👉( অষ্টম শ্রেণী বাংলা বোঝাপড়া সহায়িকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন ও উত্তর )
সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়ের একটি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায় হলো, "পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য" পার্ট -1 এই অধ্যায়ের কিছু বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর করা হয়েছে এই পোস্টটিতে ।
⬛ অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর; প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. এক লিটার পানীয় জলে কত পরিমাণ ফ্লুওরাইড থাকলে দাঁত ও হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়?
উঃ। 1.5 মিলিগ্রামের বেশি হলে।
2. এক লিটার জলে কী পরিমাণ আর্সেনিক থাকলে সেই জল খাওয়া উচিৎ নয়?
উঃ। 0.05 মিলিগ্রাম বা তার বেশি।
3. স্বাস্থ্য বলতে কী বোঝায়?
উঃ । স্বাস্থ্য বলতে দৈহিক মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতাকে বোঝায় ।
4. মানুষের পেশাগত রোগের কারণ কী?
উঃ। কর্মস্থলের ওপর ভৌত ও রাসায়নিক পরিবেশের প্রভাবে পেশাগত রোগ হয়।
5. রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করা কী ধরনের সমস্যা?
উঃ। মনোযোগহীনতা।
6. পড়াশোনায় মনোযোগের অভাব কী ধরনের সমস্যা?
উঃ। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া।
7. সবসময় অসহায় বোধ করা কী ধরনের সমস্যা?
উঃ। মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেসন।
8. স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য কী প্রয়োজন?
উঃ । রোগপ্রতিরোধ করা।
9. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কার অধীন?
উঃ। রাষ্ট্রসংঘের অধীন।
10. যে সকল বস্তুর দ্বারা অ্যালার্জি হয়, তাকে কী বলে? দুটি অ্যালার্জেনের নাম লেখো।
উঃ। অ্যালার্জেন। ডিম, ধুলো।
11. কলেরা রোগের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি কাদের?
উঃ। শিশু ও বয়স্কদের।
12. ম্যালেরিয়া রোগটি কে ছড়ায় ? এই রোগের জীবাণুর নাম কী?
উঃ। অ্যানোফেলিস মশকি। প্লাসমোডিয়াম ভাইভাক্স।
13. এই জীবাণু মানুষের দেহে কোথায় থাকে?
উঃ। লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে থাকে।
14. কে প্রথম মানুষের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু খুঁজে পান ?
উঃ। 1880 খ্রিস্টাব্দে ডাক্তার চার্লস লুই আলফাসো লাভেয়া।
15. প্লেগ রোগের বাহক কে?
উঃ। প্লেগের অন্যতম বাহক মেঠ কালো ইঁদুর, এদের চামড়ায় বাসা বাঁধা একধরনের উকুনের পাকস্থলীতে প্লেগের জীবাণু আশ্রয় নেয়।
16. স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার পাকস্থলীতে কে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর সন্ধান পান?
উঃ। রোনাল্ড রস।
17. মশার দাঁত ও জিভের নাম কী?
উঃ । দাঁত হল ম্যান্ডিবল আর জিভ হল ম্যাক্সিলা।
18. এডিস মশা কী রোগ ছড়ায়?
উঃ। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া।
19. সাধারণ মাছি কী রোগ ছড়ায়?
উঃ। টাইফয়েড ও ডায়ারিয়া।
20. বালি মাছি কী রোগ ছড়ায়?
উঃ। কালাজ্বর ও বালিমাছি জ্বর।
21. সাধারণ মাছি রোগ জীবাণু বয়ে নিয়ে যায় বলে তাকে কী বলে?
উঃ। তাকে যান্ত্রিক বাহক বলে।
22. মশা তার দেহে রোগজীবাণুর বংশ বৃদ্ধি করে বলে তাকে কী বলে?
উঃ। তাকে জৈব বাহক বলে।
23. দই এবং দুগ্ধজাত খাবার তৈরিতে কোন্ ব্যাকটেরিয়ার সাহায্য নেওয়া হয়?
উঃ। ল্যাকটোব্যাসিলাস।
24. জীবনদায়ী ঔষধ কোন্ ব্যাকটিরিয়া দ্বারা প্রস্তুত করা হয়?
উঃ। স্ট্রেপটোমাইসেস।
25. মানুষের অস্ত্রে বসবাসকারী কিছু ব্যাকটেরিয়া কী তৈরি করে?
উঃ। ভিটামিন B12.
26. কী ধরনের খাবারে ব্যাকটেরিয়া সহজে জন্মায়?
উঃ। প্রোটিন জাতীয় খাবারে।
27. একটি উপকারী ছত্রাকের নাম করো। ওই ছত্রাক কী তৈরি করে ?
উঃ। পেনিসিলিয়াম। অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ তৈরি করে।
28. অণুজীব ছাড়া আর অন্য কী কারণে খাবার নষ্ট হয়ে যায়?
উঃ। উৎসেচকের ক্রিয়ার কারণে।
29. বিভিন্ন পশুর শরীরে কী ধরনের প্রাণী বাস করে? এদের কী বলে?
উঃ। কৃমি। এদের পরজীবী বলে।
30. গোরুর শরীরে পরজীবীর প্রকৃতি কী?
উঃ। ফিতাকৃমি।
31. শুয়োরের পরজীবীর প্রকৃতি কী?
উঃ। ফিতাকৃমি ও গোলকৃমি।
32. পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়া কে আবিষ্কার করেন।
উঃ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন।
33. সম্ভার খাবারে মেশানো বেশিরভাগ রং কোথা থেকে আসে?
উঃ। আলকাতরার মতো জিনিস থেকে।
34. ভেজাল সরষের তেল থেকে কোন রোগ হয়? ভারতবর্ষে এই রোগ কোন্ কোন্ সালে হয় ?
উঃ। ড্রপসি। 1998, 2000, 2002, 2005
35. দীর্ঘদিন ধরে খেসারির ডাল খেলে কী রোগ দেখা দেয়?
উঃ । ল্যাথিরিজম।
36. কয়েকটি কৃত্রিম রং এর নাম লেখো।
উঃ। মেটানিল ইয়োলো, ম্যালাকাইট গ্রিন।
37. কয়েকটি ভৌত ও রাসায়নিক প্রভাবকের নাম লেখো।
উঃ। আলো, এক্স রশ্মি, তামা, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা, সোডিয়াম ইত্যাদি।
38. মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণ কী ?
উঃ। হতাশা ও অবসাদ, নিজের কাজ করতে না পারা, ডান-বাম চিনতে না পারা ইত্যাদি।
39. মানসিক সমস্যার কারণ জন্মগত ত্রুটি—বলতে কী বোঝ?
উঃ। গর্ভাবস্থায় অপুষ্টি, বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ, জন্মের পর শিশুর মন ও বুদ্ধির বিকাশকে ব্যাহত করে।
40. রোগ প্রতিরোধ এর ধাপগুলি কী কী?
উঃ। (i) টিকাকরণ কর্মসূচি। খাদ্যে পুষ্টি উপাদান যোগ করা। (ii) রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা। (iii) ভিন্ন দক্ষতা সম্পন্ন মানুষের পুর্নবাসন (iv) জীবনকুশলতা শিক্ষা।
41. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজ কী?
উঃ। মানবসম্পদের স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করা।
42. কোন্ সালে এই সংস্থা স্থাপিত হয়?
উঃ 1949 সালে 9 ই এপ্রিল।
43. UNICEF-এর কাজ কী?
উঃ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিশু ও মায়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা।
44. বসন্ত রোগ কীভাবে পৃথিবী থেকে কত সালে নির্মূল করা হয়?
উঃ। টিকাদানের মাধ্যমে 1977 সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে বসন্তরোগ নির্মূল করা হয়।
45. বায়ুর মাধ্যমে কীভাবে সর্দি-কাশি ছড়ায়?
উঃ। হাঁচি বা কাশির সময় রোগ জীবাণু ভরা তরল কণা সুস্থ লোকের নাক ও মুখ দিয়ে প্রবেশে করে।
46. বায়ুবাহিত রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা কীভাবে বাড়িয়ে দেয়?
উঃ। এক জায়গায় বহু লোকের একসঙ্গে উপস্থিতি।
47. যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ কী?
উঃ। টানা জ্বর, কাশি ও থুতুর সঙ্গে রক্ত পড়া।
48. ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ কী?
উঃ। হাঁচি ও কাশি, জ্বর, গা, হাত ও পায়ে ব্যথা।
49. মশার মুখের বিভিন্ন অংশের নামগুলি কী ?
উঃ। লেবিয়াম, ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা, হাইপোফ্যারিংস ও ল্যাব্রাম।
50. ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট কয়েকটি রোগের নাম লেখো।
উঃ। স্যালমোনেলোসিস, খাবারে বিষক্রিয়া, বটুলিজম ও ক্যাম্পাইলোব্যাকটেরিওসিস।
51. জীবাণু-সংক্রামিত খাবার খাওয়ার 2-3 ঘণ্টার মধ্যে কী কী লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় ?
উঃ। বমিভাব, জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, দুর্বলতা, ডায়রিয়া, এবং পেটে অসহ্য যন্ত্রণা।
52. বালি মাছিকে চেনার উপায় কী?
উঃ। মশার চেয়ে আকারে ছোটো, দেহ রোমযুক্ত, পা লম্বা ও সরু। এরা সন্ধ্যের পর বাইরে বেরোয়।
53. কর্পোরেশনের জল, ফোটানো জল এবং পরিশুদ্ধ করা জল পান করার যোগ্য কেন?
উঃ। এই ধরণের জল পান করার যোগ্য কারণ এই প্রায় ১০০ শতাংশ বিশুদ্ধ এবং রোগ-জীবাণুমুক্ত।
54. খাদ্যবাহিত রোগ কাকে বলে?
উঃ। ভেজাল খাবার খেয়ে যে সমস্ত রোগ হয়ে থাকে সেগুলিকে খাদ্যবাহিত রোগ বলে।
55. পোলিও রোগের লক্ষণ কী?
উঃ। হাত-পায়ের মাংসপেশির অস্বাভাবিক শিথিলতা সমেত পক্ষাঘাত, জ্বর ও ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।
56. মশা আর সাধারণ মাছির রোগ সংক্রমণের মধ্যে কী পার্থক্য?
উঃ। সাধারণ মাছির দেহে রোগজীবাণু বংশবৃদ্ধি করে না কিন্তু মশার দেহে রোগজীবাণু বংশবৃদ্ধি করে।
57. কোন মশা নোংরা জলে ডিম পাড়ে?
উঃ কিউলেক্স মশা।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. আর্সেনিক রোগ কেন হয় ?
উঃ। মাটির নীচের জল নলকূপের মাধ্যমে তোলার সময় বায়ুর অক্সিজেন আর্সেনিকের অদ্রাব্য খনিজ বিক্রিয়া করে নানা যৌগ তৈরি হয়। ওই জল দীর্ঘদিন ধরে পান করলে এই রোগ হয়।
2. অ্যালার্জি কী? অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে কী করা উচিত?
উঃ। বাইরে থেকে আসা প্রোটিনের বিরুদ্ধে শরীরের ইমিউন তন্ত্রের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাকেই অ্যালার্জি বলে। ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অস্বস্তি থেকে সাময়িক আরাম পাওয়ার ব্যবস্থা করা। কোন খাবার খেয়ে অ্যালার্জি। হয়েছে তা খুঁজে বের করা এবং ভবিষ্যতে ওই খাবার খাওয়া থেকে সতর্ক থাকা।
3. প্রোবোসিস কী? স্ত্রী মশা ও পুরুষ মশার প্রোবোসিস কেমন দেখতে হয়? প্রোবোসিসের কাজ কী?
উঃ। মশার বিভিন্ন মুখ-উপাঙ্গগুলো তাদের বিশেষ খাদ্যাভাসের জন্য পরিবর্তিত হয়ে যে গঠন তৈরি করে, তাকে প্রোবোসিস বলে। স্ত্রী ও পুরুষ মশার প্রোবোসিস যথাক্রমে সরু, তীক্ষ্ণ এবং ভোঁতা। প্রোবোসিস দিয়ে স্ত্রী মশা বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া ভেদ করে রক্ত পান করে। পুরুষ মশার প্রোবোসিস উদ্ভিদের বিভিন্ন রস পান করে।
4. এক্স রশ্মি কখন ব্যবহার করা হয়? এই রশ্মি থেকে কী ক্ষতি হতে পারে ?
উঃ। রোগীর শরীরের ভেতর আঘাত পাওয়া বিভিন্ন অঙ্গের ছবি তুলতে এক্স রশ্মি ব্যবহার করা হয়। এই রশ্মি বেশি ও বারবার সরাসরি কোশের সংস্পর্শে এলে কোশের অস্বাভাবিক ক্রিয়া দেখা দেয় কোশ ধ্বংস হয়ে যেতেও পারে।
5. বার্ড ফ্লু কী? কী কারণে বার্ড ফ্লু হতে পারে ?
উঃ। এটি পাখিদের একধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (HS Nj)। সাধারণত পোলটি মুরগিরা এই রোগে আক্রান্ত হয়। ভাইরাসে আক্রান্ত মুরগির মলমূত্র ও রক্তের সংস্পর্শে এলে অথবা বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত মুরগির কাঁচা মাংস 70 সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় 30 মিনিট রান্না না করা মাংস খেলে মানুষও বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হতে পারে।
6. পাস্তুরাইজেশন কী? কীভাবে পাস্তুরাইজেশন করা হয়?
উঃ। তরল খাবার (যেমন- দুধ ও ফলের রস)-কে জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়াকে পাস্তুরাইজেশন বলা হয়। দুধকে 10-40 সেকেন্ডের জন্য 72-75° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় গরম করা হয় এবং তৎক্ষণাৎ দুধের তাপমাত্রা 30 সেন্টিগ্রেডের নীচে নামিয়ে আনা হয়।
7. খাবারে জীবাণুর সংক্রমণ কীভাবে ঘটে?
উঃ । ডিম, মাংস প্রভৃতি পোলটিজাত খাবার, কাঁচা সবজি, পাস্তুরাইজড না করা দুধে অনেক সময় জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। এইসব খাবার কাঁচা বা সঠিক ভাবে রান্না না করে খেলে শরীরে নানারকম রোগজীবাণুর সংক্রমণ ঘটে।
৪. কলেরা রোগ টি দ্রুত মহামারির আকার ধারণ করে কেন?
উঃ। কলেরা রোগীর বমি, পায়খানা, জলতেষ্টা, পেট ব্যথা, অবসন্ন বোধ করা, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়া ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। এই পুরো ব্যাপারটি ঘটতে সময় লাগে খুবই অল্প-কখনও বা মাত্রই 24 থেকে 48 ঘন্টা। এই রোগের জীবাণু খুবই সংক্রামক ও জল দ্বারা বাহিত তাই এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ও মহামারীর আকার নেয়।
9. নদী, পুকুর ও কুয়োর জল পান করা যায় কি এবং কেন? এই জল পান করলে কী সমস্যা হয় ?
উঃ। এই জল পান করা যায় না, কারণ এই সব জলে কলকারখানার বর্জ্য বস্তু, অন্যান্য দুষিত পদার্থ ও বিভিন্ন রকমের গ্যাস মিশ্রিত থাকে।
10. মশা নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
উঃ চৌবাচ্চা, বালতি ইত্যাদি জায়গায় জল 2-3 দিন অন্তর পালটানো দরকার। মশার লার্ভা খায় এমন মাছ (যথা— শোল, ল্যাটা, গাপ্পি, তেচোখা ইত্যাদি) জমা জলে ছেড়ে দেওয়া। তাছাড়া বদ্ধ নোংরা জলে ব্লিচিং পাউডার অথবা মশা মারার তেল ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।
11. সাধারণ মাছিকে চেনার উপায় কী? সাধারণ মাছি কীভাবে রোগ ছড়ায়?
উঃ। সাধারণ মাছির বুক ধূসর রঙের, পিঠে চারটে লম্বা কালো দাগ, সারা দেহে রোম থাকে। এরা দিনের বেলায় সক্রিয় ও রাতের বেলায় নিষ্ক্রিয় থাকে। মাছি যখন মল-মূত্রে বসে তখন ওইগুলির ছোটো ছোটো কণা মাছির পায়ে ও শুঁড়ে আটকে যায়। ওই কণাগুলির ভেতরে থাকে অসংখ্য রোগজীবাণু। আর ওই মাছি যখন রান্না করা খাবারে বসে তখন রোগজীবাণু ওই খাবারে মিশে গিয়ে রোগ সংক্রমণ ঘটায়।
12. পশু থেকে মানুষের দেহে কীভাবে রোগ এসেছিল ?
উঃ।। কৃষি সভ্যতার প্রথম যুগে মানুষ নিজের প্রয়োজনে পশুপালন শিখেছিল, মানুষও পশু পাশাপাশি থাকতে শুরু করেছিল। মানুষ তখন পশুর দুধ খেত, তাদের চামড়া দিয়ে পোশাক তৈরি করত। আর পশু পাখিদের মলমূত্র থেকেই তাদের নানা সংক্রামক রোগ মানুষের দেহে সঞ্চারিত হয়েছিল।
13. প্রাচীন যুগে যক্ষ্মা রোগের সংক্রমণ সম্পর্কে কী জানা যায়?
উঃ। যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ। ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির সময়ে খোদাই করা একটি পাথরে সম্ভবত পৃথিবীর প্রাচীনতম যক্ষ্মা রোগের স্বীকৃত উল্লেখ পাওয়া যায়। নগরায়ণ বা শিল্পায়নের সময় অনেক লোক যখন একসঙ্গে ছোটো জায়গায় থাকতে আরম্ভ করল তখন যক্ষা মহামারীর আকার নিল।
14. জলবাহিত রোগ কাকে বলে?
উঃ।। পানীয় জলের বিভিন্ন উৎসে নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ এসে মেশে। তেমনই আমাদের অসাবধানতার জন্য নানা রোগের জীবাণু ও অনেক সময় পানীয় জলে মিশে যায় এবং সেই জলের মাধ্যমেই তা ছড়িয়ে পড়ে। জলের মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায় তারাই হল জলবাহিত রোগ।
15. খাবারে ভেজাল মেশানো আছে এই কথাটা কখন বলা যেতে পারে।
উঃ। (i) খাবারে এমন কিছু মেশানো আছে যাতে খাবারের খাদ্যগুণ কমে গেছে। (ii) খাবারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের বদলে অন্য কোনো সস্তার জিনিস মেশানো হয়েছে। (iii) খাবারটিকে আকর্ষক দেখাতে বা কাঙ্খিত স্বাদ আনতে তাতে এমন কিছু জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে যা থেকে শরীরে নানারকম রোগ দেখা দিতে পারে।
16. আজিনামোটো কী? এথেকে কী ক্ষতি হতে পারে?
উঃ। আজিনামোটো একধরণের রাসায়নিক পদার্থ। চাউমিন ও চিলি চিকেনের রান্নায় সুন্দর স্বাদ আনার জন্য এই পদার্থ ব্যবহার করা হয়। কোনো খাবারে আজিনামোটো মেশালে তাতে একটা মাংসের মতো স্বাদ আসে। অনেকদিন ধরে আজিনামোটো খেলে মানুষের শরীরে নানারকম সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে কমবয়সী ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কের কোশের ক্ষতি হতে পারে।
17. ল্যাথিরিজম কী ?
উঃ। অন্যান্য ডালের চেয়ে খেসারির ডালের দাম কম হওয়ায় অনেক সময় অড়হর ডাল বা বেসনের সঙ্গে খেসারির ডাল বা তার গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়া হয়। 2-3 মাস ধরে যথেষ্ট পরিমাণে এই ডাল খেলে হাতে ও পায়ে পক্ষাঘাত দেখা দিতে পারে। একেই ল্যাথিরিজম বলা হয়। ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষে অনেকসময় এই রোগ দেখা গেছে।
18. ড্রপসি রোগ কীভাবে হয়?
উঃ। সরষের বীজের মতো দেখতে শিয়ালকাঁটার বীজের তেল অনেকসময় সরষের তেলের সঙ্গে মেশানো হয়। এই ভেজাল সরষের তেল খেলে ড্রপসি নামে একটি রোগ হয়। এই রোগে চামড়া, যকৃৎ, বৃক্ক, ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।
19. পরজীবী থেকে কীভাবে রোগ হয়ে থাকে?
উঃ। বিভিন্ন পশুর শরীরে অনেকসময় কৃমিজাতীয় কিছু প্রাণী বাসা বাঁধে। এই কৃমিরা হল পরজীবী। পরজীবীরা আশ্রয় নিয়েছে এমন পশুর কাঁচা মাংস বা সঠিক তাপমাত্রায় রান্না না করা মাংস খেলে এইসব পরজীবীরা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং নানারকম রোগের সৃষ্টি করে।
20. উৎসেচকের ক্রিয়ার ফলে কীভাবে খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে?
উঃ। উদ্ভিদজাত বা প্রাণীজাত খাবার কোশ দিয়ে তৈরি। আর ওই কোশেই থাকে নানাধরণের উৎসেচক। উদ্ভিদজাত বা প্রাণীজাত খাবারগুলি টাটকা অবস্থায় রান্না না করে ফেলে রাখলে উৎসেচকেরা ওই খাবারগুলির রং বা স্বাদের বদল ঘটিয়ে দেয় ফলে খাবারগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
21. ছত্রাক কীভাবে উপকার করে?
উঃ। পাউরুটি, চিজ, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় তৈরি করতে আমরা অনেক সময় ছত্রাকের সাহায্য নিয়ে থাকি। যেমন কয়েক ধরণের পেনিসিলিয়াম থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ তৈরি হয়। পাউরুটি তৈরি করতে ইস্ট লাগে।
22. ব্যাকটেরিয়া কীভাবে উপকার করে ?
উঃ। দই এবং বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার তৈরিতে সাহায্য করে ল্যাকটোব্যাসিলাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া। স্ট্রেপটোমাইসেস ব্যাকটেরিয়ার কয়েকটি প্রজাতি থেকে নানারকম জীবনদায়ী ওষুধ আমরা পেয়ে থাকি। এছাড়াও মানুষের শরীরের অন্ত্রে বাস করে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া যারা ভিটামিন B, তৈরি করতে সাহায্য করে।
23. প্লেগ রোগ কীভাবে ছড়ায়?
উঃ। প্লেগ রোগের অন্যতম বাহক মেঠো কালো ইঁদুর। এই মেঠো ইঁদুরের চামড়ায় বাসা বাঁধে এক ধরণের উকুন। আর এই উকুনের পাকস্থলীতে প্লেগের জীবাণু আশ্রয় নেয়। এই জীবাণুগুলি খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পেয়ে ইঁদুরের উকুনের পাকস্থলীর পথ বন্ধ করে দেয়াল। ফলে উকুনটি অনাহারে যাকে সামনে পায় তাকে কামড়ায় আর সেই ক্ষতস্থানে প্লেগের জীবাণু বমি করে দেয়। এই ক্ষতস্থান থেকেই প্লেগের সংক্রমণ ঘটে। এই উকুন ইঁদুরকে কামড়ালে ইঁদুরে আর মানুষকে কামড়ালে মানুষের শরীরে প্লেগের সংক্রমণ হয়।
24. কে কবে কী থেকে ম্যালেরিয়া জ্বর সারানোর ওষুধ আবিষ্কার করেন?
উঃ। 1600 সালে পেরুর পাদরি জুয়ান লোপেজ, আবার অন্যমতে 1633 সালে কালা সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকে ম্যালেরিয়া জ্বর সারানোর ওষুধ আবিষ্কার করেন।
25. মশা কীভাবে রোগ ছড়ায়?
উঃ। মশার দেহে একটা লম্বা ফাঁপা নলের মতো প্রোবেসিস থাকে। স্ত্রী মশার ক্ষেত্রে এটি হয় তীক্ষ্ণ ও সরু, এটি দিয়েই চামড়া ভেদ করে স্ত্রী মশা বিভিন্ন প্রাণীর রক্তপান করে। কোনো প্রাণীর রক্ত পান করার সময় স্ত্রী মশা প্রোবেসিসের মধ্য দিয়ে তার লালা প্রাণীটির দেহে প্রবেশ করিয়ে দেয়। এই লালার সঙ্গেই স্ত্রী মশার দেহে বাসা বাঁধা রোগজীবাণু ওই প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে।
26. ম্যালেরিয়ার জীবাণু কীভাবে বংশবৃদ্ধি করে ?
উঃ। বংশবৃদ্ধি করার জন্য ম্যালেরিয়া জীবাণুর মশার দেহ ছাড়া আরেকটা প্রাণীর দেহ প্রয়োজন। প্রায় 100টি প্রজাতির বেশি ম্যালেরিয়া জীবাণু বিভিন্ন ধরণের মেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহে বংশবৃদ্ধি করে চলেছে। কিন্তু ম্যালেরিয়া জীবাণুর মাত্র চারটি প্রজাতি ছাড়া অন্য কোনো প্রজাতি মানুষকে তাদের বংশবৃদ্ধির নিয়মিত মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেনি।
27. প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স কী? কীভাবে বংশবৃদ্ধি করে?
উঃ। প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স হল ম্যালেরিয়া জীবাণুর একটি প্রজাতি। প্লাসমোডিয়াম জীবাণু বেঁচে থাকার জন্য মশা ও অন্য আর একটি মেরুদন্ডী প্রাণীর দেহে এরা বেড়ে ওঠে। তাই মশা হল মুখ্য বা নির্দিষ্ট পোষক আর মেরুদণ্ডী প্রাণীরা হল গৌণ বা অন্তবর্তী পোষক।
28. তেজস্ক্রিয় পদার্থ কাদের বলা হয়?
উঃ। ইউরেনিয়াম, প্লুটোরিয়াম, প্রভৃতি পদার্থ ও তাদের যৌগ থেকে অবিরামভাবে কিছু অদৃশ্য রশ্মি বের হয়। এইসব রশ্মি ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। এদের বলা হয় তেজস্ক্রিয় পদার্থ।
29. ডিসলেক্সিয়া কী ?
উঃ। ডিসলেক্সিয়া হল একধরণের রোগ বা মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা। সাধারণত এই ধরণের সমস্যায় ভোগা মানুষের পড়া বুঝতে, মনে রাখতে আর লিখতে অসুবিধা হয়। অক্ষর চিনতে ও লিখতে, বানান মনে রাখতে অঙ্কের হিসাব করতে, নানা তথ্য মনে রাখতে আর বুঝতে অসুবিধা হয়। বিজ্ঞানীরা ও ধরনের ডিসলেক্সিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন শ্রবণজনিত, পুষ্টিজনিত ও মনোরোগজনিত ।
30. অটিজমের সমস্যাগুলি কী কী ?
উঃ। একই কাজ বারবার করা। আত্মীয় পরিজনদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া। সামান্য উত্তেজনাতেও অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠা। অনেকসময় বেশি উত্তেজনাতেও সাড়া না দেওয়া। অচেনা পরিবেশে মানিয়ে নিতে না পারা। পড়াশোনায় পিছিয়ে যাওয়া প্রভৃতি।
31. মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেসনের সমস্যাগুলি কী কী?
উঃ। খিদে খুব বেড়ে যাওয়া। ঘুম বেড়ে যাওয়া। প্রায় সময়েই কাঁদা। মন খারাপ করে একা একা বসে থাকা। সবসময় অসহায় বোধ করা।
32. মনোযোগহীনতার সমস্যাগুলি কী কী ?
উঃ। ক্লাসে স্থিরভাবে বসতে না পারা। সহপাঠীদের ক্রমাগত বিরক্ত করা। একই কাজে বা খেলায় মনোনিবেশ করতে না পারা। রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে থাকা।
33. মনোবিদ কারা ?
উঃ। যারা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দেখভাল করেন তাদের মনোবিদ বলা হয়। এঁরা বিভিন্ন দ্বন্দ ও টানাপোড়েন আমাদের মানসিক চাপ তৈরি হলে আলাপ আলোচনার করা সমস্যা শনাক্ত করে তার থেকে মুক্তির উপায় দেখিয়ে দেয়।
34. মনোচিকিৎসক কাদের বলে?
উঃ। যারা ওষুধের দ্বারা আমাদের মানসিক রোগের চিকিৎসা করেন তাঁদের মনোচিকিৎসক বলে। শারীরিক ও মানসিক অসুখ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হলে তার নিরাময় মনোচিকিৎসক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
35. পোলট্টি কাকে বলে? পোলট্রিজাত খাবার কী ?
উঃ। বিজ্ঞানসম্মতভাবে হাঁস, মুরগি প্রভৃতি প্রতিপালন কে পোলট্রি বলা হয়। পোলট্রি থেকে আমরা যে ধরনের খাবার পাই তাকে পোলট্রিজাত খাবার বলে। যেমন ডিম, মাংস।
36. জীবনকুশলতা শিক্ষা কাকে বলে?
উঃ। জীবনের নানা সময়ে মানুষকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এবং তার মোকাবিলা করতে হয়। এছাড়াও নানা সময়েও আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে হয় এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, এই সবের মধ্য দিয়ে সংবেদনশীল ও সমাজমনস্ক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষাকে বলা হয় জীবনকুশলতা শিক্ষা।
37. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কী কী করা উচিত ?
উঃ। (i) আমাদের ব্যবহারিক অভ্যাস পরিবর্তন করা দরকার, অর্থাৎ কুঅভ্যাস কে শনাক্ত করে সুঅভ্যাস পরিণত করা। (ii) মনের মধ্যে কথা চেপে না রেখে অন্যদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উচিত। (iii) বিভিন্ন বিতর্কিত ও সমকালীন বিষয়ে বন্ধুবান্ধব ও গুরুজনদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করা। (iv) পাঠ্য বিষয়ের বাইরে জ্ঞানবিষয়ক চর্চা এবং নাচ, গান, ছবি আঁকা ইত্যাদি সৃজনশীল কাজে অংশ নেওয়া উচিত।
No comments:
Post a Comment