উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দাও । এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করো । Class 12th History Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 21 November 2023

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দাও । এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করো । Class 12th History Suggestion

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস



👉 ( বার্লিন সংকটের কারণ ও গুরুত্ব লেখো। 4+4 )


প্রশ্ন:  জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দাও।  

অথবা, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট কী ছিল? 

অথবা, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দাও। এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করো। 4+4


🢖🢖উত্তর:

🢖🢖ভূমিকা :  ব্রিটিশ রাজত্বকালে ভারতবর্ষে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা পাশবিক ও অমানবিক ছিল 1919 খ্রিস্টাব্দের 13 এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড। এই নৃশংস ঘটনাটি ছিল ইংরেজ জাতির লজ্জা। এই ঘটনাটি উন্নত সভ্যতার মুখোশধারী সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃত চেহারাটি বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত করে।


🢖🢖 পটভূমি: নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পটভূমি রচনা করে- 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্য ও অর্থ সংগ্রহের জন্য ইংরেজ সরকার যে নির্যাতন করে তাতে পাঞ্জাবের মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল।


  'গদর' বিদ্রোহ উপলক্ষ্যে শিখদের ওপর ইংরেজ সরকার চরম নির্যাতন ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কর্মচ্যুত শিখ সেনাদের দুর্দশা সাধারণ মানুষদেরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।


❐ গান্ধিজি ও পাঞ্জাবের দুই জনপ্রিয় নেতা ড. সতপাল ও সৈফুদ্দিন কিচলুকে ইংরেজ সরকার গ্রেফতার করলে সারা পাঞ্জাব উত্তাল হয়ে ওঠে। এদের মুক্তির দাবিতে বৈশাখী উৎসবের দিন (1919 খ্রিস্টাব্দের 13 এপ্রিল) অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগের 10 হাজার নিরস্ত্র মানুষ সমবেত হয়।


❐ হত্যাকাণ্ড: জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রবেশ বা প্রস্থানের জন্য একটি মাত্র পথ ছিল। সমবেত জনতাকে কোনোরকম সতর্ক না করে মাইকেল ও' ডায়ার প্রবেশপথে 50টি স্বয়ংক্রিয় রাইফেলে 1,600 রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেন। সরকারি মতে 379 জন নিহত হয় এবং আহত হয় 1,200 জন। কিন্তু অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে 1,000 জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। সন্ধ্যার সময় 'সান্ধ্য আইন' জারি করে আহতদের সেবা করার সুযোগ ইংরেজ প্রশাসন দেয়নি। শহরে জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

                    ইংরেজ সরকার পার্শ্ববর্তী পাঁচটি জেলায় সামরিক শাসন জারি করে। নিরীহ মানুষকে কোমরে দড়ি বেঁধে প্রখর রৌদ্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে বেত্রাঘাত করে। তা ছাড়া, মার্শাল ল কমিশন গঠন করে 51 জনকে প্রাণদণ্ড দেয়। ছাত্রদের প্রখর রৌদ্রে 19 মাইল হাঁটতে বাধ্য করে। গুজরানওয়ালাতে বোমা বিস্ফোরণ করে।


▶  প্রতিক্রিয়া: জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সারা দেশ ক্রোধ, ঘৃণা ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।


❐ ভারত-সচিব মন্টেগু জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডকে 'নিবারণমূলক হত্যাকাণ্ড' (Preventive murder) বলে ড অভিহিত করেন।


❐ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর মতে জালিয়ানওয়ালাবাগের ড হত্যাকাণ্ড ভারতে এক মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় যা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিমে পরিব্যাপ্ত হয়ে সকল ভারতবাসীর হৃদয়ে ক্রোধের সঞ্চার করে।


❐ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ইংরেজদের দেওয়া 'নাইট' উপাধি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।


❐ জাতীয় কংগ্রেস তীব্র ভাষায় এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে বলে সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরস্ত্র জনগণের ওপর স্বেচ্ছাকৃত এই নির্মম অত্যাচার ভারতে ইংরেজ শাসনের ইতিহাসে বিরল। 


❐  গান্ধিজি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তাঁর ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকাতে লেখেন "এই শয়তান সরকারের সংশোধন অসম্ভব। একে ধ্বংস করতেই হবে।" ("This government cannot be mended, it must be ended.") এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গান্ধিজি ইংরেজ সরকারের 'কাইজার-ই-হিন্দ' উপাধি প্রত্যাখান করেন।


❐ ব্রিটিশ রাষ্ট্রনায়ক চার্চিলের মতে, "জালিয়ানওয়ালাবাগের শোচনীয় ঘটনার মতো ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে আর কখনও ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধুনিক ইতিহাসে এই ঘটনার তুলনা মেলে না। এই ঘটনা অতি অস্বাভাবিক, অতি পাশবিক।”


▶ গুরুত্ব: জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা-

(ⅰ) জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত করে দেয়। এই ঘটনা মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে ইংরেজদের বর্বরতা কত দূর যেতে পারে। 

(ii) এই ঘটনার পর গান্ধিজি রাওলাট সত্যাগ্রহ প্রত্যাহার করে নেন। 

(iii) তবে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে রক্তনদীর ব্যবধান তৈরি করে দেয় ফলে সারা ভারতে ইংরেজ শাসনের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। জাতীয় নেতা সুরেন্দ্রনাথ মন্তব্য করেন, (.... the horrors of Jallianwalabag kindled as conflagration throughout India)। গান্ধিজি নিজেই নিজের ডাকা আন্দোলনকে 'Himalayan Blunder' বলে চিহ্নিত করে দুঃখ প্রকাশ করেন ও 1৪ এপ্রিল আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। 

(iv) কংগ্রেস এই ঘটনার প্রতিবাদে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে ডায়ারকে দোষী সাব্যস্ত করে। অন্যদিকে ডায়ারের স্বদেশে ইংরেজ জাতির সম্মান রক্ষার্থে এরকম একটি কাজ করার জন্য ডায়ারকে পুরস্কৃত করা হয়। 

(v) এই ঘটনার প্রতিকারের জন্যই জাতীয় কংগ্রেস অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করে।

No comments:

Post a Comment