সপ্তম শ্রেণীর
ভূগোল
প্রশ্ন: ক্লগিং কী?
🢖🢖উত্তর: প্লাস্টিক জৈব অবিশ্লেষ্য হওয়ায় নষ্ট হয় না। মানুষের ব্যবহৃত এই প্লাস্টিক নর্দমার তলদেশে ও মুখে জমতে থাকে। ফলে নর্দমার বর্জ্য পদার্থ মিশ্রিত জল নিষ্কাশিত হতে পারে না। এই ঘটনাকে ক্লগিং বা নর্দমার বাধা বলে।
প্রভাব: নর্দমায় নোংরা জল, মল মূত্র জমে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। বর্ষায় নর্দমার বর্জ্য জল ছাপিয়ে গিয়ে রাস্তায় বাড়িতে প্রবেশ করে। নর্দমায় জল আবদ্ধ হয়ে থাকার ফলে মশা মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পায় এবং মানুষ নানান রোগে আক্রান্ত হয়।
প্রশ্ন: কতগুলি উদ্ভিদের নাম লেখো যেগুলি জলের থেকে নোংরাকে আলাদা করে ।
🢖🢖উত্তর: কড়াইশুঁটি, মটর ডাল, অড়হর ডাল প্রভৃতি গাছ এবং পাতাঝাঝি, কচুরিপানা, ক্লোরেল্লা প্রভৃতি শৈবাল জলের থেকে নোংরাকে আলাদা করে।
প্রশ্ন: খনিজ তেল থেকে কীভাবে জল দূষিত হয়? ( Oil Spilling কী?)
🢖🢖উত্তর: সামুদ্রিক তৈলখনি অঞ্চলে বা সমুদ্রে খনিজ তেল পরিবহনকারী জাহাজ বা ট্যাঙ্কারগুলিতে দুর্ঘটনা ঘটলে অথবা খনিজ তেল পরিবহনকারী পাইপ ফেটে গেলে খনিজ তেল সমুদ্রের জলে মিশে জলকে দূষিত করে। খনিজ তেল জলের সঙ্গে অক্সিজেনকে ভালোভাবে মিশতে দেয় না। ফলে সামুদ্রিক জীবেরা মারা যায়। এই ঘটনা Oil Spilling নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী সমুদ্রে প্রতিবছর প্রায় 3.2 মিলিয়ন মেট্রিকটন খনিজতেল দ্বারা সমুদ্রে Oil Spilling সংক্রমণ ঘটে থাকে।
প্রশ্ন: লেক ঘাতক কাকে বলে?
🢖🢖উত্তর: অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাবে লেক (হ্রদ), পুকুর প্রভৃতি জলাশয়ের জলের অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়। জলের pH-এর মান 5.6-এর কম হয়ে গেলে জলে বসবাসকারী জীবকুল প্রাণ হারাতে থাকে। একারণে অম্লবৃষ্টি বা অ্যাসিড বৃষ্টিকে লেক ঘাতক বলা হয়।
প্রশ্ন: খর জল (Hard Water) কাকে বলে?
🢖🢖উত্তর:যে জলে সাবান ঘষলে সহজে দ্রবীভূত হয়ে ফেনা উৎপন্ন করে না, তাকে বলে খর জল। এই জলে নানা ধাতব লবণ যেমন- ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ইত্যাদির বাইকার্বনেট ক্লোরাইড, সালফেট লবণ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।
উদাহরণ: টিউবওয়েলের জল, নদীর জল ইত্যাদি।
প্রশ্ন: মৃদু জল (Soft Water) কাকে বলে?
🢖🢖উত্তর: যে জলে সাবান ঘষলে তা সহজে দ্রবীভূত হয়ে ফেনা উৎপন্ন করে তাকে বলে মৃদু জল। এই জলে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ইত্যাদির বাইকার্বনেট, ক্লোরাইড, সালফেট লবণ দ্রবীভূত থাকে না।
উদাহরণ: বৃষ্টির জল, পতিত জল ইত্যাদি।
প্রশ্ন: জলজ বাস্তুতন্ত্র বলতে কী বোঝো?
🢖🢖উত্তর: জলে বসবাসকারী প্ল্যাংকটন, শ্যাওলা, ঝাঁঝি, ছোটো বড়ো মাছ, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস প্রভৃতি জীবজ উপাদান এবং মাটি, জল, বায়ু, 02. CO₂, সূর্যালোক প্রভৃতি অজীবজ উপাদানগুলি পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে যে সুষ্ঠু বসবাস রীতি গড়ে তোলে, তাকে জলজ বাস্তুতন্ত্র বলে। যেমন- পুকুরের বাস্তুতন্ত্র, হ্রদের বাস্তুতন্ত্র, নদীর বাস্তুতন্ত্র প্রভৃতি।
প্রশ্ন: পারস্য উপসাগরীয় তেল দূষণ সম্পর্কে লেখো।
🢖🢖উত্তর:1991 সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাক ও কুয়েত দেশের বহু খনিজ তেলের কূপ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রচুর পরিমাণে খনিজ তেল পারস্য উপসাগরে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে পারস্য উপসাগর ও সংলগ্ন সমুদ্রের জল দূষিত হয়ে পড়ে এবং প্রচুর মাছ ও অন্যান্য জলজ জীব মারা যায়।
প্রশ্ন: হাইপোথারমিয়া কী?
🢖🢖উত্তর: দুর্ঘটনাবশত খনিজ তেল পরিবহণকারী জাহাজ বা ট্যাংকার থেকে খনিজ তেল সমুদ্রজলে মিশে থাকে। এই তেল মিশ্রিত জলে কোনো পাখি এসে বসলে পাখির গায়ে পাখনায় তেল জড়িয়ে যায়। ফলে পাখি আর উড়তে পারে না। অনেক সময় জলে পড়ে থাকার ফলে পাখির শরীরের উয়তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে এবং একসময় পাখিটি মারা যায়। জলে তৈলদূষণের কারণে জীবের এই মৃত্যু প্রক্রিয়াকে হাইপোথারমিয়া বলে।
প্রশ্ন: ডিসলেক্সিয়া কেন হয়?
🢖🢖উত্তর: কলকারখানা, যানবাহন প্রভৃতি থেকে নির্গত সিসা নামক বিষাক্ত ধাতু জল ও মাটিতে মিশে তা দূষিত করে। জল এবং খাদ্যের মাধ্যমে এই সিসা আমাদের দেহে প্রবেশ করে যে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে, তার নাম ডিসলেক্সিয়া।
প্রশ্ন: মিনামাটা ব্যাধি কী?
🢖🢖উত্তর: 1932 সালে জাপানের মিনামাটা উপসাগরে একটি রং কারখানা থেকে পারদ দূষণের জন্য ওই পারদ সামুদ্রিক মাছের দেহে কেন্দ্রীভূত হয়। উপকূলের অধিবাসীরা ওই মাছ খাওয়ার ফলে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং তাদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হয় ও অনেকে বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। একে মিনামাটা ব্যাধি বলা হয়।
প্রশ্ন: 'ব্ল্যাকফুট রোগ' কী?
🢖🢖উত্তর: আর্সেনিকের প্রভাবে দূষিত জল পানীয় ও খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করার ফলে হাতের চেটো ও পায়ের পাতায় কালো ছোপ-ছোপ দাগের সৃষ্টি হয়। একেই ব্ল্যাকফুট রোগ বলে। এই রোগে আক্রান্ত মানুষের ত্বকের উদ্দীপনা ধীরে ধীরে কমে যায়।
প্রশ্ন: 'ইতাই-ইতাই' বা 'আউচ-আউচ' রোগ কাকে বলে?
🢖🢖উত্তর: জলে ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মানবদেহে ক্যাডমিয়ামের সংক্রমণ হয়। এর ফলে যে রোগ সৃষ্টি হয় তাতে অস্থি ভঙ্গুর হয়ে যায় ও অস্থিমজ্জার সমস্যা ঘটে। বসতে গেলে বা উঠে দাঁড়াতে মানুষের অস্থিসন্ধিতে অসহ্য যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। এই রোগটিকে 'ইতাই-ইতাই' বা 'আউচ-আউচ' রোগ বলে।
প্রশ্ন: BOD কী?
🢖🢖উত্তর: পুরো নাম Biological Oxygen Demand। এর দ্বারা জলদূষণের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কোনো জলাশয়ে জীবের আধিক্য প্রত্যক্ষভাবে মাপা যায় না। সেই জলে উপস্থিত অতি ক্ষুদ্র প্রাণীদের অক্সিজেনের চাহিদা তার জৈব ক্ষয়িষু পদার্থের উপস্থিতির পরিমাণ জানতে সাহায্য করে। এই চাহিদাকে জৈব রাসায়নিক চাহিদা বা BOD বলে।
প্রশ্ন: আর্সেনিক দূষণের কারণগুলি লেখো।
🢖🢖উত্তর: আর্সেনিক দূষণের কারণগুলি হল- অতিরিক্ত ভৌমজল উত্তোলন, অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যামোনিয়া, ফসফেট, সালফেট সমৃদ্ধ রাসায়নিক সারের ব্যবহার, অতিরিক্ত কীটনাশক, আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক ব্যবহার, অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, সিসা, সোনা নিষ্কাশনের সময় এবং সাবান, ব্যাটারি, রং ও ওষুধ তৈরির কারখানা থেকেও আর্সেনিক দূষণ ঘটে।
প্রশ্ন: আর্সেনিক দূষণ প্রতিকারের উপায়গুলি লেখো।
🢖🢖উত্তর: আর্সেনিক দূষণ প্রতিকারের উপায়গুলি হল- মাত্রাতিরিক্ত ভৌমজল উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। আর্সেনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফটকিরি ও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে। সঠিক গভীরতায় নলকূপ বসাতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর নলকূপের জলের আর্সেনিকের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। হবে এতে আর্সেনিকের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। কীটনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। জল ফুটিয়ে খেতে আর্সেনিকসমৃদ্ধ
প্রশ্ন: ORS কী?
🢖🢖উত্তর: ORS-এর পুরো কথা হল ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন। ডায়ারিয়া বা বারবার পাতলা পায়খানা, বমি হলে রোগীকে ORS দেওয়া হয়। কারণ, এসময় রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ও খনিজ লবণ বেরিয়ে যায়। যার থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বাড়িতে জল ফুটিয়ে তাতে চিনি ও লবণ মিশিয়ে ORS তৈরি করা যায়। আবার ORS ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। কেনা ORS-এ সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লবণ মেশানো থাকে।
প্রশ্ন: হলদি নদীর মোহানায় ইলিশ মাছ কম দেখা যায় কেন?
🢖🢖উত্তর: হলদি নদীর মোহানায় অর্থাৎ হলদি ও হুগলি নদীর মিলনস্থলে গড়ে উঠেছে হলদিয়া পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে বিকাশ লাভ করেছে বহু সংখ্যক অনুসারী শিল্প। সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত হলদিয়া শিল্পাঞ্চল। এই বিশাল শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য রাসায়নিক পদার্থ প্রতিনিয়ত হলদি নদীতে মিশছে। ফলে নদী জলের গুণমান ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এই কারণে হলদি নদীর মোহানায় ইলিশ মাছের আনাগোনা কমে গেছে।
No comments:
Post a Comment