উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস , মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের পটভূমি ও শর্তাবলির বিবরণ দাও । Class 12th History Suggestion [HS 2015, 2017] - Psycho Principal

Fresh Topics

Saturday, 18 November 2023

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস , মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের পটভূমি ও শর্তাবলির বিবরণ দাও । Class 12th History Suggestion [HS 2015, 2017]

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস 



👉 ( রাওলাট সত্যাগ্রহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। )


প্রশ্নমন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের পটভূমি ও শর্তাবলির বিবরণ দাও। 8 [HS 2015, 2017]


🢖🢖উত্তর:

🢖🢖ভূমিকা : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের সাংবিধানিক সংস্কারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল 1919 খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন। ভারতসচিব এডুইন স্যামুয়েল মন্টেগু ও ভারতের বড়োলাট লর্ড চেমসফোর্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন না পাবার ক্ষোভ প্রশমন ও জাতীয় আন্দোলনের প্রসার রোধ করার জন্য সম্মিলিতভাবে যে সংস্কার আইন পাশ করেন, তা মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন নামে পরিচিত।


🢖🢖 কারণ/পটভূমি : মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন প্রণয়নের কারণগুলি হল-

(i) মর্লে-মিন্টো সংস্কারের ব্যর্থতা: 1909 খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে নতুন সংস্কার আইন প্রবর্তনের প্রয়োজন হয়।


(ii) কংগ্রেসের ঐক্য: 1916 খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে চরমপন্থীরা কংগ্রেসে যোগ দিলে কংগ্রেস পুনরায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।


(iii) কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ ঐক্য: 1916 খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌ শহরে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। 1916 খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে কংগ্রেস ও মুসলিমলিগ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় আন্দোলন পরিচালনা করতে সম্মত হয়।


(iv) মন্টেগু-র প্রতিশ্রুতি : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতবাসীর সাহায্য ও সমর্থন লাভের জন্য ভারতসচিব মন্টেগু ভারতীয়দের যুদ্ধান্তে স্বায়ত্তশাসন দানের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রয়োজন ছিল।


(v) হোমরুল আন্দোলন: 1916 খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষরের পর বালগঙ্গাধর তিলক ও অ্যানি বেসান্তের নেতৃত্বে ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে হোমরুল আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এই আন্দোলনের তীব্রতায় ব্রিটিশ সরকার মত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।


(vi) আন্তর্জাতিক ঘটনা : 1917 খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবে শ্রমিক শ্রেণির সাফল্য ভারতীয়দের গভীরভাবে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে। এতে ব্রিটিশ সরকারের সাম্যবাদ ভীতি তৈরি হয়। তা ছাড়া আমেরিকা ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলি তাদের উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দেবার প্রতিশ্রুতি দিলে ভারত সরকারও প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয়।


🢖🢖শর্তাবলি: মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের বিভিন্ন শর্তগুলি হল—


❐ ক্ষমতা ও দায়িত্ব বণ্টন: এই সংস্কার আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতা ও আয় সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়।

(a) কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দেশরক্ষা, মুদ্রা, রেলপথ, শুল্ক, পররাষ্ট্র, ডাকব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

(b) রাজ্য সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, রাজস্ব, পুলিশ ও যোগাযোগ প্রভৃতি তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির দায়িত্ব দেওয়া হয়।


❐ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ:

(a) ক্ষমতার বণ্টন হলেও কেন্দ্রীয় আইনসভাই বড়োলাটের অনুমতি নিয়ে সারাদেশের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারত।

(b) সাত জন সদস্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ গঠিত হয়। সাত জন সদস্যের মধ্যে তিনজন সদস্য ভারতীয় হবেন।

(c) বড়োলাট নিজে শাসনকার্য পরিচালনা করবেন। এইজন্য তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ভারত সচিবের কাছে দায়ী থাকবেন, ভারতের আইনসভার কাছে নয়।


❐ কেন্দ্রীয় আইনসভা:

(a) মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠন করা হয়। এর উচ্চকক্ষের নাম 'রাষ্ট্রীয় পরিষদ' (Council of States) এবং নিম্নকক্ষের নাম হয় ‘কেন্দ্রীয় আইনসভা' (Legislative Assembly)।

(b) উচ্চকক্ষের 60 জন সদস্যের মধ্যে 26 জন ছিলেন বড়োলাট দ্বারা মনোনীত ও বাকি 34 জনকে নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা হয়।

(c) নিম্নকক্ষের 140 জন (পরে 145 জন) সদস্যের মধ্যে 40 জন মনোনীত এবং বাকি 100 জন (পরে 105  জন) নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা হয়।

(d) উভয়কক্ষের সদস্যদের সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচিত করা হয়।


❐ প্রদেশে দ্বৈতশাসন:

(a) প্রদেশগুলিতে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা স্থাপিত হয়। এই আইনসভার 70% সদস্য নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং 30% সদস্য গভর্নর কর্তৃক মনোনীত করার ব্যবস্থা হয়।

(b) প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বগুলিকে ‘সংরক্ষিত’ ও ‘হস্তান্তরিত’—এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সংরক্ষিত বিষয়গুলি ছিল আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ, প্রশাসন, অর্থ, বিচার, শ্রম প্রভৃতি। এই বিষয়গুলির দায়িত্ব প্রাদেশিক গভর্নর ও তাঁর কার্যনির্বাহক সভার ওপর ন্যস্ত হয়। হস্তান্তরিত বিষয়গুলি ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বায়ত্তশাসন প্রভৃতি। এগুলির পরিচালনার দায়িত্ব ছিল প্রাদেশিক মন্ত্রীদের হাতে। এই মন্ত্রীরা তাদের কাজের জন্য প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়ী থাকতেন।

(c) হস্তান্তরিত বিষয়ে প্রাদেশিক আইনসভা কোনো আইন পাশ করলে গভর্নর বা গভর্নর জেনারেল তা নাকচ করে দিতে পারতেন।


❐  ভারত সচিবের কাউন্সিল: মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে ভারত-সচিবের কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ৪ থেকে বৃদ্ধি করে 12 হয়। এই কাউন্সিলের অর্ধেক সদস্য নিযুক্ত হবেন ভারতে কমপক্ষে 10 বছর বসবাস বা চাকরি করছেন এমন ব্যক্তিগণ। এই সদস্যদের বেতন ও ভাতা ব্রিটিশ সরকার বহন করবে।


❐ মিশ্র প্রতিক্রিয়া: কিন্তু ভারতীয়রা তখন স্বায়ত্ত্বশাসন  লাভের জন্য এতই অধৈর্য হবে পড়েছিল যে, আগের আইনের সামান্য রদবদল ঘটিয়ে ভারতীয়দের সুবিধাদানের চালাকি তাদের সহ্য হয়নি। এই নতুন আইনের ধারাগুলি বিচার বিবেচনার পর কংগ্রেস এই আইনকে তার পরবর্তী অধিবেশনে ' inadequate', disappointing and unsatisfactory' বলে অভিহিত করে এবং প্রকৃত স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যেপাধ্যায় প্রমুখ কয়েকজন প্রবীণ এই সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণের পক্ষে মত প্রকাশ করলে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়।


❐ ত্রুটি: এই আইন যে ভারতের এক বৃহত্তর অংশের জনগণকে হতাশ করেছিল তার কতকগুলি কারণ ছিল।

(i) এই আইনের অতিকেন্দ্রিকতা পূর্বতন শাসন ব্যবস্থার কোনো রদবদল ঘটায়নি।

(ii) কাগজে কলমে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হলেও তা রূপায়িত হয়নি। নতুন আইনে স্বতন্ত্র নির্বাচনকেই বহাল রাখা হয় এবং ‘Dyarchy' বা দ্বৈতশাসন চালু করা হয়।

(iii) ভোটাধিকার সম্প্রসারণের ধারাটি কার্যকর করা হয়নি।

(iv) আমলাতন্ত্রের বিরোধিতা করায় সামন্যতম স্বায়ত্তশাসনের সম্ভাবনাও বিলুপ্ত হয়েছিল।


❐ মূল্যায়ন : তিলক ও অ্যানি বেসান্ত ব্যক্তিগতভাবে এই আইনের বিরুদ্ধে তাঁদের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তাঁরা দুজনেই এই আইনের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। ড. জুডিথ ব্রাউন অবশ্য ভারতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই আইনকে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলে মনে করেন। বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ কুপল্যান্ড, ঐতিহাসিক টমসন ও গ্যারেট এবং ড. মেহরত্রও ভারতের সাংবিধানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে এই আইনের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন। কুপল্যান্ডের মতে, ভারতীয় জনগণের দায়িত্বশীল সরকার পরিচালনায় যথাযথ প্রশিক্ষণ ছিল না বলে এই আইনটিকে কার্যকর করা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় নেতারা এই আইনটির সঠিক তাৎপর্যই অনুধাবন করতে পারেননি।

No comments:

Post a Comment