Chapter - 6 History Questions And Answers Class 8th || অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস অধ্যায় - 6 প্রশ্ন উত্তর - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 31 December 2024

Chapter - 6 History Questions And Answers Class 8th || অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস অধ্যায় - 6 প্রশ্ন উত্তর

  

ষষ্ঠ অধ্যায়
প্রশ্ন উত্তর
 




সপ্তম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে ক্লিক করো
👉 ( সপ্তম অধ্যায়)


❐ অতি - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ

১. কত খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভা বসেছিল ? 

উঃ । ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভা বসেছিল ।


 ২. জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভার সভাপতি কে ছিলেন ?

 উঃ । জাতীয় কংগ্রেসের সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ।


 ৩. কত খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগঠনরূপে চিহ্নিত করা হয় ? 

উঃ । ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগঠনরূপে চিহ্নিত করা হয় ।


 ৪. ভারতীয় বিচারকের কাদের বিচার করার অধিকার ছিল না ? 

উঃ । ভারতীয় বিচারকের ইউরোপীয়দের বিচার করার অধিকার ছিল না । 


৫. ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন কোন্‌টি ?

 উঃ । জমিদার সভা । 


৬. ' ইন্ডিয়ান লিগ ’ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ? 

উঃ । ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে । 


৭. কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয় সম্মেলন আয়োজিত হয় এবং এর প্রথম সভাপতি কে ছিলেন ? 

উঃ । ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় সম্মেলন আয়োজিত হয় । এর প্রথম সভাপতি ছিলেন রামতনু লাহিড়ি । 


৮. হিউমের জীবনীকার কে ছিলেন ? 

উঃ । হিউমের জীবনীকার ছিলেন ওয়েডারবার্ন ।


 ৯. কে কবে ‘ দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন ’ চালু করেন ? 

উঃ । ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন চালু করেন । 


প্রঃ । কবে কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশন হয়েছিল ? 

উঃ । ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে । 


১০. ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে কাদের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান আসোসিয়েশন বা ভারত সভা তৈরি হয় ?

 উঃ । ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারতসভা তৈরি হয় । 

১১. প্রথম দু - দশকের কার্যকলাপের নিরিখে বিচার করলে কংগ্রেসের আদিপর্বের নেতৃত্বকে কী বলে চিহ্নিত করা যায় ? 

উঃ । ‘ নরমপন্থী ’ বলে চিহ্নিত করা হয় ।


১২. ' তিন - দিনের তামাশা ' বলতে কী বোঝ ?

 উঃ । প্রথম দু - দশকের সময়ে কংগ্রেসের কার্যক্রম ছিল বার্ষিক তিন দিনের অধিবেশন কেন্দ্রিক । তাই তাকে ব্যঙ্গ করে ‘ তিন দিনের তামাশা ' বলা হতো । 


১৩. জাধিকাংশ নরমপন্থীর কাছে ব্রিটিশ শাসন কী ছিল ?

উ:  । অধিকাংশ নরমপন্থীর কাছে ব্রিটিশ শাসন ছিল ‘ বিধির বিধান ।


 ১৪. নরমপন্থীদের দাবি কী ছিল ?

 উঃ । নরমপন্থীদের দাবি ছিল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার বয়স ১৯ - এর বদলে ২৩ বছর করতে হবে । পাশাপাশি , ভারতে ও লন্ডনে একইসঙ্গে পরীক্ষাটি নিতে হবে । 


১৫. ' লাল - বাল - পাল ' কাদের বলে অভিহিত করা হতো ?

 উঃ । বিপিনচন্দ্র পাল , বালগঙ্গাধর তিলক এবং লালা লাজপত রাই এদের তিনজনকে ‘ লাল - বাল - পাল ' বলে অভিহিত করা হতো ।


 ১৬. নরমপন্থীদের আবেদন নিবেদন ' পদ্ধতিকে কী বলে ব্যঙ্গ করা হতে থাকে ? 

উঃ । রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি বলে ব্যঙ্গ করা হতে থাকে । 


১৭. নরমপন্থার প্রতিক্রিয়া হিসাবে কীসের উদ্ভব ঘটে ? 

উঃ । চরমপন্থার উদ্ভব ঘটে । 


১৮. কোন্ কোন্ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে চরমপন্থার বিকাশ হয় ? 

উঃ । প্রধানত বাংলা , মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাব অঞ্চলকে কেন্দ্র করে চরমপন্থার বিকাশ ঘটে ।


 ১৯. কোন্ পত্রিকার সম্পাদনাকে কেন্দ্র করে কাদের মধ্যে বিবাদ ছিল ?

 উঃ । ‘ বন্দেমাতরম ' পত্রিকার সম্পাদনাকে কেন্দ্র করে অরবিন্দ ঘোষ , বিপিনচন্দ্র পাল ও ব্রষ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের মধ্যে বিবাদ ছিল । 


২০. মহারাষ্ট্রের পুনা সার্বজনিক সভার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল ? 

উঃ । নরমপন্থী নেতা গোখলের সঙ্গে চরমপন্থী নেতা বালগঙ্গাধর তিলকের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল ।


 ২১. বিংশ শতকের প্রথম দশকে বাংলার কোন আন্দোলন চরমপন্থার সব থেকে জোরালো নজির ছিল ? 

উঃ । বঙ্গ - ভঙ্গ - বিরোধী স্বদেশি আন্দোলন । 


২২. কোন সালের কত তারিখে সরকারিভাবে বাংলা বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয় ? 

উঃ । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ১৯ জুলাই সরকারিভাবে বাংলা বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয় ।


 ২৩. করে ও কার নেতৃত্বে ঢাকা অনুশীলন সমিতি তৈরি হয় ? 

উঃ । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে পুলিনবিহারী দাসের নেতৃত্বে ঢাকা অনুশীলন সমিতি তৈরি হয় ।


 ২৪. কোন্ পত্রিকা বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের মুখপত্র হয়ে ওঠে ? 

উঃ । ‘ যুগান্তর ’ পত্রিকা ।


 ২৫. কত খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় ? 

উঃ । ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় । 


২৬. মহারাষ্ট্রে কার নেতৃত্বে কোন্ উৎসব চালু হয় ? 

উঃ । মহারাষ্ট্রে বালগঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে ‘ শিবাজি উৎসব ’ চালু হয় । 


২৭. উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে ভারতীয়রা কীসের দাবী জানাতে শুরু করে ? 

উঃ । প্রতিনিধিমূলক স্বায়ত্বশাসনের দাবী জানাতে শুরু করে । 


২৮. ভারতের বড়োলাট মিন্টো এবং ভারতসচিব মর্নে কত খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট পাস করেন ?

 উঃ । ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে । 


২৯. বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

উঃ । আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ।


 ৩০. অনুশীলন সমিতি কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

উঃ । ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে সতীশচন্দ্র বসু । 

৩১. কারা কিংসফোর্ডকে মারার উদ্যোগ নেন ? 

উঃ । ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি কিংসফোর্ডকে মারার উদ্যোগ নেন ।


৩২. বাঘা যতীন কীভাবে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে ছিলেন ? 

উঃ । বাঘা যতীন জার্মানি থেকে অস্ত্র আনিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন । 


৩৩. বঙ্গভঙ্গের সময় বাংলার ভাইসরয় কে ছিলেন ? 

উঃ । লর্ড কার্জন । 


৩৪. বালক্ষ্মী কটন মিল কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?

 উঃ । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে । 


৩৫. কোন্ পত্রিকায় প্রথম বয়কট আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয় ? 

উঃ । সঞ্জীবনী পত্রিকায় । 


৩৬. কার উদ্যোগে এবং কবে ‘ রাখীবন্ধন উৎসব ’ পালিত হয় ? 

উঃ । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে । 


৩৭. উত্তর ভারতে কোন বিপ্লবী দলের উদ্যোগে বিপ্লবী কার্যকলাপ চলত ? 

উঃ । গদর দলের উদ্যোগে ।


 ১৮. বঙ্গভঙ্গের পর ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে কোথায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ? 

উঃ । দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । 


৩৯. কে কৰে নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করেন ? 

উঃ । ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে লর্ড নর্থব্রুক নাট্যভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করেন । 


❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ


১. ইলবার্ট বিল বিতর্ক কী :

 উঃ । কোনো ভারতীয় বিচারকের ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করার অধিকার ছিল না । এই অসাম্য দূর করার জন্য জেনারেল লর্ড রিপনের আইনসভার সদস্য সি . পি . ইলবার্ট বিচার বিভাগীয় ক্ষেত্রে এই অসাম্য দূর করতে একটি বিল আনেন , তাতে বলা হয় ভারতীয় বিচারকরা , ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারবেন । এর প্রতিবাদে ইউরোপীয়রা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন । এর ফলে বিল যাতে প্রত্যাহার না করা হয় তারজন্য ভারতসভার উদ্যোগে ভারতীয়রা আন্দোলন শুরু করেন । উভয় পক্ষের এই আন্দোলন ও পাল্টা আন্দোলন বিতর্ককে ' ইলবার্ট বিল বিতর্ক বলা হয় । 


২.  ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ও জাতীয় সম্মেলন সম্পর্কে যা জানো লেখো । 

উঃ । জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয়তাবাদী সংগঠনের মধ্যে কলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারত সভা ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন । ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারত সভা গঠিত হয় । ওই সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশের জনগণকে বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একজোট ‘ করা । ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত সভার উদ্যোগে কলকাতায় প্রথমবার একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করা হয় । এর সভাপতিত্ব করেন রামতনু লাহিড়ি । 


৩. লর্ড লিটন ও দমনমূলক আইন সম্পর্কে কী জানা যায় ? 

উঃ । ব্রিটিশ শাসনের বেশ কয়েকটি দমনমূলক আইনের কথা জানা যায় । ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে লর্ড নর্থব্রুক নাট্যভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন জারি করেন । এর উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়তাবাদী ভাবধারার নাটকগুলির প্রচার বন্ধ করা । লর্ডলিটন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন । ভারতের সংবাদপত্রগুলি এই পদক্ষেপ নিয়ে ভীষণভাবে সমালোচনা করেছিলেন । ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন দেশীয় মুদ্রণ আইন জারি করেন । ওই আইনে বলা হয় , দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলি কোন সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রচার করতে পারবে না । এর যদি অন্যথা হয় তবে সরকার ওই সংবাদপত্র ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত করবে । ওই আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রবল আন্দোলন শুরু হলে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড রিপন ওই আইনটি বাতিল করেন । লর্ড লিটন ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য অস্ত্রআইনও জারি করেছিলেন ।


৪. উপনিবেশিক স্বায়ত্বশাসন : সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় - এর বিশ্লেষণ কী ছিল ? 

উঃ । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , অনেকে ভাবছেন সভ্য জগতে মর্যাদার স্থান পেতে হলে , নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণিত করতে হলে স্বাধীনতা আবশ্যক , আমরা খাঁটি স্বায়ত্বশাসন চাই । উপনিবেশিক স্বায়ত্বশাসনের সীমাবদ্ধতায় আটকে থেকে লাভ নেই । ইতিমধ্যে আমরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ডোমিনিয়ন স্টেটাস লাভ করার জন্য কাজ করে যাব । 


৫.  অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ কী ? 

উঃ । ভারতের আর্থিক দুরবস্থায় ব্রিটিশ শাসনের ভূমিকা নিয়ে নরমপন্থী নেতৃত্ব প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন । এই প্রক্রিয়াকে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ বলা হয় । অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের দারিদ্র্য ও ব্রিটিশ শাসনের সম্পর্ক নির্ণয় করা । এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন দাদাভাই নৌরজি , মহাদেব গোবিন্দ রানাডে ও রমেশচন্দ্র দত্ত । তাঁদের যুক্তি ছিল ভারত ব্রিটেনের কাঁচামাল আহরণের ভূমিতে পরিণত হয়েছে । ভারতের কৃষি ও শিল্প ধ্বংসের ফলে দেশের যাবতীয় সম্পদ বিদেশে চলে যায় । নরমপন্থীরা একে সম্পদ নির্গমণ বলেন । এর পাশাপাশি উঁচু হারে ভূমি - রাজস্ব চালু থাকায় কৃষক ও কারিগর সবাই নিঃস্ব হয়ে পড়ে । ব্রিটিশ পণ্যের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় ভারতীয় পণ্য মার খায় কারণ ব্রিটিশ পণ্য আমদানিতে শুল্ক বসানো হতো না । এবং ভারতের শিল্পায়ন ব্যাহত হতে থাকে । কৃষির ওপর চাপ বাড়ে ফলে কৃষির উপযুক্ত কাঠামো না থাকায় দেশের দারিদ্র্য আরও বেড়েছিল । এই নেতিবাচক বিষয়গুলির প্রতিকার করে একটি জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার ভাবনা অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদকে পুষ্ট করেছিল । 


৬.  সরলাদেবী ও প্রতাপাদিত্য উৎসব - এর বর্ণনা দাও । উঃ । সরলাদেবীর সঙ্গে যে সমস্ত ছেলেদের পরিচয় ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম গণিলাল গালি । তিনি তাদের বাৎসরিক সভায় সরলাদেবীকে সভাপতিত্ব করতে বললে তিনি জানান , সাহিত্য সভা না করে ১ লা বৈশাখ প্রতাপাদিত্য উৎসব করো । আর যে সমস্ত ছেলে কুস্তি জানে , তলোয়ার খেলতে জানে , লাঠি চালায় , বক্সিং জানে তাদের খুঁজে বের করো । আমি তাদের মেডেল দেব । এতে মনিলাল রাজি হয়ে গেল । সবাই মিলে খেলোয়াড় জোগাড় করে প্রদর্শনী করল । শেষে সরলাদেবী প্রত্যেককে মেডেল দিলেন । সরলাদেবীর প্রতাপাদিত্য উৎসবের উদ্যোগ রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করেননি । তিনি প্রতাপাদিত্যকে ‘ জাতীয় বীর ' রূপে তুলে ধরার বিপক্ষে ছিলেন । 


৭। চরমপন্থীদের স্বরাজ ভাবনা কী ছিল ? 

উঃ । চরমপন্থীদের আদর্শগত লক্ষ্য ছিল স্বরাজ অর্জন করা । বিভিন্ন চরমপন্থী নেতারা স্বরাজ ধারণাটিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন । বিপিনচন্দ্র পাল মনে করতেন স্বরাজ মানে চূড়ান্ত স্বাধীনতা যা ব্রিটিশের অধীনে থেকে কোনো ভাবেই সম্ভব নয় । এবিষয়ে অরবিন্দ ঘোষেরও একই মত ছিল । কিন্তু তিলক মনে করতেন প্রশাসনকে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণে আনার মধ্য দিয়ে স্বরাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে । বাস্তবে বেশিরভাগ চরমপন্থী নেতাই স্বরাজ বলতে ব্রিটিশ সাত জ্যের মধ্যেই স্বশাসনের অধিকারকে বুঝতেন । ফলে চরমপন্থী আন্দোলন আবেদন নিবেদেনের বদলে ঔপনিবেশক সরকারের চাপিয়ে দেওয়া অনায্য আইনগুলি অমান্য করে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করার ডাক দেন । পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ও জিনিসপত্র বর্জনের কথা বলা হয় । এর বিকল্পরূপে দেশীয় শিল্প ও শিক্ষার উপরে চরমপন্থী নেতৃত্ব জোর দেন । 


৮.  জাতীয় কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশন - এর বিবরণ দাও । 

উঃ । পুনা শহরে ১৯০৭ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন বসার কথা ছিল । কিন্তু পুনায় চরমপন্থীরা শক্তিশালী এই যুক্তিতে নরমপন্থীরা অধিবেশন সুরাটে করার প্রস্তাব দেন । সুরাট অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে মতভেদ দেখা যায় । নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের চরম বিবাদের মধ্যে দিয়ে সুরাট অধিবেশন শেষ হয় । নরমপন্থী নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় চরমপন্থী নেতা বালগঙ্গাধর তিলক চেষ্টা করেছিলেন কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে । কিন্তু নরমপন্থী নেতা ফিরোজ শাহ চরমপন্থীদের বাদ দিয়ে এলাহাবাদ অধিবেশনের আয়োজন করলেন । অন্যদিকে চরমপন্থী নেতারাও নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ব্যর্থ হন । নরমপন্থী চরমপন্থী বিরোধ - এর ফলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিরাট ধাক্কা খেয়েছিল । কলেজ , বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ও বেশ কয়েকটি জাতীয় বিদ্যালয় তৈরি হয় । পূর্ববঙ্গের জাতীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিপ্লবী আন্দোলনের কর্মী হিসাবেও কাজ করতেন । ঢাকার কাছে সোনারঙ জাতীয় বিদ্যালয়ের নাম এ বিষয়ে বিশেষ উল্লেখযোগ্য । তবে বরাদ্দ টাকা কম থাকার জন্য জাতীয় শিক্ষার বিস্তার থমকে যায় । 


৯. মলে - মিন্টো সংস্কার আইন কী ?

 উঃ । উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে ভারতীয়রা প্রতিনিধিমূলক স্বায়ত্ব শাসনের দাবী জানাতে থাকে । ধীরে ধীরে ইংরেজ সরকারের নানা সমস্যার উদ্ভব হয় । বিশেষ করে চরমপন্থী আন্দোলন যা সরকারের চিন্তার কারণ হয়েছিল । এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বাংলা ও মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন । এই অবস্থায় বড়োলাট আর্ল অভ মিন্টো এবং ভারত সচিব জন মর্লে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট পাস করেন । এই আইনে বড়োলাটের কার্য নির্বাহক পরিষদে ও আইন পরিষদে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয় । এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার চরমপন্থীদের বিপরীতে নরমপন্থীদের কাছে টেনে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করতে চেয়েছিল । অন্যদিকে মুসলমানদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়া হয়েছিল । 


১০.  কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টার বিবরণ দাও । উঃ । বিচারক কিংসফোর্ডকে হত্যার ষড়যন্ত্র অনেক দিন ধরে বাংলার বিপ্লবীরা করছিলেন । ১৯০৮ সালের ৩০ শে এপ্রিল মজফফরপুরে কিংসফোর্ডের গাড়িতে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি বোমা মারেন । কিন্তু ওই গাড়িতে মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা ছিলেন । কিংসফোর্ড ছিলেন না , পরদিন ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন । বিচারে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয় । প্রফুল্ল চাকি ধরা পড়ে নিজেকে গুলি করে । আত্মহত্যা করেন । ক্ষুদিরামের স্মরণে গান লেখা হয়— “ একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি । ” 


১১. কংগ্রেস বিভাজনে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য কী ছিল ? 

উঃ । রবীন্দ্রনাথ বলেছেন কংগ্রেস ভেঙ্গে গেল — এরকমটা যে ঘটতে পারে তা অনেকদিন ধরে অশঙ্কা হচ্ছিল । কিন্তু নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে তারা চেষ্টা করেনি । কংগ্রেসের সভাপতিরা সহজ সত্যকে স্বীকার করেনি । চরমপন্থী বলে একটা দলের উদ্ভব হয়েছে এটা সত্য । এটাকে এড়িয়ে যাবার বা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই । চরমপন্থীরাও এমন কোমর বেঁধে নেমেছেন যেন দেশ থেকে কি একটা বাধা ঠেলে সরানো হচ্ছে । সব মিলিয়ে বলা । যায় বিরুদ্ধ পক্ষের সত্তাকে যথেষ্ট সত্য বলিয়া স্বীকার না করার চেষ্টাতেই এবার কংগ্রেস ভেঙ্গেছে । 


১২. স্বদেশি যুগ : অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখে কীরূপ ছিল ? 

উঃ । অবনীন্দ্রনাথ সকলের সঙ্গে নাটোরে গিয়েছিলেন প্রভিন্সিয়াল কনফারেন্স উপলক্ষে । নাটোরে যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে বাংলায় বক্তৃতা দিতে হবে বলে জোর দাবি তোলা হয় । যেই ইংরেজিতে কেউ মুখ খোলে সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার শুরু হয় বাংলা চাই । এরপর কনফারেন্সে বাংলা ভাষা প্রচলন হয় । অবনীন্দ্রনাথ দেশমাতার ছবি আঁকলেন । নিজেদের সাজ পোশাক বদলে স্বদেশি পোশাকে সেজে নিলেন । রবিকাকা অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান তৈরি করলেন , দিনু দলবল নিয়ে পতাকা ঘাড়ে করে সেই গান গেয়ে চোরবাগান ঘুরে চাঁদা তুলে নিয়ে এল । রবিকাকার নেতৃত্বে রাখিবন্ধন উৎসব শুরু হল । পায়ে হেঁটে জগন্নাথ ঘাটে গঙ্গায় স্নান করে রাখী পূর্ণিমায় শাঁখ বাজিয়ে একে অপরের হাতে রাখি বেঁধেছেন স্বয়ং রবিঠাকুর । স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের ফলে পুলিশ দমন পীড়ন শুরু করেন । বিলাতি দ্রব্য বর্জনের জন্য জোর জবরদস্তি রবিকাকার পছন্দ হলো না । তিনি আন্দোলন থেকে সরে এলেন । অবনীন্দ্রনাথের কথায় গেল আমাদের স্বদেশি যুগ ভেঙ্গে । অবনীন্দ্রনাথের মতে তিনি স্বদেশি যুগের দেশের জন্য কিছু করতে হবে । ভেবেছিলেন সেই ভাবটাই তার ছবির জগতে ফুটে উঠেছিল । 


১৩. স্বদেশি শিল্প কীভাবে শুরু হয় ? 

উঃ । বয়কট ও স্বদেশি আন্দোলনের ফলে অনেক দেশীয় শিল্প গড়ে উঠল । ছোটো ছোটো শিল্পের পাশাপাশি বড়ো শিল্পও গড়ে উঠেছিল । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে চালু হয়েছিল বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিল্স । চিনামাটির পাত্র , সাবান , দেশলাই প্রভৃতির দেশীয় কলকারখানা গড়ে ওঠে । তবে মূলধনের অভাবে স্বদেশি শিল্পগুলি বিশেষ সাফল্য পায়নি । তবে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় - এর বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ছিল এর ব্যতিক্রম । 


১৪.  হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিভেদ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্লেষণ কী ছিল ? 

উঃ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ ব্যাধি ও প্রতিকার ’ প্রবন্ধের একজায়গায় বলেছেন — ইংরেজরা গোপনে মুসলমানদের ‘ উত্তেজিত করছে এতে আমরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে রাগ করব কেন ? ইংরেজরা শোষণ করে না , বিভেদনীতি প্রয়োগ করবে না এতটা নির্বোধ ইংরেজদের ভাবাটা কি ঠিক ? মুসলমানদের যে হিন্দুদের বিরুদ্ধে লাগানো যেতে পারে ভেবে দেখা দরকার , কে লাগাচ্ছে সেটা তত গুরুতর বিষয় নয় । এতদিন আমরা পাশাপাশি আছি , একই জল , ফল - ফসল খাচ্ছি ; একই ভাষায় কথা বলছি । একসঙ্গে সুখে দুঃখে আমরা মানুষ ; আজ কি এমন ঘটল যে দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হলো । ইংরেজ যে আজ সারা ভারতবর্ষে চেপে বসেছে তা কি কেবলই গায়ের জোরে ? স্বদেশি আন্দোলনের ফলে আমরা যদি স্নেহবশত জনগণকে ভালোবাসতাম তবে ইংরেজি শিক্ষা আমাদের পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছেদ না ঘটিয়ে মিলনকে দৃঢ় করতে পারত , সেটি উত্তম হতো । নিজেদের মধ্যে আলস্যে থাকলে কি আর উন্নয়ন ঘটানো যায় । নিজেরা যদি সৎ হই তাহলে বিপদের মুখে এগিয়ে যাবো সবাই কে নিয়ে । 


১৫. জাতীয় শিক্ষা সম্পর্কে যা জানো লেখো । উঃ । স্বদেশি আন্দোলনের ফলে ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বিরাগ তৈরি হয় । তাই মাতৃভাষায় সমস্ত বিষয়ে পঠন - পাঠন চর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয় । এই উদ্যোগের একটি উদাহরণ হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ তৈরি হয় । অনেক ছাত্রই জাতীয় বিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি হতো । বেঙ্গল ন্যাশনাল


 ১৬.  জাতীয় সম্মেলনের গুরুত্ব আলোচনা করো । 

উঃ । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ভারত সভার উদ্যোগে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রথমবার একটি সর্বভারতীয় সম্মেলন বা জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করা হয় । এর সভাপতি ছিলেন রামতনু লাহিড়ি । এই সম্মেলনে স্বায়ত্বশাসন , প্রতিনিধিমূলক ব্যবস্থা পরিষদ , সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা , বিচার ব্যবস্থা পৃথকীকরণ প্রভৃতি নানা বিষয়ে আলোচনা হয় । এই আন্দোলন পরিচালনার জন্য ‘ জাতীয় ধনভাণ্ডার ’ গঠিত হয় । আনন্দমোহন বসু জাতীয় সম্মেলনকে ‘ জাতীয় পার্লামেন্টের দিকে প্রথম পদক্ষেপ ' বলে অভিহিত করেন ।


 ১৭. জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব কীভাবে কংগ্রেস পরিচালনা করতেন ? 

উঃ । প্রথম থেকেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দেশের ভিতরে আঞ্চলিক পার্থক্য ও স্বার্থগুলির বাইরে এক বৃহত্তর আদর্শ ও চিন্তার ডাক দেয় । কংগ্রেসের নীতি ছিল প্রতিবছর দেশের এক একটি স্থানে কংগ্রেসের অধিবেশন বসবে । বলা হয় যে অঞ্চলে অধিবেশন বসবে সেখানের কেউ কংগ্রেসের সভাপতি হতে পারবেন না । এক ঐক্যবদ্ধ সংগঠন গড়ার জন্য কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ এইসব নীতি নেন । ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ঠিক হয় যে কোনো প্রস্তাবে যদি বেশিরভাগ হিন্দু বা মুসলমানদের সমর্থন না পাওয়া যায় তবে সেই প্রস্তাব স্থগিত থাকবে । এইভাবে গণতান্ত্রিক ও সার্বিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব কংগ্রেস পরিচালনা করতেন ।


 ১৮. জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলি আলোচনা করো । 

উঃ । জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই কংগ্রেসের মধ্যে নানা সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল । ভারতীয় সমাজের সব ধরনের মানুষ কংগ্রেসের আওতায় ছিল না । লিঙ্গগত ও শ্রেণিগত প্রতিনিধি সমান ছিল না । কংগ্রেসের আদি নেতৃত্বের মানুষজন ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ও সম্মানীয় পেশার । ফলে তাঁরা নিম্নবর্গের মানুষজনের অভাব অভিযোগকে সেভাবে সংগঠনের বৃত্তে আনতে চাননি । মুখে সর্বভারতীয় বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে বোম্বাই , মাদ্রাজ ও বাংলা প্রেসিডেন্সির কিছু শিক্ষিত , ব্যবসায়ী ও জমিদার শ্রেণিই ছিলেন কংগ্রেসের প্রধান স্তম্ভ । এছাড়া নেতৃত্বের মধ্যে উচ্চবর্গীয় হিন্দুরাই ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ , তাঁরা নিজেরাই নিজেদের জাতির প্রতিনিধি হিসেবে প্রচার করে গৌরববোধ করতেন । এর ফলস্বরূপ সামাজিক ও সম্প্রদায়গতভাবে জাতীয় কংগ্রেসের কর্মসূচিগুলি প্রকৃত জাতীয় চরিত্র হারিয়ে ফেলে । 


১৯. মহারাষ্ট্রে কীভাবে সমস্ত বিপ্লৰী কার্যকলাপ সংগঠিত হয় ? 

উঃ । ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম ধাত্রীভূমি ছিল মহারাষ্ট্র । ১৮৭৬-৭৭ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রে বাসুদেও বলবস্তু ফাদকে সাধারণ মানুষদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরি করেন । ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অর্থের প্রয়োজনে ফাদকে তাঁর দলকে ডাকাতি করতে পাঠান । শেষ অবধি ফাদকে ধরা পড়েন ও তাঁর সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় । এরপরও মহারাষ্ট্রে বিভিন্ন সমিতি ও আখড়ার মাধ্যমে বিপ্লবী কার্যকলাপ চলতে থাকে । বাল গঙ্গাধর তিলক প্রকাশ করেন ‘ কেশরী ’ ও ‘ মারাঠা ' পত্রিকা । গণপতি ও শিবাজি উৎসব দ্বারা মানুষ অনুপ্রাণিত হয় । ' আর্যবান্ধব সমাজ -এর মতো গুপ্ত সমিতি মহারাষ্ট্রের ছাত্র - যুবকদের মনে বিপ্লবী চেতনা গড়ে তোলে । 


২০. চরমপন্থীদের নেতৃত্বে কীভাবে জাতীয়তাবাদী প্রতিবাদ গড়ে ওঠে ? 

উঃ । লর্ড কার্জনের কয়েকটি প্রশাসনিক সংস্কার ও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী প্রতিবাদ গড়ে ওঠে । ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে আইন করে কার্জন পৌরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংখ্যা কমিয়ে দেন । ১৯০৪ - এ আইন করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর নজরদারি কঠোর করা হয় । এছাড়া ঔপনিবেশিক সরকার ভারতীয়দের স্বশাসনের অযোগ্য ‘ পৌরুষহীন ’ জাতি বলে বর্ণনা করত । এর বিরোধিতা করে চরমপন্থীরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক ব্যক্তিদের জাতীয় আদর্শ বলে তুলে ধরেন । মহারাষ্ট্রে তিলকের নেতৃত্বে ‘ শিবাজি উৎসব ’ প্রচলিত হয় । এর পাশাপাশি শরীরচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয় । বাংলার বিভিন্ন জায়গায় চরমপন্থী নেতৃত্ব আখড়া , ব্যায়ামগার তৈরি করে কুস্তি , লাঠিখেলা , ছোরা , তরবারি প্রভৃতি চালানো শেখাতে থাকেন । এইভাবে চরমপন্থী নেতৃত্ব ও তাঁদের আন্দোলন নানাভাবে জাতীয়তাবাদী প্রতিবাদ গড়ে তোলেন । 


২১. ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের তাৎপর্য কী ছিল ? 

উঃ । ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের তাৎপর্য ছিল — সুরাট অধিবেশনে নরমপন্থী বনাম চরমপন্থী দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ নেয় । দুটি গোষ্ঠী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এর ফলস্বরূপ জাতীয় কংগ্রেসে ভাঙন দেখা দেয় । কংগ্রেসের ভাবমূর্তি মলিন এবং জাতীয় কংগ্রেস সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে । সুরাট অধিবেশনের ফলশ্রুতিতে ভারতীয় রাজনীতিতে চরমপন্থী মতাদর্শের আত্মপ্রকাশ ঘটে ।


  ❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তরঃ

 ১. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সূচনাপর্ব আলোচনা করো । 

উঃ । ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল । জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পিছনে অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজ কর্মচারী অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম এর উদ্যোগ ছিল । হিউম তার কাজের সূত্রে গোটা উপমহাদেশ ঘুরেছিলেন । সেই সুবাদে বিভিন্ন প্রদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল । সেই সময় নানা ঘটনায় ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী ক্ষোভের প্রকাশ দেখা যায় । ফলে রাজনৈতিকভাবে উদারমনা হিউম চেয়েছিলেন এমন একটি সংগঠন ভারতীয়রা গড়ে তুলুক যা তাদের স্বার্থরক্ষা করবে । এই উদ্দেশ্য হিউম বিভিন্ন ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে একসঙ্গে আলোচনার জন্য বসতে বলেন । ফলস্বরূপ ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইতে গোকুলদাস তেজপাল সংস্কৃত কলেজে একটি অধিবেশন বসে । এটিই ছিল জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন । এই অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় । 


২. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলন প্রকৃত গণআন্দোলন রূপে গড়ে উঠতে ব্যর্থ হয় কেন ? 

উঃ । বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বঙ্গভঙ্গ রদ করার যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে তা ক্রমেই স্বদেশি আন্দোলনে পরিণত হয় । কিন্তু এই আন্দোলন প্রকৃত গণআন্দোলনে পরিণত হতে পারেনি । কারণ আন্দোলনের অধিকাংশ নেতা ছিলেন বড়ো শহরের শিক্ষিত ভদ্রলোক গোষ্ঠীর মানুষ । ফলে স্বদেশি নেতৃত্ব জনগণের উপযোগী কোনো সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি হাজির করতে ব্যর্থ হন । এছাড়া স্বদেশি জিনিস ব্যবহারের জন্য গরিবদের ওপর জুলুম করা হতো । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বদেশি দ্রব্যের দাম বেশি হওয়ায় উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি তা কিনলেও গরিব জনগণের তা কেনার ক্ষমতা ছিল না । পাশাপাশি স্বদেশি নেতৃত্ব যখন শ্রমিক ধর্মঘটের আয়োজন করতেন তা থেকে হিন্দুস্থানি ও বাগিচা শ্রমিকরা বাদ পড়ে যেতেন । ফলে দরিদ্র কৃষক ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ স্বদেশি আন্দোলনে সামিল হতে পারেননি । এছাড়া বেশ কিছু চরমপন্থী নেতা স্বদেশি আন্দোলনে ধর্মীয় প্রতীক ও দেবদেবীর ছবি ব্যবহার করেন । এই প্রসঙ্গে হিন্দু ঝোঁক ক্রমেই বেড়ে চলে । ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ও বৈশব কৃষকরা এই আন্দোলনের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত হতে পারেনি । 


৩. বঙ্গভঙ্গ কী ? তার বিবরণ দাও । 

উঃ । বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের সমালোচক ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে লর্ড কার্জন বাংলাভাগের যে পরিকল্পনা করেন ইতিহাসে তা ‘ বঙ্গভঙ্গ ’ নামে পরিচিত । উনবিংশ শতকে বাংলা । প্রেসিডেন্সির ভৌগোলিক সীমানা ছিল বিশাল । ওই অঞ্চলে সুষ্ঠুভাবে প্রশাসনিক তদারকি ক্রমেই । ব্যয়বহুল ও অসুবিধাজনক হয়ে পড়ায় এর বিভাজন নিয়ে প্রশাসনিক আলোচনা শুরু হয় । ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে আসামকে স্বতন্ত্র অঞ্চল রূপে বাংলা থেকে আলাদা করে দেওয়া হয় । ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে কার্জন দেখেন বাংলার জনসংখ্যা ৭ কোটি ৮০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে ফলে তড়িঘড়ি বাংলা বিভাজনের উদ্যোগ । নেন কার্জন । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই সরকারিভাবে বাংলা বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয় । ওই বছর ১৬ অক্টোবর ওই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করা হয় । ঔপনিবেশিক সরকার প্রশাসনিক । সুবিধার যুক্তি দেখিয়ে বাংলা ভাগ করার কথা বললেও মনে করা হয় ঐক্যবদ্ধ বাংলা ও বাঙালিদের রাজনৈতিক বিরোধিতার সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দিতেই বাংলা বিভাজন করা হয়েছিল । আদতে বাংলা ভাগের উদ্যোগ ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়নি । বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বাঙালি সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল । বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ গড়ে ওঠে । ফলে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় । ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় । 


৪. বাংলায় বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ এর বিবরণ দাও । 

উঃ । বাংলাতে শরীরচর্চার প্রতিষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্র করে বিপ্লবী কার্যকলাপ সংগঠিত হতে শুরু করে । ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় তিনটি ও মেদিনীপুরে একটি দল তৈরি হয় । এদের মধ্যে অন্যতম ছিল সতীশচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত ‘ অনুশীলন সমিতি ’ । এই রিপ্লবী সমিতিগুলির কার্যকলাপ গোপনে চলত । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে পুলিনবিহারী দাসের নেতৃত্বে ঢাকা অনুশীলন সমিতি তৈরি হয় ‘ যুগান্তর পত্রিকা ’ হয়ে ওঠে বাংলায় বিপ্লবীদের মুখপত্র । অর্থ জোগাড় করতে স্বদেশি ডাকাতির পাশাপাশি বিপ্লবীরা বোমা বানাতে শুরু করেন । কলকাতার মানিকতলায় বোমা বানানোর কারখানা তৈরি হয় । ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল বাংলার অত্যাচারী প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে মারার উদ্যোগ নেন ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি । বাংলায় যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ( বাঘা যতীন ) জার্মানি থেকে অস্ত্র আনিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করেন । কিংসফোর্ডকে মারার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার বিপ্লবী আন্দোলনের প্রতি চরম দমনপীড়ন চালাতে থাকেন । মানিকতলার বোমা কারখানাটির সন্ধান পান ব্রিটিশ প্রশাসন । বিভিন্ন বিপ্লবী নেতাকে গ্রেফতার করে মৃত্যুদণ্ড বা কারাদণ্ড দেওয়া হয় । এর ফলে বাংলায় বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বড়োসড়ো ধাক্কা খায় । 

No comments:

Post a Comment