Chapter -1 History Questions And answers class 8th || অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর || প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারণা প্রশ্ন উত্তর - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 31 December 2024

Chapter -1 History Questions And answers class 8th || অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর || প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারণা প্রশ্ন উত্তর

  

প্রথম অধ্যায় 
ইতিহাসের ধারণা




❐ অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর :



❐ অতি - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : 

১. রবীন্দ্রনাথের চোখে ভারতবর্ষের ইতিহাস কেমন ? 

উঃ । রবীন্দ্রনাথের চোখে ভারতবর্ষের ইতিহাস নিশীথকালের একটা দুঃস্বপ্ন কাহিনি মাত্র । 


২. রবীন্দ্রনাথের মতে যে সকল দেশ ভাগ্যবান তারা চিরন্তন স্বদেশকে কীভাবে খুঁজে পান ? 

উঃ । ভাগ্যবান দেশ চিরন্তন স্বদেশকে দেশের ইতিহাসের মধ্যেই খুঁজে পান । 


৩. বর্তমানের ইতিহাস কোথা থেকে ঠিক হয় ? 

উঃ । বর্তমানের ইতিহাস ঠিক হয় অতীত থেকে ।


 ৪. বর্তমান কীভাবে অতীতের ইতিহাস থেকে ঠিক হয় ? 

উঃ । অতীতে পূর্বপুরুষদের করা অপরাধের ভার বহন করতে হয় বর্তমান ব্যক্তিটিকে । এইভাবেই বর্তমান ঠিক হয় , অতীতের ইতিহাস থেকে ।


 ৫. চাষিদের কেন নীল চাষ করতে হত ? 

উঃ । প্রায় সবসময় দেখা যেত নীলকর সাহেবের কাছে চাষির ঋণ রয়েছে , সেই ঋণ বংশগতভাবে থেকে যেত । ফলে চাষিকেও নীল চাষ করতে হতো । 


৬. পূর্বপুরুষদের করা কাজের খতিয়ান কেন করা দরকার ? 

উঃ । পূর্বপুরুষদের করা কাজের ফল বর্তমান ব্যক্তিটিকে ভোগ যখন করতে হবে তখন পূর্বপুরুষদের করা কাজের খতিয়ানও জানা দরকার । তাই ইতিহাস পড়তে হবে । 


৭. রবীন্দ্রনাথের আগে ভারতীয়দের ইতিহাস নিয়ে কে প্রশ্ন তুলেছিলেন ? তাঁর বক্তব্য কী ছিল ? 

উঃ । রবীন্দ্রনাথের আগে এই প্রশ্ন তুলেছিলেন রঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । তাঁর বক্তব্য ছিল বাঙালির ইতিহাস চাই । 


৮. ব্রিটিশদের উপনিবেশ তৈরি করার যুক্তি কী ছিল ? 

উঃ । ব্রিটিশদের উপনিবেশ তৈরির যুক্তি ছিল , ভারতবাসী অসভ্য , তাদের দেশে শিক্ষার অভাব , বিজ্ঞানের অভাব প্রভৃতি । ব্রিটিশরা সভ্য তাই তাদের কর্তব্য অসভ্য ভারতীয়দের সভ্য করা । 


৯. বঙ্কিম বলেছেন , আমি তুমি সবাই মিলে আমাদের ইতিহাস লিখব — এর অসুবিধা কোথায় ? 

উঃ । কথাটি শুনতে ভালো হলেও তা সম্ভব নয় । কারণ যে সমাজে একটা বড়ো অংশের মানুষ লেখাপড়া জানে না তারা কীভাবে দেশের ইতিহাস লিখবে এ প্রশ্ন থেকেই যায় ।


 ১০. আধুনিক যুগের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কী ? 

উঃ । মুদ্রা আধুনিক যুগের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । 


১১. ভারতের ইতিহাস আসলে কী ? 

উঃ । ভারতের ইতিহাস আসলে কিছু শিক্ষিত মানুষের বিচার অনুযায়ী লেখা ইতিহাস ।


 ১২. কবে চিনের সাথে ব্রিটেনের যুদ্ধ হয়েছিল , কেন ? 

উঃ । ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিক থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা , মালওয়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে চিনে আফিম রফতানি করত । সেই আফিম রফতানি নিয়ে চিনের সঙ্গে ব্রিটেনের সংঘাত ও শেষে যুদ্ধ হয়েছিল । 


১৩. ভারতের ইতিহাসের কটি ভাগ ? 

উঃ । ভারতের ইতিহাসের তিনটি ভাগ — প্রাচীন , মধ্য ও আধুনিক । 


১৪. আধুনিক শব্দটা কোন শব্দ থেকে এসেছে ? এর অর্থ কী ? 

উঃ । আধুনিক শব্দটা ‘ অধুনা ' শব্দ থেকে এসেছে । এর অর্থ বর্তমানকালে , সম্প্রতি বা নতুন ।


১৫. পলাশির যুদ্ধ হয় কবে ?

 উঃ । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ হয় । 


১৬. ‘ রাজাবলি ’ কে লিখেছিলেন ? রাজাবলির বিষয় কী ? 

উঃ । ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ' রাজাবলি ' নামে একটি ইতিহাস বই লিখেছিলেন । রাজাদের কথা বলার জন্যই রাজাবলি বইটি লেখা হয়েছিল । 


19. ' History of British India ' বইটি কার লেখা ? বইটি লেখার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ? 

উঃ । ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ' History of British India ' নামে ভারতের ইতিহাস লেখেন জেমস মিল । বইটি লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের অতীত কথাকে এক জায়গায় জড়ো করা । 


১৮. ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় কত খ্রিস্টাব্দে ? সেটি কোন্ যুগে ধরা হত ? 

উঃ । ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে । তাঁর সময়কালকে সাধারণত ভারতের ইতিহাসে মধ্যযুগে ধরা হয় । 


১৯. পলাশির যুদ্ধকে কোন্ পর্বে ধরা হত ? 

উঃ । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত পলাশির যুদ্ধকে আধুনিক পর্বে ধরা হত । 


২০. ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর দিল্লির শাসনভার কে গ্রহণ করেন ? 

উঃ । ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর দিল্লির শাসনভার নেন তাঁর মেয়ে রাজিয়া ।


 ২১. যুগ বদলের ধারাকে সময়ের হিসাবে কষে ধরে ফেলা যায় না কেন ? 

উঃ । প্রতিটি যুগের মানুষ ও তার জীবনযাপনের নানান বৈশিষ্ট্য থাকে । সেই বৈশিষ্ট্যগুলি রাতারাতি পালটে যায় না । তাই সবসময় যুগ বদলের ধারাকে ভ্রমণের হিসাবে কষে ধরে ফেলা যায় না । 


২২. ভারতবর্ষের ইতিহাসের কোন বিষয়টি আজও বর্তমান সমাজকে ছুঁয়ে যায় ?

 উঃ । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের বিভাজন কী কোনভাবে ঠেকানো যেত না ? এই প্রশ্নটা এখনও বর্তমান সমাজকে ছুঁয়ে যায় । 


২৩. আধুনিক ইতিহাস লেখার উপাদানগুলি কী কী ? 

উঃ । প্রশাসনিক কাগজপত্র , বই , ডায়েরি , চিঠি থেকে শুরু করে জমি বিক্রির দলিল বা রোজকার বাজারের ফর্দ , ছবি , মানচিত্র , পোস্টার , বিজ্ঞান , সংবাদপত্র এ সবই ইতিহাসের উপাদান । 


২৪. অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের জীবনী কার লেখা ? 

উঃ । অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের জীবনী লেখক হলেন উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন । 


২৫. ভারতের ইতিহাস জানার অন্যতম উপাদান কী ? ফোটোগ্রাফ থেকে কী জানা যায় ?

 উঃ । ফোটোগ্রাফ । ফোটোগ্রাফ থেকে সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের বিষয় জানা যায় । 


২৬. হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশন কবে হয়েছিল ? 

উঃ । ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল । 


২৭. ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ আন্দোলনগুলিকে কী বলেছেন ?

 উঃ । ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ আন্দোলনগুলিকে বলেছেন হাঙ্গামা বা উৎপাত । 


২৮. বাংলার ধান , পাট প্রভৃতি চাষ কেন নষ্ট হত ? 

উঃ । উপনিবেশবাদ অনুযায়ী বাংলায় নীল চাষ হত ইংল্যান্ডের কাপড় কলে নীলের চাহিদা মাথায় রেখে এর ফলে বাংলার ধান , পাট প্রভৃতি চাষ নষ্ট হত । 


২৯. উপনিবেশবাদের মূল কথা কী ? 

উঃ । একটি অঞ্চলের জনগণ ও সম্প্রদায়কে অন্য একটি অঞ্চলের স্বার্থে ব্যবহার করা , এটাই উপনিবেশবাদের মূল কথা । 


৩০. ভারতের আধুনিক ইতিহাসে কীসের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল ? 

উঃ । ভারতের সমাজ , রাজনীতি , সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রা তার হদিশও পাওয়া গিয়েছিল ।


 ৩১. স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রতিবেশী স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল ?

 উঃ । স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রতিবেশী স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দুটো রাষ্ট্র একসময়ে ভারতবর্ষেরই আত্মীয় ছিল । দীর্ঘদিন তারা পাশাপাশি ছিল । অথচ একসময়ে তারা আলাদা হয়ে গেল ।


❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : 

১. জেমস মিল তাঁর বইতে ভারতের ইতিহাসকে কটি ভাগে ভাগ করেছেন ? মিল তাঁর বইতে মুসলিম যুগকে কী নামে অভিহিত করেছেন ? 

উ: । মিল তাঁর রচিত বইটিতে ভারতের ইতিহাসকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন । হিন্দু যুগ , মুসলিম যুগ , ব্রিটিশ যুগ । প্রথম দুটো পর্যায় শাসকের ধর্মের নামে । আর শেষটা শাসকের জাতির নামে । “ মিল তাঁর বইতে মুসলিম যুগকে ‘ অন্ধকারময় ’ যুগ নামে অভিহিত করেছেন । 


২. মধ্যযুগের সব শাসকই কীভাবে মুসলিম ধর্মের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল ?

 উঃ । ভারতের ইতিহাসের যুগ ভাগ করা শুরু হয় শাসকের ধর্মের পরিচয় নিয়ে । আর জেমস মিল ধরে নিলেন প্রাচীন ভারতের সব শাসকই হিন্দু । তাই জৈন ধর্মাবলম্বী চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য বা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিম্বিসারের ইতিহাসও ঢুকে পড়ল হিন্দু যুগের ইতিহাসে । এইভাবেই মধ্যযুগের সব শাসকই মুসলিম ধর্মের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল । 


৩. ভারতীয়রা কীভাবে প্রমাণ করল যে , ব্রিটিশদের ভারতে সাম্রাজ্য বাড়ানোর দরকার নেই ?? 

উঃ । ভারতীয়রা সম্রাট অশোক থেকে সম্রাট আকবর , আর্যভট্ট থেকে চৈতন্যদেবের কথা তুলে প্রমাণ করল যে ভারতেরও ‘ সভ্যতা ' ছিল । সেই সভ্যতা ব্রিটিশ সভ্যতার থেকে খাটো নয় । তাই ব্রিটিশদের ভারতে সাম্রাজ্য বাড়ানোর দরকার নেই ।


 ৪. কেন স্কুলে ইতিহাস পড়ানো হয় ? 

উঃ । ইতিহাস শুধু রাজা বা সম্রাটদের নাম , সাল তারিখ বা যুদ্ধের বর্ণনা নয় । এতে মিশে আছে নানা যুক্তি তর্কের খতিয়ান । ইতিহাসের সাক্ষ্য হাজির করে নিজের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্ক করা যায় । তার জন্য ইতিহাস জানা দরকার । 


৫. বঙ্কিমচন্দ্র বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে কী বলেছেন ? 

উঃ । বঙ্কিমচন্দ্রের মতে , বিদেশিদের লেখা বাঙালির ইতিহাস ভুলে ভরা তাই বাঙালির ইতিহাস লিখতে হবে বাঙালিকেই । সেই বাঙালি — আমি , তুমি , যে কেউ অর্থাৎ সাধারণ মানুষও হতে পারে । 


৬. ইতিহাসের একই ঘটনা নিয়ে কেন প্রচুর তর্কবিতর্ক হয় ? 

উঃ । বঙ্কিমচন্দ্রের মতানুযায়ী যদি সাধারণ মানুষ ইতিহাস রচনা করে তবে কোনো ঘটনাকে দেখার ভঙ্গি বদলে গেলেই ঘটনা ও তার ফলাফল নিয়ে মতামত ও তর্কবিতর্ক তৈরি হয় । 


৭. মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার কীভাবে ভারত ইতিহাসের কালবিভাজন করেন ? বঙ্কিমচন্দ্ৰ 

উঃ । ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার তাঁর ' রাজাবলি ' নামক ইতিহাস বইতে সময় গোনা শুরু করেছিলেন মহাভারতের রাজা যুধিষ্ঠিরের কাল থেকে । আজ আর কেউ কলিযুগের ইতিহাস শব্দটি ব্যবহার করেন না । কিন্তু উনিশ শতকের গোড়ায় মৃতুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার তা করেছিলেন । তাঁর গ্রন্থে প্রতিটি ঘটনার পিছনেই তিনি অদ্ভুত সব যুক্তি দেখিয়েছিলেন । আজকের ইতিহাস বই এভাবে লেখা হয় না । শেষপর্যন্ত রাজাবলি কলিযুগের সময়ে এসে শেষ হয় । 


৮. আত্মজীবনী নামক উপাদানটি সোজাসুজি ব্যবহার করলে কী হবে এবং কেন হবে ?

 উঃ । আত্মজীবনী নামক উপাদানটি সোজাসুজি ব্যবহার করা যাবে না , কারণ যিনি আত্মজীবনী লিখেছেন তিনি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারণা থেকে সবকিছু ব্যাখ্যা করেছেন । ঐতিহাসিক যদি সেই ব্যাখ্যা বিশ্বের না করেই পুরোপুরি মেনে নেন তাহলে বক্তব্য একপেশে হয়ে যায় ।


 ৯. সাম্রাজ্যবাদ কী ? এর দ্বারা কী হয়ে থাকে ? 

উঃ । একটি শক্তিমান রাষ্ট্র বা দেশ তুলনায় দুর্বল রাষ্ট্র বা দেশের উপর প্রভুত্ব কায়েম করে নিজের দখলে আনে , এই প্রক্রিয়াকেই সাম্রাজ্যবাদ বলা হয় । সাম্রাজ্যবাদ একটি প্রক্রিয়া । এর দ্বারা দুর্বল রাষ্ট্র অথবা দেশটির জনগণ , সম্পদ সব কিছুই • শক্তিমান দেশটি নিজের প্রয়োজনমতো পরিচালনা করে ।


১০. নিজের ফেলে আসা আত্মীয়তাকে নতুন করে চিনে নেওয়ার জন্যই ইতিহাস পড়তে হয় — ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও । 

উঃ । স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রতিবেশী স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দুটি রাষ্ট্র এক সময় ভারতবর্ষেরই আত্মীয় ছিল । দীর্ঘদিন পাশাপাশি থাকার পর একসময় তারা আলাদা হয়ে গেল , সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আত্মীয়তার বাঁধনও আলগা হয়ে গেল । আজ তারা একে অন্যকে আত্মীয় বলে চিনতে পারে না । নিজের ফেলে আসা আত্মীয়তাকে চিনে নিতে এবং কেমন করে সেই আত্মীয়রা আলাদা হয়ে গেল তা জানতে ও বুঝতে গেলে ইতিহাস পড়তে হয় । 


১১. আন্দোলনের ইতিহাস লেখার সময় নাম না দিয়ে শুধু সংখ্যা দিয়ে মানুষগুলিকে বোঝানো হয় , কেন ?

 উঃ । আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে গেলে সময় , নাম না দিয়ে শুধু সংখ্যা দিয়ে মানুষ বোঝানো হয় । কারণ , যিনি বা যাঁরা সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস লিখেছেন , তাঁদের চোখে কেবল সিধু - কানহুর নামই যথেষ্ট , মহাত্মা গান্ধি বা সুভাষচন্দ্ৰ বসুই জরুরি , তাঁদের কথা জানলেই ইতিহাস জানা হয়ে যায় । বাকি যারা , তারা কেবল হাজার হাজার মানুষ তাদের আলাদা করে নাম জানার দরকার নেই । 


১২. সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে উপনিবেশবাদের যোগাযোগ কেমন ? -আলোচনা করো ।

 উঃ । সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে উপনিবেশবাদের যোগাযোগ স্পষ্ট । এক সময় ভারতের অর্থনীতি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বার্থ অনুযায়ী চলত । বাংলায় নীলচাষ করা হতো ইংল্যান্ডের কাপড় কলে নীলের চাহিদা মাথায় রেখে । এর ফলে বাংলার ধান , পাট প্রভৃতি চাষ নষ্ট হতো এবং বাংলায় অনাহার দুর্ভিক্ষ দেখা দিত । উপনিবেশবাদের মূল কথাই এটা যে একটা অঞ্চলের জনগণ ও সম্পদকে অন্য একটি অঞ্চলের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে । সেই অনুযায়ী ব্রিটেনের উপনিবেশ ভারতের কৃষিজ ফসল ব্রিটেনের স্বার্থে উৎপাদন করা হবে । 


১৩. আধুনিক যুগের ঐতিহাসিক উপাদানরূপে ফোটোগ্রাফ কতটা নির্ভরযোগ্য ? এই উপাদানটির ত্রুটি কোথায় ? 

উঃ । ভারত ইতিহাসের আধুনিক যুগের অন্যতম ঐতিহাসিক উপাদান ফোটোগ্রাফ বা ক্যামেরায় তোলা ছবি । এইরকম ছবির সংগ্রহ থেকে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ইতিহাসের নানা তথ্য জানা যায় । তাই আধুনিক যুগের ইতিহাস রচনায় ফোটোগ্রাফ বা ছবি একটি নির্ভরযোগ্য উপাদান । উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফের অন্যতম ত্রুটি হলো ফোটোগ্রাফগুলি পুরোপুরি নৈর্ব্যক্তিক হয় না । যেমন , যিনি ছবি তুলছেন তাঁর দেখার উপরেই ক্যামেরার দেখা নির্ভর করে । ফলে একই বিষয়ের দুজনের তোলা দুটি ছবিতে দুরকম তথ্য বা অর্থ উঠে আসতে পারে । 


❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:

১. জেমস মিল তাঁর গ্রন্থে ভারতের ইতিহাসকে যে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন তার যৌক্তিকতা আলোচনা করো । 

উঃ । বিখ্যাত দার্শনিক ও ঐতিহাসিক জেমস মিল ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনটি খণ্ডে রচনা করেন ভারত ইতিহাসের সংকলন The history of British India , তাঁর এই গ্রন্থটি লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের অতীত কথাকে এক জায়গায় জড়ো করা । ভারতে আগত ব্রিটিশ প্রশাসনে যুক্ত বিদেশিরা যাতে সেটি পড়ে ভারতবর্ষ বিষয়ে সাধারণ ধারণা পেতে পারেন । তিনি চেয়েছিলেন যে দেশকে শাসন করতে হবে তার ইতিহাসটাও জানতে হবে । এই গ্রন্থে মিল ভারতের ইতিহাসকে নিজের মতো করে হিন্দু যুগ , মুসলিম যুগ ও ব্রিটিশ যুগ এই তিনটি ভাগে ভাগ করেন । 

প্রথম দুটি যুগকে তিনি অভিহিত করলেন শাসকের ধর্মের নামে । আর শেষ যুগটি শাসকের জাতির নামে । অর্থাৎ ধর্ম নয় জাতির পরিচয়ে ব্রিটিশ সভ্যতা পরিচিত হতে চায় । এই ধারণা আধুনিক ঐতিহাসিকগণ পরিত্যাজ্য করেছেন । কারণ প্রাচীন ভারতের সমস্ত রাজা বা জনগণ হিন্দু ছিলেন না । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মতো জৈন রাজা বা কণিষ্কের ন্যায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজা তথা জনগণরাও ছিলেন । অপরদিকে মধ্যযুগে শুধুই মুসলিম জনগণ বা শাসক ছিলেন না । শাসক মুসলিম হলেও জনগণ অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু । অপরদিকে শেষ যুগটি খ্রিস্টান যুগ না হয়ে হলো ব্রিটিশ যুগ । 

এখানে মিলের আধুনিক জাত্যাভিমানের পরিচয় পাওয়া যায় । সেই সঙ্গে মিল লিখলেন মুসলিম যুগ ভারত ইতিহাসে ‘ অন্ধকারময় ' যুগ । পাশাপাশি হিন্দু যুগ বিষয়েও মিল অশ্রদ্ধা দেখিয়েছিলেন । তাই মিলের গ্রন্থটি তাঁর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য কখনোই আদর্শ ইতিহাস গ্রন্থের মর্যাদা পায়নি এবং তাঁর এই ইতিহাসের বিভাজনও গ্রহণযোগ্য হয়নি । এই কারণে ভারত ইতিহাস যুগের হিসেবে ধীরে ধীরে প্রাচীন যুগ , মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ এই মানদণ্ডেই বিভক্ত ও স্বীকৃত হয়ে গেল । 


২. ইতিহাস থেকে বর্তমানের দূরত্ব বেশি হলে কী হতে পারে ব্যাখ্যা করে বোঝাও । 

উঃ । ইতিহাস থেকে বর্তমানের দুরত্ব সময়ের হিসাবে যত বেশি হবে ইতিহাসের বিষয় নিয়ে বিবাদ বিতর্কের চরিত্র ততই বদলে যাবে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে সম্রাট অশোকের ভাবনাচিন্তায় কলিঙ্গযুদ্ধের প্রভাব কি ছিল তা নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও আজকের মানুষের জীবনে এই বিষয়টা আর ততটা প্রাসঙ্গিক নয় । কিন্তু প্রশ্নটা যদি হয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের বিভাজন কি কোনোভাবে ঠেকানো যেত না , তা হলে প্রশ্নটা সামাজিকভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে । আজও ভারতের অনেক মানুষ দেশভাগের স্মৃতিতে কষ্ট পান ফলে প্রশ্নটা এক্ষেত্রে অনেক সরাসরি বর্তমান সমাজকে ছুঁয়ে যায় । এ থেকেই বোঝা যায় ইতিহাসের সময় যতই দূরে হয় প্রাসঙ্গিকতার সম্ভাবনা ততই কমে যায় । 


৩. সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারার বিরুদ্ধে ভারতের শিক্ষিত জনগণ কীভাবে নিজেদের ইতিহাস চর্চা শুরু করেছিলেন ? 

উঃ । সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারার বিরুদ্ধে ভারতের শিক্ষিত জনগণ ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে জোট বাঁধলেন । ইংরেজি শিক্ষা , সরকারি চাকরি পেলেও দেশীয় সমাজে শিক্ষিত জনগণ নিজেদের দাবীগুলি নিয়ে নিজেদের মতো করে কথা বলা শুরু করলেন । তার মধ্যে ইতিহাস চর্চাও শুরু হলো । জেমস মিলের ইতিহাসের যুক্তিকেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীর বিশ্লেষণের বিপক্ষে ব্যবহার শুরু হলো । 

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস , মধ্যযুগের ইতিহাস খুঁজে দেখা গেল যে ব্রিটিশরা যে বলে থাকেন ভারতের ইতিহাস নেই তা ঠিক নয় , ইতিহাস আছে , নানা উপাদান থেকে তাকে পূর্ণাঙ্গ চেহারা দিতে হবে । দেশের মানুষ যখন ইতিহাস লিখলেন তখন বিভিন্ন ঘটনার অন্য বিশ্লেষণ হাজির হলো । সাম্রাজ্যের স্বার্থের অপরদিকে দেশের চিন্তাও ইতিহাসে জায়গা পেতে শুরু করল । উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা অভিযোগ তুলেছিলেন যে সিরাজ - উদ - দৌলা ব্রিটিশ কর্মচারীদের হত্যা করেছিলেন । কিন্তু ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে সেই অভিযোগ মিথ্যা ছিল । 


৪. ইতিহাসের উপাদানৰূপে আত্মজীবনী কতটা গ্রহণযোগ্য ? 

উঃ । ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক তথ্য জানতে আত্মজীবনী বা জীবনচরিতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু সোজাসুজি সেই আত্মজীবনী ব্যবহার করলে কিছুটা অসুবিধা দেখা যায় । কারণ যিনি সেই জীবনী রচয়িতা তিনি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারা থেকেই সব কিছু ব্যাখ্যা করেছেন । ঐতিহাসিকরা যদি সেই ব্যাখ্যা পুরোপুরি মেনে নেন তাহলে বক্তব্যটি একপেশে হয়ে যায় । কখনো বা ঐতিহাসিকরা ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারেন ।

 উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের জীবনীকার উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন তাঁর লেখায় হিউমকেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব দিয়েছেন । অথচ পরে দেখা গেছে যতটা কৃতিত্ব হিউমকে দেওয়া হয়েছে আদৌ ততটা কৃতিত্বের দাবীদার তিনি নন । ঐতিহাসিকরা যদি ওয়েডারবার্নের কথা পুরো মেনে নিতেন তাহলে এই নতুন বিশ্লেষণ পাওয়া যেত না । তাই আত্মজীবনীর সমস্ত তথ্যই বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস নাও হতে পারে । তবে মধ্যযুগের ' বাবরনামা ' ও আধুনিক যুগের হিটলারের ‘ মেইনক্যাম্ফ ' গ্রন্থ দুটির ঐতিহাসিক মূল্য বর্তমান ।

No comments:

Post a Comment