সপ্তম শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা বিষয়ের একটি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায় হলো, "বিপর্যয় মোকাবিলা" এই অধ্যায়ের কিছু বিশেষ বিশেষ প্রশ্ন উত্তর করা হয়েছে এই পোস্টটিতে ।
⬛ সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. বন্যার সময় বা বন্যার পরবর্তী সময়ে শিশুরা কোন রোগে বেশি আক্রান্ত হয় —
(i) ডেঙ্গি (ii) এইডস (iii) ডায়ারিয়া (iv) জলাতঙ্ক।
উঃ । (iii) ডায়ারিয়া।
2.বিস্তীর্ণ এলাকা অস্থায়ীভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়লে তাকে বলে-
(i) স্রোত (ii) বন্যা (iii) জলাধার (iv) কোনোটিই নয়।
উঃ। (ii) বন্যা।
3.দেশের প্রায় সব নদীর বন্যা দেখা যায়-
(i) নদী দোয়াবে (ii) নদী জলবিভাজিকায় (iii) নদী অববাহিকায় (iv) নদী গতিপথে।
উঃ। (iii) নদী অববাহিকায়।
4. বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রধান লক্ষ হল -
(i) বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমানো (ii) ক্ষয়ক্ষতি বাড়ানো (iii) বন্যার গতিরোধ করা (iv) কোনোটিই নয়।
উঃ । (i) বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমানো।
5. অত্যধিক বৃষ্টি হলে হড়পা বান মূলত দেখা যায় -
(i) সমতল অঞ্চলে (ii) পাহাড়ি অঞ্চলে (iii) মরুভূমি অঞ্চলে (iv) কোনোটিই নয়।
উঃ। (ii) পাহাড়ি অঞ্চলে।
6. বরফ গলার ফলে নদীর জলস্তর -
(i) কমে যায় (ii) বেড়ে যায় (iii) শুকিয়ে যায় (iv) কোনোটিই নয়।
উঃ। (ii) বেড়ে যায়।
7. বর্তমানে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ হলো-
(i) পর্বতশীর্ষে হিমবাহের সৃষ্টি (ii) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে (iii) বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাব (iv) এদের কোনোটিই নয়।
উঃ। (iii) বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাব।
8. ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দেশের কত শতাংশ লোক বাস করে –
(i) ৫০% (ii) ৪৫% (iii) ৪৯% (iv) ৪৭%।
উঃ । (iv) ৪৭%।
9. ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দেশের কত শতাংশ অঞ্চল বন্যাপ্রবণ হিসেবে ধরা হয় ? –
(i) ৩০% (ii) ৩৯% (iii) ৬০% (iv) ৬৫%।
উঃ । (iii) ৬০%।
10.আমাদের দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় কত শতাংশ বৃষ্টিপাত হয় –
(i) ৬৫% (ii) ৭৫% (iii) ৪৫% (iv) ৮৫%।
উঃ। (ii) ৭৫%।
11.বন্যার তীব্রতা কমাতে ছাত্রছাত্রীদের তাদের এলাকায় কী করা দরকার ?
(i) জলাধার সংস্কার (ii) নিকাশিনালা সংস্কার (iii) নিকাশিগুলো বন্ধ করা (iv) কোনোটিই নয়।
উঃ। (ii) নিকাশিনালা সংস্কার করা।
12. পাড়ার এলাকা পাহারা দেবার জন্য থাকে -
(i) পুলিশ (ii) টহলদারি গোষ্ঠী (iii) মোড়ল (iv) কোনোটিই নয়।
উঃ। (ii) টহলদারি গোষ্ঠী।
13. বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের দেশের-
(i) দুর্বল নাগরিক (ii) সবল নাগরিক (iii) সাধারণ নাগরিক (iv) কোনোটিই নয়।
উঃ। (ii) সবল নাগরিক।
14. বিপর্যয় মোকাবিলায় গোষ্ঠীতে কতজন করে থাকে ?-
(i) ৪-৬ জন (ii) ৬-১০ জন (iii) ৯-১২ জন (iv) ৩-৫ জন।
উঃ। (২) ৬-১০ জন।
15.ডায়ারিয়া হলে যত শীঘ্র সম্ভব রোগীকে খাওয়াতে হবে—
(i) রক্ত খাবার (ii) ঝাল খাবার (iii) পানীয়জাত খাবার (iv) ফলের রস।
উঃ। (i) পানীয়জাত খাবার।
16. বন্যাপ্রবণ এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবশ্যই কী শেখা উচিত?
(ক) গান (খ) সাঁতার (গ) বাজনা (ঘ) নাচ ।
উঃ। সাঁতার।
17. ডায়ারিয়া হলে রোগীকে কী খাওয়ানো উচিত?
(ক) চায়ের লিকার (খ) ফ্যাটজাতীয় খাবার (গ) মাংস (ঘ) বড়ো মাছ।
উঃ। চায়ের লিকার।
18. বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় কীভাবে?
(ক) জলসেচের ব্যবস্থা করে (খ) পাম্প করে জল কমিয়ে দিয়ে (গ) জলাধার নির্মাণ করে (ঘ) বৃষ্টি কমানোর ব্যবস্থা করে।
উঃ। জলাধার নির্মাণ করে।
19.বন্যার সময় কোন্ জল পান করা উচিত?
(ক) নলকূপের (খ) পুকুরের (গ) নদীর (ঘ) কুয়োর ।
উঃ। নলকূপের।
20.সমুদ্রের তলদেশে কী ঘটলে উপকূলভাগে বন্যা দেখা দিতে পারে?
(ক) জাহাজ ডুবে গেলে (খ) বৃষ্টি হলে (গ) ভূমিকম্প হলে (ঘ) অতিরিক্ত লোক সমুদ্রে স্নান করলে
উঃ। ভূমিকম্প হলে।
▩ সঠিক উত্তরটির পাশে সত্য এবং ভুল উত্তরটি পাশে মিথ্যা লেখো : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1.হড়পা বান বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় হয়।
উঃ। সত্য।
2.বন্যার সময় বাসি খাবার খাওয়া উচিত।
উঃ। মিথ্যা।
3. বন্যার সময় জল না ফুটিয়ে খাবে না।
উঃ। সত্য।
4.বন্যার সময় জলে সাঁতার কাটা উচিত।
উঃ। মিথ্যা।
5. প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী গঠন করা প্রয়োজন।
উঃ। সত্য।
⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1/2
১. ঘরবাড়ি নীচু করা হয়না কেন ?
উঃ। বন্যার সময় ঘরে জল ঢুকে যেতে পারে। সেইজন্য বন্যার পূর্ববর্তী সময়ে ঘরবাড়ি মাটি ফেলে উঁচু করে নিতে হবে।
২. বন্যার সতর্কতা হিসেবে কী শোনা উচিত ?
উঃ। বন্যার সময় নিয়মিতভাবে রেডিওতে আবহাওয়ার ধারাবাহিকভাবে খবর শুনতে হবে।
৩. বিপর্যয় প্রতিরোধে জনসাধারণদের মধ্যে কী কী থাকা দরকার ?
উঃ। বিপর্যয় প্রতিরোধে জনসাধারণদের প্রকৃত মনোভাব, জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা দরকার।
৪. বিপর্যয় প্রতিরোধের সমষ্টি হিসেবে জনসাধারণের কী কী থাকা দরকার ?
উঃ। বিপর্যয় প্রতিরোধে ব্যক্তি সমষ্টির মধ্যে- (i) পরিকাঠামোগত ঐক্য, (ii) সংগঠন (iii) নীতি থাকা দরকার।
৫. বন্যার পূর্ববর্তী সময় দুর্বল অসহায় মানুষদের কী কী করা দরকার ?
উঃ। যেসব এলাকাবাসীর বাড়িঘর মোটামুটি মজবুত ও নিরাপদ সেখানে অন্যান্যদের দামি ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও সম্পত্তি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. বন্যার তীব্রতা কমানোর জন্য কী করা উচিত?
উঃ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের সঙ্গে মিশে বন্যার জল ঢোকা রুখতে নদীবাঁধ মেরামতি, বালির বস্তা দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মজুত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. বিপর্যয়ের আভাস পাওয়া মাত্র পরিবারের সদস্যদের কী করা উচিত?
উঃ। পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আবাসে সরানোর কাজ শুরু করতে হবে।
৮. বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে কী রকম জল খাওয়া উচিত?
উঃ। কুয়ো/পুকুরের জল পান করার আগে ফুটিয়ে নিতে হবে।
৯. কী কারণে এবং কখন হড়পা বান হয়ে থাকে?
উঃ । আকাশ ভাঙা বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতির কারণে বৃষ্টি হওয়ার প্রায় ৬ ঘন্টার মধ্যে পাহাড়ি এলাকায় হড়পা বান হয়ে থাকে।
১০. বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য কী ?
উঃ। বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য হলো বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমানো।
⬛ দু-এক কথায় উত্তর দাও : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1/2
1.হড়পা বান কী ?
উঃ। পাহাড়ি এলাকায় অত্যাধিক বৃষ্টির কারণে উঁচু থেকে হঠাৎ প্রবল জলস্রোত পাথরের চাঁইসহ নদীপথে সমতলের দিকে ধেয়ে আসে। একে হড়পা বান বলে।
2. বন্যা কাকে বলে?
উঃ। বন্যা একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বিভিন্ন কারণে স্থলভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা অস্থায়ীভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়ার ঘটনাকে বন্যা বলে।
3. কীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
উঃ। সাধারণত বৃক্ষরোপন করে, জলাধার নির্মাণ, বাঁধ নিয়ন্ত্রণ, বিকল্প নিকাশি নালা প্রভৃতি নির্মাণ করে; নদীর তলদেশে জমে থাকা পলি সরিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যায়।
4. কীভাবে বন্যা হয় ?
উঃ। অতিবৃষ্টি ও নদীনালা, খালবিল প্রভৃতি জলাশয় ও জলাধারের জলবহন ক্ষমতার অভাবে বাঁধের ওপর সম্মিলিত চাপ পড়ে, সাধারণত এটাই বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ।
5. আমাদের দেশের কোন্ অঞ্চলে বেশি বন্যা হয় ?
উঃ। আমাদের দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল-এ সবথেকে বেশি বন্যা হয়ে থাকে।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. বন্যার পরবর্তী সময় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
উঃ। (i) রেডিয়ো মারফত বন্যার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানা দরকার। (ii) দুর্যোগ পরবর্তী স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে এলাকায় তথ্য সরবরাহ করতে হবে। (iii) বন্যার পরপর জল দায়িত্বপ্রাপ্ত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তথ্য বিনিময় ও নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে। (iv) এলাকা এলাকায় সতর্কতার সঙ্গে টহলদারি গোষ্ঠীর ব্যবস্থা করতে হবে।
2. বন্যার সময় কী কী করা উচিত নয়?
উঃ। (i) কুয়ো ও পুকুরের জল না ফুটিয়ে বন্যার সময় খাবে না। (ii) যেখানে সেখানে জম্মাল ফেলবে না। (iii) বাসি খাবার এই সময় খাবে না। (iv) খোলা জায়গায় মলত্যাগ করবে না। (v) কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবে না। (vi) ঘরের জানালা দরজা খোলা রাখবে না।
3. বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ গোষ্ঠী গঠন করতে হবে ?
উঃ। বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রতিটি পাড়ায় বিপর্যয়ের পূর্ববর্তী এবং বিপর্যয়ের সময় দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে মোট ৯টি সক্রিয় কর্মীগোষ্ঠী গঠন করতে হবে। এই গোষ্ঠীগুলি হল – (i) বন্যা সতর্কীকরণ গোষ্ঠী (ii) আশ্রয়স্থল ব্যবস্থাপনা গোষ্ঠী (iii) বিপর্যস্ত এলাকা থেকে সরিয়ে আনা ও উদ্ধারকারী গোষ্ঠী (iv) ত্রাণ ও সমন্বয়সাধনকারী গোষ্ঠী (v) ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন গোষ্ঠী (vi) পরামর্শদানকারী গোষ্ঠী (vii) মৃতদেহ সৎকার পরিসেবা গোষ্ঠী (viii) প্রাথমিক শুশ্রুষা ও চিকিৎসাকারী গোষ্ঠী (ix) জল ও শৌচালয় পরিসেবা গোষ্ঠী।
4. আমাদের রাজ্যে কখন এবং কী কারণে বন্যা দেখা দেয়?
উঃ। দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আমাদের রাজ্যে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। সেই সময় প্রায় ৭৫% বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে সমস্ত জল গিয়ে জলাভূমি বা নদীতে পড়ে। যার ফলে প্রায় প্রতি বছরই এই সময়টাতেই আমাদের রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
5. বন্যার সময় যখন আবহাওয়ার সতর্কীকরণ পাওয়া গেছে সেই সময় কী করতে হবে?
উঃ । গ্রামের সর্বত্র, বিশেষ করে যে সমস্ত এলাকাকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেইসব এলাকায় বিপদসংকেত পৌঁছে দেওয়া। যত শীঘ্র সম্ভব আশ্রয় শিবিরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
6. বন্যার সময় আমাদের কী কী করা উচিত?
উঃ। (a) রেডিয়ো মারফত বন্যার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানা দরকার। (b) দুর্যোগ পরবর্তী স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে এলাকায় তথ্য সরবরাহ করতে হবে। (c) বন্যার পরপর জল দায়িত্বপ্রাপ্ত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তথ্য বিনিময় ও নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে। (d) এলাকায় এলাকায় সতর্কতার সঙ্গে টহলদারি গোষ্ঠীর ব্যবস্থা করতে হবে।
7. বন্যার সময় আমাদের কী ক্ষয়ক্ষতি হয়?
উঃ। বন্যার সময় নানা ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। (a) ঘরবাড়ি এবং পরিকাঠামো জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে বা নষ্ট হয়। জল জমে ভূমিধসের সম্ভাবনা তৈরি হয়। উপকূল এলাকায় মাছ ধরার সরঞ্জাম বা নৌকা হারিয়ে যায়। ঘর বাড়ি ভেঙে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাসিন্দারা ও তাদের সম্পদ। (b) মানুষ ও পশু জলে ডুবে মারা যায়, বহু মানুষ মারাত্মক আহত হয়। ডায়ারিয়া, ভাইরাস সংক্রমণ ও ম্যালেরিয়ার মতো মহামারি দেখা যায়। (c) কুয়ো, ভূগর্ভস্থ জল, পাইপের জল সবই দুষিত হয়ে পড়ে। পরিষ্কার জল পাওয়া যায় না। ফলে জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় পানীয় জলের সংকট দেখা দেয়। (d) প্রচুর মাঠের ফসল জলে ডুবে নষ্ট হওয়ায় হঠাৎ করে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। সেইসঙ্গে পশুখাদ্য নষ্ট হয়। গুদাম এবং খাদ্যসামগ্রী মজুত করার অন্য সুবিধাও জলে ডুবে যাওয়ায় খাদ্যসংকট তৈরি হয়। (e) বন্যায় মাটির উপরে অংশ জলে ধুয়ে যাওয়ায় বা লবণমুক্ত জলের প্রভাবে জমি উর্বরতা হারায়।
8.বন্যার পূর্ববর্তী সময়ে কী কী করা উচিত?
উঃ। বন্যার পূর্ববর্তী সময়ে যে যে পদক্ষেপগুলি নিতে হবে তা হল – (a) সারাদিন ধরে রেডিয়ো, টেলিভিশন ও প্রশাসনিক ওয়্যারলেস মারফত প্রচারিত আবহাওয়ার সতর্কীকরণের উপর একটানা লক্ষ্য রাখতে হবে। (b) বিপর্যয়ের আগাম আভাস পাওয়া মাত্রই মাইক বা অন্য কিছুর মাধ্যমে গ্রামের জনগোষ্ঠীর কাছে খবর পৌঁছে দিতে হবে। প্রয়োজনে সাইকেল, গোরুর গাড়ি, সাইকেল ভ্যান, নৌকা অন্য কোনো পরিবহনের সাহায্য নিতে হবে। (c) নিকটবর্তী প্রশাসনিক অফিসগুলির টেলিফোন নম্বর ও ঠিকানা যাতে এই গোষ্ঠীর কাছে থাকে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5/7
1. বন্যার প্রধান কারণগুলি লেখো।
উঃ। সাধারণত স্থলভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা যখন অস্থায়ীভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়ে তখন তাকে বন্যা বলে। এই বন্যার কতগুলি কারণ হল- (i) নদীর গতিপথ অবরুদ্ধ হয়ে গেলে নদীর জল দুকুল ছাপিয়ে বইতে থাকে বিস্তীর্ণ এলাকা তখন জলমগ্ন হয়ে পড়ে। (ii) নদী তার নাব্যতা হারিয়ে নদীর জল | যখন দুকূল ছাপিয়ে পাশ্ববর্তী এলাকাকে প্লাবিত করে তখন ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। (iii) বরফ গলার ফলে নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়ে বন্যা দেখা দেয়। বর্তমানে পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্ব উন্নায়নের ফলস্বরূপ মেরু প্রদেশে জমে থাকা বরফ গলে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। (iv) ভরা কোটালের সময় নদী মোহনায় সাময়িক বন্যা দেখা দিতে পারে। (v) ভূমিকম্পের বিশেষ গঠনগত কারণেও অনেক সময় বন্যা দেখা দিতে পারে। (vi) পাহাড়ি অঞ্চলে অত্যাধিক বৃষ্টির ফলে হড়পা বানের কারণে বন্যা দেখা দেয়। (vii) অনেক সময় সমুদ্র তলদেশে ভূমিকম্পের ফলে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বা সুনামির ফলেও উপকূলভাগে ভয়ংকর বন্যা দেখা দেয়। (viii) বিশেষ আবহাওয়া জনিত কারণও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে থাকে।
2. বন্যার ফলে অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উপায় গুলি কী কী?
উঃ। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য কতগুলি উপায় গ্রহণ করতে হয়। সেগুলি হল— (i) জলাধার, নিয়ন্ত্রণবাঁধ, নিকাশি নালা প্রভৃতি নির্মাণ করে এবং গাছপালার সংখ্যা বৃদ্ধি করে জলের বেগকে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। (ii) বাঁধ থেকে জল ছাড়া ও আটকে রাখার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। (iii) বন্যার সতর্কতা জারি হবার সাথে সাথে কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয় কোথায় আছে তা চিহ্নিত করে, সময় নষ্ট না করে সেখানে আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। (iv) উঁচু জায়গায় বাড়িঘর তোলা যেতে পারে, বাড়িঘর জলাধার থেকে দূরে তৈরি করা উচিত। (v) চাষবাসের ক্ষেত্রে বন্যার কথা মাথায় রেখে ক্ষতি হয় না এমন চাষের বীজ ফেলতে হবে।
3. বন্যার সময় কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ?
উঃ। (i) ঘর ও ছাদের দরজা জানালা পেরেক মেরে বন্ধ করতে হবে। (ii) নিরাপদ আবাসে পৌঁছানোর রাস্তাঘাট ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার। (iii) মই, বেলচা, কাঠের বালতি ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখতে হবে (iv) বাঁধ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। (v) মজবুত, শক্তপোক্ত ও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ কোনো বাড়িতে অন্যদের দামি জিনিসপত্র, সারের বস্তা, খাদ্য শস্য ইত্যাদি সরানোর ব্যবস্থা করা। (vi) নিয়মিত রেডিয়োতে আবহাওয়ার সতর্কতা শোনা, যাতে আধিকারিক ব্যক্তিগতভাবে জানাতে না পাড়লেও সকলে প্রাথমিক শুরু করতে পারবেন। (vii) হ্যারিকেন, টর্চ, দেশলাই, ব্যাটারি হাতের কাছে তৈরি রাখতে হবে। (viii) চিকিৎসা সংক্রান্ত শিবির পরিচালনা করতে হবে। (ix) সুরক্ষিত উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে। (x) ব্যাটারিচালিত রেডিয়ো ব্যবহার করতে হবে। (xi) প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির একটি তালিকা সংগ্রহ এবং নথিপত্র ইত্যাদিকে প্লাস্টিকের ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে সেগুলি জলে নষ্ট না হয়। (xii) আটা, ময়দা, চিড়ে, গুড় ইত্যাদি মজুত করতে হবে এবং ২-৩ দিনের মতো একটি পরিবারের পানীয় জল জেরিকানে ও প্যাকেটে মজুত করতে হবে। (xiii) শুধুমাত্র নলকূপের জল পান করতে হবে, কুয়ো বা পুকুরের জল পান করার আগে ফুটিয়ে নিতে হবে। (xv) গুজব যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
4. বন্যার ক্ষয়ক্ষতি আটকাতে ছাত্র-ছাত্রীদের কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে?
উঃ। (i) মানচিত্রে তৈরি করে পূর্বসতর্কতা : এলাকায় বন্যার ঝুঁকি কমাতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করা, ছাত্রছাত্রীরা যা সহজেই করতে পারে। বিগত নথি থেকে জানা যায় বানভাসি এলাকায় কখন বন্যা আসে আর কতটা বিস্তৃত হয়। মূল মানচিত্রের সঙ্গে অন্যান্য মানচিত্র ও তথ্য একসঙ্গে করলে সম্পূর্ণ বানভাসি এলাকার চিত্র বোঝা যায়। বন্যা হবার সম্ভাবনা থাকলে আগেরবারের জলের উচ্চতার উপর ভিত্তি করে সতর্কতা জারি করা যেতে পারে। উপকূল এলাকার ঢেউয়ের উচ্চতা ও ভূমির চরিত্র থেকে বানভাসি এলাকা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বন্যাসংক্রান্ত দুর্যোগ-মানচিত্র বন্যার সময় জলের গতি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। কাছকাছি নিরাপদ আশ্রয় কোথায় আছে তা চিহ্নিত করে রাখা যায় বলে প্রয়োজনের সময় নষ্ট না করে সেখানে আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে।
(ii) প্রশিক্ষণ নিয়ে সংস্কারমূলক প্রকল্পভিত্তিক কাজ করে : গাছপালার সুরক্ষা, স্রোত ও অন্যান্য জলাধার থেকে নুড়ি-পাথর ইত্যাদি পরিষ্কার করা, লেক ও পুকুর সংরক্ষণ করা প্রভৃতির মাধ্যমেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বন্যার তীব্রতা কমাতে ছাত্রছাত্রীরা তাদের এলাকার নিকাশি নালার সংস্কার করার কাজে হাত দিতে পারে। বালির বস্তা ব্যবহার করার মাধ্যমে জল আটকানোর কাজ করা, বন্যার স্বাভাবিক গতিবেগকে আটকানো ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখতে পারে এবং অংশগ্রহণমূলকভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের সঙ্গে মিশে বন্যার জল ঢোকা রুখতে নদীবাঁধ মেরামতি, বালির বস্তা দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সরগ্রাম মজুত করার কাজে শামিল হতে পারে।
No comments:
Post a Comment