প্রশ্ন: রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে কী জানো?
🢖🢖উত্তর:
▶ ভূমিকা : আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন রশিদ আলি। 1946 খ্রিস্টাব্দে দিল্লির লালকেল্লায় এই বীর সেনানীর বিচার শুরু হয়। রাজদ্রোহের অপরাধে ক্যাপ্টেন রশিদ আলিকে ব্রিটিশ সরকার সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। এর প্রতিবাদে 11-13 ফেব্রুয়ারি কলকাতা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী হুগলি শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। কলকাতার ছাত্র সম্প্রদায় এই আন্দোলন শুরু করলেও শ্রমিক-কর্মচারী, ছাত্র-যুব, হিন্দু-মুসলিম সমস্ত মানুষের অংশগ্রহণে এটি ক্রমেই স্বতঃস্ফূর্ত গণ আন্দোলনে পরিণত হয়।
❐ ছাত্র ধর্মঘট: ক্যাপ্টেন রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে মুসলিম ছাত্র লিগ 11 ফেব্রুয়ারি কলিকাতা শহরে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। অন্যান্য ছাত্র সংগঠন যথা, বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র সংগঠন, ছাত্র ব্লক, ছাত্র ফেডারেশন ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশন এই ধর্মঘটকে সমর্থন করে।
❐ ছাত্র মিছিল: সকল ছাত্র সংগঠন একটি বিরাট মিছিল করে ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। তি হাজার হাজার ছাত্রের মিছিলের চাপে পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। পুলিশ মিছিলকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রথমে লাঠি চালায়। ছাত্ররা তাতে ভীত না হয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করে। পুলিশ ছাত্রদের মিছিলের ওপর গুলি চালায়।
❐ রশিদ আলি দিবস: ছাত্রদের মিছিলের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে সমগ্র হুগলি শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। 12 ফেব্রুয়ারি সমগ্র হুগলি শিল্পাঞ্চল ও কলকাতা শহরে শিল্প ধর্মঘট পালিত হয়। এই দিনটিকে রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
❐ জনসভা: 12 ফেব্রুয়ারি দুপুরবেলায় বর্তমান সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে একটি বিশাল জনসভা হয়। এই জনসভাতে ভাষণ দেন মুসলিম লিগ নেতা সুরাবর্দি, গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সোমনাথ লাহিড়ি। এই সভায় হিন্দু-মুসলিম সকল শ্রেণির মানুষ যোগ দেয়। সভা শেষ করার পর লক্ষ লক্ষ মানুষ মিছিল করে ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে এগিয়ে যায়। কলিকাতার অসামরিক শাসন একেবারে ভেঙে পড়ে। মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। চারিদিকে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। এই মিছিলেরই শহিদ রামেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একটি কবিতা লেখেন। এই মিছিলে থেকেই কিশোর কবি সুকান্ত লেখেন-
"বিদ্রোহ আজ,
বিদ্রোহ চারিদিকে,
আমি যাই তারই
দিন পঞ্জিকা লিখে।"
❐ দমননীতি: বিক্ষোভ দমনের জন্য ইংরেজ সরকার সৈন্যবাহিনীকে নিয়োগ করে। জনতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সৈন্যবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। সরকারি হিসাবে এই ক-দিনের আন্দোলন দমন করার জন্য মিলিটারি পুলিশের গুলিতে 84 জন নিহত হয়, 300 জন আহত হয়। বেসরকারি মতে নিহতের সংখ্যা ছিল 200 জনের বেশি এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়।
▶▶ মূল্যায়ন: রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে কলকাতায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে জনরোষের সৃষ্টি হয় তা ভারতের জনমানসে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। আগস্ট আন্দোলন ব্যর্থ হবার পর ঝিমিয়ে পড়া ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলন পুনরায় ঘুমন্ত দৈত্যের মতো জেগে ওঠে। কলকাতার ব্রিটিশ শাসনকে তা পঙ্গু করে দেয়। এই বিক্ষোভের ব্যাপকতা দেখে ছোটোেলাট গোয়েন্দা অধিকর্তাকে বলেন এইরকম ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব তিনি এদেশে আর দেখেননি। অধ্যাপক গৌতম চট্টোপাধ্যায় এই গণ-আন্দোলনকে 'প্রায়-বিপ্লব' বলেছেন। আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনানীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ক্যাপ্টেন রশিদ আলিও মুক্তিলাভ করেন, আন্দোলন সফল হয়।
No comments:
Post a Comment