দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।


❐  দেশীয় শিল্পরক্ষা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনে জাতীয় শিল্পের বিকাশ ঘটে। কিন্তু বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দেশীয় শিল্পগুলি সংকটে পড়ে। চিনারা দেশীয় শিল্পগুলি রক্ষার জন্য ‘বিদেশি পণ্য'-র বিরুদ্ধে ‘বয়কট' আন্দোলন শুরু করে। ফলে চিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হয়।


❐  বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা: পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত চিনা বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় ‘জাগরণ’, ‘নতুন তারুণ্য’, ‘জ্ঞানের আলোক’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে চিনের যুব সম্প্রদায়কে জাগরিত করেন। এক্ষেত্রে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং একুশ দফা দাবির বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলেন। বিদেশিদের সঙ্গে ইউয়েন-সি-কাইয়ের ষড়যন্ত্র রাষ্ট্রপতি ইউয়েন-সি-কাই সম্রাট পদ লাভের জন্য বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং বিদেশি পণ্য ‘বয়কট’ আন্দোলন প্রত্যাহার করার আদেশ দিলে জনগণ ক্ষুব্ধ হন।


❐ প্রত্যক্ষ কারণ: 4 মে আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল 1919 খ্রিস্টাব্দের ভার্সাই চুক্তি। কারণ বিদেশিদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত অসম চুক্তিগুলি বাতিল ও বিদেশিদের কাছ থেকে তার রাজ্যাংশ ফিরে পাবার আশা নিয়ে চিন মিত্রপক্ষে যোগ দিয়েছিল। ভার্সাই চুক্তিতে চিনা প্রতিনিধিরা একুশ দফা দাবি ও শানটুং প্রদেশে জাপানের কর্তৃত্ব বাতিল করার দাবি করলে মিত্রশক্তি তা প্রত্যাখ্যান করে। শূন্য হাতে চিনা প্রতিনিধিরা দেশে ফিরে এলে চিনে প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।


❐  বিদ্রোহ দমন: চিনের প্রজাতান্ত্রিক সরকার বিদ্রোহ দমন করার জন্য 1150 জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে। সামরিক বাহিনীর সাহায্যে বিদ্রোহ দমিত হয়। 


🢖🢖 গুরুত্ব বা প্রভাব: চিন দেশের ইতিহাসে 4 মে আন্দোলনের গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ।


❐ দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের বিকাশ: 4 ম আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে চিনবাসী দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের মহামন্ত্রে উদ্‌বুদ্ধ হয়। চিনারা বিদেশিদের অন্যায় দাবি ও শোষণের প্রকৃতি উপলব্ধি করতে পারে।


❐  কুয়েমিন-তাং দলের পুনর্গঠন : এই আন্দোলনের প্রভাব চিনের প্রধান রাজনৈতিক দল কুয়েমিন-তাং দলের পুনর্গঠন হয়।


❐ কমিউনিস্ট পার্টির গঠন: মে ফোর্থ আন্দোলনের প্রভাবে চিনে সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারার প্রসার ঘটে এবং চিনে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয় (1921)।


❐  সাংস্কৃতিক বিপ্লব: এই আন্দোলনের প্রভাবে চিনের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিপ্লব শুরু হয়। চিনা সাহিত্য নতুন ভাবধারায় রচিত হয়। বহু গ্রন্থ পাই-হুয়া (চিনের কথ্যভাষা) ভাষায় অনূদিত হয়।


 ❐ শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ : এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চিনের শ্রমিক শ্রেণি রাজনৈতিক সংগ্রামের আঙিনায় প্রবেশ করে। তাই চিনের শ্রমিক শ্রেণির কাছে এই আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ।


❐  সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী: মে ফোর্থ আন্দোলনের সময় চিনারা বিদেশি পণ্য বয়কট করে বিদেশিদের অর্থনৈতিক দিক থেকে আঘাত করার নীতি নেয় এবং বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির বিরোধিতা করে। ফলে চিনে বিদেশি পণ্যের আমদানি হ্রাস পায়।


 ❐  ছাত্রদের অংশগ্রহণ: ছাত্ররা এই আন্দোলনের মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল। তারাই ছিল এই আন্দোলনের প্রধান প্রচারক।  


❐  অভ্যন্তরীণ উন্নতি : এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে চিনারা নিজেরাই দেশের উন্নতি ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সমর্থ।


❐  নতুন যুগের সূচনা: এই আন্দোলন চিনে নতুন যুগের সূচনা করেছিল। এর ফলে চিনে প্রাচীনপন্থী কনফুসীয় চিন্তাধারার অবসান ঘটে। চিনারা পশ্চিমি ভাবধারা ও মার্কসবাদকে গ্রহণ করে।


🢖🢖মূল্যায়ন : 4 মে-র আন্দোলন চিনে আধুনিকতার পথ প্রশস্ত করে। চিনা ঐতিহাসিক হো-কান-চি-র সঙ্গে একমত হয়ে বলা যায় যে, এই আন্দোলন নতুন বিপ্লবী সংগ্রামের জন্ম দেয় এবং চিনের বিপ্লবকে এক নতুন স্তরে পৌঁছে দেয়। বলাবাহুল্য চিনের 1911 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব দক্ষিণ চিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু 4 মে-র আন্দোলনের প্রভাব ছিল চিনের সর্বত্র। এর গণভিত্তি ছিল ব্যাপক।

No comments:

Post a Comment