সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়ের একটি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায় হলো, "পরিবেশের সংকট উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ " পার্ট -1 এই অধ্যায়ের কিছু বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর করা হয়েছে এই পোস্টটিতে ।
⬛ অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর; প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. 100 বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কত বেড়েছে?
উঃ। গত 100 বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 1°C বেড়েছে।
2. এক শতাব্দীর মধ্যে উন্নতম বছর কোটি?
উঃ। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (NASA) জানিয়েছে 2005 সালে ছিল গত এক শতাব্দীর মধ্যে উন্নতম বছর।
3. কোন্ সালে 4 বার মরশুমি নিম্নচাপ হয়?
উঃ। 2007 সালে।
4. বায়ুমণ্ডলের Co2 এর মাত্রা কত সাল থেকে বাড়তে শুরু করেছে?
উঃ। 2006 সাল থেকে।
5. পৃথিবীর প্রায় 99% হিমবাহের অবস্থান কোন্ কোন্ মেরুতে।
উঃ। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে।
6. গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, প্রভৃতি নদীর উৎস কী?
উঃ। হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ।
7. গঙ্গা নদীর উৎস কী?
উঃ। গঙ্গোত্রী হিমবাহ।
8. 1993 থেকে 2003 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতল প্রতি বছরে গড়ে কতটা বেড়েছে?
উঃ। 3 মি.মি. (0.1 ইঞ্চি)।
9. 2100 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা প্রায় কতটা বাড়তে পারে ?
উঃ। 70 সে.মি. বেড়ে যেতে পারে।
10. পৃথিবীর বৃহত্তম ব্র্যাঘ্রবাহিনীর বাস কোথায়?
উঃ। সুন্দরবন এর সুন্দরী গাছের জঙ্গল।
11. প্রবাল বা কোরাল কী?
উঃ। এটি একধরনের সামুদ্রিক প্রাণী।
12. প্রবালের ব্যবহার হয় কীভাবে?
উঃ শৌখিন দ্রব্য ও গয়না হিসাবে।
13. কোন্ সালে পৃথিবীর প্রায় 16% প্রবাল সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে?
উঃ। 1988 সালে।
14. সুন্দরবন অঞ্চলে কত মানুষ বসবাস করে?
উঃ। প্রায় 40 লক্ষ ।
15. জীববৈচিত্র্য কী ?
উঃ। কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সব ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী আর জীবাণুর বৈচিত্র্য নিয়েই জীবনের বৈচিত্র্য, যাকে এক কথায় জীববৈচিত্র্য বলে।
16. ভারতীয় ভূখণ্ডের আয়তন কত?
উঃ । 33 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
17. বরফ গলে যাওয়ার ফলে কোন্ কোন্ প্রাণী বিপন্ন হচ্ছে?
উঃ। মেরু ভালুক, এম্পারার, পেঙ্গুইন, মেরু শিয়াল ইত্যাদি।
18. অস্ট্রেলিয়ার কোয়ালা ভালুক কী খাবার খায়?
উঃ ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা।
19. গত 500 বছরে কতগুলি প্রজাতি পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে?
উঃ 784 টি।
20. বর্তমানে সারা পৃথিবীতে কটি প্রজাতি ধ্বংসের মুখে?
উঃ। প্রায় 13500 টি প্রজাতি।
21. যে সমস্ত প্রাণী পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যেতে পারে তাদের মধ্যে কয়েকটির নাম লেখো।
উঃ বাংলার শকুন, বাঘ, একশৃঙ্গ গন্ডার, ওরাং ওটাং, চিতা, শিম্পাঞ্জি, গঙ্গার শুশুক ইত্যাদি।
22. ভারতবর্ষকে কী ধরনের জীববৈচিত্র্যের দেশ বলা হয় ?
উঃ। ভারতবর্ষের জীববৈচিত্র্য এত বেশি যে ভারতকে অতিবৈচিত্র্যের দেশ বা মেগাডাইভারসিটি নেশন বলা হয়।
23. ভারত ছাড়া আরো কয়েকটি অতিবৈচিত্র্যের দেশের নাম লেখো।
উঃ। ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, ইকুয়েডর প্রভৃতি।
24. সাইবেরিয়ার বাঘের অস্তিত্ব সংকটের কারণ কী?
উঃ। সাইবেরিয়ার বাঘের অস্তিত্ব সংকটের অন্যতম কারণ হল তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
25. পৃথিবীর মোট জীবের প্রায় কত শতাংশ উদ্ভিদ?
উঃ 99%
26. বাতাস ভাঙা কয়েকটি গাছের নাম বলো।
উঃ সুন্দরী, গরান, কেয়া, ঝাউ ইত্যাদি।
27. কোন্ কোন্ গাছ ধুলোকণা শুষে নিতে পারে ?
উঃ কদম বেল শিরীয কৃষ্ণচূড়া, গুলমোহর।
28. পরিবেশের সবরকম জৈব ও অজৈব উপাদানের ভাণ্ডার কী?
উঃ সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য।
29. গাছ শব্দের এই তীব্রতাটাকে কোনোভাবে কমাতে পারে কী ?
উঃ। শব্দকে জব্দ করতে পারে বেল, ছাতিম ও জারুলের মতো গাছ। বনের গভীরতা যত বাড়ে শব্দের প্রাবল্য তত কমে।
30. অরণ্য ধ্বংস হলে মানুষ কী পাবে?
উঃ অরণ্য ধ্বংস হলে মানুষ শুধু কাঠ পাবে।
31. নদীর গর্ভে পলি জমলে কী হয়?
উঃ নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে।
32. মাটির ওপর ঘাসের মোটা চাদর না থাকলে কী হবে?
উঃ (i) জলেভেজা মাটির স্তর ওপরে উঠে আসে। (ii) বৃষ্টির জল মাটিতে পড়লেই আলগা মাটি ধুয়ে নদীতে চলে যায়।
33. সবধরনের উদ্ভিদ কি সমানভাবে Co2 শোষণ করে?
উঃ না, সবধরনের উদ্ভিদের Co, শোষণ ক্ষমতা সমান নয়।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. কবে ও কেন অমরনাথ গুহার বরফ গলে গিয়েছিল?
উঃ। গত 5 হাজার বছর ধরে মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত কাশ্মীরের অমরনাথের গুহায় জমা বরফের দৈর্ঘ্য থাকত প্রায় 12 ফুট (3.6 মিটার)। অথচ 2007-এ জুন মাসের শেষেই উয়তার ফলে অমরনাথের ওই জমা বরফ গলে 4-5 ফুট (1.2-1.5 মিটার) উচ্চতার হয়েছিল।
2. উত্তরাখণ্ডে কবে বন্যা হয়েছিল? এতে কী ঘটেছিল?
উঃ। উত্তরাখণ্ডে 2013 সালের মেঘভাঙা বৃষ্টি থেকে বিধ্বংসী বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। বাড়িঘর আর অন্যান্য সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
3. মানুষের কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া গ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম কোনটি? এটি কীভাবে পরিবেশে বৃদ্ধি পেয়েছে?
উঃ। মানুষের বিভিন্ন কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া গ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম হল কার্বন ডাই অক্সাইড। 1970 থেকে 2014 সালের মধ্যে প্রতি বছর পরিবেশে এই গ্যাসের মেশার হার প্রায় 40 শতাংশ বেড়ে গেছে।
4. প্রবাল কী ?
উঃ। প্রবাল বা কোরাল হল একধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা নিডারিয়া পর্বভুক্ত। এরা একসঙ্গে দল বেঁধে কলোনি তৈরি করে বাস করে। প্রবালরা নিজেদের দেহের বাইরে ক্যালশিয়াম কার্বনেট-এর একটা বহিঃকঙ্কাল তৈরি করে এই বহিঃকঙ্কাল এদের দেহকে রক্ষা করে। মৃত প্রবালের সাদা বা রঙিন কঙ্কালের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে হয়। শৌখিন দ্রব্য ও গয়না হিসেবে এদের কদর পৃথিবীব্যাপী।
5. প্রবাল প্রাচীর কী?
উঃ। একসঙ্গে বাস করা অনেক প্রবালের দেহের বাইরে থাকা ক্যালশিয়াম কার্বনেটের বহিঃকঙ্কাল একটা শক্ত প্রাচীরের মতো গঠন তৈরি করে। এটাই প্রবাল প্রাচীর।
6. প্রবাল প্রাচীরের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উঃ। পৃথিবীর সমুদ্রতলের মাত্র 0.1% দখল করে থাকা প্রবাল প্রাচীর প্রায় 25% সামুদ্রিক প্রজাতির আশ্রয়স্থল। মাছ, মোলাস্কা, ইকাইনোডারমাটা, স্পঞ্জ, ক্রাস্টোশিয়া, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের প্রাণী প্রবাল প্রাচীরে বাস করে। জীববৈচিত্র্যের নিরিখে প্রবাল প্রাচীরের গুরুত্ব অপরিসীম। সমুদ্রের জলের উয়তার সামান্যতম তারতম্য প্রবাল প্রাচীরের স্থায়িত্বের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
7. প্রবাল দ্বীপ কী ?
উঃ। মৃত প্রবাল আর অন্যান্য জৈব বস্তুর সাহায্যে সাধারণত প্রবাল প্রাচীরের অংশ হিসাবে প্রবাল দ্বীপ তৈরি হয়। ক্রান্তীয় আর উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণত প্রবাল দ্বীপ দেখা যায়। প্রবাল দ্বীপগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক মিটার উঁচু হয়ে জেগে থাকে। উপকূলীয় নারকেল গাছের সারি আর সাদা প্রবালের বালি দিয়ে ঘেরা থাকে অগভীর সমুদ্রের প্রবাল দ্বীপ।
8. অবৈধ শিকার বা চোরাশিকার কীভাবে প্রাণীদের অস্তিত্ব বিপন্ন করছে?
উঃ। চোরাশিকারিদের লোভ বন্যপ্রাণীর অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে বন্য জন্তুর হাড়, চামড়া প্রভৃতি ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দাঁত, চামড়া বা শিং প্রভৃতির লোভেও চোরাশিকারিদের হাতে বিভিন্ন প্রাণী প্রাণ হারায়।
9. শস্যভূক পাখিরা কেন হারিয়ে যাচ্ছে?
উঃ। চাষের জমিতে যথেচ্ছ কীটনাশক অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহারের ফলে বেশ কিছু শস্যভূক পাখির মৃত্যু ঘটছে। পরিবেশ থেকে তারা হারিয়ে যাচ্ছে।
10. গঙ্গার শুশুক কীভাবে বিপন্ন হচ্ছে?
উঃ। শিল্প আর কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গঙ্গায় এসে মিশছে। ফলে গঙ্গায় মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে গঙ্গার শুশুকের অস্তিত্বও বিপন্ন হচ্ছে।
11. অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ব্যবহার কীভাবে জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে?
উঃ। কোনো বিশেষ স্থানীয় জীবের অর্থকরী গুরুত্ব যদি খুব বেশি হয় তবে তা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সেইসব জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। হিমালয়ের কস্তুরী মৃগ থেকে পাওয়া যায় মৃগনাভি। মৃগনাভি থেকে তৈরি হয় নানা সুগন্ধি দ্রব্য। মানুষের সুগন্ধি দ্রব্যের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে এই প্রাণীর জীবন ও অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে।
12. বর্তমান মেরু ভালুকের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন কেন ?
উঃ। উত্তর মেরুর বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চলে মেরু ভালুক দেখা যায়। বিশ্ব উন্নায়নের ফলে বর্তমানে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে এর ফলে মেরু ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
13. বিগত বছরগুলিতে পৃথিবীতে কী হারে জীব বৈচিত্র্য হ্রাস হয়েছে?
উঃ। বিগত 500 বছরে 784 টি প্রজাতি পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে 338 টি মেরুদণ্ডী প্রজাতি, 359 টি অমেরুদণ্ডী প্রজাতি ও 87 টি উদ্ভিদ প্রজাতি প্রায় 27 টি প্রজাতির প্রাণী যা গত 20 বছরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
14. গ্রামবাংলায় স্থানীয় মাছেদের অস্তিত্ব কীভাবে বিপন্ন হয়েছে?
উঃ। আফ্রিকা থেকে তেলাপিয়া ও বিশাল মাগুর জাতের মাছ গ্রামবাংলার জলাভূমিতে ছেড়ে দেওয়ার ফলে মৌরলা, পুঁটি, খলসে প্রভৃতি স্থানীয় মাছেদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে।
15. গরমের দিনে বটগাছের নীচে দাঁড়ালে ঠান্ডা বোধ হয় কেন ?
উঃ বটগাছ তার ডালপালা ও পাতার ছাউনি দিয়ে ছাতার মতো কাজ করে। এছাড়া বাষ্পমোচনের মাধ্যমে উদ্ভিদদেহ থেকে জল জলীয় বাষ্প রূপে পরিবেশে নির্গত হয় ফলে উদ্ভিদদেহ থেকে তাপ শোষিত হয় এবং আশপাশের পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে যায়।
16. সমুদ্রের ঝোড়ো হাওয়া সুন্দরবনের কোনো বড়ো ধরনের ক্ষতি করতে পারে না কেন ?
উঃ সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বাদাবনের গরান, হেঁতাল, সুন্দরী প্রভৃতি গাছ প্রকৃতির ঝোড়ো বাতাস ধাক্কা খায় এবং তার বেগ কমে যায়। এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঝড়ের বেগ 60-80% কমিয়ে দেয় ফলে সুন্দরবনের কোনো বড়ো ক্ষতি হতে পারে না।
17. এমন তিনটি গাছের পাতার নাম লেখো যাদের পাতা বেশি দূষক পদার্থ ধারণ করতে পারে-এর কারণ কী ?
উঃ বট, আম, অশ্বত্থ। এর কারণ হলো এইসব গাছের পাতাগুলি চওড়া ও লম্বাটে হওয়ায় এরা বেশি পরিমাণ দূষক পদার্থকে আটকে রাখতে পারে।
⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -4/5
1. পৃথিবীর হিমবাহগুলি সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ। হিমবাহকে বরফের জমাটবাঁধা নদী বলা যেতে পারে। কারণ পৃথিবীর মিষ্টিজলের বৃহত্তম ভাণ্ডার হল এই হিমবাহগুলো। এই হিমবাহগুলোর বরফগলা জলে পুষ্ট হয় বিভিন্ন নদনদী। পৃথিবীর প্রায় 99% হিমবাহের অবস্থান উত্তর আর দক্ষিণমেরুতে। হিমবাহ পর্বতমালাতেও আছে অনেকগুলো হিমবাহ রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হল গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, জেমু। গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীর উৎস হল হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ। হিমবাহের বরফগলা জলেই এরা পুষ্ট হয়। হিমালয় এশিয়ার নয়টি বড়ো বড়ো নদীকে পুষ্ট করে। এর ফলে প্রায় 120 কোটি মানুষের জলের বন্দোবস্ত হয়।
2. হিমবাহ কীভাবে গলে যাচ্ছে?
উঃ। বৃষ্টিপাত, বায়ুর উয়তা প্রভৃতি আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন পৃথিবীর হিমবাহগুলোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পৃথিবীর গড় উয়তা বেড়ে গেলে হিমবাহগুলোর বরফ বেশি মাত্রায় গলতে আরম্ভ করবে। গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ প্রতি বছর একটু একটু করে ছোটো হয়ে আসছে। উত্তরমেরুর সংলগ্ন আলাস্কা উপকূলে যে বরফের স্তর রয়েছে, তা গত 30 বছরে 40% কমে গিয়ে পাতলা হয়ে গেছে।
3. হিমবাহগুলো গলে গেলে পৃথিবীর পরিস্থিতি কী রূপ হতে পারে ?
উঃ।1993 থেকে 2005 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতল প্রতি বছর গড়ে বেড়েছে (0.1 ইঞ্চি)।পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের হিমবাহগুলো গলে যাওয়ার প্রভাব পড়বে সমুদ্রের জলতলের ওপর। এই বিষয়ে একটি গবেষণা বলছে যে 2100 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা প্রায় 70 সে.মি. বেড়ে যেতে পারে। সমুদ্রের জলতল বেড়ে গেলে উপকূল অঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দেবে। উপকূল অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে। প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতিরও সম্ভাবনা দেখা দেবে। সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সারা পৃথিবীতে সমুদ্রের উপকূলে বাস করা অসংখ্য মানুষ। ভারত ও বাংলাদেশের অন্তর্গত সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও আজ এই বিপদের সম্মুখীন। পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যাঘ্রবাহিনীর আবাস এই সুন্দরীগাছের জঙ্গল। আর এই অঞ্চলে বাস করে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ। এদের সকলেরই অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে। উন্নায়নের ফলে হিমবাহ পুরো গলে গেলে ভবিষ্যতের ওই হিমবাহের জলে পুষ্ট নদ-নদীর জল প্রথমে বেড়ে যাওয়ার ও পরে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। প্রথমে বন্যা আর পরে দেখা দিতে পারে তীব্র জলসংকট। হিমবাহ প্রায় 80 শতাংশ সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত করে আর প্রায় 20 শতাংশ শোষণ করে। হিমবাহ সম্পূর্ণ গলে গেলে ওই 80 শতাংশ সূর্যরশ্মি ভূভাগ দ্বারা শোষিত হয়ে পৃথিবীর উয়তাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
4. পরিবেশে নতুন জীবদের আগমন কীভাবে স্থানীয় প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ হয়ে ওঠে?
উঃ। বাইরে থেকে আসা নতুন প্রাণী অনেক সময় স্থানীয় প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীতে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের বাইরে থেকে কুকুর, শুয়োর ও ছাগল নিয়ে আসা হয়েছিল। এই ছাগলরা কচ্ছপের খাবার ঘাসপাতা খেত এবং কুকুর, শুয়োর কচ্ছপের ডিম খেয়ে নিত, ফলে একসময় কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেল। গ্রাম বাংলার জলাভূমিতে আফ্রিকা থেকে তেলাপিয়া ও বিশাল জাতের মাগুর মাছ এনে ছাড়ার ফলে মৌরলা, পুঁটি, খলসের মতো স্থানীয় মাছদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে।
5. জীববৈচিত্র্য কাকে বলে ?
উঃ। কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সব ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী আর জীবাণুর বৈচিত্র্য নিয়েই জীবনের বৈচিত্র্য, যাকে এককথায় জীববৈচিত্র্য বলা হয়। সমস্ত সৌরজগতে পৃথিবীতেই কোনো একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে থাকা বিভিন্ন জীব প্রজাতি ও একেকটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য একেক রকম। যেমন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হিমালয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য থেকে একদম আলাদা। আবার, আমাদের ভারতবর্ষের জীববৈচিত্র্য, ইংল্যান্ডের বা ব্রাজিলের জীববৈচিত্র্য থেকে অনেক আলাদা।
6. জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট (Biodiversity Hot spot) সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ। পৃথিবীতে এরকম বহু অঞ্চল আছে যেখানে খুব বেশি সংখ্যক প্রজাতির জীব পাওয়া যায়। আবার সেইরকম অঞ্চলে এমন সব প্রজাতির জীবও পাওয়া যায় যা, অন্য আরও কোথাও পাওয়া যায় না। সেরকম অঞ্চলকে বলা হয় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ইংরেজিতে একে বলে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট (Biodiversity Hot spot)। পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকটা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর বায়োডাইভারসিটি হটস্পটগুলোর মধ্যে চারটি বায়োডাইভারসিটি হটস্পট হল :
(i) পূর্ব হিমালয় (Eastern Himalayas) : সিকিম, দার্জিলিং, ডুয়ার্স, তরাই অঞ্চল।
(ii) পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং শ্রীলঙ্কা (Western Ghat and Srilanka) : ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূল বরাবর ঘন অরণ্যে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চল।
(iii) ইন্দো-বার্মা (Indo Burma) : উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যসমূহ (যেমন – মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ)। (4) সুন্দাল্যান্ড (Sundaland) : ভারতের আন্দামান-নিকোবর অঞ্চল।
আমাদের ভারতবর্ষের জীববৈচিত্র্য এত বেশি যে ভারতবর্ষকে একটি অতি বৈচিত্র্যের দেশ বা মেগাডাইভারসিটি নেশন (Megadiversity Nation) বলা হয়। পৃথিবীতে এরকম আরও কয়েকটি দেশ আছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, ইকুয়েডর ইত্যাদি।
7. ভারতবর্ষকে মেগাডাইভারসিটি নেশান (Megadiversity Nation) বা অতি বৈচিত্র্যের দেশ বলার কারণ কী ?
উঃ। আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্যের সম্ভার বিপুল। পৃথিবীর সতেরোটি অতি জীববৈচিত্র্য সম্পন্ন (Mega Biodiversity) দেশের মধ্যে ভারত অন্যতম। এ পর্যন্ত প্রায় 91,212 প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পোকামাকড়, শামুক, কেঁচো ইত্যাদির (পৃথিবীর মোট প্রাণী প্রজাতির 7.43%) খোঁজ আমাদের দেশে পাওয়া গেছে। ভারতীয় ভূখণ্ডের আয়তন 33 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার, যাদের মধ্যে প্রায় 19.7% বা প্ৰায় অংশ এলাকা অরণ্যে ঢাকা। সারা বিশ্বের উদ্ভিদজগতের সাত শতাংশ (7%) আর প্রাণী জগতের সাড়ে ছয় শতাংশের (6.5%) বাসভূমি এই ভারতবর্ষ। এছাড়াও আছে কয়েক হাজার জাতের দেশি ধান ও অন্যান্য ফসল, কয়েকশো জাতের দেশি গবাদিপশু। এরা সবাই আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
8. গাছ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা বিষয়ে আলোচনা করো।
উঃ। পৃথিবীতে মোট জীবের প্রায় 99% হল উদ্ভিদ। আর মাত্র 1% হল প্রাণী। সবুজ গাছপালা যে খাদ্য তৈরি করে তার 10-20% শক্তি প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে ব্যয় হয়। অরণ্য যদি কমতে থাকে তাহলে এসব প্রাণীর বেঁচে থাকার শক্তিতেই টান পড়বে। আজকের পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ জাতের উদ্ভিদবৈচিত্র্য দেখা যায়। আর প্রাণীবৈচিত্র্য হল প্রায় দশ লাখের মতো। এর মধ্যে প্রায় সাত লাখ প্রাণীর খাদ্য হল গাছপালার নানা অংশ বা সম্পূর্ণ গাছ।
9. গাছ কীভাবে নদীর জন্ম দেয় ?
উঃ। গাছ থেকে এত জল বাষ্পীভূত হয় যে এসব অরণ্যে সারা বছরই নাকি বৃষ্টি হয়। অরণ্যের গাছপালার ঘন আবরণ জলীয় বাষ্পকে উবে যেতে দেয় না। সেই বাষ্প ঘন হয়ে জমে ফোঁটা ফোটা জল হয়ে মাটিতে পড়ে। তারপর চুঁইয়ে চুইয়ে মিশে জলের সোঁতা তৈরি করে। সোঁতাগুলো মিলতে মিলতে একসময় নদীর জন্ম হয়। বর্ষার জলও নানা ঢাল বেয়ে নেমে একসঙ্গে মিলে নদীর জন্ম দেয়। হিমালয়ের বরফগলা জলে জন্ম নেওয়া নদীরা বাদে ভারতবর্ষের আর সব নদীর-ই জন্ম কিন্তু এভাবে। পর্বতের ঢাল যদি অরণ্যের ছায়ায় ঢাকা না থাকে তাহলে সেই জলও তাড়াতাড়ি উবে যায় বাষ্প হয়ে। জলকে বাষ্প হতে না দিয়ে মাটির ছিদ্র দিয়ে চুঁইয়ে চুইয়ে মাটির তলায় ওই জলকে জমতে সাহায্য করে অরণ্য। কুয়ো খুঁড়ে বা টিউবওয়েল বসিয়ে আমরা সেই জল পাই। জঙ্গলে যদি লম্বা আর বড়ো পাতাযুক্ত গাছ বেশি থাকে, তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে, জল বিশুদ্ধ থাকে এবং জলের প্রবাহও নিয়ন্ত্রিত হয়।
10. সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচিয়ে রাখা জরুরি কেন?
উঃ। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য পরিবেশের সবরকম জৈব ও অজৈব উপাদানের ভাণ্ডার। এরা উপকূলবর্তী অঞ্চলকে বছরের পর বছর ধরে উর্বর রেখেছে। একটা পরিণত ম্যানগ্রোভ গাছ বছরে প্রতি এক হেক্টর জমিতে 47 কেজি নাইট্রোজেন, 26 কেজি পটাশিয়াম, 99 কেজি ক্যালশিয়াম, 34 কেজি ম্যাগনেশিয়াম আর 32 কেজি সোডিয়াম সরবরাহ করে। এজন্য এদের বাঁচিয়ে রাখা খুব জরুরি। গাছ তথা অরণ্য ধ্বংস করলে মানুষ শুধু কাঠ পায়। কিন্তু তার ফলে পরিবেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।
11. খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজাল বলতে কী বোঝ ?
উঃ। অরণ্যে সূর্যের আলো ব্যবহার করে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে এবং তা তারা নানা অঙ্গে সঞ্জয় করে। এই সম্ভিত খাদ্য নানা প্রাণী ব্যবহার করে। তাই অরণ্যের উদ্ভিদরা হল উৎপাদক আর প্রাণীরা হল খাদক। খাদ্য খাদকের এই সম্পর্ককে খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয়। একটা খাদ্যশৃঙ্খল অপর খাদ্যশৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি করে।
12. বায়ুমণ্ডল ও গাছের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো।
উঃ। বায়ুমণ্ডল ও গাছের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর। গাছের সবুজপাতার পত্ররন্ধ্র সূর্যের আলো পেলে খুলে যাওয়ায় তা দিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রবেশ করে। সূর্যের আলো, জল আর কার্বন ডাই অক্সাইড কাজে লাগিয়ে গাছ নিজে খাদ্য তৈরি করে পুষ্ট হয়। আজ থেকে প্রায় 350 কোটি বছর আগে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম ছিল। আনুমানিক 250 কোটি বছর আগে প্রথমে কিছু অণুজীব সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করতে শুরু করে। আরো অনেক পরে গাছ সালোকসংশ্লেষ দ্বারা প্রচুর O, গ্যাস ছাড়তে শুরু করে। সালোকসংশ্লেষের সময় অণুজীবও গাছেরা শোষণ করতে শুরু করল কার্বন ডাই অক্সাইড CO, । এতে বাতাসের উপাদানের পরিমাণ ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করল। তবে সব ধরনের উদ্ভিদের শোষণ ক্ষমতা সমান নয়।
No comments:
Post a Comment