সপ্তম শ্রেণী বাংলা আত্মকথা রামকিঙ্কর বেইজ প্রশ্ন এবং উত্তর || Attakatha by Ramkinkgar Baij || Class 7 || Questions and Answers - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 17 December 2024

সপ্তম শ্রেণী বাংলা আত্মকথা রামকিঙ্কর বেইজ প্রশ্ন এবং উত্তর || Attakatha by Ramkinkgar Baij || Class 7 || Questions and Answers

  


আত্মকথা 
রামকিঙ্কর বেইজ




👉(সপ্তম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর আঁকা লেখা সহায়িকা)



⏹ লেখক পরিচিতিঃ
“ রামকিঙ্কর পরিবারের একমাত্র ছেলে , যাকে এখনও জাত পেশা ক্ষৌরকার্যে লাগানো হয়নি । ওকে স্কুলে দেওয়া হয়েছে । প্রত্যাশা , ও লেখাপড়া শিখবে ” । ‘ দেখি নাই ফিরে ’ — সমরেশ বসু প্রখ্যাত ভাস্কর এবং চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ - এর জন্ম ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে । বাঁকুড়া জেলার কামারডাঙা গ্রামের যুগীপাড়ায় বসতি । জাতিতে তিনি পরামাণিক । বাবা চণ্ডীচরণ পুত্র রামপদকে জাত ব্যাবসা ক্ষৌরকর্মে নিয়োজিত করলেও রামকিঙ্করকে ক্ষৌরকর্মে যুক্ত করেননি । ছোটোবেলা থেকেই রামকিঙ্কর ছিলেন ছবি আঁকায় পারদর্শী । তিনি দেবদেবীর ছবি আঁকতেন । কামার - কুমোরদের কাজেও আকৃষ্ট ছিলেন । পুতুলগড়া , থিয়েটারের সিন তৈরি , ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত শিল্পী রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে শন্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন । তাঁর আঁকা ছবি দেখে নন্দলাল বসু বলেছিলেন , “ তুমি সবই জানো , আবার এখানে কেন ? ” সারাজীবন তিনি অজস্র ছবি এঁকেছেন , মূর্তি গড়েছেন । তাঁর ছবিতে , ভাস্কর্যে রাঢ় দেশের মাটি ও মানুষের প্রাধান্য লক্ষ করা যায় । প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিল্পকলার নানা বিশেষত্ব তাঁর কাজে ধরা পড়েছে । শান্তিনিকেতনে তাঁর গড়া বিখ্যাত মূর্তিগুলির মধ্যে রয়েছে —‘সুজাতা ’ , ‘ হাটের সাঁওতাল পরিবার ’ , ‘ গান্ধিজি ’ , ‘ বুদ্ধদেব ’ , ‘ কাজের শেষে সাঁওতাল রমণী ' ইত্যাদি । ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারকর্তৃক ‘ পদ্মভূষণ ’ সম্মানে তিনি ভূষিত হন । ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ বিশ্বভারতী ’ তাঁকে ‘ দেশিকোত্তম ’ উপাধিতে ভূষিত করে । ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেন ।


পাঠপ্রসঙ্গঃ
কোনো সাহিত্যিক যখন তাঁর নিজের জীবনের কথা সাহিত্যে তুলে ধরেন , তখন তা আত্মজীবনী বা আত্মচরিতমূলক রচনা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে । ‘ আত্মকথা ’ গদ্যাংশে লেখক রামকিঙ্কর বেইজ তাঁর শৈশবকাল থেকে বড়ো হয়ে ওঠা পর্যন্ত নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে রচনাটিকে মনোগ্রাহী করে তুলেছেন । পাঠক হিসেবে তাঁর গ্রাম্য জীবন , শান্তিনিকেতনের জীবন এবং শিল্পী হিসেবে বড়ো হয়ে ওঠার নানা পথের হদিস পেয়ে আমরাও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছি ।


বিষয় সংক্ষেপঃ
লেখক গ্রামের ছেলে । শৈশব থেকেই তাঁর ছবি আঁকার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল । বাড়ির দেয়ালে টাঙানো দেবদেবীর ছবি দেখে তিনি তা আঁকতে চেষ্টা করতেন । মূর্তি গড়ার কাজেও তাঁর দক্ষতার পরিচয় মেলে । লেখকের বাড়ির পাশে কুমোরপাড়া ছিল । সেখান থেকে তাঁর মাটির নানা কাজ দেখার অভ্যাস তৈরি হয় । আঁকার জন্য যে রংতুলির প্রয়োজন হত তা নানান জায়গা থেকে তিনি সংগ্রহ করতেন । আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং অঙ্কনবিদ্যায় পারদর্শিতার জন্য বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন । বাঁকুড়াতে ম্যাট্রিক পাশ করার পর ন্যাশনাল স্কুলে ভরতি হয়ে কংগ্রেস দলের হয়ে কাজ করতে শুরু করেন । এইসময় বেশ কিছু মহাপুরুষের ছবি ও বাণী অয়েল পেন্টিং - এর মাধ্যমে এঁকেছিলেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ প্রবাসী ’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় । তারপর তিনি চলে আসেন শান্তিনিকেতনে । সেখানে আচার্য নন্দলাল বসুর নির্দেশেই সব কাজ পরিচালিত হত । এখানে ছাত্রদের অ্যানাটমি ও মাস্ল সম্বন্ধেও শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল । লেখক সেখানে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন । নন্দলালবাবু ছিলেন ওরিয়েন্টাল আর্টের প্রবর্তক । লেখক রামকিঙ্করের বেশিরভাগ ছবি ছিল খুবই সাধারণ , তবে তা অনেকটা নন্দলালবাবুর পরোক্ষ প্রভাবে । অয়েল পেন্টিং - এ আঁকা সুন্দর ছবিটি — গার্ল অ্যান্ড দ্য ডগ । কারণ , নন্দলালবাবুর সাদামাটা সুরটা লেখককে আশ্চর্যরকমভাবে আকর্ষণ করত ।


নামকরণঃ
মানবসমাজে বাস করতে গেলে যেমন মানুষের একটা নাম জরুরি , তেমনি সাহিত্যরচনারও নামকরণ অত্যন্ত জরুরি । এটি এমন একটা বিষয় , যা তার পরিচয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শর্ত বলে মনে করা যেতে পারে । মানুষের নামকরণ যেমন খুশি রাখা যেতে পারে , কিন্তু সাহিত্যের নামকরণে তা চলবে না । কেন না , সাহিত্যের নামকরণের মধ্য দিয়ে সেই গল্প বা কবিতার মূলভাবটি যেমন ধরা পড়ে , তেমনি সাহিত্যিকের মনোভাবও স্পষ্ট বোঝা সম্ভব হয় । আমাদের আলোচ্য ‘ আত্মকথা ' রচনাটির মধ্যে সেই ভাব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে । ‘ আত্মকথা ’ শব্দের অর্থ হল নিজের কথা । লেখক এই রচনায় নিজের কথাই বলেছেন । খুব ছেলেবেলা থেকেই তিনি আঁকতে ভালোবাসতেন । বাড়ির দেয়ালে টাঙানো দেবদেবীর ছবি দেখে তিনি আঁকতে শুরু করেছিলেন ।
কুমোরপাড়ায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে তাদের দেখে দেখে নিজেও মাটির নানান মূর্তি তৈরিতে হাত পাকিয়েছিলেন । পারিবারিক অবস্থা ভালো না হলেও নিজের আঁকার দক্ষতার জন্য বিনা বেতনে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন । পড়াশোনার থেকে আঁকার প্রতিই আগ্রহ ছিল বেশি । সারাজীবন তিনি জ্ঞানীগুণী মানুষের সান্নিধ্যলাভ করেছেন । শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন আচার্য নন্দলাল বসুর সঙ্গে থেকে । সেখানেই প্রথম তিনি অয়েল পেন্টিং - এর কাজ করেন । সঠিক অর্থে তিনি একজন শিল্পী । কেমনভাবে তিনি শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন তার সুন্দর নিখুঁত বর্ণনা ধরা পড়েছে তাঁর ‘ আত্মকথা’র মধ্যে । সংগত কারণেই গদ্যাংশটির ‘ আত্মকথা ’ নামকরণটি যথাযথ ও সার্থক হয়েছে ।



একটি বাক্যে উত্তর দাও।

1. কী কী দিয়ে শিল্পী রামকিঙ্কর রঙের প্রয়োজন মেটাতেন?

উত্তর: গাছের পাতার রস, বাটনা-বাটা শিলের হলুদ, মেয়েদের পায়ের আলতা ও মুড়ি-ভাজা খোলার চাঁছা ভুসোকালি দিয়ে শিল্পী রামকিঙ্কর রঙের প্রয়োজন মেটাতেন।


2. কার সৌজন্যে রামকিঙ্করের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের যোগাযোগ হয়?

উত্তর: ‘প্রবাসী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে রামকিঙ্করের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের যোগাযোগ হয়।


3. শান্তিনিকেতনের আচার্য নন্দলাল বসু কাজের ক্ষেত্রে কেমন মনোভাব দেখাতেন?

উত্তর: শান্তিনিকেতনের কলাভবনের আচার্য নন্দলাল বসু কাজের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে সবসময় আগ্রহী ছিলেন।


4. নন্দলাল বসুর কাজের কোন্ দিকটা শিল্পী রামকিঙ্করকে বেশি প্রভাবিত করেছিল? 

উত্তর: নন্দলাল বসুর কাজের সাদামাটা সুরটাই শিল্পী রামকিঙ্করকে বেশি প্রভাবিত করেছিল।


5.  নিম্নলিখিত ব্যক্তি ও বিষয়গুলি নিয়ে দু-একটি বাক্য লেখো: নন্-কোঅপারেশন মুভমেন্ট, অয়েল পেন্টিং, আচার্য নন্দলাল বসু, ল্যান্ডস্কেপ।

উত্তর: নন্-কোঅপারেশন মুভমেন্ট: ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে নন্-কোঅপারেশন মুভমেন্ট বা অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। ‘জাতির জনক’ মহাত্মা গান্ধি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে এই আন্দোলনের ডাক দেন।

অয়েলপেন্টিং: অয়েলপেন্টিং-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল তৈলচিত্র। রং ও তেল ব্যবহার করে এই ছবি আঁকা হয়। আচার্য নন্দলাল বসু: আচার্য নন্দলাল বসু হলেন ভারতবর্ষের বিখ্যাত এক ভাস্কর ও শিল্পী। তিনি শান্তিনিকেতনের কলাভবনের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁকে ওরিয়েন্টাল আর্টের পথপ্রদর্শক বলা হয়।

ল্যান্ডস্কেপ: ল্যান্ডস্কেপ (Landscape) কথাটির অর্থ প্রাকৃতিক দৃশ্য। প্রকৃতির বিচিত্র রূপ শিল্পীর কল্পনায় ও নিপুণ তুলির টানে ক্যানভাসের ওপর যে দৃশ্যপট তৈরি করে, তাকেই সাধারণভাবে ল্যান্ডস্কেপ বলা হয়।


নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো

1. “ভিসুয়াল আর্টে আমার প্রথম বর্ণপরিচয়।”—–—শিল্পী রামকিঙ্করের ছবির সঙ্গে প্রথম বর্ণপরিচয় হয়েছিল কীভাবে?

উত্তর: নিজের আত্মকথায় শিল্পী রামকিঙ্কর জানান, শিশুকাল থেকেই তাঁর চোখে পড়ত তাঁদের বাড়িঘরের চারদিকের দেয়ালে টাঙানো নানান দেবদেবীর ছবি। তখন থেকেই ছবির প্রতি তাঁর আকর্ষণ। শৈশবে দেখা সেইসব ছবি তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ‘কপি’ করতেন। এইভাবেই ‘ভিসুয়াল আর্ট’ বা চিত্রকলার সঙ্গে রামকিঙ্করের প্রথম ‘বর্ণপরিচয়’।


2. “জেনারেল লাইব্রেরির উপরতলায় কলাভবনে নিয়ে গেলেন”—কে কাকে নিয়ে গিয়েছিলেন? তারপর কী ঘটেছিল?

উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: ‘প্রবাসী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের জেনারেল লাইব্রেরির উপরতলায় কলাভবনে রামকিঙ্কর বেইজকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

● পরবর্তী ঘটনা: তারপর রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় কলাভবনের আচার্য নন্দলাল বসুর সঙ্গে রামকিঙ্করের পরিচয় করিয়ে দেন। ।

3. যতদূর মনে হচ্ছে—গার্ল অ্যান্ড দ্য ডগ।” কার উক্তি? ‘গার্ল অ্যান্ড দ্য ডগ’ কীসের নাম? তিনি কীভাবে এ ধরনের কাজ শিখলেন?

‘উত্তর: বক্তা: আলোচ্য উক্তিটি শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের।

নাম: ‘গার্ল অ্যান্ড দ্য ডগ’ হল রামকিঙ্কর বেইজের একটি বিখ্যাত অয়েলপেন্টিং বা তৈলচিত্রের নাম।

কাজ শেখার উপায়: অয়েলপেন্টিং-এর কাজ শান্তিনিকেতনে রামকিঙ্করই প্রথম শুরু করেন। এই বিদ্যা বা ছবি আঁকার কৌশল তাঁকে হাতে ধরে কেউ শেখাননি। সম্পূর্ণ নিজে নিজেই এই কলা তিনি রপ্ত করেছিলেন। অয়েলপেন্টিং বা তেল রং কেনার জন্য তিনি যখন দোকানে যান তখন দোকানদার তাঁকে শুধু জানান, টিউবের রং ও পাত্রের তেলে তুলি ডুবিয়েই রং করতে হয়। এইভাবেই তিনি অয়েলপেন্টিং-এর কাজ শিখেছিলেন।


4. “এই সাদামাটা সুরটাই আমাকে ভীষণভাবে টানে।”—কাকে টানে? ‘সাদামাটা সুর’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? তাঁকে এই সুর টানে কেন?

উত্তর:

● উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: আচার্য নন্দলালবসুর আঁকার ‘সাদামাটা সুরটাই’ লেখক রামকিঙ্কর বেইজকে টানে।

● ‘সাদামাটা সুর’-এর অর্থ: নন্দলাল বসু একেবারে সাধারণ চরিত্র, পরিচিত প্রকৃতি, গ্রামের পরিপূর্ণ রূপ দিয়ে অসাধারণ ছবি সৃষ্টি করতেন। আচার্য নন্দলালের ছবির এই বৈশিষ্ট্যটি রামকিঙ্করকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল। একেই রামকিঙ্কর ‘সাদামাটা সুর’ বলে উল্লেখ করেছেন।

● এই টানার কারণ: রামকিঙ্কর বলেছেন, নন্দলালের আঁকা ছবিগুলির ভেতর যে সাদামাটা সুর রয়েছে, সেই সুরটিই তাঁকে টানত। এর কারণ তাঁর সমস্ত ছবির প্রেক্ষাপটেই থাকত সাধারণ চরিত্র আর একেবারে ‘কমন ল্যান্ডস্কেপ’, যা দিয়ে গ্রামের সম্পূর্ণরূপ অতি অনায়াসে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটে উঠত।


[Advance Study]

১.“ মূর্তিগড়ার ইতিহাসও খুব মজার । ” — কোন্ ব্যাপারটি কেন মজার ?
উত্তরঃ ছেলেবেলা থেকেই মূর্তি গড়ার প্রতি রামকিঙ্করের বেশ টান ছিল । এব্যাপারে তাঁর উৎসাহ জেগেছিল বাড়ির পাশের কুমোরপাড়া থেকে । এপ্রসঙ্গে নিজের মূর্তিগড়ার যে মজার কথা তিনি জানিয়েছেন , তা হল — তাঁদের বাড়ির সামনের রাস্তা লাল - মোরামে ঢাকা থাকত । একদিন তিনি দেখলেন , হঠাৎ বৃষ্টির পরে উপরের মোরাম ধুয়ে রাস্তায় নীলরঙের মাটি বেরিয়ে এসেছে । সেই মাটি খাবলে তুলে তিনি নানারকম পুতুল তৈরি করেছিলেন ।


২.“ এই সবের মধ্যে কখন নন - কোঅপারেশন আন্দোলন এসে গেল । ” — সে - সময়ের কথা পাঠ্য রচনায় কীভাবে এসেছে ?
উত্তরঃ জাতির জনক মহাত্মা গান্ধির ডাকে সেকালে যে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল , তাই ‘ নন্ - কোঅপারেশন আন্দোলন । ’ পাঠ্য ‘ আত্মকথা ’ রচনায় তারই একটু ছবি এঁকেছেন লেখক— “ স্কুল - কলেজ বন্ধ । ন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হলাম আর কংগ্রেসের কাজে যোগ দিলাম । ” লেখকের উপর ভার ছিল , মহাপুরুষদের বাণী থেকে উদ্ধৃতি লিখে ঝুলিয়ে দেওয়ার । তা ছাড়া প্রসেশনের সময় তাঁকে তেলরঙে লিডারদের পোর্ট্রেট এঁকে দিতে হত ।


৩.শৈশবেই রামকিঙ্করের মনে ও কাজে কীভাবে শিল্পপ্রভাব গড়ে উঠেছিল ?
উত্তরঃ প্রায়শই দেখা গেছে , ভবিষ্যতে যাঁরা কোনো বিষয়ে মহৎ ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন , তাঁদের শৈশবেই সেই বিষয়ে একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ দেখা দেয় । রামকিঙ্কর এক অপরিমেয় শিল্পপ্রতিভার অধিকারী হয়েছিলেন । তার সূচনার একটা মুকুলও তাঁর শৈশবে বিকশিত হতে দেখা যায় । তাঁর বাড়িঘরের চারদিকের দেয়ালে নানা দেবদেবীর ছবি দেখে শৈশবে তাঁর ভালো লাগত । তিনি সেগুলি কপি করে সেই বয়সেই ‘ ভিসুয়াল আর্ট ’ - এ নিজের বর্ণপরিচয় ঘটিয়ে ফেলেন । মূর্তিগড়ার ক্ষেত্রেও সূচনাপর্বটি ছিল মজার । বাড়ির সামনের লাল - মোরামে ঢাকা রাস্তা একদিন হঠাৎ - বৃষ্টিতে ধুয়ে গেলে তিনি দেখেন নীলরঙের মাটি বেরিয়ে পড়েছে । সেখান থেকে এক খাবলা মাটি তুলে , তা দিয়ে তিনি নানারকম পুতুল তৈরি করেন । এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন — ‘ আমার প্রথম শিল্পের - ইস্কুল বাড়ির পাশের কুমোর পাড়া ’ সেখানেই ছেলেবেলায় অনেকক্ষণ ধরে কুমোরদের মূর্তিগড়া ও অন্যান্য কাজ দেখতেন তিনি আর ‘ সুযোগ পেলেই মাটিতে হাত লাগিয়ে ছানাছানি ’ করতেন । এভাবেই তাঁর মনে শৈশবেই একটা শিল্প প্রভাব গড়ে উঠেছিল ।


৪.‘ আত্মকথা ’ প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখক রামকিঙ্কর বেইজ - এর শৈশব জীবনের পরিচয় দাও ।
উত্তরঃ লেখক রামকিঙ্কর বেইজ বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত এক গ্রামের মানুষ ছিলেন । শৈশব থেকেই তিনি সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতে পারতেন । কুমোরপাড়ায় বাড়ির সুবাদে মাটি দিয়ে নানান মূর্তিও তৈরি করতে শিখেছিলেন । ঘরের দেয়ালে টাঙানো দেবদেবীর ছবি দেখে তিনি ছবি আঁকা অভ্যাস করতেন । লেখকের পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিল না । কিন্তু আঁকার দক্ষতার জন্য বিদ্যালয়ে অবৈতনিক বা বিনা বেতনের ছাত্র হিসেবে তিনি পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন । পড়াশোনার থেকে আঁকার দিকে তাঁর আগ্রহ ছিল অনেক বেশি । ভালো মাটি দেখতে পেলে তা নিয়ে তিনি পুতুল তৈরি করতেন । সুযোগ পেলে মাটিতে হাত লাগিয়ে ছানাছানি করতেন । মূর্তি তৈরি করে অতি অল্প বয়সেই তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন । শৈশবকাল থেকে তাঁর আঁকা এবং মূর্তি গড়াকে কেন্দ্র করে পরবর্তী জীবনে বহু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির সান্নিধ্যলাভ করেছিলেন ।


৫.“ শান্তিনিকেতনের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁরই কৃপায় ঘটে । ” — তাঁরই ' বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? শান্তিনিকেতনের সঙ্গে যোগাযোগের পর কী ঘটেছিল?

উত্তরঃ তাঁরই ’ বলতে ‘ প্রবাসী ’ পত্রিকার পরম শ্রদ্ধেয় সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কথা বলা হয়েছে । রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় মহাশয় বাঁকুড়ায় গিয়েছিলেন এবং রামকিঙ্করের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে । তাঁরই সৌজন্যে শান্তিনিকেতনের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে । ম্যাট্রিক পরীক্ষা না দিয়েই রামকিঙ্কর চলে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়ে । প্রথমেই জেনারেল লাইব্রেরির উপরতলার কলাভবনে পরিচয় হল স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী আচার্য নন্দলাল বসুর সঙ্গে । তিনি তাঁর কয়েকটি আঁকা ছবি দেখে বলেছিলেন “ তুমি সবই জানো , আবার এখানে কেন ? ” একটু ভেবে তিনি বলেছিলেন , “ আচ্ছা , দু - তিন বছর থাকো তো । ” এই কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি প্রাকৃতিক বাস্তবতাকে খুঁজে পেয়েছিলেন নন্দলাল বসুর সান্নিধ্যে থেকে । ওরিয়েন্টাল আর্টের প্রবর্তক নন্দলালবাবুর পরোক্ষ প্রভাবে তিনি ছবির মধ্যে অতি সাধারণ ব্যাপারটাকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন । সত্যিকারের একজন শিল্পীর কাছে শিক্ষালাভ করায় তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করতেন ।


৬.শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ - এর শিল্পপ্রতিভার পরিচয় দাও ।
উত্তরঃ রামকিঙ্কর বেইজ প্রখ্যাত ভাস্কর এবং চিত্রশিল্পী ছিলেন । ছোটোবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকায় পারদর্শী ছিলেন । কুমোরপাড়ার শিল্পীদের দেখে নানা দেবদেবীর ছবি আঁকতেন । ম্যাট্রিক পাস করার পর ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে শিল্পী রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয় । এখানকার প্রখ্যাত শিল্পগুরু নন্দলাল বসুর কাছে শিল্পশিক্ষার সৌভাগ্য ঘটে । তাঁর আঁকা ছবি দেখে নন্দলাল বসু বলেছিলেন , “ তুমি সবই জানো , আবার এখানে কেন ? ” অতঃপর দু - তিন বছর থাকার কথা বলেন । সেই দু - তিন বছর আর শেষ হয়নি ; আজীবন শিল্পশিক্ষা চর্চা করেছিলেন তিনি । প্রথম প্রথম অয়েল - পেন্টিং - এ ছবি আঁকলেও পরবর্তীকালে ওরিয়েন্টাল আর্টের শিক্ষাগ্রহণ করেন । নন্দলাল বসুর শিল্পের সাদামাটা সুরটা শিল্পী রামকিঙ্করকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে । তাই তাঁর ছবি বা মূর্তির অধিকাংশ ক্যারেকটারই যে খুব সাধারণ , তা অনেকটা নন্দলালবাবুর পরোক্ষ প্রভাবে । এতেই রামকিঙ্করের শিল্পচর্চার সার্থকতা ।


No comments:

Post a Comment