উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে মুজিবর রহমানের ভূমিকা | Class 12th History Suggestion - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 6 February 2024

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে মুজিবর রহমানের ভূমিকা | Class 12th History Suggestion

 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস







প্রশ্ন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে মুজিবর রহমানের  ভূমিকা আলোচনা করো। [HS 2015]

🢖🢖উত্তর:

▶ ভূমিকা :বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে শেখ মুজিবর রহমান এক অবিস্মরণীয় নাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর ত্যাগ, তিতিক্ষা, দেশপ্রেম, বিপ্লব-নিষ্ঠা, অদম্য মনোবল ও চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য দেশবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বেই বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও অত্যাচারের হাত থেকে বঙ্গবাসীদের মুক্ত করে তিনি 'বঙ্গবন্ধু' রূপে পরিচিত হন।


❐ জন্ম ও প্রথম জীবন: 1921 খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে মুজিবর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান গোপীগঞ্জ সিভিল কোটের সেরেস্তাদার ছিলেন। তিনি মাদারিপুর বিদ্যালয়ে পাঠ সমাপন করেন। আইন পড়ার জন্য তিনি 1940 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজে) ভরতি হন এবং সারা ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মীতে পরিণত হন। 1943 খ্রিস্টাব্দে হুসেন সৈয়দ সুরাবর্দীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। তিনি মুসলিম লিগের পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবির আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। 

1945 খ্রিস্টাব্দে তিনি ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক নির্বাচিত হন। 1947 খ্রিস্টাব্দে তিনি আইন পাশ করেন ও দেশ ভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভরতি হন। এই সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লিগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় ছাত্র নেতায় পরিণত হন। সমাজতন্ত্রই দরিদ্রতা থেকে মুক্তির সমাধান করতে পারবে এই মতাদর্শে তিনি বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। 1949 খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে মুজিবর বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু করেন। সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে। জেলে এর প্রতিবাদে তিনি দীর্ঘ 13 দিন অনশন করেন। ছাত্র আন্দোলনের চাপে সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বহিষ্কার করে।


❐ আওয়ামি লিগ প্রতিষ্ঠা: মুজিবর মুসলিম লিগ ত্যাগ করে সুরাবর্দী ও মৌলানা ভাসানির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে 1949 খ্রিস্টাব্দে আওয়ামি মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ওই দলের পূর্ব বাংলা ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদকের পদে নির্বাচিত হন। অল্পদিনের মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার আওয়ামি মুসলিম লিগের দ্রুত প্রসার ঘটে। একজন সংগঠক ও নেতা- রূপে জনমানসে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। 1953 খ্রিস্টাব্দে তিনি এই দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে নির্বাচিত হন। সুরাবর্দী পূর্ব বাংলার সমাজতান্ত্রিক দল ও অন্যান্য কয়েকটি ছোটো দল নিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। 1954 খ্রিস্টাব্দের প্রাদেশিক নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কিন্তু সাংগঠনিক প্রতিবাদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করে এবং যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার পতন ঘটে।


❐ সংবিধান সভায় প্রতিবাদ: 1955 খ্রিস্টাব্দে মুজিবর পাকিস্তানের সংবিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। সংবিধান সভা পাকিস্তানকে একটি 'ইসলামিক প্রজাতন্ত্র' রূপে ঘোষণা করে। পাকিস্তানে পশ্চিমি ধাঁচের এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে পূর্ব বাংলার নতুন নামকরণ করে পূর্ব পাকিস্তান। মুজিবর এর তীব্র প্রতিবাদ করে বলে পূর্ব বাংলার মানুষের ভাষা, সংস্কৃতির একটি স্বতন্ত্র ঐতিহ্য আছে। তাই এর সরকারি ভাষা এবং নামকরণ বাংলা হওয়া উচিত। এই প্রস্তাব উপেক্ষিত হলে মুজিবর বাংলায় ফিরে আন্দোলন শুরু করেন। 

1956 খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের হয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে মুজিবর দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিদমন ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হন, কিন্তু 1957 খ্রিস্টাব্দে পদত্যাগ করে দলীয় সংগঠনের সর্বক্ষণের কর্মীরূপে যোগ দেন। দেশবিরোধী কাজের জন্য আয়ুব খানের নির্দেশে 1958 খ্রিস্টাব্দে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। 1961 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কারাবাসের পর মুক্তি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ' নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এর জন্য পুনরায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।


❐  আওয়ামি লিগের পুনর্গঠন: 1963 খ্রিস্টাব্দে সুরাবর্দীর মৃত্যুর পর মুজিবর পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগের সর্বোচ্চ নেতায় পরিণত হন। এরপর তিনি দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেন ও দলীয় পুনর্গঠন করেন। ধর্মনিরপেক্ষ ও অ-মুসলিমদের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।


 পাকিস্তানের জাতীয় নেতা: পাকিস্তানের জাতীয় নেতা হিসেবে মুজিবর জেনারেল আয়ুব খানের অগণতান্ত্রিক নীতির প্রতিবাদ করেন। অন্যান্য দলগুলির সহায়তায় 1964 খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আয়ুব খানের বিরুদ্ধে ফতিমা জিন্নাকে প্রার্থী করে তিনি প্রচার শুরু করেন। কিন্তু নির্বাচনের দু-সপ্তাহ আগে আয়ুব খানের নির্দেশে মুজিবরকে গ্রেফতার করে একবছর জেলে বন্দি করে রাখা হয়। এই সময়ে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস, পুলিশ, মিলিটারিতে নিয়োগে পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করা হয়। বাংলার রাজস্ব দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান সমৃদ্ধ হয়।


❐ ছ-দফা দাবি: জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাংলার মানুষের প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য রাষ্ট্রপতি আয়ুব খানের কাছে মুজিবর ছ-দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল-বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া, পূর্ব পাকিস্তানকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে, দুই পাকিস্তান নিয়ে একটি ফেডারেল শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সর্বোপরি পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বলা বাহুল্য এই দাবিগুলি উপেক্ষিত হয়।


❐ 1970 নির্বাচন: ইতিমধ্যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। জেনারেল আয়ুব খানকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল ইয়াহিয়া খান শাসনক্ষমতা দখল করেন। মার্কিন চাপে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এই নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের 162টি আসনের মধ্যে মুজিবর রহমানের আওয়ামি লিগ 160টি আসনে জয়লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের 3৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপ্লস পার্টি মাত্র ৪১টি আসন পায়।


❐ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা: 1971 খ্রিস্টাব্দে ও মার্চ মুজিবরের নেতৃত্বে দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। 7 মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক সমাবেশে মুজিবর পূর্ব বাংলার মুক্তিসংগ্রামের সূচনা করেন। বাধ্য হয়ে ইয়াহিয়া খান মুজিবরের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে 23 মার্চ সমগ্র বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। 25 মার্চ মুজিবর স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার পর পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়।


❐ মুক্তিযুদ্ধের সূচনা: মুজিবরের গ্রেফতারের সংবাদে সমগ্র বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। বিদ্রোহ দমন করার জন্য ইয়াহিয়া খান সেনাবাহিনী নামায়। নির্বিচারে লাঠি, গুলি চলে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণের ভয়ে ভারতে বিশেষত কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করে। কলকাতায় গঠিত হয় বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য সৈন্যবাহিনী পাঠান। ভারতীয় সেনাবাহিনী মাত্র কয়েকদিনের যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করে 16 ডিসেম্বর 90,000 সৈন্যসহ পাকিস্তান সেনাপতি আত্মসমর্পণ করেন। ওই দিনই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আন্তর্জাতিক চাপে 1972 খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান মুজিবর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন শেখ মুজিবর রহমান।

No comments:

Post a Comment