উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, বার্লিন সংকটের কারণ ও গুরুত্ব লেখো | Class 12th History Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 28 November 2023

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, বার্লিন সংকটের কারণ ও গুরুত্ব লেখো | Class 12th History Suggestion

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস



👉( রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে কী জানো?)



প্রশ্নবার্লিন সংকটের কারণ ও গুরুত্ব লেখো। 4+4


🢖🢖উত্তর:

▶ ভূমিকা :  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরাজিত জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহরকে কেন্দ্র করে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মতবিরোধের ফলে বার্লিন সংকট তৈরি হয়। এই সংকটকে কেন্দ্র করেই বিশ্বরাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।


❐ কারণ: বার্লিন সংকটের কারণগুলি হল-


i. ইয়াল্টা ও পটস্ডাম সম্মেলনের ব্যর্থতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার আগে ক্ষতিপূরণ ও জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে ইয়াল্টা সম্মেলনে (1945 খ্রিস্টাব্দ) সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর পটস্ডাম সম্মেলনে (1945) জার্মানিকে রাশিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা এই চার দেশের প্রভাবাধীন অঞ্চলে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। বলা হয়, প্রতি রাষ্ট্র তার নিজ অধিকৃত এলাকা থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করবে।


ii. দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য: পটস্ডাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে সোভিয়েত রাশিয়া তার অধিকৃত জার্মানি থেকে খাদ্যশস্য, খনিজ সম্পদ শিল্পকর্মী লুঠ করে দেশে নিয়ে যায়। অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি দেশগুলি জার্মানির সম্পদ লুঠ না করে উন্নয়ন ঘটায়। এই বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সোভিয়েত রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়।


iii. আদর্শগত: সোভিয়েত রাশিয়া জার্মানিতে সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। অপরদিকে, আমেরিকা ও তার অনুগামী পশ্চিমি রাষ্ট্রবর্গ জার্মানিতে গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চেয়েছিল।


iv. পশ্চিম জার্মানির উন্নয়ন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির অর্থনৈতিক সংকট চরমে উঠে। বেকারত্ব, দারিদ্র্য, খাদ্যাভাব, জ্বালানি সংকট প্রবল আকার ধারণ করে। এই অবস্থার উন্নতির জন্য আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তাদের তিনটি এলাকা একত্রিত করে। এই সংযুক্ত অঞ্চলে নতুন ব্যাংক ব্যবস্থা ও নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। কৃষি ও শিল্পের উন্নতি হয়। মুদ্রামানে স্থিতিশীলতা আসে। অন্যদিকে, সোভিয়েত রাশিয়া জার্মানির সম্পদ লুঠ করতে থাকায় রুশ অধিকৃত জার্মানি দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়। তাই রাশিয়ার পক্ষে জার্মানির এই উন্নয়ন মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।


v. বার্লিন অবরোধ: জার্মানির মতো তার রাজধানী বার্লিন শহরটিও চার ভাগে বিভক্ত ছিল। ভৌগোলিক দিক থেকে বার্লিন শহরটি রুশ অধিকৃত পূর্ব জার্মানিতে অবস্থিত ছিল। তাই পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলিকে পশ্চিম জার্মানি থেকে বার্লিন শহরে আসতে হলে রুশ অধিকৃত সড়কপথ দিয়ে আসতে হত। সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিম জার্মানির উন্নয়ন মানতে পারছিল না। তাই 1948 খ্রিস্টাব্দের 24 জুলাই পশ্চিমি রাষ্ট্রবর্গের বার্লিন শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কপথ অবরোধ করে। এই ঘটনা 'বার্লিন অবরোধ' নামে পরিচিত।


❐ গুরুত্ব: বার্লিন অবরোধের প্রভাব ছিল অতিগুরুত্বপূর্ণ- 


i. ঠান্ডা লড়াইয়ের তীব্রতা বৃদ্ধি: এই অবরোধের ফলে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে ঠান্ডা লড়াই তীব্র হয়।


ii. রাশিয়ার মর্যাদাহানি: এই অবরোধ করার ফলে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক মর্যাদা হ্রাস পায়। সমগ্র বিশ্ববাসী এর নিন্দা করে।


iii. রাশিয়ার কূটনৈতিক পরাজয়: রাশিয়া যে দুই উদ্দেশ্য নিয়ে বার্লিন অবরোধ করে তা পূরণ হয়নি। রাশিয়া শেষ পর্যন্ত জনমতের চাপে অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয়। এটি স্ট্যালিন ও রাশিয়ার কূটনৈতিক পরাজয়। 


iv. মার্কিন জোট গঠন: এই অবরোধের পর পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে আমেরিকা সোভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য NATO-র মতো সামরিক জোট গঠন করে।


v. জার্মানি বিভাজন: এই ঘটনার পর জার্মানি দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পশ্চিমি রাষ্ট্রবর্গ তাদের অধিকৃত অঞ্চল নিয়ে গঠন করে Federal Republic of Germany I রাশিয়া তার অধিকৃত অঞ্চলে গঠন করে German Democratic Republic


vi. প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া: এই ঘটনার পর রাশিয়া দুই বার্লিন শহরের মাঝে কংক্রিটের প্রাচীর এবং দুই জার্মানির মাঝে কাঁটাতারের বেড়া দেয়।


❐ মূল্যায়ন: বার্লিন সংকটের পর পশ্চিমি রাষ্ট্রবর্গ আরও ঐক্যবদ্ধ হয় ও নানা সামরিক জোট গঠন করে। সোভিয়েত রাশিয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তবে জার্মানি ও তার রাজধানীর বিভাজন ছিল সাময়িক। 1989 খ্রিস্টাব্দে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। বেড়া ভেঙে 1990 খ্রিস্টাব্দে দুই জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হয়।

No comments:

Post a Comment