উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, রাওলাট সত্যাগ্রহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও । Class 12th History Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 20 November 2023

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, রাওলাট সত্যাগ্রহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও । Class 12th History Suggestion

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস



👉 ( জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দাও।)


প্রশ্নরাওলাট সত্যাগ্রহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।


🢖🢖উত্তর:

🢖🢖ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের জাতীয়তাবাদী ও বিপ্লবী আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাওলাট কমিটির সুপারিশ অনুসারে 1919 খ্রিস্টাব্দের 18 মার্চ ব্রিটিশ সরকার যে দমনমূলক আইন পাশ করে তা রাওলাট আইন নামে পরিচিত। আর এই কালা আইনের বিরুদ্ধে গান্ধিজি যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তোলেন তা রাওলাট সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।


❐ গান্ধিজির প্রতিক্রিয়া: রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গান্ধিজি বড়োলাট চেমসফোর্ডকে এই আইন কার্যকর না করার জন্য অনুরোধ করেন কিন্তু বড়োলাট গান্ধিজির এই অনুরোধ প্রত্যাখ ান করেন। এই আইনের জন্যই রাজভক্ত গান্ধিজি ইংরেজ বিরোধী বিদ্রোহীতে পরিণত হন। গান্ধিজি এই আইনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য সমগ্র ভারতব্যাপী সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দেন।


 গান্ধিজির নতুন আদর্শ: দেশব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলনের জন্য গান্ধিজির নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সভার সদর দফতর স্থাপন করা হয় বোম্বাই শহরে। গান্ধিজি আইন অমান্য করে গ্রেফতার ও কারাবরণের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনকে একটি উচ্চতর ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে। জাতীয় আন্দোলনের কর্মীদের কাছে 'সত্যাগ্রহ' কেবল মৌখিক ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশের কর্মসূচি ছিল না, সত্যাগ্রহের মাধ্যমে তিনি জাতীয় আন্দোলনের কর্মীদের গঠনমূলক কর্মের সঙ্গে যুক্ত হবার সুযোগ করে দেন। ভারতের দরিদ্রতম ব্যক্তিটিকেও এই কর্মসূচিতে যুক্ত করার জন্য এবং সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভ করার জন্য গান্ধিজি তাঁর অনুগামীদের গ্রামে পাঠান।


❐ প্রধান কেন্দ্র ও নেতৃত্ব: রাওলাট সত্যাগ্রহের প্রধান কেন্দ্র ছিল বোম্বাই প্রেসিডেন্সি। বোম্বাই ও আমেদাবাদে এই আন্দোলন চরমে ওঠে। এ ছাড়া মাদ্রাজ, অমৃতসর, লাহোর ও কলকাতায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শঙ্করলাল ব্যাঙ্কার, অনুসূয়া সারাভাই, আনসারি, সৈফুদ্দিন কিচলু, ড. সত্যপাল সিংহ এই আন্দোলনের নেতায় পরিণত হন।


❐ আন্দোলন: 1919 খ্রিস্টাব্দে 30 মার্চ গান্ধিজি এই কুখ্যাত আইনের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনকে শয়তানবাদের সঙ্গে তুলনা করেন। রাওলাট আইনের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গান্ধিজি বলছেন, 'No vakeel, no dalil, no appeal' অর্থাৎ, 'উকিল নেহি, দলিল নেহি, আপিল নেহি।' গান্ধিজি পরে তারিখ পরিবর্তন করে 30 মার্চ-এর বদলে 6 এপ্রিল ধর্মঘটের ডাক দেন। 6 এপ্রিলের ধর্মঘট ছিল ভারতের সর্বপ্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট। ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে হরতাল সংগঠিত হয়। উত্তেজিত বক্তৃতা সর্বস্ব রাজনীতির পরিবর্তে সক্রিয় প্রতিরোধের রাজনীতি শুরু হয়। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে সাধারণ মানুষ ধর্মঘটের দিন পরিবর্তনের খবর পায় না, ফলে 30 মার্চ দিল্লি, মুলতান, লাহোর ও অমৃতসরে ধর্মঘট পালিত হয়। দিল্লিতে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন মানুষ মারা যায়। পরে 7 এপ্রিলের ধর্মঘট ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। কলকাতায় কংগ্রেস ও খিলাফতপন্থীদের সমাবেশে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। বেশ কয়েকজন মারা যায়। দিল্লি ও পাঞ্জাবে পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। পরিস্থিতিকে শান্ত করার জন্য দিল্লির নেতৃবর্গ গান্ধিজিকে অনুরোধ করেন।


❐ গান্ধিজিকে গ্রেফতার: 7 এপ্রিল গান্ধিজি দিল্লিতে পৌঁছানোর জন্য যাত্রা শুরু করেন। দিল্লি সরকার গান্ধিজির দিল্লি ও পাঞ্জাবে পৌঁছানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই আদেশ অমান্য করার জন্য 10 এপ্রিল গান্ধিজিকে পালওয়াল স্টেশনে গ্রেফতার করে বোম্বাই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে সারা দেশে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। আমেদাবাদ ও বোম্বাই শহরে পুলিশের সঙ্গে জনগণের তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।


❐ জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড: 1919 খ্রিস্টাব্দে 13 এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগে রাওলাট আইনবিরোধী একটি সমাবেশের ওপর জেনারেল ও' ডায়ারের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালালে প্রায় দু-হাজার মানুষ হতাহত হয়। ইংরেজ সরকারের এই ঘৃণ্য পাশবিক আচরণের বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজদের দেওয়া 'নাইট' (Knight বা Sir) উপাধি প্রত্যাখান করেন। এই ঘটনার পর 18 এপ্রিল গান্ধিজি রাওলাট সত্যাগ্রহ প্রত্যাহার করে নেন।


 মূল্যায়ন: অনেকে মনে করেন রাওলাট সত্যাগ্রহ একটি নিষ্ফল আন্দোলন, কারণ এই আন্দোলনের ফলে রাওলাট আইন ব্রিটিশ সরকার প্রত্যাহার করে নেয়নি বা বাতিল করেনি। রাওলাট সত্যাগ্রহ ব্যর্থ হলেও তা ভারতের রাজনীতির অনেক ইতিবাচক দিকের সূচনা করে।


(i) এই আন্দোলনের ফলে প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট পালিত হয়।

(ii) গান্ধিজি জাতীয় নেতায় পরিণত হন।

(iii) কংগ্রেসের জনসমর্থন বৃদ্ধি পায়।

(iv) এই আন্দোলনের সময়ে ঘটা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর তীব্র ঘৃণা ও রোষ সৃষ্টি করে।

(v) কংগ্রেস পরবর্তীকালে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের মতো সর্বভারতীয় আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে সাহায্য করে।

No comments:

Post a Comment