উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, দক্ষিণ ভারতে ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনে শ্রীনারায়ণ গুরুর ভূমিকা উল্লেখ করো । Class 12th History Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Saturday, 4 November 2023

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, দক্ষিণ ভারতে ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনে শ্রীনারায়ণ গুরুর ভূমিকা উল্লেখ করো । Class 12th History Suggestion

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস 



👉( দলিত শ্রেণি' কাদের বলে? ব্রিটিশ যুগে দলিত আন্দোলনগুলির বিবরণ দাও। )


প্রশ্নদক্ষিণ ভারতে ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনে শ্রীনারায়ণ গুরুর ভূমিকা উল্লেখ করো।


🢖🢖উত্তর:

🢖🢖ভূমিকা : উনিশ শতকে দক্ষিণ ভারতের ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন শ্রীনারায়ণ গুরু (1856-1928 খ্রিস্টাব্দ)। তিনি ছিলেন একাধারে সাধক, দার্শনিক ও সমাজসংস্কারক। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বেই কেরালার জাতপাতের বেড়া ভেঙে যায় ।


❐ জন্ম ও প্রথম জীবন: 1856 খ্রিস্টাব্দে ত্রিবান্দ্রমের নিকটে এজহারা বা ইজবা নামক এক অস্পৃশ্য দলিত পরিবারে শ্রীনারায়ণ গুরু জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সংস্কৃত, তামিল ও মালয়ালম ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি যে অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেন অর্থাৎ এজভা (এজভারা) সম্প্রদায়ের পোশাক, শিক্ষাদীক্ষা ও ধর্মচর্চা প্রভৃতি সকল বিষয়েই বাধানিষেধ ছিল। হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ তো দূর অস্ত, মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে পারত না। এমনকি এজভারা নিজস্ব মন্দিরেও হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রাখতে পারত না।


❐  মতাদর্শ: শ্রীনারায়ণ গুরুর আদর্শের মূলকথা ছিল ‘এক জাতি, এক ধর্ম ও এক ঈশ্বর'। (One religion, one caste and one God for mankind.) তাঁর আদর্শ তিনটি মূল নীতির ওপর নির্ভর ছিল।

(i) নিজেকে শিক্ষিত করে কুসংস্কার মুক্ত হওয়া ।

(ii) শক্তিশালী হওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া।

(iii) শিল্প স্থাপন ও বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। তাঁর সহজ-সরল জীবনযাত্রা নিয়মানুবর্তিতা ও শুদ্ধতার উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি। তাঁর মতাদর্শ প্রচার করার জন্য 1903 খ্রিস্টাব্দের 15 মে ‘শ্রীনারায়ণ যোগধর্ম পরিপালন যোগম' প্রতিষ্ঠা করেন।


❐ সংস্কার আন্দোলন :

(i) অস্পৃশ্যতা, বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন কেরালার সমস্ত অঞ্চল ভ্রমণ করে জাতিভেদ প্রথা, বর্ণবৈষম্য, অস্পৃশ্যতা ও সামাজিক অবিচারগুলির বিরুদ্ধে প্রচার করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।


(ii) এজভা সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার এবং তাদের উন্নয়নের জন্য তিনি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন।


(iii) মদ্যপানের বিরোধিতা: তিনি মদ্যপানের বিরুদ্ধে প্রচার চালান। মদ তৈরি ও মদ্যপানের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।


(iv) শিক্ষাবিস্তার: তিনি শিক্ষার মাধ্যমে অস্পৃশ্য দলিত জাতিগুলির নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়ন ঘটাবার জন্য বেশ কিছু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই বিদ্যালয়গুলির ব্যয়-নির্বাহের জন্য একটি অর্থভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিটি এজভা পরিবারকে বিবাহ বা অন্য যে-কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের সময় এই অর্থভাণ্ডারে অর্থ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করেন।


(v) মন্দির প্রতিষ্ঠা: শ্রীনারায়ণ গুরু কেরালার বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মঠ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই সকল মঠ ও মন্দিরের দরজা তিনি নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য খুলে দেন। মন্দিরগুলিতে উচ্চবর্ণের আরাধ্য দেবদেবীদের বিগ্রহ স্থাপন করেন। এই মঠ ও মন্দিরের রন্ধনশালা ও অন্যান্য কাজের জন্য অস্পৃশ্য জাতিগুলির মানুষকে নিয়োগ করেন। এর ফলে নিম্ন শ্রেণির মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস জাগরিত হয়।


(vi) ভাইকম সত্যাগ্রহ: ত্রিবাঙ্কুরের ভাইকম গ্রামে বর্ণ হিন্দুদের একটি মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্ন শ্রেণির অস্পৃশ্য হিন্দুদের চলাচল করার অধিকার ছিল না। নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য এই রাস্তা খুলে দেওয়ার দাবিতে 1924 খ্রিস্টাব্দে নারায়ণ গুরু আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলন ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। ভাইকম আন্দোলন আস্তে আস্তে ব্যাপকতা লাভ করে। গান্ধিজি এই আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগ্ধ হয়ে কেরালাতে এসে আন্দোলনকে সমর্থন করেন। অবশেষে ভাইকম সত্যাগ্রহ সফল হয়।


🢖🢖মূল্যায়ন : শ্রীনারায়ণ গুরুর আন্দোলন প্রথমে এজহারা সম্প্রদায়ের উন্নতি ও শিক্ষাবিস্তারের জন্য শুরু হলেও আস্তে আস্তে আন্দোলনটি জাতিভেদ প্রথা, বর্ণবৈষম্য, অস্পৃশ্যতা, মদ্যপান, অসবর্ণ বিবাহ ও শিক্ষাবিস্তারের মতো সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধিজির প্রতি তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ফলে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করে তাঁর আন্দোলন দক্ষিণ ভারতের অন্যতম জাতিভেদ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।

No comments:

Post a Comment