Class 7th Bangla Bharat Teertha Questions And Answers | ক্লাস সেভেন বাংলা ভারত তীর্থ প্রশ্ন উত্তর, সারমর্ম | ভারত তীর্থ প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণী - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 17 December 2024

Class 7th Bangla Bharat Teertha Questions And Answers | ক্লাস সেভেন বাংলা ভারত তীর্থ প্রশ্ন উত্তর, সারমর্ম | ভারত তীর্থ প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণী

 

 

ভারত তীর্থ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
প্রশ্ন উত্তর





▨ কবি-পরিচিতি : 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটোবেলা থেকেই ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী' ও 'বালক' পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। 'কথা ও কাহিনী', 'সহজপাঠ', 'রাজর্ষি', ‘ছেলেবেলা', 'শিশু’, শিশু ভোলানাথ’, ‘ডাকঘর’, 'গল্পগুচ্ছ'-সহ তাঁর বহু রচনাই শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করে। দীর্ঘ জীবনে তিনি অজস্র কবিতা, গান, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন, ছবিও এঁকেছেন। ১৯১৩ সালে ‘Song Offerings' -এর জন্য তিনি প্রথম এশিয়াবাসী হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান। দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত আর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাঁর রচনা। ১৯৪১ সালে তিনি পরলোকগমন করেন।


▨ কবিতা পরিচয় : 

‘ভারততীর্থ' কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। একটি তীর্থক্ষেত্রে যেমন নানা স্থানের, নানা ভাষাভাষীর মানুষ এসে একস্থানে মিলিত হয়ে সেখানে এক হয়ে যায়, কবির মতে ভারতবর্ষও তেমনই। এখানে নানা সময়, নানা দেশের, নানা মানুষ এসে এক দেহে লীন হয়ে গেছে। তাই কবি ভারতবর্ষকে তীর্থক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কবিতাটির নাম তাই 'ভারততীর্থ’ সার্থক।


▨ সারমর্ম : 

বিশাল এই দেশ ভারতবর্ষ। নানা ভাষার, নানা জাতির মানুষের বাস এখানে। কেউ জানে না কার আহ্বানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এসেছে। এসেছে বসতি করতে, রাজত্ব করতে, লুণ্ঠন করতে। তারা কেউ এখান থেকে একেবারে চলে যায়নি, রয়ে গেছে। এখানে আর্য, অনার্য, দ্রাবিড়, চিন, মোগল, পাঠান কেউ আলাদা নয়, সবাই সমান। এই ভারতে যারা আসেনি তারাও আসবে। এখানে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের হাত ধরে মন শুচি করবে, পতিত তার অপমান ভুলে যাবে। সেই দিনটির অভিষেক লগ্নে সবাইকে কবি আহ্বান জানিয়েছেন সবার পরশে পবিত্র ভারতবর্ষের এই পবিত্র তীর্থনীরে।


▩  অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :প্রতিটা প্রশ্নের মান -1

১. কোথায় আজি দ্বার খুলিয়াছে বলে কবি বলেছেন? 

উঃ। পশ্চিমে আজ দ্বার খুলেছে।


২. ‘যারা এসেছিল সবে—তারা কীভাবে এসেছিল? 

উঃ। তারা মরুপথ, গিরিপথ ভেদ করে উন্মাদ কলরবে জয়গান গেয়ে এসেছিল।


৩. এখানে হৃদয়তন্ত্রে কোন্ মন্ত্র ধ্বনিত হয়েছিল ? 

উঃ। এখানে একদিন হৃদয়তন্ত্রে অবিরাম মহা-ওংকারধ্বনি মন্ত্র ধ্বনিত হয়েছিল। 


৪. কবি মনকে কী শুনতে ও কী বহন করতে বলেছেন? 

উঃ। কবি মনকে একতার ডান শুনতে ও দুঃখ বহন করতে বলেছেন।


 ৫. কী এখনও ভরা হয়নি? 

উঃ। সবার স্পর্শে পবিত্র করা তীর্থনীর দ্বারা এখনও মঙ্গলঘট ভরা হয়নি।


৬. কবি কী জয় করতে বলেছেন? 

উঃ । কবি সমস্ত লজ্জা ও ভয়কে জয় করতে বলেছেন। 


 ▩ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3

১. ‘হেথায় দাঁড়ায়ে’—এখানে দাঁড়িয়ে কবি কী করতে চেয়েছেন ?

উঃ। এখানে অর্থাৎ ভারততীর্থের পুণ্য সাগরতীরে দাঁড়িয়ে দুটি বাহু প্রসারিত করে কবি নরদেবতাকে নমস্কার করেছেন এবং উদার ছন্দে আনন্দের সহিত সেই নর দেবতার বন্দনা করেছেন। অর্থাৎ মানব সভ্যতার জয়গান করেছেন। 


২. ‘হেথায় নিত্য হেরো'—কবি কী দেখতে বলেছেন?

উঃ। কবি এখানে প্রতিদিন ধ্যানমগ্ন এই গিরি পর্বত, নদীকে জপমালার ন্যায় ধরে থাকা এই বিশাল প্রান্তর সহ পবিত্র ধরিত্রীকে দেখতে বলেছেন।


৩. ‘কেহ নাহি জানি'...। কী কেউ জানে না ?

উঃ। কবি বলেছেন কেউ জানতে পারেনি কার আহ্বানে এই ভারতভূমিতে দূর্বার স্রোতের মত বহু মানুষের ধারা কোথা থেকে এসেছিল আর কীভাবে এদেশে মানুষের মতো জনস্রোতে তারা এক হয়ে গেল। এখানে আর্য অনার্য দ্রাবিড়, চিন, শক, হুন, পাঠান ও মোগল এক ভারতবর্ষে মিশে গিয়েছিল। 


 ▧ তিন-চারটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3

১. কবিতায় ভারতভূমিকে 'পুণ্যতীর্থ' বলা হয়েছে কেন ?

উঃ। ভারতবর্ষ এমন এক স্থান যেখানে নানা সময়, নানা স্থানের মানুষ এসেছে। মানুষ যেমন পুণ্যের টানে তীর্থক্ষেত্রে যায়, তেমনই ভারতভূমির টানে তারা এখানে ছুটে এসেছে। তাই কবিতায় ভারতভূমিকে পুণ্যতীর্থ বলা হয়েছে। 


২. মহামানবের সাগরতীরে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উঃ। কবি বলেছেন এখানে মানুষই হল প্রধান দেবতা। সেখানে পতিত ও ব্রাহ্মণের কোনো ভেদাভেদ নেই। ভারতবর্ষ যেন এক মহামানবের মিলনসাগর। সেই সাগরকে কবি মহামানবের সাগরতীর বলেছেন।


৩. ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে, কবিতা থেকে এমন একটি পত্তি উদ্ধৃত করো। 

উঃ। পঙ্ক্তিটি হলো 'ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর, নদী-জপমালা-ধৃত প্রান্তর'। 


৪. ভারতবর্ষকে পদানত করতে কোন্ কোন্ বিদেশি শক্তি অতীতে এদেশে এসেছিল ? তাদের পরিণতি কী ঘটল ?

উঃ। অতীতে শক, হুন, পাঠান, মোগল প্রভৃতি জাতি ও বিদেশি শক্তি ভারতবর্ষকে পদানত করতে এদেশে এসেছিল। এখানে এসে তারা সবাই এক দেহে লীন হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সভ্যতার মাঝে তারা নিজেদের মিশিয়ে দিয়েছিল। 


৫. ‘পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার' – উদ্ধৃতাংশে কোন্ পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে? এমন পরিস্থিতিতে কবির অন্বিষ্ট কী?

উঃ। উদ্ধৃতাংশে ব্রিটিশ-ফরাসি ইত্যাদি জাতির ভারতে আগমনের কথা বলা হয়েছে। সেখান থেকে আগত মানুষজন তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে উপহার হিসেবে এদেশে নিয়ে এসেছেন। কবি মনে করছেন যারা আসছে তারা দেবে আর নেবে, মিলবে এবং মেলাবে কেউ ফিরে যাবে না।


৬. “আমার শোণিতে রয়েছে ধ্বনিতে তার বিচিত্র সুর”— কোন্ সুরের কথা বলা হয়েছে? তাকে 'বিচিত্র' বলার কারণ কী? কেনই বা সে সুর কবির রঙে ধ্বনিত হয়? 

উঃ । যারা গিরি-মরুপথ অতিক্রম করে বিজয়ের জয়গান গেয়ে কলরব করতে করতে ভারতে প্রবেশ করেছিল তাদের সুরের কথা বলা হয়েছে। যেহেতু সেই সুরে অনেক মানুষের নানান ধ্বনি রয়েছে তাই তাকে বিচিত্র বলা হয়েছে। কবি এখানে ভারতবর্ষের সাথে একাত্ম অনুভব করছেন তাই কবির রঙে বহু মানুষের মিলনের সেই বিচিত্র সুর ধ্বনিত হয়েছে। কবি অনুভব করছেন তারা সবাই তার মাঝেই বিরাজ করছে।


৭. 'হে রুদ্রবীণা বাজো বাজো বাজো' রুদ্রবীণা কী? কবি তার বেজে ওঠার প্রত্যাশী কেন? 

উঃ। পুরাণ কাহিনি মতে 'রুদ্রবীণা' হল ভগবান শিবের বীনা। এটি একধরণের বাদ্যযন্ত্র। রুদ্রবীণা হল ধ্বংসের প্রতীক। কবি এখানে চাইছেন যারা আজও ঘৃণার বশে ভারতবর্ষ থেকে দূরে রয়েছে রুদ্রবীণার ধ্বনিতে তাদের সে বাঁধন ভেঙে যাবে, তারাও এই মহান ভারতবর্ষে মহামানবের সাগরতীরে উপনীত হবে। 


৮. 'আছে সে ভাগ্যে লিখা' ভাগ্যে কী লেখা আছে? সে লিখন পাঠ করে কবি তাঁর মনে কোন শপথ গ্রহণ করেছেন?

উঃ। যে হোমের আগুনে বিভেদ ভুলে এক বিরাট হৃদয় গড়ে উঠেছিল, এখন সেই হোমের আগুনে দুঃখের রক্তশিখা জ্বলছে, সেই দুঃখকে সহ্য করতে হবে, অন্তরে দহন করতে হবে, তাই ভাগ্যে লেখা আছে। সে লিখন পাঠ করে কবি শপথ গ্রহণ করেছেন যে, একতার ডাক শুনে তিনি সেই দুঃখ বহন করবেন, সমস্ত লজ্জা ও ভয়কে জয় করবেন, এর ফলেই অপমান দূরে সরে যাবে।


৯. 'পোহায় রজনী' –অন্ধকার রাত শেষে যে নতুন আশার আলোকোজ্জ্বল দিন আসবে তার চিত্রটি কীভাবে ভারত তীর্থ কবিতায় রূপায়িত হয়েছে? 

উঃ। ভারততীর্থ' কবিতায় কবি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে, অন্ধকার রাত শেষে সেই আলোকোজ্জ্বল দিনটি আসবে যে-দিন আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সবাই আসবে এবং এক হয়ে মিলিত হবে। ব্রাহ্মণ যেদিন মন শুচি করে পতিতের হাত ধরবে এবং সব অপমান ভার ঘুচে যাবে।


১০. মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা’—কবি কাদের ব্যাকুল আহ্বান জানিয়েছেন? কোন্ মায়ের কথা এখানে বলা হয়েছে? এ কোন্ অভিষেক? সে অভিষেক কীভাবে সম্পন্ন ও সার্থক হবে? করেছেন।

উঃ। কবি আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলমান, ইংরেজ, খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ-পতিত সবাইকে আহ্বান এখানে ভারত মায়ের কথা বলা হয়েছে। এই অভিষেক এক নতুন দিনের নতুন দেশ গঠনের অভিষেক। ভারতমায়ের জয়গানের অভিষেক, এক নতুন ভারততীর্থ গড়ার প্রয়াস। সে অভিষেক দ্বারা সকল ধর্মবর্ণজাতিনির্বিশেষে তাদের পরস্পরের হাত ধরার মধ্যে দিয়ে ভারতভূমি পবিত্র হবে। ভারতবর্ষ সবার স্পর্শে পবিত্র তীর্থনীরে পরিণত হবে।


১১. টীকা লেখো

উঃ। গুংকার ধ্বনি : ওংকার হল একটি শক্তির প্রতীক। পুরাণ কাহিনি ও প্রাচীন শাস্ত্রমতে, এই ধ্বনি সমস্ত বিশ্বব্রম্মাণ্ডকে চালনা করে। এই শক্তির জন্য উচ্চারিত মন্ত্রকে বলা হয় ওংকার ধ্বনি। 

শক : শক হল একটি যুদ্ধবাজ জাতি। প্রাচীন ভারতে বারবার এদের আক্রমণ ঘটেছে। নিষ্ঠুর ও যোদ্ধা জাতি শকদের দমন করেন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।

হুন : হুন হল একটি বিদেশি জাতি। এরা মূলত মধ্য এশিয়ায় বসবাস করত। গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্ত ভারতবর্ষে হুন আক্রমণ প্রতিরোধ করেন।

মোগল : মোগল বা মুঘল হল মধ্য এশিয়ার জনজাতি। ভারতবর্ষে এরা কয়েকশো বছর রাজত্ব করেছে। বাবর, আকবর, শাহজাহান প্রমুখরা ছিলেন ভারতবর্ষের মোগল সম্রাট। ভারতে বহু স্থাপত্য কীর্তি মোগলরা তৈরি করেছে।

দ্রাবিড় : বহু প্রাচীন জনজাতি। বর্তমানে ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলে এখন এদের মূলত বসবাস। 

ইংরেজ : ইউরোপ থেকে আগত জাতি। ইংল্যান্ডে বসবাসকারীদের ইংরেজ বলা হয়। ব্যাবসা করতে এসে কালক্রমে ভারতবর্ষে প্রায় পৌনে দুশো বছর এরা রাজত্ব করে। সর্বশেষ এদের হাত থেকেই ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করেছে।


১২. ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসের কথা কবিতায় কীভাবে বিধৃত হয়েছে।

উঃ। প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে বহু জনজাতি এসেছে। শক-হুন-পাঠান ইত্যাদিরা ভারতে এসেছে। কেউ এসেছে রাজত্ব করতে, কেউ বা এসেছে লুণ্ঠন করতে। এই ধরনের ঘটনা ভারতের ইতিহাসে বারংবার ঘটেছে। অতীতের সেই ইতিহাসের পথ দিয়েই এসেছে ইংরেজ। এরা সবাই এসেছে, এসে কালক্রমে ভারতের সাথে একাত্ম হয়ে গেছে।


১৩. কবির দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ ভারতের যে স্বপ্নিল ছবি ধরা পড়েছে, তার পরিচয় দাও।

উঃ। কবি কল্পনা করেছেন যে এমন দিন আসবে যে-দিন ভারতীয়দের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সব ধর্মবর্ণজাতিনির্বিশেষে সমস্ত মানুষ এখানে এসে এক হয়ে যাবে। এক হয়ে একে অপরের সাথে ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ হবে।

No comments:

Post a Comment