▩ লেখক পরিচিতি :
প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৯ সালে বিহারের পূর্ণিয়ার জন্মগ্রহণ করেন। “গৌড় মল্লার”, “তুমি সন্ধ্যার মেঘ”, “তুঙ্গভদ্রার তীরে” প্রভৃতি ঐতিহাসিক উপন্যাস এবং 'ব্যোমকেশ বক্সী'র মতো গোয়েন্দা কাহিনি তাঁর স্মরণীয় সাহিত্য সৃষ্টি। ছোটোদের জন্য তাঁর সৃষ্ট নায়ক 'সদাশিব'। বড়োদের পাশাপাশি ছোটোদের জন্যও তাঁর অনেক রচনা রয়েছে। ১৯৭০ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়।
▩ রচনা পরিচিতি :
দুটি স্কুল টিমের ফুটবল ম্যাচ। তাদের মধ্যে একটি স্কুলের বিশ্বাস খেলার আগে যদি তারা গাধার কান মলে দিতে পারে তবে অবশ্যই জিতবে। এমতাবস্থায় কান মলার জন্য গাধা খোঁজা এবং না-পাওয়াও তাদের এই কু-সংস্কার গল্পের একটা বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে। তাই গল্পটির নাম স্বাভাবিকভাবেই 'গাধার কান' হয়েছে।
▩ সারসংক্ষেপ :
টাউন স্কুল ও মিশন স্কুলের মধ্যে ফাইনাল ম্যাচ। শহরে একটা টানটান ব্যাপার। খেলার দিন মাঠে লোকজন উপস্থিত। টাউন স্কুলের ছেলেরা গাছতলায় বসে ড্রেস করছে। তাদের বিশ্বাস গাধার কান যদি তারা মলতে পারে, তাহলে তাদের জয় অবশ্যম্ভাবী। তাই একজন খেলোয়াড় গাধার কান মলতে গিয়েছে। সে গাধা না-পেয়ে ফিরে আসে। দলের কনিষ্ঠ এক সদস্য টুনু এই কথায় হাসে এবং কানমলা খায়। খেলার সময় টুনুর কাধে ভর করেই টাউন স্কুল খেলটিতে জেতে। খেলার শেষে সবাই ইয়ার্কি করে যে গাধার বদলে টুনুর কান মলাতে কাজে দিয়েছে। তবে তারা টুনুকে হিরো বলে মেনেও নেয়।
▩ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১. “শহরের মধ্যে বেশ একটু সাড়া পড়ে গেছে”–এই সাড়া পড়ার কারণ কী?
উঃ। শহরের দুটি নামী স্কুল টাউন স্কুল ও মিশন স্কুলের মধ্যে ফুটবল ম্যাচের কারণে সাড়া পড়ে গেছে।
২. “এই দুই স্কুলের ছেলেদের মধ্যে চিরকালের রেষারেষি ”— কোন্ দুই স্কুলের কথা বলা হয়েছে?
উঃ। টাউন স্কুল ও মিশন স্কুলের কথা বলা হয়েছে।
৩. হিঃ হিঃ—তুক করা হল না'—বক্তা কে? কাকে সে এ কথা বলেছে? কখন বলেছে?
উঃ। বক্তা হল টুনু। সে সমরেশকে এ কথা বলেছে। সমরেশ গাধা না-পেয়ে ফিরে এসে মাঠে নামবার সময় সে এই কথা বলেছে।
⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১. গিরীন, সমরেশ আর টুনু এই তিনজন কে কোন্ পজিশনে খেলে ?
উঃ। গিরীন ব্যাকে খেলে, সমরেশ হাফ ব্যাক থেকে খেলে আর টুনু খেলে রাইট-ইন পজিশনে।
২. গিরীন গেল বছর কীজন্য কাপ জিতেছে বলেছিল?
উঃ। গিরীন বলেছিল গেল বছর গাধার কান মলে তারা কাপ জিতেছে।
৩. টাউন স্কুলের ছেলেরা কোথায় তৈরি হচ্ছিল?
উঃ। খেলার মাঠ থেকে কিছু দূরে একটা বটগাছের তলায় টাউন স্কুলের ছেলেরা তৈরি হচ্ছিল।
৪. একটা গোল দিয়ে মিশন স্কুলের কী হয়েছিল ?
উঃ। একটা গোল দিয়ে মিশন স্কুলের উৎসাহ দশগুণ বেড়ে গিয়েছিল।
৫. খেলা শেষের পর কে কত গোল দিয়েছিল?
উঃ। খেলা যখন শেষ হল তখন দেখা গেল টাউন স্কুল দিয়েছে চারটি গোল, আর মিশন স্কুল মাত্র এক গোল।
৬. টুনু গড়াতে গড়াতে উঠে বসে কী ভাবল ?
উঃ। টুনু গড়াতে গড়াতে উঠে বসে ভাবল দিব্যেন্দুবাবু নিশ্চয়ই ফাউল দিয়েছেন।
৭. টুনুর খেলা দেখে মিশন স্কুলের ছেলেদের কী হল?
উঃ। টুনুর খেলা দেখে মিশন স্কুলের ছেলেরা কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
৮. খেলার আগে সমরেশ কী করেছিল বলে জানিয়েছেন?
উঃ। খেলার আগে সমরেশ টুনুর কান মলে দিয়েছিল।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. দুই দলের মধ্যে কারা জিতবে বলা শক্ত – কেন বলা শক্ত? দুই দলের কে কেমন খেলে লেখো।
উঃ। টাউন স্কুল ও মিশন স্কুল দুটি দলই ভালো খেলে, তাই খেলায় কে জিতবে বলা শক্ত।টাউন স্কুলের গিরীন ব্যাকে খেলে, সমরেশ হাফব্যাক এবং টুনু রাইট ইন খেলে। দলের অন্য ছেলেরা ভালো। খেললেও এই তিনজনের ওপরই ভরসা। টুনু রোগা পটকা হলেও হরিণের মতো দৌড়ায় এবং পায়ে বল পড়লে তাকে আটকানো শক্ত। অপরদিকে মিশনস্কুলের দলও খুব মজবুত এবং তারা বেশিরভাগই বুট পরে খেলে এবং তাদের গায়ের জোরও খুব বেশি।
২. গিরীন কীভাবে টুনুকে উৎসাহ দিয়েছিল।
উঃ। গিরীন টুনুর পাশে বসে তার গলা জড়িয়ে তাকে বলেছিল যে টুনুই আজ ভরসা। সে চেষ্টা করলে টাউন স্কুল তিনটে গোল দিতে পারে। তাই পায়ের, ব্যথা ভুলে এটাই মনে রাখতে হবে যে আজ আমাদের জিততে হবে।
৩. ‘তাদের একটা দোষ'— কাদের কী দোষ? এতে কী তাদের সুবিধা হয়েছিল?
উঃ। মিশন স্কুলের ছেলেদের দোষ একটাই যে তারা ভালো খেলোয়াড় হলেও হারার উপক্রম দেখলেই তারা মারামারি করে খেলতে আরম্ভ করে না। এতে তাদের সুবিধা হয়নি, কারণ টাউন স্কুলের ছেলেরা এমনভাবে খেলে যে তাদের মারতে গেলে তারা পিছলে বেরিয়ে যায়। ফলে যারা মারতে যায় তাদেরই অসুবিধা হয় এবং খেলা খারাপ হয়ে যায়।
৪. গোল খেয়ে যারা দমে যায় তাদের সম্পর্কে লেখক কী বলেছেন? গল্পটিতে তা কি ঘটতে দেখা গেছে?
উঃ। লেখক বলেছেন গোল খেয়ে যারা দমে যায় তারা আর জিততে
পারে না। হ্যাঁ, গল্পটিতেও তাই ঘটেছে। দ্বিতীয় গোলের পর মিশন স্কুল দমে গিয়েছিল। তারপরে টুনু তাদের আরও দুটো গোল ঠুকে দিয়েছিল। খেলা শেষ হবার পর দেখা গেল টাউন স্কুল দিয়েছিল চার গোল আর মিশন স্কুল এক গোল দিয়ে পেরেছে।
৫. ‘সমরেশ হঠাৎ জোরে হেসে উঠল, বুঝেছি।'—কোন্ কথার প্রসঙ্গে সে হেসে উঠেছিল? সে কী বুঝেছিল?
উঃ। খেলা শেষ হবার পর টাউন স্কুলের সবাই এক জায়গায় জটলা করতে গিয়ে বলল তারা জিতল কী করে? গাদার কান তো মলা হয়নি। সকলে এ ওর মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে ভাবছিল সত্যিই এরকম অসম্ভব ব্যাপার ঘটল কী করে? তখন সমরেশ হেসে উঠেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল খেলার আগে সে টুনুর কান মলে দিয়েছিল। আর তাতেই গাধার কানমলার ফল হয়েছে।
৬. 'তার এ কী আশ্চর্য খেলা' – কার খেলা? সেই আশ্চর্য খেলার বর্ণনা দাও।
উঃ। টুনুর আশ্চর্য খেলা। টুনু এক অদ্ভুত খেলা শুরু করেছিল। তাকে পাঁচজন ঘিরে থেকেও আটকাতে পারেনি। ছোট্ট শরীর নিয়ে সে তিরের মতো ছুটতে থাকে এবং তাকে আটকাতে গেলে সে পাঁকাল মাছের মতো পিছলে বেরিয়ে যেতে লাগল। এই আশ্চর্য খেলা দেখেই মিশন স্কুলের ছেলেরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল।
▨ নিজের ভাষায় উত্তর লেখো : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. “আজকের খেলাটা যে খুব জমবে তাতে সন্দেহ নেই”–কোন্ বিশেষ দিনের কথা বলা হয়েছে? সে-দিনের সেই ‘খেলা’র মাঠের দৃশ্যটি নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উঃ। সে-দিন বলতে এখানে টাউন স্কুল এবং মিশন স্কুলের ফুটবল ম্যাচের বিশেষ দিনটির কথা বলা হয়েছে। সে দিন চারটে না বাজতে বাজতে সবাই মাঠের চারপাশে জমতে শুরু করে, মাঠের দুধারে কাতার দিয়ে দুটি দলের ছেলেরা দাঁড়ায়। দুপক্ষের খেলোয়াড়রা তখন মাঠে নামেনি, তারা সজ্জিত হচ্ছে।
২. “সমরেশদা কোথায় গেছে”–এই সমরেশদার পরিচয় দাও। সে কোথায় কোন্ উদ্দেশ্যে গিয়েছিল? তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল কি?
উঃ। সমরেশদা হল টাউন স্কুলের ফুটবল টিমের হাফ-ব্যাক। সমরেশ শহরে একটা গাধার কান মলতে গিয়েছিল। তার বিশ্বাস এটি একটি তুক। এটি করলে তাদের দল খেলায় জিততে পারবে। না, তার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সারা দুপুর ধরে ঘুরে বেড়িয়েও ঘাটে, মাঠে এমনকি ধোপার বাড়িতেও একটিও গাধা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৩. ‘এই সময় মাঠে রেফারির বাঁশি বেজে উঠল' – 'রেফারি'টি কে? তাঁর সম্পর্কে ছেলেদের ধারণা কীরূপ ছিল? খেলার মাঠে তিনি কেমন ভূমিকা পালন করলেন?
উঃ। রেফারি হলেন দিব্যেন্দুবাবু। দিব্যেন্দুবাবু জিলিপি খেতে বড়ো ভালোবাসেন। তাঁর সম্পর্কে ছেলেদের ধারণা খেলা শুরুর আগে যে পক্ষ তাকে পেট ভরে জিলিপি খাওয়াবে তিনি তাদের জিতিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। খেলার মাঠে রেফারি দিব্যেন্দুবাবু মিশন স্কুলের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। একজন খেলোয়াড় টুনুর পায়ে বুটসুদ্ধ লাথি মারলেও দিব্যেন্দুবাবু পেনাল্টি দেওয়ার বদলে টাউন স্কুলের বিরুদ্ধে অফসাইড দেন।
৪. খেলার যে ফলাফল হলো তাতে তুমি কি খুশি হলে? তোমার উত্তরের সমর্থনে যুক্তি দাও।
উঃ। হ্যাঁ, আমি খুশি হলাম। কারণ মিশন স্কুলের দল ছিল শক্তিশালী, তাদের অনেকেই বুট পরে খেলে। টুনুকে একজন পায়ে মারলেও দিব্যেন্দুবাবুর ভুল সিদ্ধান্তে পেনাল্টি না হয়ে টাউন স্কুলের বিরুদ্ধে অফসাইড হয়। টুনুর আঙুল ভেঙে যায়, গিরীনের হাঁটুর নীচে কতবেলের মত ফুলে যায়। এইসব বাধা সত্ত্বেও টুনু এক অদ্ভুত খেলা খেলে গোল দেয় এবং টাউনস্কুলের ছেলেরা জয়ী হয়।
৫. গল্পে যে ফলাফলের কথা বলা হয়েছে, তার বিপরীতটি যদি ঘটে, তাহলে গল্পের উপসংহারটি কেমন হত তা নিজের ভাষায় লেখো।
উঃ। গল্পে যে ফলাফলের কথা বলা হয়েছে তার বিপরীতটি ঘটলে উপসংহারে হয় গিরীন বিষণ্ণভাবে বলত “আজ গাধার কান পাওয়া গেল না বলেই আমরা হেরেছি। আসছে বছর আগেই গাধার কানের খোঁজ করতে হবে।”
৬. গল্পে বলা হয়েছে—'আজ টুনুই আমাদের হিরো। তোমার টুনু চরিত্রটি কেমন লাগল? সত্যিই কি নায়কের সম্মান তার প্রাপ্য ?
উঃ। টুনু চরিত্রটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। কারন গাধার কানমলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সে নিজে কানমলা খেয়েছে। তবুও মনের জোর নিয়ে সে বলেছে যে, কখখোনো তারা হারবে না। অবশ্যই তার নায়কের সম্মান প্রাপ্য। সে সাহসী, কুসংস্কারমুক্ত, দলের প্রতি অনুগত এবং প্রতিজ্ঞা রক্ষায় অবিচল। মাঠে মার খেয়ে আঙুল ভেঙে যাওয়া আর ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে সে এক আশ্চর্য খেলা খেলেছে এবং টাইন স্কুলকে জন উপহার দিয়েছে।
৭. গিরীন কীভাবে খেলার মাঠে টুনুকে ক্রমাগত উৎসাহ আর সাহস জুগিয়েছিল তা আলোচনা করো।
উঃ। গিরীন টুনুকে নিজের চোট দেখিয়ে তার চোটের কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তা ছাড়া গিরীশ টুনুকে বলেছিল যে টুনুকে পারতেই হবে। একমাত্র সে-ই পারবে। এইভাবে গিরীন খেলার মাঠে টুনুকে উৎসাহ জুগিয়েছিল।
৮. ‘অন্ধ সংস্কারের প্রতি আনুগত্যের জোরে নয়, প্রবল প্রচেষ্টা আর মানসিক জোরেই জীবনে সাফল্য আসে।' ‘গাধার কান’ গল্পটি অনুসরণে উদ্ধৃতিটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করো।
উঃ। “গাধার কান” গল্পে টাউন স্কুলের ছেলেরা খেলতে নামবার আগেই ধরে নিয়েছিল যে তারা হারবে কারণ তারা গাধার কান মলতে পারেনি। সমরেশ সারা দুপুর খুঁজেও একটি গাধার সন্ধান পায়নি। একমাত্র টুনুরই এই সমস্ত সংস্কারে কোনো বিশ্বাস ছিল না। সে ঘটনাটা শুনে হেসে ফেলেছিল এবং তার জন্য সে সমরেশ এর কাছে কানমলাও খেয়েছিল। তবু সে মনের জোর না হারিয়ে বলেছিল কখনো তারা হারবে না। সে তার কর্মে বিশ্বাসী ছিল এবং তার মাঠে চোট পাওয়ার পরেও ছোট্ট শরীর নিয়ে সে একাই এক অদ্ভুত খেলা খেলে এবং গোল। টাউন স্কুল ম্যাচটি জিতে যায়।
No comments:
Post a Comment