পার্ট -৪ তড়িৎ প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
👉 ( পার্ট -৪ তড়িৎ প্রশ্ন উত্তর )
সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়ের একটি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায় হলো, ভৌত পরিবেশ এবং তার একটি পার্ট হলো "চুম্বক" । এই অধ্যায়ের পার্ট চুম্বক থেকে কিছু বিশেষ বিশেষ প্রশ্ন উত্তর করা হয়েছে এই পোস্টটিতে ।
⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1 /2
1. ম্যাগনেট (Magnet) বা চুম্বক শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে?
উঃ। ম্যাগনেটাইট শব্দ থেকে ম্যাগনেট (Magnet) বা চুম্বক শব্দটি এসেছে।
2. মেরুবিহীন চুম্বক কাকে বলে?
উঃ। একটি লোহার আংটার গায়ে অন্তরিত তামার তার জড়িয়ে তার মধ্যে দিয়ে একমুখী প্রবাহ পাঠালে ওই আংটা চুম্বকে পরিণত হয়। এই ধরনের চুম্বকের কোনো মেরু না থাকায় এদের মেরুবিহীন চুম্বক বলে।
3. দুটি করে চৌম্বক এবং অচৌম্বক পদার্থের উদাহরণ দাও।
উঃ। চৌম্বক পদার্থের উদাহরণ-লোহা এবং নিকেল। অচৌম্বক পদার্থের উদাহরণ— প্লাস্টিক এবং কাঠ।
4. একখণ্ড লোহা দীর্ঘদিন মাটিতে পুঁতে রাখলে কী হবে?
উঃ। পৃথিবী নিজে একটি শক্তিশালী চুম্বক। লোহার দণ্ডকে মাটিতে পুঁতে রাখলে আবেশের ফলে নিকটতম প্রান্তে বিষম মেরু এবং দূরতম প্রান্তে সমমেরুর সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন এই অবস্থায় রাখলে দণ্ডটির দুই প্রান্তে দুটি বিপরীত মেরুর সৃষ্টি হয়। ফলে দণ্ডটি স্থায়ী চুম্বকে পরিণত হয়।
5. পৃথিবীর চৌম্বকত্ব কে প্রমাণ করেন?
উঃ। 1600 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ড. গিলবার্ট বলেন যে, পৃথিবী নিজেই একটি বিরাট চুম্বক।
6, ম্যাগনেটাইটের সংকেত কী?
উঃ। ম্যাগনেটাইটের সংকেত হল Fe,
7. কুৱি বিন্দু কী?
উঃ। যে বিশেষ তাপমাত্রায় কোনো চুম্বককে উত্তপ্ত করলে তার চৌম্বকত্ব সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়, ও সেটি অচৌম্বক পদার্থে রূপান্তরিত হয়। সেই তাপমাত্রাকে ঐ পদার্থের কুরি বিন্দু বলে। চুম্বকের উপাদান আলাদা হলে কুরি বিন্দুও আলাদা হয়।
8. নীল মেরু ও লাল মেরু কী?
উঃ। ভূ-চুম্বকের উত্তর মেরুকে নীল মেরু ও দক্ষিণ মেরুকে লাল মেরু বলা হয়।
9. নৌ কম্পাস কী ?
উঃ। সমুদ্রবক্ষে দিক নির্দেশের জন্য নাবিকরা যে ব্যবহার করেন। তাকে নৌকম্পাস বলা হয়। এতে একটি সূচাগ্র ধাতবদণ্ডের উপর একটি চুম্বক শলাকা বসানো থাকে।
10. ডাক্তাররা তড়িৎ চুম্বকদণ্ড ব্যবহার করেন কেন?
উঃ। চোখের ভিতরে পড়ে যাওয়া অতি সূক্ষ্ম লোহার চূর্ণ বের করতে ডাক্তাররা এক বিশেষ তড়িৎ চুম্বকাও ব্যবহার করেন।
11. একটি লোহার টুকরোকে একটি শক্তিশালী চুম্বকের সামনে আনলে তা সাময়িকভাবে একটি চুম্বকের মতো আচরণ করতে পারে। এটি চুম্বকের কোন্ ধর্মের জন্য হয়?
উঃ। এটি চুম্বকের চৌম্বক আবেশ ধর্মের জন্য হয়।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. চুম্বক এবং চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
উঃ। যে বস্তু লোহা, নিকেল এবং কোবাল্টকে আকর্ষণ করতে পারে এবং যার দিক-নির্দেশক ধর্ম আছে, তাকে চুম্বক বলে। যে পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় এবং যাকে কৃত্রিম চুম্বকে পরিণত করা যায়, সেই পদার্থকে চৌম্বক পদার্থ বলে।
2. চুম্বক মেরু কাকে বলে ?
উঃ। চুম্বকের দুই প্রান্তে যে দুটি বিন্দুতে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি, সেই দুই বিন্দুকে চুম্বকের মেরু বলে।
3. উদাসীন অঞ্চল কাকে বলে?
উঃ। চুম্বকের ঠিক মাঝখানের অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে, ওই অঞ্চলকে চুম্বকের উদাসীন। অঞ্চল বলে।
4. চৌম্বক দৈর্ঘ্যের সংজ্ঞা দাও। চৌম্বক অক্ষ কাকে বলে?
উঃ। চুম্বকের দুই মেরুর মধ্যবর্তী দূরত্বকে ঐ চুম্বকের চৌম্বক দূরত্ব বলে।
চৌম্বক অক্ষ : চুম্বকের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু যোগ করলে যে সরল রেখাংশ (NS) পাওয়া যায় তাকে চৌম্বক অক্ষ বলে।
5. চৌম্বক ক্ষেত্রের সংজ্ঞা দাও।
উঃ। একটা চুম্বকের চারধারে যে স্থান জুড়ে ওই চুম্বকের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ ধর্ম কাজ করে তাকে ওই চুম্বকের চৌম্বক ক্ষেত্র বলে।
6. চৌম্বক আবেশ কাকে বলে?
উঃ। একটি চৌম্বক-পদার্থকে কোনো একটি শক্তিশালী চুম্বকের সঙ্গে স্পর্শ করালে বা খুব কাছে আনলে ওই চৌম্বক পদার্থটি সাময়িকভাবে চুম্বকে পরিণত হয়। এই ঘটনাকে চৌম্বক আবেশ বলে।
7. অডিও বা ভিডিও ক্যাসেটের কোথায়-চুম্বকিত পদার্থের আস্তরণ থাকে?
উঃ। অডিয়ো বা ভিডিয়ো ক্যাসেটের মধ্যে যে প্লাস্টিকের টেপ থাকে তার উপর চুম্বকিত পদার্থের আস্তরণ থাকে।
৪. চুম্বকের অপর কয়েকটি ব্যবহার লেখো।
উঃ। কম্পিউটারের হার্ড-ডিস্কে প্লাস্টিকের চাকতির উপর চুম্বকিত পদার্থের আস্তরণ থাকে। লাউড স্পিকার, সাইকেলের ডায়নামোতে, ইলেকট্রিক ডায়নামো, কলিং বেলে চুম্বক থাকে।
9. ATM কার্ডে ও Credit কার্ডে কীভাবে চৌম্বকশক্তির ব্যবহার করা হয়?
উঃ। ATM কার্ডে ও Credit কার্ডে চুম্বকিত স্ট্রিপ ব্যবহার করা হয় ?
10. ভূচুম্বক বলরেখা কী?
উঃ। চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি বিচ্ছিন্ন চৌম্বক উত্তরমেরু যে সরল ও বক্রপথ অসুসরণ করে, তাকেই ভূচৌম্বক বলরেখা বলে। ভূ-চুম্বকের বলরেখা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। মনে রাখতে হবে যে বলরেখার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। এর রূপপ্রকাশ করার জন্যেই বলরেখার ধারণা কল্পনা করা হয়।
11. আবিষ্ট চৌম্বকত্বের পরিমাণ কোন্ কোন্ বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
উঃ। (i) আবেশকারী চুম্বকের মেরুশক্তি বাড়ালে আবিষ্ট চৌম্বকত্বের পরিমাণ বাড়ে। (ii) আবেশকারী মেরু এবং আবিষ্ট চৌম্বক পদার্থের মধ্যের দূরত্ব যত কম হবে, আবিষ্ট চৌম্বকত্ব ততই বাড়বে।
(iii) আবেশকারী চুম্বক ও চৌম্বক পদার্থের মধ্যে যে মাধ্যম থাকে তার উপর নির্ভর করে।
13. একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো যে চৌম্বক আবেশের ফলে আবিষ্ট চুম্বকে আবেশকারী মেরুর নিকটবর্তী প্রান্তে বিপরীত মেরু এবং দূরতম প্রান্তে সমমেরু উৎপন্ন হয়।
উঃ। পরীক্ষা : একটি দণ্ড চুম্বকের উত্তর মেরুকে একই অনুভূমিক তলে অবস্থিত একটি চুম্বক-শলাকার উত্তর মেরু থেকে এমন দূরে রাখা হল, যেন দুটি মেরুর মধ্যে কোনো বিকর্ষণ বল প্রায় থাকে না। এই অবস্থায় দণ্ড-চুম্বকের উত্তর মেরু এবং চুম্বক শলাকার উত্তর মেরুদ্বয়ের মাঝে একই অনুভূমিক তলে একটি কাঁচা লোহার দণ্ড AB কে রাখা হল। দেখা গেল যে, চুম্বক শলাকার উত্তর মেরুটি বিকর্ষিত হয়ে দূরে সরে গেল।
ব্যাখ্যা ঃ দণ্ড চুম্বকের N-মেরুর প্রভাবে লোহার দণ্ড AB আবিষ্ট-চুম্বকে পরিণত হয় এবং আবেশের প্রভাবে AB-এর A প্রান্তে দক্ষিণ মেরু (S) এবং B প্রান্তে উত্তর মেরু (N) সৃষ্টি হয়। B-প্রান্তের কাছে চুম্বক-শলাকার উত্তর মেরু থাকায়, সমমেরুর প্রভাবে পরস্পরের বিকর্ষণের ফলে শলাকার উত্তর মেরুটি দূরে সরে যায়।
সিদ্ধান্ত ঃ এই পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে, চৌম্বক আবেশের ফলে আবিষ্ট চুম্বকে আবেশকারী মেরুর নিকটবর্তী প্রান্তে বিপরীত মেরু এবং দূরতম প্রান্তে সমমেরু উৎপন্ন হয়।
14. বৈদ্যুতিক প্রণালীতে কীভাবে কৃত্রিম তড়িৎ-চুম্বক তৈরি করা যায়?
উঃ। একটি লোহার দণ্ড, একটি লম্বা অন্তরিত তামার তার, একটি সুইচ, একটি শক্তিশালী ব্যাটারি এবং একটি চুম্বক শলাকা নেওয়া হল। চিত্রানুযায়ী লোহার দণ্ডের উপর অন্তরিত তামার তার জড়িয়ে নেওয়া হল। তারের দুইপ্রান্ত ব্যাটারির ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তে সুইচসহ ছবির মতো যোগ করা হল। চুম্বক শলাকাটিকে তার জড়ানো লোহার দণ্ডের সামনে। এনে সুইচ অন করা হলে দেখা যাবে, চুম্বক শলাকার উত্তর মেরু বিক্ষিপ্ত হয়ে দূরে সরে গেল। আবার ব্যাটারির প্রান্তদুটি উলটে সুইচ অন করলে শলাকার উত্তর মেরুটি আকর্ষিত হচ্ছে। এবার সুইচ অফ্ করে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করে দিলে চুম্বক শলাকাটি আবার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে এল।
এর থেকে বোঝা গেল, তড়িৎ প্রবাহের ফলে লোহার দণ্ড চুম্বকে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের চুম্বককে তড়িৎ-চুম্বক বলে।
15. ‘পৃথিবী নিজেই একটি বিশাল চুম্বুক–আলোচনা করো।
উঃ। পৃথিবী নিজেই একটি বিরাট চুম্বক। তার একটি চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। এর ফলেই (i) চুম্বক শলাকার দিগ্দর্শী ধর্ম দেখা যায় এবং কম্পাসের দিকনির্ণয় ক্ষমতার ব্যবহার করা যায়। (ii) পরিযায়ী পাখি এবং পরিযায়ী কিছু কচ্ছপ পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রকে অনুসরণ করে উয় শীতের দিনে স্থানান্তরিত হয়। এই ভূ চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকলে দিকনির্ণায়ক ব্যবস্থা কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলত। (iii) মহাবিশ্ব থেকে একধরনের মহাজাগতিক রশ্মি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। এদের অধিকাংশই হল তড়িৎযুক্ত কণিকা। ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে এদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। ফলে মেরু অঞ্চল ঘিরে দুটি বিকিরণ বলয় তৈরি হয় এবং মেরু জ্যোতি উৎপন্ন হয়। ভূ চৌম্বকত্ব না থাকলে এটি সৃষ্টি হত না।
16. কী করে একটি প্রাণী সরাসরি চৌম্বকক্ষেত্রকে চিনতে পারে ?
উঃ। কিছু কিছু প্রাণীর দেহে ম্যাগনেটাইটের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। যেমন পায়রার খুলি ও মস্তিষ্কের মাঝে একটা খুব ছোটো কালো গঠন আছে। এর মধ্যে ম্যাগনেটাইট নামে একধরনের চৌম্বকীয় বস্তু আছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন এই পদার্থটি চৌম্বকক্ষেত্রকে অনুভব করে দিকনির্ণয়ের কাজে ব্যবহার করে প্রাণীরা পথ চিনতে পারে। তাই ঘরে ফেরা পায়রারা কোনো পরিচিত চিহ্ন দেখতে না পেলেও অন্ধকার বা মেঘলা দিনে ঠিকঠাক ঘরে ফিরে আসে। কোনো কোনো শামুক, মৌমাছিদের মধ্যেও ম্যাগনেটাইটের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
No comments:
Post a Comment